03-12-2024, 03:24 PM
(This post was last modified: 16-12-2024, 12:24 AM by শূন্যপুরাণ. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রিফ্লেক্স একশনের ফাঁদে পড়ে ওদের আঙ্গুল দিয়ে নির্দেশ করা মাটিতে পড়ে থাকা ব্যাগটিতে চোখ গেলো সাজ্জাদের। পরক্ষণেই বললো, "ঐটা আমার না। অন্য কারো।"
"না ভাই। আপনার ব্যাগই হইবো। ভালা কইরা চাইয়া দেহেন।"
"দেখেছি। আমার না।" সংক্ষেপে বলে দরজা লাগাতে উদ্যত হলো সাজ্জাদ। তখনই কেউ একজন ডিম ছুঁড়ে মারলো ওর গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। ফট করে ফেটে ছড়িয়ে পড়লো কাচে। সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেল। কিন্তু ওর সিক্সথ সেন্স তখনো তাগাদা দিচ্ছে দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে ওর হতবিহ্বলতার সুযোগে একটা ছেলে গাড়ির সামনে চলে এসেছে। রিয়ার ভিউ আয়নায় দেখতে পেলো আরেকটি ছেলে একটা কাঠের টুকরো হাতে নিয়ে গাড়ির পেছনের চাকার কাছে যাচ্ছে। মুহূর্তেই বুঝে ফেললো কী হতে যাচ্ছে। ঐ কাঠের টুকরায় পেরেক লাগানো আছে।
সাজ্জাদ মাথা গরম করে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে চিৎকার করে বললো, "কী করছো তোমরা। Do you know who I am?"
একটা ছেলে খ্যাকখ্যাক করে বললো, "আপনে ইয়াবাখোর। মাইয়া নিয়া ফূর্তি করতে আইছেন আমাগো এলাকায়।"
সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেলো। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে বললো, ''তোমরা কী চাও?"
"আমাগো এলাকায় কোন অসামাজিক কাজ করার দিমু না। আপনে স্বীকার যান আপনে ইয়াবা খাইয়া মাগী লাগাইতে আনছেন।"
"আমি পুলিশ ডাকবো। তোমরা জানো না তোমাদের কী হাল করতে পারি আমি।''
"আরে রাখ মাদারচোদ। পুলিশের মায়রে চুদি। ডাক তোর বাপরে। অয় মন্টু, বাইর কর মালডারে।"
গাড়ির সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা অর্ডার পেয়ে একগাল হেসে জেরিনের দিকের দরজা খুলতে গেল। সাজ্জাদের উপরে কী ভর করলো কে জানে। সে গাড়ির বনেটের উপর দিয়ে অন্যপাশে গিয়েই মন্টু নামের ছেলেটার পাঁজরে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে লাথি কষালো। মন্টু তিন চার হাত দূরে গিয়ে মাটিতে পড়লো। অন্য ছেলে দুটো এর মধ্যে সাজ্জাদকে সামনে পিছনে ঘিরে ধরেছে। এলিমেন্ট অব সারপ্রাইজের কারণে মন্টুকে ধরাশায়ী করতে পারলেও এদের দুজনকে মোকাবেলা করা সাজ্জাদের জন্য মুশকিল। সে শিল্পী মানুষ। মারামারির মতো আদিমতার জন্য কখনোই কোন মানসিক বা শারীরীক প্রস্তুতি ছিলো না।
সামনের ছেলেটির হাতে সেই পেরেক পোঁতা লাঠি, সেটা দিয়ে ওর গায়ে আঘাত করার শাই করে ঘুরালে, সাজ্জাদ পিছনে সরে গেলো বাঁচার জন্য। তখন পিঠের উপরে একটা আঘাত পড়লো। যদিও তাতে ব্যাথা পেলো না তেমন। লাফ দিয়ে সরে গিয়ে দুজনেরই মুখোমুখি হলো সাজ্জাদ। পিছনে হেঁটে হেঁটে গাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। এটা করলো যাতে ওকে অনুসরণ ছেলেগুলো সরে আসে এবং এই সুযোগে জেরিন পালিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে মন্টু নামের ছেলেটাও উঠে এসেছে। এবার তিনজনের বিরুদ্ধে সাজ্জাদ একা। মার খাওয়াতে ওর উপরে মন্টুর রাগটা বেশি ছিলো। সে ছুটে এসে সাজ্জাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাজ্জাদ তড়িৎ গতিতে ওকে বোকা বানিয়ে সরে গেলে। কিন্তু কপাল মন্দ একটা ইটের টুকরায় বাঁধা পেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। মন্টু এই সুযোগে ওর উপরে উঠে হাত পিঠমোড়া করে হাঁটু দিয়ে পিঠে চেপে ধরলো।
পেরেক পোতা লাঠি নিয়ে অন্য ছেলেটা এগিয়ে আসতে লাগলো। সম্ভবত ওটা দিয়ে সাজ্জাদের গায়ে জখম করতে চাচ্ছে। সাজ্জাদ অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। তবে ঐ মুহূর্তে নিজের চেয়ে জেরিনকে নিয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে তার। জেরিন কী পালাতে পারলো? এই ছেলেগুলি কী ওকে ধরে ফেলবে?
