8 hours ago
পর্বঃ- ০৩
সকাল বেলা সাজ্জাদের কিছু ছবি পাঠিয়ে দিলাম সেই ছেলেটার কাছে। ছেলেটা নিজেই সকালে আমাকে কল দিয়ে বললো,
" আপু আপনি চাইলে আমি আজকেই চেষ্টা করে তাকে খুঁজে বের করি, আপনি ঢাকা থেকে আসুন আমি তারমধ্যে দুধমুখা বাজারে গিয়ে সবার সঙ্গে জিজ্ঞেস করি। "
" বললাম, না ভাই এতটা কষ্ট করতে হবে না, আপনি এমনিতেই অনেক উপকার করেছেন। আমি একটু পড়ে রওনা দেবো, সেখানে গেলে আমি আপনাকে স্মরণ করবো। "
" সমস্যা নেই আপু, গতকাল রাতে আপনার সঙ্গে কথা হবার পড়ে আপনার ছোটবোনের সঙ্গে আমি আবার কথা বলেছিলাম। আপনি ভাইয়াকে খুব ভালোবাসেন, ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারছি সেও আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু একজনের সামান্য অবহেলা আর তার জন্য অন্য জনের একরাশ অভিমানে একটা সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে এটা কীভাবে সহ্য করবো? "
" আপনার কাছে আমার বোন সবকিছু বলেছে তাই না? "
" জ্বি আপু, আপনার বোনকে কিছু বলবেন না দয়া করে কারণ কারো ব্যক্তিগত বিষয় অপরিচিত হয়ে এভাবে শোনা ঠিক না। "
" আমি কোথায় গিয়ে নামলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে পারবো? "
" আপনি বসুরহাটের টিকিট সংগ্রহ করবেন, আর সেখানেই নামবেন। আপনার সঙ্গে আর কে কে আসবে? "
" হয়তো আমি একাই যাবো, সঙ্গে কাউকে নিতে চাই না, ব্যক্তিগত সমস্যা আছে। "
" কোন সমস্যা নেই, ছোট ভাইয়ের উপর বিশ্বাস করে চলে আসুন। আমি গতকাল রাতেই আমার মা-বাবার কাছে আপনাদের সবকিছু বলছি। তারা খুব আফসোস করেছেন, আপনি সরাসরি আমার বাড়িতে আসতে পারবেন। "
" সেটা হবে না ভাই, আমি কারো বাসায় যেতে চাই না, ভালো কোনো হোটেল কিংবা ওকে খুঁজে না পেলে আবার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা ফিরে আসবো। "
" আচ্ছা আগে আসুন তারপর দেখা যাবে, হয়তো অপরিচিত তাই বিশ্বাস করতে পারছেন না। সত্যি বলতে, আপনার বোনের কাছে শুনে যতটা বুঝতে পারছি তাতে মনে হচ্ছে আপনি আমার একমাত্র বড় আপুর বয়সী। আমার আপুর ও বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সাংসারিক ঝামেলা ছিল খুব, মাত্র ১৯ দিন আগে আমার আপু মারা গেছে। "
" কি হয়েছিল তার? "
" যদি দেখা হয় আর আপনার হাতে সময় থাকে তাহলে সবকিছু বলবো। আপনি সাবধানে আসেন আমি আপনার অপেক্ষায় রইলাম, আর এক্ষুনি দুধমুখা বাজারে গিয়ে খোঁজ নেবো। "
" কীভাবে কি করবেন? "
" বাজারের সকল সিএনজি ও রিক্সাওলাকে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবো। তারপর নাহলে সেই মোহাম্মদ নগর গ্রামের মধ্যে যাবো, একটা সুস্থ মানুষ অবশ্যই পাওয়া যাবে। "
'অবশ্যই পাওয়া যাবে' এই বাক্যটা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠল, চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি বের হয়ে গেল। আমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললাম,
" তাই যেন হয় ভাই, এই বোনের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ করে দিও। আমি যে অন্যায় তার সঙ্গে করেছি সেটা যে আমাকেই সমাধান করতে হবে ভাই। "
" আপনি আসেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি, ইনশা- আল্লাহ খুঁজে পাবো। আপনি কাঁদবেন না আপু। "
|
সজীব ভাই আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে টিকিট হাতে দিয়ে বললো,
" সাবধানে থাকবেন ভাবি, অপরিচিত স্থান তাই সবকিছু দেখে নিবেন। আর আপনাকে যে মেয়ের নাম্বার দিলাম তার বাসা নোয়াখালী সদরে। "
" কিন্তু আমি তো বসুরহাট যাবো। "
'' সমস্যা নেই ভাবি, আপনি সেখানে কাজ শেষ করে সাজ্জাদকে পান বা না পান তবুও আশেপাশে পরিচিত কেউ নেই। তাই দিনশেষে যেন সেখানে গিয়ে যেন থাকতে পারেন। "
" ধন্যবাদ ভাই। "
