Thread Rating:
  • 37 Vote(s) - 2.95 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller আউট অফ কলকাতা
#99
পর্ব ২৬

রুদ্রর সেই প্রশ্নের উত্তর অপেক্ষা করছিলো তাদেরই সেই সেফ হাউসে, তবে সেটাকে খুঁজে পেতে একটু অসুবিধাই হয়েছিল ওর | কাজের জিনিসপত্র খুঁজতে খুঁজতে সেফ হাউসের ঠিক পিছনদিক লাগোয়া একটা ভাঙা গ্যারাজের মধ্যে একটা আদ্যিকালের মারুতি ৮০০ আবিষ্কার করেছিল রুদ্র | 

গাড়িটার এক্সটিরিয়ার আর ইন্টিরিয়ারের অবস্থা ভালো না থাকলেও, গাড়ির ইঞ্জিনটা তখনও বেশ চাঙ্গাই ছিল । কয়েকবার স্টার্ট দিতে গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, খুব ধর্য্য নিয়ে রুদ্র সেটাকে টিউন করে আরো কয়েকবার চেষ্টা করতেই সিংহের ন্যায় গর্জে উঠল গাড়ির ইঞ্জিনটা| 'এই নাহলে মারুতি!', বলে রুদ্র হেসে উঠল| গাড়ির হেডলাইটসগুলো বাদ দিয়ে বেশিরভাগ ইলেক্ট্রিকালস ঠিকঠাকই চলছিল | রুদ্র এবার উঁকি মেরে ফুয়েল গেজের দিকে তাকাতেই বুঝলো যে তাতে যতটা তেল দেখাচ্ছিল তাতে তাদের গন্তব্যে পৌঁছনো অসম্ভব | তবে, সামান্য কিছু রিপেয়ারস করা গেলে, যেমন টাইয়ার্সগুলো পাল্টালে, কিছুটা ডিসেলের ব্যবস্থা করা গেলে, গাড়িটাকে চলার মতন বানাতে আরও কিছুদিন সময় লেগে যাবে ওর | 

সাত দিন পর, একটার পর একটা প্ল্যানের ট্রায়েল দিতে দিতে, তারা শেষমেশ একটা ফাইনাল প্ল্যান বানিয়েই ফেললো | এরি মধ্যে তিস্তাও অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল আর সবাইকে খুব অবাক করে দিয়ে তার ক্ষতটাও খুব দ্রুত সেরে উঠতে আরম্ভ করল | ওদিকে রুদ্রও এদিক ওদিক থেকে গাড়ির পার্টস জোগাড় করে গাড়িটাকে চলমান করতে সক্ষম হল| একে একে নিজেদের সব দরকারি সামগ্রী নিয়ে এসে নিজেদের অভিজানের প্রস্তুতি করে চলল, তবে ওরা চেষ্টা করলো যতটা হালকা ভাবে জিনিসপত্র নেওয়ার যাতে বিপদের মুখে পড়লে সব কিছুই নিজেদের সঙ্গে নিয়ে পালতে পারে |

তখন দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল হয়েছে, রুদ্র তাদের বাড়ির সদর দরজাটা ফাঁক করে একবার বাইরের পরিস্থিতি দেখে আবার দরজাটা বন্ধ করে দিলো | তারপর ভেতরের ঘরে ঢুকে সেই দরজাটাও বন্ধ করে দিলো |

"কিরে, সব ঠিকঠাক আছে তো...?" দীপা প্রশ্ন করল | 

"রোজ রোজ এই একই জিনিস করার কোনও মানেই নেই দীপা...এখানে কেউ আসবেনা....", রুদ্র বলে উঠল | 

"না তবুও....এই প্ল্যানটা কাউকে জানতে দেওয়া চলবে না...", বলে বাকি দুজনের দিকে তাকাল দীপা | রুদ্র তিস্তার পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসল |

"সো....প্রথমে আমরা ওই গাড়িটা করে হাওড়া স্টেশন অব্দি যাবো.....কিন্তু, আমার খুব সন্দেহ আছে যে সেটা আমাদের কতদূর সাহায্য করতে পারবে | ওটার অবস্থা দেখে আমি খুব একটা কনফিডেন্স পাচ্ছি না রুদ্র"

"ওটা নিয়ে চিন্তা করোনা দীপা, যখন চালাবো দেখবে রাস্তা দিয়ে উড়বে" রুদ্র বলে উঠল | 

"ওইটারই ভয় পাচ্ছি আমি রুদ্র, শেষে গুণ্ডাদের হাতে না মোরে, গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে মরলে তো..."

