06-12-2024, 12:48 AM
গল্প টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে, লেখক দায়ী নয়। পরুন উপভোগ করুন।
দিনটা একটু বেশি ই ব্যস্ত গেল। মনে হয় সন্ধ্যা থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন রোগী দেখলাম। হাঁপিয়েই গেছি বলা যায়। ডাক্তারদের জীবনের এই এক ঝামেলা। যখন রোগীর সিরিয়াল লাগে, লেগেই থাকে। হাঁপিয়ে যাই বলা যায়।
মাঝারী আকারের চেম্বার টাতে আমার চেয়ার, টেবিল এবং খাট রাখবার পর কোন জায়গা বাকি নেই। তার উপর টেবিলের পাশে এক গাদা ওষুধের বাক্স। গাধা রাজীব টাকে কতবার বলেছি এগুলো ফেলতে। কোন পাত্তা ই নেই হারাম জাদার। আজকে যাবার সময় একটা ঝাড়ি দিতেই হবে। এছাড়া কোন উপায় দেখছিনা।
এই ছোট ক্লিনিক টাতে বসছি আজ নিয়ে প্রায় ৯ মাস। খুব একটা রোগী আসেনা এদিকটাতে। কিন্তু হঠাত হঠাত চাপ বেড়ে যায়। তখন সামলানো যায়না প্রায়। কিন্তু এটাই জীবন হয়ে এসেছে। কি আর করার। বাসায় আমার স্ত্রী সাইকা অপেক্ষা করছে। আর একমাত্র ছেলে হিমাংশু এর কলেজের পরীক্ষা ও সামনে। ও আচ্ছা হ্যা আজকে যাবার সময় হিমাংশু এর জন্য একটা স্কেল কিনে নিয়ে যেতে হবে। বার বার বলেছে ও।
এপ্রোন টা খুলে চেয়ারে রেখে দিয়েছি অনেক ক্ষণ আগেই। শীত কাল শেষ। গরম টা হালকা হালকা পড়তে শুরু করেছে। এসি টা আজই অনেক দিন পর ছেড়েছি। এই হারামজাদা ও একটা ঘট ঘট শব্দ করেই চলেছে। কি জালাতন।
আজ আর মনে হয় না রোগী আসবে। সম্ভাবনা খুবই কম। হাতের ঘড়ি টা দেখলাম। প্রায় ১১ টা। নাহ। অসম্ভব। কোন রোগী এই সময় এই গলির মাথায় দেড় তলার ক্লিনিকে আসবেই না অসম্ভব।
উঠে দাঁড়ালাম। কোমর টা লেগে গেছে বাপরে। একটু আড় মোড়া ভেঙ্গে সোজা হয়ে প্যান্ট টা ঠিক করে নিলাম। আজকে বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবো। মাথা ভন ভন করছে কথা বলতে বলতে।
হেটে আস্তে রুমের দরজা টা ঠেলে বের হয়ে আসলাম। ক্লিনিকের লম্বা করিডোরে সাড়ি সাড়ি চেয়ার রাখা। কেউ নেই। রাজীব হারাম জাদা ঝিমুচ্ছে। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ধর ফর করে উঠে দাঁড়ালো।
- স্যার, কিছু লাগবে?
- নাহ। সারাদিন তো ঝিমুলি !
- না না স্যার কোথায়! ওই একটু চোখ টা লেগে গেছিল আর কি!।
- হুম তাই দেখছি। কাল এসে আমি যদি চেয়ারের পাশের ওই ওষুধের বাক্স দেখি, তোর খবর আছে।
জিহ্বাতে কামড় দিয়ে মাফ চাইলো রাজীব। আমি বললাম,
- আর কেউ কি আছে?
- না স্যার নেই।
- আচ্ছা তাইলে গুছা সব। বের হবো।
রুমে ফিরে আসলাম। রাজীব সব আস্তে আস্তে গুছাচ্ছে, সে শব্দ পাচ্ছি। নিচে গ্যারেজে গাড়ি রাখা। ড্রাইভ করে যেতে হবে চিন্তা করেই ক্লান্ত লাগছে। ব্যাগ টা গোছানো হয়ে গেছে। এমন সময় দরজায় নক। ঠক ঠক ঠক,
- কে?
- স্যার আমি রাজীব।
- বল রাজীব।
রাজীব আস্তে দরজা ঠেলে মাথা ঢুকালো,
- স্যার পেশেন্ট।
- উফফফফ। আজ আর না।
- আচ্ছা স্যার না করছি।
- এই দারা। কয়জন?
