19-01-2025, 04:37 PM
(This post was last modified: 19-01-2025, 04:42 PM by Bangla Golpo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্বঃ- ০৯ (শেষ)
- সাজু বললো, দেলোয়ার সাহেব আপনি চাইলে ডিভোর্স দিতে পারতেন কিন্তু মানুষ দিয়ে হত্যার ব্যবস্থা কেন করলেন?
সবাই হা হয়ে গেল, সাজু হঠাৎ করে এমন একটা বোমা ফাটাবে কেউ ভাবেনি। দেলোয়ার হোসেন চিৎকার করে বললো,
- কি বলছেন আপনি? পাগল নাকি?
- আস্তে কথা বলেন, বেশি চিৎকার করলে কিন্তু শারীরিক সমস্যা হবে। আমি সবকিছু সুন্দর করে বলে দিচ্ছি আপনি আপনার পুরনো অতীতের সঙ্গে মিলিয়ে নেন৷
- হাজী সাহেব বললো, আপনি বলেন।
- দেলোয়ার সাহেব যখন থেকে তার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তার কিছুদিন পরেই সেটা রেবেকা আফরোজ জানতে পারেন। আর সেটা তার কাছে বলে তাদেরই গ্রামের একজন মানুষ যিনি ইতালিতে বাস করেন। সেই লোকটার সন্ধান পর্যন্ত আমি বের করেছি, এবং তার বক্তব্য হচ্ছে তিনি রেবেকা আফরোজের কাছে সত্যিটা বলার জন্য দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এমনকি তাকে সেই স্থান ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তাই পরবর্তী সময়ের অনেক কিছু তিনি জানেন না। দেলোয়ার হোসেন ও বিয়ে করে এলাকা পরিবর্তন করে যার কারণে কেউ কারো খোঁজ জানেন না। এরপর দিন বদলে গেছে আস্তে আস্তে সবকিছু ভুলে গেলেন সেই লোকটা। কিন্তু দুবছর পরে যখন তিনি তার গ্রামের মানুষের কাছে জানতে পারেন রেবেকা আফরোজ আত্মহত্যা করেছে। এবং এর কারণ হচ্ছে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করা, তখন তিনি ভাবলেন দেলোয়ার মনে হয় তখনই বিয়ে করেছে। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন যে অনেক আগেই বিয়ে করেছে সেটা তার জানা ছিল না।
- মনোয়ার হোসেন বললো, কিন্তু এর সঙ্গে খুনের সম্পর্ক কিসের?
- সাজু বললো, আফজাল সাহেব আপনার ছেলে মিনহাজের পুলিশের চাকরির জন্য কত টাকা ঘুষ লেগেছে?
চমকে গেল মিনহাজ। আফজাল খন্দকার তখন বললো,
- মিনহাজের চাকরির জন্য কোনো টাকা দরকার হয় নাই, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয়েছে।
- চাকরির বিষয় কি আপনি কথা বলতেন নাকি মিনহাজ নিজেই?
- শহরে বসে একবার এক অফিসার ওকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি ওকে পুলিশ যোগ দেবার পরামর্শ দেন এবং যাবতীয় সাহায্য করার আশ্বাস দেন।
- ছেলে ভুলানো গল্প, আপনার ছেলে বললো আর আপনি সেটা মেনে নিলেন?
- আফজাল সাহেব বিরক্ত হয়ে বললো, এটা না মানার কি আছে বাপু? চাকরি টা তো হয়েছে তাই না?
- চাকরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা ঘুষের মাধ্যমে।
- মানে?
- আপনার বোন তার ডায়েরির একদম শেষের দিকে লিখেছিল " আজকে আবারও তার সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়ে গেল, কারণটা অবশ্য আমার ভাইয়ের ছেলে। ওর খুব ইচ্ছে পুলিশের চাকরি করবে কিন্তু অনেক টাকার দরকার। ভাইয়ার কাছে এতো টাকা নেই তাই সে আমার কাছে আবদার করেছে। নয়নের বাবার কাছে টাকার জন্য বললাম কিন্তু তিনি বরাবরের মতো আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করলেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবহার পেয়ে আমি অভ্যস্ত। "
- হাজী সাহেব বললো, তারমানে ঘুষের টাকার ব্যবস্থা রেবেকা করেছিল?
- না হাজী সাহেব, রেবেকা আফরোজ টাকা দিতে পারে নাই তবে টাকা দিয়েছে তারই স্বামী। আর সেটা তাকে হত্যা করার শর্তে।
- আফজাল খন্দকার বললেন, মিনহাজের বয়স তখন মাত্র সতেরো বছর। সেই বয়সে সে তার ফুপু কে হত্যা করবে, পাগল আপনি?
