29-11-2024, 09:22 PM
অষ্টত্রিংশতি পরিচ্ছেদ
জানলার ধারে বসেছে ইলিনা,বাস ছুটে চলেছে।বাসায় গিয়ে দেখবে দোকানে চলে গেছে। আর বড়জোর মাস খানেকের মত আছে।পরীক্ষাটা মিটলে স্বস্তি,রেজাল্ট কি হবে গড নোজ।প্রিন্সিপাল ম্যাম নিশ্চয়ই খবর নেবেন,কি হল?ইলিনার চিন্তা বেড়ে গেল। জীবনে একজন পুরুষসঙ্গী দরকার। প্রিন্সিপাল ম্যামের কথাটা মনে হতে শরীরে শিহরণ খেলে যায়।জানি না কবে থেকে স্বামী-স্ত্রী এক বিছানায় শোবার সুযোগ হবে।বাসনাদি বিয়ের কথা বলছিলেন,ওরা জানেনা সে বিবাহিত। ইলিনার চোখ ছলছল করে।ডলিবোস তার সমবয়সী প্রায়, বিয়ের পর সিমলা গেছিল।ওখানে বরফ পড়ার কথা শুনেছে। শীত তো প্রায় দোর গোড়ায়।ভোরের বাতাসে হিমেল স্পর্শ পাওয়া যায়।
কণ্ডাক্টর বালিঘাট-বালিঘাট হাকতে পাশে বসা মহিলা উঠে দাড়াল।মনে হয় উনি এখানে নামবে।মহিলা চলে যেতে সামনে দাড়ানো মহিলা বসে পড়ল।ইলিনা আড় চোখে দেখলো মহিলার কানের নীচে ঘাড়ে কাকড়া বিছের ছবির ট্যাটু।একটা কথা ভেবে মনে মনে হাসে। কদিন আগে ডিবির সঙ্গে পার্লারে গিয়ে ঝোকের মাথায় ইলিনাও এক জায়গায় ANU লিখিয়েছে অবশ্য কেউ দেখতে পাবে না।ডলি বোস চুল সেট করাতে ব্যস্ত ছিল।আইবির এই কাণ্ড সেও জানে না।বাথরুমে গেলে ইলিনা করুন চোখে দেখে আনু লেখার উপর মোলায়েম হাত বোলায়।
দোকান বন্ধ দেখে পিকলু অবাক হয়।রনোটা গেল কোথায়?ঐতো প্রভাত আর গোবিন্দ আসছে।ওরা আসতে প্রভাত বলল,পিকলু শুনেছিস সব?
অবাক চোখে পিকলু জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপারে?
কিরে গোবে বল?
গোবিন্দকে পছন্দ নয় তবু পিকলু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
গোবিন্দর মুখে সকালের ঘটনা শুনে পিকলুর মুখে কথা নেই।এত কাণ্ড হয়ে গেছে সে কিছুই জানেনা।রনো নেই ভাবতেও পারে না।
রনো কোথায় গেছে কিছু জানিস?পিকলু জিজ্ঞেস করল।
জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় যাবি বলল পেটের তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে।গোবিন্দ সংক্ষেপে বলল।
পেটের জন্য এই পাড়া ছেড়ে রনো চলে গেছে শুনে পিকলুর চোখ ঝাপসা হয়ে এল।সন্তোষদার উপর রাগ হয়।এমন তরতাজা সাহসী যুবক পেটের জন্য কোথায় ঘুরছে কে জানে।বিশু মান্তুকে আসতে দেখে ভাবে ওরা কি জানে ব্যাপারটা।
বিশু এসে বলল,আজ দোকান খোলেনি?
কে খুলবে?তুই কিছু শুনিস নি?