"না না দীপা-দি, রুদ্রর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে ", পাশ থেকে তিস্তা বলে উঠলো |

"সেটা আমারও আছে তিস্তা কিন্তু ওই গাড়িটার প্রতি...."

"ব্যাট দীপা, হাওড়া কেন? আমরা তো আরো কিছুটা এগিয়ে যেতে পারি, তাই না? গাড়িতে যা তেল আছে তাতে আমার আন্দাজ, বর্ধমান অব্দি যেতে পারবোই...", রুদ্র বলে উঠল | 

"এই ব্যাপারে আমরা কালকেও আলোচনা করেছি রুদ্র, তাই আমি আর রিপিট করবোনা সেগুলো, ঠিক আছে...?", বলে একটু বিরতি নিয়ে আবার দীপা বলল, " হ্যাঁ, কোথায় ছিলাম আমরা যেন...হমমম, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আমরা হাওড়া স্টেশন অব্দই ওই গাড়িটা করে যাবো, তারপর"

"তারপর...ওখানে কিছুক্ষণ ওই ভিড় ভাটটার মধ্যে ঘুরবো, মানে যদি কেউ আমাদেরকে ফলো করে তাদের সেখানে ধাপ্পা দেওয়ার জন্য....", তিস্তা বলে উঠল | 

"আর খাওয়া দেওয়ার ব্যাপারটা আমরা বাড়ি থেকেই সেরে যাবো তো?", হাতের ওপর বসে থাকা মশাটাকে মেরে বলে উঠল রুদ্র ।

"রুদ্র, খাওয়া দাওয়া ইস সেকেন্ডারি" 

"হমম, রাইট ইউ আর দীপা দি, তবে পেটে খিদে থাকলে মাথা কিন্তু কাজ করবেনা....." তিস্তা বলে উঠল | 

"হ্যাঁ সেটা ঠিক. কিন্তু আমার চিন্তা সেই ভিড়টাকে নিয়ে | ওখানে যেমন সুবিধা তেমনি অসুবিধাও আছে | বেশি ভিড়ভাট্টায় পড়লে আমাদের বিপদ বেড়েও যেতে পারে... কেউ যদি আমাদের চিনে..."

"সে সব নিয়ে কোনও চিন্তা করো না দীপা দি, আমার সঙ্গীরা সর্বদা আমার সঙ্গেই থাকবে", বলে নিজের দুই উন্মুক্ত উরুর ওপর লাগানো হোলস্টার থেকে নিজের সঙ্গীদের তুলে ধরল তিস্তা | আর সেই সাথে, ভাঙা জানালার কাঁচের মধ্যে দিয়ে শেষবেলার এক ফালি রোদ এসে সেগুলোর ওপর পরতেই ঝলমল করে সেই দুটো ।

"হমম...তুই আছিস বলে আমার ভয়টা একটু কম লাগছে তিস্তা, তুই আমাদের পাশে থাকলে আমাদের ক্ষমতা দিগুন হয়ে যায়"

"অরে দীপা দি, আমি একা কিছুই না । আমরা তিনজনে একটা টিম আর টিমের সবাই ঠিক করে নিজেদের রোল প্লে করলেই সব বিপদই মোকাবেলা করতে পারবো আমরা..."

"একদম, তাহলে কোথায় ছিলাম যেন....হ্যাঁ, ওখানে একটা জায়গা দেখে আমরা গাড়িটা ডাম্প করবো....তারপর রেল স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে করে সোজা সুজি বেরিয়ে যাবো বর্ধমানের উদ্দেশে তারপর..."

"তারপর বর্ধমানে নেমে সেখান থেকে আবার একটা লোকাল ট্রেন ধরে আসানসোলের দিকে রওনা হবো আমরা", তিস্তা বলে উঠল । এতক্ষন ধরে চুপচাপ থাকার পর রুদ্র এবার তিস্তার কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল: 

"ডাইরেক্ট কোনও ট্রান্সপোর্ট নেই? মানে বর্ধমান টু বরাকর....ব্রেক জার্নি করলে আমাদেরই অসুবিধা হবে, তাই না?"

"না রুদ্র...লাস্ট বার গেছিলাম যখন তখন দুটো মাত্র ট্রেন চলছিল, তোকে বলেও ছিলাম মনে হয় | তাই...বুঝতেই পারছিস..আর ব্রেক জার্নি করলে সব সময় যে অসুবিধা হবে তার কোনও মানে নেই...." শার্পলি বলে উঠল দীপা | 

"ওকে দেন", রুদ্র বলে উঠল, "তাহলে আসানসোল থেকে...."