হঠাৎ একটা দৃঢ় মেয়েলি কন্ঠ চিৎকার করে বললো, "Stop, you fuckers."
উপস্থিত চারজন পুরুষই চমকে উঠলো। দণ্ডায়মান ছেলে দুটো পেছনে ঘুরলো। গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন। সে পালায়নি দেখে সাজ্জাদ চমকে উঠলো। এবং সে দ্বিতীয়বার চমকালো জেরিনকে খুবই শান্তভাবে একটা রিভলভার উঁচিয়ে রাখতে দেখে।
জেরিন পূর্বের স্বরেই বললো,"আমি এক বললে ওর পিঠের উপর থেকে উঠে দাঁড়াবি। হাতের লাঠি ফেলে দিবি। দুই বললে দৌড়ানো শুরু করবি। তিন বলার আগেই যদি আমার দৃষ্টি সীমা থেকে না পালাতে পারিস, তোদের প্রত্যেকটায় পাছায় গুলি করবো।"
ছেলেগুলো ঘটনার এই নতুন মোড়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না। শাড়ি পরা কোন বাংলাদেশি মেয়ের পক্ষে রিভলভার ব্যবহার করা তো দূরে থাক, বহন করাটাই তো বিস্ময়কর ব্যাপার। বন্দুকটা আসল নাকি নকল সেটা নিয়েও ওরা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো ছেলেগুলো। ওদের ভিতরে একটু নেতা টাইপের ছেলেটা বললো, "আমাগো পাছায় গুলি ঢুকানোর আগে তোর পুটকিতে আমার বন্দুক ঢুকায়ে গুলি করুম খাঙ্কিমাগী। ডর দেহাস আমারে। তোর মুখে আ.." কথা শেষ হওয়ার আগেউ জেরিন "এক" উচ্চারণ করে নিখুঁত নিশানায় ছেলেটার ডান হাতের কব্জি বরাবর গুলি করলো। ছেলেটার কবজি ছিঁড়ে ঝুলতে লাগলো চামড়ার সাথে। হাঁড়কাপানো আর্তনাদ করে উঠলো সে। বাম হাতে কবজি চেপে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগলো। কেবল জেরিনের ভিতরে কোন উত্তেজনা নেই। একেবারে জলের মতো শান্ত মুখ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। রিভলভারটা ধরার ভঙ্গিটা খুবই ক্যাজুয়াল।
বাকী ছেলে দুটোকে প্রাথমিক শক কাটাতে এক দুই সেকেন্ড সময় দিলো। তারপর "দুই" উচ্চারণ করে সাজ্জাদের পিঠের উপরের ছেলেটাকে গুলি করলো। ঐ ছেলেটার কান দুটো ছিলো বাঁদুড়ের মতো ছড়ানো। জেরিনের গুলিতে ডান কানের বাইরের অংশের অনেকটা উড়ে গেল। ছেলেটা কান চেপে ধরে "ও মাগো" "ও বাবাগো" বলে মাটিতে শুয়ে গড়াতে লাগলো। সাজ্জাদ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পারলেও এখন আর কিছু ভাবার সময় নেই। সে গাড়ির দিকে ছুট লাগালো। জেরিন তিন নম্বর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, "I will keep my promise if I reach to Three."
বর্বরগুলো ইংরেজি না বুঝলেও জেরিন কী বলতে চাচ্ছে সেটা ঠিকই বুঝেছে। প্রথমে তিন নম্বরটা উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে কাশবনে হারিয়ে গেলো। এরপর কানকাটা ছেলেটে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে এক দুবার আছাড় খেয়ে প্রথমজনকে অনুসরণ করলো। আর কব্জিকাটা ছেলেটা ইতোমধ্যে রক্ত ক্ষরণে আর ভয়ে যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। তবে আগের দুজনকে পালাতে দেখে সেও দিক শূণ্যভাবে দৌড়াতে শুরু করলো। জেরিন ঠান্ডা মাথায় ওর পাছায় একটি গুলি করলো। ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়লো। জেরিন গাড়িতে উঠে রিভলবারটা ওর ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দিলো।
সাজ্জাদ গাড়ি চালিয়ে সোজা নিজের এপার্টমেন্টে চলে এলো। সম্পূর্ণ ঘটনা ওর নার্ভের উপরে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলো। জেরিন সারাটা পথই চুপ ছিলো। বিন্দুমাত্র উত্তেজনা তার ভিতরে নেই। এপার্টমেন্টে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিলো, "সাজ্জাদ ভাই, You are hurt."
সাজ্জাদ বুঝতে না পেরে বললো, "মানে?"
"You are bleeding from your back."
সাজ্জাদকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো সে। তারপর ওর শার্ট খুলে দিলো। সাজ্জাদ এতক্ষণ পরে নিজের পিঠে যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেছে। দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো, "How bad is it? Should I call a doctor?"
"লাগবে না। ফার্স্ট এইড সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে। আপনার বাসায় ফার্স্ট এইড বক্স আছে?"
সাজ্জাদ দেখিয়ে দিলো। জেরিন যত্ন সহকারে ওর ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। ও যখন কাজ করছে সাজ্জাদ তখন ভাবছে যে এই মেয়েটি আসলেই অদ্ভুত। একটু আগেই যে মেয়েটা ঠান্ডা মাথায় তিনটা ছেলেকে রিভলবার দিয়ে গুলি করেছে। আর সেই মেয়েটি কী না কেমন মমতা দিয়ে ওর যত্ন নিচ্ছে। নারী বড়ই বিচিত্র! একই অঙ্গে কত রূপ তার! দেওয়ালের আয়নায় সাজ্জাদ দুজনের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। জেরিন খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। ওর মুখের উপরে চুল ঝুলে পড়েছে খাঁড়া নাক, চিকুন চিবুক কেমন মায়াময় লাগছে দেখতে। অনেক অনেক দিন এভাবে কোন নারীর যত্নের ছোঁয়া পায়নি সে।
তাই আজ হঠাৎ এরকম যত্ন পেয়ে জেরিনকে বড় আপন মনে হয় ওর। ড্রেসিং শেষ করে জেরিন বললো, "শেষ। এবার আপনি বিশ্রাম করুন। আমার জন্যই আপনাকে বিপদে পড়তে হলো। আমি খুবই দুঃখিত।"
সাজ্জাদের হঠাৎ প্রচন্ড ইচ্ছে হলো জেরিনকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। জেরিনও কী বুঝতে পারলো ওর মনের কথা? তা নাহলে ওরকম রহস্যময়ভাবে হাসছে কেন? সাজ্জাদকে একা ফেলে ঠিকই জেরিন চলে গেলো সেদিন। সাজ্জাদ পড়ে গেলো এক মহা সমস্যায়।
****
ঐ দিনের ঘটনার পরে জেরিনের সাথে সাজ্জাদের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। সাজ্জাদ অপেক্ষায় ছিলো জেরিন হয়তো নিজে থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। ওদিকে সাজ্জাদও অস্থির হয়ে উঠছে জেরিনকে দেখার জন্য, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য। জেরিনের কোন ফোন নাম্বার নেই ওর কাছে। ঠিকানাও জানা নেই। নিজে থেকে যোগাযোগ না করলে ওকে খুঁজে পাওয়ার কোন উপায় নেই সাজ্জাদের। কিন্তু জেরিনকে তার লাগবেই। যতই সময় যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছে যে মেয়েটার প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আরো একটি ব্যাপার রয়েছে।
ঐদিন জেরিন ঠিকই অনুমান করেছিলো। আসলেই সাজ্জাদ মানসিকভাবে সুস্থ নেই। রাতে ঘুম হয় না। প্রায় হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। মন এমন এক নিষিদ্ধ প্যান্ডোরার বক্স খুলতে বাধ্য করছে যেটা তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই সমস্যা থেকে সে মুক্তি চায়। একমাত্র জেরিনই তাকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।
(চলবে)
"না ভাই। আপনার ব্যাগই হইবো। ভালা কইরা চাইয়া দেহেন।"
"দেখেছি। আমার না।" সংক্ষেপে বলে দরজা লাগাতে উদ্যত হলো সাজ্জাদ। তখনই কেউ একজন ডিম ছুঁড়ে মারলো ওর গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। ফট করে ফেটে ছড়িয়ে পড়লো কাচে। সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেল। কিন্তু ওর সিক্সথ সেন্স তখনো তাগাদা দিচ্ছে দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে ওর হতবিহ্বলতার সুযোগে একটা ছেলে গাড়ির সামনে চলে এসেছে। রিয়ার ভিউ আয়নায় দেখতে পেলো আরেকটি ছেলে একটা কাঠের টুকরো হাতে নিয়ে গাড়ির পেছনের চাকার কাছে যাচ্ছে। মুহূর্তেই বুঝে ফেললো কী হতে যাচ্ছে। ঐ কাঠের টুকরায় পেরেক লাগানো আছে।
সাজ্জাদ মাথা গরম করে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে চিৎকার করে বললো, "কী করছো তোমরা। Do you know who I am?"
একটা ছেলে খ্যাকখ্যাক করে বললো, "আপনে ইয়াবাখোর। মাইয়া নিয়া ফূর্তি করতে আইছেন আমাগো এলাকায়।"
সাজ্জাদের মাথায় আগুন ধরে গেলো। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে বললো, ''তোমরা কী চাও?"
"আমাগো এলাকায় কোন অসামাজিক কাজ করার দিমু না। আপনে স্বীকার যান আপনে ইয়াবা খাইয়া মাগী লাগাইতে আনছেন।"
"আমি পুলিশ ডাকবো। তোমরা জানো না তোমাদের কী হাল করতে পারি আমি।''
"আরে রাখ মাদারচোদ। পুলিশের মায়রে চুদি। ডাক তোর বাপরে। অয় মন্টু, বাইর কর মালডারে।"
গাড়ির সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা অর্ডার পেয়ে একগাল হেসে জেরিনের দিকের দরজা খুলতে গেল। সাজ্জাদের উপরে কী ভর করলো কে জানে। সে গাড়ির বনেটের উপর দিয়ে অন্যপাশে গিয়েই মন্টু নামের ছেলেটার পাঁজরে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে লাথি কষালো। মন্টু তিন চার হাত দূরে গিয়ে মাটিতে পড়লো। অন্য ছেলে দুটো এর মধ্যে সাজ্জাদকে সামনে পিছনে ঘিরে ধরেছে। এলিমেন্ট অব সারপ্রাইজের কারণে মন্টুকে ধরাশায়ী করতে পারলেও এদের দুজনকে মোকাবেলা করা সাজ্জাদের জন্য মুশকিল। সে শিল্পী মানুষ। মারামারির মতো আদিমতার জন্য কখনোই কোন মানসিক বা শারীরীক প্রস্তুতি ছিলো না।
সামনের ছেলেটির হাতে সেই পেরেক পোঁতা লাঠি, সেটা দিয়ে ওর গায়ে আঘাত করার শাই করে ঘুরালে, সাজ্জাদ পিছনে সরে গেলো বাঁচার জন্য। তখন পিঠের উপরে একটা আঘাত পড়লো। যদিও তাতে ব্যাথা পেলো না তেমন। লাফ দিয়ে সরে গিয়ে দুজনেরই মুখোমুখি হলো সাজ্জাদ। পিছনে হেঁটে হেঁটে গাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। এটা করলো যাতে ওকে অনুসরণ ছেলেগুলো সরে আসে এবং এই সুযোগে জেরিন পালিয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে মন্টু নামের ছেলেটাও উঠে এসেছে। এবার তিনজনের বিরুদ্ধে সাজ্জাদ একা। মার খাওয়াতে ওর উপরে মন্টুর রাগটা বেশি ছিলো। সে ছুটে এসে সাজ্জাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাজ্জাদ তড়িৎ গতিতে ওকে বোকা বানিয়ে সরে গেলে। কিন্তু কপাল মন্দ একটা ইটের টুকরায় বাঁধা পেয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। মন্টু এই সুযোগে ওর উপরে উঠে হাত পিঠমোড়া করে হাঁটু দিয়ে পিঠে চেপে ধরলো।
পেরেক পোতা লাঠি নিয়ে অন্য ছেলেটা এগিয়ে আসতে লাগলো। সম্ভবত ওটা দিয়ে সাজ্জাদের গায়ে জখম করতে চাচ্ছে। সাজ্জাদ অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না। তবে ঐ মুহূর্তে নিজের চেয়ে জেরিনকে নিয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে তার। জেরিন কী পালাতে পারলো? এই ছেলেগুলি কী ওকে ধরে ফেলবে?
হঠাৎ একটা দৃঢ় মেয়েলি কন্ঠ চিৎকার করে বললো, "Stop, you fuckers."
উপস্থিত চারজন পুরুষই চমকে উঠলো। দণ্ডায়মান ছেলে দুটো পেছনে ঘুরলো। গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে জেরিন। সে পালায়নি দেখে সাজ্জাদ চমকে উঠলো। এবং সে দ্বিতীয়বার চমকালো জেরিনকে খুবই শান্তভাবে একটা রিভলভার উঁচিয়ে রাখতে দেখে।
জেরিন পূর্বের স্বরেই বললো,"আমি এক বললে ওর পিঠের উপর থেকে উঠে দাঁড়াবি। হাতের লাঠি ফেলে দিবি। দুই বললে দৌড়ানো শুরু করবি। তিন বলার আগেই যদি আমার দৃষ্টি সীমা থেকে না পালাতে পারিস, তোদের প্রত্যেকটায় পাছায় গুলি করবো।"
ছেলেগুলো ঘটনার এই নতুন মোড়ের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না। শাড়ি পরা কোন বাংলাদেশি মেয়ের পক্ষে রিভলভার ব্যবহার করা তো দূরে থাক, বহন করাটাই তো বিস্ময়কর ব্যাপার। বন্দুকটা আসল নাকি নকল সেটা নিয়েও ওরা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো ছেলেগুলো। ওদের ভিতরে একটু নেতা টাইপের ছেলেটা বললো, "আমাগো পাছায় গুলি ঢুকানোর আগে তোর পুটকিতে আমার বন্দুক ঢুকায়ে গুলি করুম খাঙ্কিমাগী। ডর দেহাস আমারে। তোর মুখে আ.." কথা শেষ হওয়ার আগেউ জেরিন "এক" উচ্চারণ করে নিখুঁত নিশানায় ছেলেটার ডান হাতের কব্জি বরাবর গুলি করলো। ছেলেটার কবজি ছিঁড়ে ঝুলতে লাগলো চামড়ার সাথে। হাঁড়কাপানো আর্তনাদ করে উঠলো সে। বাম হাতে কবজি চেপে ধরে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগলো। কেবল জেরিনের ভিতরে কোন উত্তেজনা নেই। একেবারে জলের মতো শান্ত মুখ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। রিভলভারটা ধরার ভঙ্গিটা খুবই ক্যাজুয়াল।
বাকী ছেলে দুটোকে প্রাথমিক শক কাটাতে এক দুই সেকেন্ড সময় দিলো। তারপর "দুই" উচ্চারণ করে সাজ্জাদের পিঠের উপরের ছেলেটাকে গুলি করলো। ঐ ছেলেটার কান দুটো ছিলো বাঁদুড়ের মতো ছড়ানো। জেরিনের গুলিতে ডান কানের বাইরের অংশের অনেকটা উড়ে গেল। ছেলেটা কান চেপে ধরে "ও মাগো" "ও বাবাগো" বলে মাটিতে শুয়ে গড়াতে লাগলো। সাজ্জাদ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পারলেও এখন আর কিছু ভাবার সময় নেই। সে গাড়ির দিকে ছুট লাগালো। জেরিন তিন নম্বর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, "I will keep my promise if I reach to Three."
বর্বরগুলো ইংরেজি না বুঝলেও জেরিন কী বলতে চাচ্ছে সেটা ঠিকই বুঝেছে। প্রথমে তিন নম্বরটা উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে কাশবনে হারিয়ে গেলো। এরপর কানকাটা ছেলেটে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে এক দুবার আছাড় খেয়ে প্রথমজনকে অনুসরণ করলো। আর কব্জিকাটা ছেলেটা ইতোমধ্যে রক্ত ক্ষরণে আর ভয়ে যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। তবে আগের দুজনকে পালাতে দেখে সেও দিক শূণ্যভাবে দৌড়াতে শুরু করলো। জেরিন ঠান্ডা মাথায় ওর পাছায় একটি গুলি করলো। ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়লো। জেরিন গাড়িতে উঠে রিভলবারটা ওর ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দিলো।
সাজ্জাদ গাড়ি চালিয়ে সোজা নিজের এপার্টমেন্টে চলে এলো। সম্পূর্ণ ঘটনা ওর নার্ভের উপরে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছিলো। জেরিন সারাটা পথই চুপ ছিলো। বিন্দুমাত্র উত্তেজনা তার ভিতরে নেই। এপার্টমেন্টে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিলো, "সাজ্জাদ ভাই, You are hurt."
সাজ্জাদ বুঝতে না পেরে বললো, "মানে?"
"You are bleeding from your back."
সাজ্জাদকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসালো সে। তারপর ওর শার্ট খুলে দিলো। সাজ্জাদ এতক্ষণ পরে নিজের পিঠে যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেছে। দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো, "How bad is it? Should I call a doctor?"
"লাগবে না। ফার্স্ট এইড সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা আছে। আপনার বাসায় ফার্স্ট এইড বক্স আছে?"
সাজ্জাদ দেখিয়ে দিলো। জেরিন যত্ন সহকারে ওর ক্ষত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। ও যখন কাজ করছে সাজ্জাদ তখন ভাবছে যে এই মেয়েটি আসলেই অদ্ভুত। একটু আগেই যে মেয়েটা ঠান্ডা মাথায় তিনটা ছেলেকে রিভলবার দিয়ে গুলি করেছে। আর সেই মেয়েটি কী না কেমন মমতা দিয়ে ওর যত্ন নিচ্ছে। নারী বড়ই বিচিত্র! একই অঙ্গে কত রূপ তার! দেওয়ালের আয়নায় সাজ্জাদ দুজনের প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। জেরিন খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। ওর মুখের উপরে চুল ঝুলে পড়েছে খাঁড়া নাক, চিকুন চিবুক কেমন মায়াময় লাগছে দেখতে। অনেক অনেক দিন এভাবে কোন নারীর যত্নের ছোঁয়া পায়নি সে।
তাই আজ হঠাৎ এরকম যত্ন পেয়ে জেরিনকে বড় আপন মনে হয় ওর। ড্রেসিং শেষ করে জেরিন বললো, "শেষ। এবার আপনি বিশ্রাম করুন। আমার জন্যই আপনাকে বিপদে পড়তে হলো। আমি খুবই দুঃখিত।"
সাজ্জাদের হঠাৎ প্রচন্ড ইচ্ছে হলো জেরিনকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরে। জেরিনও কী বুঝতে পারলো ওর মনের কথা? তা নাহলে ওরকম রহস্যময়ভাবে হাসছে কেন? সাজ্জাদকে একা ফেলে ঠিকই জেরিন চলে গেলো সেদিন। সাজ্জাদ পড়ে গেলো এক মহা সমস্যায়।
****
ঐ দিনের ঘটনার পরে জেরিনের সাথে সাজ্জাদের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। সাজ্জাদ অপেক্ষায় ছিলো জেরিন হয়তো নিজে থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। ওদিকে সাজ্জাদও অস্থির হয়ে উঠছে জেরিনকে দেখার জন্য, ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য। জেরিনের কোন ফোন নাম্বার নেই ওর কাছে। ঠিকানাও জানা নেই। নিজে থেকে যোগাযোগ না করলে ওকে খুঁজে পাওয়ার কোন উপায় নেই সাজ্জাদের। কিন্তু জেরিনকে তার লাগবেই। যতই সময় যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছে যে মেয়েটার প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আরো একটি ব্যাপার রয়েছে।
ঐদিন জেরিন ঠিকই অনুমান করেছিলো। আসলেই সাজ্জাদ মানসিকভাবে সুস্থ নেই। রাতে ঘুম হয় না। প্রায় হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। মন এমন এক নিষিদ্ধ প্যান্ডোরার বক্স খুলতে বাধ্য করছে যেটা তাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। এই সমস্যা থেকে সে মুক্তি চায়। একমাত্র জেরিনই তাকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে।
(চলবে)