Thread Rating:
  • 4 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পরিবর্তন
#9
পরিবর্তন দ্বিতীয় পর্ব – 2 (৪)
December 14, 2020
আমি এখনো জন্মাইনি।
গর্ভের সুরক্ষিত আঁধারে, চেপেচুপে হাতপা গুটিয়ে বসে আছি। অনুভব করছি মায়ের নড়াচড়ার ফলে দোলন। অনুভব করছি মায়ের হৃৎস্পন্দন।
মায়ের রক্ত, আমার রক্ত।
আস্তে আস্তে নিচের দিকে ঘুরে গেলাম আমি। মায়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। গর্ভযন্ত্রণা! আমার বেরোবার সময় হল, মা। আর একটু।
প্রতি আর্তনাদের সাথে সাথে মায়ের যোনিপথের পেশীগুলো ঠেলে ঠেলে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আলোর দিকে। আর একটু, মা। তারপর তোমার সব ব্যাথা শেষ হবে, আমাকে কোলে তুলে কত আদর করবে। তোমার নরম বুকের গরম দুধ খাব আমি তোমার উষ্ণ কোলের ঘেরে, আর তুমি আমায় কত মিষ্টি মিষ্টি নামে ডাকবে….
আমার মাথাটা মায়ের যোনিমুখে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু…. একি? মায়ের যোনিমুখ হঠাত শক্ত হয়ে গিয়ে আমার মাথা ঘিরে কামড়ে ধরল। মা! কী করছ?! আমাকে বেরোতে দাও! মা! মা….! আমার লাগছে…. মাআআ!
সুজাতার গলা শুনতে পেলাম, খিলখিল করে হাসছে…. আমার বাচ্চা চাই না…. এটা আমি রেখেই দিলাম পেটে…. পরে রাণুকে বার্থডে গিফট দিয়ে দেবো….
সুজাতা আমার মা?
মাথাটা প্রচণ্ড চাপে ফেটে যাচ্ছে….
আআআআআহহ!
আতঙ্কে লাফিয়ে জেগে উঠলাম।
কেকিকবেকেন কোথায়?
ভীষণ ঘাম দিচ্ছে, বুক ধড়ফড় করছে। কিছুক্ষণ পরে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম।
এ আমি কোথায় আছি?
ছোট, সিম্পল ঘর। সাদা দেওয়াল। একটা সিঙ্গল বেড, একটা ছোট টেবিল। একটা নিরাভরণ সিএফএল জ্বলছে দেওয়ালে। একটা ছোট জানালা, কিন্তু পর্দার বদলে ব্লাইন্ডস দেওয়া।
এ কারোর বাড়ি নয় হোটেলও নয়। অন্তত এদেশের নয়।
হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো চিনতে পেরে গেলাম ঘরটা। অফ কোর্স, আমি এখানে আগেও থেকেছি এটা আমার ল্যাবের ওভারনাইটার যে!
খট খট খট খট করে মনের মধ্যে স্মৃতির স্লাইড গুলো এক এক করে সারি বেঁধে দাঁড়ালো।
অনু-মনু-রাণু, বৃষ্টি, আমার ফর্মুলা টেস্ট নিজের ওপর, আগুনঝরা এ শহর, অন্ধকার, অন্য কেউ, দীপালি, চিৎকার, শীৎকার, দীপালির বুক, মুখ, চোখ, চোখের জল….
ওহ মাই গড !
কাল আমি কী কী করেছি?
যা যা মাথায় আসছে সব সত্যি?
আমার চারদিকে তাকালাম। ইয়েস, এই ঘরেই আমার মেমোরি শেষ। আর আমার… গায়ে একটা সুতোও নেই। আমি কখনো সম্পুর্ণ নগ্ন হই না, বাথরুমে ছাড়া।
ওহ মাই গড।
দীপালি?
আমি…. আ-আমি দীপালিকে রেপ করেছি?
পুলিশ আসছে কি আমার জন্যে? আ-আমাকে পালাতে হবে! তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে জামাকাপড় গুলো মেঝের থেকে কুড়িয়ে নিয়ে পরতে শুরু করলাম। কত সময় আছে আমার হাতে?