"আসানসোল পৌঁছে, হয় ট্রেন বা বাস..কিন্তু রাস্তার যা অবস্থা বাস আর মনে হয় না চলছে, তাই ট্রেনেই যেতে হবে আমাদের...", দীপা নিজের কথা শেষ করেছে কি করেনি হঠাৎ 'ঠকক ঠকক' করে ওদের সামনের জানালায় একটা আওয়াজ হল | তিস্তা চকিতে নিজের বন্দুকগুলোকে বের করে আওয়াজ লক্ষ্য করে জানালার দিকে তুলে ধরল |

কিছুক্ষন নিস্তব্দ থাকার পর, আবার সেই আওয়াজ হল| রুমের মধ্যে তখন সবাই নিঃশব্দে নিজেদের মধ্যে ইশারায় কথা বলেছে| 

"রু....রু, বাথরুমে....জানালা....দিয়ে...আস্তে আস্তে", ফিসফিস করে বলে উঠলো দীপা | সেই মতন পা টিপে টিপে মেঝে থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে খুবই সন্তর্পনে বাথরুমের জানালাটা একটু ফাঁক করল রুদ্র| আর সেটা করতেই জানালার বাইরের সেই জিনিসটাকে দেখতে পেল রুদ্র | জিনিসটাকে দেখে বেশ অবাক হল সে ।

রুদ্র রুমে ফিরে এসে,"দীপা....এইদিকে এস", বলে দীপাকে ডাক দিতেই দীপা আস্তে আস্তে উঠে তার সাথে গেল | বাথরুম পৌঁছে জানালাটা ফাঁক করে সেটা দিয়ে বাইরের দিকে উঁকি মারতেই  একটা ছোট কালো রঙের পাখিকে দেখতে পেল দীপা| 

"পাখি..! আমি ভাবলাম কি না কি.....কিন্তু পাখি কি করে...?" দীপা বলে উঠলো |

"ওটা পাখি না দীপা, ওটা একটা ড্রোন....." গম্ভীর গলায় বলে উঠলো রুদ্র | 

"ড্রোন! কিন্তু কোথা থেকে? কে পাঠিয়েছে....? কি করে জানল আমরা এখানে আছি....?" দীপা প্রশ্ন করল | 

"কেউ জানে না বলেই ওইটা এসেছে...ওটা একটা রিকন ড্রোন...ওটার কাজই হচ্ছে, না ছিলো, সব জায়গা ঘুরে ঘুরে সব কিছু রেকর্ড করাবার, ডিফেন্স টেকনোলজি..."

"কিন্তু কেউ না পাঠালে, ওটা নিজে থেকেই..."

"হ্যাঁ ওটা নিজে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, যতদিন ওটার ব্যাটারি থাকবে ততদিন ওটা এইরকমই ঘুরে ঘুরে বেড়াবে, জাস্ট লাইক এ রিয়েল বার্ড | তবে এখন আর ছবি ওঠেনা মনে হয়, কারণ ছবি তোলার সময় ওর ডানার শেষের অংশে লাইট জ্বলে| ওটার দ্যাখো জ্বলছে না| ওটার আর রিকন করার ক্ষমতা নেই", রুদ্রর নিজের কথা শেষ করতে না করতে ড্রোনটা এক লাফে পাশের জানালার সামনে থেকে উঠে আবার আকাশের দিকে উড়ে চলে গেল| 

"পুরো পাখির মতন দেখতে, তাই না....?" 

"হমম..."

"তবে, এখন আর পাখি দেখতে পাস রু...?"

"না, যুদ্ধ পর আমি আর একটাও পাখি দেখতে পাইনি| আর সত্যি বলতে ওটাকে না দেখলে, পাখি যে কেমন দেখতে হয় সেটা আমি ভুলেই গেছিলাম", হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র| 

"স্পয়েলস অফ ওয়ার, চল....ঘরে চল রু, তিস্তা ওয়েট করছে ",দীপা বলে উঠল| 

ওরা আবার ঘরে ঢুকতেই, তিস্তা প্রশ্ন করল: 

"কে ছিল ওটা, দীপাদি....?"

"কে নয়, কি | ড্রোন, তবে ওল্ড জেনারেশন..." শান্ত গলায় বলে উঠল রুদ্র |

"ড্রোন?"

