28-06-2019, 04:37 PM
পার্টঃঃ০৯
পাজামা-পাঞ্জাবী কোথায়।
সরি বার করে দিচ্ছি।
আলনা থেকে একটা পাজামা-পাঞ্জাবী ওকে দিলাম। ও বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এল। আমি পাখাটা পাঁচে করে দিলাম। ও ওর অর্ন্তবাস গেঞ্জি পেন্ট শুকোতে দিল।
আমি ছুটে রান্নাঘরে গেলাম।
খাটের ওপর ট্রেটা নামিয়ে রেখে ওর দিকে তাকালাম। দু’হাত ওপরে তুলে শরীরটাকে বেঁকিয়ে বুঁকিয়ে ও চুল আঁচড়াচ্ছিল। ভেতরে কিছু পরে নি। আমি একবার তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
দাঁড়াও দেখাচ্ছি।
আমার ব্যাগটা একটু নিয়ে এসো।
কোথায় ?
ঐ ঘরের টেবিলে আছে।
আমি পাশের ঘর থেকে ওর ব্যাগটা নিয়ে এলাম।
ও ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করলো। ঠান্ডা হয়ে নেতা হয়ে গেছে।
কি।
মটন কাটলেট।
ওঃ এই বর্ষায়......তবে তোমার কাটলেটটা গরম আছে তো। আগে ঠান্ডা খাই তারপর না হয় গরম খাওয়া যাবে।
তনু কটমট করে আমার দিকে তাকাল।
আমি হাসলাম। দাঁড়াও প্লেট নিয়ে আসি।
আবার রান্না ঘর থকে দুটো প্লেট নিয়ে এলাম।
তনু কাটলেট শস পেঁয়াজের কুচি পাশে রাখলো।
দুজনে কফি আর কাটলেট খেতে আরম্ভ করলাম।
অনি ।
উঁ।
আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
কোথায়।
লন্ডন।
ওর দিকে ঘুরে তাকালাম। লন্ডন! কেনো ?
বিবিসিতে চান্স পেয়েছি।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। আমার মুখটা গম্ভীর। আমি মাথা নীচু করলাম। তারমানে তানিয়ার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
কি হলো ? গম্ভীর হয়ে গেলে। তুমি চাও না আমি যাই।
ভেতর থেকে না বলছি। কিন্তু মুখে বললাম, কনগ্রাটস।
ও আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।
কবে যাচ্ছ।
কাল সকালে দিল্লী যাব। বাড়িতে কয়েকঘন্টা কাটিয়ে দুপুরের ফ্লাইট।
ও। অফিসে জানে।
না। তুমি কিছু জানো না।
কোন ব্যাপারে ?
অফিসের ব্যাপারে।
না।
কালকে অফিসে যা করে এসেছো।
আমি আবার কি করলাম!
তুমিতো তোমার কোন খোঁজ খবর রাখো না।
প্রয়োজন বোধ করি না।
তুমি কাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যা করে এসেছো তাই নিয়ে অফিসে সারা দিন তোলপাড় হয়েছে। আজতো অফিসে যাও নি ?
না।
গেলে জানতে পারতে।
যা হবার তা হবে।
আমাকে মুম্বাই ট্রান্সফার করেছিলো।
কে ?
কে আবার ওই শালা সুনীত।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললাম। তনু এই প্রথম আমার সামনে শালা বললো।
রিজাইন দিলাম। তারপর এই চান্সটা পেয়ে গেলাম।
কার থ্রু দিয়ে।
আমার দিল্লীতে এক বন্ধু আছে। ওর থ্রু দিয়ে।
ও।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। আমি যেখানে থাকার সেখানেই পরে আছি। সত্যি আমার দ্বারা কিছু হবে না। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। ধুস।
কি চিন্তা করছো।
না। কিছু নয়। ওর দিকে তাকালাম।
হাঁ করো।