ঘড়িটা টেবিলের এক কোনায় উল্টো হয়ে পড়ে ছিল। তুলে দেখি, আটটা পনেরো।
এক মিনিট, এক মিনিট। একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখলাম। যদি পুলিশে খবর দিতে চাইত দীপালি, তা হলে আমি এতক্ষণে জেলের ভেতরে থাকতাম। এখানে নয়। এত দেরিতে নয়।
হয়ত লজ্জায় পুলিশে যায় নি সে?
না, লজ্জা বোধহয় না। দীপালি আর যাই হোক লজ্জাবতী লতা নয় – ইন ফ্যাক্ট, ক্যারিয়ারের জন্য ও সব করতে পারে। অনেক নোংরা গুজব আছে ওর নামে। কাজেই শোধ তোলার জন্য সামান্যতম লজ্জা পাবে, এটা দীপালির ব্যাপারে ভাবা যায় না।অন্য কিছু ব্যাপার আছে।
সে যাই হোক, আমাকে আগে এখান থেকে বেরোতে হবে। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই লোকজন আসতে শুরু করবে…. আমি চাই না তাদের সামনে পড়তে। আর, বলা তো যায় না, দীপালি হয়তো একটু দেরী করে পুলিশে খবর দেবে।
রিংরিংরিংরিংরিং! চমকে উঠলাম। ওঃ, ওটা আমার ফোন মাত্র। তুলে দেখি, অনু।
বাড়ির কথা মনেই ছিল না। কী বলব ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরলাম।
- হ্যালো?
- আজকে কী বাড়ি আসা হবে?
- মানে, ঠিক বলতে পারছি না।
- তা আজকে কার ঘরে থাকবে? ওই দীপালি মাগীর ঘরেই না কী?
- অ্যাঁ?! ক-কী বলতে চাইছ? দীপালির কথা উঠছে কেন এর মধ্যে? আমি তো ল্যাবেই ছিলাম, যেমন থাকি!
- থাক থাক। আর সিনেমা করতে হবে না। আমি যেন কিছু বুঝি না, না! রাতে ল্যাবে কাজ ছিল তোমার, আর ঐ মাগী সেটা ফোন করে জানাচ্ছে
- আমি কচি খুকি, না? আবার কি দরদ, বলে কিনা, ‘ডক্টর অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন, একটু বেলা করে ফোন করবেন!’ মরে যাই! কী কাজ কিছু বুঝতে বাকি আছে আমার? ছি ছি ছি ছিছিছি! শেষপর্যন্ত এই….
ফোনটা কেটে দিলাম।
তাহলে দীপালি একচুয়ালি ফোন করে বাড়িতে বলেছে যে আমি কাজে ব্যস্ত? আর…. আমার ঘুমের সম্বন্ধে কেয়ার নিয়েছে? কেন?
আজকাল অনেক কিছুই মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বয়েস হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি?
মোবাইলটায় দেখি তিনটে মেসেজ পড়ে আছে। একটা অ্যাড, একটা কার একটা পাঠানো জোকস, আর…. শেষেরটা…. দীপালির?
ওর পার্সোনাল নাম্বার তো আমার কাছে সেভ করাই ছিল না। তবে কি ও-ই নাম্বারটা সেভ করেছে নাম দিয়ে, তারপর মেসেজ পাঠিয়েছে? পড়ে দেখি কি মেসেজ।
Plz dnt go. I’ll come bck ltr. Plz dnt run.
অ্যাট লিস্ট, এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে দীপালির আমায় পুলিশে দেবার কোন ইচ্ছা নেই… অন্তত এখনো। না হলে পরে ফিরে আসছি বলত না। আর প্লীজ বলা তো প্রশ্নেরই বাইরে। কিন্তু…. কী গেম খেলতে চাইছে দীপালি? ফর গড’স সেক, আমি ওকে রেপ করেছি!
করেছি তো সত্যি? না কি সে পার্টটাও ওষুধের এফেক্ট ছিল?
না না, তা হলে এরকম লিখত না।
নাকি আমি এখনো স্বপ্ন দেখছি? হয়তো কোমার মধ্যে?
না! আমি আর ভাবতে পারলাম না। ঐ পথে গেলে উন্মাদ হয়ে পড়া নিশ্চিত, স্কিজোফ্রেনিয়ার সাধারণ লক্ষণ এগুলোই। আমি – এভাবে – ভাবতে – রাজি – নই!
আমাকে বেরোতে হবে এই চার দেওয়ালের গণ্ডী কাটিয়ে – আমি এখানে পাগল হয়ে যাব!
তাড়াতাড়ি করে টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বেরিয়ে পড়লাম। এতক্ষণ বুঝতে পারি নি, কিন্তু বাইরের হাওয়া লাগতেই পেটে খিদের চাগাড় দিতে লাগলো। হবেই তো, কাল দুপুর থেকে কিছু খাই নি, তার ওপর এত পরিশ্রম হয়েছে….
একটা রেস্তোঁরায় ঢুকে বসলাম কোনার একটা টেবিলে। বিরাট অর্ডার দিলাম। খাবার আসতে দেরি হবে…. ততক্ষণ একটু তলিয়ে ভাবা যাক।
আমার এগজ্যাক্টলি কী হয়েছিল খিচুড়িমার্কা ফর্মুলাটা গেলার পর? কমন সেন্স অনুযায়ী আমার মরে যাবার কথা। কিন্তু আশ্চর্যভাবে, বিষক্রিয়ার বদলে আমার দেহে ও মনে অকল্পনীয় পরিবর্তন এসেছিল। (থ্যাঙ্ক গড এখন আর নেই!) কী কী?
সর্বসময়ের সঙ্গী নোটবইটা বের করে লিস্ট করতে থাকলাম।
১. দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি। আমি কখনই ২০-২৫ কিলোর বেশী একবারে তুলতে পারব না। কিন্তু কাল পুর্ণবয়স্ক এক মহিলাকে খড়ের গোছার মত কাঁধে তুলে ঘুরেছিলাম।
২. মানসিক পরিবর্তন। আমি, আমি ছিলাম না। আমি অন্য কেউ হয়ে গিয়েছিলাম। মোটামুটি মনে পড়ছে আমি কী কী বলেছি আর ভেবেছি কাল রাতে…. গা-টা ঘিনঘিন করে উঠলো। আমি কখনো এরকম ল্যাঙ্গুয়েজ – কলেজে পড়তেও – ব্যবহার করি নি। ইন ফ্যাক্ট এ নিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে প্যাঁক খেয়েছি কম না। আর তা ছাড়া, স্পষ্ট মনে পড়ছে আমি কিছুক্ষণ নিজের পরিচয় মনে করতে পারি নি, আর যখন মনে পড়েছিল তখনো আমি নিজেকে অন্য কারোর মত ভেবেছি।
যেন আমার মধ্যে থেকে একটা “অন্য লোক” বেরিয়ে এসেছিল।
অন্য লোক। হুম। স্প্লিট পার্সোনালিটি? দ্বৈতসত্ত্বা? ডাবল ক্যারেকটার?
এমন কি হতে পারে, যে আমি মনে মনে ‘অন্য টাইপের’ মানুষ হতে চাইতাম? আর ওষুধটা তাই করেছে… আমার চেতন, স্বাভাবিক সত্ত্বাকে ঢেকে দিয়ে অবচেতনকে বের করে এনেছে? আমি ভেতরে ভেতরে এত…. নোংরা?
না, না। আমি এমন নয়। অমিতের সাথে কথা বলতে হবে – অমিত আচার্য্য, একসাথে কলেজে পড়েছি বছরখানেক। আমার খুব একটা ভাল বন্ধু নয়, তবে আমাদের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় প্রায়ই দেখা হয়।
আর কী হয়েছিল? হ্যাঁ, মনে পড়েছে….
৩. যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি। সবকিছুর মধ্যে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক, কারণ যে দুটো ফর্মুলা মিশিয়েছিলাম সে দুটোই ঐ ব্যাপারেই কাজ করে। যদিও, কীভাবে যে তারা কাজ করল ওভাবে….
পরিষ্কার মনে পড়ছে, আমার পেনিস (তখনকার “আমি” একটা নোংরা কথা বারবার ব্যবহার করছিলাম) ধরে গর্ব, যে পুরনো “আমার” কখনো এরকম ছিল না। আর কথাটা সত্যি, কিছু না হলেও তিন থেকে চার ইঞ্চি এক্সট্রা পেয়েছিলাম কাল রাত্রে, ওষুধ খাবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই – যেটা কিনা বায়োলজিক্যালি অসম্ভব!
কিন্তু অসম্ভব জিনিসই তো হয়েছিল কাল। আমার অসম্ভব আকারের লিঙ্গ দিয়ে অসম্ভব ভাবে দীপালিকে…. আঃ! তলপেটে সুড়সুড় করে উঠলো। ছি ছি, আমি এ কিসব ভাবছি! যন্ত্রনাদায়ক ;.,ের কথা ভেবে যৌন উত্তেজনা অনুভব করছি? ছি!
ও হ্যাঁ, আরো একটা জিনিস।
৪. কমলা রঙ। যতক্ষণ আমি ‘অন্য লোকটা’ ছিলাম ততক্ষণই আমি সবকিছু কমলা রঙের দেখেছি। এটা একটা মাইনর এফেক্ট…. কিন্তু কিছু বলা যায় না। মনে পড়ল, এক ধরনের বাজারচলিত ভায়াগ্রাতেও কিছুটা চোখের ওপর এফেক্ট হয়। আসলে ভায়াগ্রা-র কাজ হল PDE5 নামের একটা জিনিস তৈরী করা, যেটা পেনিসের স্পঞ্জের মত মাসল গুলোকে সহজে ফুলতে ফুলতে সাহাযা করে।
কিন্তু এর সাথে সাথে সামান্য PDE6-ও তৈরী করে ফেলতে পারে, যেটা আবার আমাদের বিভিন্ন রঙ দেখার ক্ষমতা পরিবর্তন করে দেয়। যারা ঐ ধরনের ভায়াগ্রা বেশিদিন ব্যবহার করে, তারা নীল কিংবা সবুজ রঙ দেখার ব্যাপারে নানা অসুবিধায় ভোগে। আমার বেলায় – কমলা রঙে এফেক্ট করেছে।
খাবার দিয়ে গেছে। নোটবই সরিয়ে তাতেই মন দিলাম। আহ, পেটে চড়া পড়ে গেছিল যেন।
বেশ বুঝতে পারছি, আমি তালেগোলে একটা আবার মিরাকল ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছি। চার বছর আগের মতো। এ ওষুধ যুগান্তকারী! আমাদের কোম্পানিকে মাইক্রোসফটের মত একচেটিয়া করে দিতে পারে এ ফর্মুলা! বাজারে আগুন ছড়িয়ে দেবে এ ওষুধ, কত মানুষ যাদের জীবন পাথর হয়ে গেছে অক্ষমতার জন্য, তাদের মুখে হাসি ফোটাবে….
কিন্তু কি দামে? কাল আমি এ ফর্মুলা খেয়ে জানোয়ার হয়ে যাইনি? এর জন্য ;.,ের সংখ্যা হাজার গুণ বেড়ে যাবে।
না। ঐ মানসিক সাইড-এফেক্টটা দূর না করা অবধি এ ওষুধ বাজারে ছাড়া যাবে না।
বেলুন চুপসে যেতে যেতে আরো বুঝতে পারলাম, আমি এর কথা কাউকে বলতে পর্যন্ত পারব না এখন। কারণ আমার কোম্পানির কানে কথাটা কোন রকমভাবে উঠলেই তারা চেষ্টা করবে এটাকে এভাবেই মার্কেট করবার – শ্রীনিবাসন এখন মরিয়া। সুতরাং এবিষয়ে আমাকে গবেষণা সম্পূর্ণভাবে একাই চালাতে হবে।
আর দীপালি? তাকে কিভাবে হ্যান্ডল করব?
- গুড মর্নিং ডক্টর! এখানে বসতে পারি?
ওহ মাই গড। শয়তান কা নাম লিয়া তো…..
কনফিউশন, কনফিউশন
 
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হোলো কার…
টেবিলের ওপারে, চেয়ারের পিঠে ডান হাতটা আলগোছে রেখে দাঁড়িয়ে সে।
চোখের কোলে কালি। পরনে হালকা একটা গোলাপি ফুল-ফুল ছাপা সালোয়ার-কামিজ। সাধারণত টানটান করে বাঁধা চুল আজ খোলা, এলোমেলো। স্পষ্ট বোঝা যাই মুখে কোন প্রসাধন নেই। অন্যদিন দাঁড়ানোর ভঙ্গীও থাকে অন্যরকম খাপখোলা তলোয়ারের মত। আজ একটু জড়োসড়ো ভাব।
আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো।
- জানি তুমি এখানেই আসবে, বাড়ি যাবে না। দীপালি একটু হাসল ক্লান্তভাবে।
- বসি এখানে?