"হ্যাঁ, তবে  ওসব কথা থাক  এখন। আসানসোল থেকে আমরা বরাকর যাবো তারপর ওখানে সেলেব্রেশন হোটেলে গিয়ে উঠবো...."

"সেলেব্রেশন হোটেলে গেলেই ঢুকতে দেবে ওরা...? আমাদের বুকিং...."

"হ্যাঁ ঢুকতে দেবে, ঢোকার মুখে রিসেপ্সানে একটু বেশী করে টাকা খাইয়ে দিলেই আমাদের রুম দিয়ে দেবে। তারপর ওখানে কিছুদিন থেকে, নতুন ক্লুএর সন্ধান করবো আমরা", বলে একটু থামল দীপা, তারপর আবার বলল, "ব্যাস, একটুকুই আপাতত আমাদের প্ল্যান, দুজনেই ক্লিয়ার তো?"

"ক্রিস্টাল..", তিস্তা বলে উঠল...তারপর উদাসীন কণ্ঠে বলল,"জানতো দীপা দি, বস যদি এখানে থাকতেন তাহলে আমাদের এই প্ল্যান করা দেখে খুব খুশি হতেন" 

"হমম, নিশ্চয়ই", দীপা বলে উঠল, "কালকে ভোরের আলো ফোটার আগেই, আমরা বেরিয়ে পড়বো..."

রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে পরের দিনের প্ল্যানটা আরেকবার ঝালিয়ে নিলো ওরা, তারপর যে যার মতন শুয়ে পড়লো| তবে শুলেও পরের দিনের কথা ভেবে উত্তেজনায় দুটো চোখের পাতা এক করতে পারলো না ওদের মধ্যে কেউই | ঘড়িতে ঠিক চারটে বাজতেই তিনজনে বেরিয়ে পড়ল বরাকরের উদ্দেশে |

"কি বলেছিলাম না? গাড়ি উড়ে চলবে...", রুদ্র গর্বে বলে উঠলো | 

ওরা সবেমাত্র এক কিলোমিটার গাছে কি যায়নি এমন সময় দীপা হঠাৎ বলল, "রুদ্র, আমি প্ল্যানে স্লাইট চেঞ্জ করেছি..." 

"কি? মানে? চেঞ্জ, এই এলেভেণথ আওড়ে এসে? কিন্তু কেন....?", গাড়ি চালাতে চালাতে চেঁচিয়ে উঠল রুদ্র| 

"রাস্তার দিকে দ্যাখ রুদ্র...আর ওটা করেছি ডাইভারশনের জন্য...."

"কিন্তু কি চেঞ্জ....করলে?" 

"সামান্য...আমরা এই গাড়িটা করে হাওড়া যেতাম, কিন্তু এবার আমরা এটা করে ডিরেক্ট শেওড়াফুলি যাবো, সেখানে গিয়েও সেই আগের প্ল্যান মাফিক গাড়িটা একটা জায়গায় ডাম্প করে, তিনজন তিনদিকে চলে যাবো....মানে তুই আমাদেরকে এক জন এক জন করে গাড়ি থেকে নামাতে নামাতে যাবি| শেষে নিজে নেমে তুই একদিকে, আমি অন্যদিকে আর তিস্তা আরেক দিকে চলে যাবো...." দীপা বলে উঠল | 

"শেওড়াফুলি? দা ফাক! হঠাৎ শেওড়াফুলি কেন? ওখানে কি আছে?" 

"শেওড়াফুলি কারণ, ওটা একটা জনক্শন পয়েন্ট | আমি প্রোবাবিলিটি খাটিয়ে দেখেছি যে, হাওড়ায় আমাদের কেউ চিনলেও চিনতে পারে, কিন্তু ওখানে কেউ আমাদের চিনবে না | মোরভার, ওখানে ভিড়েও আমরা গা ঢাকা দিতে পারি আর ভিড়টাও বেশি হবে না |" 

"দেখলে তো? সেই আমার কথাই ফলো করলে, বলছিলাম চলো বর্ধমান চলে যাই, কিন্তু নাহঃ! গাড়ি উড়ে যাবে...", রুদ্র বলে উঠল, " বাইদা ওয়ে, ওখানে গিয়ে করবো কি আমরা?" 

