Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller সাজু ভাই সিরিজ নম্বর-০৫ গল্প: সরি আব্বাজান (২) সমাপ্ত
#6
পর্বঃ- ০৬


- রাতুল বললো, বাবা আজকে বিকেলে নাকি সেই গোয়েন্দা ছেলেটা নয়নের খালার কাছে গিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে। 

- মনোয়ার হোসেন বললেন, ছেলেটাকে দেখে আমার সুবিধা হচ্ছে না। এমনিতেই তোর চাচার জন্য ঝামেলা হচ্ছে, এদিকে নয়ন গুন্ডাটা আবার কখন কি করে আল্লাহ জানে। 

- বাবা তুমি বরং ছোট চাচার কথা না শুনে নয়নের নামে মামলা করে দাও। পরে চাচা শুনলেও কিছু বলতে পারবে না, তাই করো বাবা। 

- আচ্ছা তোর তো এখনো মনে থাকার কথা কারণ নয়নের মায়ের মৃত্যুর সময় তোর বয়স ছিল ২১ বছর। নয়নের মায়ের লাশ দেখে কি একবারও মনে হয়েছিল যে তোর চাচি খুন হয়েছে। 

- না বাবা, তবে এ কথা ওই গোয়েন্দাকে বোঝাতে চাওয়া বোকামি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কারো কথা বিশ্বাস করতে চাইবেন না আমি বরং চাচাকে দিয়ে একটু চেষ্টা করবো। 

- তাই কর, নয়ন নষ্ট হবার পর তোর চাচার কাছে তুই ই তার ছেলে। তাই তোর কথা শুনবে আমার বিশ্বাস আছে, কারণ সে তোকে পছন্দ করে। তুমি তার ছেলের অভাব পুরন করেছিস। 

নয়নের বাবা দেলোয়ার হোসেন বিছানায় এখনো বসে আছে, তিনি অনেকক্ষণ ধরে অনেকটা যেন সুস্থবোধ করছেন। তার ইচ্ছে করছে এখনই গ্রামে চলে যেতে কিন্তু ডাক্তার আরো দু-তিনদিন থাকতে বলার হুকুম দিয়েছে। 

রুমের মধ্যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জাহানারা, রাতুলকে দেখে তিনি বলেন, 

- তোমার আঙ্কেলের কাছে একটু বসো তো রাতুল আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো। 

রাতুল যেন এটাই চাচ্ছিল সে তৎক্ষনাৎ চাচার সামনে চেয়ারে বসে পড়লো। 

- চাচাজান আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। 

- বলো বাবা। 

- আপনি একটু ওই গোয়েন্দা ছেলেটাকে ভালো করে বলেন যেন চাচির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঝামেলা না করে। চাচিা মারা গেছে নয় বছর হয়ে গেছে, এখন আবার যদি এসব নিয়ে কথা ওঠে তাহলে কি বিশ্রী লাগে। 

- তা তো লাগবেই। 

- আপনি বলবেন যে চাচির মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মামলা চাই না। সে যেন গ্রামের মধ্যে গিয়ে এসব নিয়ে মানুষের মনের মধ্যে বাজে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে। 

- কিন্তু আমি তো তাকে বলেছিলাম যে তোমার চাচি যদি সত্যি সত্যি খুন হয়ে থাকে তাহলে যেন তাকে খুঁজে বের করে। এখন আবার নতুন করে নিষেধ করবো কীভাবে? 

- এখন আবার কল দিয়ে বলবেন যে তার গ্রামের বাড়িতে প্রবেশের কারণে গ্রাম থেকে সবাই কেমন কথাবার্তা শুরু করেছে। 

- বলো কি? গ্রামের বাড়িতে গেছে নাকি? 

