15-01-2025, 05:40 AM
৩
নন্দিনীর ইলেকশন টিমের চতুর্থ সদস্য এসে পৌঁছলেন, কৌশিক বাবু, বয়স্ক এক ভদ্রলোক। পুরো নাম শ্রী কৌশিক মল্লিক। বারুইপুর মিউনিসিপ্যালিটির কর্তব্যরত এক সরকারি কর্মী। নন্দিনীর টিমে ছিল নন্দিনী প্রিসাডিং অফিসার হিসেবে, সুস্মিতা সেকেন্ড অফিসার, জাহাঙ্গীর লোকাল অফিসার বা লোকাল ইনচার্জ, আর কৌশিক বাবু কোঅর্ডিনেটর। এদের মধ্যে কৌশিক বাবু বয়সে একটু সিনিয়র ছিলেন বলে নন্দিনীর তাকে বেশি ভরসাযোগ্য বলে মনে হলো, জাহাঙ্গীরের তুলনায়।
স্কু'লের পিয়ন রমেন দা তাদের জন্য কিছু জলখাবার নিয়ে এলো, চা-বিস্কুট, নোনতা-মিষ্টি ইত্যাদিসমূহ। জাহাঙ্গীর টিমের বাকিদের উদ্বুদ্ধ করলো সেই আহারাদি গ্রহণ করতে। নন্দিনীর সেসবে মন ছিলোনা, ওর মধ্যে palpitations হচ্ছিলো পরের দিনের ইলেকশন প্রসেস নিয়ে। এটা তার কাছে একটা বড়ো দায়িত্ব ছিল। কেউ যাতে মেয়ে বলে তাকে কমজোর ভেবে না বসে সেইদিকটা খেয়াল রাখার দরকার ছিল।
জাহাঙ্গীর নন্দিনীর কাছে গিয়ে খাবারের প্লেটটা তুলে ধরলো। বললো, "আগে খেয়ে নিন, তারপর ইলেক্শন নিয়ে ওভারথিংকিং করবেন।"
"কি?? আমি ওভারথিংকিং করছি? আপনার এটা বলার সাহস কি করে হলো?"
"আঃহাহঃ, রাগ করবেন না। আপনার চোখ মুখে চিন্তার ভাব স্পষ্ট। আপনি ভাবছেন কেউ যাতে মেয়ে বলে আপনাকে কম না ভেবে বসে। আর তাই জন্য এক্সট্রা লোড নিচ্ছেন মাথার উপর!"
নন্দিনী অবাক পানে জাহাঙ্গীরের দিকে চেয়ে রইলো। লোকটা কি অন্তর্যামী? কি অবলীলায় তার মনের কথা বুঝে নিলো! জাহাঙ্গীর আবার প্লেটটা টেবিল থেকে তুলে তার মুখের সামনে ধরলো, দিয়ে বললো, "এটা বসিরহাটের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। অর্ডার দিয়ে আনিয়েছি, আপনার জন্য, মানে আপনাদের সবার জন্য। তাই আপনি না খেলে শুধু আমার নয়, এই বসিরহাটের কাঁচাগোল্লারও অপমান হবে।"
ভরদুপুরে নন্দিনীর এসব মিষ্টি খেতে একদম মন করছিলোনা। কিন্তু উপায় কি? লোকাল লোকজনকে চটালে যে তারই কাজ করতে অসুবিধা হবে। তাই না না করেও একটা কাঁচাগোল্লা মুখে দিলো নন্দিনী। তারপর চা আর একটা বিস্কুট খেয়ে লেগে পড়লো কাজে।
যেকোনো নির্বাচনই ভারতবর্ষের মানুষের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ হয়। এই নির্বাচনও ব্যতিক্রম ছিলোনা, হোক না তা পঞ্চায়েত নির্বাচন। নন্দিনী মনে মনে প্রার্থনা করছিলো যেন নির্বাচনটা সুষ্ঠভাবে হয়ে যায়। যদিও এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠভাবে হওয়ার বিরল নজির খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনিং এর সময় সে জানতে পারে হাকিমপুর পঞ্চায়েতে নির্বাচনের সময় খুব একটা রেষারেষি হয়না। কারণ এখানে মাত্র একটি দলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য চলে, নির্বাচনেও এবং সাময়িকভাবেও।
জায়গাটা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। বিরোধীপক্ষের কোনো শক্ত ঘুঁটি নেই। কিন্তু শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল লেগেই থাকে। তার জন্যই যত ঝামেলার উৎপত্তি হয়। স্থানীয় বিধায়কের একটি গোষ্ঠি, জেলা সভাপতির একটি গোষ্ঠী। প্রার্থী বাছাইয়ে বিধায়কের সুপারিশ করা একজনকেও জেলা সভাপতি এবার প্রার্থী করেনি। তাই জন্য এবার এলাকায় শাসক দলের থেকে অনেক বাগী প্রার্থী নির্দল হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছে। তাই ভোট নিয়ে এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা তো রয়েছে।