আচ্ছা গোবে কি হয়েছিল বলতো?বিশু জিজ্ঞেস করল।
কি আবার?দাদার বলেছিল দুপুরে দোকানে থাকতে হবে,কোথাও গেলে বলে যেতে হবে কোথায় যাচ্ছো।রনোটাও টেটিয়া বলে কিনা সকাল-বিকেল দোকান খুলে খদ্দের সামলানো আমার দায়িত্ব বিনিময়ে দু-বেলা আপনি খাই খরচ দেন।অন্য সময় আমি কি করি কোথায় যাই সেই কৈফিয়ত কাউকে দিতে যাব না।আমি দোকানের কর্মচারী কিন্তু আমার ব্যক্তিসত্বা কাউকে বিকিয়ে দিইনি।
এতে দোষের কি হল?রনো ভুল কি বলেছে?পিকলু বলল।
দুপুরে কোথায় যায় মান্তু তুই কিছু জানিস?বিশু বলল।
দুপুরে তোসে অফিসে থাকি রনো কোথায় যায় কি করে জানব--।
কোথায় যায় দাদাকে বলে যেতে পারতোত।গোবিন্দ বলল।
কেন দাদাকে বলে যেতে হবে কেন?পিকলু বলে,যদি বুঝতাম কোন অনৈতিক কাজ কিছু করেছে তাহলে অন্যকথা।রনোর উপর এটা জুলুম বলব।
দ্যাখ পিকআলু দাদা যা করেিছে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার গোবের কথা শুনে মনে হল, পার্টির কোনো বিষয় নয়।এখানে আমরা কি করতে পারি তুই বল?
মান্তু বলল,মতাদর্শগত কোনো ব্যাপার হলে চুপ করে থাকার প্রশ্নই আসে না।
হ্যা রনোকে আমিও বলেছিলাম দাদার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসতে--।
গোবিন্দ কথা শেষ করার আগেই বিশু বলল,রনো কি বলল?
কি বলবে আবার,ওর যা মাথা গরম আমি আর চাপাচাপি করিনি।
পিকলু বুঝতে পারে এদের বলে কিছু লাভ নেই।নিজের মনে বলে,সাহাবাবুর বাড়ীতে ছিল দাদা বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিজের দোকানে নিয়ে এল।এবার নিজের দোকান থেকেই বে-ঘর করে দিল।
সত্যি রনোর জন্য খুব খারাপ লাগছে।আগে বাড়ী ছাড়ল এবার পাড়া ছাড়া হয়ে গেল।মান্তু বলল।
রাস্তায় অফিস ফেরতা মানুষের ভীড়,সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ী ফিরছে।আশপাশের দোকান থেকে আলো উক পলকপচে পড়ছে কেবল বইয়ের দোকানের ঝাপ বন্ধ।ওরা কথা বলতে বলতে পার্টি অফিসের দিকে চলে গেল।
ইলিনা ব্রাউন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখল কেউ নেই।থাকার কথাও নয়।বেলা কম হয়নি দোকান খুলতে হবে।এত চাপ একটু যদি পড়াশুনার সময় পেতো তাহলে অনু সিওর কিছু করে দেখাতো।আজ দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।বাজারের রাস্তা দিয়ে এলে এক পলক দেখা হত।পোশাক বদলে রান্না ঘরে গেল ইলিনা ব্রাউন।চায়ের জল চাপিয়ে কালকের কাজগুলো মনে মনে ভেবে নেয়।কলেজ যাবে না বলে এসেছে,কলকাতায় ফর্ম -জমা দিতে যাবে।এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
পার্টি অফিসে দল বেধে ঢুকতে দেখে কমরেড সন্তোষ মাইতি বলল,কি ব্যাপার কমরেড দলবেধে একেবারে পার্টি অফিসে?
র-র-রনো আজ দো-দ-দ-কান খোঅরেছিসলেনি।তোতলা শিবু বলল।
হু-উ-ম একটা নতুন লোক খুজতে হবে।
কেন রনো বসবে না?পিকলু জিজ্ঞেস করল।
সন্তোষ মাইতি ঘাড় ঘুরিয়ে পিকলুকে এক নজর দেখে ভাবেন,বিষয়টা ওদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে হালকাভাবে দেখা ঠিক হবেনা।রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে বললেন,রনো কেন বসবে না সেটা রনোকে জিজ্ঞেস করো।
কিরে গোবে তোর কিছু বলার নেই?গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করে পিকলু।
আমি কি বলব?আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলল,এ পাড়া ছেড়ে চললাম।
কেন চলে যাচ্ছে কিছু বলেনি?
