Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller (সিরিজ সাজু ভাই নম্বর -০৪)গল্প- সরি আম্মাজান
#7
 পর্ব- (০৫)



রাতের আরো কিছু ঘটনা। 
চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু দূরে কোথাও শিয়ালের হালকা ডাক শোনা যায়। সাজু কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মোহসীনের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারা চারিদিক থেকে আটকে যাচ্ছে। কল্পনার সঙ্গে সাজানো ষড়যন্ত্রের নক্সা অবশ্যই তাকে অসহায় করে দিয়েছে। 
সাজু তখন মালেক মুন্সির কাজের ছেলে আকবরকে ইশারায় কাছে ডেকে নিলেন। আকবর এসে সামনে দাঁড়ায়। 

“ আকবর ভাই, একটা কাগজ আর কলম এনে দেবেন? ” মৃদু হেসে বললেন সাজু।

আকবর ভেতরের ঘর থেকে দ্রুত একটা কলম আর খাতা এনে সাজুর হাতে দিল। 
সাজু খাতাটা টেবিলের ওপর রেখে মোহসীনের দিকে তাকালেন। চোখেমুখে দৃঢ়তা।

“ ঢাকায় আপনাদের বাসার পূর্ণ ঠিকানাটা এখানে লিখুন। সঙ্গে আপনার পাঁচজন পরিচিত মানুষের নাম আর মোবাইল নাম্বারও চাই। ” 

সাজুর কণ্ঠস্বর ছিল দৃঢ় এবং নির্দেশমূলক। তাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা মোহসীনের নেই। 
মোহসীন কিছুটা কাঁপা কাঁপা চোখে সাজুর দিকে তাকিয়ে রইল। কথাটা তার গলায় যেন আটকে গেল। কিছু বলতে গিয়েও সে বলতে পারল না। সাজু সময় দিচ্ছে। 

এই সময় আকবর কিছুটা সংকোচ নিয়ে সাজুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ আর কফি খাইবেন স্যার? ”

সাজু তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, “ না, ধন্যবাদ, আকবর ভাই। আপনাকে মেলা মেলা ধন্যবাদ। কফির এত সুন্দর ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। ”

ধন্যবাদ শুনে আকবর খুশিতে যেন আকাশে উড়ল। পুলিশের একজন কাছের মানুষ তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে—এটা তার কাছে অনেক বড় ব্যাপার।
কিন্তু সাজু ততক্ষণে আবার মোহসীনের দিকে ফিরে গেলেন। এসআই শাহরিয়ার চা পর্ব শেষ করে বিদায় নেবার চেষ্টা করছেন। 
সাজু আবার বললো , 
“ আপনার অফিসের ঘনিষ্ঠ তিনজন সহকর্মীর নাম ও মোবাইল নম্বরও দিন। সঙ্গে দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম হলে চলবে। সময় নষ্ট করবেন না। তাড়াতাড়ি লিখুন। ”

মোহসীন অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাতাটা হাতে নিল। এক এক করে লিখতে শুরু করল—প্রথমে নিজের বাসার ঠিকানা, তারপর পাঁচজন পরিচিত মানুষের নাম আর মোবাইল নম্বর।

সব লেখা শেষ হতেই সাজু কাগজটা ছিড়ে নিজের পকেটে রেখে দিলেন। দৃঢ় চোখে একবার চারপাশটা দেখে নিলেন। আপ্যায়ন পর্ব শেষ।
ঘরের পরিবেশে যেন আবার সেই চাপা টান টান উত্তেজনা ফিরে এলো। 
সবকিছু শেষ করে রাতের মতো বিদায় নেয়ার সময় সাজু মোহসীনের কানের কাছে মুখটা নিয়ে অভয় দিয়ে বলে , 
“ আপনি খুব ভয় পাচ্ছেন। আপনার চেহারায় এখন মায়ের মৃত্যুর বেদনার চেয়ে অন্যরকম আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। এখনো সময় আছে মোহসীন ভাই, মিথ্যা না পেঁচিয়ে সব সত্যি তুলে ধরুন। ”

একটু থেমে আবার সাজু বললো, 
“ সকালে দশটার দিকে আমি আবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো৷ আপনি সারারাত বসে চিন্তা করুন। আমার বিশ্বাস আপনি সব সত্যিটা আমার কাছে বলবেন। ” 

মালেক মুন্সি ও সালেক মুন্সি দুজনেই সাজুদের এগিয়ে দিতে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে আসেন। মালেক মুন্সি আবারও শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলেন , 
“ চল্লিশ বছর পর বোনটা এলো। আমরা ওকে পোস্টমর্টেম শেষে কখন পেতে পারি? আমি আমার মা-বাবার কাছে পারিবারিক কবরস্থানে ওকে দাফন করতে চাই। ”