- হ্যাঁ আজকে বিকেলে চাচির বাবার বাড়িতে গিয়ে ছোটখালার সঙ্গে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে। তারপর নাকি হাজী সাহেবের কাছেও গেছিলো। 

রাতুলেত সূক্ষ্ম বোঝানোয় কাজ হয়েছে, দশটার দিকে দেলোয়ার হোসেন সাজুর নাম্বারে কল দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরে রিসিভ করে সাজু গম্ভীর গলায় বললো, 

- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। 

- আমি দেলোয়ার হোসেন বলছি, নয়নের বাবা। 

- সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। 

- সরি, ওয়া আলাইকুম আসসালাম। 

- এবার বলেন, আপনার শরীর কেমন আছে? 

- অনেক ভালো আছে, ইচ্ছে করছে এখনই বের হয়ে ছুটে যাই জন্মভূমিতে। 

- আরেকটু অপেক্ষা করলে এমনিতেই ডাক্তাররা ছুটি দিয়ে দিবেন। ডিনার করছেন? 

- হ্যাঁ করেছি। 

- আপনি যেটা বলার জন্য কল দিয়েছেন এখন সেটা বলতে পারেন। 

- আসলে সাজু সাহেব আমি চাচ্ছি আমার স্ত্রীর বিষয়টা এখানেই চাপা থাকুক। আপনি আজকে গ্রামের মধ্যে গেছেন তাই নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। 

- তো সমস্যা কি? একটা খুনের রহস্য বের করতে গেলে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তো আসবেই। 

- কিন্তু আমি তো চাই না সেটা, কারণ আমার স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছে। তাই নতুন করে তাকে নিয়ে আর সবার মধ্যে কিছু তুলতে চাই না। 

- একটা কথা বলবো দেলোয়ার সাহেব? 

- জ্বি বলেন। 

- কথাগুলো আপনাকে আপনার আপনজনেরা শিখিয়ে দিচ্ছে তাই না দেলোয়ার সাহেব? 

- ক্যা ক্যা কেন? আমি কি ভালোমন্দ বুঝতে পারি না নাকি, অবশ্যই বুঝতে পারি এখন। 

- আপনাকে আমি বলেছিলাম আত্মীয়ের কাছ থেকে সাবধানে থাকতে। আর আপনি কিনা সেই আত্মীয়ের কথা মতো আমাকে এই পথ থেকে সরে যেতে বলেন? 

- হ্যাঁ কারণ আপনাকে বিষয়টা বুঝতে হবে। 

- আমাকে কিছু বুঝতে হবে না দেলোয়ার সাহেব, বুঝতে হবে আপনার। আপনাকে আমি এতটা সতর্ক করার পরও মনে হচ্ছে না কিছু? তারা কেন এই মামলায় আমাকে যেতে দিতে চায় না এতটুকু বুঝতে পারেন না আপনি? 

- তাহলে কি...! (সামনে রাতুল বসে আছে তাই সম্পুর্ণ কথা শেষ করলেন না তিনি।) 

- হ্যাঁ সেটাই আমার সন্দেহ, তবে আরো কিছু লোক জড়িত তাদের যথাসময়ে বের হবার একটা সম্ভবনা রয়েছে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে। 

- আপনি তাদের কথা শুনবেন না, আপনার স্ত্রীর খুনিদের বের করতে পারলে আপনার মনটাও ভালো লাগবে। 

- হ্যাঁ অনেক। 

- নিজের যত্ন নিবেন, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যতো দ্রুত সম্ভব গ্রামের বাড়িতে আসুন। আন্টির মৃত্যুর সকল রহস্য গ্রামের ভিতর থেকে বের হবে। 

- জ্বি দোয়া করবেন। 

চাচার কথা শুনে হতাশ হয়ে গেল রাতুল, ধারণা ছিল তার চাচা সবকিছু নিষেধ করবে। কিন্তু তার উল্টো হয়ে গেছে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না। 

চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল রাতুল। 

★★★

মাগরিবের পরে জিকির দুআ শেষে এশার আজান হবার পর মসজিদে নামাজ পড়ে হাজি সাহেব চলে গেলেন নয়নের নানা বাড়ি। রাবেয়ার স্বামী খলিল তখন বাড়িতে ছিল, হাজী ফজলুল সাহেব এসেছে শুনে ভিতরে নিয়ে গেল। 

হাজী সাহেব বললো, 

- আমি তোমাদের সঙ্গে খুব পুরনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। 

- রাবেয়া বললো, সেটা কি বুবুর মৃত্যুর কাহিনি? 