ও নিজের কাটলেটে একটা কামর বসিয়ে আমার মুখের কাছে এগিয়ে দিয়েছে। আজ কোন বাধা দিলাম না। আমি ওর কাটলেটে একটা কামর দিলাম। ও আবার নিজেরটায় আর একটা কামর দিল।
খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। আমি ট্রেটা বিছানার ওপর থেকে তুলে নিয়ে কিচেনে রেখে এলাম। তনু হেলান দিয়ে খাটের একটা সাইডে পা ছড়িয়ে আধশোয়া অবস্থায়। পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো আটকায় নি। সেই ফাঁকে আমার চোখ চলে গেলো। তনু বুঝতে পারলো।
উঃ একটু ফ্রি হয়ে বসার জো নেই। যেনো চোখ দিয়ে ;., করছে।
চোখের আর দোষ কি। সে তো সব সময় সুন্দরের পূজারী।
রাখো তোমার কাব্যিক......।
কি পাগলের মতো হাসছো।
কই না।
দেখলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
খাটে উঠে ওর ডান দিকে একটা বালিস টেনে নিয়ে শুলাম। মাথার ওপর পাখাটা বন বন করে ঘুরছে। বাইরে এখনো অঝোরে বৃষ্টি পরছে। হঠাত একটা জোরে বাজ পরলো। মেঘটা কড়কড় করে ডেকে উঠলো। তনু আমাকে জরিয়ে ধরলো। ওর বুক আমার বুকে মুখটা আমার কাঁধের মধ্যে গুঁজে দিয়েছে। কার্ল করা চুলের কিছুটা আমার মুখের ওপর এসে পরেছে। একটা মায়াবী গন্ধে আমি আচ্ছন্ন। ওর একটা পা আমার ওপর তুলে দিয়েছে। ওর নরম বুকের ছোঁয়ায় আমি মোমের মতো গলে যাচ্চি। ওর গায়ে একটা বুনো বুনো গন্ধ। নেশা জাগায়। আমার উদম শরীরে ওর শরীর। ওর নরম পেট আমার পেটের সঙ্গে মিশে আছে। সামান্য উষ্ণতা।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। মিত্রার সঙ্গে রেগুলার ফোনে যোগাযোগ রেখেছি ওই আমাকে বেশির ভাগ সময় ফোন করেছে। আমার সোর্সগুলোকে কাজে লাগিয়ে অনেক সংবাদ সংগ্রহ করেছি যা শুনে আমারই মাথা খারাপ। সকাল বেলা বড়মার ডাকে ঘুম ভাঙলো। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সম্বিত ফিরে পেলাম। কাল অনেক রাতে বড়মার কাছে এসেছি। কলকাতার রাস্তা কালও ভেসেছে। কাল রাতে কারুর সঙ্গেই বিশেষ কথা হয় নি। খেয়েছি আর নিজের ঘরে চলে এসে শুয়ে পরেছি।
আমি আসার আগেই ছোটমা মল্লিকদা চলে গেছেন। বড়মা বললেন, ওরা কাল সকালে চলে আসবে।
কটাবাজে বড়মা।
নটা বেজেগেছে। সকাল থেকে তোর ফোন খালি বেজেই যাচ্ছে। কয়েকটা তোর দাদ ধরেছিল। বাকি গুলো বিরক্ত হয়ে আর ধরে নি।
ও।
ছোটমা এসেছে।
হ্যাঁ তোমার খেঁটনের জোগাড় করছেন।
তুমি কি ঠাকুর নিয়ে ব্যস্ত।
হ্যাঁ। অফিস যাবি না।
না।
কাল তোর একটা চিঠি এসছে।
কোথা থেকে।
তোর বাড়ি থেকে।
আমার বাড়ি!
হ্যাঁ। মনামাস্টার দিয়েছে।
ও।
কি লিখেছেন।
জানিনা। তোর দাদা খুলে পরেছে। তোর দাদাকেও একটা দিয়েছে।
কাম সারসে।
হ্যাঁরে মিত্রার সঙ্গে কি হল বললিনা।
কেন সবইতো বললাম।
না তুই কিছু গোপন করেছিস।
এ কথাটা আবার কে বললো।
সে তোকে বলবো কেন।
ছোট বলেছে।
না।
সে ছাড়া তোমায় লাগাবার লোক এ ভূ-ভারতে কে আছে বলো।
মিত্রা কাল তোর জন্য একটা বড় বাক্স পাঠিয়েছে।
আমার জন্য!