“ ওনার সন্তানেরা যদি রাজি হয় তাহলে করবেন সমস্যা নেই। আগামীকালই আপনারা লাশ পেয়ে যাবেন। ”

_________________

রাতের খাবারের সময়, ঘরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মোহসীনের বড় মামা মালেক মুন্সি মাটির থালায় ভাত মেখে খানিকটা মুখে তোলার পর হঠাৎ তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“ পুলিশের সঙ্গে যে ছেলেটা এসেছে, তাকে দেখে আমার গোয়েন্দা ধরনের কেউ মনে হচ্ছে। ”

মালেক মুন্সির স্ত্রী থেমে গেলেন। তার চোখেমুখে স্পষ্ট অস্বস্তি। পুলিশ তাকে কোনো প্রশ্ন করেনি বলে আপাতত রেহাই মিলেছে, কিন্তু কাল আবার যদি কিছু জিজ্ঞেস করে? এমনিতেই তিনি ভীতু প্রকৃতির মানুষ।

এই সময় মালেক মুন্সি আকবরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোরে দেখলাম খাতা-কলম নিয়ে তার হাতে দিতে। মোহসীন সেখানে কী লিখল রে? ”

আকবর কিছুটা ইতস্তত করে বলল, 
“ আপনার ভাগ্নের ঢাকার বাসার ঠিকানা আর পরিচিত পাঁচজন মানুষের নাম-নম্বর লিখতে বলছিল। ”

মালেক মুন্সির ভ্রু কুঁচকে গেল। কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলেন, 
“ কেন? সেগুলো দিয়ে পুলিশ কী করবে? ”

আকবর কাঁধ ঝাঁকিয়ে নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল। যা সত্যি তাই , 
“ আমি কী করে জানি কাকা? তবে আমার মনে হয় পুলিশ আপনার ভাগ্নেকে সন্দেহ করছে। শুনেছি, ছোট কাকার ছেলের বউয়ের সঙ্গে আপনার ভাগ্নের আগে থেকেই নাকি পরিচয় ছিল। ”

মালেক মুন্সি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এ কথা তার একেবারেই জানা ছিল না। যদি আগে জানতেন, তবে হয়তো আরও কিছু যোগ করে বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারতেন। 
মালেক মুন্সির বাড়িতে আগে থেকেই এক ধরনের নিঃস্তব্ধতা। ছেলেমেয়ে কেউ এখানে থাকে না। বাড়িতে আছেন শুধু তিনি এবং তার অসুস্থ স্ত্রী। বাড়ির বাইরে জমিজমা, মাঠ ও দোকানপাট দেখাশোনা এবং খবরা-খবরের জন্য রয়েছে আকবর। আর ভেতরের যাবতীয় কাজ, রান্নাবান্না সব সামলায় হনুফা।

মালেক মুন্সি রাজনৈতিক নেতা, কাজের চাপের কারণে পরিবার সামলানোর সময় তার নেই। তার স্ত্রীও প্রায় সবসময় অসুস্থ। এই অবস্থায় কাজের লোক ছাড়া গতি নেই।

মালেক মুন্সি আকবরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ হনুফা কোথায়? চলে গেছে? ”

আকবর মাথা নেড়ে বলল,
 “ না কাকা, যায়নি এখনো। আপনাদের খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে আমি গিয়ে দিয়ে আসব। একা একা যেতে ভয় পাচ্ছে। ”

মালেক মুন্সি সামান্য বিরক্ত হয়ে বললেন, 
“ ওরে এখানে ডাক। ”

আকবর হনুফাকে ডেকে আনল। হনুফা এসে মালেক মুন্সির সামনে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে অপেক্ষা করছে।
মালেক মুন্সি চারপাশটা একবার দেখে নিলেন। গলা নিচু করে, যেন কেউ শুনতে না পারে এমনভাবে বললেন, 
“ মরিয়মকে আমি যে থাপ্পড় মেরেছিলাম, সেটা কাউকে বলবি না কিন্তু। ”

হনুফা মাথা নাড়িয়ে আশ্বাস দিল।

আকবর সন্দেহ মনে নিয়ে এসব ঘটনা দেখছে। তার চোখে কৌতূহল। তার মনে সন্দেহের দোলা, হয়তো মালেক মুন্সি তার বোন মরিয়মের সঙ্গে কিছু খারাপ ব্যবহার করেছেন। হতে পারে তিনি নিজেই তাকে আঘাত করেছেন। তবে সত্যি কি এমন কিছু ঘটেছে?