- একদম ঠিক ধরেছো, তোমার বোনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে কিছু বলতে এসেছি। আজকে সন্ধ্যায় একটা ছেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তার সাথে আরেকটা মেয়েও ছিল। 

- তাহলে আপনার ওখানে যাবার আগে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমার জামাই ঘরে ছিল না তাই আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। 

- ছেলেটার অদ্ভুত কথাবার্তা কিন্তু খুব শান্ত, যেন খুব ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। যেকোনো কথা এতটা সুন্দর করে গুছিয়ে বলে যে তাকিয়ে থাকতে নেশা ধরে যায়। 

- জ্বি, তবে অনেক ভয় ভয় লাগে। 

- কেন? 

- তা তো জানি না। 

- আমি তোমাদের স্বামী স্ত্রী দু'জনকে একটা কঠিন প্রশ্ন করি। 

- করেন। 

- তোমরা কি সত্যিই কিছু জানো মৃত্যুর বিষয়ে? 
সত্যি সত্যি যায় রেবেকা আত্মহত্যা না করে খুন হয়ে থাকে সেই বিষয় কিছু জানো কি? 

- রাবেয়া বললো, না না কীভাবে জানবো? বিশ্বাস করেন আমরা যা জানতাম সবকিছুই তো সেদিন বলে দিলাম। 

- এমন তো হতে পারে, সকাল বেলা পানির সঙ্গে তুমিই বিষ মিশিয়ে রেখেছো৷ তোমার বোন নামাজ পড়ছিল তুমি রুমের মধ্যে গিয়ে টেবিলের পানির জগে বিষ মিশিয়ে দিলে। তারপর তার মৃত্যুর পর সবাই যখন লাশ নিয়ে ব্যস্ত তখন তুমি সেই বাকি বিষাক্ত পানিটুকু সরিয়ে নিলে। 

রাবেয়া শব্দ করে কেঁদে উঠছে, 

- আপনি কি বলেন হাজি সাহেব? 

- আমি শুধু সন্দেহের কথা বলছি। দুদিন পরে সেই গোয়েন্দা ছেলেটা ঠিক এভাবেই হয়তো কথা বলতে আসবে৷ 

- খলিল সাহেব বললো, আপনি এভাবে সরাসরি রাবেয়ার উপর দোষ দিতে পারেন না। মানসিক ভাবে এটা একটা আক্রমণ, এগুলো কিন্তু ঠিক হচ্ছে না হাজি সাহেব। 

- এটা খুব সহজ প্রশ্ন, যেহেতু তদন্ত শুরু করেছে সেহেতু এসব কথা উঠবে ই৷ কিন্তু আমি আমার সম্মান ধরে রাখতে চাই, সেদিন আমার অনুরোধে রেবেকার লাশ পোস্টমর্টেম করতে নেয় নাই। কিন্তু এখন যদি কোথাকার কোন পিচ্চি একটা ছেলে এসে বের করে ফেলে এটা খুন হয়েছে। তাহলে আমি তখন কি জবাব দেবো, কি বলবো তাদের? 

- কিন্তু তাই বলে আপনি রাবেয়াকে? 

- বাড়িতে আর কে ছিল? তোমরা ছাড়া আর তো কেউ ছিল না তাই না? রাবেয়া যদি কিছু না করে তাহলে তুমি করছো? 

- আমি কেন? পাগল নাকি আপনি? 

- একটা কথা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কান খুলে সুন্দর করে শুনে নাও। সত্যি সত্যি যদি বের হয়ে যায় যে তোমরা কিছু করেছো তাহলে কিন্তু তোমাদের পুলিশ গ্রেফতার করার আগেই আমি খবর করে ছেড়ে দেবো। 

- রাবেয়া বললো, সেই লোকটা কি আমাদের সন্দেহ করেছে হাজি সাহেব? আপনার কাছে আমাদের বিষয় কিছু বলে গেছে? 