- একজন ই স্যার। একটা ছেলে।
- ছেলে?
- হ্যা স্যার।
- আচ্ছা পাঠা।
রাজীব দরজা চাপিয়ে বলল কাউকে ভিতরে যেতে।
দরজা ঠেলে একটি ছেলে ঢুকল। একটা ঢোলা ঢালা প্যান্ট পরা, আর একটা মাঝারি ফুল হাতার টি শার্ট। চোখে একটু হাল্কা ভারী ফ্রেমের চশমা। ছেলেটা বেশ অস্থির লাগছে।
আমি ব্যাগ গুছাতে গুছাতেই বললাম।
- এসো। বসো।
ছেলেটা বসলো। লক্ষ্য করলাম ও বেশ অস্থির এবং কেমন যেন ছট ফট করছে। চোখ কেমন অস্থির। ছেলেটার বয়স ২১ বা ২২ হবে যা বুঝতে পারলাম। কিন্তু এমন ছট ফট করছে কেন! কিছু একটা বলবে বুঝতে পারছি। কিন্তু কি!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
- হ্যা বল কি হয়েছে?
ছেলেটার অস্থিরতা যেন আরো বেঁড়ে গেল। কেমন যেন করছে সে ক্রমাগত। হঠাত বলে বসল,
- কিছুনা। দুঃখিত।
বলে উঠে বের হয়ে চলে গেল। আরে আজব! কিছুই বুঝতে পারলাম না। এমন করল কেন!
রাতে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত ছেলেটার কথা মাথায় ঘুরতে লাগলো। কি আজব! কি বলতে এসেছিল ছেলেটা! আর এভাবে হুট করে চলেও কেন গেল! কাহিনীটা কি!
বাসায় গিয়ে বার বার মাথার মধ্যে চিন্তা টা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলেটার রহস্য টা মনের মধ্যে যেন তীরের মত গেঁথে আছে। খাবার টেবিলে অন্যমনস্ক দেখে সাইকা জিজ্ঞাসা করলো
- এই কি হয়েছে? এত কি ভাবছ?
- আরে আজকে কি হয়েছে জানো!
- কি?
- একটা ছেলে এসেছে। একদম শেষে। এসে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু শেষে না বলে হুট করে চলে গেল।
- ওমা। কেন?
- আরে জানিনা তো। জানলে না বলবো।
- বাদ দাও। কিছু একটা হয়েছিল হয়ত তাই এসেছে। লাগলে আবার নিজেই আসবে।
আমি আর কিছু বললাম না। সারা রাত ঘুমানোর আগ পর্যন্ত হিসাব মিলানোর চেষ্টা করলাম। কি হতে পারে! কেন এমন করলো।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরেছি কখন টের পাইনি। সকালে উঠে তাড়া হুড়া করে হিমাংশুকে কলেজে দিয়ে চলে গেলাম ক্লিনিকে।
ঢুকতেই দেখি করিডোরে চেয়ার ভর্তি এক গাদা লোক। ধুর। আজ আবার এক গাদা প্রেশার।
রুমে ঢুকে দেখে হারামজাদা রাজীব সব বাক্স সরিয়ে ফেলেছে। বেচে গেছে হারামজাদা। নাহলে ওর খবর ছিল। আরাম করে রুমে বসতেই রাজীব চায়ের কাপ টা রেখে গেল। ধোয়া ওঠা চা টা নিয়ে দিন শুরু করলাম।
একের পর এক পেশেন্ট দেখেই যাচ্ছি। কোন থামাথামি নেই। কিন্তু আমার মনের একদম গহীনে সেই প্রশ্ন। সেই ছেলেটা! কি চায় ও। কেন গেল। খুত খুত করছেই খালি আমার মনে।
নাহ এর উত্তর না পেলে আমি পাগল হয়ে যাবো। একটা পেশেন্ট ছেড়ে ঢুকবার আগে আমি আমার বেল চাপ দিলাম। রাজীব এসে হাজির।
- জি স্যার।
- আচ্ছা রাজীব, কাল রাতে একটা ছেলে এসেছিল মনে আছে একদম শেষে।
- জি স্যার।
- ওর কোন ঠিকানা বা কিছু আছে কি?
