17-12-2024, 10:42 PM
রাত্রি ন'টার দিকে ছবি মাসি চলে গেল। মা বিট্টু-লাট্টুকে খাওয়াচ্ছে। লাট্টু ঘুমে ঢুলে পড়ছে খেতে বসে। সারাদিন হুটোপুটি করে ওর চোখে ঘুম। মা ওদের খাইয়ে বলল---অংশু তোর দিদি আর বাবাকে ডাক। খাবার বাড়ছি।
খাবার টেবিলে সকলকে খেতে দিয়ে সুচি বসল সবার শেষে। বললে---অংশু, খাসির টেস্টটা কেমন হয়েছে রে?
অংশু মাংসের হাড় চিবোতে চিবোতে বলল---ভালোই। তবে পোস্ততে নুন দিতে ভুলে গেছ।
---ওমা! কি বলিস!
পিউ বলল---আমার মতে মাছটা ভালো হয়েছে সবচেয়ে। ওটা কে করেছে মা? ছবি মাসি না তুমি?
---সবই তো আমি করলাম। ছবি তো শুধু হাতের কাছে লাগা ছাড়া কি করল।
জয়ন্ত চুপ করে খেয়ে যাচ্ছে। সুচি লক্ষ্য করল ও'র ভাতের থালার দিকে। ডেকচি থেকে ও'র প্লেটে ভাত তুলে দিলে জয়ন্ত বললে---থাক।
তবু সুচি ভাত তুলে দিল। পিউ বলল---তাহলে তোমরা ডিভোর্স নিচ্ছ ফাইনাল?
জয়ন্ত চশমার ওপর দিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। সুচি বললে---হ্যা। তোদের অনেক কথা বলার আছে আমার। তোরা বড় হয়েছিস। আশা করি বুঝবি।
পিউয়ের খাওয়া শেষ। ও' এঁটো হাতে বসে রইল খাবার টেবিলে। সুচি বললে---আমি আর তোর বাবা ডিভোর্স নিচ্ছি মানে তোদের প্রতি আমরা কোনো কার্পণ্য করব, এমন নয়। আমরা তো একসাথে বাইশ বছর হল কাটালাম। এখন মনে হয় আমাদের একটা নিজস্ব স্পেস দরকার। আমি তোদের দিদার কাছে চলে যাবো পরের সপ্তাহে। ডিভোর্সের ডেট আছে ক'দিন পরেই। তোর বাবার আপত্তি না থাকলে দ্রুতই ফাইনাল হবে। তোরা মায়ের কাছে, বাবার কাছে যেখানে যখন খুশি থাকতে পারবি। তোদের কি কোনো মতমত আছে এ' ব্যাপারে?
পিউ খুব স্বাভাবিকভাবে বলল---আমাদের কেন মতামত থাকবে। তোমাদের নিজস্ব লাইফের ডিসিশন মেকার তোমরা নিজেই। আমরা কেন মতামত দেব।
অংশু দেখল দিদি খুব স্বাভাবিক। তার কাছে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কোনো অর্থ রাখে না। অংশু বলল---মা, তারপরে কি তুমি এ'বাড়িতে আর আসবে না।
---কেন আসবো না। তোরা আছিস। তোদের জন্য তো আসতেই হবে।
জয়ন্ত অবশ্য কোনো কথা বলছে না। সুচিত্রা পুনরায় বলল---আর একটা কথা, তোরা বড় হয়েছিস, ডিভোর্স মানে কিন্তু শুধু দুটি মানুষের আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। তাদের নিজস্ব জীবনে নতুন করে কেউ আসতে পারে। অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। ডিভোর্সের পর তোদের বাবা স্বাধীন, তার জীবনে নতুন কেউ আসতে পারে। সেটা তোদের মেনে নিতে হবে।
জয়ন্ত তাকালো সুচিত্রার দিকে। ওর চোখে একটা তীব্র ক্রোধ। সুচি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল---তোদের বাবার জীবনে যতদিন আমি ছিলাম ততদিন তোদের বাবা হয়ত পরাধীন ছিল। এখন তোদের বাবা চাইলে নতুন করে ভাবতে পারে। তোদের বাবার সাথে ঝগড়া ঝাটির কারণ তোদের আর জানতে বাকি নেই। আমি প্রথম দিকে কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন আমিও আমার মত করে বাঁচতে চাই। আর হ্যা তোদের যেটা বলার, আমার জীবনে একজন নতুন করে এসেছে। আমি ডিভোর্সের পর নতুন জীবন তার সাথে শুরু করতে চাই। এ' কথা তোদের বলা দরকার। আমার মনে হয়, তোরা বড় হয়েছিস বুঝবি সমস্তটা। তোদের নিজস্ব জীবনে তোরা চলে যাবি। কিন্তু আমার জীবনে যে নতুন এসেছে, তার আমাকে বড় প্রয়োজন। তাছাড়া এই দুটি বাচ্চার জীবনেও আমার প্রয়োজন।
চমকে উঠল অংশু। গফুর! মায়ের জীবনে নতুন বলতে কি মা ঐ নোংরা মাতালটাকে বোঝাতে চাইছে। তাই তো, বিট্টু-লাট্টুর মাকে প্রয়োজন, বিট্টু-লাট্টুর বাবাই তো গফুর! মা কি উন্মাদ হয়ে গেল! ঐ গফুরের মত লোকটার সাথে বাকি জীবন কি করে কাটাবে!