"ঘোরাঘুরি করবো, তারপর ঠিক দু ঘণ্টা বাদে, সবাই স্টেশনে ঢুকবো, তবে এক সাথে নয়, তিনজন আলাদা আলাদা...", দীপা বলে উঠল | 

"আবার আলাদা আলাদা কেন, ওখানে আমাদের কে চিনবে?", রুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে উঠল | 

"জানি না, তবে স্টেশনের ভেতরে ঢুকবো নিজেদের মধ্যে ডিসটেন্স বজায় রেখে..যাতে না কেউ আমাদের একসাথে বলে সন্দেহ করে..." বলে দীপা থামল |

"সে নয় হল, কিন্তু ট্রেন কখন...?"

"সাড়ে নটায়, তাই কোনও অসুবিধে হবে না....", পেছন থেকে তিস্তা বলে উঠল | 

প্ল্যান অনুযায়ী ওদের শেওড়াফুলি স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছতে লাগলো দেড় ঘণ্টা | প্ল্যান মাফিক একজন একজন করে নামাতে নামাতে চলল রুদ্র| প্রথমে তিস্তা, তারপর দীপা, দুজনেই নেমে গেল | তবে নামার আগে দীপা বলল:  

"ঠিক দেড় ঘন্টা পর, মনে থাকে যেন, তোর কাছে ফোন আছে আর আমাদের কাছে ঘড়ি...", বলে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল দীপা | রুদ্র আরো কিছুটা গিয়ে, গাড়িটাকে ঝোঁপজঙ্গল দেখে এক পাশে ডাম্প করে সেটাকে শেষ বিদায় জানিয়ে নেমে পড়লো |

দু পা হাঁটতেই সামনেই শেওড়াফুলি স্টেশন দেখতে পেলো রুদ্র | 'শালা, এই সকালেও এত ভিড়!', মনে মনে বলে উঠল রুদ্র | রুদ্র ভালো করে স্টেশনের ঢোকার জায়গাটা দেখে নিয়ে এবার অন্যদিকে হাঁটা লাগল | আকাশে তখন হালকা আলোর রেশ ফুটেছে | 

রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা পরো বাজারে এসে পৌঁছলো রুদ্র | সেই জায়গার অবস্থা দেখে তার মনে হল যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ সেইখানে এসেই যেন উপস্থিত হয়েছে | পেন থেকে পেন্সিল, রোল থেকে রুলার সব কিছুই বিক্রি হচ্ছে সেখানে| 'এত সকালেও এখানে এত লোকজন কেন?'  

কোন রকমে ভিড় ঠেলে বাজারে ঢুকল রুদ্র| বাজারে ঢুকে বুঝল যে, এই জায়গায় সব জিনিসপত্রের দাম কম, মানে তাদের শহরের তুলনায় অনেকটাই কম | আর দাম কম দেখে দরকারি কিছু জিনিসপত্র কিনে ফেলল ও। এই দোকান, সেই দোকান ঘুরে জিনিসপত্র দেখতে দেখতে অবশেষে  ক্লান্ত হয়ে পড়লে, সেই ভিড় থেকে বেরিয়ে কিছুটা হেটে গিয়ে, একটা দোতলা বাড়ির রোয়াকে গিয়ে বসল রুদ্র | কিছুক্ষণ সেখানে বসে জিরতে লাগল ও| 

"আরে এটা কে গো রুপা...? ওহঃ এতো হ্যান্ডউ বাবুজে", পাশ থেকে মেয়েলী কণ্ঠে কেউ একজন বলে উঠল | হঠাৎ সেই কণ্ঠ শুনে রুদ্র একটি থতমত হয়ে গেল, তারপর নিজেকে সংযত করে সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে নিজের মাথাটা সেই দিকে ঘোরাতেই, দুজন মহিলাকে দেখতে পেল সে । তারা দুজনেই সেই রোয়াকের সংলগ্ন সদর দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে | রুদ্র তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করল যে দুজনেরই বেশে কেমন একটা উগ্রতা আছে | তাদের দুজনেরই পরনে সারি কিন্তু বেশে চকচকে জাতীয় আর দুজনেরই বেশ মেকাপ করা | 

ওদিকে রুদ্রকে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওদের মধ্যে একজন বলল: 
"কি গো বাবু, কি দেখছো অমন করে? আগে কোনোদিন মেয়েছেলে দেখোনি নাকি?" বলে খিলখিল করে হেসে উঠে রুদ্রর পাশে এসে বসল সেই মহিলাটি, তারপর আবার বলল, "কি গো বাবু, এখানে এই সময়ে তুমি বসে আছো যে? রাতের জন্য তস সইছে না বুঝি...?" 

রুদ্র খুবই অপ্রস্তুত হয়ে বলল,"মা...মানে কিসের..?" 

