Thread Rating:
  • 124 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica ❣️বৌদিমণি❣️ ﴾ সমাপ্ত ﴿
পর্ব ৩৫

কয়েকদিন পরের কথা। সোহম যে আবারও মদ ধরেছে এই কথা নয়নতারা আজ নতুন জানলো।  এবং খবরটি শুনে তার চোখে জল এল। কিন্তু উপায় কি? যা হবার তা ত হবেই। তবে একটা ভরশা এই যে সে; সোহম আগের মতো মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে না। মদ সে খায়,তবে আপাতত তা পরিমাণে কম।তবে কি না পুরোনো অভ‍্যেস। না জানি কখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আবার। নয়নতারা এক মনে ঠাকুর না জপে। কেন না এখন ঠাকুর যদি কৃপা করে,তবেই  রক্ষে।


রক্ষা অবশ্য হল। তবে স্বামীর মদ খাওয়া নয়,সঞ্জয়ের দোকান। ঘটনা এক অমাবস্যার রাতের। চাঁদের আলোর অভাবে নিস্তব্ধ রাত যখন ঘুটঘুটে কালো। তখন মশালের আলো হাতে জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র হাটে এসেছিল। আসলে সঞ্জয়ের ওপড়ে জমিদার পুত্র ও খোড়া গোবিন্দের রাগ ইতিমধ্যে একটুও কমেনি। বরং দিনে দিনে সেই রাগ জমাট বেধে পর্বত সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগের বার সঞ্জয় ও তার দাদাকে ঘায়েল করেও তাদের রাগ না কমার কারণ হল এই যে; সঞ্জয়কে মারতে গিয়ে তারা বিশেষ  সুবিধা করতে পারেনি। এদিকে সঞ্জয়ের দলিল ও হেমলতা দুটোই তাদের হাত ছাড়া। সুতরাং ক্রোধের অগ্নিকাণ্ডে জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র এবারে সঞ্জয়ের দোকান গুলো জ্বালিয়ে ছাই করার চিন্তা ভাবনা করছিল। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে সেই দিন সোহম অতিরিক্ত মদ খেয়ে বাড়ি ফেরেনি। তাই নয়নতারার অনুরোধে হাটের পথে গাড়ি হাকিয়ে সঞ্জয় ও তাঁর বন্ধুটি যখন নদী ঘাটের কাছাকাছি। তখন মশাল হাতে কয়েকজন তাদের চোখে পরে। 
যদিও গাড়ির আওয়াজ ঘাটে থাকা লোকগুলোর কানে আগেই লেগেছে। তবে সঞ্জয়ের সাথে কেউ আছে এই চিন্তা না করেই, আক্রমণ করাটা তাঁদের বোকামি ছাড়া অন‍্য কিছু বলা চলে না। 

জমিদার পুত্রের লোক সংখ্যা ছিল পাঁচ। এদিক সঞ্জয়ের প্রাণ মন সব কিছুই আজকাল উত্তেজিত। সুতরাং পুরাতন মনের জ্বালা এইবার হাতে পেয়ে সঞ্জয় ইচ্ছে মতোই ঝাড়লো। কিন্তু বলতে হয় জমিদার পুত্রের প্রাণ বাঁচলো নয়নতারার দিব‍্যির জোড়েই। আর নয় তো এই ঝামেলা এতো কমে মিটতো বলে বোধহয় না। তবে রাজেন্দ্র বাঁচলেও খোড়া গোবিন্দের অবস্থা বিশেষ ভালো হলো না। এরপর যা হলো তা দুই গ্রামের মুরুব্বীদের ব‍্যাপার। সুতরাং ওতে আমার আর নাক না গলাই। শুধু কিছু কৌতুহলী পাঠকদের কৌতুহল নিবারণের জন্যে হালকাভাবে বলে রাখি; সঞ্জয়ের সাথে জমিদার পুত্রের এই কলহ কোন দিনও একদম মিটবে না। কেন না আমাদের গল্পের নায়কটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা নিজে কাধে তুলে নিতে বিশেষ ভাবে পছন্দ করে!