হ্যাঁ।
বড়সাহেব জানে।
ওইতো রিসিভ করলো।
বাবাঃ কদিনেই এতো সব। তার মানে ব্যাপারটা জটিল।
তুই আর ফাজলামো করিস না।
দিদি।
ওই ছোটম্যাডাম এলেন। একজনে হচ্ছিল এতক্ষণ। এবার দোসর এসে হাজির।
কি বলছেগো আমর নামে।
না না কিছু না। বাথরুমে যেতে হবে। খাবার রেডি কিনা।
কথা ঘোরাস না।
এই দেখো জিলিপির প্যাঁচ আরম্ভ হলো।
উরিবাবা এ কি সাংঘাতিক গো দিদি। আমরা কথা বললেই জিলিপির প্যাঁচ।
না না ও....।
তুমি থামোতো শাক দিয়ে আর মাছ ঢেকো না। তোমার জন্যই ও.....।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা আমার ঘাট হয়েছে।
এই জায়গায় থাকা এই মুহূর্তে সুবিধাজনক নয়। আমি আস্তে আস্তে বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে চলে এলাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সোফার একটা দিক দখল করে বসলাম। খাবার এলো। এই বাড়ির এই একটা মজা। সবাই একসঙ্গে খাবে আর গল্প গুজব হাঁসি ঠাট্টা চলবে। এর মধ্যে মল্লিকদা অগ্রণীর ভূমিকা নেয়।
কি বুবুনবাবু, নতুন কি খবর সংগ্রহ করলেন বলুন।
সবে মাত্র একটা ফুলকোলুচি একটা গোটা আলুর সঙ্গে মুখে তুলেছি, মল্লিকদার কথায় একটু অবাক হোলাম। এই নামটা এরা জানল কি করে।
একটু অবাক হলেন। খবর কি আপনি একাই সংগ্রহ করতে পারেন। আমরাও পারি।
মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছি। এখানে কথা বলা মানেই বিপদের হাতছানি।
কালকে মিত্রা তোর জন্য একটা ল্যাপটপ পাঠিয়েছে। অমিতাভদা বললেন।
ওই বাক্সটায় ল্যাপটপ আছে। বড়মা বললেন।
তুমি কি ভাবলে সন্দেশ আছে।
মরন।
আমি মাথা নীচু করে মুচকি হাসলাম।
ল্যাপটপ কাকে দেয় অফিসের মালকিন। যখন সে বস হয়। মল্লিকদা বললেন।
আমি বড়মার পাশে বসেছিলাম। আলুরদমটা ছোটমা হেবি বানিয়েছে। বড়মার পাত থেকে দুটো লুচি আর আলুর দম তুলে নিলাম।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো তুই নিবি না। আমি তোর জন্য এনে দিচ্ছি।
ততক্ষণে একটা লুচি আমার মুখে পোরা হয়ে গেছে। বড়মা বললেন থাক থাক ছোট। আমি আর কত খাব বল।
সাতখুন মাপ। মল্লিকদা বললেন।
যাই বলিস মল্লিক অনি দারুন ম্যানেজ করতে জানে। অমিতাভদা বললেন।
আমি বুঝলাম আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। সাতদিন আগে যে স্যেঁত স্যেঁতে ভাবটা এই বড়িতে ছিল। আজ তা সম্পূর্ণ উধাও। এবার প্রেম বিয়ের প্রসঙ্গ আসবে। সেটা তুলবে মল্লিকদা। তাকে সপোর্ট করবে ছোটমা বড়মা। আর আমি অমিতাভদা নির্বাক শ্রোতা।
কিহলো গেঁট হয়ে বসে রইলে যে লুচি নিয়ে এসো।
ছোটমা লাফাতে লাফাত রান্না ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে লুচির পাত্র আর আলুর দমের পাত্র নিয়ে এসে টেবিলে বসিয়ে দিল।
এই যে তুই এই টোনাটা দিলি, এই জন্য এগুলো এলো। না হলে এগুলো বিকেলের জন্য তোলা থাকতো। মল্লিকদা বললেন।
কি বললে।
মল্লিকদা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, না কিছু না। লুচি আলুর দম, সৌজন্য বুবুন।
ঠিক বলেছিস। বড়মা বলে উঠলেন, হ্যাঁরে অনি তোর নাম যে বুবুন তুই আগে তো কখনো বলিস নি।
বুঝলাম ব্যাপারটা ডজ করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু হল না। এবার বড়মা চেপে ধরলেন।
তোমরা জানলে কি করে।
ছোট বললো।
ছোট জানলো কি করে।
হ্যাঁরে বদমাশ। শুনবি। মিত্রার কাছ থেকে। ছোট বললো।
তাই বলো।
এই বার ছোটমা ব্যাপারটা বললেন, মিত্রা কাল ফোন করেছিলো। প্রথমে ও বুবুনকে চেয়েছিল। ছোটমা ফোন ধরে বলেছেন বুবুন নামে এ বাড়িতে কেউ থাকে না। তারপর অমিতাভদাকে ফোন করেছিল, তারপর সব জানা জানি হয়।
হ্যাঁরে তোর এই মিষ্টিনামটা কে দিয়েছিলো। বড়মা বললেন।
একটু চুপ থেকে বললাম মা এ নামে ডাকতো।
হঠাত পরিবেশটা কেমন ভারি হয়ে গেলো। আমি নিজেই হাল্কা করে দেবার চেষ্টা করলাম, ছোটমার উদ্দেশ্যে বললাম, বেশতো নাচতে নাচতে গিয়ে লুচির হাঁড়ি নিয়ে এলে আমার আর বড়মার থালা যে খালি। ছোটমা তাড়াতারি উঠে আমাদের লুচি দিলেন।