স্কু'লের প্রাঙ্গনে তখন শাসক দলের ব্লক সভাপতি এসে হাজির। সে আবার বিধায়ক গোষ্ঠীর লোক। ওপর ওপর দলের হয়ে কাজ করলেও, গোপনে বাগী প্রার্থীগুলিকে সেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিচ্ছে বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনে। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে সাবধান করে দিলো। বললো এই লোকটা খুব ডেঞ্জারাস! এ মাটির ওপরে যতটা, মাটির তলায়ও ততোটা। নন্দিনী জাহাঙ্গীরের কথা কিছু বুঝতে পারলোনা। জাহাঙ্গীর তাকে আস্বস্ত করে বললো সে তাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবে গ্রামের পলিটিক্স। এখন চুপচাপ জাহাঙ্গীর যা বলছে নন্দিনী যেন সেটাই করে।
নন্দিনী ভাবলো জাহাঙ্গীর স্থানীয় লোক। এখানকার মানুষের গতিবিধির ব্যাপারে সেই একটু ভালো বুঝবে। তাই এই বিষয়ে তার উপর ভরসা করাই যায়। এমনিতেও সুস্মিতা বলেছে জাহাঙ্গীর নাকি তার উপর পুরো লাট্টু। স্বভাবতই আমার কাছে হিরো সাজতে ও আমার উপকারই করবে, অন্যথা নয়, মনে মনে ভাবলো নন্দিনী।
"গ্রামের পলিটিক্স বুঝে আমি কি করবো", জাহাঙ্গীরের দিকে তির্যক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো নন্দিনী।
"আঃহা ম্যাডাম, আপনি বুঝছেন না। আপনি এখানকার প্রিসাইডিং অফিসার, লোকাল ইনচার্জ হওয়ার দরুন আমার এটা কর্তব্য আপনাকে প্রতি পদে পদে সাবধান করে দেওয়া আগামী বিপদের আভাস পেলে। কিন্তু আপনি না জানি কেন আমার থেকে দূরে দূরে থাকছেন। ভাবছেন হয়তো আমি খারাপ লোক। তাই তো বেশি সময় ওই কৌশিক বাবুর সাথে কথা বলছেন। জানতে চাইছেন খুঁটিনাটি বিষয় গুলো। অথচ উনি কি করে বুঝবেন গ্রাম্য পলিটিক্স? উনি তো শহরতলির লোক। তাই আপনাকে আগে থেকে অবগত করে রাখছি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে, যাতে আপনার কাজ করতে সুবিধে হয়। আপনার হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন আমার সাথে দু'দন্ড কথা বলতে। আপনি যদি আমাকে একটু বিশ্বাস করতেন, তাহলে আমিই আপনার হয়ে সব সমস্যা সামলে নিতাম।"
লোকটা এইটুকু সময়ে এতকিছু নোটিশ করেছে আমাকে নিয়ে! আমাকে সারাক্ষণ নিজের নজরে বন্দী করে রাখছে? কিন্তু কেন? শুধুই কি আমার প্রতি প্রয়োজনাধিক সুপ্ত আকাঙ্খা রয়েছে বলে, নাকি কোনো কু-বাসনা আছে? তবে লোকটা যা যা বলেছে সেগুলো ফেলে দেওয়ার নয়। সত্যিই সে এই গ্রামের বিষয়ে কিচ্ছু জানেনা। আর কৌশিকবাবুও তো উত্তরপাড়ার লোক। অভিজ্ঞ হলেও স্থানীয় বিষয়ে আমার মতোই সে অজ্ঞাত। অপরদিকে এই জাহাঙ্গীর লোকাল লোক। যতই হোক, ঘোড়া ডিঙিয়ে তো ঘাস খাওয়া যাবেনা। ওকে আমার লাগবেই। মানে ওর সাহায্য আমার লাগবে, নির্বাচনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ভালোমতো উতরে দিতে।
"কৌশিক বাবু অভিজ্ঞ বলে তার কাছে ইলেকশন প্রসিডিউর নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিচ্ছিলাম। আপনাকে অ্যাভয়েড করার কোনোরকম অভিপ্রায় আমার মধ্যে ছিলোনা। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন", কোনোরকমে নিজেকে জাস্টিফাই করতে লাগলো নন্দিনী জাহাঙ্গীরের সামনে।
জাহাঙ্গীরও কাঁচা খেলোয়াড় নয়। সে জানে নন্দিনী ম্যাডাম এখন ব্যাকফুটে। ভালো প্যাঁচে ফেলেছে সে তাকে। কিন্তু তাও সে আর কোনো কথা বাড়ালো না। ব্লক সভাপতি নুরুল ই'সলাম আসছে দেখে আগ বাড়িয়ে তার কাছে নন্দিনী কে নিয়ে যেতে লাগলো, পরিচয় করিয়ে দিতে। নন্দিনীও এবার জাহাঙ্গীরের উপর ভরসা করে তার সাথে এগিয়ে গেলো।
"আস-সালামু আলাইকুম ভাইজান"
"ওয়া ʿআলাইকুমু স-সালাম জাহাঙ্গীর মিঞা"
নন্দিনী জানে দুজন ই'সলাম সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের সাথে সাক্ষাতে প্রথমে এই শুভেচ্ছা আদান প্রদান করে। ঠিক যেমন শি'খ সম্প্রদায়ের মানুষরা "জো বোলে সো নিহাল...... সাৎ শ্রী আকাল...." বলে অভিবাদন করে। যাই হোক, দুজনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় হলো। একে অপরের হাল-হকিকত বিষয়ে জানতে চাইলো। নন্দিনী কিছুটা পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। জাহাঙ্গীর তার দিকে ফিরে তাকালো। দেখলো নন্দিনী clueless হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু'জন চেনাপরিচিতর কথোপকথনে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে অনাকাঙ্খিত, অযাচিত মনে করছে।
জাহাঙ্গীর নন্দিনীর হাত ধরে নুরুল ই'সলামের নিকট নিয়ে এলো পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। নন্দিনীর প্রচন্ড অস্বস্তি হলো এভাবে হঠাৎ জাহাঙ্গীর তার হাত ধরায়। সে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে নুরুল ই'সলাম-কে নমস্কার করলো। নুরুল ভাইজান গেঁয়ো পলিটিশিয়ান হলেও সে জানে রাজনৈতিক স্বার্থে কিভাবে ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে অপর প্রান্তের মানুষের বিশ্বাস-কে সম্মান জানিয়ে তাকে সম্বোধন করতে হয়। তাই সেও সালামের পরিবর্তে হাত জোর করে নমস্কার জানালো নন্দিনীকে।
"ইনি আমাদের প্রিসাইডিং অফিসার, মিস নন্দিনী চ্যাটার্জী....... উপপপস্স, মিসেস নন্দিনী চ্যাটার্জী", জাহাঙ্গীর আবার সেই একই ভুল করলো। মিসেস এর বদলে মিস বলে নন্দিনীকে সম্বোধন করলো। ঠিক যেমনটা এসপি ভুতোড়িয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় করেছিল। বারবার করা এই ভুলটা কি নিছকই কাকতালীয় এবং অনিচ্ছাকৃত নাকি পরিকল্পিত তা তো শুধু জাহাঙ্গীরই জানে।
"তোমাকেও বলিহারি জাহাঙ্গীর, তুমি কি ম্যাডামের মাথার সিঁদুর, হাতের শাঁখা-পলা দেখতে পাওনা, যে ম্যাডামকে মিস বলছো? আমাদের জাতের মেয়েদের দেখলে হয়তো বোঝা যায়না কে বিয়ে করেছে কে করে নাই, কিন্তু ওঁনাদের তো সচরাচর দেখলেই বোঝা যায়।"
"নাহঃ নাহঃ, আমি জানি উনি বিবাহিতা। আসলে এখানে সবাই বলছে ম্যাডাম বিয়ের পরও কি সুন্দর নিজেকে মেইনটেইন করে রেখেছে। দেখলে বোঝা যায়না উনার বিয়ে সাত বছর হয়েছে, আবার বছর চারেক এর একটি মেয়েও রয়েছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে এসপি ভুতোড়িয়া সাহেব এসেছিলেন। তিনিও তাই বললেন, ম্যাডামকে দেখে এক্কেবারে চক্ষু ছানাবড়া হয়েগেছিলো তেনার। হা হা হা হা। ......"
জাহাঙ্গীরের এরূপ কথাবার্তা শুনে নন্দিনী মনে মনে খুব বিরক্তই হচ্ছিলো। প্রয়োজন এবং অধিকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত কথা বলছিলো সে। নেহাত এখানকার লোকাল লোক বলে....। তাছাড়া জায়গাটাও নন্দিনীর কাছে অপরিচিত, খুব একটা অনুকূল নয়। অগত্যা নিজের অসন্তোষ-কে সৌজন্য হাসির চাদরে মুড়ি দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছিলো। তবে অবাক করার কথা হলো এই লোকটা তার ব্যাপারে এত কিছু জানলো কি করে? সুস্মিতা জানিয়েছে নাকি? হতে পারে।
"ওহঃ ম্যাডাম, ভাইজানেরও পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি আমাদের গ্রামের রবিন হুড, যাকে বলে মাসিহহঃ। সুখে দুঃখে সবসময়ে গরীব-দুঃস্থ দের পাশে দাঁড়ান। গ্রামের সবাই এঁনাকে মেনে চলে। ইনি শাসক দলের স্বনামধন্য ব্লক সভাপতি জনাব নুরুল ই'সলাম ভাইজান"
"আহ্হঃ জাহাঙ্গীর মিঞা, তুমি সবসময়ে আমার ব্যাপারে বাড়িয়ে বলো, তা ভালো কথা হোক বা খারাপ কথা", জাহাঙ্গীরের উদ্দেশ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন ব্লক সভাপতি মহাশয়।
"আপনার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে ভালো লাগলো", মৃদুস্বরে ইতঃস্তত হয়ে বললো নন্দিনী।
নন্দিনীকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো সে লোকটাকে দেখে কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত। এরকম গুরু দায়িত্ব সে প্রথমবার পেয়েছে। তাই প্রথম থেকেই চোখে মুখে উদ্বেগের স্পষ্ট ছাপ ছিল, যা চাইলেও লুকোনো সম্ভব হচ্ছিলোনা তার দ্বারা। তার উপর পোড়খাওয়া দাপুটে নেতা নুরুল ই'সলামের লোলুপ চাউনি। যেন সাক্ষাৎ হায়না তাকিয়ে রয়েছে তার শিকারের দিকে। ভোট নিয়ে নন্দিনী যে ভেতর ভেতর বেশ চাপেই রয়েছে তা বুঝতে নুরুলেরও বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। সে এই যুবতী প্রিসাইডিং অফিসারকে আরো চাপে রাখতে বললো, "ম্যাডাম, দেখবেন সব যেন ভালোয় ভালোয় মিটে যায়। হাওয়া কিন্তু ভালো নয়, গোল পাকতে পারে।"
"কিচ্ছু চিন্তা করবেন না ভাইজান, ম্যাডামের সাথে তার সারথী রয়েছে, এই জাহাঙ্গীর মিঞা"
"জানি তো তুমি সব কাজে খুব পারদর্শী। তাই তো এলাকার লোক তোমাকে সমঝে চলে। কতবার বলেছি আমার পার্টি অফিসের দরজা তোমার জন্য খোলা। কিন্তু তুমিই তো রাজনীতিতে আসতে চাওনা।"
"কিছু মনে করবেন না ভাইজান, রাজনীতি এখন করে খাওয়ার জায়গা হয়েগেছে, আর আমি কার জন্যই খাবো। আপন বলতে আমার সে অর্থে কেউই নেই। তাই আমি টিচার-ই ঠিক আছি।"
"যা ভালো বোঝো।..... ম্যাডাম আমি তবে আসি। অঞ্চলের জননেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল আপনাকে সাবধান করার, আমি করলাম। বিষয়টা অন্যভাবে নেবেন না, এটা শুধু সাবধানবাণী ছিল, হুমকি ভাববেন না যেন। হা হা হা....."
এই বলে নুরুল ই'সলাম তাদের থেকে বিদায় নিলো। যেতে যেতে একবার ফিরে তাকালো নন্দিনীর দিকে। মনে মনে ভাবলো "হাহঃ খোদা, এই মাইয়্যাটা কে যদি একবার পেতাম বিছানায়। ......উফ্ফ্ফ!!"
নন্দিনীর ইলেকশন টিমের চতুর্থ সদস্য এসে পৌঁছলেন, কৌশিক বাবু, বয়স্ক এক ভদ্রলোক। পুরো নাম শ্রী কৌশিক মল্লিক। বারুইপুর মিউনিসিপ্যালিটির কর্তব্যরত এক সরকারি কর্মী। নন্দিনীর টিমে ছিল নন্দিনী প্রিসাডিং অফিসার হিসেবে, সুস্মিতা সেকেন্ড অফিসার, জাহাঙ্গীর লোকাল অফিসার বা লোকাল ইনচার্জ, আর কৌশিক বাবু কোঅর্ডিনেটর। এদের মধ্যে কৌশিক বাবু বয়সে একটু সিনিয়র ছিলেন বলে নন্দিনীর তাকে বেশি ভরসাযোগ্য বলে মনে হলো, জাহাঙ্গীরের তুলনায়।
স্কু'লের পিয়ন রমেন দা তাদের জন্য কিছু জলখাবার নিয়ে এলো, চা-বিস্কুট, নোনতা-মিষ্টি ইত্যাদিসমূহ। জাহাঙ্গীর টিমের বাকিদের উদ্বুদ্ধ করলো সেই আহারাদি গ্রহণ করতে। নন্দিনীর সেসবে মন ছিলোনা, ওর মধ্যে palpitations হচ্ছিলো পরের দিনের ইলেকশন প্রসেস নিয়ে। এটা তার কাছে একটা বড়ো দায়িত্ব ছিল। কেউ যাতে মেয়ে বলে তাকে কমজোর ভেবে না বসে সেইদিকটা খেয়াল রাখার দরকার ছিল।
জাহাঙ্গীর নন্দিনীর কাছে গিয়ে খাবারের প্লেটটা তুলে ধরলো। বললো, "আগে খেয়ে নিন, তারপর ইলেক্শন নিয়ে ওভারথিংকিং করবেন।"
"কি?? আমি ওভারথিংকিং করছি? আপনার এটা বলার সাহস কি করে হলো?"
"আঃহাহঃ, রাগ করবেন না। আপনার চোখ মুখে চিন্তার ভাব স্পষ্ট। আপনি ভাবছেন কেউ যাতে মেয়ে বলে আপনাকে কম না ভেবে বসে। আর তাই জন্য এক্সট্রা লোড নিচ্ছেন মাথার উপর!"
নন্দিনী অবাক পানে জাহাঙ্গীরের দিকে চেয়ে রইলো। লোকটা কি অন্তর্যামী? কি অবলীলায় তার মনের কথা বুঝে নিলো! জাহাঙ্গীর আবার প্লেটটা টেবিল থেকে তুলে তার মুখের সামনে ধরলো, দিয়ে বললো, "এটা বসিরহাটের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। অর্ডার দিয়ে আনিয়েছি, আপনার জন্য, মানে আপনাদের সবার জন্য। তাই আপনি না খেলে শুধু আমার নয়, এই বসিরহাটের কাঁচাগোল্লারও অপমান হবে।"
ভরদুপুরে নন্দিনীর এসব মিষ্টি খেতে একদম মন করছিলোনা। কিন্তু উপায় কি? লোকাল লোকজনকে চটালে যে তারই কাজ করতে অসুবিধা হবে। তাই না না করেও একটা কাঁচাগোল্লা মুখে দিলো নন্দিনী। তারপর চা আর একটা বিস্কুট খেয়ে লেগে পড়লো কাজে।
যেকোনো নির্বাচনই ভারতবর্ষের মানুষের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ হয়। এই নির্বাচনও ব্যতিক্রম ছিলোনা, হোক না তা পঞ্চায়েত নির্বাচন। নন্দিনী মনে মনে প্রার্থনা করছিলো যেন নির্বাচনটা সুষ্ঠভাবে হয়ে যায়। যদিও এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠভাবে হওয়ার বিরল নজির খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনিং এর সময় সে জানতে পারে হাকিমপুর পঞ্চায়েতে নির্বাচনের সময় খুব একটা রেষারেষি হয়না। কারণ এখানে মাত্র একটি দলেরই একচ্ছত্র আধিপত্য চলে, নির্বাচনেও এবং সাময়িকভাবেও।
জায়গাটা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। বিরোধীপক্ষের কোনো শক্ত ঘুঁটি নেই। কিন্তু শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল লেগেই থাকে। তার জন্যই যত ঝামেলার উৎপত্তি হয়। স্থানীয় বিধায়কের একটি গোষ্ঠি, জেলা সভাপতির একটি গোষ্ঠী। প্রার্থী বাছাইয়ে বিধায়কের সুপারিশ করা একজনকেও জেলা সভাপতি এবার প্রার্থী করেনি। তাই জন্য এবার এলাকায় শাসক দলের থেকে অনেক বাগী প্রার্থী নির্দল হয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছে। তাই ভোট নিয়ে এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা তো রয়েছে।
স্কু'লের প্রাঙ্গনে তখন শাসক দলের ব্লক সভাপতি এসে হাজির। সে আবার বিধায়ক গোষ্ঠীর লোক। ওপর ওপর দলের হয়ে কাজ করলেও, গোপনে বাগী প্রার্থীগুলিকে সেই প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিচ্ছে বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনে। জাহাঙ্গীর নন্দিনীকে সাবধান করে দিলো। বললো এই লোকটা খুব ডেঞ্জারাস! এ মাটির ওপরে যতটা, মাটির তলায়ও ততোটা। নন্দিনী জাহাঙ্গীরের কথা কিছু বুঝতে পারলোনা। জাহাঙ্গীর তাকে আস্বস্ত করে বললো সে তাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবে গ্রামের পলিটিক্স। এখন চুপচাপ জাহাঙ্গীর যা বলছে নন্দিনী যেন সেটাই করে।
নন্দিনী ভাবলো জাহাঙ্গীর স্থানীয় লোক। এখানকার মানুষের গতিবিধির ব্যাপারে সেই একটু ভালো বুঝবে। তাই এই বিষয়ে তার উপর ভরসা করাই যায়। এমনিতেও সুস্মিতা বলেছে জাহাঙ্গীর নাকি তার উপর পুরো লাট্টু। স্বভাবতই আমার কাছে হিরো সাজতে ও আমার উপকারই করবে, অন্যথা নয়, মনে মনে ভাবলো নন্দিনী।
"গ্রামের পলিটিক্স বুঝে আমি কি করবো", জাহাঙ্গীরের দিকে তির্যক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো নন্দিনী।
"আঃহা ম্যাডাম, আপনি বুঝছেন না। আপনি এখানকার প্রিসাইডিং অফিসার, লোকাল ইনচার্জ হওয়ার দরুন আমার এটা কর্তব্য আপনাকে প্রতি পদে পদে সাবধান করে দেওয়া আগামী বিপদের আভাস পেলে। কিন্তু আপনি না জানি কেন আমার থেকে দূরে দূরে থাকছেন। ভাবছেন হয়তো আমি খারাপ লোক। তাই তো বেশি সময় ওই কৌশিক বাবুর সাথে কথা বলছেন। জানতে চাইছেন খুঁটিনাটি বিষয় গুলো। অথচ উনি কি করে বুঝবেন গ্রাম্য পলিটিক্স? উনি তো শহরতলির লোক। তাই আপনাকে আগে থেকে অবগত করে রাখছি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে, যাতে আপনার কাজ করতে সুবিধে হয়। আপনার হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন আমার সাথে দু'দন্ড কথা বলতে। আপনি যদি আমাকে একটু বিশ্বাস করতেন, তাহলে আমিই আপনার হয়ে সব সমস্যা সামলে নিতাম।"
লোকটা এইটুকু সময়ে এতকিছু নোটিশ করেছে আমাকে নিয়ে! আমাকে সারাক্ষণ নিজের নজরে বন্দী করে রাখছে? কিন্তু কেন? শুধুই কি আমার প্রতি প্রয়োজনাধিক সুপ্ত আকাঙ্খা রয়েছে বলে, নাকি কোনো কু-বাসনা আছে? তবে লোকটা যা যা বলেছে সেগুলো ফেলে দেওয়ার নয়। সত্যিই সে এই গ্রামের বিষয়ে কিচ্ছু জানেনা। আর কৌশিকবাবুও তো উত্তরপাড়ার লোক। অভিজ্ঞ হলেও স্থানীয় বিষয়ে আমার মতোই সে অজ্ঞাত। অপরদিকে এই জাহাঙ্গীর লোকাল লোক। যতই হোক, ঘোড়া ডিঙিয়ে তো ঘাস খাওয়া যাবেনা। ওকে আমার লাগবেই। মানে ওর সাহায্য আমার লাগবে, নির্বাচনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ভালোমতো উতরে দিতে।
"কৌশিক বাবু অভিজ্ঞ বলে তার কাছে ইলেকশন প্রসিডিউর নিয়ে খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিচ্ছিলাম। আপনাকে অ্যাভয়েড করার কোনোরকম অভিপ্রায় আমার মধ্যে ছিলোনা। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন", কোনোরকমে নিজেকে জাস্টিফাই করতে লাগলো নন্দিনী জাহাঙ্গীরের সামনে।
জাহাঙ্গীরও কাঁচা খেলোয়াড় নয়। সে জানে নন্দিনী ম্যাডাম এখন ব্যাকফুটে। ভালো প্যাঁচে ফেলেছে সে তাকে। কিন্তু তাও সে আর কোনো কথা বাড়ালো না। ব্লক সভাপতি নুরুল ই'সলাম আসছে দেখে আগ বাড়িয়ে তার কাছে নন্দিনী কে নিয়ে যেতে লাগলো, পরিচয় করিয়ে দিতে। নন্দিনীও এবার জাহাঙ্গীরের উপর ভরসা করে তার সাথে এগিয়ে গেলো।
"আস-সালামু আলাইকুম ভাইজান"
"ওয়া ʿআলাইকুমু স-সালাম জাহাঙ্গীর মিঞা"
নন্দিনী জানে দুজন ই'সলাম সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের সাথে সাক্ষাতে প্রথমে এই শুভেচ্ছা আদান প্রদান করে। ঠিক যেমন শি'খ সম্প্রদায়ের মানুষরা "জো বোলে সো নিহাল...... সাৎ শ্রী আকাল...." বলে অভিবাদন করে। যাই হোক, দুজনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময় হলো। একে অপরের হাল-হকিকত বিষয়ে জানতে চাইলো। নন্দিনী কিছুটা পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল। জাহাঙ্গীর তার দিকে ফিরে তাকালো। দেখলো নন্দিনী clueless হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু'জন চেনাপরিচিতর কথোপকথনে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে অনাকাঙ্খিত, অযাচিত মনে করছে।
জাহাঙ্গীর নন্দিনীর হাত ধরে নুরুল ই'সলামের নিকট নিয়ে এলো পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। নন্দিনীর প্রচন্ড অস্বস্তি হলো এভাবে হঠাৎ জাহাঙ্গীর তার হাত ধরায়। সে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে নুরুল ই'সলাম-কে নমস্কার করলো। নুরুল ভাইজান গেঁয়ো পলিটিশিয়ান হলেও সে জানে রাজনৈতিক স্বার্থে কিভাবে ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে অপর প্রান্তের মানুষের বিশ্বাস-কে সম্মান জানিয়ে তাকে সম্বোধন করতে হয়। তাই সেও সালামের পরিবর্তে হাত জোর করে নমস্কার জানালো নন্দিনীকে।
"ইনি আমাদের প্রিসাইডিং অফিসার, মিস নন্দিনী চ্যাটার্জী....... উপপপস্স, মিসেস নন্দিনী চ্যাটার্জী", জাহাঙ্গীর আবার সেই একই ভুল করলো। মিসেস এর বদলে মিস বলে নন্দিনীকে সম্বোধন করলো। ঠিক যেমনটা এসপি ভুতোড়িয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় করেছিল। বারবার করা এই ভুলটা কি নিছকই কাকতালীয় এবং অনিচ্ছাকৃত নাকি পরিকল্পিত তা তো শুধু জাহাঙ্গীরই জানে।
"তোমাকেও বলিহারি জাহাঙ্গীর, তুমি কি ম্যাডামের মাথার সিঁদুর, হাতের শাঁখা-পলা দেখতে পাওনা, যে ম্যাডামকে মিস বলছো? আমাদের জাতের মেয়েদের দেখলে হয়তো বোঝা যায়না কে বিয়ে করেছে কে করে নাই, কিন্তু ওঁনাদের তো সচরাচর দেখলেই বোঝা যায়।"
"নাহঃ নাহঃ, আমি জানি উনি বিবাহিতা। আসলে এখানে সবাই বলছে ম্যাডাম বিয়ের পরও কি সুন্দর নিজেকে মেইনটেইন করে রেখেছে। দেখলে বোঝা যায়না উনার বিয়ে সাত বছর হয়েছে, আবার বছর চারেক এর একটি মেয়েও রয়েছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে এসপি ভুতোড়িয়া সাহেব এসেছিলেন। তিনিও তাই বললেন, ম্যাডামকে দেখে এক্কেবারে চক্ষু ছানাবড়া হয়েগেছিলো তেনার। হা হা হা হা। ......"
জাহাঙ্গীরের এরূপ কথাবার্তা শুনে নন্দিনী মনে মনে খুব বিরক্তই হচ্ছিলো। প্রয়োজন এবং অধিকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত কথা বলছিলো সে। নেহাত এখানকার লোকাল লোক বলে....। তাছাড়া জায়গাটাও নন্দিনীর কাছে অপরিচিত, খুব একটা অনুকূল নয়। অগত্যা নিজের অসন্তোষ-কে সৌজন্য হাসির চাদরে মুড়ি দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছিলো। তবে অবাক করার কথা হলো এই লোকটা তার ব্যাপারে এত কিছু জানলো কি করে? সুস্মিতা জানিয়েছে নাকি? হতে পারে।
"ওহঃ ম্যাডাম, ভাইজানেরও পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি আমাদের গ্রামের রবিন হুড, যাকে বলে মাসিহহঃ। সুখে দুঃখে সবসময়ে গরীব-দুঃস্থ দের পাশে দাঁড়ান। গ্রামের সবাই এঁনাকে মেনে চলে। ইনি শাসক দলের স্বনামধন্য ব্লক সভাপতি জনাব নুরুল ই'সলাম ভাইজান"
"আহ্হঃ জাহাঙ্গীর মিঞা, তুমি সবসময়ে আমার ব্যাপারে বাড়িয়ে বলো, তা ভালো কথা হোক বা খারাপ কথা", জাহাঙ্গীরের উদ্দেশ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন ব্লক সভাপতি মহাশয়।
"আপনার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে ভালো লাগলো", মৃদুস্বরে ইতঃস্তত হয়ে বললো নন্দিনী।
নন্দিনীকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো সে লোকটাকে দেখে কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত। এরকম গুরু দায়িত্ব সে প্রথমবার পেয়েছে। তাই প্রথম থেকেই চোখে মুখে উদ্বেগের স্পষ্ট ছাপ ছিল, যা চাইলেও লুকোনো সম্ভব হচ্ছিলোনা তার দ্বারা। তার উপর পোড়খাওয়া দাপুটে নেতা নুরুল ই'সলামের লোলুপ চাউনি। যেন সাক্ষাৎ হায়না তাকিয়ে রয়েছে তার শিকারের দিকে। ভোট নিয়ে নন্দিনী যে ভেতর ভেতর বেশ চাপেই রয়েছে তা বুঝতে নুরুলেরও বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। সে এই যুবতী প্রিসাইডিং অফিসারকে আরো চাপে রাখতে বললো, "ম্যাডাম, দেখবেন সব যেন ভালোয় ভালোয় মিটে যায়। হাওয়া কিন্তু ভালো নয়, গোল পাকতে পারে।"
"কিচ্ছু চিন্তা করবেন না ভাইজান, ম্যাডামের সাথে তার সারথী রয়েছে, এই জাহাঙ্গীর মিঞা"
"জানি তো তুমি সব কাজে খুব পারদর্শী। তাই তো এলাকার লোক তোমাকে সমঝে চলে। কতবার বলেছি আমার পার্টি অফিসের দরজা তোমার জন্য খোলা। কিন্তু তুমিই তো রাজনীতিতে আসতে চাওনা।"
"কিছু মনে করবেন না ভাইজান, রাজনীতি এখন করে খাওয়ার জায়গা হয়েগেছে, আর আমি কার জন্যই খাবো। আপন বলতে আমার সে অর্থে কেউই নেই। তাই আমি টিচার-ই ঠিক আছি।"
"যা ভালো বোঝো।..... ম্যাডাম আমি তবে আসি। অঞ্চলের জননেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল আপনাকে সাবধান করার, আমি করলাম। বিষয়টা অন্যভাবে নেবেন না, এটা শুধু সাবধানবাণী ছিল, হুমকি ভাববেন না যেন। হা হা হা....."
এই বলে নুরুল ই'সলাম তাদের থেকে বিদায় নিলো। যেতে যেতে একবার ফিরে তাকালো নন্দিনীর দিকে। মনে মনে ভাবলো "হাহঃ খোদা, এই মাইয়্যাটা কে যদি একবার পেতাম বিছানায়। ......উফ্ফ্ফ!!"