আকবর মনে মনে বিশ্লেষণ করতে থাকে। জমিজমা আর সম্পত্তির প্রতি লোভ মালেক মুন্সির নেই, এটা জানে সে। 
তাছাড়া কোনো কারণে বোনকে খুন করার মতো মানুষ মালেক মুন্সি নয়। কারণ দলগতভাবে সে খুন করে বোনের খুনি হয়ে নিজের জীবন কেন বিপন্ন করবেন। 
এর চেয়ে বড় সন্দেহের জায়গা হলো তার ছোট ভাই সালেক মুন্সি। কারণ সালেকের সম্পত্তির প্রতি লোভ সবসময়ই বেশি। সালেক সবসময় জুয়া খেলতে খেলতে নিজের সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছেন। এখনো সবসময়ই জুয়ার নেশা তাকে ঘিরে রেখেছে। 

“ তুমি তোমার বোনকে থাপ্পড় দিছিলা? ” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মালেকের স্ত্রী। 

“ আরে আস্তে কথা বলো৷ ” বিরক্ত হয়ে ধমক দেন মালেক মুন্সি। তারপর বলেন “ এমনভাবে বলছো যেন গ্রামসুদ্ধ সবাই জেনে যাবে। ”

সবাই চুপ করে যায়। বাহিরে তখন হনুফার স্বামীর কণ্ঠ শোনা যায়। হনুফা গিয়ে দরজা খুলে দিলে নিজের স্বামীকে দেখেন৷ বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি নিজেই নিতে আসছেন। তিনি ছিলেন কুষ্টিয়ায়। মাত্রই বাড়িতে এসে এ বাড়ির ঘটনা শুনে ছুটে এসেছেন। 

হনুফা তার স্বামীর সাথে বাড়িতে চলে যায়। মালেক মুন্সির স্ত্রী আড়চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু বলার সাহস হয় না। 

___________________

রাত গভীর। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুইটা। 
বাইরে শীতল বাতাস বইছে, যেন শূন্যতার শব্দ নিয়ে পৃথিবী নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মোহসীন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে, নিঃসীম অন্ধকারে চোখ রাখছে। ঝিঁঝিঁ পোকাদের একঘেয়ে ডাক আর দূরে কোথাও ভেসে আসা কুকুরের কণ্ঠস্বর রাতের নিরবতাকে ভেঙে দিচ্ছে। কিন্তু মোহসীনের মনে চলছে এক অশান্ত ঝড়। মায়ের মৃত্যু তাকে যেন পঙ্গু করে দিয়েছে। বিবেকের চক্ষু এখন বারবার তাকে তাড়া করছে৷ 

সে জানালার শীতল গ্লাসে হাত রেখে নিজের অচেনা এই নানাবাড়ির ভয়ংকর অন্ধকার দেখছে। নিজের চোখে নিজেকে অপরিচিত মনে হয়। তার মাথায় মায়ের সেই হাসিমাখা মুখটা ভেসে ওঠে, আর সাথে সাথেই হৃদয়ের গভীরে কেমন যেন একটা ধারালো শূন্যতা ফুটে ওঠে। 
কল্পনায় ভেসে ওঠে সেই মুহূর্তটা, যখন তার মায়ের শেষ নিশ্বাস চলছে। নিশ্চয়ই মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মা তার নাম ধরে ডাকছিল। 

তার ভেতরে যেন শিকড় গেঁড়ে বসেছে এক প্রশ্ন—তাহলে কি মায়ের মৃত্যুর জন্য সে-ই দায়ী? একের পর এক স্মৃতি যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। মা বলেছিলেন, "তুই আমার গর্ব।" কিন্তু সেই গর্ব তো এখন তার কাছে বোঝার মতো ভারী মনে হচ্ছে।

মোহসীনের বুকের ভেতরটা ছটফট করতে থাকে। তার মনে হয় যেন মায়ের মুখটা বারবার তার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছে, কিন্তু সেই চোখের গভীর ভালোবাসায়ও এখন কোথাও যেন চাপা অভিযোগ লুকিয়ে আছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, তার শীতল নিঃশ্বাস কুয়াশার মতো জানালার কাচে ঘনীভূত হয়। সে কাচের ওপাশে আঁধারের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "মা, তুমি কি সত্যিই আমায় ক্ষমা করেছ?"