মল্লিকদা বললেন আমি আর বাদ যাই কেনো। ছোটমা ধমক দিয়ে বললেন, এ মাসের কোলেস্টরেলটা চেক করা হয়েছিলো।
মল্লিকদা হাসতে হাসতে বললেন, দুটো লুচি বেশি খেলে কোলেস্টরেল বেড়ে যাবে না। কি বল অনি।
অমিতাভদা গম্ভীর হয়ে বললেন, তোর মনাকাকা তোর বিয়ের জন্য আমাকে মেয়ে দেখতে বলেছেন।
অমিতাভদা কথাটা এমন ভাবে বললেন, সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। বড়মা নাক সিঁটকে বললেন, এই পুঁচকে ছেলেকে কে বিয়ে করবে বলোতো।
ঠিক বলেছ বড়।
না না দাদা আপনি দায়িত্বটা আমাকে দিন। মল্লিকদা বললেন।
আমি মল্লিকদার দিকে কট কট করে তাকালাম। ছোটমা মাথা নিচু করে হাসি চাপার চষ্ট করছেন। আমার বিষম খাবর জোগাড়।
ফোনটা বেজে উঠলো।
ওই নাও শ্যামের বাঁশী বেজেছে। ছোটমা বললেন।
তুমি লিঙ্গে বড় ভুল করো, শ্যাম নয় শ্যাম নয় রাধার বাঁশী। মল্লিকদা বললেন।
রাধা বাঁশী বাজাতে জানতেন নাকি।
ওই হল আর কি।
হ্যাঁ বল।
কি করছিস।
ফ্যামিলি পিকনিক চলছে।
চলে আসবো।
চলে আয়।
না থাক। পরে যাব। তোর দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়।
কবে এলেন।
কালকে।
দে।
হ্যালো।
হ্যাঁ দাদা বলুন।
আজ বিকেল একটু ক্লাবে এসোনা।
আবার ক্লাব কেনো, আমার গরিব খানায় যদি বসা যায় কেমন হয় ?
আমার কোন আপত্তি নেই, তোমার বন্ধুকে রজি করাও।
দিন ওকে।
বল।
দাদাকে নিয়ে তুই চলে আয়।
না। আমার কেমন যেন.......।
দূর পাগলি তুই চলে আয়, কেউ কিছু মনে করবে না।
দাদা কিছু যদি ভাবেন।
কিচ্ছু ভাববেন না।
কখন যাব বল।
লাঞ্চ থেকে ডিনার।
যাঃ।
আমি অফিস যাচ্ছি না। তুই একটা ভাল জিনিষ পাঠিয়েছিস। ওটা নিয়ে সারা দিন পরে থাকব। এনি নিউজ।
না। সব ঠিক ঠাক চলছে। বাকিটা গিয়ে বলবো।
ঠিক আছে চলে আয়।
এতক্ষণ সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিলো। ওরা বেশ বুঝতে পারছিলো আমি কার সঙ্গে কথা বলছি। বড়মা সাথেও নেই পাঁচেও নেই তাই ফোনটা রাখতে, বড়মা বললেন, তুই কাকে আসতে বললি।
কেনো তুমি বুঝতে পারো নি।
না।
মিত্রাকে।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর চাপর মেরে চেঁচিয়ে উঠলেন, কি বলিনি।
ছোটমা চোখ টিপে টিপে হাসছেন।
আমি লুচি খেয়ে চলেছি।
অমিতাভদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যতই হোক একজন মালিক বলে কথা, তারওপর যে সে হাউস নয়। কলকাতার একট বিগ হাউস।
ও ছোট, ও তো নেমন্তন্ন করে খালাস, কি খাওয়াবি।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকাল।
আমি খেতে খেতেই বললাম এতো চাপ নিয়ো না শরীর খারাপ করবে।
তুই থাম ।
আমি একটা কথা বলবো।
বড়মা আমার দিকে উত্সুখ হয়ে তাকালেন।
আজকের মেনুটা আমি যদি বানাই তোমার আপত্তি আছে।
থাম তুই কোনদিন বাজারে গেছিস। ছোটমা বললেন।
যা বাবা। বাজারে না গেলে কি মেনু বানানো যায় না।
আচ্ছা বল। অমিতাভদা বললেন।
শরু চালের ভাত, ঘন ঘন করে মুগের ডাল, শুক্তো, পাতলা পাতলা আলু ভাজা, পাবদা মাছের ঝোল কিন্তু গোটা গোটা থাকবে, সরষেবাটা হিংয়ের বড়ি আর আমচুর দিয়ে টক, দই, মিষ্টি।
মল্লিকদা ছোটমা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
বড়মা আমার কানটা মূলে বললেন, ছাগল।
সবাই হেঁসে উঠলো।
অমিতাভদ গম্ভীর গলায় বললেন, অনির মেনু ফাইন্যাল।
বড়মা ছেঁচকিয়ে উঠে বললেন, অতো আর সাউকিরি করতে হবে না।
মল্লিকদা বললেন, আমি তবে বাজারটা করে নিয়ে আসি।
যাও। অমিতাভদা বললেন।
আসর ভাঙলো।
পাজামা-পাঞ্জাবী কোথায়।
সরি বার করে দিচ্ছি।
আলনা থেকে একটা পাজামা-পাঞ্জাবী ওকে দিলাম। ও বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এল। আমি পাখাটা পাঁচে করে দিলাম। ও ওর অর্ন্তবাস গেঞ্জি পেন্ট শুকোতে দিল।
আমি ছুটে রান্নাঘরে গেলাম।
খাটের ওপর ট্রেটা নামিয়ে রেখে ওর দিকে তাকালাম। দু’হাত ওপরে তুলে শরীরটাকে বেঁকিয়ে বুঁকিয়ে ও চুল আঁচড়াচ্ছিল। ভেতরে কিছু পরে নি। আমি একবার তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
দাঁড়াও দেখাচ্ছি।
আমার ব্যাগটা একটু নিয়ে এসো।
কোথায় ?