"এরে বাবা, এইখানে এসে কারা বসে সেটা জানো না বুঝি, নেকু কোথাকার", বলে রুদ্রর উরুর ওপর নিজের হাত রাখল সেই মহিলাটি, আর হঠাৎ সব কিছু জলের মতন পরিস্কার হয়ে গেল রুদ্রর কাছে | 

রুদ্র বলল : "ওঃ সরি, আমি বুঝতে পারিনি একদম! আমি এখানে....আমি যাই হ্যাঁ"

এই বলে সেখান থেকে উঠতে যেতেই পাশে বসে থাকা সেই মহিলাটি ওর পথ আটকে বলল,"এখানে কেউ কখনো ভুল করে আসেনা বাবুগো, কিন্তু তোমাকে দেখে ভদ্দরলোক বলেই মনে হচ্ছে | তবে তুমি এখানে, মানে রুপার ডেরায় এসেছ যখন, তখন তোমাকে খালি হাতে ফিরতে দেবো নাকো আমরা..."

"না না! আপনাদের ভুল হচ্ছে কোথাও! আমি আর আমার, তারা আছে, আমি যাই...."

"আরে বাবু, তুমি এখানে এসে এইরকম ভাবে চলে গেলে রুপার খুব খারাপ লাগবে, কি তাই না রুপা দি..?" 

"হ্যাঁ রে লিপা! এই দেখ, আমি কাঁদছি! ভেউ ভেউ ভেউ", বলে উঠতেই আবার ওরা দুজন খিলখিল করে হেসে উঠল | 

ওদিকে রুদ্রর অবস্থা খারাপ, কি করবে, কি বলবে বুঝতে পারছেনা এমন সময় হঠাৎ ওর হাতটা নিজের হাতে চেপে ধরে সেখান থেকে উঠে পড়লো সেই লিপা নামক মহিলাটি, তারপর বলল," ভেতরে চল...." 

রুদ্রর হাতটা ধরে সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকল লিপা, তারপর সামনের সিঁড়ি বেয়ে ওপর তলায় উঠতেই আরও কিছু মহিলাদের সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো ওরা | তাদেরই মধ্যে একজন বলল : 

"কি রে লিপা, এখন? এত সকালে? তুই সত্যি শালী...একনম্বরের পিয়াসী" 

"আরে না রে টেঁপি, বাবু রাস্তা ভুলে এখানে চলে এসেছিল....তাই তাকে এখন রাস্তা দেখতে নিয়ে যাচ্ছি", লিপা বলে উঠল আর সেটা শোনামাত্রই সবাই মিলে একসাথে হেসে উঠলো |

"আরে যা..যা, ভাল করে রাস্তা দেখা বাবুকে..."

সামনের করিডোর দিয়ে যেতে যেতে রুদ্র লক্ষ্য করল যে প্রতিটা ঘরের দরজা তখনও লাগান । ওরা হাঁটতে হাঁটতে সেই তলার একদম কোনার শেষ ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল| লিপা তারপর সামনের দরজাটা ঠেলতেই দরজাটা খুলে গেল | তারপর রুদ্রকে টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে লাইট আর পাখা চালিয়ে দিলো লিপা।

"এই....এই...এখানে বস বাবু", বলে রুদ্রকে নিয়ে গিয়ে একটা খাটের উপর বসিয়ে দিলো | সব কিছুই এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছিলো যে রুদ্র ঠিক করে সব কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না, তবে মাথা ঘুরিয়ে ঘরের আসবাবের দিকে তাকাতেই নিজেদের সেই বস্তি বাড়ির কথা মনে পড়ে গেলো রুদ্রর | ঘরের মধ্যে সেই পরিচিত দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেল সে।

"তবে বাবু....বলো এবার...কি সেবা করবো তোমার....?", লিপার কথায় সম্ভিত ফিরতেই আবার ওর দিকে তাকাল রুদ্রর: 

"না আমার কিছু....."