- উম না তো স্যার।
- ফোন নাম্বার? ফোন নাম্বার তো আছে। যেটা দিয়ে এপয়েন্ট মেন্ট নিয়েছে।
- হ্যা তা আছে স্যার।
- দে তো।
রাজীব বাহিরে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর একটা কাগজে নাম্বার টা লিখে নিয়ে এলো। ফোন টা বের করে নাম্বার টা ডায়াল করলাম। রিং হচ্ছে। আমার হার্ট বিট ও কেন যেন সাথে সাথে বাড়ছে। রিং বেজে চলেছে, বেজে চলেছে। না ধরবে না বুঝে গেছি। ভুয়া নাম্বার দিয়েছে। ফোন টা কান থেকে নামাবো এমন সময় ওই পাশ থেকে রিসিভ করলো কেউ একজন।
- হ্যালো
আওয়াজ শুনে বুঝলাম সেই ছেলেটি। আমি বললাম,
- হ্যালো। হ্যা আমি ডাক্তার সাহেব বলছি। কাল তুমি আমার চেম্বারে এসেছিলে।
কোন কথা নেই। চুপ চাপ অপর পাশ।
আমি বললাম,
- হ্যালো, হ্যালো!
- জি। হ্যা আমি চিনতে পেরেছি। বলুন।
- তুমি কাল এসেছিলে কিছু একটা বলতে। না বলে চলে গেলে যে!
- জি আসলে আমি বলতে চাচ্ছিনা তাই।
- কিন্তু কেন? কোন সমস্যা থাকলে অবশ্যই তোমার শেয়ার করা উচিত।
- আমার মনে হয়না আপনি আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন।
- কেন?
- আমার মনে হচ্ছে।
- সমস্যা টা কি সেটা না বললে কিভাবে বলব!
- আমার সমস্যা টা সাধারণ সমস্যা না।
- আচ্ছা তুমি আজ এসো। বল আমাকে কি সমস্যা। না পারলে আমি তো মানা ই করে দেবো। কিন্তু হতেও পারে আমি সাহায্য করতে পারবো তোমাকে।
- আচ্ছা।
- তুমি ফিস নিয়ে ভেবোনা। এসো।
- আমি রাতে আসবো তাহলে।
- আচ্ছা। আসবে অবশ্যই। আমি অপেক্ষা করবো।
- জী আচ্ছা।
ফোন রেখে দিলাম। একটা বড় দম নিলাম। যাক আসবে। কিন্তু কি এমন সমস্যা ওর! আমার ডাক্তারি জীবনে কম সমস্যা দেখিনি আমি। উদ্ভট, বিশ্রী, ভয়ঙ্কর। কিন্তু এটা কি সমস্যা!
দিনটা একটু বেশি ই ব্যস্ত গেল। মনে হয় সন্ধ্যা থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ জন রোগী দেখলাম। হাঁপিয়েই গেছি বলা যায়। ডাক্তারদের জীবনের এই এক ঝামেলা। যখন রোগীর সিরিয়াল লাগে, লেগেই থাকে। হাঁপিয়ে যাই বলা যায়।
মাঝারী আকারের চেম্বার টাতে আমার চেয়ার, টেবিল এবং খাট রাখবার পর কোন জায়গা বাকি নেই। তার উপর টেবিলের পাশে এক গাদা ওষুধের বাক্স। গাধা রাজীব টাকে কতবার বলেছি এগুলো ফেলতে। কোন পাত্তা ই নেই হারাম জাদার। আজকে যাবার সময় একটা ঝাড়ি দিতেই হবে। এছাড়া কোন উপায় দেখছিনা।
এই ছোট ক্লিনিক টাতে বসছি আজ নিয়ে প্রায় ৯ মাস। খুব একটা রোগী আসেনা এদিকটাতে। কিন্তু হঠাত হঠাত চাপ বেড়ে যায়। তখন সামলানো যায়না প্রায়। কিন্তু এটাই জীবন হয়ে এসেছে। কি আর করার। বাসায় আমার স্ত্রী সাইকা অপেক্ষা করছে। আর একমাত্র ছেলে হিমাংশু এর কলেজের পরীক্ষা ও সামনে। ও আচ্ছা হ্যা আজকে যাবার সময় হিমাংশু এর জন্য একটা স্কেল কিনে নিয়ে যেতে হবে। বার বার বলেছে ও।
এপ্রোন টা খুলে চেয়ারে রেখে দিয়েছি অনেক ক্ষণ আগেই। শীত কাল শেষ। গরম টা হালকা হালকা পড়তে শুরু করেছে। এসি টা আজই অনেক দিন পর ছেড়েছি। এই হারামজাদা ও একটা ঘট ঘট শব্দ করেই চলেছে। কি জালাতন।
আজ আর মনে হয় না রোগী আসবে। সম্ভাবনা খুবই কম। হাতের ঘড়ি টা দেখলাম। প্রায় ১১ টা। নাহ। অসম্ভব। কোন রোগী এই সময় এই গলির মাথায় দেড় তলার ক্লিনিকে আসবেই না অসম্ভব।
উঠে দাঁড়ালাম। কোমর টা লেগে গেছে বাপরে। একটু আড় মোড়া ভেঙ্গে সোজা হয়ে প্যান্ট টা ঠিক করে নিলাম। আজকে বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবো। মাথা ভন ভন করছে কথা বলতে বলতে।
হেটে আস্তে রুমের দরজা টা ঠেলে বের হয়ে আসলাম। ক্লিনিকের লম্বা করিডোরে সাড়ি সাড়ি চেয়ার রাখা। কেউ নেই। রাজীব হারাম জাদা ঝিমুচ্ছে। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ধর ফর করে উঠে দাঁড়ালো।
- স্যার, কিছু লাগবে?
- নাহ। সারাদিন তো ঝিমুলি !
- না না স্যার কোথায়! ওই একটু চোখ টা লেগে গেছিল আর কি!।
- হুম তাই দেখছি। কাল এসে আমি যদি চেয়ারের পাশের ওই ওষুধের বাক্স দেখি, তোর খবর আছে।
জিহ্বাতে কামড় দিয়ে মাফ চাইলো রাজীব। আমি বললাম,
- আর কেউ কি আছে?
- না স্যার নেই।
- আচ্ছা তাইলে গুছা সব। বের হবো।
রুমে ফিরে আসলাম। রাজীব সব আস্তে আস্তে গুছাচ্ছে, সে শব্দ পাচ্ছি। নিচে গ্যারেজে গাড়ি রাখা। ড্রাইভ করে যেতে হবে চিন্তা করেই ক্লান্ত লাগছে। ব্যাগ টা গোছানো হয়ে গেছে। এমন সময় দরজায় নক। ঠক ঠক ঠক,
- কে?
- স্যার আমি রাজীব।
- বল রাজীব।
রাজীব আস্তে দরজা ঠেলে মাথা ঢুকালো,
- স্যার পেশেন্ট।
- উফফফফ। আজ আর না।
- আচ্ছা স্যার না করছি।
- এই দারা। কয়জন?
- একজন ই স্যার। একটা ছেলে।
- ছেলে?
- হ্যা স্যার।
- আচ্ছা পাঠা।
রাজীব দরজা চাপিয়ে বলল কাউকে ভিতরে যেতে।
দরজা ঠেলে একটি ছেলে ঢুকল। একটা ঢোলা ঢালা প্যান্ট পরা, আর একটা মাঝারি ফুল হাতার টি শার্ট। চোখে একটু হাল্কা ভারী ফ্রেমের চশমা। ছেলেটা বেশ অস্থির লাগছে।
আমি ব্যাগ গুছাতে গুছাতেই বললাম।
- এসো। বসো।
ছেলেটা বসলো। লক্ষ্য করলাম ও বেশ অস্থির এবং কেমন যেন ছট ফট করছে। চোখ কেমন অস্থির। ছেলেটার বয়স ২১ বা ২২ হবে যা বুঝতে পারলাম। কিন্তু এমন ছট ফট করছে কেন! কিছু একটা বলবে বুঝতে পারছি। কিন্তু কি!
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
- হ্যা বল কি হয়েছে?
ছেলেটার অস্থিরতা যেন আরো বেঁড়ে গেল। কেমন যেন করছে সে ক্রমাগত। হঠাত বলে বসল,
- কিছুনা। দুঃখিত।
বলে উঠে বের হয়ে চলে গেল। আরে আজব! কিছুই বুঝতে পারলাম না। এমন করল কেন!
রাতে ক্লিনিক থেকে বের হয়ে গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত ক্রমাগত ছেলেটার কথা মাথায় ঘুরতে লাগলো। কি আজব! কি বলতে এসেছিল ছেলেটা! আর এভাবে হুট করে চলেও কেন গেল! কাহিনীটা কি!
বাসায় গিয়ে বার বার মাথার মধ্যে চিন্তা টা ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলেটার রহস্য টা মনের মধ্যে যেন তীরের মত গেঁথে আছে। খাবার টেবিলে অন্যমনস্ক দেখে সাইকা জিজ্ঞাসা করলো
- এই কি হয়েছে? এত কি ভাবছ?
- আরে আজকে কি হয়েছে জানো!
- কি?
- একটা ছেলে এসেছে। একদম শেষে। এসে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু শেষে না বলে হুট করে চলে গেল।
- ওমা। কেন?
- আরে জানিনা তো। জানলে না বলবো।
- বাদ দাও। কিছু একটা হয়েছিল হয়ত তাই এসেছে। লাগলে আবার নিজেই আসবে।
আমি আর কিছু বললাম না। সারা রাত ঘুমানোর আগ পর্যন্ত হিসাব মিলানোর চেষ্টা করলাম। কি হতে পারে! কেন এমন করলো।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরেছি কখন টের পাইনি। সকালে উঠে তাড়া হুড়া করে হিমাংশুকে কলেজে দিয়ে চলে গেলাম ক্লিনিকে।
ঢুকতেই দেখি করিডোরে চেয়ার ভর্তি এক গাদা লোক। ধুর। আজ আবার এক গাদা প্রেশার।
রুমে ঢুকে দেখে হারামজাদা রাজীব সব বাক্স সরিয়ে ফেলেছে। বেচে গেছে হারামজাদা। নাহলে ওর খবর ছিল। আরাম করে রুমে বসতেই রাজীব চায়ের কাপ টা রেখে গেল। ধোয়া ওঠা চা টা নিয়ে দিন শুরু করলাম।
একের পর এক পেশেন্ট দেখেই যাচ্ছি। কোন থামাথামি নেই। কিন্তু আমার মনের একদম গহীনে সেই প্রশ্ন। সেই ছেলেটা! কি চায় ও। কেন গেল। খুত খুত করছেই খালি আমার মনে।
নাহ এর উত্তর না পেলে আমি পাগল হয়ে যাবো। একটা পেশেন্ট ছেড়ে ঢুকবার আগে আমি আমার বেল চাপ দিলাম। রাজীব এসে হাজির।
- জি স্যার।
- আচ্ছা রাজীব, কাল রাতে একটা ছেলে এসেছিল মনে আছে একদম শেষে।
- জি স্যার।
- ওর কোন ঠিকানা বা কিছু আছে কি?
- উম না তো স্যার।
- ফোন নাম্বার? ফোন নাম্বার তো আছে। যেটা দিয়ে এপয়েন্ট মেন্ট নিয়েছে।
- হ্যা তা আছে স্যার।
- দে তো।
রাজীব বাহিরে গিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর একটা কাগজে নাম্বার টা লিখে নিয়ে এলো। ফোন টা বের করে নাম্বার টা ডায়াল করলাম। রিং হচ্ছে। আমার হার্ট বিট ও কেন যেন সাথে সাথে বাড়ছে। রিং বেজে চলেছে, বেজে চলেছে। না ধরবে না বুঝে গেছি। ভুয়া নাম্বার দিয়েছে। ফোন টা কান থেকে নামাবো এমন সময় ওই পাশ থেকে রিসিভ করলো কেউ একজন।
- হ্যালো
আওয়াজ শুনে বুঝলাম সেই ছেলেটি। আমি বললাম,
- হ্যালো। হ্যা আমি ডাক্তার সাহেব বলছি। কাল তুমি আমার চেম্বারে এসেছিলে।
কোন কথা নেই। চুপ চাপ অপর পাশ।
আমি বললাম,
- হ্যালো, হ্যালো!
- জি। হ্যা আমি চিনতে পেরেছি। বলুন।
- তুমি কাল এসেছিলে কিছু একটা বলতে। না বলে চলে গেলে যে!
- জি আসলে আমি বলতে চাচ্ছিনা তাই।
- কিন্তু কেন? কোন সমস্যা থাকলে অবশ্যই তোমার শেয়ার করা উচিত।
- আমার মনে হয়না আপনি আমার সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন।
- কেন?
- আমার মনে হচ্ছে।
- সমস্যা টা কি সেটা না বললে কিভাবে বলব!
- আমার সমস্যা টা সাধারণ সমস্যা না।
- আচ্ছা তুমি আজ এসো। বল আমাকে কি সমস্যা। না পারলে আমি তো মানা ই করে দেবো। কিন্তু হতেও পারে আমি সাহায্য করতে পারবো তোমাকে।
- আচ্ছা।
- তুমি ফিস নিয়ে ভেবোনা। এসো।
- আমি রাতে আসবো তাহলে।
- আচ্ছা। আসবে অবশ্যই। আমি অপেক্ষা করবো।
- জী আচ্ছা।
ফোন রেখে দিলাম। একটা বড় দম নিলাম। যাক আসবে। কিন্তু কি এমন সমস্যা ওর! আমার ডাক্তারি জীবনে কম সমস্যা দেখিনি আমি। উদ্ভট, বিশ্রী, ভয়ঙ্কর। কিন্তু এটা কি সমস্যা!