ঐ ঘরের টেবিলে আছে।
আমি পাশের ঘর থেকে ওর ব্যাগটা নিয়ে এলাম।
ও ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করলো। ঠান্ডা হয়ে নেতা হয়ে গেছে।
কি।
মটন কাটলেট।
ওঃ এই বর্ষায়......তবে তোমার কাটলেটটা গরম আছে তো। আগে ঠান্ডা খাই তারপর না হয় গরম খাওয়া যাবে।
তনু কটমট করে আমার দিকে তাকাল।
আমি হাসলাম। দাঁড়াও প্লেট নিয়ে আসি।
আবার রান্না ঘর থকে দুটো প্লেট নিয়ে এলাম।
তনু কাটলেট শস পেঁয়াজের কুচি পাশে রাখলো।
দুজনে কফি আর কাটলেট খেতে আরম্ভ করলাম।
অনি ।
উঁ।
আমি কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
কোথায়।
লন্ডন।
ওর দিকে ঘুরে তাকালাম। লন্ডন! কেনো ?
বিবিসিতে চান্স পেয়েছি।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। আমার মুখটা গম্ভীর। আমি মাথা নীচু করলাম। তারমানে তানিয়ার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
কি হলো ? গম্ভীর হয়ে গেলে। তুমি চাও না আমি যাই।
ভেতর থেকে না বলছি। কিন্তু মুখে বললাম, কনগ্রাটস।
ও আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।
কবে যাচ্ছ।
কাল সকালে দিল্লী যাব। বাড়িতে কয়েকঘন্টা কাটিয়ে দুপুরের ফ্লাইট।
ও। অফিসে জানে।
না। তুমি কিছু জানো না।
কোন ব্যাপারে ?
অফিসের ব্যাপারে।
না।
কালকে অফিসে যা করে এসেছো।
আমি আবার কি করলাম!
তুমিতো তোমার কোন খোঁজ খবর রাখো না।
প্রয়োজন বোধ করি না।
তুমি কাল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যা করে এসেছো তাই নিয়ে অফিসে সারা দিন তোলপাড় হয়েছে। আজতো অফিসে যাও নি ?
না।
গেলে জানতে পারতে।
যা হবার তা হবে।
আমাকে মুম্বাই ট্রান্সফার করেছিলো।
কে ?
কে আবার ওই শালা সুনীত।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। ফিক করে হেসে ফেললাম। তনু এই প্রথম আমার সামনে শালা বললো।
রিজাইন দিলাম। তারপর এই চান্সটা পেয়ে গেলাম।
কার থ্রু দিয়ে।
আমার দিল্লীতে এক বন্ধু আছে। ওর থ্রু দিয়ে।
ও।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। আমি যেখানে থাকার সেখানেই পরে আছি। সত্যি আমার দ্বারা কিছু হবে না। কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। ধুস।
কি চিন্তা করছো।
না। কিছু নয়। ওর দিকে তাকালাম।
হাঁ করো।
ও নিজের কাটলেটে একটা কামর বসিয়ে আমার মুখের কাছে এগিয়ে দিয়েছে। আজ কোন বাধা দিলাম না। আমি ওর কাটলেটে একটা কামর দিলাম। ও আবার নিজেরটায় আর একটা কামর দিল।
খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। আমি ট্রেটা বিছানার ওপর থেকে তুলে নিয়ে কিচেনে রেখে এলাম। তনু হেলান দিয়ে খাটের একটা সাইডে পা ছড়িয়ে আধশোয়া অবস্থায়। পাঞ্জাবীর বোতাম গুলো আটকায় নি। সেই ফাঁকে আমার চোখ চলে গেলো। তনু বুঝতে পারলো।
উঃ একটু ফ্রি হয়ে বসার জো নেই। যেনো চোখ দিয়ে ;., করছে।
চোখের আর দোষ কি। সে তো সব সময় সুন্দরের পূজারী।
রাখো তোমার কাব্যিক......।
কি পাগলের মতো হাসছো।
কই না।
দেখলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