- না, বলে নাই। আমি মসজিদে জিকির করতে মন বসাতে পারিনি আজ। বারবার কেবল এসব মনের মধ্যে আসছিল, তাই সাবধান করতে এসে গেলাম। 

★★

অন্ধকার বেলকনিতে বসে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সাজু, মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জমা। কিন্তু তার সঠিক উত্তর মিলছে না, একবার একটা মিলে তো আরেকবার সেটা গন্ডগোল হয়ে যায়। কিছুটা মুহূর্ত সে ভাবনার আড়ালে গিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইল। একটা মাঝারি গাছের উপর অনেক গুলো জোনাকিপোকা বসে আছে। আশেপাশের গাছের উপর কোনো জোনাকিপোকা নেই, সাজু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। 

আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে তাকালেও নিশ্চয়ই এভাবে দেখতে পাওয়া যায়। যেটা শহরাঞ্চল সেটা এভাবে পাশাপাশি অনেক আলো জ্বলে। আর নদী কিংবা বনজঙ্গল নিস্তব্ধ অন্ধকার। যে গাছে সেই জোনাকিপোকা বসে আছে সেটা মনে হয় তাদের শহর হতে পারে। 

রুমের মধ্যে সাজুর দাদি প্রবেশ করলো, সাজুকে বেলকনিতে দেখে তিনি ডাক দিলেন। নিজে তখন বিছানায় বসে পড়ছেন আর সাজু বেলকনিতে হতে রুমের মধ্যে গিয়ে দাদির কাছে বসলো। 

- কি বলবা দাদি? 

- হ্যাঁ, তোর কি শরীর অসুস্থ নাকি? রাতে তেমন খেতে পারলি না যে। 

- তেমন কিছু না, রামিশা ঘুমিয়েছে? 

- হ্যাঁ সে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। সাজু একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তোর দাদা আমাকে বলতে বলেছেন তাই বলতে এসেছি। 

- বলো। 

- মেয়েটাকে কি তুই পছন্দ করিস? আর মেয়েটা তোকে খুব পছন্দ করে? 

- কোন মেয়ে, রামিশা? 

- হ্যাঁ। 

- না দাদি, আমাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক নেই। বন্ধু, খুব ভালো বন্ধু আমরা। পারিবারিক ভাবে ওর স্বাধীনতা আছে তাই আমাদের বাড়িতে পর্যন্ত চলে এসেছে। 

- তোর দাদা বলছিল যদি দুজনের মতামত থাকে তাহলে, কতদিন আর একা একা থাকবি? 

- ধুরো দাদি তুমি কি যে বলো না। এসব কথা ভুল করেও রামিশাকে বলতে যেও না তাহলে মেয়েটা খুব কষ্ট পাবে। কারণ তার মনের মধ্যে এমন কিছু নেই তাই সহ্য করতে পারবে না। 

- কিন্তু... 

- বাদ দাও দাদি, তোমার ছেলের সঙ্গে কথা হয় নাকি? মানে আমার বাবার সঙ্গে। 

- সন্ধ্যা বেলা কল দিছিল, তুই বাড়িতে শুনে খুব খুশি মনে হলো তাকে। 

- বাবাকে বলবা আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই সে যেন আগামীকাল জরুরিভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে এখন ঘুমিয়ে পড়। 

দাদি চলে যাবার পর সাজু কিছুক্ষণ রামিশার কথা ভাবলো, তারপর মোবাইল বের করে প্রথমে নয়ন এর নাম্বার বের করলো। কাজলের কাছে টাকা নিয়ে একটা ছোট মোবাইল কিনেছে। লোকটার কাছ থেকে একটা সিমকার্ড নিয়ে সে বাগেরহাটে রওনা দিয়েছে আটটার দিকে। 

কথা হলো, নযন এখন মাওয়া ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে। নয়নের কাছ থেকে তখন সাজু ওই বাসের সুপারভাইজারের নাম্বার নিয়ে রাখল। কল কেটে দিল। 

আরো কিছুক্ষণ ভাবার পরে নয়নের মামাতো ভাই মিনহাজের নাম্বার বের করলো। মিনহাজ হয়তো মোবাইল হাতে নিয়ে ছিল তাই সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করতে পেরেছে। 

- আসসালামু আলাইকুম সাজু ভাই। 

- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন? 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভাই। 

- নয়ন আজকে আমাদের বাড়িতে আসতেছে, তার খোঁজ পাওয়া গেছে জানেন? 