ঠিক তখনই দরজায় কড়া নড়ে। রাতের নীরবতা চূর্ণ হয়ে যায় সেই শব্দে। মোহসীনের দেহটা এক মুহূর্তে জমে যায়, যেন সেই কড়া নাড়ার শব্দটা তার ভেতরের অপরাধবোধকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। সে পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকায়। মনে হয়, এই অন্ধকার রাতের কোনো এক অদৃশ্য বিচারক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কল্পনা। মোহসীন মাথা নিচু করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বলল,

“একটু ভেতরে আসি?”
“হ্যাঁ, আসো।”

দরজা ছেড়ে ভেতরে আসে মোহসীন। কল্পনাও ভেতরে এসে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কেটে যায় বেশ কিছু সময়। গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় নিশ্বাসের শব্দও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

নীরবতা ভেঙে কল্পনা বলল,
“এমনটা হবে, আমি সত্যিই ভাবিনি। আমাকে দোষ দেবেন না। হয়তো এটাই আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল।”

মোহসীন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। আমি আমার মাকে সবকিছু জানালেই পারতাম। কীসের বিবেকে এমন জঘন্য কাজটা করতে গেলাম?”

কল্পনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“কিন্তু ফুফুকে খুন করল কে? আমার মাথায় কিছুই কাজ করছে না।”

মোহসীন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে গভীর সন্দেহ, যা পরিষ্কারভাবে কল্পনার চোখ এড়িয়ে যায় না। তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে কল্পনা বলল,
“আমাকে সন্দেহ করবেন না। আমি তাকে কিছু বলিনি। সত্যিই সেরকম কিছু আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি এতটা সাহসী নই।”

মোহসীন কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। নীরবতা আরও ভারী হয়ে ওঠে। নিশ্বাসের শব্দ যেন আরও জোরালো শোনা যায়। তারপর হঠাৎ শরীর টানটান করে সে বলে উঠল,
“কাল সকালে আমি সাজু ভাইকে সব সত্যিটা বলে দেব। তিনি সকাল দশটার দিকে আসার কথা বলেছেন। আমার যা হবার হবে, কিন্তু আমি আর কিছু লুকাব না।”

কল্পনা আৎকে ওঠে। মোহসীন সত্যি বলতে চাইছে কেন? যদি সত্যিটা বলে দেয়, তবে তো বিপদ আরও বাড়বে। এমনিতেই সাজু ভাই নামের অদ্ভুত মানুষটা তাদের সন্দেহ করছে। আর যদি তারা নিজেদের গোপন প্ল্যান ফাঁস করে দেয়, তবে তো সন্দেহ আরও গভীর হবে।

মোহসীন বলে,
“আমি মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছি, এটা তো সত্যি। কিন্তু সবাই আমাকে খুনি ভাবুক, এটা চাই না। আমি সত্যিটা বললে আর নিজেকে অপরাধী মনে হবে না। তারপর তারা নিশ্চয়ই আমাকে সন্দেহ করা বাদ দিয়ে আসল খুনিদের খুঁজে বের করবে।”

মোহসীনের কথায় একমত হতে পারে না কল্পনা। সে মনে মনে বিরক্ত হয়, কিন্তু নিজের বিরক্তি মুখে প্রকাশ করে না। বলে,
“যদি সেটাই ভালো মনে করেন, তাহলে বলে দিন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এতে বিপদ বাড়বে।”

“বাড়ুক সমস্যা নেই। সকালে ভাই, ভাবি—সবাই আসবেন। তাদের সামনেই সব স্বীকার করব। তারপর যা হবার হবে।”

মোহসীন দরজার দিকে পা বাড়ায়। কল্পনা পিছন থেকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“বাইরে যাব। বাড়িতে দমবন্ধ লাগছে। এই বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে মা খুন হয়েছেন। কেন জানি খুব দমবন্ধ লাগছে আমার। আমি বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটব।”

মোহসীন বের হয়ে যায়। একা রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে কল্পনা। বিড়বিড় করে বলে,
“না, এটা সম্ভব নয়। এমন কিছু জানাজানি হয়ে গেলে গ্রামের মানুষ সবার আগে ছি ছি করবে। কেউ বিচার করবে না। সত্যি-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করেই মানুষের অপবাদ শুরু হয়ে যাবে।”

রুম থেকে বের হতে হতে সে বলে,
“যেভাবেই হোক, ওকে নিষেধ করতে হবে।”

ভাবতে ভাবতে কল্পনা দোতলা থেকে নিচে নেমে যায়। আর তখনই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সালেক মুন্সির স্ত্রী।

সালেক মুন্সি ঘুমাচ্ছিলেন। বউয়ের ডাকে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। বোনের শোকে কান্নাকাটি করে সবেমাত্র চোখ বন্ধ হয়েছিল। 