" আমি সবসময় কল দিয়ে খোঁজ নেবো, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। "
" আচ্ছা ঠিক আছে! "
কুমিল্লা হোটেল থেকে গাড়ি বের হতেই বসুরহাট থেকে সেই ছেলেটা কল দিল। এখনো নামটা জানা হয় নাই তাই রিসিভ করে বললাম,
" আমি এখনো আপনার নাম জানি না ভাই। "
" আমার নাম ফেরদৌস আহমেদ, আমি আপনার ছোট হবো তাই তুমি করে বলবেন। "
" কোনো খবর পেলে? "
" হ্যাঁ আপু সেজন্য কল দিলাম, আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন। একটা সিএনজি নিয়ে তিনি সেই গ্রামে গেছিলেন, ড্রাইভার তাকে যেখানে নামিয়ে দিয়েছে সেই স্থানটার নাম জেনে নিয়েছি। "
" কার বাড়িতে গেছে, জানো কিছু? "
" না আপু, যেখানে নেমেছেন সেখান থেকে নাকি সামনে একটা রাস্তা ছিল। সেই রাস্তা দিয়ে তিনি হেঁটে হেঁটে চলে গেছে, কিন্তু সমস্যা নেই কারণ সেখানে গিয়ে আশেপাশে খোঁজ নিলেই পাওয়া যাবে ইনশাহা-আল্লাহ। "
" আমি তো কেবল কুমিল্লা পার হলাম, এখনো ঠিক কতক্ষণ লাগবে বুঝতে পারছি না। "
" মোটামুটি বিকেল তিনটা বা সাড়ে তিনটার মধ্যে পৌঁছে যাবেন হয়তো। দিন থাকতে এলে বেশি ভালো হবে, আমি কিন্তু এখন সিএনজি নিয়ে সেই গ্রামের মধ্যে যাচ্ছি। "
" শুকরিয়া ভাই। "
" আমি সেখানে গিয়ে আশেপাশের সবার কাছে জিজ্ঞেস করে বের করবো। আপনি ফেনি মহিপাল স্টেশন এলে আমাকে জানাবেন, তাহলে আমি বসুরহাট বা দুধমুখা বাজারে দাঁড়াবো। "
" আমি তো চিনি না মহিপাল। "
" দেখবেন বাস থেকে যাত্রী নামবে সেখানে, আর নাহলে দেখবেন একটা ফ্লাইওভারের নিচ থেকে গাড়ি ডানদিকে মোড় নেবে। তখন রাস্তার পাশে দোকানে তাকিয়ে সাইনবোর্ডে লেখা পড়বেন। "
" আচ্ছা। "
৩ঃ৪০ মিনিটে আমি বসুরহাট বাসটার্মিনালে বাস থেকে নামলাম, আমি বাস থেকে নামতেই কালো শার্ট পরিহিত একটা ছেলে আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,
" আপনি শাকিলা আপু, তাই না? "
" হ্যাঁ, তুমি ফেরদৌস? "
" জ্বি আপু, আসুন আমার সঙ্গে। "
ফেরদৌস তার বাইকে স্টার্ট দিল, আমি সামান্য কৌতূহল বোধ করলাম। তখন সে বলেছিল যে সিএনজি নিয়ে সেই গ্রামের মধ্যে যাচ্ছে তাহলে বাইক নিয়ে গেল না কেন?
" আপু সাজ্জাদ ভাই যে বাড়িতে গেছে সেই বাড়ি আমি খুঁজে বের করেছি। "
" সত্যি বলছো? এতক্ষণ কল দিয়ে বলোনি কেন? "
" কারণ সাজ্জাদ ভাই নেই, তিনি নাকি সকাল বেলা চলে গেছে। আপনাকে বললে কষ্ট পাবেন বা আশাহত হবেন তাই বলিনি, তবে আমার বারবার মনে হচ্ছে সাজ্জাদ ভাই ওই বাড়িতে আছে। "
" কেন? "
" কারণ সবার আচরণ কেমন যেন মনে হলো আর আমি তার বিষয় কিছু জিজ্ঞেস করতেই তারা কেন যেন উত্তর দিতে চায় না। যেমন, জিজ্ঞেস করেছি তাদের সঙ্গে কিসের সম্পর্ক তার? "
" কি বললেন তারা? "
" ইনিয়েবিনিয়ে অনেক কিছু বললেন যার কিছু পরিষ্কার বুঝতে পারিনি। "
বাইক থামলো।
আমরা দাঁড়িয়ে আছি কোম্পানিগঞ্জ থানার সামনে, নোয়াখালী।
" বললাম, এখানে কেন ফেরদৌস? "
" আপনি একটা জিডি করবেন, আমার বড়মামা এখানের দারোগা। যদিও আমার পারিবারিক ভাবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না তবে মামা আমাকে আদর করে খুব। তার কাছে গিয়ে জিডি করতে হবে, সাজ্জাদ ভাইয়ের ছবি দেবেন আর আপনি তাকে খুঁজতে এসেছেন তার নিশ্চয়তা। "
" মানে? "
" মানে আপনার যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে যেন সবকিছু পুলিশের জানা থাকে। "
অনেকটা অপমানিত হলাম, ছেলেটাকে সামান্য অবিশ্বাস করাতে হয়তো এমনটা করেছে। চুপচাপ কথা না বলে সবকিছু ঠিক মতো গুছিয়ে আমরা বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ফেরদৌসের দারোগা মামা নিজের বাইক নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে সম্পুর্ণ অপরিচিত কাউকে কেউ সাহায্য করতে পারে সেটা জানা ছিল না।
বাইক চলছে, ফেরদৌস বললো " আমি আপনার জন্য এতকিছু কেন করছি জানেন আপু? "