- হ্যাঁ কাজল বলেছে। 

- আপাতত আমাদের বাড়িতে আসুক তারপর বাকিটা দেখা যাবে, কি বলেন? 

- সেটাই খুব ভালো হবে ভাই। 

- আপনাকে আমি অন্য একটা কাজের জন্য কল করেছি, সেটা বলি? 

- বলেন। 

- নয়নের মায়ের সেই ডায়েরিটা কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতে হবে। ডায়েরিটা পড়া এই মুহূর্তে খুব জরুরি মনে হচ্ছে, আপনি ইমারজেন্সি ভাবে এটা পাঠিয়ে দেন। 

- বাবা তো কালকে মনে হয় গ্রামের বাড়িতে যাবে তাহলে তার কাছে পাঠিয়ে দেবো ভাই? 

- না না কোনো দরকার নেই। আপনার বাবা যেন জানতেই না পারে আপনি পাঠাচ্ছেন। আপাতত তিনদিন আমি আপনাদের গ্রামের মধ্যে আর যাবো না। রহস্যের অনুসন্ধান তিনদিন বন্ধ রাখবো তারপর আবার শুরু করবো। এই তিনদিনের মধ্যে যেন ডায়েরিটা এসে পৌঁছাতে পারে। 

- ঠিক আছে ভাই। 

- ডায়েরির মধ্যে মনে হয় শুধু তাদের দুজনের কথা নেই বরং আরো কিছু আছে। যাদের পরিচয় বা সম্পর্ক জানা দরকার, রেবেকা আন্টি অনেক বুদ্ধিমতী ছিলেন। তাই নিশ্চয়ই সেখানে নতুন কিছু খুঁজে বের করতে পারবো। 

- ঠিক আছে আমি কালকে সকালে উঠে সবার আগে অফিসে গিয়ে কুরিয়ার করবো। 

- আচ্ছা। 

- নয়ন কোন গাড়িতে করে যাচ্ছে সাজু ভাই? 

- " বনফুল পরিবহন " সরাসরি রায়েন্দা পর্যন্ত যাবে তবে নয়ন আমাদের এখানে নামবে। 

- ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে। 

★★ 

জীবনে কিছু মানুষ থাকে যাদের কথা কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। যে শুধু অধিকার নিয়ে একবার বললেই সেটা শতবার না না বলার পরও করতে ভালো লাগে। আজকে গল্প লিখতেছি রাত ৩ঃ৩২ থেকে। 

★★

সকাল দশটা। 

খুব আতঙ্কে বসে আছে সাজু, নয়নের নাম্বার বন্ধ। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার পরে কতদূর এসেছে জানার জন্য কল দিয়ে দেখলো নাম্বার বন্ধ। সঙ্গে সঙ্গে সে সুপারভাইজারের সেই নাম্বারে কল দিল, সাজুর মনে আগে থেকে একটু 
সন্দেহ ছিল। তাই সে গতকাল রাতে নয়নের কাছ থেকে সুপারভাইজারের নাম্বার নিয়েছে। 

কিন্তু সেই সুপারভাইজারের নাম্বার বারবার কল বেজে কেটে যায় রিসিভ হয় না। সাজুর মনের মধ্যে ধারণা হয়ে গেল নিশ্চয়ই তারা পৌঁছে গেছে আর তাই এখন ঘুমাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে একটা কিছু গন্ডগোল হয়েছে। 

এই বেলা দশটা পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ বার কল করেছে সাজ ভাই কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। সাজুকে চিন্তিত দেখে রামিশা এগিয়ে এলো, সে এতক্ষণ রান্না ঘরে ছিল। 

- কি হয়েছে সাজু ভাই? 