অংশু তৎক্ষনাৎ বলল---আমাদের জন্ম দিলে কেন তাহলে তোমরা?
সুচি ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে গেলে পরেই অংশু হাতটা সরিয়ে দিল। জানান দিল তার বিরোধ, যন্ত্রনা, রাগ ও অভিমান।
সুচিত্রা বলল---অংশু, বাবা আমার। তুই তো অনেক বড় হয়েছিস। বিট্টু-লাট্টু দেখ তো, মা হারা ছোটছোট দুটো শিশু। ওদের আমি ছাড়া কে আছে?
পিউ অবশ্য বিস্মিত। মায়ের জীবনে কেউ এসেছে, এটা সে ভাবতেই পারেনি। সে বলল---বেশ আমি উঠি। আমার অনেক কাজ। চেন্নাই ফিরলেই কলেজে প্রেজেন্টেশন জমা দিতে হবে। যাই ওসব নিয়ে বসি।
পিউয়ের সামনে কিছুই বলছিল না জয়ন্ত। অংশুও উঠে গেল বেসিনে হাত ধুতে। জয়ন্ত বলল---তোমার জীবনে নতুন ব্যক্তিটি কে জানতে পারি।
সুচি সামান্য হাসলো। বলল---আমাকে কি তুমি জানিয়েছিলে যে তোমার প্রেমিকা ঐ মিতা ঘোষ?
---সুচি! ওটা একটা সাময়িক ঘটনা। তোমার মত কোনো চিরস্থায়ী সিদ্ধান্ত নয়।
---কারন তুমি খুব সহজে চিট করতে পারো। তুমি আমাকে চিট করেছ। আবার মিতাকেও চিট করেছ। মিতাকে তোমার নিজের প্রয়োজনে ইউজ করতে চেয়েছ। আমি তেমন নয়, যতদিন তোমার স্ত্রী, ততদিন তোমাকে চিট করিনি। আজ যখন অন্য এক মানুষ, হোক সে তোমার মত নয়, কিন্তু তাকে আমি চিট করতে পারবো না।
জয়ন্ত চুপ করে গেল। এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে। সুচি পুনরায় বললে---আর যদি জানতে চাও লোকটি কে, আমার আপত্তি নেই বলতে। কিন্তু তোমার হয়ত বড্ড খারাপ লাগতে পারে। তাই বলছি না।
জয়ন্ত ভ্রু কুঁচকে তাকালো কৌতূহলী দৃষ্টিতে সুচিত্রার দিকে। কে এমন ব্যক্তি, যার পরিচয় জানলে জয়ন্তের খারাপ লাগবে। তাহলে কি সুচিত্রার প্রেমিক জয়ন্তের পরিচিত।
অংশুর কানে যাচ্ছে মা-বাবার কথোপকথন। সে সমস্ত কিছুই জানে। মুহূর্তের জন্য থেমে গেল সে, যখন বাবা বললে---আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিভোর্সের। কাজেই আমি পরোয়া করি না। তোমার জীবনে কি এলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।
সুচি এঁটো-থালা বাসন ডাইনিং টেবিল হতে তুলতে গিয়ে থেমে গেল। বলল---সহ্য করতে পারবে না।
জয়ন্ত রাগত স্বরে বলল---তুমি কি আমাকে ঈর্ষান্বিত মনে করছ?
---তাহলে কেন ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে এত পিছপা হচ্ছ?
---তুমি কি এতই মরিয়া ডিভোর্স নিতে? আমি তো বলেছি, কোথায় কবে সাইন করতে হবে জানিয়ে দিও। আমি কোনো উকিলও ধরিনি।
খাবার টেবিলে সকলকে খেতে দিয়ে সুচি বসল সবার শেষে। বললে---অংশু, খাসির টেস্টটা কেমন হয়েছে রে?
অংশু মাংসের হাড় চিবোতে চিবোতে বলল---ভালোই। তবে পোস্ততে নুন দিতে ভুলে গেছ।
---ওমা! কি বলিস!
পিউ বলল---আমার মতে মাছটা ভালো হয়েছে সবচেয়ে। ওটা কে করেছে মা? ছবি মাসি না তুমি?
---সবই তো আমি করলাম। ছবি তো শুধু হাতের কাছে লাগা ছাড়া কি করল।
জয়ন্ত চুপ করে খেয়ে যাচ্ছে। সুচি লক্ষ্য করল ও'র ভাতের থালার দিকে। ডেকচি থেকে ও'র প্লেটে ভাত তুলে দিলে জয়ন্ত বললে---থাক।
তবু সুচি ভাত তুলে দিল। পিউ বলল---তাহলে তোমরা ডিভোর্স নিচ্ছ ফাইনাল?
জয়ন্ত চশমার ওপর দিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। সুচি বললে---হ্যা। তোদের অনেক কথা বলার আছে আমার। তোরা বড় হয়েছিস। আশা করি বুঝবি।
পিউয়ের খাওয়া শেষ। ও' এঁটো হাতে বসে রইল খাবার টেবিলে। সুচি বললে---আমি আর তোর বাবা ডিভোর্স নিচ্ছি মানে তোদের প্রতি আমরা কোনো কার্পণ্য করব, এমন নয়। আমরা তো একসাথে বাইশ বছর হল কাটালাম। এখন মনে হয় আমাদের একটা নিজস্ব স্পেস দরকার। আমি তোদের দিদার কাছে চলে যাবো পরের সপ্তাহে। ডিভোর্সের ডেট আছে ক'দিন পরেই। তোর বাবার আপত্তি না থাকলে দ্রুতই ফাইনাল হবে। তোরা মায়ের কাছে, বাবার কাছে যেখানে যখন খুশি থাকতে পারবি। তোদের কি কোনো মতমত আছে এ' ব্যাপারে?
পিউ খুব স্বাভাবিকভাবে বলল---আমাদের কেন মতামত থাকবে। তোমাদের নিজস্ব লাইফের ডিসিশন মেকার তোমরা নিজেই। আমরা কেন মতামত দেব।
অংশু দেখল দিদি খুব স্বাভাবিক। তার কাছে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কোনো অর্থ রাখে না। অংশু বলল---মা, তারপরে কি তুমি এ'বাড়িতে আর আসবে না।
---কেন আসবো না। তোরা আছিস। তোদের জন্য তো আসতেই হবে।
জয়ন্ত অবশ্য কোনো কথা বলছে না। সুচিত্রা পুনরায় বলল---আর একটা কথা, তোরা বড় হয়েছিস, ডিভোর্স মানে কিন্তু শুধু দুটি মানুষের আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। তাদের নিজস্ব জীবনে নতুন করে কেউ আসতে পারে। অনেক কিছু পরিবর্তন হতে পারে। ডিভোর্সের পর তোদের বাবা স্বাধীন, তার জীবনে নতুন কেউ আসতে পারে। সেটা তোদের মেনে নিতে হবে।
জয়ন্ত তাকালো সুচিত্রার দিকে। ওর চোখে একটা তীব্র ক্রোধ। সুচি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল---তোদের বাবার জীবনে যতদিন আমি ছিলাম ততদিন তোদের বাবা হয়ত পরাধীন ছিল। এখন তোদের বাবা চাইলে নতুন করে ভাবতে পারে। তোদের বাবার সাথে ঝগড়া ঝাটির কারণ তোদের আর জানতে বাকি নেই। আমি প্রথম দিকে কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন আমিও আমার মত করে বাঁচতে চাই। আর হ্যা তোদের যেটা বলার, আমার জীবনে একজন নতুন করে এসেছে। আমি ডিভোর্সের পর নতুন জীবন তার সাথে শুরু করতে চাই। এ' কথা তোদের বলা দরকার। আমার মনে হয়, তোরা বড় হয়েছিস বুঝবি সমস্তটা। তোদের নিজস্ব জীবনে তোরা চলে যাবি। কিন্তু আমার জীবনে যে নতুন এসেছে, তার আমাকে বড় প্রয়োজন। তাছাড়া এই দুটি বাচ্চার জীবনেও আমার প্রয়োজন।
চমকে উঠল অংশু। গফুর! মায়ের জীবনে নতুন বলতে কি মা ঐ নোংরা মাতালটাকে বোঝাতে চাইছে। তাই তো, বিট্টু-লাট্টুর মাকে প্রয়োজন, বিট্টু-লাট্টুর বাবাই তো গফুর! মা কি উন্মাদ হয়ে গেল! ঐ গফুরের মত লোকটার সাথে বাকি জীবন কি করে কাটাবে!
অংশু তৎক্ষনাৎ বলল---আমাদের জন্ম দিলে কেন তাহলে তোমরা?
সুচি ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে গেলে পরেই অংশু হাতটা সরিয়ে দিল। জানান দিল তার বিরোধ, যন্ত্রনা, রাগ ও অভিমান।
সুচিত্রা বলল---অংশু, বাবা আমার। তুই তো অনেক বড় হয়েছিস। বিট্টু-লাট্টু দেখ তো, মা হারা ছোটছোট দুটো শিশু। ওদের আমি ছাড়া কে আছে?
পিউ অবশ্য বিস্মিত। মায়ের জীবনে কেউ এসেছে, এটা সে ভাবতেই পারেনি। সে বলল---বেশ আমি উঠি। আমার অনেক কাজ। চেন্নাই ফিরলেই কলেজে প্রেজেন্টেশন জমা দিতে হবে। যাই ওসব নিয়ে বসি।
পিউয়ের সামনে কিছুই বলছিল না জয়ন্ত। অংশুও উঠে গেল বেসিনে হাত ধুতে। জয়ন্ত বলল---তোমার জীবনে নতুন ব্যক্তিটি কে জানতে পারি।
সুচি সামান্য হাসলো। বলল---আমাকে কি তুমি জানিয়েছিলে যে তোমার প্রেমিকা ঐ মিতা ঘোষ?
---সুচি! ওটা একটা সাময়িক ঘটনা। তোমার মত কোনো চিরস্থায়ী সিদ্ধান্ত নয়।
---কারন তুমি খুব সহজে চিট করতে পারো। তুমি আমাকে চিট করেছ। আবার মিতাকেও চিট করেছ। মিতাকে তোমার নিজের প্রয়োজনে ইউজ করতে চেয়েছ। আমি তেমন নয়, যতদিন তোমার স্ত্রী, ততদিন তোমাকে চিট করিনি। আজ যখন অন্য এক মানুষ, হোক সে তোমার মত নয়, কিন্তু তাকে আমি চিট করতে পারবো না।
জয়ন্ত চুপ করে গেল। এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে। সুচি পুনরায় বললে---আর যদি জানতে চাও লোকটি কে, আমার আপত্তি নেই বলতে। কিন্তু তোমার হয়ত বড্ড খারাপ লাগতে পারে। তাই বলছি না।
জয়ন্ত ভ্রু কুঁচকে তাকালো কৌতূহলী দৃষ্টিতে সুচিত্রার দিকে। কে এমন ব্যক্তি, যার পরিচয় জানলে জয়ন্তের খারাপ লাগবে। তাহলে কি সুচিত্রার প্রেমিক জয়ন্তের পরিচিত।
অংশুর কানে যাচ্ছে মা-বাবার কথোপকথন। সে সমস্ত কিছুই জানে। মুহূর্তের জন্য থেমে গেল সে, যখন বাবা বললে---আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিভোর্সের। কাজেই আমি পরোয়া করি না। তোমার জীবনে কি এলো তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।
সুচি এঁটো-থালা বাসন ডাইনিং টেবিল হতে তুলতে গিয়ে থেমে গেল। বলল---সহ্য করতে পারবে না।
জয়ন্ত রাগত স্বরে বলল---তুমি কি আমাকে ঈর্ষান্বিত মনে করছ?
---তাহলে কেন ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে এত পিছপা হচ্ছ?
---তুমি কি এতই মরিয়া ডিভোর্স নিতে? আমি তো বলেছি, কোথায় কবে সাইন করতে হবে জানিয়ে দিও। আমি কোনো উকিলও ধরিনি।