18-01-2025, 11:14 PM
(This post was last modified: 19-01-2025, 04:40 PM by Bangla Golpo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
- খালা বললো, তোর মাকে কবর দেবার জন্য নিয়ে যাচ্ছে, শেষবারের মতো মা'কে দেখবি না?
- আমি বললাম, আত্মহত্যা করা মায়ের মরা মুখ দেখার ইচ্ছে নেই, কবর দিয়ে দিতে বলো।
- রাগ করে থাকিস না নয়ন, পরে যখন রাগ শেষ হবে তখন কিন্তু মাকে দেখার জন্য কবর ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করবে।
- আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, বললাম তো ইচ্ছে করবে না কোনদিন। বাবার সঙ্গে রাগ করে সে স্বার্থপরের মতো আমাকে রেখে আত্মহত্যা করেছে কেন? আমি কি তার কেউ না? সে একবারও চিন্তা করে নাই আমি এতিম হয়ে যাবো। বাবা বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে তাহলে কার কাছে আমি মানুষ হবো বলো?
- শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এসব করে বাবা, তুমি চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পরে বৃষ্টি হতে পারে তখন মাটি দিতে ঝামেলা হবে।
- আমি যাবো না যাবো না যাবো না। সে আমার কেউ না, যে মহিলা আমার কথা চিন্তা না করে একা একা মরে গেছে তার জন্য আমার কোন অনুভূতি নেই খালা।
এরপরই জোর করে খালাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বাহির হতে আরও কিছুক্ষণ ডাকাডাকির শব্দ পেলাম, তারপর আর কেউ ডাকলো না। মনে হয় সবাই মায়ের দাফনের কাজে চলে গেছে, আর মহিলারা উঁকিঝুঁকি দিয়ে মায়ের শেষ বিদায় দেখছে।
গতকাল দুপুরে খবর পাওয়া গেছে বাবা ইতালিতে আরেকটা বিয়ে করেছে। বিয়ের কারণ হচ্ছে তার পাকাপোক্ত ভাবে ইতালি থাকার ব্যবস্থা করা। ১৩ বছর ধরে এখনো বৈধ কাগজ করতে পারেননি তাই দেশেও আসতে পারে নাই। ইচ্ছে করলে তিনি আসতে পারবেন কিন্তু আর ফেরার পথ থাকবে না তাই আসছেন না৷ এদিকে বাবার পরে গিয়ে ও অনেকে বৈধ কাগজ পেয়েছে এমনকি তারা দেশে এসে ঘুরে গেছে। তাই বাবা আর ধৈর্য ধরতে না পেরে সেখানেই এক বাংলাদেশী ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করেছেন। সেই মহিলার বৈধ কাগজ আছে তাই তিনি সেই সূত্রে তার স্বামী (আমার বাবা) বৈধ কাগজ করে দিতে পারবেন।
বাবা অবশ্য দাদা-দাদির এমনকি মায়ের সঙ্গেও বিষয়টি খোলামেলা আলোচনা করেছেন। কিন্তু মা সেখানে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন, রাগ করে বাবার সঙ্গে কথা বলেননি অনেকদিন। মায়ের মনে বিশ্বাস ছিল তার রাগের দিকে তাকিয়ে বাবা তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। কারণ মা-বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, তারপর আমার জন্মের দুই বছর পর বাবা বৈধ ভিসায় লিবিয়া চলে যায়। দুই বছর পর বাবা সেখান থেকে দালাল ধরে পালিয়ে ইতালিতে পৌঁছান।
কিন্তু এতকিছুর পরও যখন গতকাল বাবার বিয়ের সংবাদ পেলাম তখন মা একদম চুপচাপ হয়ে গেল। দাদা বাড়ি থেকে বিকেলেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে নানা বাড়িতে চলে আসেন। নানা নানি কেউ জীবিত নেই, একমাত্র মামা তার স্ত্রী সন্তান সবাই কে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকে। পুরনো নানা বাড়িতে বাস করে আমার ছোট খালা, তাই আমরা সেখানে এসে উঠলাম। পুরনো আমলের বিশাল বাড়ি তাই অনেকগুলো রুম, আমি প্রায়ই বেড়াতে আসতাম তাই আমার জন্য আলাদা একটা রুম থাকে।
এ বাড়িতে আসার পরে মা কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে নাই, চুপচাপ বসে থাকতেন। আমিও তেমন কিছু বলতাম না, রাত দশটার দিকে আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ডিনার করলাম।
আমি আমার রুমে ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু বরাবরই রাত দুইটার আগে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তাই মোবাইলে হিন্দি সিনেমা দেখছিলাম।
রাত ২:৪৮
হঠাৎ করে দরজা টোকা পড়লো, আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে মাত্র এসেছেন বা পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মা আমাকে ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো তারপর বিছানায় একপাশে বসতে বসতে বললেন,
- আমার ধারণা ছিল তুমি এখনো জেগে আছো তাই তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে এলাম।
- বলো মা, আর তুমি এখন না বলে সকালেও তো বলতে পারতে।
- হ্যাঁ পারতাম, কিন্তু এখন বলতে ইচ্ছে করছে তাই এখনই বলি। মানুষের মৃত্যু কখন এসে উপস্থিত হয় কেউ বলতে পারে না, দেখা গেল আমি তোমার সঙ্গে কথা না বলে চলে গেলাম। সকাল বেলা তুমি দেখতে পেলে আমি পৃথিবীতে নাই তখন তোমার খুব আফসোস হবে তাই না?
- হ্যাঁ হবে, কিন্তু আমি জানি আমার মা অনেক বছর বেঁচে থাকবে। আর আমি আমার মাকে মা বলে ডাকবো আর সে বলবে আরেকবার ডাক।
- শোনো তোমাকে কিছু কথা বলি। তোমার এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে, পৃথিবীতে একা একা চলার মতো বুদ্ধি তোমার আছে।
- মানে কি মা? এখনো তুমি মাথায় হাত রেখে আদর না করলে আমি ঘুমাতে পারি না। বাহির থেকে বাসায় ফিরে তোমার মুখ না দেখলে সবকিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে।
- এগুলো হচ্ছে অভ্যাস, মনে করো কাল থেকে যদি আমি না থাকি তাহলে সপ্তাহ খানিকের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
- কেন? তুমি কোথায় যাবে মা?
- এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি, তবে যেতে পারি বলে সম্ভাবনা আছে। তাই তাহাজ্জুদ নামাজের পড়ে তোমার সঙ্গে কথা বলতে আসলাম।
- এটা যদি দাদা বাড়ি হতো তাহলে আমি তোমাকে বলতাম চলো নানা বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু এটা তো তোমার বাড়ি সুতরাং এখান থেকে তুমি কোথাও যাবে না।
- আচ্ছা সেই তর্কে যাচ্ছি না। তোমার বাবার কাজটা তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? তোমার বাবার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল নাকি ভুল ছিল?
- সম্পুর্ণ ভুল, এজন্য আমি বাবাকে কোনদিনই ক্ষমা করবো না।
- তোমার বাবাকে আমি বলেছিলাম যে এতবছর ধরে তো অনেক টাকা আয় করলে। এখনো যদি বৈধ কাগজ না পাওয়া যায় তাহলে সবকিছু নিয়ে একেবারে দেশে চলে আসো। তারপর সেগুলো দিয়ে দেশে একটা ব্যাবসা করো, কিন্তু তোমার বাবা অন্য যুক্তি দিলেন।
- কি যুক্তি মা?
- তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি সেখানকার গ্রীণ কার্ড পেলে তোমাকেও সেখানে নিতে পারবেন। আর তোমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে, তাই তিনি আমার কথা রাখতে অস্বীকার করেছে।
- আমার ভাগ্যে যদি ইউরোপ যাওয়া থাকে তবে সেটা হবে কিন্তু এভাবে বাবার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারি না। এখন হাজারো বললে আমি বাবার কাছে যাবো না সেখানে।
- তোমার বাবার সিদ্ধান্ত আমিও মানতে পারি না নয়ন, তাই তো তোমাকে নিয়ে চলে এসেছি। আমি তোমার বাবার আর আমার জীবনের অনেক স্মৃতি আমার একটা ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। আমার সেই ডাইরিটা তোমার কাছে দিচ্ছি কারণ তোমার বাবাকে নিয়ে লেখার মতো আর কিছু নেই।
- এটা তোমার কাছে থাকুক।
- না তুমি তোমার কাছে রাখো, আমাদের দুজনের প্রেমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সবকিছু এখানে লেখা আছে। তবে বিস্তারিত নয়, খুব অল্প অল্প করে সব লেখা আছে, তুমি পড়লে তোমার ভালো লাগবে।
আমি তখন মায়ের একটা হাত আমার মাথায় ধরে বললাম,
- ওমা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
- মা বললো, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না তুমি এখন ঘুমিয়ে পড়ো রাত তিনটা পেরিয়ে গেল।
এটাই মায়ের সঙ্গে আমার শেষ কথোপকথন, খুব দেরি করে ঘুমানোর জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সকাল বেলা, খুব সকাল বেলা প্রচুর চিৎকার চেচামেচি শুনে নিজেই ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখি মায়ের রুমের সামনে সবাই কান্না করছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি বিছানায় মায়ের লাশ পড়ে আছে, তার মুখ থেকে সাদা লালা বের হয়ে একাকার অবস্থা।
খালা কাঁদতে কাঁদতে সবার সঙ্গে বলছিল, মা সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়েছেন। বাহিরে তখনও অন্ধকার ছিল, খালা যখন দেখলেন যে মা জেগে উঠেছে। তাই তিনি চা বানাতে গেলেন, তারপর চা নিয়ে মায়ের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ। ডাকাডাকি করতে লাগলো, কিন্তু ভিতর থেকে গোঙানির শব্দ পেলেন। অনেক কষ্টে একটা ছিদ্র দিয়ে ঘরের মধ্যে তাকালেন, রুমের মধ্যে যদিও অন্ধকার ছিল। কিন্তু তবুও বিছানায় শুয়ে মায়ের ছটফটানি বোঝা যাচ্ছিল খুব। তারপর তিনি চিৎকার দিয়ে সবাই কে ডাকেন। গ্রামের মধ্যে আমার নানার এই বাড়ির মধ্যে ছিল পাশাপাশি পাঁচটা পরিবার। প্রত্যেক পরিবার হতে দু'একজন করে এসেছেন। দরজা খুলে দেখেন মা ততক্ষণে পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেছেন।
আমি এতটাই অবাক হলাম যে কাঁদতে ভুলে গিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। তারপর কতকিছুই তো হলো বাড়ির মধ্যে কিন্তু আমি রুম থেকে আর বের হলাম না। থানা থেকে পুলিশ এসেছিল, আমি শুধু তাদের বলেছিলাম মায়ের লাশ কাটাছেঁড়া করার দরকার নেই। কারণ মায়ের টেবিলের উপর নাকি একটা সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। তাছাড়া গতকাল রাতেই তো মা আমাকে বলেছিলেন তিনি আমাকে রেখে চলে যাবেন।
আসরের নামাজের পরে মায়ের লাশ চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। মাগরিবের পরে আমি রুম থেকে বের হলাম, নিজের বাইক নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম দাদা বাড়িতে। আমার দাদা কাকা সবাই মায়ের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, তারাও আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি কথা বলিনি।
আমি দাদার ঘরে উঠে সরাসরি দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- সবাই ঘর থেকে বের হও আমি এখন এই ঘর আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে ফেলবো।
- দাদা অবাক হয়ে বললো, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নয়ন? শোকের ছায়া পড়েছে জানি কিন্তু এসব কি ধরনের ব্যবহার?
আমি কোনো জবাব না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলাম। বিশাল কাঠের বাড়ি তাই বেশি কষ্ট হলো না, কিন্তু ততক্ষণে চারিদিক থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছে। আমি আবার বাইক নিয়ে নানার বাড়িতে এলাম, আর সেখানে সবাই আগুন নেভাতে ব্যস্ত।
পরদিন সকাল বেলা গ্রামের মধ্যে পুলিশ এসে আমাকে খুঁজতে লাগলো। কাকা আমার নামে থানায় মামলা করেছেন, পরে জানতে পেরেছি বাবাই নাকি বলেছে যে আমাকে কিছুদিন জেলের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। যেহেতু আমি মার মৃত্যুর পরে খুব রেগে আছি তাই যেকোন কিছু করতে পারি। সেজন্য আগুন লাগিয়ে দেবার মামলা দিয়ে আমাকে আটক করার চিন্তা।
কিন্তু আমি পালিয়ে চলে এলাম চট্টগ্রামে মামার কাছে, তারপর থেকে এখানেই আছি। নিজের এলাকায় আজ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি, তবে একদিন ঠিকই যাবো। যেদিন আমার বাবা ইতালি থেকে বাংলাদেশে ফিরবে সেদিন ঠিকই যাবো। দেখতে দেখতে আজ ০৯ বছর পেরিয়ে গেছে এখনো বাবা দেশে আসেননি। মাঝখানে দাদি মারা গেছে কিন্তু তবুও বাবা আসেনি, জানি না আর কতদিন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
|
|
নিজের অতীত জীবনের কাহিনি বলে চোখের পানি মুছে তাকিয়ে রইল নয়ন। তার সামনে বসে কাজল এতক্ষণ কাঁদছিল, একটা মানুষের সঙ্গে আজ ৬ মাস ধরে পরিচয় কিন্তু সে জানেনা তার জীবনের এই করুন কাহিনি।
- কাজল বললো, তুমি কোনদিন কেন তোমার এই কথা আমাকে বলো নাই?
- বলতে ইচ্ছে করে নাই, কেন যেন এসব কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু আজকে তোমাকে বললাম এর পিছনে একটা কারণ আছে।
- কি কারণ?
- তুমি কিছুক্ষণ আগে বললে না তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কাজল।
- হ্যাঁ।
- আমার এতদিন ধারণা ছিল তুমি আমাকে মনে মনে ভালোবাসো, খুব বেশি ভালোবাসো।
- ভালোবাসি এটা সত্যি কিন্তু সেটা বন্ধু হিসেবে।
- একটা কথা বলো কাজল?
- বলো।
- আমি যদি তোমাকে ভালোবাসতে চাই, তোমার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে চাই তাহলে কি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে না ফিরিয়ে দেবে?
- পাগল নাকি তুমি? বিয়ের সবকিছু প্রায় ঠিক, বাবা গ্রামের বাড়িতে গেছে সবাইকে দাওয়াত করতে। যদিও কেউ আসবে না আবার দু'একজন আসতেও পারে তাই বাবা গ্রামে গেছে।
- ওহ্ আচ্ছা, কিন্তু আমি তো বারবার ভাগ্যের কাছে হারতে চাই না কাজল। তোমাকে আমি চাই চাই চাই।
- পাগলামি করো না, বাসায় চলে যাও আমিও এখন বাসায় যাবো। বাবার আজকে সন্ধার মধ্যে ফিরে আসার কথা, বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই বাহিরে যাওয়া নিষেধ আমার। আজকে অনেক কষ্ট করে মায়ের কাছে বলে বের হলাম, মাগরিবের আগে বাসায় ফিরবো বলেছিলাম। কিন্তু তোমার পুরনো স্মৃতি শুনতে গিয়ে অলরেডি মাগরিবের আজান দিয়ে ফেলেছে।
কাজল চলে যাচ্ছে। বোকার মতো পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো নয়ন। খানিকটা পথ হাঁটার পর কাজল দাঁড়িয়ে গেল, চারিদিকে প্রচুর মানুষের আনাগোনা।
- কি ব্যাপার আবার পিছনে পিছনে কেন? চেহারা রাগান্বিত করার চেষ্টা করে কথাটা বললো কাজল।
- নযন আমতাআমতা করে বললো, তুমি ওখান থেকে রাগ করে চলে এলে এটা ঠিক না। বিদায় নিয়ে চলে যাবারও কিছু নিয়ম আছে, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। তাহলে আমার কোনো ক্ষমতা নেই তোমাকে ধরে রাখার, তাহলে শুধু শুধু এভাবে অমীমাংসিত বিদায় কেন?
- আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে আমি চলে যাবো তাতে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে?
- হ্যাঁ হচ্ছে, মানুষ যে গরুটাকে কোরবানি করে সেটাকেও কিন্তু সকাল বেলা সুন্দর করে গোসল করায়। মানুষ জানে কিছুক্ষণ পর তারা নিজেরা তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেবে। তবুও তারা তাকে আদর করে গোসল করিয়ে দেয়। আবার দেখো ফাঁসির আসামিকে ফাঁসির রায় হবার পরে বারবার জিজ্ঞেস করে তার কি খেতে ইচ্ছে করে। তার শেষ ইচ্ছে জানতে চাওয়া হয়, সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে সবকিছু বিদায় দেবার কিছু সুন্দর নিয়ম আছে যেটা মানা দরকার।
- আমি কিছু মানতে চাই না।
কাজলের চোখ ফেটে আবারও পানি বের হবার আগেই সে হনহন করে হাঁটতে লাগলো। অসহায় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল নয়ন।
★★
রাত বারোটা।
বাসায় ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছিল কাজল, মাত্র ঘুম থেকে উঠে শোনে পাশের রুমে তার বাবা কান্না করছে।
বাবা কখন ফিরলো? আর এভাবে কান্না করে কেন সেটাই তো বুঝতে পারছে না কাজল।
দ্রুত পাশের রুমে গিয়ে তার মায়ের কাছে যতটা জানতে পারলো তা অনেকটা এরকম,
ছেলে পক্ষের যাবতীয় মালামাল সহ দাবি ছিল নগদ তিন লক্ষ টাকা। কাজলের বাবা গ্রামের বাড়িতে গেছিলেন নিজের জমি বিক্রি করে টাকা যোগাড় করার জন্য। একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য সবটা খরচ করতে তার আপত্তি নেই। কিন্তু গ্রামে গিয়ে তিনি নানান ঝামেলার মধ্যে পড়লেন, তার গ্রামের কিছু রাজনৈতিক নেতাদের জন্য জমির মালিকানা নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছে। দীর্ঘদিন শহরে থাকতেন বলে এতদিন জমি যারা চাষ করতো তারাই মালিকানা দাবির চেষ্টা করছে৷ তিনদিন ধরে চেষ্টা করেও তিনি কিছু করতে পারেননি।
ছেলে পক্ষের টাকার কথা শুনে কাজলের মগজে রক্ত উঠে গেল। সে তার হাত দিয়ে আংটি খুলে মায়ের হাতে দিয়ে বললো,
- আমি মরে যাবো তবুও এই বিয়ে করবো না।
|
|
রুমের মধ্যে এসেই কাজল নয়নের নাম্বার বের করে কল দিল। নয়ন রিসিভ করে বললো,
- আমি গাড়িতে আছি, জরুরি কিছু বলবা?
- গাড়িতে মানে? রাত সাড়ে বারোটার সময় তুমি গাড়িতে করে কোথায় যাও?
- ঢাকায় যাচ্ছি কাজল।
- কেন? হঠাৎ করে ঢাকায় কেন?
- আমার নয় বছরের অপেক্ষা শেষ, বাবা আজ রাতের ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। আগামীকাল ভোর চারটায় তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে নামবেন। একদম পারফেক্ট একটা সময়, ০৯ বছর আগে ঠিক ভোরবেলা কিন্তু মা আত্মহত্যা করেছিল।
- কাজল পাগলের মতো হয়ে বললো, পাগলামি করো না নয়ন যা কিছু হয়েছে ভুলে যাও।
- আমি রাখলাম কাজল, তোমার কাছে একটা নাম্বার এসএমএস করে দিচ্ছি। আমার মামাতো ভাইয়ের নাম্বার, বিমানবন্দরে খুনাখুনি করলে আমি হয়তো গ্রেফতার হবো। তুমি সকাল বেলা আমার নাম্বার বন্ধ পেলে সেই নাম্বারে কল দিয়ে আমার খবর জেনে নিও।
নয়ন কল কেটে দিয়ে নাম্বার মেসেজ করে দিয়ে দিলো, তারপর মোবাইল বন্ধ। কাজল সঙ্গে সঙ্গে সেই নাম্বারে কল দিল কিন্তু সেটাও বন্ধ তখন।
সারারাত জেগে টেনশনে অস্থির হয়ে কেটে গেল কাজলের। সকাল হয়ে গেছে তবুও বারবার শুধু দুটো নাম্বারে কল দিচ্ছে।
বেলা সাতটার দিকে নয়নের মামাতো ভাইয়ের নাম্বারে কল গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হলো।
- হ্যালো কে বলছেন?
- আমি কাজল, নয়নের বন্ধু।
- জ্বি বলেন।
- নয়নের নাম্বার গতকাল রাত থেকে বন্ধ পাচ্ছি।
- একটু পারিবারিক সমস্যা হয়েছে তাই বন্ধ।
- আমি কিছুটা জানি, নয়ন বলেছিল তার খোঁজ না পেলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
- নয়ন গতকাল রাতে ঢাকা গেছে আমরা কিছু জানতাম না। তার বাবা আজকে সকালে বিমান থেকে নেমেছেন তার বর্তমান স্ত্রী সন্তান নিয়ে। বিমানবন্দরের বাইরে বের হয়ে তারা যখন গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। তখন উত্তর কুড়িল বিশ্বরোডে ফ্লাইওভারের উপর তাদের গাড়ি দাঁড় করিয়ে নয়নের বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনিদের সবাই কালো মুখোশ পরে ছিল তাই কাউকে চেনা যায় নাই। তবে খুন যে নয়ন করেছে তাতে নাকি কোনো সন্দেহ নেই।
- কেন?
- নয়নের বাবাকে গুলি করার সময় তাকে বলা হয়েছে, মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অপেক্ষা করছি, তুমিও পৃথিবী থেকে চলে যাও। নিজের সন্তান হয়ে তোমাকে খুন করলাম " সরি আব্বাজান "।
চলবে....
গল্প:-
সরি আব্বাজান (২)
পর্ব:- ০১
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)