"আরেহ বাবা....লজ্জা পাচ্ছ কেনও? দাঁড়াও তোমার কাছে যাই", বলে রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ালো লিপা | তারপর হঠাৎ নিজের শাড়ীর আঁচলটা ফেলে দিয়ে বলল, "কি? পছন্দ? দাঁড়াও...", বলে এবার রুদ্র একদম মুখের সামনে এসে দাঁড়াল লিপা| লিপার শরীর থেকে আতরের ক্ষীণ সুবাস পেলো রুদ্র| হয়তো কাল রাতে লাগিয়ে সে| 

"কি গো বাবু...সব কিছুই কি বলে দিতে হবে নাকি....? উফফ ভালো লাগে না আর, এত লাজুক হলে এইখানে কেনও আসো তোমরা, বলতো?", বলেই রুদ্রর হাতটা ধরে নিজের মাইয়ের ওপরে রাখল লিপা | "কি ভালো...ভালো লাগছে বাবু ? আহ্হ্হঃ আরেকটু জোরে টেপ আহঃ"

অনেকদিন বাদে কোনও মহিলাকে স্পর্শ করার ফলে রুদ্রও এবার আস্তে আস্তে উত্তেজিত হতে লাগল, সেই সাথে ওর জড়তাও কাটতে লাগল | এবার লিপার ভারী মাইজোড়া হাতে নিয়ে টিপতে টিপতে তার উন্মুক্ত পেটের ওপর হাত বোলাতে লাগল রুদ্র |

"এইতো...আহ: লজ্জা কাটতে আরম্ভ উঃ করেছে আমার বাবুমশাইয়ের আহহহ....", বলে শীৎকার নিতে লাগলো লিপা |

"এই বাবু....শুধু টিপলেই হবে? এইবার তো আসল কাজটা করতে হবে আমাদের.....তাই না?", বলে বিছানার উপর উঠে বসলো লিপা, তারপর বালিশে হেলান দিয়ে আস্তে আস্তে নিজের সায়াটা হাঁটু অব্দই তুলল । তারপর রুদ্রর দিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁটটাকে কামরে ধরল | তারপর আস্তে আস্তে সায়াটা আরও একটু ওপরে তুলতেই রুদ্রর চোখের সামনে রুপার যোনি বেরিয়ে পড়ল| অনেকদিন পর চোখের সামনে যোনিদেশ তও আবার কেশমুক্ত অবস্থায় দেখে রুদ্রর লিঙ্গটা শক্ত হয়ে গেল |  

"আইইই বাবু....কর না গো...ইসসসস", বলে নিজের একটা আঙ্গুল মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে, সেটাকে পিচ্ছিল করে নিয়ে আস্তে আস্তে সেটাকে নিজের ফাটলের ভেতর ঢোকাল রুপা, সেই সাথে 'আহ্হ্হ' বলে শীৎকার করে উঠল | 

সে এমনই দৃশ যেটা দেখে সব পুরুষই কাথ হয়ে যাবে, আর রুদ্রও বাতিক্রম ছিল না । তবে রুদ্রর খাঁড়া হয়ে গেলেও কিছু একটা কারণের জন্য সে নিজের মন থেকে সেই কাজটা করতে মেনে নিতে পারল না |

"এই বাবু....আবার কি হল? এতো লজ্জা তোমার! সত্যি, দাড়াও..." বলে রুদ্র পাশে এসে বসলো লিপা | তারপর ফট করে রুদ্রর প্যান্টের ওপর হাত দিতেই চমকে গেল, "ইসসস বাবু খুব কষ্ট হচ্ছে না তোমার....ইসসসস ওঃ মা গো...কি শক্তই না করে ফেলেছ", বলে রুদ্রর প্যান্টের ওপর দিয়ে ওর বাঁড়ার ওপরটা ঘষা দিতেই আরামে রুদ্রর চোখ বন্ধ হয়ে গেল | সেই ফাঁকে লিপা আস্তে আস্তে রুদ্রর প্যান্টের চেন টানতে যেতেই খপ করে ওর হাতটা চেপে ধরে শান্ত গলায় রুদ্র বলল, "না..."

নিজের জীবনে এই প্রথম কাউকে এইভাবে ব্যবহার করতে দেখে খুবই অবাক হল লিপা | রুদ্রর প্যান্টের ওপর থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, "কেনও গো বাবু...কোনও অসুবিধা আছে? মানে রোগ টোগ...."

"না...সে সব কিছুনা লিপা দি, আমি জাস্ট এটা তোমার সাথে করতে পারবোনা..", আবার শান্ত গলায় বলে উঠল রুদ্র | 

"কিন্তু কেন বাবু? আমি....আমায় ঠিক লাগছিনা তোমার..? আমার মাইগুলো আগের চেয়ে একটু ঝুলে গাছে ঠিকি, তবে এখনও আমি বেশ টাইট আছি......", বলে আবার নিজের সায়া তুলে ধরে নিজের যোনি রুদ্রর সামনে উন্মুক্ত করলো লিপা| 

"না না লিপা দি, তুমি খুবই সুন্দরি তাতে কোন সংশয় নেই...তবে তোমার শরীরটাকে আমি কোনোমতেই ভোগ করতে পারবোনা| আমি অন্যদের মতন নোই গো..." বলে লিপার সায়াটা ধরে আস্তে আস্তে নীচের দিকে নামিয়ে দিলো রুদ্র|

"তোমাকে টাকা দিতে হবে না বাবু.."