আমি পুতুলের মত ঘাড় নাড়লাম।
দীপালি বসল না। একটুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে, হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রাখল চেয়ারটায়। তারপর কাউন্টারে গিয়ে কী সব কথা বলে, ফিরে এসে আবার ব্যাগটা হাতে তুলে নিল। একটা ওয়েটার পিছন পিছন এসে, আমার সামনে থেকে প্লেট-বাটি তুলতে শুরু করেছে।
- এসো।
আমি পুতুলের মত ফলো করলাম। উঠে ডানদিকে একটা খুব সিম্পল দেখতে দরজা। খুলতেই একটা করিডর। না, একটা বড় ঘর, কিন্তু কাঠের পার্টিশন দিয়ে দুপাশে ছোট ছোট কেবিন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃদু নীল আলো জ্বলছে। দীপালি গট গট করে একদম শেষের কামরায় গিয়ে ঢুকল। দড়িবাঁধা ছাগলের মত গিয়ে পেছু পেছু আমিও গেলাম।
ছোট্ট কেবিন। স্লাইডিং দরজা। ভেতরে দুপাশে দুটো সোফা – পাবলিক বাসের সিটের মত; চাইলে দুজন করে বসতে পারে কিন্তু বোঝা যায় একজনের জন্যেই সিটগুলো। বেশ নরম, আরামদায়ক। খুপরিটা ঐ সিটগুলোর সমানই চওড়া। মাঝে একটা টেবিল; একইভাবে সিটের সমান চওড়া, কোনাগুলো গোল, কোন এক রকম গাঢ় রঙের কাঠের তৈরী – মুখ দেখা যায় এমন চকচকে বার্ণিশ। টেবিলের ওপর ঠিক মাঝখানে একটা মোমবাতিদান – কিন্তু আসল মোমবাতি নয়, এলইডি আলো জ্বলছে। আর মাথার ওপরে করিডরের নীল আলো সামান্য আসছে। ছায়াময়, মায়াময় পরিবেশ।
দীপালি বাঁ দিকের সিটে বসেছে। ওয়েটার আমার খাবারগুলো ডানদিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। আমি ডানদিকের সিটে বসে পড়লাম।
পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে। শুধু এখানে মোগলের বদলে দীপালি, আর খানা মানে জেলখানাও হতে পারে।
ওয়েটারটা বগল থেকে মেনু বার করতে যাচ্ছিল, দীপালি একটা আঙ্গুল তুলে থামিয়ে দিল।
- আমার জন্য জাস্ট আ জিন উইথ লাইম, লার্জ। আর তুমি তো ড্রিঙ্ক করো না, না? ওকে, স্যারের জন্য ক্যাপুচিনো। চলবে তো?
আমি ওপরে-নীচে ঘাড় নাড়লাম।
- আর, ব্রেকফাস্টের জন্য আরো কিছু নেবে? এনিথিং?
আমি ডাইনে-বামে ঘাড় নাড়লাম।
ভেরি ওয়েল দেন, দ্যা’ল বি অল!
ওয়েটার রোবটের মত ঘুরে চলে গেল। এদেরকে বোধহয় চাইলে স্যালুটও করবে।
- কী হল? খাও!
কাঁটাচামচ দিয়ে টোস্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলাম। খিদে কবে উবে গেছে ছিপিখোলা হোমিও ওষুধের মত। এই কী আমার শেষ স্বাধীন খাওয়া? আহা, অনু বড় ভাল কিমা-বাঁধাকপি রাঁধে। রাঁধতো। একবার…..
দীপালি একটু ঝুঁকে বসল, টেবিলে কনুই পেতে।
- খাও, দীপ। তোমার খিদে থাকা উচিৎ – কাল যা ধকল গেছে। একটু মুচকি হাসল।
- বাট অফ কোর্স, আমিও অনেকটা দায়ী ছিলাম। সকালে ওভাবে তোমাকে প্রেস করাটা উচিত হয় নি।
কী বলছে কি? আমি ওকে কিনা…. ওঃ। তার মানে আমার ওষুধের ব্যাপারটা এখনো ও জানে না। ওকে কী বলা উচিৎ হবে? আমি খুঁটে খুঁটে খাওয়া শুরু করলাম।
একদিকে, আমার আত্মরক্ষার্থে বলা উচিৎ। আমি নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর, ভিকটিম হিসাবে ওরও সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে সবকিছু জানবার। কিন্তু… কিন্তু কি করে বলি? যদি ও কোম্পানিতে জানায় তা হলে সর্বনাশ। আবার আবার ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে চুপ করানোর মত ক্ষমতা আমার নেই। না, ওকে বলা যাবে না। তাতে আমার যা হয় হোক।
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি চামচের কোন শব্দ না করবার। কাঁধের নীচ থেকে বাকিটা বরফে জমে গেছে।
বাইরে রাস্তা দিয়ে কোন ভারী গাড়ি চলে গেল। আমার পায়ের তলায় ভাইব্রেশনটা টের পেলাম।
- জানোয়ার একটা।
প্লেট থেকে চোখ তুললাম। দীপালির মুখটা খুব কাছে। বাদামী চোখজোড়া যেন মেঘে ভেসে যাচ্ছে। আমার হঠাত খুব জলতেষ্টা পেতে লাগল। গ্লাস হাতের কাছেই, কিন্তু মাথা ঘোরাতে পারছি না!
- এখনও ব্যথা আছে, জানো?
আমি একটা ঢোঁক গিললাম। কষ্ট করে। ওর প্রসাধনহীন মুখ এই মায়াবী আলোয় অপার্থিব দেখাচ্ছে।
করিডরে জুতোর শব্দ। ওয়েটার এসে ঢুকল। দীপালির সামনে স্ট্র-ছাতা শুদ্ধু একটা বড় গেলাস আর আমার সামনে একটা ধোঁয়াওঠা কাপ নামিয়ে, অ্যাবাউট টার্ন মেরে চলে গেল। দীপালি সড়াৎ করে একহাতে দরজাটা টেনে, দিল ঘামতে থাকা গ্লাসে একটা লম্বা চুমুক।
আমি ঠেলে ঠেলে আরো দু’গাল খাবার নামালাম।
- কিছু বলো?
বলব? কী বলব?
- সরি। গলা দিয়ে ব্যাঙের ডাকের মত একটা আওয়াজ বেরোল।
ওর চোখগুলো সরু হয়ে এল।
- সরি? সরি?  সাপের মত হিসহিস করে উঠল,
- আমাকে…. আমাকে মেরে, ধরে, আমাকে রেপ করে…. তুমি বলছ সরি!
আমার বাকি বডিটাও জমে পাথর হয়ে গেল। দীপালির মাথাটা আগের চেয়েও বেশী এগিয়ে এসেছে, কিন্তু চেহারা যেন পাথর কাটা।
এখন যদি আমি পুলিশে যাই, তোমার কী হবে জানো? টু হেল উইথ পোলিস, যদি এখন এখানে বসে একটা চিৎকার করি, তোমার অবস্থা কী হবে ইম্যাজিন করতে পারছ?
- খুব পারছি। আমার এখানে আসাটাই বিরাট ভুল হয়েছে।
- কেন যাই নি পুলিশে, বলতে পার? কেন তোমার লাইফ হেল করে দিলাম না? কেন, কেন, কেন?
সকাল থেকে তো তাই ভাবছি। গলা দিয়ে আবার একটা আওয়াজ বেরোল, কিন্তু কি বললাম নিজেই ঠিক বুঝলাম না।
কিছুক্ষণ আমার চোখে চোখে তাকিয়ে থেকে, ওর একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। আমার মুছে গেল ওর ফুসফুসের বাতাস। চোখ নামিয়ে নিয়েছে ও।
- বিকজ…. আই…. লাইকড ইট….
হঠাৎ আমার মাথার চুল খামচে ধরে টেনে আনল ও, চুমো খেল আমায়। তীব্র, ক্ষুধার্ত চুম্বন। আগুনের হলকা বয়ে গেল আমার চামড়া বেয়ে।
- ওহ, আই লাইকড ইট সো মাচ! আই লাভড ইট!
আবার সেই চুম্বন। আবার। আবার।
মাথাটা ঝিমঝিম করছে। জোর করে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিলাম আমি। দীপালি আমার কলার খামচে ধরল।
- এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? ওর ফিসফিস করে বলা কথাগুলো যেন কামে জ্বলে যাচ্ছে,
- ওহ, আই অ্যাম সাচ আ পারভার্ট, দীপ! এতোদিনে, সেই কলেজ থেকে শুরু করে এই লম্বা আর সাকসেসফুল ক্যারিয়ারে কম পুরুষমানুষ দেখলাম না, দীপ। আমার এ দেহ…. কম লোকে ভোগ করেছে? কিন্তু আমি…. আমি ভোগ করলাম কাল প্রথমবার!
আমকে ছেড়ে দিয়ে দীপালি আবার গ্লাসে চুমুক দিল। স্ট্র-টা দিয়ে তরলটা নাড়ছে।
- আমি অলওয়েজ পাওয়ার ভালোবেসে এসেছি, জানো। ক্ষমতা পাবার জন্যে, ক্ষমতায় থাকার জন্যে কী না করেছি। কত ওপরওয়ালার…. ক্ষুধা পূরণ করতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু আমার ক্ষুধা? সাধারণ সেক্সে এত বেশী অভ্যস্ত আমি যে…. আমার হাজবেন্ড মোটেও এব্যাপারে দূর্বল নয়, কিন্তু আমি জাস্ট……
দীপালির গলা গ্লাসের তরলে মিলিয়ে গেল।
- প্লীজ দীপ। ও আবার চোখ তুলে তাকাল। আমি কোন ক্ষতি করব না তোমার। জাস্ট কীপ ডুইং হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট নাইট। আমি সবসময় অন্যের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে এসেছি। কিন্তু নিজে এভাবে ক্ষমতার তলায় চাপা পড়লে কীরকম লাগে আমি…. ভাবতেও পারিনি! কাল তুমি যখন আমাকে…. মারলে, আমার…. আমার…. গালের চেয়ে…. ভেতরে বেশী রিঅ্যাকশন হল। যখন আমাকে তুমি ওভাবে চেপে ধরে…. করছিলে, আমার কিচ্ছু করার ছিল না, কোন আটকাবার উপায় ছিল না, আমি কি ভাবছিলাম জানো তখন? প্লেজার। আর পেইন। মাই পেইন ওয়াজ মাই প্লেজার, দীপ!
আবার আমার কলার চেপে ধরল দীপালি।
- হিট মি, দীপ! হিট মি এগেইন!
- প্লীজ, দীপালি! আর চুপ থাকা গেল না। মেয়েটা উন্মাদ। স্টপ ইট! মাথা ঠান্ডা করো!
- প্লীজ, দীপ! প্লীজ ডু ইট এগেইন!
আমি জোর করে ওর হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বললাম, দীপালি। কালকের ঘটনায় তুমি প্রচণ্ড শক পেয়েছ, তোমার মাথা ঠিকঠিক কাজ করছে না। বাড়ি যাও, ঘুমোও, ব্যাথার জন্য ডাক্তার দেখাও। আমিও বাড়ি যাচ্ছি।
কালকের ঘটনার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত – কিন্তু ওটাও জাস্ট একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল।
জামা ঠিকটাক করে দরজা খুলে বেরোলাম। দীপালির চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম, আই অ্যাম সরি, দীপালি। কাল আমারও মাথার ঠিক ছিল না। আমি অত্যন্ত গর্হিত, নিকৃষ্ট, অমানবিক, পাশবিক কাজ করেছি। আমাকে জেলে দিলে সেটাই ঠিক কাজ হবে। বাট প্লীজ লেট মি ফিনিশ দ্য রিসার্চ ফার্স্ট। তোমার-আমার দুজনেরই জীবনে ওটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জিনিশ। এসব ব্যাপারে আর ভেবো না। আমি এলাম। বাই।
দীপালির আশাহত, আগুনঝরা দৃষ্টিতে জ্বলতে জ্বলতে আমি বেরিয়ে এলাম রেস্তোরার বাইরে। বাড়ির দিকে এগোলাম। আর একবার ঘুম দরকার। তার আগে স্নান।
অর্ধেক পথ এসে মনে পড়ল, রেস্তোঁরায় বিল মেটাইনি।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পরিবর্তন - by অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। - 15-12-2024, 06:54 PM
RE: পরিবর্তন - by JiopagLA - 15-01-2025, 09:52 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)