সে যাই হোক, এখন বলে রাখি এই ঘটনার পর থেকে নয়নকে আর সোহমের চিন্তা করতে হয়নি। কেন না এই পর থেকে সোহমের মন্দ বন্ধুবান্ধব কেটেছেটে কিছু নতুন বন্ধু বান্ধব তৈরি হলো। এতে অবশ্য তাঁর মদ খাওয়া বাদ পড়লো না,তবে আরও বৃদ্ধি পাবার উৎসাহ না পেয়ে ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। তা এই চিন্তা না হয় গেল,কিন্তু নয়নতারার আর একটা চিন্তার বিষয় ছিল। সেটি আবার সঞ্জয়কে বলা চলে না। কারণ সেই সমস্যার নাম সৌদামিনী।

সৌদামিনী বড্ড চুপচাপ। অবশ্য সঞ্জয়েরও একই অবস্থা। সুতরাং দুজন হাস‍্যজ্জল প্রাণীর হঠাৎ গম্ভীর পরিবর্তন বেশিদিন সহ‍্য করা কঠিন। কারণ এই যে, সবাই এই দুজনের আচরণের সাথে পরিচিত।তার ওপড়ে মেয়ে মহলে ইতিমধ্যে সৌদামিনী ও সঞ্জয়কে নিয়ে একটা কানাঘুষো শুরু হয়েছে। অবশ্য এই কানাঘুষো জন্যে সৌদামিনীর বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়াটাই  প্রধান কারণ। সে এমন না করলে কারোরই সন্দেহ করার কোন কারণে ছিল না। কিন্তু এখন লোকমুখে এই ঘটনা জানাজানি হয়ে গিয়েছে। বিকেল রান্নাঘরের পাশে জামতলার আসরে মাঝে মাঝেই এই বিষয়ে আজকাল আলোচনা হচ্ছে। অবশ্য তখন নয়নতারা কম বয়সীদের ধমকে থামিয়ে দেয় বটে। কিন্তু কাকীমাদের গজলা থামায় কি উপায়ে? বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে মুখের ডাকে যারা মাসি-পিসি; তারা মাঝেমধ্যে হেমকে নিয়ে বসে। একেক জন্যে একেক রকম সৎ বুদ্ধি দেয়। কেউ কেউ আবার কানে কানে স্বামীর মন বাঁধবার মন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তবে কি না হেম তাঁর দিদি ও সৌদামিনীর বুদ্ধি ব‍্যাতিত অন্য বুদ্ধি কানে তোলে না। আর নয়তো এতদিন সঞ্জয়ের সুখের নীড়ে গৃহযুদ্ধ গেলে একখানা দেখবার মতো কান্ড হতো।

কিন্তু গৃহযুদ্ধ না হয় নাই বা হল। কিন্তু এদিকে জল যতই গড়াতে লাগলো নয়নতারাও ততই ধীরে ধীরে বুঝতে লাগলো― এই বিষয়ে  কিছু একটা করা আবশ্যক। নয় ত চোখের সামনে এমন রূপের ডালি মেয়ে যেন কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। ওদিকে বৌদিমণির বিরহে সঞ্জয়েরও একই অবস্থা। তবে সেই বিরহ যন্ত্রণা মিলনের নয় শুধুমাত্র একটু কথা বলার। হয় তো দু চোখ ভরে একটু চেয়ে থাকার। কিন্তু সেই কথা বলতেই তাঁর এখন নানান সংকোচ। চোখের দৃষ্টিতে ভয় ভয় অনুভূতি।  মনে পরে একদিন নয়নতারা বলেছি; সঞ্জয় ও নয়নতারার নিষেধ এই সম্পর্কের কথা হেম জানলে কি হবে? তখন যদিও সঞ্জয় বলেছিল হেম কোনদিনও এই বিষয়ে জানবে না। কিন্তু এখন সেই কথা ভাবলেই তাঁর অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। কারণ এই যে , সঞ্জয় জানে হেমের কিছু হলে নয়নতারা নিজেক কোনদিনও ক্ষমা করতে সক্ষম হবে না। সুতরাং নিজের সুখের জন্যে দুই বোনের সম্পর্কে বিতৃষ্ণা তৈরি করার কোন মানে হয় না।

মোটের ওপড়ে নয়ন,সঞ্জয় ও দামিনীর মনে যখন এক অদৃশ্য দ্বন্দ্ব চলছে,তখন এক হাটবারের বিকেলে; ছাদের মেঝেতে  হেমলতা  সৌদামিনীর কোলে মাথা রেখে বলল,

– তুমি তাকে বড্ড ভালোবাসো তাই না দিদি?

সৌদামিনী এক মনে বই পড়ছিল। সে হেমলতার কথায় কান না দিয়েই বলল,

– কথা বলিস না হেম। পড়তে দে আমায়।

হেমলতা তখনই সৌদামিনীর বই ছিনিয়ে নিয়ে দুহাতে সেটি বুকে চেপে ধরলো।

– এত পড়ে কি হবে বলো তো? আচ্ছা, তুমি আমার সাথে আগের মত কথা বলনা কেন? সব সময় কেমন দূরে দূরে মুখ লুকিয়ে থাকো। কই আগে ত এমন ছিলে না!

– হতচ্ছাড়া মেয়ে বইটা দে বলছি। সেই কখন থেকে কোলে শুয়ে বকবক করেই চলেছিস। আমি কথা বলি না বেশ করি, অত কথা বলার সময় নেই আমার।

এই কথা শুনে  হেমের রাগ হয় । সে বই ফেলে ছাদ থেকে ছুটে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আজ আর আগের মতো সৌদামিনী তাঁর পেছনে ছুটে আসে না। সে হেমের ফেলে যাওয়া বইটি তুলে আবার পড়তে বসে।ওদিকে হেমলতা অশ্রু ভেজা চোখ নিয়ে ঢোকে দিদির ঘরে।

নয়নতারা তখন নিজের শয়ণকক্ষের বিছানায় বাবুকে  কোলে ও মন্দিরাকে পাশে বসিয়ে রূপকথা শোনাছিল। হেম সোজাসুজি ঘরে ঢুকে বিছানার একপাশে হাটু গুটিয়ে বসলো। নয়নতারা প্রথমটাই কিছু না বলে তার রূপকথা শেষ করলো। তারপর মন্দিরাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে অভিমানী বোনটির অভিযোগ শুনতে প্রশ্ন করলো।

– কি রে হেম! এভাবে মুখ ভোতা করে বসে কেন?

হেম প্রশ্নের জবাব দিল না। সত্য বলতে জবাব দেওয়ার মত কিছুই নেই তাঁর কাছে। কারণ এই যে, সে নিজেও জানে দামিনীর এমন আচরণের কারণ কি। সৌদামিনীর অতিত ও বর্তমান সবটাই  যে তাঁর জানা এখন। এমনকি এই সমস্যার সমাধানটিও হয়তো তাঁর জানা। কারণ নয়নতারা ইতিমধ্যে এই বিষয়ে বোনের সাথে কথা বলেছে। কিন্তু একটি মেয়ে হয়ে আর একটি মেয়েকে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা সরাসরি বলে কি উপায়ে। তাই নয়নতারা আলোচনার মাঝ পথে থেমে গিয়েছিল খানিক অপরাধ বোধ ও খানিক লজ্জা জনিত কারণে।  তবে নয়নের বাকি কথা বুঝতে হেমের বিশেষ অসুবিধা হয়নি। হ‍্যাঁ আমাদের হেমলতা খানিকটা বোকা বোকা মেয়ে বটে। তবে এতো সব জানার পরেও নয়নতারার সহজ ইসারা বুঝতে না পারার মতো এতোটা নির্বোধ তাকে বলি কি করে!

কিন্তু জানা থাকলে কি হয়! মন মানতে চায় না যে। সৌদামিনী যে ভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে,দামিনীর যে মনোবল আছে, আমাদের হেমলতার কি তা আছে? যদিও সে জানে খানিকটা হলেও সে দামিনীর কাছে ঋণী। কিন্তু তবুও! ভালোবাসার ভাগ্য দিয়ে সেই ঋণ শোধ করার মতো সাহসী সে যে কোন মতেই হতে পারবে; এই ভরসা কে দেয়? এদিকে উত্তর না পেয়ে নয়নতারা বোনের গলা জরিয়ে বলে,

– চল কলিদের ওখান থেকে একটু ঘুরে আসি, মন ভাল হবে হয়তো।

হেমলতা কোন উত্তর না দিয়ে বসে থাকে চুপচাপ। তখন নয়নতারা  বাবুকে কোলে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

– দেখ ত বাবু তোর মাসিমার  সাথে কথা বলে,এতো রাগ হয়েছে কেন!

বাবু মায়ের আদেশ শুনে না জানি কি বুঝলো। কিন্তু কথা শেষ হতেই মাসির শাড়ির আঁচল ধরে মৃদু মৃদু টানতে লাগলো।
////////////

রাতের বেলা স্বামীর খাবার পর্ব চুকিয়ে হেমলতা যখন নিচে এল। তখন বৈঠক ঘরে ছোটখাটো করে মেয়েদের আসর বসেছে।  এমন আসরে সব সময় বসে না, তবে বসলে নয়নতারা  বা সৌদামিনী মধ‍্যমণি হয়ে বসে। যেহেতু আজকাল সৌদামিনী আর শয়ণকক্ষের বাইরে খুব একটা আসে না,সেহেতু নয়নতারাই আসরের প্রধান আকর্ষণ। হেমলতা সাধারণত এমন আসর এরিয়ে চলতো। তাই সে যখন বৈঠক ঘর পেরিয়ে সৌদামিনীর ঘরে ঢোকে, তখন কেউ তাকে ডাক দিল না। তবে শয়ণকক্ষে দামিনী ছিল না। তার বদলে পালঙ্কের ওপড়ে  একগাদা এলো মেলো কাপড়চোপড়। সবগুলোই নতুন। কারণ সৌদামিনীর ফেলে আসা ব‍্যাগ খানি আর পাওয়া যায়নি,তাই সঞ্জয় নিজেই এই শাড়ি গুলো দামিনীকে কিনে দিয়েছে। এখন পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই সব আবার কি কান্ড! দামিনী কি আবার পলায়ন করার মতলব করছে নাকি? আমি বলবো আসলে তা নয়। অভাগী মেয়েটি মনের মানুষের দেওয়া খানকয়েক এই শাড়ি প্রতিদিন  ছুঁয়ে দেখে, তাই এই এলোমেলো অবস্থায় সেগুলি পালঙ্কে ছড়ানো। এখন সবাই বলতে পারে ঘটনা একটু ন‍্যাকামো গোছের বটে। কিন্তু আমি বলি কি, ভালোবাসায় একটু ন‍্যাকামো চলে বৈ কি।

এইসব দেখে হেমলতা শয্যায় এপাশে বসে। একটু পরে সৌদামিনী ঘরে ঢোকে। প্রথমে হেমকে দেখ একটু চমকালেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর বিছানায় ছড়ানো শাড়িগুলো আলমারিতে তুলতে তুলতে বলে,

– কি হয়েছে? আবারও ঝগড়া করেছিস বুঝি!

হেম কোনো উত্তর করে না , দামিনী আবার কোন প্রশ্ন করার আগেই সে বিছানায় একপাশে শুয়ে পরে।  খানিক পরে সৌদামিনীও দ্বারে আগল দিয়ে  বাতি নিভিয়ে হেমের পাশে শোয়। আজ অনেকদিন পর দামিনী আগেকার মতো হেমকে কাছে টানে। পেছন থেকে জরিয়ে কানের কাছে মুখ এনে কোমল স্বরে শুধায়,

– কি হয়েছে! দিদিকে বলবি না বুঝি?

হেমলতা কোন উত্তর করে না। খানিক পরে দামিনী হেমকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে জরিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে আদর করে। এদিকে হেমলতা নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে সৌদামিনীর বুকে নিজেকে আরও যেন লুকানোর চেষ্টা করে। আসলে আজ খানিকক্ষণ আগেই দোতলায় খাওয়া সেরে সঞ্জয় আধশোয়া হয়ে শুয়ে ছিল। তাঁর হাতে ছিল একটা খাতা বা বই জাতীয় কিছু একট। তখন এটো থালাবাসন গুছিয়ে স্বামীর পাশে বসে হঠাৎ বজ্রপাতের মতো প্রশ্নটা  করলো হেম,

– দামিনী'দিকে কোন ভাবে এখানে রাখা যায় না?

হেমলতার বিশ্বাস ছিল তাঁর স্বামী যতই কঠিন হোক না কেন। দামিনীর প্রতি তাঁর খানিকটা টান তো অবশ্যই আছে । এদিকে দামিনী যে তাঁর স্বামীকে কতটুকু ভালোবাসে তা সৌদামিনী না বললেও হেমের অজানা নয়। আর নয়তো অমন চিঠি কেউ লিখবে কেন?  সৌদামিনীর জন্যে কষ্ট হেমের অবশ্যই হয়। তবে স্বামীর আদরে ভাগ বসাবে,এই কথা মনে পরলেই মনটা কেমন যেন করে ওঠে। ওদিকে সঞ্জয় এই প্রশ্নে প্রথমে অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত স্বরেই বলে,

– আসলে সত‍্য জানার পর এই কদিন মেয়েটার সঙ্গে যে কঠিন আচরণ করেছি; তারজন্যে ক্ষমা চাইতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু....

– কিন্তু কি?

সঞ্জয় হেমকে বুকে টেনে মাথায় হাত বুলিই দিয়ে বলে,

– অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তা জানি। তার জন্যে ক্ষমাও আমি চাইবো। কিন্তু হেম! এপথে আর না হাঁটাই ভালো। আমি চাই সে কলকাতায় ফিরে যাক। নতুন কেউ খুঁজে নিয়ে জীবনে সুখী হোক। শুধু শুধু এই সব ঝামেলা টেনে লাভ কি বলো তো?

হেম স্বামীর বুকে মাথা রেখে কথাগুলি ভাবে। নিজের মনকে মিথ্যা বলে লাভ কি!হেমের সত্যিই আজ স্বামীর কথাগুলো খুবই কঠিন বলে মনে হয়। বিধাতা সত্যিই কি কঠিন কোন ধাতু দ্বারা পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন? সৌদামিনী এই প্রশ্নের উত্তর দেয় না। কারণ সে নিজেও জানে সঞ্জয় কিছু ভুল বলেনি। তবে সঞ্জয়কে ছেড়ে এই জীবনে সুখী সে আর কোন দিনেও হতে পারবে না,এই কথাটি সে গত কয়েকটি বছর ধরে তিলে তিলে অনুভব করে এসেছে। তবে হেম ও সঞ্জয়ের সুখের জন্যে তাকে সরে যেতেই হবে। এইকথা ভাবতে ভাবতে হেমকে বুকে জড়িয়েই এক সময় ঘুমিয়ে পরে দামিনী।

তার পরদিন জলখাবারের পর হেম দিদির ঘরে ঢোকার মুখে শোনে,

– বৌদিমণি তুমি আর আপত্তি করো না। আমি কলকাতায় খবর দিচ্ছি, তারা এসে দামিনীকে নিয়ে যাক। এখানে থেকে সেও কষ্ট পাবে আর হেমকেও একথা ভুলতে দেবে না।

– কিন্তু ঠাকুরপো যদি কলকাতায় গিয়ে মেয়েটা ভালো মন্দ কিছু একটা করে বসে....

– ওকথা থাক বৌদিমণি। থাকে কলকাতায় দেখবার লোকের অভাব হবে না। তুমি অত চিন্তা কর না শুধু শুধু।

হেম ভাবলো এটি স্বামীর মনের কথা নয়। কিন্তু সে সঞ্জয়ের মনের কথা জানে কিরে! সঞ্জয়ের মনে দামিনীর জন্যে যতটা করুণা ছিল, তা বৌদিমণির মুখের হাসি হারানোর কথা স্মরণ করে মাস খানেক আগেই উবে গিয়েছে। সুতরাং সত্য সত্যই কলকাতায় খবর গেল। সপ্তাহ দুই পর উকিল বাবু দামিনীকে নিতেও এলেন। তবে এবার এলেন সপরিবারে। সঞ্জয়ের বন্ধু মাতা কলকাতা থেকে বহুদিন পর গ্রামে এসে বেজায় খুশি। তিনি সবার সাথে পরিচিত হয়ে , অবশেষে হেমকে নিয়ে জামতলায় বসলেন।

– দেখছো ছেলের কান্ড! ঘরে বৌ তুলেছে অথচ এতোদিনে একটা খবর পর্যন্ত যায়নি কলকাতায়। 

হেম কিছু বলে না। তবে তাদের আলোচনা চলে প্রায় আধঘন্টা ধরে।অবশেষে খাবার ডাক পরলে উঠতে উঠতে বললেন,

– দেখ মা! তোর কোন দোষ নেই। তবে শুধু শুধু কাঁদিস কেন? দামিনী আমার ঘরের মেয়ে। সব দান করে বরং ভালোই করেছে, এখন ঘরের মেয়ে আমার ঘরে উঠবে,চিন্তা কি আর?

তিনি বললেন বটে কিন্তু চিন্তা এক রকমের নাছড়বান্ধা রোগ। সহজে পরিত্রাণ পাওয়া দুঃসাধ্য ব‍্যাপার।তবে হেমলতা খুব বেশিক্ষণ চিন্তা করার সময় পেয়ে উঠলো না। খাওয়া-দাওয়া শেষে আধঘণ্টা পরেই উকিলবাবুর স্ত্রী মন্দির দর্শন করে বেরুলেন। তার সাথে গেল হেম,নয়ন,মন্দিরা ও আর কয়েকটি মেয়ে-বউ। সৌদামিনীর যাবার ইচ্ছে ছিল। তাই তাদের পাঠিয়ে সে একটু পরে আসবে বললো। কিন্তু  একটু পর দেখল বাড়ির সব মেয়েরা বেরিয়ে গেলে কর্তাবাবুর পাতে ভাত পরে না। বিশেষ করে সঞ্জয় সবে এসে স্নান করেছে। উকিলবাবুকে দেখে তাঁর আর বিকেলে হাটে যাওয়া না হলেও, আসতে দেরি হবার কারণে খাওয়া জরুরী। ওদিকে দাসী মঙ্গলা বাবুকে কোলে নিয়ে ঘুরছে। সুতরাং সঞ্জয়ের পাতে ভাত বারতে সৌদামিনী বিনা উপায় কি! এই ব‍্যাপার বুঝে নিয়ে দামিনী নিজে সঞ্জয়ের পাতে ভাত বেরে দোতলায় উঠলো। খাবার সাজিয়ে সে যখন সঞ্জয়ের সমুখে বসেছে, তখন দুজনের দৃষ্টির মিলন হতেই দুজনেই মস্তক নত করলো। 

কিন্তু সঞ্জয় মুখের খাদ্য পেটে চালান করার অবকাশে আড়চোখে দুই একবার সৌদামিনীকে দেখলো। এদিকে দামিনীর শান্ত দৃষ্টি সঞ্জয়ের খাবার পাত্রে নিবদ্ধ। সে বেচারী ক্ষণকালের জন্যে এই বাড়ির রমণীদের কর্তব্য চুকিয়ে দিতে এসেছে। বিশেষ করে সে জানতো যে― সঞ্জয় কে তুলে না দিলে খিদে থাকলেও সে দ্বিতীয় বার নিজে থেকে কিছুই বলে না। সুতরাং সেবাপরায়ণা রমণী  সেদিকে ছাড়া অন্য কোন দিকে বিশেষ নজর ছিল। তাই সেই সুযোগে সঞ্জয় নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দামিনী সাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। 

আকাশে মেঘ ছিল না আজ। তবে দামিনী একখানি ছাপানো নীল রঙের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে ছিল। তার মাঝে কেমন যেন সাদা রঙের ছাপানো ফুল বা শরৎকালের সাদা সাদা মেঘও হতে পারে। মসৃণ বাহু দুটি কুনুইয়ের কাছে থেকে কালো কাঁচুলি দ্বারা বুক সহ ঢাকা।  নীল আঁচলের ফাঁক দিয়ে সৌদামিনী সুগভীর গোলাকার নাভীটি মাঝে মাঝে বড্ড চোখে লাগছে। কোন কারণে হেমলতার মল দুখানি আজ সৌদামিনীর পায়ে। কেশরাশি খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার খোঁপার বাঁধনে আটসাট। তাতে একখানি সাধারণ ও সস্তা চুলের কাটা। দেখতে সে সুন্দরী একথা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু সত্য বলতে মাঝে মাঝে নারীদের এই সৌন্দর্য অতি সাধারণ সাজেও বিশেষ করে চোখে পরে। এমনি দূর্বল সময়ে সৌদামিনীর কাজল টানা চোখের সাথে সঞ্জয়ের মুগ্ধ দুই চোখের মিলন ঘটে গেল। এই ছোট ঘটনায় আর দুটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা ঘটেগেল।

চোখের সাথে চোখের মিলনে অস্থির চিত্র সৌদামিনী আদ্র চোখে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু রমণীর শাড়ির আঁচল খানা কোনভাবে সঞ্জয়ের হাতে আটকে গেলে সে আর যায় কোথায়? আর শুধু কি আঁচল! দেখা গেল একসময় দামিনী নিজেও সঞ্জয়ের বুকে এক রকম বন্দী হয়ে মস্তক নত করে মেঝের দিকে চেয়ে রইল। কথা দামিনী কিছুই ছিল না। কেন না সে তাঁর মনে সকল কথা আগে বলে দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে বসে আছে। কিন্তু সঞ্জয়ের মনে পরিতাপের অনুভূতি গুলো শেষ কালে একত্রিত হয়ে ওষ্ঠাধর দুলিয়ে দিল। অধর কামড়ে ক্রন্দনরত রমণীর কপলে একটি চুম্বন এঁকে দিয়ে তারা বলে উঠলো,

– ক্ষমা কর আমায় দামিনী! আমার মত পাপী হয়তো এই ধরণীতে দ্বিতীয়টি নেই...

সৌদামিনী এই কথার উত্তরে শুধু সঞ্জয়ের মুখে হাত চাপা দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে কোমল স্বরে বললো,

– ও কথা বলো না। কেন না  এই দোষের শুরু আমার থেকেই। তখন আমার হাত না ছুটলে অন‍্যের হাতে  তোমায় পরতে হতো না। কিন্তু এখন সেই হাত আর ধরবার সুযোগ নেই আমার। না না, তোমায় আর কিছুটি বলতে হবে না, এই আমারই ললাটলিপি ছাড়া অন‍্য কিছ নয়।

সত‍্যই মুখে আর কোন কথা হলো না। সঞ্জয় সৌদামিনীকে বুকের মাঝে  নিবিড়ভাবে জরিয়ে ধরে মনে মনে বলল,“ তোমার ভালোবাসায় কোন কমতি ছিল না। কিন্তু আমার ভালোবাসায় বোধহয় ছিল।
////////////
[+] 7 users Like বহুরূপী's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বৌদিমণি - by Mamun@ - 08-04-2024, 09:24 AM
RE: বৌদিমণি - by D Rits - 08-04-2024, 09:49 AM
RE: বৌদিমণি - by nightangle - 08-04-2024, 05:02 PM
RE: বৌদিমণি - by radio-kolkata - 09-04-2024, 08:03 AM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 10-04-2024, 07:01 AM
RE: বৌদিমণি - by evergreen_830 - 11-04-2024, 07:32 AM
RE: বৌদিমণি - by kapil1989 - 11-04-2024, 07:14 PM
RE: বৌদিমণি - by san1239 - 12-04-2024, 10:06 AM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 13-04-2024, 10:59 AM
RE: বৌদিমণি - by Aisha - 13-04-2024, 12:34 PM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 14-04-2024, 12:25 AM
RE: বৌদিমণি - by dipankarmunshidi - 14-04-2024, 10:48 PM
RE: বৌদিমণি - by tamal - 14-04-2024, 12:11 PM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 13-04-2024, 08:08 PM
RE: বৌদিমণি - by kinkar - 14-04-2024, 12:36 AM
RE: বৌদিমণি - by Shuvo1 - 14-04-2024, 11:41 PM
RE: বৌদিমণি - by Pocha - 15-04-2024, 06:26 PM
RE: বৌদিমণি - by evergreen_830 - 15-04-2024, 04:26 PM
RE: বৌদিমণি - by raikamol - 15-04-2024, 05:28 PM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 16-04-2024, 12:11 AM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 17-04-2024, 09:11 AM
RE: বৌদিমণি - by Patit - 17-04-2024, 01:49 PM
RE: বৌদিমণি - by chanchalhanti - 19-04-2024, 12:39 AM
RE: বৌদিমণি - by chanchalhanti - 19-04-2024, 06:14 PM
RE: বৌদিমণি - by becharam - 19-04-2024, 08:51 PM
RE: বৌদিমণি - by Roman6 - 17-04-2024, 11:56 PM
RE: বৌদিমণি - by becharam - 21-04-2024, 01:43 AM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 22-04-2024, 02:22 AM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 22-04-2024, 11:37 PM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 20-04-2024, 07:01 AM
RE: বৌদিমণি - by ojjnath - 20-04-2024, 10:38 PM
RE: বৌদিমণি - by Roman6 - 20-04-2024, 10:56 PM
RE: বৌদিমণি - by evergreen_830 - 22-04-2024, 09:13 AM
RE: বৌদিমণি - by Roman6 - 22-04-2024, 12:41 PM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 22-04-2024, 05:42 PM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 22-04-2024, 06:54 PM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 22-04-2024, 11:35 PM
RE: বৌদিমণি - by princekanch - 23-04-2024, 12:13 AM
RE: বৌদিমণি - by Aisha - 24-04-2024, 07:22 AM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 25-04-2024, 05:11 PM
RE: বৌদিমণি - by UttamChoudhury - 28-04-2024, 08:49 PM
RE: বৌদিমণি - by Mamun@ - 25-04-2024, 11:05 AM
RE: বৌদিমণি - by janeman - 26-04-2024, 04:06 PM
RE: বৌদিমণি - by Aisha - 27-04-2024, 02:03 PM
RE: বৌদিমণি - by dipankarmunshidi - 30-04-2024, 05:59 PM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 30-04-2024, 01:25 AM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 30-04-2024, 01:08 PM
RE: বৌদিমণি - by Mamun@ - 02-05-2024, 08:43 AM
RE: বৌদিমণি - by tamal - 02-05-2024, 06:58 PM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 03-05-2024, 04:36 PM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 04-05-2024, 05:19 PM
RE: বৌদিমণি - by Mamun@ - 05-05-2024, 03:35 PM
RE: বৌদিমণি - by Aisha - 04-05-2024, 05:00 AM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 04-05-2024, 08:58 PM
RE: বৌদিমণি - by xanaduindia - 16-05-2024, 09:12 PM
RE: বৌদিমণি - by Aisha - 06-05-2024, 12:02 PM
RE: বৌদিমণি - by Ari rox - 06-05-2024, 01:41 PM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 06-05-2024, 04:52 PM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 08-05-2024, 08:31 PM
RE: বৌদিমণি - by Rehan Hot - 09-05-2024, 04:07 PM
RE: বৌদিমণি - by Mamun@ - 08-05-2024, 05:01 AM
RE: বৌদিমণি - by evergreen_830 - 11-05-2024, 11:59 PM
RE: বৌদিমণি - by buddy12 - 12-05-2024, 02:00 PM
RE: বৌদিমণি - by Lustful_Sage - 13-05-2024, 08:20 AM
RE: বৌদিমণি - by chndnds - 13-05-2024, 08:23 AM
RE: ❣️বৌদিমণি❣️ [ আপডেট নং- ৩৪ ] - by বহুরূপী - 04-12-2024, 05:12 AM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)