"না, লিপাদি" 

"কিন্তু কেনও?", লিপা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠল | 

"শরীর এক জিনিস চাইলেও, মন আরেক জিনিস চায় লিপা দি তাই! আর আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি....."

রুদ্রর কথা শুনে খুবই অবাক হল লিপা | তার যে শরীর দেখলে যে কোনও পুরুষ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পরে সেই শরীর দেখে রুদ্রর কাছে সেই কথা শুনে লিপা খুব অবাক হল আর সাথে সাথে রুদ্রর মুখটা নিজের বুকে চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকে জড়িয়ে রইল লিপা, তবে স্নেহ ভোরে| অবশেষে কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে বসে লিপা বলল : 

"তুমি যাও বাবু...এখানে আমাদের মধ্যে তোমার জায়গা নয়...তুমি চলে যাও বাবু...", বলে নিজের মাথা নিচু করে নিলো লিপা | সেই দেখে রুদ্র তার দিকে ঘুরে আস্তে আস্তে তার মাথাটা তুলে তার চোখের চোখ রেখে বলল, "তোমাকে আমি দিদি বলেছি...তাই তো, তাহলে দিদির মন খারাপ হলে ভাইয়েরও মন খারাপ হবে...."

"এই দশ বছর ধরে অনেক লোক দেখেছি বাবু....তবে তোমার মতন লোক কোনদিনও দেখিনি.....তুমি...তুমি এখানে কোথায় এসেছ বাবু...? কথায় থাক", লিপা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করল |  

"কোথাও না লিপা দি....আমি এই বাজারে ঘুরছিলাম | একটু পরেই ট্রেনে করে অনেক দূরে চলে যাবো....ক্ষণিকের অতিথি আমি...লিপা দি"

"কাজে যাবে? কবে ফিরবে?"

"হ্যাঁ, কাজে তবে...."

"আচ্ছা...তাহলে যাও বাবু, দেখবে যে কাজ করতে যাচ্ছে সেটাতে নিশ্চই সফল হবে তুমি, এইটি আমি, লিপা বলে দিলুম...", বলে রুদ্রর মাথায় নিজের হাত রাখল লিপা | 

"তাই যেন হয়..লিপা দি...তাই জানো হয়", বলে পকেট থেকে ফোনটা বের করে তাতে সময় দেখতেই রুদ্র বুঝল অনেক দেরি হয়ে গেছে আর সাথে সাথেই বিছানা থেকে উঠে পড়ল| তারপর কি মনে হতে পকেট থেকে কিছু টাকা বার করে লিপার দিকে এগিয়ে দিলো |

"একি ভাই! না..না..আমি ও টাকা নিতে পারবো না...ও টাকা..."

"তোমার ভাই দিয়েছে মনে করে রেখে দাও লিপা দি....", বলে দরজার সামনে গিয়ে দরজার ছিটকিনিটা খুলল রুদ্র, তারপর শেষ বারের জন্য পেছন দিকে ঘুরে বলল "আসছি লিপা দি, আর হয়তো কোনোদিনও আমার সঙ্গে দেখা হবে না, তাই এই ভাইটার কথা ভেবে নিজের খেয়াল রেখো ", বলে দরজা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল সে |

ঘরের বাইরে বেরোতেই অন্য মহিলারা ওকে দেখে খিল খিল করে হেসে উঠলো ।

"কি গো বাবু.....আমাদের লিপা সুখ দিলো তো....? কোনও আওয়াজ যে পেলাম না...!", এইরকম নানান কথা রুদ্রর ভেসে এলো, কিন্তু সে তাতে কোনো কান না দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিচে নেমে গেল, তারপর বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসে দৌড় লাগলো স্টেশনের উদ্দেশে |

তবে রুদ্রর অজান্তেই সেই পুতুল বাড়ির ব্যালকনি থেকে তার দিকে হাত নাড়লো লিপা, 'তার ভাইয়ের' দিকে। সেটাই হয়তো তাদের প্রথম আর শেষ দেখা |
[Image: Nep5awV.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আউট অফ কলকাতা - by Anuradha Sinha Roy - 09-12-2024, 02:37 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)