- বুঝতে পারছি না, নয়নের নাম্বার সেই ফজরের সময় থেকে বন্ধ। ঢাকার গাড়ি এতক্ষণ ধরে কেন আসবে না? দেরি হলেও নয়নের নাম্বার বন্ধ কেন সেটাই চিন্তার বিষয়। নিশ্চয়ই বিপদ হয়েছে, মনটা বলছে বারবার। 

এমন সময় সাজুর নাম্বারে সেই সুপারভাইজারের নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাজু তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বললো, 

- আপনি কি "বনফুল পরিবহন" সুপারভাইজার বলছিলেন? 

- হ্যাঁ ভাই, কে আপনি? 

- আমার নাম সাজু, গতকাল রাতে আপনার গাড়িতে নয়ন নামের একটা ছেলে ছিল। তার আসার কথা ছিল বাগেরহাট পেরিয়ে আরও কিছু সামনের দিকে। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ। 

- কি নাম বললেন, নয়ন? 

- হ্যাঁ নয়ন। 

- তাকে তো নোয়াপাড়া মোড় থেকে তিনটা লোক বাস থেকে নামিয়ে রেখে দিয়েছে। 

- কি বলছেন, কিন্তু কেন? 

- তারা নাকি পুলিশের লোক, বাস সিগনাল দিয়ে দাঁড় করালো। আমরা সচারাচর রাতে ওসব স্থান থেকে যাত্রী তুলি, তখন ভোর চারটার মতো বেজে গেছে। তাদের সিগনাল দেখে গাড়ি দাঁড় করানোর পরে তারা গাড়িতে উঠে সেই ছেলেটাকে বলে "তোর নাম নয়ন না? চল আমাদের সঙ্গে "। 

- সাজু বললো, কারণ জিজ্ঞেস করেননি? 

- করেছিলাম কিন্তু তারা খুব খারাপ ব্যবহার করে আমাদের সঙ্গে, আমরা কোম্পানির গাড়ি চালাই ভাই। তাই তাদের সঙ্গে তর্কে না গিয়ে বাকি সকল যাত্রী নিয়ে চলে এসেছি। 

- যেখানে সেখানে মানুষের সিগনাল দেখে গাড়ি দাঁড় করানোর মজা বের করবো আপনার। যদি সেই ছেলেকে খুঁজে না পাই তাহলে আপনার এবং আপনার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করবো। 

সাজু কল কেটে দিল। কি করবে কিছু মাথার মধ্যে আসছে না, হঠাৎ করে তার মুখের ভাব আরও পরিবর্তন হয়ে গেল। চোখে মুখে শুকনো একটা বাব চলে এসেছে, তার দিকে তাকিয়ে রামিশা খানিকটা অবাক হয়ে গেল। 

- সাজু ভাই কি হয়েছে? 

- নয়নকে বাস থেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। 

- কি বলছেন আপনি? 

- একটা ভুল হয়ে গেছে রামু। 

- কিসের ভুল? 

- গতকাল রাতে নয়নের মামাতো ভাই মিনহাজের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার। সে জানে যে নয়ন আমার বাড়িতে আসবে। কিন্তু একটা পর্যায়ে সে জিজ্ঞেস করলো নয়ন কোন বাসে আসবে? আমি কিছু না ভেবে বাসের নাম বলে দিছি। 

- রামিশা বললো, তারমানে মিনহাজ সাহেব কি বাসের নাম জেনে তারপর মানুষ সেট করেছে। যেন সঠিক বাসের মধ্য থেকে নয়নকে বের করে ধরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কেন সাজু ভাই? 

.
.

কেমন লাগছে সাজু ভাইয়ের গল্প? 
আরো ভালো কিছু যেন লিখতে পারি তাই সবাই সুন্দর করে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। যাদের মন্তব্য করতে ইচ্ছে করে না তারা রিয়্যাক্ট করতে ভুলবেন না। (শুভকামনা) 

চলবে... 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সাজু ভাই সিরিজ নম্বর-০৫ গল্প: সরি আব্বাজান (২) - by Bangla Golpo - 19-01-2025, 04:32 PM



Users browsing this thread: