09-12-2024, 07:00 PM
আগেই বলেছি গল্পটি আমার লেখা নয়।
তবে শুধুমাত্র মোবাইলে গল্প কপি করে পোস্ট করা অনেক ঝামেলার বিষয়।
এরমধ্য লেখকের বেশ কিছু চিহ্ন কমানো হয়েছে। সেই সাথে ছোট খাটো ভুল-ত্রুটি ঠিক করার চেষ্টা করেছি।
সেই সাথে লেখকের কাছে আগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
তার অনুমতি ব্যতীত এখানে পোস্ট করার জন্য।
এ গল্পের লেখক যদি এ পোষ্টটি দেখে থাকেন অবশ্যই আপনার প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
গল্পের সাথে সাথে লেখকের পোস্টকৃত তারিখ সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
আর আপনাদের উৎসাহের উপর নির্ভর করবে গল্পটি রেগুলার আপডেট আসবে কিনা?
ধন্যবাদ সবাইকে।
অধম
পরিবর্তন প্রথম পর্ব – 1 (১) By mblanc
December 11, 2020
সেদিন সকাল থেকেই শরীরটা ভাল লাগছিল না। সামান্য জ্বর ছিল, গা ম্যাজম্যাজ করছিল।
অনুকে বললাম – আজ আর ল্যাবে যাব না।
অনু বললে – কেন? ওই তো সামান্য একটু গা-গরম। তার জন্যে অফিস কামাই করবে?
- প্রথমতঃ, এটা অফিস নয় গবেষণা কেন্দ্র। দ্বিতীয়তঃ আমার জুনিয়ররা আমাকে ছাড়া একটা দিন চালিয়ে নিতে পারবে। আর তৃতীয়তঃ আমি কি আমার বিবাহিতা স্ত্রীর কাছ থেকে একটু সহমর্মিতা আশা করতে পারি না? আমার শরীর খারাপ শুনে তোমার এতোটুকু কেয়ার নেই?
- ভারী তো শরীর খারাপ। জানি জানি, বাদলা দিন শরীর খারাপের ছুতো করে বাড়ি বসে থাকবে, আর ধামসাবে। আর চাকরীটা গেলে কি হবে কোনো চিন্তা আছে?
- কি যা তা বলছ! আমি কতো ইম্পরট্যান্ট কাজ করি জানো? আমার কাছে আমার রিসার্চ কত গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে কোনো ধারণা আছে তোমার?
- জানি বৈকি খুব জানি! সেবার বউদি-ওরা সব নৈনিতাল গেল, আমাদের কত করে বলল যেতে, কিন্তু বাবুর সময় হল না আর। কি না রিসার্চে ব্রেকথ্রু হচ্ছে। হলো তো ঘোড়ার ডিম। কোনোদিন কিছু সুখ দিয়েছ আমাকে? তাও যদি রাতে সুখী রাখতে। পাঁচ মিনিটেই যার খেলা শেষ সে আবার পুরুষ মানুষ?
আবার নাকি ঐ নিয়েই গবেষণা করা হয়! যাও যাও, খুব দেখেছি। যা ইচ্ছে কর গিয়ে যাও।
একে মাথা ভার তাও এরকম ডায়লগ। মনে হল মাথায় আগুন ধরে গেল। ভাবলাম মারি এক থাপ্পড়। কিন্তু পেরে উঠলাম না, কেন জানেন।
ঐ আমার দোষ আমি একজন ভালমানুষ। অনু চোখ সরু করে আমার রিয়্যাকশন লক্ষ করছিল। এবার হাড়জ্বালানো একঝলক হাসি ফেলে দিয়ে চলে গেল বাথরুমের দিকে। জ্বলতে জ্বলতে একটা প্যারাসিটামল গিলে বেরিয়ে পড়লাম। ল্যাবে অন্ততঃ কাজের মাঝে শান্তি পাব, আর কিছু ভালমন্দ হলে ঐ অনাত্নীয় জুনিয়ররাই কিছু করবে অন্ততঃ আমার বউ এর চাইতে বেশি করবে।
সে তো বোধহয় আমি মরলেই খুশি হয়।
গ্রীন স্কাই নামের এক বিলিতি ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ ডিভিশনে কাজ করি আমি। আমার গ্রুপ এখন কাজ করছে প্রাকৃতিক উপায়ে ভায়াগ্রা তৈরী নিয়ে। আরো চেষ্টা হচ্ছে এমন একটা ওষুধ বার করার, যা মানুষের যৌনক্ষমতা স্থায়ী ভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই দ্বিতীয়টাই কঠিন কাজ, আর আজ সাড়ে চার বছর হল আমি সমাজ-সংসার বিসর্জন দিয়ে এর পিছনে পড়ে আছি।
আমি জানি সাফল্য খুব কাছে, কিন্তু বার বার সামান্য একটুর জন্য মিস করে যাচ্ছি। কোম্পানি যে বিরক্ত হয়ে আমাকে বের করে দেয় নি তার কারন আমার এর আগের একটা দারুণ আবিষ্কার (পুরুষদের জন্যে একটা গর্ভনিরোধক পিল) যা আমাকে খ্যাতির শিখরে তুলে দিয়েছিল। হায় রে, সেই রিপোর্টাররা যদি আমাকে দেখত এখন।
আর ঐ খ্যাতিই হয়েছে কাল, খাল কেটে কুমির ঢুকিয়েছি ঘরে। এর চেয়ে ব্যাচেলর থাকলে ঢের ভাল ছিল। অন্ততঃ কোনো গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করা উচিত ছিল। কি করি বলুন, তখন তো রূপ আর ফিগার দেখে চোখ ঝলসে গেছিল! আর তার বাপও সিন্দুক উজাড় করে দিতে কার্পণ্য করেনি। তখন কি জানি, নিজেকে সেল করে দিলাম।
ব্যস্ত মানুষ
ল্যাবে ঢুকতে ঢুকতে এগারোটা বেজে গেল।
- কি ব্যাপার ড. গুপ্ত? আপনার তো সচরাচর দেরি হয় না সব ভাল তো?
দীপালি বলল তার অফিস থেকে।
দীপালি এই ব্র্যাঞ্চের এইচ আর কাম রিসেপশনিষ্ট। যেমন মিষ্টি গলা তেমনি টিভির মডেলদের মত চেহারা। কিন্তু যে কোনো ঝামেলা সামলে নিতে পারে, আর কেউ ওর সাথে ফাজলামি করতে যায় না ওর ধারালো জিভের ভয়ে। সেটাই স্বাভাবিক, যা তা পাবলিক এই অফিসে ঐ পোস্ট ধরে রাখতে পারত না।
- গুড মর্নিং দীপালি! ঐ একটু ঠান্ডা লেগেছে আর কি। নাথিং সীরিয়াস, দো।
- একটু শুনে যান ডক্টর। কথা আছে।
সেরেছে। আবার কী করলাম? ঢুকলাম ওর অফিসে, বসতে বলল। বাইরে আকাশে যত না মেঘ তার মুখে আরো বেশি।
- ইয়েস, দীপালি?
দীপালি শর্ট স্কার্ট-এর নীচে কালো লেগিংস পরা পা দুটো ক্রস করে, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। চেয়ারটা যেন কৃতজ্ঞতাতেই হেলে গেল একটু।
চোখ সরু করে তাকিয়ে রইল কুড়ি সেকেন্ড, আর আমার মনে পড়ে গেল সকালে অনুর চোখ। হঠাৎ একটু শীত-শীত করতে লাগল।
- ই-ইয়েস, দীপালি? আমার সত্যি ঠান্ডা লাগছে।
- একটু আগে মি. স্রীনিবাসন কল করেছিলেন, দীপালির গলা শীতকালের ল্যাম্পপোষ্টের মতো ঠান্ডা আর শক্ত, আপনি গত মাসে প্রোগ্রেস আপডেট দেন নি কেন?
- ওহ্ শিট। তুমি তো জানো দীপালি, গত মাসে কোন প্রোগ্রেসই হয় নি বলার মত। কী রিপোর্ট দেব? আর হিউমান টেস্টিং না হলে তো আর এগোনোর মানেই হয় না। আফটার অল আমি একটু দাঁতগুলো বার করার চেষ্টা করলাম, খরগোশের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে তো আমাদের টেনশন নেই, কোনো হেল্প ছাড়াই ওরা ঘর ভর্তি
- রিগার্ডলেস, ডক্টর, মাখনে ছুরি পড়ার মত দীপালির কথা পড়ল আমার কথার ওপর।
- রুটিন রিপোর্টস আর মাস্ট! যদি প্রোগ্রেস কিছু না থাকে, তবে তাই লিখবেন। আপনার মত সিনিয়রকে এটা বলে দিতে হবে?
ওগো আমি সিনিয়র নই গো, আমার বয়েস মোটে পঁয়ত্রিশ! কিন্তু বোবার শত্রু নেই (যদি না বোবার পদবী হয় ফেট) তাই চুপচাপ বসে থাকলাম।
- অল রাইট ডক্টর, আপনি আজ লাঞ্চের আগেই রিপোর্ট তৈরী করে মেল করে দেবেন, উইথ অ্যান অ্যাপলজি লেটার। ইউ সী, এ প্রোজেক্ট অলরেডি খারাপ অবস্থায় চলছে। তার ওপর ইনডিসিপ্লিনড হলে কতদিন টিকবে মনে হয়? আপনি জানেন, বেল্লিসীমার সাথে আপার লেভেলে কথাবার্তা চলছে?
- বেল্লিসীমা, মানে প্রফেসর জেনিংস, দ্য নোবেল লরিয়েট-এর ফার্ম? যারা ক্যাভরডিন করেছে? মাই গড!
- এগজ্যাক্টলি, আর স্রীনিবাসন জেনিংস-এর ক্লাসমেট ছিল হার্ভার্ড-এ। আর কিছু বলতে হবে?
আমি খানিকক্ষন থুম মেরে বসে রইলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।
- গেট দিস, ড. গুপ্ত। আমাদের হাতে মাসখানেকের বেশি সময় নেই, কারণ পুজোয় জেনিংস অ্যান্ড ফ্যামিলি কলকাতায় আসছে, কলকাতার ‘ফেমাস পুজোস’ দেখতে। ইস ইট এ কোইন্সিডেনস যে শ্রীনিবাসনও ঠিক তখনই কলকাতায় আসছে?
এর আগে কিছু করে না দেখা পারলে এই প্রোজেক্ট কাপুত, ধরেই নিন। আর, অ্যাস এ রেসাল্ট, আপনার ভবিষ্যত অন্ধকার এবং শুধু আপনি নন, থিংক অ্যাবাউট দ্য আদারস! আপনার জুনিয়ররা, আমি, অন্যান্য স্টাফ, কি হবে আমাদের সকলের? ইউ কান্ট সাইডস্টেপ ইয়োর রেসপনসিবিলিটি লাইক দিস!
বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে দিয়ে ল্যাবে পালিয়ে এলাম। আঃ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কেমিক্যালের গন্ধ, বিভিন্ন ছোটবড় মেশিনের কমবেশি টুকটাক ঝিমঝিম শব্দ কানে যেন মধুর সংগীত! এই আমার জায়গা, এই আমার দেশ, এই আমার ঘর!
আর একমাসের মধ্যে এ সবই ওরা নিয়ে নেবে?
সন্দেহ
আমার জুনিয়রদের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ পিনাকী আর সুজাতাকে। দুজনেই ব্রিলিয়ান্ট, অথচ কোনো গর্ব নেই তাতে। ব্যাবহারেও সুন্দর, চেহারাও সুন্দর। দুটিকে রাজযোটক লাগে। আর মনে হয় দুজনের মধ্যে কিছু ইন্টুমিন্টু আছে, প্রায়শই কাজ না থাকলে দেখি দুটো মাথা এক হয়ে কীসব ফুসফুস-গুজগুজ চলছে। ভাল লাগে। নিজের তো সে বয়েসে তেমন কিছু হয়ে ওঠেনি তাই একটু হিংসেও হয় বৈকি। তবে নাথিং সীরিয়াস।
এখন সুজাতা নিজের মাইক্রোস্কোপ ছেড়ে উঠে এসে বললে, কি ব্যাপার স্যার? আপনার তো সচরাচর দেরি হয় না… সব ভাল তো?
একটু আগে দীপালি একদম এই কথাটাই জিগ্যেস করেছিল, জিভের ডগায় উত্তরও চলে এসেছিল। এখন কি বলব? সুজাতার নম্রসুন্দর মুখখানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
- স্যার? স্যার, কিছু প্রবলেম? পিনাকীও উঠে এসেছে।
মাথাটা সামান্য ঝাঁকিয়ে প্রফেশনাল মোডে নিয়ে এলাম নিজেকে।
- না না, সব ঠিক আছে। হ্যাঁ, সুজাতা, তুমি… কালকের ওই ইলেক্ট্রলাইসিসটা শেষ করেছ? গুড, তার অ্যানালিসিসটা বের করে ফেলে গিয়ে যাও। আর অভিলাষ আর প্রিয়াঙ্কাকে বল আজকের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যেতে।
- আর পিনাকী, তুমি এখন কি করছিলে? না, ওটা আপাততঃ বন্ধ রাখো, পেট্রিডিশ গুলো ডিপফ্রীজ করে দাও, আর তারপর একটু ইন্টারনেটটা ঘেঁটে একটা রিপোর্ট আমাকে বের করে দাও দেখি।
- হাইভারডিন কম্পোজিশন তো? সেটা কাল রাতেই বাড়িতে বসে করে ফেলেছি স্যার। নিয়ে আসব?
- ও তোমাকেই হাইভারডিনটা করতে দেয়া ছিল, না? তা বেশ করেছ, গুড জব, কিন্তু ওটা আমার একটু পরে হলেও চলবে। এখন অন্য একটা জিনিস চাই। ড. এ জি জেনিংসের নাম তো জান, ওনার কলেজ লাইফ আর আমাদের কোম্পানির সাথে ওনার কোনো কাজ হয়েছে কি না, হলে তার ডিটেলস এই সব নিয়ে একটা ব্রিফ করে দাও।
- ওকে স্যার।
দুজনের চোখেই অস্বস্তির ছায়া দেখলাম, কিন্তু আর কথা না বলে তারা পা বাড়াল।
- ও হ্যাঁ, আমি আমার ডেন-এ একটু ব্যস্ত থাকব। সবাইকে বলে দাও যেন এমার্জেন্সি না হলে বিরক্ত না করে।
ল্যাবের লাগোয়া বাথরুম, ফ্রীজার, ওভারনাইট রুম, আইসো-চেম্বার ইত্যাদি ছাড়াও একটা বড় ঘর আছে, যেটা হেড সায়েন্টিস্ট-এর অফিস কাম মিনি-ল্যাব হিসেবে ব্যবহার হয়। সেখানেই গিয়ে নিজের ডেস্ক-এ বসলাম। মাথাটা এখনো ভার আছে, কিন্তু কী করা যাবে আর।
আগের কাজ আগে, আপডেট রিপোর্ট আর একটা অ্যাপোলজি লেটার, ঠিক যেমনটি দীপালি বলেছিল, বানাতে শুরু করলাম।
আধখানা কাজ হয়েছে, রিংরিংরিংরিংরিংরিং। মোবাইল তুলে দেখলাম, আমার পেয়ারের বৌ ফোন করছেন।
- হ্যালো, তোমাকে বলেছিনা ল্যাবে আমাকে ফোন না করতে?
- কেন, কচিকচি জুনিয়রদের সাথে গল্পে বাধা পড়ে যাচ্ছে বুঝি? সব তো ডবকা ছুঁড়িগুলো কাজ করে দেখেচি। কি কাজ বুঝিনা? রিসার্চ আর এগোবে কী করে!
- কি চাই কি তোমার? খেঁকিয়ে উঠলাম। আর লোক পাও নি জ্বালাবার? একেবারে দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দাও না কেন, ঝামেলা চুকে যায়।
- আমি বেরচ্ছি, এক বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে। চাবি রইল গীতাবউদির কাছে। ফিরতে রাত হতে পারে, যদি হয় তো খেয়েই ফিরব।
এটা নতুন নয় আমার কাছে। বেশ কয়েক বার এরকম হয়েছে, আমি গা করিনি। আজ কেন জানি ভেতরের সংসারী পুরুষটা মাথা তুলল।
- কোথায়, কোন বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে? আর ফিরতে রাতই বা হবে কেন? কি এমন এমার্জেন্সি? সকালেও তো কই শুনি নি।
- জেনে তোমার কী? আমরা দুটি-তিনটি মেয়ে একটু নিজেদের মত টাইমপাস করব, তারও অধিকার নেই? জানো, তোমার পাশের বাড়ির রাজীবের বউ এর কী স্বাধীনতা? ও এমনকী..
- জাহান্নমে যাও! আমার কিছু জানার দরকার নেই! আরো কিছু চেঁচাচ্ছিল, কিন্তু ফোনটা কেটে দিলাম।
আপডেট রিপোর্টটা শেষ করে অন্য কাজে হাত দিতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু বার বার অনুর কথাই মাথায় আসতে লাগল। এক বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে…. একটু নিজেদের মত টাইমপাস করব…. কোন মেয়ে ভরদুপুর থেকে রাত অবধি সংসারী মহিলাদের সাথে টাইমপাস করে? টাইমপাস মানেই বা কি? আর ওর যে রকম স্বভাব, এক সুনন্দাদি আর ওর নিজের মা-বোন ছাড়া আর কোনো মেয়ের সাথে বেশিক্ষন কথা চলতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমাকে এর আগে বেশ কয়েকবার প্যাঁক খেতে হয়েছে, নরম-গরম মিলিয়ে।
কে এমন বান্ধবী আছে ওর?
গুপ্তকথা
কিছুতেই কাজে মন বসছিল না। ইতঃস্তত করে শেষ পর্যন্ত সুনন্দাদির নাম্বারটাই বের করে কল করলাম।
- কীরে দীপু? এতদিন পরে মনে পড়ল? আমাদের তো ভুলেই গেছিলি!
- ভেরি সরি দিদি! কাজের ফাঁকে টাইম করে উঠতে পারি নি। সব ভাল তো?
- বলব কেন? এখানে এসে দেখে যা না।
- সে যাব’খন। ইয়ে, দিদি, একটা জিনিস জিগ্যেসা করবার ছিল….
- হ্যাঁ বল?
কি বলি? দিদি, আমার বউএর কি বয়ফ্রেন্ড আছে? কেমন লাগবে?
- ইয়ে, মানে, অনুর ব্যাপারে একটা কথা ছিল। কথাটা একটু সাজিয়ে নেবার জন্যে থামলাম।
- আবার ঝগড়া করেছিস বুঝি? এই এক তোদের জ্বালা বাপু। ঝগড়া করিস তোরা আর মানাতে হয় আমাকে।
- না না, ঝগড়া নয়, আসলে….
- অ, বুঝেচি। মেয়েলি ব্যাপার কিছু?
- না, তাও নয়। আমি ভাবছিলাম কি যে, ও তো তোমাকে সবকিছু বলে, না কি?
সুনন্দাদি একটু চুপ করে রইল। না, সবকিছু বোধহয় বলে না। কিন্তু কথাটা কী, ভেঙ্গে বল।
- ওর কি ইদানিং বেশ কিছু নতুন বন্ধু-টন্ধু হয়েছে?
ওপারে একটা নিশ্বাস পড়ার শব্দ হল, তার পর সব চুপচাপ কিছুক্ষণ।
- সুনন্দাদি? … হ্যালো?
- শোন দীপু। তোকে আমি নিজের ভাইয়ের মত ভালবাসি – সুনন্দাদির এ গলা আমি চিনি না – তাই লুকোছাপা না করে তোকে এটা পরিস্কার বলে দেওয়া আমার কর্তব্য মনে করি। গত সপ্তাহের সোমবার না মঙ্গলবার, আমি বেলা দেড়টা-দুটো নাগাদ ভবানীপুরে, জগুবাজার বাসস্টপে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার বাস আসতে উঠবার জন্যে এগিয়েছি, দেখি ঠিক তার পেছনের বাসটা থেকে তোর বৌ নামছে। আমি ডাকলাম, সে তাকাল কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি উলটো দিকে হাঁটা দিল। আমার বাসটা পালাচ্ছিল তাই, না হলে আমি আবার ডাকতাম, পিছু ধাওয়া করতাম কিছুটা।
আশ্চর্যের কথা হল এই যে আমি পরে যখন ওকে ফোন করে ব্যাপারটা জিজ্ঞেসা করলাম তখন ও কুললি হেসে উড়িয়ে দিল, বলল কিনা
জগুবাজারে জীবনে কখনো যায় নি! অথচ আমি জানি আমার ভুল হয় নি, কারন ও আমার ডাক শুনে ঘুরে তাকিয়েছিল। আমি আর তখন ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা করতে যাই নি।
কিন্তু আজকে যখন তুই ঐ কথা জিজ্ঞেসা করছিস, আমি দুই আর দুয়ে চার করতে বাধ্য হচ্ছি। হ্যাঁ, আমি মনে করি ওর নতুন ‘বন্ধু’ হয়েছে, আর আমি মনে করি তুই একটু শক্ত হয়ে কিছু একটা কর সে বিষয়ে!
সুনন্দাদি হাঁপাচ্ছে। কখনো ওকে আমি এতগুলো কথা একসাথে বলতে শুনিনি। এই টোনে তো কখনই নয়।
,- কিছু একটা কর, দীপু। না হলে তোর লাইফটাও আমার মত নিঃসার হয়ে যাবে। কাছের মানুষদের কখনো এভাবে আলগা ছেড়ে দিতে নেই! তুই কি চাস তোরও ডিভোর্স হয়ে যাক আমার মতো?
আমি চিরকালই একটু ইমোশনাল ছিলাম। এখনও আমার গলা ধরে এল – একদিনে এতকিছু একসাথে ওভারডোজ হয়ে যাচ্ছে।
- কি করব আমি? কোথায় খুঁজব তার লাভারকে? ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তো হয় আমাকে মাথার ডাক্তার দেখাতে বলবে, না হয় বলবে বেশ করেছি। তার চেয়ে যা হয় হোক, আমার কিচ্ছু জানার দরকার নেই। ত-তোমাকে ফোন করে ভুল করেছি। সরি। বাই।
- দীপু শোন, ভাই-
এবারেও আমিই কেটে দিয়েছি।
চুপচাপ বসে রইলাম কিছুক্ষন। অভিমান করে বললেও, আমার কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত। কীভাবে জানব অনুর বন্ধুটি কে? অনুর সাথে কথা বলার সত্যি মানে হয় না। ওর সাথে শেষ কবে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছি মনে নেই। আর ভবানীপুর তো বিরাট জায়গা, আমি কি দোরে দোরে ফেরিওয়ালার মতো ডাক দিয়ে ঘুরব, বৌ…. বৌ…. আমার বৌ আছো কোন ঘরে…বৌ…বৌ…কচি বৌ
এতো দুঃখেও হাসি পেল। হাসতে যাচ্ছি, দরজায় টোকা।
- কাম ইন।
পিনাকী ঢুকে এল।
- স্যার, জেনিংসের রিপোর্টটা।
- বাহ, এর মধ্যেই হয়ে গেল?
- একচুয়ালি তেমন কিছু খোঁজাখুঁজি করতে হয় নি, স্যার। ঐ ভদ্রলোকের নিজেরই একটা ওয়েবসাইট আছে, সেটা ফলো করতেই সব পেয়ে গেলাম।
- তাই, বেশ বেশ – কি বললে?
পিনাকীকে একটু কনফিয়ুজড দেখাল।
- বললাম যে প্রোফেসর জেনিংসের ওয়েবসাইটটা ফলো করতেই সব তথ্য বেরিয়ে গেল।
- স্যার? …. আমি এখন যাই?
- অ্যাঁ? ও হ্যাঁ, যাও। থ্যাঙ্কস।
পিনাকী আরো কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল।
দরজাটা বন্ধ হতেই আমি ঝটপট নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলতে থাকলাম। অফ কোর্স, ফলো, ফলো, ফলো! আর আমি কিনা নিজেকে সায়েন্টিস্ট বলি, এই সামান্য জিনিসটা মাথায় এল না! অনুর লাভারকে খুঁজে বার করা তো খুবই সোজা। আমি জানি অনু মোটামুটি কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। সুতরাং, সুনন্দাদির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আর মোটামুটি একঘণ্টা বাদে অনুকে জগুবাজার বাস স্টপে দেখতে পাওয়া উচিত। আমার অফিস থেকে জগুবাজার যেতে লাগে দশ-পনের মিনিট। বাকিটা তো ডিটেকটিভ সিরিয়াল!
বাইরে বেরোবার আগে দীপালির অগ্নিদৃষ্টিতে ডানদিকটা ঝলসে গেল। মনে মনে বললাম – সরি ডার্লিং, এ আমার জীবন নিয়ে প্রশ্ন, আর অন্য কারোর মরণ নিয়ে। চুলোয় যাক চাকরি, আমি আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব।
তবে শুধুমাত্র মোবাইলে গল্প কপি করে পোস্ট করা অনেক ঝামেলার বিষয়।
এরমধ্য লেখকের বেশ কিছু চিহ্ন কমানো হয়েছে। সেই সাথে ছোট খাটো ভুল-ত্রুটি ঠিক করার চেষ্টা করেছি।
সেই সাথে লেখকের কাছে আগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
তার অনুমতি ব্যতীত এখানে পোস্ট করার জন্য।
এ গল্পের লেখক যদি এ পোষ্টটি দেখে থাকেন অবশ্যই আপনার প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
গল্পের সাথে সাথে লেখকের পোস্টকৃত তারিখ সঙ্গে দিয়ে দিলাম।
আর আপনাদের উৎসাহের উপর নির্ভর করবে গল্পটি রেগুলার আপডেট আসবে কিনা?
ধন্যবাদ সবাইকে।
অধম
পরিবর্তন প্রথম পর্ব – 1 (১) By mblanc
December 11, 2020
সেদিন সকাল থেকেই শরীরটা ভাল লাগছিল না। সামান্য জ্বর ছিল, গা ম্যাজম্যাজ করছিল।
অনুকে বললাম – আজ আর ল্যাবে যাব না।
অনু বললে – কেন? ওই তো সামান্য একটু গা-গরম। তার জন্যে অফিস কামাই করবে?
- প্রথমতঃ, এটা অফিস নয় গবেষণা কেন্দ্র। দ্বিতীয়তঃ আমার জুনিয়ররা আমাকে ছাড়া একটা দিন চালিয়ে নিতে পারবে। আর তৃতীয়তঃ আমি কি আমার বিবাহিতা স্ত্রীর কাছ থেকে একটু সহমর্মিতা আশা করতে পারি না? আমার শরীর খারাপ শুনে তোমার এতোটুকু কেয়ার নেই?
- ভারী তো শরীর খারাপ। জানি জানি, বাদলা দিন শরীর খারাপের ছুতো করে বাড়ি বসে থাকবে, আর ধামসাবে। আর চাকরীটা গেলে কি হবে কোনো চিন্তা আছে?
- কি যা তা বলছ! আমি কতো ইম্পরট্যান্ট কাজ করি জানো? আমার কাছে আমার রিসার্চ কত গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে কোনো ধারণা আছে তোমার?
- জানি বৈকি খুব জানি! সেবার বউদি-ওরা সব নৈনিতাল গেল, আমাদের কত করে বলল যেতে, কিন্তু বাবুর সময় হল না আর। কি না রিসার্চে ব্রেকথ্রু হচ্ছে। হলো তো ঘোড়ার ডিম। কোনোদিন কিছু সুখ দিয়েছ আমাকে? তাও যদি রাতে সুখী রাখতে। পাঁচ মিনিটেই যার খেলা শেষ সে আবার পুরুষ মানুষ?
আবার নাকি ঐ নিয়েই গবেষণা করা হয়! যাও যাও, খুব দেখেছি। যা ইচ্ছে কর গিয়ে যাও।
একে মাথা ভার তাও এরকম ডায়লগ। মনে হল মাথায় আগুন ধরে গেল। ভাবলাম মারি এক থাপ্পড়। কিন্তু পেরে উঠলাম না, কেন জানেন।
ঐ আমার দোষ আমি একজন ভালমানুষ। অনু চোখ সরু করে আমার রিয়্যাকশন লক্ষ করছিল। এবার হাড়জ্বালানো একঝলক হাসি ফেলে দিয়ে চলে গেল বাথরুমের দিকে। জ্বলতে জ্বলতে একটা প্যারাসিটামল গিলে বেরিয়ে পড়লাম। ল্যাবে অন্ততঃ কাজের মাঝে শান্তি পাব, আর কিছু ভালমন্দ হলে ঐ অনাত্নীয় জুনিয়ররাই কিছু করবে অন্ততঃ আমার বউ এর চাইতে বেশি করবে।
সে তো বোধহয় আমি মরলেই খুশি হয়।
গ্রীন স্কাই নামের এক বিলিতি ওষুধ কোম্পানির রিসার্চ ডিভিশনে কাজ করি আমি। আমার গ্রুপ এখন কাজ করছে প্রাকৃতিক উপায়ে ভায়াগ্রা তৈরী নিয়ে। আরো চেষ্টা হচ্ছে এমন একটা ওষুধ বার করার, যা মানুষের যৌনক্ষমতা স্থায়ী ভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই দ্বিতীয়টাই কঠিন কাজ, আর আজ সাড়ে চার বছর হল আমি সমাজ-সংসার বিসর্জন দিয়ে এর পিছনে পড়ে আছি।
আমি জানি সাফল্য খুব কাছে, কিন্তু বার বার সামান্য একটুর জন্য মিস করে যাচ্ছি। কোম্পানি যে বিরক্ত হয়ে আমাকে বের করে দেয় নি তার কারন আমার এর আগের একটা দারুণ আবিষ্কার (পুরুষদের জন্যে একটা গর্ভনিরোধক পিল) যা আমাকে খ্যাতির শিখরে তুলে দিয়েছিল। হায় রে, সেই রিপোর্টাররা যদি আমাকে দেখত এখন।
আর ঐ খ্যাতিই হয়েছে কাল, খাল কেটে কুমির ঢুকিয়েছি ঘরে। এর চেয়ে ব্যাচেলর থাকলে ঢের ভাল ছিল। অন্ততঃ কোনো গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করা উচিত ছিল। কি করি বলুন, তখন তো রূপ আর ফিগার দেখে চোখ ঝলসে গেছিল! আর তার বাপও সিন্দুক উজাড় করে দিতে কার্পণ্য করেনি। তখন কি জানি, নিজেকে সেল করে দিলাম।
ব্যস্ত মানুষ
ল্যাবে ঢুকতে ঢুকতে এগারোটা বেজে গেল।
- কি ব্যাপার ড. গুপ্ত? আপনার তো সচরাচর দেরি হয় না সব ভাল তো?
দীপালি বলল তার অফিস থেকে।
দীপালি এই ব্র্যাঞ্চের এইচ আর কাম রিসেপশনিষ্ট। যেমন মিষ্টি গলা তেমনি টিভির মডেলদের মত চেহারা। কিন্তু যে কোনো ঝামেলা সামলে নিতে পারে, আর কেউ ওর সাথে ফাজলামি করতে যায় না ওর ধারালো জিভের ভয়ে। সেটাই স্বাভাবিক, যা তা পাবলিক এই অফিসে ঐ পোস্ট ধরে রাখতে পারত না।
- গুড মর্নিং দীপালি! ঐ একটু ঠান্ডা লেগেছে আর কি। নাথিং সীরিয়াস, দো।
- একটু শুনে যান ডক্টর। কথা আছে।
সেরেছে। আবার কী করলাম? ঢুকলাম ওর অফিসে, বসতে বলল। বাইরে আকাশে যত না মেঘ তার মুখে আরো বেশি।
- ইয়েস, দীপালি?
দীপালি শর্ট স্কার্ট-এর নীচে কালো লেগিংস পরা পা দুটো ক্রস করে, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। চেয়ারটা যেন কৃতজ্ঞতাতেই হেলে গেল একটু।
চোখ সরু করে তাকিয়ে রইল কুড়ি সেকেন্ড, আর আমার মনে পড়ে গেল সকালে অনুর চোখ। হঠাৎ একটু শীত-শীত করতে লাগল।
- ই-ইয়েস, দীপালি? আমার সত্যি ঠান্ডা লাগছে।
- একটু আগে মি. স্রীনিবাসন কল করেছিলেন, দীপালির গলা শীতকালের ল্যাম্পপোষ্টের মতো ঠান্ডা আর শক্ত, আপনি গত মাসে প্রোগ্রেস আপডেট দেন নি কেন?
- ওহ্ শিট। তুমি তো জানো দীপালি, গত মাসে কোন প্রোগ্রেসই হয় নি বলার মত। কী রিপোর্ট দেব? আর হিউমান টেস্টিং না হলে তো আর এগোনোর মানেই হয় না। আফটার অল আমি একটু দাঁতগুলো বার করার চেষ্টা করলাম, খরগোশের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে তো আমাদের টেনশন নেই, কোনো হেল্প ছাড়াই ওরা ঘর ভর্তি
- রিগার্ডলেস, ডক্টর, মাখনে ছুরি পড়ার মত দীপালির কথা পড়ল আমার কথার ওপর।
- রুটিন রিপোর্টস আর মাস্ট! যদি প্রোগ্রেস কিছু না থাকে, তবে তাই লিখবেন। আপনার মত সিনিয়রকে এটা বলে দিতে হবে?
ওগো আমি সিনিয়র নই গো, আমার বয়েস মোটে পঁয়ত্রিশ! কিন্তু বোবার শত্রু নেই (যদি না বোবার পদবী হয় ফেট) তাই চুপচাপ বসে থাকলাম।
- অল রাইট ডক্টর, আপনি আজ লাঞ্চের আগেই রিপোর্ট তৈরী করে মেল করে দেবেন, উইথ অ্যান অ্যাপলজি লেটার। ইউ সী, এ প্রোজেক্ট অলরেডি খারাপ অবস্থায় চলছে। তার ওপর ইনডিসিপ্লিনড হলে কতদিন টিকবে মনে হয়? আপনি জানেন, বেল্লিসীমার সাথে আপার লেভেলে কথাবার্তা চলছে?
- বেল্লিসীমা, মানে প্রফেসর জেনিংস, দ্য নোবেল লরিয়েট-এর ফার্ম? যারা ক্যাভরডিন করেছে? মাই গড!
- এগজ্যাক্টলি, আর স্রীনিবাসন জেনিংস-এর ক্লাসমেট ছিল হার্ভার্ড-এ। আর কিছু বলতে হবে?
আমি খানিকক্ষন থুম মেরে বসে রইলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।
- গেট দিস, ড. গুপ্ত। আমাদের হাতে মাসখানেকের বেশি সময় নেই, কারণ পুজোয় জেনিংস অ্যান্ড ফ্যামিলি কলকাতায় আসছে, কলকাতার ‘ফেমাস পুজোস’ দেখতে। ইস ইট এ কোইন্সিডেনস যে শ্রীনিবাসনও ঠিক তখনই কলকাতায় আসছে?
এর আগে কিছু করে না দেখা পারলে এই প্রোজেক্ট কাপুত, ধরেই নিন। আর, অ্যাস এ রেসাল্ট, আপনার ভবিষ্যত অন্ধকার এবং শুধু আপনি নন, থিংক অ্যাবাউট দ্য আদারস! আপনার জুনিয়ররা, আমি, অন্যান্য স্টাফ, কি হবে আমাদের সকলের? ইউ কান্ট সাইডস্টেপ ইয়োর রেসপনসিবিলিটি লাইক দিস!
বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে দিয়ে ল্যাবে পালিয়ে এলাম। আঃ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কেমিক্যালের গন্ধ, বিভিন্ন ছোটবড় মেশিনের কমবেশি টুকটাক ঝিমঝিম শব্দ কানে যেন মধুর সংগীত! এই আমার জায়গা, এই আমার দেশ, এই আমার ঘর!
আর একমাসের মধ্যে এ সবই ওরা নিয়ে নেবে?
সন্দেহ
আমার জুনিয়রদের মধ্যে আমার সবচেয়ে পছন্দ পিনাকী আর সুজাতাকে। দুজনেই ব্রিলিয়ান্ট, অথচ কোনো গর্ব নেই তাতে। ব্যাবহারেও সুন্দর, চেহারাও সুন্দর। দুটিকে রাজযোটক লাগে। আর মনে হয় দুজনের মধ্যে কিছু ইন্টুমিন্টু আছে, প্রায়শই কাজ না থাকলে দেখি দুটো মাথা এক হয়ে কীসব ফুসফুস-গুজগুজ চলছে। ভাল লাগে। নিজের তো সে বয়েসে তেমন কিছু হয়ে ওঠেনি তাই একটু হিংসেও হয় বৈকি। তবে নাথিং সীরিয়াস।
এখন সুজাতা নিজের মাইক্রোস্কোপ ছেড়ে উঠে এসে বললে, কি ব্যাপার স্যার? আপনার তো সচরাচর দেরি হয় না… সব ভাল তো?
একটু আগে দীপালি একদম এই কথাটাই জিগ্যেস করেছিল, জিভের ডগায় উত্তরও চলে এসেছিল। এখন কি বলব? সুজাতার নম্রসুন্দর মুখখানির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
- স্যার? স্যার, কিছু প্রবলেম? পিনাকীও উঠে এসেছে।
মাথাটা সামান্য ঝাঁকিয়ে প্রফেশনাল মোডে নিয়ে এলাম নিজেকে।
- না না, সব ঠিক আছে। হ্যাঁ, সুজাতা, তুমি… কালকের ওই ইলেক্ট্রলাইসিসটা শেষ করেছ? গুড, তার অ্যানালিসিসটা বের করে ফেলে গিয়ে যাও। আর অভিলাষ আর প্রিয়াঙ্কাকে বল আজকের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যেতে।
- আর পিনাকী, তুমি এখন কি করছিলে? না, ওটা আপাততঃ বন্ধ রাখো, পেট্রিডিশ গুলো ডিপফ্রীজ করে দাও, আর তারপর একটু ইন্টারনেটটা ঘেঁটে একটা রিপোর্ট আমাকে বের করে দাও দেখি।
- হাইভারডিন কম্পোজিশন তো? সেটা কাল রাতেই বাড়িতে বসে করে ফেলেছি স্যার। নিয়ে আসব?
- ও তোমাকেই হাইভারডিনটা করতে দেয়া ছিল, না? তা বেশ করেছ, গুড জব, কিন্তু ওটা আমার একটু পরে হলেও চলবে। এখন অন্য একটা জিনিস চাই। ড. এ জি জেনিংসের নাম তো জান, ওনার কলেজ লাইফ আর আমাদের কোম্পানির সাথে ওনার কোনো কাজ হয়েছে কি না, হলে তার ডিটেলস এই সব নিয়ে একটা ব্রিফ করে দাও।
- ওকে স্যার।
দুজনের চোখেই অস্বস্তির ছায়া দেখলাম, কিন্তু আর কথা না বলে তারা পা বাড়াল।
- ও হ্যাঁ, আমি আমার ডেন-এ একটু ব্যস্ত থাকব। সবাইকে বলে দাও যেন এমার্জেন্সি না হলে বিরক্ত না করে।
ল্যাবের লাগোয়া বাথরুম, ফ্রীজার, ওভারনাইট রুম, আইসো-চেম্বার ইত্যাদি ছাড়াও একটা বড় ঘর আছে, যেটা হেড সায়েন্টিস্ট-এর অফিস কাম মিনি-ল্যাব হিসেবে ব্যবহার হয়। সেখানেই গিয়ে নিজের ডেস্ক-এ বসলাম। মাথাটা এখনো ভার আছে, কিন্তু কী করা যাবে আর।
আগের কাজ আগে, আপডেট রিপোর্ট আর একটা অ্যাপোলজি লেটার, ঠিক যেমনটি দীপালি বলেছিল, বানাতে শুরু করলাম।
আধখানা কাজ হয়েছে, রিংরিংরিংরিংরিংরিং। মোবাইল তুলে দেখলাম, আমার পেয়ারের বৌ ফোন করছেন।
- হ্যালো, তোমাকে বলেছিনা ল্যাবে আমাকে ফোন না করতে?
- কেন, কচিকচি জুনিয়রদের সাথে গল্পে বাধা পড়ে যাচ্ছে বুঝি? সব তো ডবকা ছুঁড়িগুলো কাজ করে দেখেচি। কি কাজ বুঝিনা? রিসার্চ আর এগোবে কী করে!
- কি চাই কি তোমার? খেঁকিয়ে উঠলাম। আর লোক পাও নি জ্বালাবার? একেবারে দেশলাই জ্বেলে ধরিয়ে দাও না কেন, ঝামেলা চুকে যায়।
- আমি বেরচ্ছি, এক বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে। চাবি রইল গীতাবউদির কাছে। ফিরতে রাত হতে পারে, যদি হয় তো খেয়েই ফিরব।
এটা নতুন নয় আমার কাছে। বেশ কয়েক বার এরকম হয়েছে, আমি গা করিনি। আজ কেন জানি ভেতরের সংসারী পুরুষটা মাথা তুলল।
- কোথায়, কোন বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে? আর ফিরতে রাতই বা হবে কেন? কি এমন এমার্জেন্সি? সকালেও তো কই শুনি নি।
- জেনে তোমার কী? আমরা দুটি-তিনটি মেয়ে একটু নিজেদের মত টাইমপাস করব, তারও অধিকার নেই? জানো, তোমার পাশের বাড়ির রাজীবের বউ এর কী স্বাধীনতা? ও এমনকী..
- জাহান্নমে যাও! আমার কিছু জানার দরকার নেই! আরো কিছু চেঁচাচ্ছিল, কিন্তু ফোনটা কেটে দিলাম।
আপডেট রিপোর্টটা শেষ করে অন্য কাজে হাত দিতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু বার বার অনুর কথাই মাথায় আসতে লাগল। এক বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হবে…. একটু নিজেদের মত টাইমপাস করব…. কোন মেয়ে ভরদুপুর থেকে রাত অবধি সংসারী মহিলাদের সাথে টাইমপাস করে? টাইমপাস মানেই বা কি? আর ওর যে রকম স্বভাব, এক সুনন্দাদি আর ওর নিজের মা-বোন ছাড়া আর কোনো মেয়ের সাথে বেশিক্ষন কথা চলতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমাকে এর আগে বেশ কয়েকবার প্যাঁক খেতে হয়েছে, নরম-গরম মিলিয়ে।
কে এমন বান্ধবী আছে ওর?
গুপ্তকথা
কিছুতেই কাজে মন বসছিল না। ইতঃস্তত করে শেষ পর্যন্ত সুনন্দাদির নাম্বারটাই বের করে কল করলাম।
- কীরে দীপু? এতদিন পরে মনে পড়ল? আমাদের তো ভুলেই গেছিলি!
- ভেরি সরি দিদি! কাজের ফাঁকে টাইম করে উঠতে পারি নি। সব ভাল তো?
- বলব কেন? এখানে এসে দেখে যা না।
- সে যাব’খন। ইয়ে, দিদি, একটা জিনিস জিগ্যেসা করবার ছিল….
- হ্যাঁ বল?
কি বলি? দিদি, আমার বউএর কি বয়ফ্রেন্ড আছে? কেমন লাগবে?
- ইয়ে, মানে, অনুর ব্যাপারে একটা কথা ছিল। কথাটা একটু সাজিয়ে নেবার জন্যে থামলাম।
- আবার ঝগড়া করেছিস বুঝি? এই এক তোদের জ্বালা বাপু। ঝগড়া করিস তোরা আর মানাতে হয় আমাকে।
- না না, ঝগড়া নয়, আসলে….