- আচ্ছা তাহলে ভুল। আচ্ছা দেলোয়ার সাহেব আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
দেলোয়ার হোসেনের গলা একদম শুষ্ক, তিনি যেন কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারে না। উপস্থিত সবার মনের মধ্যে কৌতূহল, সবটা জানার আগ্রহ।
- দেলোয়ার সাহেব বললো, কি কথা?
- আপনারা সবাই দেশে ফিরবেন এটা আপনার নিজের পরিবার ছাড়া আর কে জানে?
- না জানে না।
- আপনি দেশে ফেরার আগেরদিন মিনহাজের সঙ্গে ৩৪ মিনিট কথা বলেছেন। কি কথা? আপনি তো নয়নের পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তাহলে মিনহাজের সঙ্গে কিসের এতো সম্পর্ক যেখানে আপনি কয়েকবার তাকে ইতালি থেকে টাকা ও পাঠিয়েছেন।
- কো-ই নাতো
সাজু এবার নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,
- তোমার কাছে তোমার বাবার দেশে আসার খবর কে দিয়েছে নয়ন?
- নয়ন বললো, মিনহাজ ভাই বলেছে। বাবা কখন ফ্লাইট উঠবে, আর কখন তারা বিমানবন্দর থেকে বের হবে সবকিছুই।
মিনহাজ বুঝতে পেরেছে সাজু তার গোপনীয় সব কর্মকান্ড বের করে ফেলেছে। সে চোখের পলকে ছুটে পালানোর বৃথা চেষ্টা করতে গেল কিন্তু রাতুল তাকে ধরে ফেললো। রাতুলের সঙ্গী হলো নয়ন, শক্ত করে তাকে আটকে বসানো হলো সবার সামনে। দেলোয়ার হোসেন ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছেন, মনে হচ্ছে অক্সিজেনের ঘাটতি তার।
★★
দেলোয়ার হোসেন চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। তার চোখের পানি দেখে সাজু মুচকি হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। হাজী সাহেবের তাগিদে দেলোয়ার হোসেন বললো,
- আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলাম তার একটা শর্ত মানার পরে। তাকে বলেছিলাম আমি আমার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো তবে একটু সময় নিতে হবে। বিয়ের পরে তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত এটা নিয়ে ঝামেলা হতে থাকে। এদিকে গ্রামের বাড়িতে কল দিলে রেবেকার হাজার অভিযোগ, সবমিলিয়ে আমি একটা মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। তখন আমার কি করা উচিৎ সেটা নিজে বুঝতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় বিয়ের কথা অনেকদিন গোপন করে রাখি। পরে যখন জাহানারা আরো বেশি চাপ দিতে লাগলো তখন আমি বাড়িতে বলে দিলাম যে আমি বিয়ে করেছি। সেদিন রেবেকার সঙ্গে আমার প্রচুর ঝগড়া হয়ে গেল, তার কথার ধরণে আমার রাগ উঠে গেল অনেক। আমি সেই সময় মিনহাজকে কল দিলাম, কারণ তার টাকার দরকার ছিল অনেক। মিনহাজের বাবা ঘুষের টাকা দিয়ে কখনো ছেলেকে চাকরি করাবেন না। আমি সেই সুযোগটা নিলাম, মিনহাজের সঙ্গে কথা বলে তাকে কথার মধ্যে ফেলে দিলাম। তারপর টাকার লোভে হাবুডুবু খাইয়ে বললাম যে নিজের ফুপুকে খুন করতে হবে। মিনহাজ খানিকক্ষণ চুপ থেকে রাজি হয়ে গেল, বাংলাদেশ সময় তখন দুপুরের মতো হবে। এরপর বাংলাদেশ থেকে পরদিন খবর পেলাম রেবেকা নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি মিনহাজকে কল দিয়ে বললাম তোমার ফুপু নিজেই মারা গেছে এখন আর তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।
- সাজু বললো, তাহলে আপনি তবুও কেন টাকা দিয়েছেন মিনহাজকে, আপনি যেহেতু শুনেছেন আপনার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।
- সেদিন মিনহাজের কাছে যে কথোপকথন ছিল সেটা সে রেকর্ড করেছিল। মিনহাজ বলেছিল যে আমি টাকা না দিলে সে এটা সবাইকে শুনাবে।
- মিনহাজের মা বললো, তারমানে তুই সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যাসনি। গোপনে এখানে এসে ওকে খুন করেছিস? এতটা খারাপ তুই?
