10-01-2025, 10:00 PM
অংশু গোবিন্দপুর পৌঁছল সকাল এগারোটা নাগাদ। বড় রাস্তা ধরে হেঁটে পৌঁছল দিদার বাড়িতে। বড় বারান্দা আর দোতলা বাড়ির ওপর নুয়ে থাকা বিশাল শিরীষ গাছটা দেখলে প্রাণ ভরে যায় অংশুমানের। বারান্দায় খেলা করছিল বিট্টু আর লাট্টু। অংশুকে দেখে ওরা দৌড়ে এলো। বিট্টু আগেই এসে জাপ্টে ধরল---দা..আ..দা..আ..আ..
লাট্টুটা ছোট। ও' পরে এসে পৌঁছল। দুজনেই অংশুকে পেয়ে বড্ড খুশি। অংশু বলল---কি রে তোরা কি করছিস?
বিট্টু মাটির ঢেলা দেখিয়ে বলল---দাদা, দেখো আমি কি বানিয়েছি?
---কি ওটা?
---লাটিম?
ওমনি লাট্টু বললে---দাআআ আমালটা দেকো..
অংশু দেখলে ওর হাতেও মাটির ঢেলা। দুজনেই কাঁচা মাটি নিয়ে খেলছিল। ডালিয়া দেখতে পেয়ে বললে----হায়! হায়! দেখলি তোর ভালো জামা কাপড়ের গায়ে বজ্জাত দুটো মাটি লেপে দিল! ভাগ এখান থেকে!
অংশু হেসে বলল---না না। কোথায়? মাটি লাগেনি তো। ডালিয়া মাসি ভালো আছো?
ডালিয়া বিস্মিত হয়ে বললে---তুই একা এসেছিস? দাদাবাবু কোথায়?
---হ্যা। বাবা আসবে না।
---তোর বাবাকে জানিয়েছিস? আমি কাল যা বললাম?
অংশু গম্ভীর হয়ে বলল---না। বাবা জানলে সমস্যা বাড়বে।
---ওমা! কি অলুক্ষনে কথা! তুই ছেলে মানুষ, তোর মায়ের মাথার ভুত নামাবি কি করে? আর ঐ লোককে শায়েস্তা করতে তুই পারবি নে, একটা পাষন্ড জানোয়ার!
---মা কোথায়?
---কোথায় আবার? কলেজে গেছে। আয় আয় ভেতরে আয়। আমি বাপু এ' বাড়ির কে? সুচি দি'র এসব কান্ডকারখানা আর সহ্য করতে পারছি না। আমার খুড়তুতো দাদা ডাকে, তার কাছে চলে গেলে পরে বাঁচি। তারপর আর আমার এ' বাড়ির ভালো-মন্দের দায় নেই।
পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে দিদার বাড়ির বড় বারান্দায় জুতো মোজা খুলতে লাগলো অংশু। ডালিয়া আবার বলল---খবরদার! তোর মাকে আবার বলিস না, আমি তোকে খবর দিয়েছি।
অংশু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা দিদার ঘরে ঢুকে পড়ল। শয্যাশায়ী দিদা এবারও চিনতে ভুল করলেন। অংশু আবার পরিচয় দিলেই বৃদ্ধা নাতির হাতটা ধরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন---তোর মায়ের সাথে দেখা হয়েছে?
---না, মা তো কলেজে গেছে।
---তোর দিদি এসেছে নাকি? দেখিনি মেয়েটাকে কতদিন! কি যেন নাম রে?
অংশু হেসে বলল---পিউ। দিদি এখন চেন্নাইতে। আইআইটি কলেজে পড়ে।
---এতটুকু মেয়েকে এদ্দুরে পড়তে পাঠিয়ে দিল তোর বাবা-মা! বলিহারি তোর মাকে!
তারপর বৃদ্ধা হাঁক দিলেন---ডালিয়া, অংশুকে কিছু খেতে দিলি?
ডালিয়া নিয়ে গেল অংশুকে। পিছু নিয়েছে বিট্টু-লাট্টুও। ওরা অংশুকে ছাড়তেই চায় না। অংশু বলল---ডালিয়া মাসি, এখন তো সবে সাড়ে এগারোটা বাজে। একেবারে দুপুরে ভাতই খাবো।
---তাহলে দেরি করছিস কেন? সেই কখন বের হয়েছিস। যা স্নান করে নে।
বিট্টু-লাট্টুর তখনও অংশুর সঙ্গে লেগে থাকায় বিরক্ত ডালিয়া মাসি চোখ বিস্ফোরিত করে বকা দিলে ওদের---ওর পেছন পেছন ঘুরছিস কেন? সারাদিন বাড়ির ক্ষতি না করলে...
অংশু বললে---আঃ ওদের বকছ কেন ডালিয়া মাসি?
অংশুর কথার গুরুত্ব না দিয়ে ডালিয়া বিড়বিড় করতে লাগলো তখনও---তোর মা 'ই লাই দিয়েছে ওদের...যেমন বাপ, তেমন ছা দুটো...নাগরের বাচ্চার জন্য পিরিত দেখলে গা জ্বলে যায়। পেটের ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে এসে ধাড়ি বাচ্চা দুটোকে কেমন দিনরাত মাই খাওয়াচ্ছে! পোয়াতি না হয়েও গাভীন হয়েছে যে!
এত ঘিনঘিনে গেঁয়ো অশালীন কথা মায়ের সম্পর্কে শুনতে ভালো লাগছে না অংশুর। জিজ্ঞেস করল ডালিয়া মাসিকে--কিন্তু আমার এসব ব্যাগ পত্তর?
---তোর মায়ের ঘরে রাখগে যা।
অংশু মায়ের ঐ ছোট ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকল। ঘরটা মা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে এ' কদিনে। এতবড় বাড়িতে দুই তলা মিলিয়ে অনেকগুলো ঘর। তবু মা তার শৈশবের ঘরটাই এখনো থাকবার জন্য বেছে নিয়েছে। ঘরের দেয়ালে ফাঁদ আর নেই। বুক সেলফ গোছানো। এ' ঘরের সেকেলে পালঙ্ক খাটটা বেশ উঁচুতে। পায়ার তলায় ইট দিয়ে উঁচু করা। অংশু তার ব্যাগটা পাশের পুরোনো কাঠের চেয়ারে রাখলো। গায়ের শার্টটা খুলে আলনা থেকে একটা গামছা নিতে গেলেই ডালিয়া মাসি ঘরে ঢুকে তৎক্ষনাৎ রে রে করে বাধা দিলে, বললে---ছিঃ ছিঃ! এটা নিস না। নোংরা দেখছিস না!
অংশু খেয়াল করল গামছাটা মোটেই নোংরা নয়। এটা মায়েরই ব্যবহার করা। তাই বললে---কোথায় নোংরা? এটা তো মায়ের!
---তোর মায়ের হলে কি হবে। কাল দুপুরে তোর মায়ের এই গামছা দিয়েই না সে তার পীরিতের নাগরের গা মোছাচ্ছিল। এ' ঘরে তোর থাকার ব্যবস্থা করাই ভুল হয়েছে। দাঁড়া দোতলার ঘর একটা আমি পরিস্কার করে দিচ্ছি।
---কেন? এ'ঘরই তো বেশ। মায়ের সাথেই থাকবো।
অংশু সেবার যখন এসেছিল তখন মায়ের এই ছোট ঘরখানা বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাই সে খুব সরলভাবেই বলল তার পছন্দের কথা। মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল ডালিয়া মাসি। বলল---এ' ঘরে কি তোর মা একা থাকে? হতচ্ছাড়া ভিখিরি নোংরা মাতালটাও যে তোর মায়ের সাথে শোয়! আর জুটেছে নাগরের দুটো বদের ধাড়ি বাচ্চা।
ডালিয়া মাসি গ্রাম্য মহিলা। পড়ালেখা তেমন নেই। তাই অংশুর সামনেও কোনো রাখঢাক করছে না। অংশু বলল---গফুর মায়ের সাথে এ' ঘরেই থাকে?
---থাকে মানে? গা জ্বলে যায়। একটা ইকলেজের দিদিমণি, ডাক্তারের বউ হয়ে কিনা...একটা রাস্তার মাতালকে নিয়ে সংসার পেতেছে... সুচি দি'র পেটের ছেলে তুই, তোকে কি বলব! তুই নিজেই দেখবি তোর মায়ের নোংরামো। ছিঃ ছিঃ, রাত ভিতে ঘুমাতেও পারবিনে। সারারাত আলো জ্বলবে ঘরে...আর লটরপটর, মারধর...গালি গালাচ...! দু বাচ্চার মা হলি, এ বয়সে এত কিসের গতরের খিদে! বুঝিনা বাপু!
অংশুরও অস্বস্তি হচ্ছে। তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটি, তার চোখে এ যাবৎ দেখা আদর্শ নারী তার মায়ের সম্পর্কে খারাপ কথাগুলি শুনতে মোটেই ভালো লাগছে না। সে বলল---ডালিয়া মাসি, সে লোকটা এখন কোথায়?
---কোথায় কে জানে! নেশাভান করে ফিরবে কখন, তারপর ঘরময় উৎপাত শুরু করবে...
***
লাট্টুটা ছোট। ও' পরে এসে পৌঁছল। দুজনেই অংশুকে পেয়ে বড্ড খুশি। অংশু বলল---কি রে তোরা কি করছিস?
বিট্টু মাটির ঢেলা দেখিয়ে বলল---দাদা, দেখো আমি কি বানিয়েছি?
---কি ওটা?
---লাটিম?
ওমনি লাট্টু বললে---দাআআ আমালটা দেকো..
অংশু দেখলে ওর হাতেও মাটির ঢেলা। দুজনেই কাঁচা মাটি নিয়ে খেলছিল। ডালিয়া দেখতে পেয়ে বললে----হায়! হায়! দেখলি তোর ভালো জামা কাপড়ের গায়ে বজ্জাত দুটো মাটি লেপে দিল! ভাগ এখান থেকে!
অংশু হেসে বলল---না না। কোথায়? মাটি লাগেনি তো। ডালিয়া মাসি ভালো আছো?
ডালিয়া বিস্মিত হয়ে বললে---তুই একা এসেছিস? দাদাবাবু কোথায়?
---হ্যা। বাবা আসবে না।
---তোর বাবাকে জানিয়েছিস? আমি কাল যা বললাম?
অংশু গম্ভীর হয়ে বলল---না। বাবা জানলে সমস্যা বাড়বে।
---ওমা! কি অলুক্ষনে কথা! তুই ছেলে মানুষ, তোর মায়ের মাথার ভুত নামাবি কি করে? আর ঐ লোককে শায়েস্তা করতে তুই পারবি নে, একটা পাষন্ড জানোয়ার!
---মা কোথায়?
---কোথায় আবার? কলেজে গেছে। আয় আয় ভেতরে আয়। আমি বাপু এ' বাড়ির কে? সুচি দি'র এসব কান্ডকারখানা আর সহ্য করতে পারছি না। আমার খুড়তুতো দাদা ডাকে, তার কাছে চলে গেলে পরে বাঁচি। তারপর আর আমার এ' বাড়ির ভালো-মন্দের দায় নেই।
পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে দিদার বাড়ির বড় বারান্দায় জুতো মোজা খুলতে লাগলো অংশু। ডালিয়া আবার বলল---খবরদার! তোর মাকে আবার বলিস না, আমি তোকে খবর দিয়েছি।
অংশু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা দিদার ঘরে ঢুকে পড়ল। শয্যাশায়ী দিদা এবারও চিনতে ভুল করলেন। অংশু আবার পরিচয় দিলেই বৃদ্ধা নাতির হাতটা ধরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন---তোর মায়ের সাথে দেখা হয়েছে?
---না, মা তো কলেজে গেছে।
---তোর দিদি এসেছে নাকি? দেখিনি মেয়েটাকে কতদিন! কি যেন নাম রে?
অংশু হেসে বলল---পিউ। দিদি এখন চেন্নাইতে। আইআইটি কলেজে পড়ে।
---এতটুকু মেয়েকে এদ্দুরে পড়তে পাঠিয়ে দিল তোর বাবা-মা! বলিহারি তোর মাকে!
তারপর বৃদ্ধা হাঁক দিলেন---ডালিয়া, অংশুকে কিছু খেতে দিলি?
ডালিয়া নিয়ে গেল অংশুকে। পিছু নিয়েছে বিট্টু-লাট্টুও। ওরা অংশুকে ছাড়তেই চায় না। অংশু বলল---ডালিয়া মাসি, এখন তো সবে সাড়ে এগারোটা বাজে। একেবারে দুপুরে ভাতই খাবো।
---তাহলে দেরি করছিস কেন? সেই কখন বের হয়েছিস। যা স্নান করে নে।
বিট্টু-লাট্টুর তখনও অংশুর সঙ্গে লেগে থাকায় বিরক্ত ডালিয়া মাসি চোখ বিস্ফোরিত করে বকা দিলে ওদের---ওর পেছন পেছন ঘুরছিস কেন? সারাদিন বাড়ির ক্ষতি না করলে...
অংশু বললে---আঃ ওদের বকছ কেন ডালিয়া মাসি?
অংশুর কথার গুরুত্ব না দিয়ে ডালিয়া বিড়বিড় করতে লাগলো তখনও---তোর মা 'ই লাই দিয়েছে ওদের...যেমন বাপ, তেমন ছা দুটো...নাগরের বাচ্চার জন্য পিরিত দেখলে গা জ্বলে যায়। পেটের ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে এসে ধাড়ি বাচ্চা দুটোকে কেমন দিনরাত মাই খাওয়াচ্ছে! পোয়াতি না হয়েও গাভীন হয়েছে যে!
এত ঘিনঘিনে গেঁয়ো অশালীন কথা মায়ের সম্পর্কে শুনতে ভালো লাগছে না অংশুর। জিজ্ঞেস করল ডালিয়া মাসিকে--কিন্তু আমার এসব ব্যাগ পত্তর?
---তোর মায়ের ঘরে রাখগে যা।
অংশু মায়ের ঐ ছোট ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকল। ঘরটা মা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে এ' কদিনে। এতবড় বাড়িতে দুই তলা মিলিয়ে অনেকগুলো ঘর। তবু মা তার শৈশবের ঘরটাই এখনো থাকবার জন্য বেছে নিয়েছে। ঘরের দেয়ালে ফাঁদ আর নেই। বুক সেলফ গোছানো। এ' ঘরের সেকেলে পালঙ্ক খাটটা বেশ উঁচুতে। পায়ার তলায় ইট দিয়ে উঁচু করা। অংশু তার ব্যাগটা পাশের পুরোনো কাঠের চেয়ারে রাখলো। গায়ের শার্টটা খুলে আলনা থেকে একটা গামছা নিতে গেলেই ডালিয়া মাসি ঘরে ঢুকে তৎক্ষনাৎ রে রে করে বাধা দিলে, বললে---ছিঃ ছিঃ! এটা নিস না। নোংরা দেখছিস না!
অংশু খেয়াল করল গামছাটা মোটেই নোংরা নয়। এটা মায়েরই ব্যবহার করা। তাই বললে---কোথায় নোংরা? এটা তো মায়ের!
---তোর মায়ের হলে কি হবে। কাল দুপুরে তোর মায়ের এই গামছা দিয়েই না সে তার পীরিতের নাগরের গা মোছাচ্ছিল। এ' ঘরে তোর থাকার ব্যবস্থা করাই ভুল হয়েছে। দাঁড়া দোতলার ঘর একটা আমি পরিস্কার করে দিচ্ছি।
---কেন? এ'ঘরই তো বেশ। মায়ের সাথেই থাকবো।
অংশু সেবার যখন এসেছিল তখন মায়ের এই ছোট ঘরখানা বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাই সে খুব সরলভাবেই বলল তার পছন্দের কথা। মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল ডালিয়া মাসি। বলল---এ' ঘরে কি তোর মা একা থাকে? হতচ্ছাড়া ভিখিরি নোংরা মাতালটাও যে তোর মায়ের সাথে শোয়! আর জুটেছে নাগরের দুটো বদের ধাড়ি বাচ্চা।
ডালিয়া মাসি গ্রাম্য মহিলা। পড়ালেখা তেমন নেই। তাই অংশুর সামনেও কোনো রাখঢাক করছে না। অংশু বলল---গফুর মায়ের সাথে এ' ঘরেই থাকে?
---থাকে মানে? গা জ্বলে যায়। একটা ইকলেজের দিদিমণি, ডাক্তারের বউ হয়ে কিনা...একটা রাস্তার মাতালকে নিয়ে সংসার পেতেছে... সুচি দি'র পেটের ছেলে তুই, তোকে কি বলব! তুই নিজেই দেখবি তোর মায়ের নোংরামো। ছিঃ ছিঃ, রাত ভিতে ঘুমাতেও পারবিনে। সারারাত আলো জ্বলবে ঘরে...আর লটরপটর, মারধর...গালি গালাচ...! দু বাচ্চার মা হলি, এ বয়সে এত কিসের গতরের খিদে! বুঝিনা বাপু!
অংশুরও অস্বস্তি হচ্ছে। তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটি, তার চোখে এ যাবৎ দেখা আদর্শ নারী তার মায়ের সম্পর্কে খারাপ কথাগুলি শুনতে মোটেই ভালো লাগছে না। সে বলল---ডালিয়া মাসি, সে লোকটা এখন কোথায়?
---কোথায় কে জানে! নেশাভান করে ফিরবে কখন, তারপর ঘরময় উৎপাত শুরু করবে...
***