খাটে উঠে ওর ডান দিকে একটা বালিস টেনে নিয়ে শুলাম। মাথার ওপর পাখাটা বন বন করে ঘুরছে। বাইরে এখনো অঝোরে বৃষ্টি পরছে। হঠাত একটা জোরে বাজ পরলো। মেঘটা কড়কড় করে ডেকে উঠলো। তনু আমাকে জরিয়ে ধরলো। ওর বুক আমার বুকে মুখটা আমার কাঁধের মধ্যে গুঁজে দিয়েছে। কার্ল করা চুলের কিছুটা আমার মুখের ওপর এসে পরেছে। একটা মায়াবী গন্ধে আমি আচ্ছন্ন। ওর একটা পা আমার ওপর তুলে দিয়েছে। ওর নরম বুকের ছোঁয়ায় আমি মোমের মতো গলে যাচ্চি। ওর গায়ে একটা বুনো বুনো গন্ধ। নেশা জাগায়। আমার উদম শরীরে ওর শরীর। ওর নরম পেট আমার পেটের সঙ্গে মিশে আছে। সামান্য উষ্ণতা।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল। মিত্রার সঙ্গে রেগুলার ফোনে যোগাযোগ রেখেছি ওই আমাকে বেশির ভাগ সময় ফোন করেছে। আমার সোর্সগুলোকে কাজে লাগিয়ে অনেক সংবাদ সংগ্রহ করেছি যা শুনে আমারই মাথা খারাপ। সকাল বেলা বড়মার ডাকে ঘুম ভাঙলো। প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সম্বিত ফিরে পেলাম। কাল অনেক রাতে বড়মার কাছে এসেছি। কলকাতার রাস্তা কালও ভেসেছে। কাল রাতে কারুর সঙ্গেই বিশেষ কথা হয় নি। খেয়েছি আর নিজের ঘরে চলে এসে শুয়ে পরেছি।
আমি আসার আগেই ছোটমা মল্লিকদা চলে গেছেন। বড়মা বললেন, ওরা কাল সকালে চলে আসবে।
কটাবাজে বড়মা।
নটা বেজেগেছে। সকাল থেকে তোর ফোন খালি বেজেই যাচ্ছে। কয়েকটা তোর দাদ ধরেছিল। বাকি গুলো বিরক্ত হয়ে আর ধরে নি।
ও।
ছোটমা এসেছে।
হ্যাঁ তোমার খেঁটনের জোগাড় করছেন।
তুমি কি ঠাকুর নিয়ে ব্যস্ত।
হ্যাঁ। অফিস যাবি না।
না।
কাল তোর একটা চিঠি এসছে।
কোথা থেকে।
তোর বাড়ি থেকে।
আমার বাড়ি!
হ্যাঁ। মনামাস্টার দিয়েছে।
ও।
কি লিখেছেন।
জানিনা। তোর দাদা খুলে পরেছে। তোর দাদাকেও একটা দিয়েছে।
কাম সারসে।
হ্যাঁরে মিত্রার সঙ্গে কি হল বললিনা।
কেন সবইতো বললাম।
না তুই কিছু গোপন করেছিস।
এ কথাটা আবার কে বললো।
সে তোকে বলবো কেন।
ছোট বলেছে।
না।
সে ছাড়া তোমায় লাগাবার লোক এ ভূ-ভারতে কে আছে বলো।
মিত্রা কাল তোর জন্য একটা বড় বাক্স পাঠিয়েছে।
আমার জন্য!
হ্যাঁ।
বড়সাহেব জানে।
ওইতো রিসিভ করলো।
বাবাঃ কদিনেই এতো সব। তার মানে ব্যাপারটা জটিল।
তুই আর ফাজলামো করিস না।
দিদি।
ওই ছোটম্যাডাম এলেন। একজনে হচ্ছিল এতক্ষণ। এবার দোসর এসে হাজির।
কি বলছেগো আমর নামে।
না না কিছু না। বাথরুমে যেতে হবে। খাবার রেডি কিনা।
কথা ঘোরাস না।
এই দেখো জিলিপির প্যাঁচ আরম্ভ হলো।
উরিবাবা এ কি সাংঘাতিক গো দিদি। আমরা কথা বললেই জিলিপির প্যাঁচ।
না না ও....।
তুমি থামোতো শাক দিয়ে আর মাছ ঢেকো না। তোমার জন্যই ও.....।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা আমার ঘাট হয়েছে।
এই জায়গায় থাকা এই মুহূর্তে সুবিধাজনক নয়। আমি আস্তে আস্তে বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ছোটমা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সোজা নিচে চলে এলাম। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সোফার একটা দিক দখল করে বসলাম। খাবার এলো। এই বাড়ির এই একটা মজা। সবাই একসঙ্গে খাবে আর গল্প গুজব হাঁসি ঠাট্টা চলবে। এর মধ্যে মল্লিকদা অগ্রণীর ভূমিকা নেয়।
কি বুবুনবাবু, নতুন কি খবর সংগ্রহ করলেন বলুন।
সবে মাত্র একটা ফুলকোলুচি একটা গোটা আলুর সঙ্গে মুখে তুলেছি, মল্লিকদার কথায় একটু অবাক হোলাম। এই নামটা এরা জানল কি করে।
একটু অবাক হলেন। খবর কি আপনি একাই সংগ্রহ করতে পারেন। আমরাও পারি।
মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছি। এখানে কথা বলা মানেই বিপদের হাতছানি।
কালকে মিত্রা তোর জন্য একটা ল্যাপটপ পাঠিয়েছে। অমিতাভদা বললেন।
ওই বাক্সটায় ল্যাপটপ আছে। বড়মা বললেন।
তুমি কি ভাবলে সন্দেশ আছে।
মরন।
আমি মাথা নীচু করে মুচকি হাসলাম।
ল্যাপটপ কাকে দেয় অফিসের মালকিন। যখন সে বস হয়। মল্লিকদা বললেন।
আমি বড়মার পাশে বসেছিলাম। আলুরদমটা ছোটমা হেবি বানিয়েছে। বড়মার পাত থেকে দুটো লুচি আর আলুর দম তুলে নিলাম।
ছোটমা হাঁই হাঁই করে উঠলো তুই নিবি না। আমি তোর জন্য এনে দিচ্ছি।
ততক্ষণে একটা লুচি আমার মুখে পোরা হয়ে গেছে। বড়মা বললেন থাক থাক ছোট। আমি আর কত খাব বল।
সাতখুন মাপ। মল্লিকদা বললেন।
যাই বলিস মল্লিক অনি দারুন ম্যানেজ করতে জানে। অমিতাভদা বললেন।
আমি বুঝলাম আজ আমার কপালে দুঃখ আছে। সাতদিন আগে যে স্যেঁত স্যেঁতে ভাবটা এই বড়িতে ছিল। আজ তা সম্পূর্ণ উধাও। এবার প্রেম বিয়ের প্রসঙ্গ আসবে। সেটা তুলবে মল্লিকদা। তাকে সপোর্ট করবে ছোটমা বড়মা। আর আমি অমিতাভদা নির্বাক শ্রোতা।
কিহলো গেঁট হয়ে বসে রইলে যে লুচি নিয়ে এসো।
ছোটমা লাফাতে লাফাত রান্না ঘরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে লুচির পাত্র আর আলুর দমের পাত্র নিয়ে এসে টেবিলে বসিয়ে দিল।
এই যে তুই এই টোনাটা দিলি, এই জন্য এগুলো এলো। না হলে এগুলো বিকেলের জন্য তোলা থাকতো। মল্লিকদা বললেন।
কি বললে।
মল্লিকদা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, না কিছু না। লুচি আলুর দম, সৌজন্য বুবুন।
ঠিক বলেছিস। বড়মা বলে উঠলেন, হ্যাঁরে অনি তোর নাম যে বুবুন তুই আগে তো কখনো বলিস নি।
বুঝলাম ব্যাপারটা ডজ করে বেরিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু হল না। এবার বড়মা চেপে ধরলেন।
তোমরা জানলে কি করে।
ছোট বললো।
ছোট জানলো কি করে।
হ্যাঁরে বদমাশ। শুনবি। মিত্রার কাছ থেকে। ছোট বললো।
তাই বলো।
এই বার ছোটমা ব্যাপারটা বললেন, মিত্রা কাল ফোন করেছিলো। প্রথমে ও বুবুনকে চেয়েছিল। ছোটমা ফোন ধরে বলেছেন বুবুন নামে এ বাড়িতে কেউ থাকে না। তারপর অমিতাভদাকে ফোন করেছিল, তারপর সব জানা জানি হয়।
হ্যাঁরে তোর এই মিষ্টিনামটা কে দিয়েছিলো। বড়মা বললেন।
একটু চুপ থেকে বললাম মা এ নামে ডাকতো।
হঠাত পরিবেশটা কেমন ভারি হয়ে গেলো। আমি নিজেই হাল্কা করে দেবার চেষ্টা করলাম, ছোটমার উদ্দেশ্যে বললাম, বেশতো নাচতে নাচতে গিয়ে লুচির হাঁড়ি নিয়ে এলে আমার আর বড়মার থালা যে খালি। ছোটমা তাড়াতারি উঠে আমাদের লুচি দিলেন।
মল্লিকদা বললেন আমি আর বাদ যাই কেনো। ছোটমা ধমক দিয়ে বললেন, এ মাসের কোলেস্টরেলটা চেক করা হয়েছিলো।
মল্লিকদা হাসতে হাসতে বললেন, দুটো লুচি বেশি খেলে কোলেস্টরেল বেড়ে যাবে না। কি বল অনি।
অমিতাভদা গম্ভীর হয়ে বললেন, তোর মনাকাকা তোর বিয়ের জন্য আমাকে মেয়ে দেখতে বলেছেন।
অমিতাভদা কথাটা এমন ভাবে বললেন, সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। বড়মা নাক সিঁটকে বললেন, এই পুঁচকে ছেলেকে কে বিয়ে করবে বলোতো।
ঠিক বলেছ বড়।
না না দাদা আপনি দায়িত্বটা আমাকে দিন। মল্লিকদা বললেন।
আমি মল্লিকদার দিকে কট কট করে তাকালাম। ছোটমা মাথা নিচু করে হাসি চাপার চষ্ট করছেন। আমার বিষম খাবর জোগাড়।
ফোনটা বেজে উঠলো।
ওই নাও শ্যামের বাঁশী বেজেছে। ছোটমা বললেন।
তুমি লিঙ্গে বড় ভুল করো, শ্যাম নয় শ্যাম নয় রাধার বাঁশী। মল্লিকদা বললেন।
রাধা বাঁশী বাজাতে জানতেন নাকি।
ওই হল আর কি।
হ্যাঁ বল।
কি করছিস।
ফ্যামিলি পিকনিক চলছে।
চলে আসবো।
চলে আয়।
না থাক। পরে যাব। তোর দাদা তোর সঙ্গে একবার কথা বলতে চায়।
কবে এলেন।
কালকে।
দে।
হ্যালো।
হ্যাঁ দাদা বলুন।
আজ বিকেল একটু ক্লাবে এসোনা।
আবার ক্লাব কেনো, আমার গরিব খানায় যদি বসা যায় কেমন হয় ?
আমার কোন আপত্তি নেই, তোমার বন্ধুকে রজি করাও।
দিন ওকে।
বল।
দাদাকে নিয়ে তুই চলে আয়।
না। আমার কেমন যেন.......।
দূর পাগলি তুই চলে আয়, কেউ কিছু মনে করবে না।
দাদা কিছু যদি ভাবেন।
কিচ্ছু ভাববেন না।
কখন যাব বল।
লাঞ্চ থেকে ডিনার।
যাঃ।
আমি অফিস যাচ্ছি না। তুই একটা ভাল জিনিষ পাঠিয়েছিস। ওটা নিয়ে সারা দিন পরে থাকব। এনি নিউজ।
না। সব ঠিক ঠাক চলছে। বাকিটা গিয়ে বলবো।
ঠিক আছে চলে আয়।
এতক্ষণ সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিলো। ওরা বেশ বুঝতে পারছিলো আমি কার সঙ্গে কথা বলছি। বড়মা সাথেও নেই পাঁচেও নেই তাই ফোনটা রাখতে, বড়মা বললেন, তুই কাকে আসতে বললি।
কেনো তুমি বুঝতে পারো নি।
না।
মিত্রাকে।
মল্লিকদা টেবিলের ওপর চাপর মেরে চেঁচিয়ে উঠলেন, কি বলিনি।
ছোটমা চোখ টিপে টিপে হাসছেন।
আমি লুচি খেয়ে চলেছি।
অমিতাভদা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যতই হোক একজন মালিক বলে কথা, তারওপর যে সে হাউস নয়। কলকাতার একট বিগ হাউস।
ও ছোট, ও তো নেমন্তন্ন করে খালাস, কি খাওয়াবি।
ছোটমা বড়মার দিকে তাকাল।
আমি খেতে খেতেই বললাম এতো চাপ নিয়ো না শরীর খারাপ করবে।
তুই থাম ।
আমি একটা কথা বলবো।
বড়মা আমার দিকে উত্সুখ হয়ে তাকালেন।
আজকের মেনুটা আমি যদি বানাই তোমার আপত্তি আছে।
থাম তুই কোনদিন বাজারে গেছিস। ছোটমা বললেন।
যা বাবা। বাজারে না গেলে কি মেনু বানানো যায় না।
আচ্ছা বল। অমিতাভদা বললেন।
শরু চালের ভাত, ঘন ঘন করে মুগের ডাল, শুক্তো, পাতলা পাতলা আলু ভাজা, পাবদা মাছের ঝোল কিন্তু গোটা গোটা থাকবে, সরষেবাটা হিংয়ের বড়ি আর আমচুর দিয়ে টক, দই, মিষ্টি।
মল্লিকদা ছোটমা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
বড়মা আমার কানটা মূলে বললেন, ছাগল।
সবাই হেঁসে উঠলো।
অমিতাভদ গম্ভীর গলায় বললেন, অনির মেনু ফাইন্যাল।
বড়মা ছেঁচকিয়ে উঠে বললেন, অতো আর সাউকিরি করতে হবে না।
মল্লিকদা বললেন, আমি তবে বাজারটা করে নিয়ে আসি।
যাও। অমিতাভদা বললেন।
আসর ভাঙলো।