- অ, বুঝেচি। মেয়েলি ব্যাপার কিছু?
- না, তাও নয়। আমি ভাবছিলাম কি যে, ও তো তোমাকে সবকিছু বলে, না কি?
সুনন্দাদি একটু চুপ করে রইল। না, সবকিছু বোধহয় বলে না। কিন্তু কথাটা কী, ভেঙ্গে বল।
- ওর কি ইদানিং বেশ কিছু নতুন বন্ধু-টন্ধু হয়েছে?
ওপারে একটা নিশ্বাস পড়ার শব্দ হল, তার পর সব চুপচাপ কিছুক্ষণ।
- সুনন্দাদি? … হ্যালো?
- শোন দীপু। তোকে আমি নিজের ভাইয়ের মত ভালবাসি – সুনন্দাদির এ গলা আমি চিনি না – তাই লুকোছাপা না করে তোকে এটা পরিস্কার বলে দেওয়া আমার কর্তব্য মনে করি। গত সপ্তাহের সোমবার না মঙ্গলবার, আমি বেলা দেড়টা-দুটো নাগাদ ভবানীপুরে, জগুবাজার বাসস্টপে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার বাস আসতে উঠবার জন্যে এগিয়েছি, দেখি ঠিক তার পেছনের বাসটা থেকে তোর বৌ নামছে। আমি ডাকলাম, সে তাকাল কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি উলটো দিকে হাঁটা দিল। আমার বাসটা পালাচ্ছিল তাই, না হলে আমি আবার ডাকতাম, পিছু ধাওয়া করতাম কিছুটা।
আশ্চর্যের কথা হল এই যে আমি পরে যখন ওকে ফোন করে ব্যাপারটা জিজ্ঞেসা করলাম তখন ও কুললি হেসে উড়িয়ে দিল, বলল কিনা
জগুবাজারে জীবনে কখনো যায় নি! অথচ আমি জানি আমার ভুল হয় নি, কারন ও আমার ডাক শুনে ঘুরে তাকিয়েছিল। আমি আর তখন ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা করতে যাই নি।
কিন্তু আজকে যখন তুই ঐ কথা জিজ্ঞেসা করছিস, আমি দুই আর দুয়ে চার করতে বাধ্য হচ্ছি। হ্যাঁ, আমি মনে করি ওর নতুন ‘বন্ধু’ হয়েছে, আর আমি মনে করি তুই একটু শক্ত হয়ে কিছু একটা কর সে বিষয়ে!
সুনন্দাদি হাঁপাচ্ছে। কখনো ওকে আমি এতগুলো কথা একসাথে বলতে শুনিনি। এই টোনে তো কখনই নয়।
,- কিছু একটা কর, দীপু। না হলে তোর লাইফটাও আমার মত নিঃসার হয়ে যাবে। কাছের মানুষদের কখনো এভাবে আলগা ছেড়ে দিতে নেই! তুই কি চাস তোরও ডিভোর্স হয়ে যাক আমার মতো?
আমি চিরকালই একটু ইমোশনাল ছিলাম। এখনও আমার গলা ধরে এল – একদিনে এতকিছু একসাথে ওভারডোজ হয়ে যাচ্ছে।
- কি করব আমি? কোথায় খুঁজব তার লাভারকে? ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তো হয় আমাকে মাথার ডাক্তার দেখাতে বলবে, না হয় বলবে বেশ করেছি। তার চেয়ে যা হয় হোক, আমার কিচ্ছু জানার দরকার নেই। ত-তোমাকে ফোন করে ভুল করেছি। সরি। বাই।
- দীপু শোন, ভাই-
এবারেও আমিই কেটে দিয়েছি।
চুপচাপ বসে রইলাম কিছুক্ষন। অভিমান করে বললেও, আমার কথাগুলো যুক্তিসঙ্গত। কীভাবে জানব অনুর বন্ধুটি কে? অনুর সাথে কথা বলার সত্যি মানে হয় না। ওর সাথে শেষ কবে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছি মনে নেই। আর ভবানীপুর তো বিরাট জায়গা, আমি কি দোরে দোরে ফেরিওয়ালার মতো ডাক দিয়ে ঘুরব, বৌ…. বৌ…. আমার বৌ আছো কোন ঘরে…বৌ…বৌ…কচি বৌ
এতো দুঃখেও হাসি পেল। হাসতে যাচ্ছি, দরজায় টোকা।
- কাম ইন।
পিনাকী ঢুকে এল।
- স্যার, জেনিংসের রিপোর্টটা।
- বাহ, এর মধ্যেই হয়ে গেল?
- একচুয়ালি তেমন কিছু খোঁজাখুঁজি করতে হয় নি, স্যার। ঐ ভদ্রলোকের নিজেরই একটা ওয়েবসাইট আছে, সেটা ফলো করতেই সব পেয়ে গেলাম।
- তাই, বেশ বেশ – কি বললে?
পিনাকীকে একটু কনফিয়ুজড দেখাল।
- বললাম যে প্রোফেসর জেনিংসের ওয়েবসাইটটা ফলো করতেই সব তথ্য বেরিয়ে গেল।
- স্যার? …. আমি এখন যাই?
- অ্যাঁ? ও হ্যাঁ, যাও। থ্যাঙ্কস।
পিনাকী আরো কয়েক সেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল।
দরজাটা বন্ধ হতেই আমি ঝটপট নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলতে থাকলাম। অফ কোর্স, ফলো, ফলো, ফলো! আর আমি কিনা নিজেকে সায়েন্টিস্ট বলি, এই সামান্য জিনিসটা মাথায় এল না! অনুর লাভারকে খুঁজে বার করা তো খুবই সোজা। আমি জানি অনু মোটামুটি কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। সুতরাং, সুনন্দাদির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আর মোটামুটি একঘণ্টা বাদে অনুকে জগুবাজার বাস স্টপে দেখতে পাওয়া উচিত। আমার অফিস থেকে জগুবাজার যেতে লাগে দশ-পনের মিনিট। বাকিটা তো ডিটেকটিভ সিরিয়াল!
বাইরে বেরোবার আগে দীপালির অগ্নিদৃষ্টিতে ডানদিকটা ঝলসে গেল। মনে মনে বললাম – সরি ডার্লিং, এ আমার জীবন নিয়ে প্রশ্ন, আর অন্য কারোর মরণ নিয়ে। চুলোয় যাক চাকরি, আমি আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব।