17-12-2024, 10:43 PM
সুচিত্রা চুপ করে গেল। চলে গেল রান্নাঘরে। জয়ন্ত মুখ হাত ধুয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছাদবারান্দায়। কানের কাছে বাসন কোচনের ঠুনকো শব্দ কানে বাজতে বাজতে থেমে গেল। সামনের বাড়িটা যেন অন্ধকার দৈত্যের মত এ বাড়িকে গিলে ফেলল, মনে হচ্ছে জয়ন্তের। গ্লানি, শ্লাঘা মিশে সে তখন অপরিসীম যন্ত্রনায় নিশ্চুপ। সুচিত্রা কখন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারেনি। সুচি বলল---মিতারা এখনো যায়নি। কাল যাবে।
জয়ন্ত কোনো উত্তর করল না। সুচিত্রা ও নিশ্চুপ। পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল দুজনে দীর্ঘক্ষণ। জয়ন্ত অকস্মাৎ ছেলেমানুষের মত বলল---সুচি, তুমি কি কোনো ভাবেই আমাকে মাফ করে দিতে পারছ না? একবার বিবেচনা করা যায় না। আমরা বাইশ বছর একসাথে কাটিয়েছি। তার আগে আমাদের প্রেম, পারিবারিক পরিচয়। এসব...
বড্ড অহংকারের সাথে একরাশ অভিমান রেখেই এক আশ্চর্য দৃঢ়তায় সুচিত্রা বললে---মাফ আমি করে দিয়েছি তোমাকে সেদিন, যেদিন আমিও নষ্ট হয়েছি। বাইশ বছর আমরা একসাথে কাটানোর পরও তোমার মনে হয়েছে তুমি অসুখী, যা পেতে মিতার দ্বারস্থ হয়েছ। বিশ্বাস করো, আমার মত মেয়েমানুষ যা ভাবতেই পারি না। যেদিন আমিও এমন অপরাধ করলাম, তোমাকে ঠকালাম, সেদিন আমিও টের পেয়েছি নতুন করে বাঁচতে গেলে অনেক অপ্রাপ্তি আমাদের সংসারের চাপে থেকে যায়। আমরা কেউই সাহস করে তা পারি না, তোমরা পুরুষমানুষ তা কি সহজে পারো। মেয়েরা তা পারে না।
---তুমি কি অসুখী ছিলে? জয়ন্ত বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
---জানি না। হয়ত তোমার মত কিছু ক্ষেত্রে। হয়ত সেটা আমাদের জীবনের অন্ধকার দিক হতে পারে।
জয়ন্ত বললে---তুমি ফিজিক্যাল কিছু বলছ? যার মোহে পড়ে আমি...
---শুধুই কি মোহ? তাহলে দিনের পর দিন তুমি কেন ঘরে বউ থাকতে থাকতে...
---সুচি, ওটা মোহই। আমি ভুল বুঝতে পেরেছি।
সুচিত্রা হাসলো। জয়ন্তের নগ্ন পিঠে লেগে থাকা ঘাম আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিল সে। তারপর বলল---তুমি কি শারীরিক দিক থেকে আমার কাছে সুখী ছিলে? তোমার কি এই একঘেয়ে সংসার আর বুড়ো বয়সের দিকে এগোতে থাকার ভয় অনুভব হয়নি? সত্যি করে বলো?
সুচির প্রশ্ন সঙ্গত। জয়ন্ত বলল---মানছি। কিন্তু তারপরেও তো তুমি আমার আশ্রয়।
---তুমি শিশু নও, যে আমি তোমার আশ্রয় হব। তুমি মিতার আশ্রয় নিতে গেছ তারপরে। কারণ আমার কাছে তোমার সমস্ত অভাবগুলো পূর্ন করতে কিংবা নতুন করে যৌবন ফিরে পেতে মিতার কাছে গেছ। যাওনি?
জয়ন্ত জানে তার মাস্টার ডিগ্রি পাশ করা স্ত্রী শিক্ষিকা। যথেষ্ট সাবলীলভাবে সুচি অনেকগুলি মনোস্তাত্বিক প্রশ্ন করছে তাকে। যা ফেলে দেওয়া যায় না। আসলে সুচির এটাই ইউএসপি, জয়ন্ত দেখেছে সুচি যেমন সংসারে সেকেলে গৃহিণী, বর্তমান প্রজন্মের নানা আপডেটেট বিষয়ে ছেলেমেয়েদের সাথে মানিয়ে নিতে না পারা একজন সাংসারিক সন্তান সর্বস্ব মা, একজন স্বামী সেবা পরায়না স্ত্রী। আবার কখনো কখনো সেই সুচিত্রাই বুদ্ধিমতী উচ্চশিক্ষিতা একজন নারী, একজন কলেজ শিক্ষিকা। জয়ন্ত স্ত্রীর এই রূপটার ভীষণ বড় প্রেমিক। সুচির এই দ্বৈততা আর কোনো নারীতে সে দেখে না। সে বলল---সুচি, তোমার সব কথাই ঠিক, কিন্তু তুমি কেন..?
কথা শেষ হবার আগেই সুচি বলল---আমিও হয়ত তোমার মত। চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ঘর সংসার, চাকরী এসবই ভেবেছি। আস্তে আস্তে যখন বুঝলাম তুমি আর আমার প্রতি আকর্ষিত বোধ করো না। আমি যে বুড়িয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারি। চেষ্টা করতাম তোমার কাছে সেই বিয়ের প্রথমদিনগুলোর মত হতে। কিন্তু আমি ততদিনে মনের মধ্যেই বুড়িয়ে গেছি। পারতাম না তোমার কাছে মেলে ধরতে। বিশ্বাস করো যেদিন জানলাম তুমি ঠকাচ্ছ আমাকে, দিনভর একা একা কেঁদেছি। বিশ্বাস করতাম, সবই আমার ভুল ভাবনা। ভেবেছিলাম তুমি যা করছ করো, আমার সাহস নেই সত্যটা খুঁজে বের করার। আসলে সত্যটাকে আমি গ্রহণ করতে চাইছিলাম না। একদিন মুখোমুখি হলে তুমি আর মিতা। আমি ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব। আমি এমন সাহসীও না। তারপর একদিন...
---একদিন কি? সুচি?
---আমিও কোনো একদিন জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে গেলাম। পুড়তে পুড়তে বুঝলাম...
জয়ন্ত ও সুচিত্রা থেমে গেল। পিউ নিজের ঘর থেকে টয়েলেটে গেল। যাবার সময় অন্ধকারে ছাদবারান্দায় বাবা-মাকে দেখতে পেয়ে বলল---তোমরা ঘুমোবে না?
---যাচ্ছি। সুচিত্রা ছোট্ট উত্তর দিল।
যে বাবা-মা তার ডিভোর্সের মুখোমুখী, তারা এমন নিভৃতে রাতে প্রেমিক যুগলের মত দাঁড়িয়ে কি গল্প করছে বুঝতে পারলো না নব প্রজন্মের মেয়ে পিউ।
পিউ চলে যেতে সুচি বলল---বিছানা করে দিয়েছি, শোবে যাও।
জয়ন্ত সুচিত্রার হাতটা ধরে বলল---সুচি বললে না তো, কে সেই লোক?
সুচিত্রা থমকে দাঁড়ালো। পিউ টয়লেটের আলো নিভিয়ে তার শোবার ঘরে চলে গেছে। সুচিত্রা বলল---বলেইছি তো, বিট্টু-লাট্টুর এখন আমাকে খুব দরকার। ওদের একজন মায়ের দরকার।
জয়ন্ত বোধ হয় তখনও কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। মুহূর্ত পরে সে চমকে উঠল, মায়ের দরকার, বিট্টু-লাট্টুর মা'ই তো এখন সুচি। যে নারী শিশু দুটির মুখে স্তন তুলে দিচ্ছে, সে মা নয় তো কি? তারপরেও আর কি মা হবার কথা বলছে সুচিত্রা? ভাবনাটা অযৌক্তিক হলেও চমকিত স্বরে বলল---মানে? তুমি কি গফুরের কথা বলছ?
সুচি নিরুত্তর। জয়ন্ত হতবাক, সুচিত্রা আর গফুর! কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না তার। মাতাল, নেশাখোর, ভিখিরি একটা যাচ্ছেতাই নোংরা চেহারার স্নান না করা আধময়লা জামা কাপড় পড়া রাস্তায় পড়ে থাকা গফুর সুচির প্রেমিক! আবার সে বলল---গফুর?
---হ্যা। জানি অদ্ভুত মনে হবে তোমার। বিট্টু-লাট্টুর মত ঐ মানুষটারও কেউ নেই। ছোট থেকে চিনি গফুর দা'কে। মানুষটা জীবনে অনেক বড় আঘাত পেয়েছে, সেসব পেরিয়েই হয়ত এমন হয়েছে, যদি ওর পাশে থেকে ওকে শুধরে তোলা যায়...
---সুচি, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? ঐ ঘিনঘিনে পাগল ভিখিরিটা?
---গফুর দা পাগল না। নেশাটেশা করেই এমন হয়েছে। তাছাড়া...
---তুমি ওর কাছে কি পাবে সুচি? ও একটা বদ অশিক্ষিত...
সুচিত্রা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, বলল---মানুষটা গরীব, অশিক্ষিত, হ্যা মদ খায়। কিন্তু মানুষটাকে তো ভালো করে তোলা যায়।
---তোমার মাথা খারাপ? ঐ লোকটা ভালো হবে? তাছাড়া কি না কি রোগ বাসা বেঁধেছে কে জানে! ফুটপাতে থাকতো, নোংরা...
---কোনো রোগটোগ আছে বলে তো মনে হয় না। বরং ওকেও দেখলাম একজন বাবার মত বিট্টু-লাট্টুকে নিয়ে ভাবে...
---বাবার মত ভাবে? ক্যানসার রুগী বউটাকে ফেলে রেখে দেখোনি, কেমন নেশা করে ঘুরে বেড়াতো?
সুচি এবার বিরক্ত হল। বলল---সে তো মিতাও অসুস্থ স্বামীকে ফেলে রেখে তোমার সাথে ফষ্টিনষ্টি করত।
---মিতার কথা আলাদা, গফুরের গা দেখোনি? তোমার ঘেন্না হয় না? কি ভীষণ নোংরা? জঘন্য...
---বা রে! মিতা স্নো পাউডার মাখা বড়লোকের বউ বলে সবটাই তার মাফ? বিট্টু-লাট্টুর জীবনে মা নয় একজন বাবারও দরকার। আমি বিট্টু-লাট্টুর জীবন অপূর্ণ রাখতে চাই না। গফুর দা আসলে জীবনে ভালোবাসা পায়নি, ভালোবাসা পেলে লোকটা হয়ত..
জয়ন্ত যেন কি একটা ভাবছিল। সুচির কোনো কথা কানে না নিয়ে বলল---তুমি এই লোকের সাথে শুয়েছ?
জয়ন্ত কোনো উত্তর করল না। সুচিত্রা ও নিশ্চুপ। পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল দুজনে দীর্ঘক্ষণ। জয়ন্ত অকস্মাৎ ছেলেমানুষের মত বলল---সুচি, তুমি কি কোনো ভাবেই আমাকে মাফ করে দিতে পারছ না? একবার বিবেচনা করা যায় না। আমরা বাইশ বছর একসাথে কাটিয়েছি। তার আগে আমাদের প্রেম, পারিবারিক পরিচয়। এসব...
বড্ড অহংকারের সাথে একরাশ অভিমান রেখেই এক আশ্চর্য দৃঢ়তায় সুচিত্রা বললে---মাফ আমি করে দিয়েছি তোমাকে সেদিন, যেদিন আমিও নষ্ট হয়েছি। বাইশ বছর আমরা একসাথে কাটানোর পরও তোমার মনে হয়েছে তুমি অসুখী, যা পেতে মিতার দ্বারস্থ হয়েছ। বিশ্বাস করো, আমার মত মেয়েমানুষ যা ভাবতেই পারি না। যেদিন আমিও এমন অপরাধ করলাম, তোমাকে ঠকালাম, সেদিন আমিও টের পেয়েছি নতুন করে বাঁচতে গেলে অনেক অপ্রাপ্তি আমাদের সংসারের চাপে থেকে যায়। আমরা কেউই সাহস করে তা পারি না, তোমরা পুরুষমানুষ তা কি সহজে পারো। মেয়েরা তা পারে না।
---তুমি কি অসুখী ছিলে? জয়ন্ত বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
---জানি না। হয়ত তোমার মত কিছু ক্ষেত্রে। হয়ত সেটা আমাদের জীবনের অন্ধকার দিক হতে পারে।
জয়ন্ত বললে---তুমি ফিজিক্যাল কিছু বলছ? যার মোহে পড়ে আমি...
---শুধুই কি মোহ? তাহলে দিনের পর দিন তুমি কেন ঘরে বউ থাকতে থাকতে...
---সুচি, ওটা মোহই। আমি ভুল বুঝতে পেরেছি।
সুচিত্রা হাসলো। জয়ন্তের নগ্ন পিঠে লেগে থাকা ঘাম আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিল সে। তারপর বলল---তুমি কি শারীরিক দিক থেকে আমার কাছে সুখী ছিলে? তোমার কি এই একঘেয়ে সংসার আর বুড়ো বয়সের দিকে এগোতে থাকার ভয় অনুভব হয়নি? সত্যি করে বলো?
সুচির প্রশ্ন সঙ্গত। জয়ন্ত বলল---মানছি। কিন্তু তারপরেও তো তুমি আমার আশ্রয়।
---তুমি শিশু নও, যে আমি তোমার আশ্রয় হব। তুমি মিতার আশ্রয় নিতে গেছ তারপরে। কারণ আমার কাছে তোমার সমস্ত অভাবগুলো পূর্ন করতে কিংবা নতুন করে যৌবন ফিরে পেতে মিতার কাছে গেছ। যাওনি?
জয়ন্ত জানে তার মাস্টার ডিগ্রি পাশ করা স্ত্রী শিক্ষিকা। যথেষ্ট সাবলীলভাবে সুচি অনেকগুলি মনোস্তাত্বিক প্রশ্ন করছে তাকে। যা ফেলে দেওয়া যায় না। আসলে সুচির এটাই ইউএসপি, জয়ন্ত দেখেছে সুচি যেমন সংসারে সেকেলে গৃহিণী, বর্তমান প্রজন্মের নানা আপডেটেট বিষয়ে ছেলেমেয়েদের সাথে মানিয়ে নিতে না পারা একজন সাংসারিক সন্তান সর্বস্ব মা, একজন স্বামী সেবা পরায়না স্ত্রী। আবার কখনো কখনো সেই সুচিত্রাই বুদ্ধিমতী উচ্চশিক্ষিতা একজন নারী, একজন কলেজ শিক্ষিকা। জয়ন্ত স্ত্রীর এই রূপটার ভীষণ বড় প্রেমিক। সুচির এই দ্বৈততা আর কোনো নারীতে সে দেখে না। সে বলল---সুচি, তোমার সব কথাই ঠিক, কিন্তু তুমি কেন..?
কথা শেষ হবার আগেই সুচি বলল---আমিও হয়ত তোমার মত। চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ঘর সংসার, চাকরী এসবই ভেবেছি। আস্তে আস্তে যখন বুঝলাম তুমি আর আমার প্রতি আকর্ষিত বোধ করো না। আমি যে বুড়িয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারি। চেষ্টা করতাম তোমার কাছে সেই বিয়ের প্রথমদিনগুলোর মত হতে। কিন্তু আমি ততদিনে মনের মধ্যেই বুড়িয়ে গেছি। পারতাম না তোমার কাছে মেলে ধরতে। বিশ্বাস করো যেদিন জানলাম তুমি ঠকাচ্ছ আমাকে, দিনভর একা একা কেঁদেছি। বিশ্বাস করতাম, সবই আমার ভুল ভাবনা। ভেবেছিলাম তুমি যা করছ করো, আমার সাহস নেই সত্যটা খুঁজে বের করার। আসলে সত্যটাকে আমি গ্রহণ করতে চাইছিলাম না। একদিন মুখোমুখি হলে তুমি আর মিতা। আমি ভেবেছিলাম আত্মহত্যা করব। আমি এমন সাহসীও না। তারপর একদিন...
---একদিন কি? সুচি?
---আমিও কোনো একদিন জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে গেলাম। পুড়তে পুড়তে বুঝলাম...
জয়ন্ত ও সুচিত্রা থেমে গেল। পিউ নিজের ঘর থেকে টয়েলেটে গেল। যাবার সময় অন্ধকারে ছাদবারান্দায় বাবা-মাকে দেখতে পেয়ে বলল---তোমরা ঘুমোবে না?
---যাচ্ছি। সুচিত্রা ছোট্ট উত্তর দিল।
যে বাবা-মা তার ডিভোর্সের মুখোমুখী, তারা এমন নিভৃতে রাতে প্রেমিক যুগলের মত দাঁড়িয়ে কি গল্প করছে বুঝতে পারলো না নব প্রজন্মের মেয়ে পিউ।
পিউ চলে যেতে সুচি বলল---বিছানা করে দিয়েছি, শোবে যাও।
জয়ন্ত সুচিত্রার হাতটা ধরে বলল---সুচি বললে না তো, কে সেই লোক?
সুচিত্রা থমকে দাঁড়ালো। পিউ টয়লেটের আলো নিভিয়ে তার শোবার ঘরে চলে গেছে। সুচিত্রা বলল---বলেইছি তো, বিট্টু-লাট্টুর এখন আমাকে খুব দরকার। ওদের একজন মায়ের দরকার।
জয়ন্ত বোধ হয় তখনও কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। মুহূর্ত পরে সে চমকে উঠল, মায়ের দরকার, বিট্টু-লাট্টুর মা'ই তো এখন সুচি। যে নারী শিশু দুটির মুখে স্তন তুলে দিচ্ছে, সে মা নয় তো কি? তারপরেও আর কি মা হবার কথা বলছে সুচিত্রা? ভাবনাটা অযৌক্তিক হলেও চমকিত স্বরে বলল---মানে? তুমি কি গফুরের কথা বলছ?
সুচি নিরুত্তর। জয়ন্ত হতবাক, সুচিত্রা আর গফুর! কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না তার। মাতাল, নেশাখোর, ভিখিরি একটা যাচ্ছেতাই নোংরা চেহারার স্নান না করা আধময়লা জামা কাপড় পড়া রাস্তায় পড়ে থাকা গফুর সুচির প্রেমিক! আবার সে বলল---গফুর?
---হ্যা। জানি অদ্ভুত মনে হবে তোমার। বিট্টু-লাট্টুর মত ঐ মানুষটারও কেউ নেই। ছোট থেকে চিনি গফুর দা'কে। মানুষটা জীবনে অনেক বড় আঘাত পেয়েছে, সেসব পেরিয়েই হয়ত এমন হয়েছে, যদি ওর পাশে থেকে ওকে শুধরে তোলা যায়...
---সুচি, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? ঐ ঘিনঘিনে পাগল ভিখিরিটা?
---গফুর দা পাগল না। নেশাটেশা করেই এমন হয়েছে। তাছাড়া...
---তুমি ওর কাছে কি পাবে সুচি? ও একটা বদ অশিক্ষিত...
সুচিত্রা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, বলল---মানুষটা গরীব, অশিক্ষিত, হ্যা মদ খায়। কিন্তু মানুষটাকে তো ভালো করে তোলা যায়।
---তোমার মাথা খারাপ? ঐ লোকটা ভালো হবে? তাছাড়া কি না কি রোগ বাসা বেঁধেছে কে জানে! ফুটপাতে থাকতো, নোংরা...
---কোনো রোগটোগ আছে বলে তো মনে হয় না। বরং ওকেও দেখলাম একজন বাবার মত বিট্টু-লাট্টুকে নিয়ে ভাবে...
---বাবার মত ভাবে? ক্যানসার রুগী বউটাকে ফেলে রেখে দেখোনি, কেমন নেশা করে ঘুরে বেড়াতো?
সুচি এবার বিরক্ত হল। বলল---সে তো মিতাও অসুস্থ স্বামীকে ফেলে রেখে তোমার সাথে ফষ্টিনষ্টি করত।
---মিতার কথা আলাদা, গফুরের গা দেখোনি? তোমার ঘেন্না হয় না? কি ভীষণ নোংরা? জঘন্য...
---বা রে! মিতা স্নো পাউডার মাখা বড়লোকের বউ বলে সবটাই তার মাফ? বিট্টু-লাট্টুর জীবনে মা নয় একজন বাবারও দরকার। আমি বিট্টু-লাট্টুর জীবন অপূর্ণ রাখতে চাই না। গফুর দা আসলে জীবনে ভালোবাসা পায়নি, ভালোবাসা পেলে লোকটা হয়ত..
জয়ন্ত যেন কি একটা ভাবছিল। সুচির কোনো কথা কানে না নিয়ে বলল---তুমি এই লোকের সাথে শুয়েছ?