“ কি হয়েছে? ” চোখ লাল টকটকে অবস্থায় জিজ্ঞেস করে সালেক মুন্সি। 

“ আমার মনে হয় কল্পনা আর তোমার ভাগ্নের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা চলছে। ওরা দুজনই এইমাত্র রুমের মধ্যে কথা বলছিল। তারপর আবার বাইরে চলে গেল। ”

“ কি বলো তুমি? বাইরে কেন যাবে? ”

“ আমি কি জানি। তুমি একটু যাও তো। বাড়িতে একটা খুন হয়েছে, আমার তো গা ছমছম করে। দেখো ওরা কোথায় গিয়ে কি করছে। ”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালেক মুন্সি বিছানা থেকে নামেন। তারপর একটা টিশার্ট টেনে গায়ে জড়িয়ে নেন। জুতা পায়ে দিয়ে দরজা খুলে বাহির হয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখেন কল্পনা নিচ থেকে উঠে আসছে। কল্পনা শশুরকে দেখে থমকে যায়। 

“ কোথায় গেছিলে বউমা? ”

“ নিচে। ”

“ মোহসীন কোথায়? ”

“ জানি না বাবা, তাকে খুঁজতেই গেছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেছে খুঁজে পাচ্ছি না। একা ভয় লাগছে তাই চলে আসছি। ”

আর কোনো কথা না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল কল্পনা। সালেক মুন্সি ও তার স্ত্রী দুজনেই কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। 
সারারাত অপেক্ষা করেও মোহসীনকে আর ঘরে ফিরতে দেখলো না কেউ। কল্পনা নিজের ঘরের মধ্যে ফজরের আগ পর্যন্ত জেগে ছিল। সে-ও ঘুমিয়ে যায় নিজের অজান্তেই। 

_____________________

সকাল বেলা সবার আগে মোহসীনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় হনুফা। মালেক মুন্সির ঘরের কাজের মেয়ে হনুফা ভোরবেলায় কাজ করতে আসে। সকালের নাস্তা বানানো লাগে। বাড়ির দক্ষিণ দিকের বাগান থেকে শটকার্টে প্রবেশ করা যায় বলে বাগানের ভেতর থেকে আসার সময় সে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত মোহসীনের দেহটা দেখে চিৎকার দিয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকে। 

বাড়ি ভর্তি আবারও মানুষজনের গিজগিজ। আবার সাজু ভাই ও তার বন্ধুরা সবাই এবং এসআই শাহরিয়ার তার টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত। চারিদিকে তন্নতন্ন করে সবকিছু খোঁজা হয়। বাড়ির কেউ কিছু জানে না। সকালের আগ পর্যন্ত যা যা হয়েছে সবাই সেটাই বলে। 
শুধু এড়িয়ে যায় কল্পনা। এড়িয়ে যায় সালেক মুন্সি ও তার স্ত্রী দুজনেই। 

সাজু চারিদিকে হাঁটছিল। কাঁঠাল গাছের একটু দুরে সে গিয়ে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর নিচু হয়ে সবকিছু লক্ষ্য করেন৷ সাজুর ঠোটের কোনায় রহস্য সমাধানের অদ্ভুত হাসি দেখতে পাওয়া যায়। 
সাজুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভিড়ের ভেতর থেকে দ্রুত সাজুর কাছে এগিয়ে আসে কল্পনা। কাছাকাছি এসেই কল্পনা বলে , 

“ আপনার সঙ্গে একটু জরুরি কথা বলতে চাই। আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন সাজু ভাই? প্লিজ সাইডে চলুন। ”

সাজু কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে। সেখানেই এগিয়ে আসে এসআই শাহরিয়ার। সাজুর দিকে তাকিয়ে বলে , 
“ কিছু পেলে নাকি? ”

সাজু কল্পনার চোখে চোখ রেখে বললো , 
“ কিছু নয়, সবকিছুই পেয়েছি। ”

তারপর সেভাবেই কল্পনার দিকে তাকিয়েই সাজু পরবর্তী কথাটা কল্পনাকে উদ্দেশ্য করে বলে , 
“ আপনি ঘাবড়াচ্ছেন কেন? মোহসীনকে মারার পর তার এতবড় দেহটা আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে একা তো আর গাছে ঝুলাতে পারবেন না। নিশ্চয়ই এখানে পুরুষ মানুষের দরকার হয়েছে। আপনার শশুর কোথায়? চলুন আপনার শশুরের সঙ্গে কথা বলা যাক। ”
 
↓ 
↓ 
চলবে… 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: (সিরিজ সাজু ভাই নম্বর -০৪)গল্প- সরি আম্মাজান - by Bangla Golpo - 25-01-2025, 09:44 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)