- সাজু বললো, নিজেকে নয় বছর ধরে আড়াল করতে পেরেছেন মিনহাজ সাহেব। আর সুযোগ নেই তাই আপনার কৌশলটা যদি বলতেন আমি সহ সবাই একটু জানতে পারতাম।
- মিনহাজ বললো, চাকরি আর টাকার দরকার ছিল তাই ভালো মন্দের বাচবিচার করিনি। আমি সেই বিকেলেই বাগেরহাটে রওনা দিলাম, চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় বিষ এনেছিলাম। বিকেলের দিকে রওনা দিলাম আর ঘাটে জ্যাম ছিল না তাই রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমি রূপসা এলাম। তারপর স্টেশনে গাড়ি নেই, মাঠের মধ্য দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। দাদা বাড়িতে যখন গেলাম তখন রাত প্রায় দুইটার বেশি বেজে গেছে। আমি কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম, ভেবেছিলাম নিজের আসার কথা সবাইকে বলবো। কিন্তু সেই মুহূর্তে ফুপুর ঘরের দরজা খুলে গেল, ফুপু বের হয়ে নয়নের রুমে চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি তার রুমের মধ্যে গিয়ে টেবিলের উপর পানির জগে বিষ মিশিয়ে দিলাম, গ্লাসেও খানিকটা দিলাম। তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা খুলনা শহরে চলে গেলাম। আমার ধারণা ছিল রাতে কিংবা সকালে পানি খেয়ে ফুপু মারা যাবে। হলো ও তাই, আমি সকাল বেলা বাবার কাছে শুনতে পেলাম ফুপু মারা গেছে আত্মহত্যা করে। চট্টগ্রামে মায়ের কাছে কল দিয়ে বললাম সে যেন রওনা দেয় আমি কক্সবাজার থেকে সরাসরি ঢাকার গাড়িতে উঠবো। তারপর সারাদিন খুলনা শহরে লুকিয়ে থেকে পরের রাত দশটার দিকে দাদা বাড়িতে গেলাম। বিকেলেই লাশ দাফন করা হয়েছে জানতাম, বাড়িতে গিয়ে কবরস্থানে খানিকটা কাঁদলাম। সত্যি বলতে তখন আমার সত্যি সত্যি কান্না এসেছিল, যেই ফুপুর এতো ভালোবাসা পেলাম। তাকে নিজের হাতে মেরে ফেলার মতো তীব্র কষ্ট আর কি হতে পারে?
- সাজু বললো, তোমার খুনের কথা তো নয়নের বাবা ও জানতো না। তাহলে তুমি নয়নের বাবার উপর আক্রমণ করালে কীভাবে? আর কেন?
- তিনি আমাকে বারবার বলতেন ফুপু মারা গেছে নাকি আমার হাতে। তিনি আমাকে টাকা দিলেও পরে বুঝতে পেরেছেন কাজটা ঠিক হয় নাই। এই কথাটা আমিও বুঝতে পেরেছি কিন্তু কিছু করার নেই কারণ ফুপু তখন কবরে। বাড়িতে আসার মাত্র কদিন আগে ফুপা আমাকে বলেন তার নাকি বারবার মনে হচ্ছে সেদিন আমি খুন করেছি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রচুর তর্কবিতর্ক হলো, আমি তখন দ্বিতীয় বুদ্ধি করলাম। লোক সেট করলাম তাকে বিমানবন্দর থেকে নামার পরই সরিয়ে দেবে। আর নয়নকে পাঠিয়ে দিলাম ঢাকায়। তার রাগের কথা আমাদের দুই বংশের সবাই জানে। কিন্তু নয়ন যে খুন করতে পারবে না এতটুকু আমি নিশ্চিত ছিলাম তাই নিজেই ব্যবস্থা করা। নয়নকে কাঁচপুরের পরে নারায়ণগঞ্জ নামিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। ওদিকে সকাল বেলা অন্যরা আক্রমণ করলো নয়নের বাবাকে। পরদিন নয়ন সুস্থ হবে কিন্তু ততক্ষণে তার ঘাড়ে উঠে যাবে বাবা হত্যার দায়। কিন্তু তার বাবা বেঁচে গেল, মাঝখানে সবটা এলোমেলো হয়ে গেল সাজু ভাই আপনার আগমনে।
আমি কোনদিন ভাবিনি এটা নিয়ে তদন্ত হবে তাই সবকিছু বেশি নিখুঁত করিনি। তবুও সাজু ভাইয়ের সব কথা আমি পালন করেছি যেন সন্দেহের তীর আমার দিকে না আসে। সেদিন নয়ন ঢাকা থেকে ফেরার সময় তাকে কিডন্যাপারে ব্যবস্থা ও আমি করেছিলাম।
|
|
হাজী ফজলুল সাহেব থানায় খবর দিলেন, পুলিশ এসে দেলোয়ার হোসেন ও মিনহাজকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। সাজু কাজল ও রামিশা রওনা দিল বাগেরহাট, হাজী সাহেব অনুরোধ করেছিল থাকার জন্য কিন্তু সাজু রাজি হয়নি। যা করার পুলিশ ও আদালত করবে, আপাতত তার কাজ শেষ হয়ে গেছে। সাজু নিজের শরীর অসুস্থ অনুভব করতে লাগলো আরো বেশি।
★★★
পরদিন দুপুরের খানিকটা আগে সাজু তার মায়ের কবরের কাছে গেল। বহুদিন ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না তাই ঝোপঝাড় জমে যাচ্ছে। নিজের হাতে সবকিছু কেটে কেটে পরিষ্কার করলো, রামিশা তখন দাঁড়িয়ে ছিল অদুরেই।
- রামিশা বললো, আপনি কি সবসময় নিজের হাতে পরিষ্কার করেন নাকি মাঝে মাঝে মানুষের দ্বারা করেন।
- যখনই বাড়িতে আসি তখনই নিজের হাতে এটা করি, মা বলে কথা।
- আমরা চট্টগ্রামে কখন যাচ্ছি?
- সন্ধ্যা বেলা, তোমরা চট্টগ্রামে চলে যাবে আর আমি যাবো ঢাকা। তবে একই বাসে যাবো, ঢাকা গিয়ে আমি নেমে যাবো আর তোমরা চলে যাবে।
- কাজল যেতে চায় না, নয়নকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায়।
- আপাতত তার দরকার নেই, সে শহরে যাক তারপর নয়ন পরে যাবে সমস্যা নেই তো।
- হুম সেটাই বোঝাচ্ছি তাকে।
আসরের পরে তারা রওনা দিল, যাবার সময় সাজু তার মায়ের কবরের কাছে গিয়ে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
★★
মাওয়া ফেরিতে উঠে রাত দশটার দিকে রামিশা ও সাজু বাস থেকে নেমে গেল। তৃতীয় তলায় ফেরির ছাদে গিয়ে দাঁড়াল দুজন, প্রচুর বাতাস, মাথার উপর খোলা আকাশ চারিদিকে অন্ধকারে চরের আবছায়া। নদীর মধ্যে মাঝে নৌকার ভেতর বাতি জ্বলে, দুর দুরন্ত থেকে আলো আসে চোখে।
- একটা কথা বলবো সাজু ভাই?
- বলো।
- চারিদিকের পরিবেশটা কেমন লাগছে?
- খুব ভালো, যারা প্রেম করে তাদের উচিৎ এই ফেরিতে করে রাতে এভাবে এপার থেকে ওপারে ভ্রমণ করা।
- ঢাকা থেকে আবার চট্টগ্রামে কবে যাবেন?
- জানি না।
- ওই যে নদীর চরে কত মানুষের ঘরবাড়ি দেখা যায়, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ওখানে থাকার ব্যবস্থা করা যায় না? যেখানে ব্যস্ত শহরের কোন আনাগোনা নেই, সবাই নিস্তব্ধ।
সাজু সামান্য হাসলো তবে কিছু বলে নাই, সামান্য অন্ধকারে সাজুর চোখে দুফোঁটা পানি রামিশার নজরে আসে নাই। তবে এ পানির রহস্য আলাদা।
রাত দুইটা।
ফেরিঘাট থেকে উঠেই ঘুমিয়ে গেছে রামিশা, বাস ততক্ষণে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায়। সুপারভাইজারকে সাজু আগেই বলে রেখেছিল তাকে যাত্রাবাড়ীতে নামিয়ে দিতে হবে। সুপারভাইজার এসে ডাকলো, ঘুমন্ত রামিশাকে আস্তে করে সরিয়ে দিল সাজু। ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতে গিয়েও পারলো না, যেমন করে ঘাড়ে মাথা রেখে জড়িয়ে ছিল সেখানে ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গানো কি দরকার?
কাজলের কাছে একটা ডায়েরি রেখে বাস থেকে নেমে গেল সাজু। যতক্ষণ পর্যন্ত বাস দেখা গেল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে রইল। তারপর একটা সিএনজি নিয়ে বনানী রওনা দিল।
রামিশার ঘুম ভাঙ্গে মেঘনা ব্রিজের ওপর এসে, কিন্তু ততক্ষণে তার পাশের সিটে সাজু নেই। সে চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো, পাশের সিটে এখন কাজল বসে আছে। সাজু নেমে যাবার পরে কাজল তার পাশে বসেছিল।
- সাজু ভাই কোথায়?
- তিনি তো নেমে গেছে ঢাকায়।
- আমাকে ডাকেনি কেন?
- তুই ঘুমাচ্ছিস তাই। আর হ্যাঁ, তোর জন্য একটা ডায়েরি রেখে গেছে, তুই ঘুম থেকে উঠলেই পড়া শুরু করতে বলেছে। তবে চট্টগ্রামে গিয়ে পড়লেও সমস্যা নেই।
অনেক বড় ডায়েরি, মাত্র তিনটা পৃষ্ঠা লেখা।
রামু,
দুদিন পরে আমি লন্ডনে যাচ্ছি, চিকিৎসার জন্য। যাবার সময় তোমাকে বলে যেতাম, কিন্তু প্রতিটি বিদায় মুহূর্ত অত্যন্ত বেদনার। তুমি আমার খুব ভালো একটা বন্ধু, সম্পর্কটা আসলেই কি বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ নাকি আরেকটু বেশি সেটা জানি না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সম্পর্কটা নিয়ে খানিকটা ভেবে নেবো কিন্তু তা আর হয় না।
চট্টগ্রামে সেবার রাহুলের হত্যা মামলার সময় আমি বেশ অসুস্থ ছিলাম, জানো তো। সেখান থেকে ফিরে আমি বেশ কিছু টেষ্ট করিয়াছি কারণ শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না।
রিপোর্ট সবগুলোই খারাপ, হার্টে সমস্যা।
আমি সবগুলো রিপোর্ট বাবার কাছে লন্ডনে জমা দিছিলাম ভালো করে পরীক্ষা করতে। তারা দ্রুত অপারেশন করার দাবি করেন, তাই তখন থেকে বাবা আমাকে লন্ডনে যেতে বলেন। আমি বিদায় নেবার জন্য তোমার সঙ্গে শেষ দেখা করতে চট্টগ্রামে গেছিলাম কিন্তু সেখানে গিয়ে তোমার বান্ধবী কাজলের সঙ্গে কথা হয়ে গেল।
তারপর ভাবলাম এই মামলা নাহয় শেষ করে যাই, কারণ হতে পারে এটাই আমার জীবনের শেষ রহস্যের সমাধান। অপারেশনে আমার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম, আর সেজন্যই আমি লন্ডনে যেতে চাইনি। কারণ আমি চাই মৃত্যুর পরে আমার মায়ের কবরের পাশে আমার কবর হোক। মায়ের ও ঠিক একই রোগ হয়েছিল, মা বাঁচতে পারেনি আমিও মনে হয় চলে যাবো।
বাবার কাছে লন্ডনে যাবার জন্য রাজি হয়েছি কারণ বাবা কথা দিয়েছে যে, যদি আমি মারা যাই তাহলে তিনি আমার লাশ দেশে আনবেন। আর মায়ের কবরের পাশে কবর দিবেন, যদি বাবা রাজি না হতো তাহলে যেতাম না।
যদি বেঁচে থাকি তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু তোমার সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানি না। কারণ তোমার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে। তুমি হয়ে যাবে অন্য কারো, সুইডেনের মনোরম প্রকৃতি মুগ্ধ করবে তোমাকে।
আমার জন্য মন খারাপ করো না, এক জীবনে মানুষের কত আপনজন হয়। আবার কত মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে যায়, তোমার কথা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্মরণ থাকবে।
যদি মারা যাই তাহলে তো জানতে পারবে, সম্ভব হলে আমার গ্রামের বাড়িতে যাবে। আর যদি বেঁচে থাকি তাহলে তুমি পৃথিবীর যেখানে থাকো তবুও একদিন ঠিক দেখা হবে।
তোমার ভবিষ্যত সন্তানের জন্য কিছু নাম ঠিক করে দিলাম, ইচ্ছে হলে রাখিও।
মেয়ে হলে, আনাহিতা বা আনায়া।
ছেলে হলে, আরহাম।
সাবধানে যেও, ভালো থেকো সবসময়।
ইতি... সাজু।
|
কি হবে সাজু ভাইয়ের? সে বেঁচে ফিরবে নাকি সবার ভালোবাসা নিয়ে হারিয়ে যাবে বহুদূর? সাজুর প্রতি ভালোবাসা আর গল্পের বিষয় মন্তব্য করবেন।
-------- সমাপ্ত --------
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।
সাজু ভাই সিরিজের সব গুলোর গল্পের লিংক,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)