19-01-2025, 04:27 PM
পর্বঃ- তিন
" আমার মৃত্যু নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না, আমি সজ্ঞানে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছি। বেশি ঝামেলা না করে আমার মা-বাবার কাছে পুরনো গোরস্থানে আমাকে কবর দিয়েন। আমার সন্তানকে বলবেন সে যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়। আমার স্বামীর এমন অবিচার আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে তাই এরূপ সিদ্ধান্ত।
আমি কারো স্ত্রী নয়,
আমি শুধু নয়নের মা।
রেবেকা আফরোজ। "
খুব ভালো করেই সুইসাইড নোটের দিকে তাকিয়ে আছেন সাজু ও কাজল। ডায়েরির মধ্যে আগেই চোখ বুলিয়ে নিয়েছে সে, দুটো স্থানে হাতের লেখা দুই ধরনের। কোনো মিল নেই, তাই সাজু মিনহাজ এর দিকে তাকিয়ে বললো,
- আপনি কি ডায়েরি পড়েছেন কখনো?
- না, তবে সুইসাইড নোটটা পড়েছি। ডায়েরিটা ফুপুর ব্যক্তিগত জীবনের লেখা তাই সেটা পড়ার আগ্রহ ছিল না। তবে গভীর রাতে নয়ন মাঝে মাঝে পড়তো তারপর পড়া শেষ হলে সিগারেট ধরিয়ে বেলকনিতে বসে থাকতো।
- সাজু তখন আফজাল খন্দকারের দিকে চেয়ে বললেন, আপনারা কি সত্যিই কোনো কারণে ভুল করেও আপনার বোনের মৃত্যুর রহস্য জানতে চাননি?
- দেখুন, স্পষ্ট সুইসাইড নোট ছিল তাই এসব নিয়ে আর কোনো কথা ওঠেনি।
- সুইসাইড নোটটা আপনার বোনের লেখা নয় আফজাল সাহেব, ডায়রির পাতার লেখা আর এই নোটটা ভালো করে দেখুন। এসব জানার জন্য কিন্তু গোয়েন্দা হতে হয় না, সামান্য নজর দিলেই এগুলো বোঝা যায়। আসল কথা হচ্ছে আপনার বোনের দিকে কেউ ভালো করে খেয়াল রাখেননি তাই না?
- না আসলে আমি চট্টগ্রামে ছিলাম।
- নয়ন কাজলের কাছে বলেছিল তার মা-বাবা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছে। যদিও পরিবার থেকে বিয়ে করানো হয়েছে কিন্তু সেখানে কার কার আপত্তি ছিল জানতে পারি? মানে আপনার পরিবার থেকে আর নয়নের দাদা বাড়ির থেকে কে কে বিয়েটা চাননি?
- প্রথম প্রথম সবাই আপত্তি করলেও পরে কিন্তু সবাই মেনে নিলাম। আর ওদের বিয়ে হয়েছিল প্রায় ২৬/২৭ বছর আগে, তখনকার কথা কীভাবে মনে থাকে বলেন।
- ঠিক আছে এগুলো গ্রামের মধ্যে গিয়ে আমি আস্তে আস্তে খুঁজে বের করবো। আপনি ভালো থাকবেন আর গ্রামের বাড়িতে খোঁজ খবর রাখুন।
- একটা কথা বলি সাজু সাহেব।
- বলেন।
- আমার বোনকে যদি সত্যি সত্যি হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে আপনি সত্যিটা খুঁজে বের করুন। আপনার যত টাকা ফিশ আসবে আমি সবটাই আপনাকে দেবো।
- সাজু কিঞ্চিৎ হাসলো।
- হাসলেন যে?
- আমি টাকার জন্য কখনো মামলার কাজ করি না, আল্লাহর দয়ায় অনেক আছে আমাদের। যা করি সবটাই ভালো লাগে তাই করি তাছাড়া আমি কোনো চাকরি করি না। সবসময় শুধু ঘুরে বেড়াই তাই এটাই করি যেন সময়টা রহস্যময় হয়ে কাটে।
|
|
সাজু ও কাজলের সঙ্গে সঙ্গে মিনহাজও বেরিয়ে এসেছে বাহিরে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিনহাজ সাজুর দিকে তাকিয়ে বললো,
- আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য আমাকে আগে বলবেন সাজু ভাই। আমি আপনাকে সর্বদা সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকবো।
- এই মুহূর্তে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।
- বলেন।
- অলংকার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে গতকাল নয়ন কোন গাড়িতে ঢাকায় গেছে সেটা বের করতে হবে। জানি এটা খুবই ঝামেলার ব্যাপার তবুও চেষ্টা করতে দোষ নেই। ভালো ভালো ব্রান্ডের যতগুলো পরিবহন আছে সবগুলোতে নয়নের ছবি ও ফোন নাম্বার দিয়ে চেক করবেন।
- এটা একদম অসম্ভব একটা কাজ।
- সবার আগে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর হয়ে গাজীপুর যেসব গাড়ি যায় সেগুলো চেক করবেন। নয়ন যেহেতু বিমানবন্দর যেতে চেয়েছে সেহেতু উত্তরার গাড়িতে সে উঠবে, চেষ্টা করুন।
- কিন্তু কেন করতে হবে সাজু ভাই?
- কারণ আমি জানতে চাই নয়ন ঢাকায় পৌঁছাতে পেরেছে নাকি তার আগেই তাকে কেউ নিজের হাতে বন্দী করেছে।
- মানে?
- একটা কথা ভেবে দেখুন মিনহাজ সাহেব, নয়ন হুট করে পিস্তল পাবে কোথায়? ঢাকায় গিয়ে সঙ্গী যোগাড় করা তারপর প্রাইভেটকার যোগাড় করে আক্রমণ করা। এটা কি সিনেমার কোনো ঘটনা যে সবকিছু পরিচালক ব্যবস্থা করে দিবে আর হিরো গিয়েই এ্যাকশনে যাবে।
- না।
- যদি এমন হতো যে নয়ন তার বাবাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে তাহলে কিছুটা বিশ্বাস হতো। আর সে মুখোশ পরবে কেন? দুটো পরিবারের সবাই জানে নয়নের রাগের কথা, তাহলে নয়ন এসবের মধ্যে কখনো যাবে না।
- আমার কাছে সবকিছু পেঁচিয়ে যাচ্ছে সাজু ভাই।
- যদি আপনার ফুপু খুন হয়ে থাকে, তাহলে নয়নে এর বাবার এই আক্রমণ আর নয় বছর আগের সেই খুনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এমন কেউ আছে যিনি নয়নদের পরিবার ধ্বংস করতে চায়। আর সেজন্য নয়নের মা'কে নয় বছর আগে খুন আর এখন নয়নের বাবাকে খুন করে নয়কে আইনের কাছে অপরাধী করবে। তাহলে তো ধ্বংস হবে নয়ন ও তার বাবা, আর মাকে তো আগেই খুন করা হয়েছে।
- আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে সাজু ভাই, আমি এখনই অলংকার যাবো। তারপর যেভাবেই হোক সেই পরিবহন খুঁজে বের করবো।
- জ্বি চেষ্টা করুন আর আমার নাম্বারটা রাখুন।
- আপনি এখন কোথায় যাবেন? নাহলে আপনি চলুন না আমার সঙ্গে অলঙ্কার।
- আমি এখন মেসে যাবো তারপর গোছগাছ করে ঢাকায় রওনা দেবো। সেখানে গিয়ে নয়নের বাবার সঙ্গে কথা বলে চলে যাবো আপনাদের গ্রামের বাড়িতে।
- বলেন কি? তারপর এখন থেকে কাজে লেগে যাচ্ছেন?
- এই মামলার প্রতি আমার আলাদা রহস্য আছে মিনহাজ সাহেব।
- যেমন?
- আমার মা মারা গেছে তখন আমি খুব ছোট্ট ছিলাম, বাবা লন্ডনে থাকতেন। মা মারা গেছে একটা অসুখে পড়ে, নিজের অন্তিম সময়ে মা বারবার অনুরোধ করেছিল বাবাকে দেশে আসার জন্য। কিন্তু বাবা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। অথচ হুট করে মা একদিন চলে গেল, আর দাদা-দাদির কাছে বলে গেল সারাজীবন তাদের কাছে রাখতে। তাই তো হাজারো চেষ্টা করে বাবা আমাকে লন্ডনে স্থায়ী করতে পারে না। যদিও আমি বছরে বছরে বেড়াতে যাই। এই পৃথিবীতে আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি কিন্তু তাকে কোনদিন বুঝতে দেয়নি।
- আপনার মাকে ভালোবাসেন না?
- মা তো এখন পৃথিবীতে নেই।
- হুম তা ঠিক।
- আমার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, সেখানে তার দুটো মেয়ে আছে। তারা আমাকে আপন ভাইয়ের মতো সম্মান করে।
- বুঝতে পারছি।
- নিজের সঙ্গে নয়নের অনেকটা মিল আছে তাই আগ্রহ খানিকটা বেশি।
- আপনার জীবনটাও অদ্ভুত সাজু ভাই।
সাজু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
★★
সাজুরা বের হবার পরপরই আফজাল খন্দকার তার মোবাইল বের করে নয়নের কাকা মনোয়ার হোসেনের কাছে কল দিলেন।
নয়নের কাকা তখন ঢাকায় হাসপাতালে পৌঁছে গেছেন, কিছুক্ষণ আগে ভাইয়ের সঙ্গে সামান্য কথা বলে বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পকেটে ফোনে রিং হতেই বের করে রিসিভ করলো,
- বেয়াই সাহেব আমি বলছিলাম।
- হ্যাঁ চিনতে পেরেছি, নাম্বার তো সেভ করাই আছে চিনবো না কেন?
- দেলোয়ার (নয়নের বাবা) এখন কেমন আছে?
- আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ, গুন্ডা ছেলের আফসোস হচ্ছে নিশ্চয়ই।
- আমি একটা কারণে আপনাকে কল দিলাম।
- কি কারণ?
- একটু আগে আমার বাসায় একটা ছেলে এসে অনেক কিছু বলে গেল। সে একজন গোয়েন্দা, প্রতিটি কথার মধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়।
- গোয়েন্দা আপনার বাসায়?
- হ্যাঁ, সে দেলোয়ারের আহত হবার বিষয় কোনো আগ্রহী নয়।
- তাহলে?
- ছেলেটা নয়নের মায়ের সুইসাইড নোট আর ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়লো। তারপর বললো যে রেবেকা আত্মহত্যা করে নাই ওকে নাকি খুন করা হয়েছে।
- কি বলছেন আপনি?
- হ্যাঁ, ছেলেটা মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাবে। তার নিজেরও গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে।
- এ তো আরেক ঝামেলার আগমন মনে হচ্ছে, ঘটনা ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে বলেন তো?
- আমি জানি না, এ ছেলে সবকিছু খুঁজে বের করতে পারবে বলে মনে হয়।
- আপনি তো আমার মাথার মধ্যে টেনশনের বীজ বপন করে দিলেন।
- আমি ভাবছি গ্রামের বাড়িতে যাবো।
- আমিও তাহলে যাবো।
- আচ্ছা।
|
|
দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড, চট্টগ্রাম।
- রামিশা বললো, আমাকে সঙ্গে নিলে আপনার কি খুব বেশি সমস্যা হবে?
- হ্যাঁ হবে, কারণ আমি এখন ঢাকায় যাবো আর সেখান থেকে গ্রামের বাড়ি। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে তো এতো জার্নি করা যাবে না রামু।
- আমার কিছু হবে না, আমি আপনার সঙ্গে যাবো সাজু ভাই।
- রামু শোনো, আগেরবার ঢাকায় তোমার আত্মীয় ছিল সেখানে গিয়ে তুমি ছিলে। শাকিলার বাবার সেই মৃত্যুর রহস্যে তোমাকে সঙ্গে রেখেছি কিন্তু এটা সম্পুর্ণ গ্রামের ঝামেলা।
- আপনি তো বললেন আপনার বাড়ির কাছেই তাহলে আপনার বাড়িতে থাকবো। আপনি তো আমার আত্মীয় তাই না সাজু ভাই।
- আমি কিন্তু সিরিয়াস।
- আমিও সিরিয়াস।
- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি আগে যাই তারপর তুমি নাহয় দুদিন পরে যেও।
- সত্যি?
- হ্যাঁ সত্যি সত্যি সত্যি।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ।
গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্য চলতে শুরু করেছে, মনটা খারাপ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে রামিশা। তার সেই তাকিয়ে থাকা দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল সাজু, এই চাহনি কিসের?
শুধুই বন্ধু, নাকি ভালোবাসা? যদি ভালোবাসা হয় তাহলে এতটা দুরত্ব কেন?
★★
বাদালপুর গ্রামের বিশিষ্ট ভদ্রলোক হাজী ফজলুল জোযাদ্দার। তিনি সবেমাত্র রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির উঠোনে বসেছেন, কাজের ছেলে রমজান পান সাজিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে ঘরের মধ্যে তার মোবাইল বেজে উঠল, রমজান হজী সাহেবের হাতে পান দিয়ে মোবাইল আনতে গেল। মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল নিয়ে আসতেই হাজী সাহেব কল রিসিভ করে সালাম দিলেন।
অপর প্রান্ত থেকে সালামের জবাবের পরিবর্তে বলে উঠলো,
- গ্রামের মধ্যে একটা ছেলে যাচ্ছে রেবেকার খুনের মামলা খুঁজে বের করতে। তার ধারণা যে রেবেকা আত্মহত্যা করে নাই ওকে খুন করা হয়েছে। এতবছর পরে রেবেকার খুনের রহস্য বের হবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই।
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)