" কেন? "
" আমার আপুটা মৃত্যুর আগে বারবার আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু আপুর জীবনটা ছিল এমনই তাই সিরিয়াস নেইনি, কিন্তু যখন জানতে পেরেছি আপু মারা গেছে। তখন সবকিছু যেন নিজের ঘাড়ে অপরাধ চাপা পড়লো। "
|
|
সাজ্জাদ সত্যি সত্যি নেই, দারোগার হুমকিতে তারা সবাই ভয় পেয়ে গেল। বাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা অত্যন্ত গরীব, আমি তাদের অভয় দিয়ে বললাম,
" আমি সাজ্জাদের স্ত্রী, সাজ্জাদ রাগ করে ঢাকা থেকে চলে এসেছে। ওকে খুঁজে বের করা আমার জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ এই মুহূর্তে। "
এক মহিলা বললেন, " মা সত্যি বলছি সাজ্জাদ চলে গেছে, সকাল বেলা উঠেই সে চলে গেছে। "
" কোথায় যাবে কিছু জানেন? "
" বলেছিল আবার ঢাকায় চলে যাবে। "
" কি...? ঢাকায়? "
" হ্যাঁ "
" আপনাদের সঙ্গে ওর পরিচয় কীভাবে? "
" সাজ্জাদ যখন ছোটো একটা চাকরি করতো তখন সে একটা সাহেবের ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতো। সেই বাসায় আমি কাজ করতাম, আর সেখান থেকেই আমাদের পরিচয়। "
" আশ্চর্য! "
" আমার মেয়েটা পরীক্ষায় ভালো পাশ করেছিল তখন তাকে বলেছিলাম। সে বলেছিলাম একদিন গ্রামের বাড়িতে এসে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করে যাবে। আমার কাছ থেকে খুব আগ্রহ করে ঠিকানা লিখে নিয়েছিল। ভেবেছিলাম সে কখনো আসবে না কিন্তু ৩/৪ বছর পড় হঠাৎ গতকাল রাতে যখন এসেছে তখন অবাক হয়ে গেছি। "
আমার আর তেমন কিছু জানার ছিল না, আমি ফেরদৌসের সঙ্গে ক্লান্ত শরীরে তাদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। দারোগা সাহেব বললেন কোন সমস্যা নেই আপনি আজকে রাতটা থেকে কালকে সকালে উঠে ঢাকা চলে যাবেন।
ফেরদৌসের বাসায় এসে সত্যিই অবাকের চেয়ে বেশি অবাক হলাম। তার মা-বাবা আমাকে অনেক আদর আপ্যায়ন করতে লাগলো, ঠিক যের তার নিজের মেয়ে আমি। কিন্তু আমরা তো বাঙালি, তাই অতিরিক্ত আদরের মধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
কথায় বলে " অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ "।
রাত এগারোটা।
আমাকে আলাদা রুমের মধ্যে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। মোবাইল সাইলেন্ট করে ক্লান্তি আর কান্না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সজীব ভাইয়ের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছে, সাজ্জাদ যদি ঢাকা গিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন বলেছে।
পরদিন সকাল।
ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি অনেক গুলো মিসডকল। সুমনা, সজীব ভাই, অপরিচিত এমন অনেক নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। আমি সবার আগে সজীব ভাইয়ের নাম্বারে কলব্যাক করলাম,
সজীব ভাই রিসিভ করে উৎকণ্ঠিত গলায় বলল,
" ভাবি আপনি কোন যায়গা?
" আমি তো নোয়াখালী সেই ফেরদৌসের বাসায়! "
" সর্বনাশ হয়ে গেছে ভাবি। "
" কি হয়েছে সজীব ভাই? "
" আপনার বাসা থেকে কেউ কল করেনি? "
" করেছে কিন্তু কথা হয়নি! "
" গতকাল রাতে সাজ্জাদ আপনাদের বাসায় মানে আপনি আর সাজ্জাদ যেখানে থাকেন সেখানে আপনার বাবাকে খুন করেছে। আপনার বাবার লাশ পোস্টমর্টেম করতে নেওয়া হয়েছে আর সাজ্জাদও হাসপাতালে কারণ তাকে পাওয়া গেছে অজ্ঞান অবস্থায়। মাথায় একটা লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, তবে পুলিশের ধারণা এটা সাজ্জাদ নিজে ইচ্ছে করে করেছে। আপনার বাবাকে খুন করে তারপর নিজেকে নিজে আঘাত করে অজ্ঞান হয়েছে। "
" আমি হাউমাউ করে বললাম, কি বলছেন সজীব ভাই? এটা শোনার জন্য আমি বেঁচে আছি? "
.
.
চলবে.......
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)