Thread Rating:
  • 1 Vote(s) - 5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর-০৫ গল্প: সরি আব্বাজান (২) সমাপ্ত
#7
 পর্বঃ- ০৭


- সাজু বললো, মিনহাজকে যদি সন্দেহের মধ্যে রাখি তাহলে সকল হিসাব গন্ডগোল হয়ে যাবে। আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গরমিল হচ্ছে যেটা আমি ঠিকঠাক মেলাতে পারছি না। 

- এখন কি করবেন? 

- নয়নের মায়ের ডায়েরিটা খুব দরকার ছিল, সেই ডায়েরি পেলে অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতাম। 

- আপনি চট্টগ্রাম থেকে সেটা নিলেন না কেন? 

- তখন বুঝতে পারিনি ঘটনা এভাবে রূপ নেবে। 

- মিনহাজকে কল দিবেন? 

- দিয়ে দেখতে পারি কারণ আমার মনে হয় কাল রাতে মিনহাজের কথা কেউ শুনেছে। আর নাহলে নয়ন যেখানে ছিল সেখানে কেউ তার উপর নজর রেখেছে। 

- দুটোই হতে পারে, তবে যদি এমনটা হয় তাহলে তো মিনহাজকে সন্দেহ করা ঠিক না। 

- তাকে আমিও সন্দেহের তালিকায় আনিনি, তবে তার বাবা আছে। 

সাজুর মোবাইল বেজে উঠল। বের করে দেখল মিনহাজ কল করেছে, খানিকটা বিস্মিত হয়ে রিসিভ করলো সাজু। 

- ভাই কি করছেন? 

- তেমন কিছু না, আপনি কি করেন? 

- আমার এক বন্ধু আজকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে তাকে তুলে দিতে এসেছি। 

- নয়নকে বাস থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে তার কিছু জানেন? 

- কি বলেন ভাই? আমি তো ভেবেছিলাম নয়ন আপনার বাড়িতে গেছে। আমি তো কল করেছি যে ডায়েরিটা আমার বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেবো তার বাড়ি পিরোজপুর। 

- আচ্ছা পাঠিয়ে দেন, কিন্তু নয়নকে বাস থেকে তিনজন লোক নামিয়ে নিয়ে গেছে। আপনি কি তার কথা অন্য কাউকে বলেছেন? 

- আমি গতকাল রাতে যখন কথা বলছিলাম তখন তো বাবা মা সামনে ছিল। আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ জানে না সাজু ভাই। 

- আপনার বাবা জানেন যে নয়ন কোন বাসে করে বাগেরহাট রওনা দিয়েছে ? 

- হ্যাঁ। 

- আপনার বাবাকে এবার ভালো করে জিজ্ঞেস করুন কারণ নয়নের সন্ধান তার কাছে পাবেন। 

- কি বলেন ভাই? 

- তাছাড়া আর কি? নয়নের আসার কথা আপনি আমি আর আপনার বলা ছাড়া কেউ জানে না তাহলে নয়নকে কে কিডন্যাপ করবে? 

- আমি আজই বাবার কাছে সবকিছু জিজ্ঞেস করবো সাজু ভাই। 

- কিছু করতে হবে না, আপনি একটা কাজ করে ফেলুন মিনহাজ সাহেব। 

- জ্বি বলেন ভাই। 

- ডায়েরিটা আপনার সেই বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেন আমি পিরোজপুর গিয়ে নিয়ে আসবো। আর আপনি আপনার মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। 

- কিন্তু কেন?

- আমি চাই আপনার ফুপুর খুনি ধরার সময় আপনাদের এবং নয়নের দাদা বাড়ির সবাই যেন উপস্থিত থাকে। 

- ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করবো। কিন্তু নয়নের বাবা কি সুস্থ হয়েছে? তিনি কবে যেতে পারবেন গ্রামের বাড়িতে? 

- তাকেও নিয়ে আসা হবে, ২/৩ দিন সময় দরকার হবে। তবে আরও কিছু তথ্যের বাকি আছে যেটা আমাকে ইতালি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। 

- কীভাবে? 

- আচ্ছা বলেন তো, নয়নের বাবা যেখানে থাকে সেখানে আপনাদের বা নয়নের দাদা বাড়ির কেউ আছে? 

- হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির পাশের একটা আঙ্কেল আছে সেখানে। কিন্তু তার সঙ্গে নয়নের বাবার খুব খারাপ সম্পর্ক, কোনো যোগাযোগ নেই। 

- আচ্ছা। 

- আমি তাহলে ডায়েরি পাঠিয়ে দেবো নাকি কাল নিজের সঙ্গে করে নিয়ে আসবো? 

- আজকে পাঠিয়ে দেন, ২৪ ঘন্টা আগে পৌঁছালে সেই ২৪ ঘন্টা আমার কাছে মূল্যবান। 

- ঠিক আছে ভাই 

★★★

বেলা ১১ঃ৩৫ 

সাজু তার বাবার বন্ধু অবিনাশ চ্যাটার্জিকে কল দিল লন্ডনে। তিনি একজন সখের ফটোগ্রাফার, সাজুর বাবার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। সাজু যখনই বাবার কাছে বেড়াতে যেত তখনই তার সঙ্গে কথা হতো বেশি। ভদ্রলোক ইউরোপের অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন, তার বাড়ি কলকাতা শিলিগুড়ি। 

বাংলাদেশের সময়ের সঙ্গে ৬ ঘন্টা পার্থক্য থাকা স্বত্বেও সাজু কল দিল। কারণ অবিনাশ চ্যাটার্জির খুব ভোরবেলা উঠে হাটাহাটি করেন। সেই হিসাব অনুযায়ী এখন সেখানে ভোর সাড়ে পাঁচটা। 

- সাজু বললো, আঙ্কেল কেমন আছেন? 

- খুব ভালো, তারপর হঠাৎ অনেকদিন পরে কি মনে করে স্মরণ করা হচ্ছে? তুমি কেমন আছো? 

- জ্বি ভালো। আঙ্কেল আপনি কি আজকে দিনের মধ্যে ইতালি যেতে পারবেন বা সেখানে আপনার কেউ পরিচিত আছে যার মাধ্যমে আমি দুটো মানুষের বিষয় কিছু তথ্য পাবো। 

- তাহলে তো তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে, যদি সেরকম ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে বলবো। আর নাহলে আমিই চলে যাবো, যেভাবেই হোক। 

- আপনি সেখানে কাউকে পান কিনা দেখুন, তবে খুব গোপনে তথ্য বের করতে হবে। 

- আচ্ছা আমি জানাবো ঘন্টা খানিক পরে। 

মোবাইল রেখে সাজু বাসা থেকে বের হলো, আর তখনই বাড়ির সামনে একটা বাইক দাড়াতে দেখে থমকে গেল। বাইক ড্রাইভারের পিছন থেকে একটা ছেলে নামছে, যাকে কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছে। সাজু সেদিকে এগিয়ে যেতেই বাইকের ড্রাইভার লোকটা তাকে দেখিয়ে দিয়ে ছেলেটাকে বললো, " ইনি হচ্ছে সাজু " 

- ছেলেটা বললো, সাজু ভাই আমার নাম নয়ন। 

সাজু আরও অবাক হয়ে গেল, পকেট থেকে টাকা বের করে ড্রাইভারকে দিয়ে দিল। তারপর নয়নকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলো। 

- সাজু বললো, তুমি কোথায় ছিলে? 

- ভাই অনেক বড় বিপদ থেকে আসলাম। 

- আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খাও তারপর সব শুনবো। 

তাই হলো। 
গোসল করে খাবার খেয়ে নয়ন কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল, তারপর কিছুটা কান্না মিশ্রিত আর কিছুটা রাগের বশে যা বললো তা হচ্ছে, 

নয়নকে নিয়ে সেই লোকগুলো মোংলার দিকে যাচ্ছিল, ভাগ্যক্রমে পথে তাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে। চারিদিক থেকে মানুষ ছুটে আসে তাই তাকে আর সেই লোকগুলো ধরে রাখতে পারে নাই। নয়ন তখন সেখান থেকে একটা লোকাল বাসে উঠে এসেছে বাগেরহাট। পকেটে টাকা ছিল কিন্তু মোবাইল ছিল না, মোবাইল তারা আগেই নিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর নয়ন বাগেরহাট থেকে মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে করে এখানে এসেছে। 

- সাজু বললো, কিন্তু সেই সকালে তোমাকে নিয়ে গেল তাহলে এতো দেরি হলো কেন? 

- জানি না কেমন কেমন করে দুপুর হয়ে গেল। 

- তুমি তাহলে বিশ্রাম করো। 

- ভাই আমার মায়ের খুনি কে? 

- এখনো পাইনি তবে দ্রুত পাবো, তোমার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জিজ্ঞেস করি। 

- কি ভাই? 

- তোমার নানা বাড়িতে যে মহিলা কাজ করতেন তিনি কোথায় আছে জানো কিছু? 

- কীভাবে জানবো ভাই? মায়ের মৃত্যুর পর আমি তো আর খুলনা আসিনি। 

- আচ্ছা তুমি রেস্ট করো। 

|
|

অবিনাশ চ্যাটার্জি খুব চমৎকার কাজ করেছেন। তিনি ইতালিতে একজন কলকাতার সাংবাদিক খুঁজে বের করেছেন। তার মাধ্যমে যেকোনো কিছু জানতে পারা যাবে। 

সাজু সকাল বেলা সাজু ঢাকায় সেই হাসপাতালে পরিচয় হওয়া ওসি সাহেবের কাছে কল দিছিল। তাকে বলেছিলেন দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর পাসপোর্টের কপি সংগ্রহ করতে হবে। সাজু সেটা চাইছে এই তথ্য গোপন করতে হবে এমনটাও বলেছিল সে। 

ওসি সাহেব দেলোয়ার হোসেনের পাসপোর্টের কপি সংগ্রহ করে ইমেইল করেছেন। সাজু সেটা পাঠিয়ে দিল অবিনাশ চ্যাটার্জির কাছে, কারণ এটা দিয়ে বের করতে হবে নয়নদের গ্রামের সেই লোকটাকে। যার সঙ্গে নয়নের বাবার সম্পর্ক বেশি ভালো ছিল না সেই লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর আরও কি কি তথ্য বের করতে হবে সেগুলো সুন্দর করে লিখে ইমেইল করলেন। 

★★

রাত দশটার দিকে বাইক নিয়ে পিরোজপুর গিয়ে সাজু সেই ডায়েরি নিয়ে এলো। বাড়িতে ফিরেই সে ডিনার করে ডায়েরি নিয়ে পড়তে শুরু করলো। তার বিছানায় শুয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে নয়ন। 

চার ঘন্টা সময় নিয়ে ডায়েরি পড়া শেষ হলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ বেলকনিতে বসে রইল, বাতি বন্ধ করে যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেল তখন হুট করে নয়ন বললো। 

- কিছু পাওয়া গেল সাজু ভাই? 

- তুমি ঘুমাওনি? 

- না ভাই। 

- একটা কথা জিজ্ঞেস করি? 

- করেন। 

- তোমার বাবা বিদেশে গিয়ে যত জমিজমা ক্রয় করেছেন সবকিছু তোমার কাকা মনোয়ার হোসেন দেখাশোনা করে তাই না? 

- জ্বি। 

- আরেকটা ফ্রী মাইন্ডে কথা বলি। 

- বলেন। 

- তোমার কাকার চোখের দৃষ্টি কেমন ছিল? মানে তিনি কি তোমার মায়ের দিকে কোনদিন খারাপ নজরে তাকাতেন বলে মনে হয়? 

- হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন ভাই? 

- তোমার মা তার ডায়েরিতে অনেক স্থানে কিছু কিছু গল্প উপন্যাসের চরিত্রের নাম ব্যবহার করে গেছেন। সবগুলো চরিত্র আমার পড়া নেই তাই বুঝতে পারছি না। সেখানে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প আর শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কিছু চরিত্র আছে। 
শুধু নাম গুলো লিখেছেন। 

- বুঝলাম না ভাই। 

- শোনো, তোমার মা তার মৃত্যু ঠিক বছর খানিক আগের একটা পাতায় লিখেছেন। 

" শরৎচন্দ্রের পন্ডিত মশাইয়ের সেই কুঞ্জ আর কুসুমের মতো হয়ে গেলাম। আফসোস। " 

এখানে তিনি বুঝিয়েছেন, তোমার মা তার ভাইয়ের কাছে আগে প্রিয় থাকলেও পরে অপ্রিয় হয়েছে। 
যাইহোক এখন ঘুমাও, দুদিন পরে সব জানা যাবে।
আমার ধারণা খুনের হুকুমটা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। 

চলবে...  
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ নম্বর-০৫ গল্প: সরি আব্বাজান (২) - by Bangla Golpo - 19-01-2025, 04:34 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)