বলেছে ত অনেক কথা,সব আমার মনেও নেই।তোরা তো জানিস ওর কেমন মাথা গরম--।
পিকলু বুঝতে পারে গোবে আসল চেপে কথা ঘোরাতে চাইছে।
শুনুন কমরেড সবাইকে একটা কথা বলতে চাই--সন্তোষ মাইতি বললেন,এটা পার্টির আভ্যন্তরীন বিষয় নয়।রনো আমাদের পার্টির কেউ নয়।আমি চাইনা পার্টি অফিসে এই নিয়ে কোনো আলোচনা হোক।
ফোন বাজতে ইলিনা দেখল স্ক্রিনে সুপমা।এতদিন পরে কি ব্যপার?কানে লাগিয়ে বললো,হ্যালো?
কিরে তোর খবর কি?সুপমাকে মনে আছে?
আমি সহজে কিছু ভুলি না তুইও তো আর ফোন করিস না।
সংসারে এত ঝামেলা সামলাতে হয়,বিয়ে করিস নি তুই বুঝবি না।
বুঝবো না কেন,তোর ছেলে কেমন আছে?
আর বলিস না এত দুষ্টু হয়েছে কি বলব--।
বাচ্চারা ঐরকম দুরন্ত হয়,বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে,তারপর বল এতদিন পরে কি মনে করে?
তুই কি বিয়ে থা করবি না পণ করেছিস?
বিয়ে করব না তাতো বলিনি।বলেছিলাম মনের মত কাউকে নাপেলে বিয়ে করব না।
সংসারে ভাল-মন্দ সবই থাকে,একেবারে মনের মত সব হয়না।তুই কি কাউকে পেলি?
মনে হচ্ছে পেয়েছি।
কি করে সে,ব্যবসা না চাকরি?
কিছুই করেনা আপাতত তবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেবে।
সে কিরে কিছুই করেনা?তুই ওর সঙ্গে কিছু করিস নি তো?
ইলিনা মনে মনে হাসে।কলিং বেলের শব্দ হতে ভাবে এখন আবার কে এল। বলল,মনে হচ্ছে কেউ এসেছে এখন রাখছি পরে কথা বলব।
ইলিনা ফোন রেখে ভাবে, কাল কলেজ যাচ্ছি না ফর্ম জমা দিতে যাবো।আনুর সঙ্গে কাল দেখা হবে। ওকে এক পলক দেখার জন্য
মনটা ভীষণ আকুলি বিকুলি করছে।
দরজা খুলে চমকে ওঠে,এতো ওয়াটার ইন্সটেড অফ ক্লাউডস।এর মধ্যে দোকান বন্ধ করে এসেছে? অবাক হয়ে বলল,কি হল বেল বাজাচ্ছো কেন?তোমার কাছে চাবি নেই?
আরণ্যক চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নেও চাবি।
ইলিনা ভ্রু কুচকে এক পলক দেখে বলল,আগে ভিতরে এসো।
লিনার কথা উপেক্ষা করে সে সাধ্য নেই।সেজন্য আসতে চায়নি।আরণ্যক ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ করে পিছন ফিরে ইলিনা জিজ্ঞেস করল,কাল পড়তে আসবে না?
মাটির দিকে তাকিয়ে আরণ্যক বলল,আমি পরীক্ষা দেবনা।
কিছু একটা হয়েছে ইলিনা অনুমান করার চেষ্টা করে কি হতে পারে। লক্ষ্য করে ভিজে বেড়ালের মত দাড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস করল,সিদ্ধান্ত বদলের কারণটা জানতে পারি?
আমি পাড়া ছেড়ে অনেক দূর চলে যাচ্ছি।
বউ ফেলে চলে যাচ্ছো,চমৎকার! একটু এক বন্ধুর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল--।
আরণ্যক চোখ তুলে বলল,মেয়ে বন্ধুু?
ইলিনা হাসিটা গিলে নিয়ে বলল,ভার্সিটিতে হস্টেলে আমার রুমমেট ছিল।বীরু সামন্তের ভাগ্নী,কেন?
এমনি বললাম।
আজই কলেজে প্রিন্সিপাল ম্যামকে বললাম আমার হাজব্যাণ্ড ইউপিএসসিতে বসছে।লজ্জায় তাদের মুখ দেখাতে পারব না।
আরণ্যকের অস্বস্তি হয় তার জন্য লিনাকে লজ্জিত হবে।অসহায়ভাবে বলল,কি করব সন্তোষ মাইতি আমাকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করেছে।
এতো ব্লেসিং ইন ডিসগাইজ।এবার দিনরাত এককরে পড়বে।যাও পড়তে বোসো আমার অনেককাজ কাজ আছে।ইলিনা রান্না ঘরে চলে গেল।আরণ্যক কি করবে দাড়িয়ে ভাবতে থাকে।
জানলার ধারে বসেছে ইলিনা,বাস ছুটে চলেছে।বাসায় গিয়ে দেখবে দোকানে চলে গেছে। আর বড়জোর মাস খানেকের মত আছে।পরীক্ষাটা মিটলে স্বস্তি,রেজাল্ট কি হবে গড নোজ।প্রিন্সিপাল ম্যাম নিশ্চয়ই খবর নেবেন,কি হল?ইলিনার চিন্তা বেড়ে গেল। জীবনে একজন পুরুষসঙ্গী দরকার। প্রিন্সিপাল ম্যামের কথাটা মনে হতে শরীরে শিহরণ খেলে যায়।জানি না কবে থেকে স্বামী-স্ত্রী এক বিছানায় শোবার সুযোগ হবে।বাসনাদি বিয়ের কথা বলছিলেন,ওরা জানেনা সে বিবাহিত। ইলিনার চোখ ছলছল করে।ডলিবোস তার সমবয়সী প্রায়, বিয়ের পর সিমলা গেছিল।ওখানে বরফ পড়ার কথা শুনেছে। শীত তো প্রায় দোর গোড়ায়।ভোরের বাতাসে হিমেল স্পর্শ পাওয়া যায়।
কণ্ডাক্টর বালিঘাট-বালিঘাট হাকতে পাশে বসা মহিলা উঠে দাড়াল।মনে হয় উনি এখানে নামবে।মহিলা চলে যেতে সামনে দাড়ানো মহিলা বসে পড়ল।ইলিনা আড় চোখে দেখলো মহিলার কানের নীচে ঘাড়ে কাকড়া বিছের ছবির ট্যাটু।একটা কথা ভেবে মনে মনে হাসে। কদিন আগে ডিবির সঙ্গে পার্লারে গিয়ে ঝোকের মাথায় ইলিনাও এক জায়গায় ANU লিখিয়েছে অবশ্য কেউ দেখতে পাবে না।ডলি বোস চুল সেট করাতে ব্যস্ত ছিল।আইবির এই কাণ্ড সেও জানে না।বাথরুমে গেলে ইলিনা করুন চোখে দেখে আনু লেখার উপর মোলায়েম হাত বোলায়।
দোকান বন্ধ দেখে পিকলু অবাক হয়।রনোটা গেল কোথায়?ঐতো প্রভাত আর গোবিন্দ আসছে।ওরা আসতে প্রভাত বলল,পিকলু শুনেছিস সব?
অবাক চোখে পিকলু জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপারে?
কিরে গোবে বল?
গোবিন্দকে পছন্দ নয় তবু পিকলু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
গোবিন্দর মুখে সকালের ঘটনা শুনে পিকলুর মুখে কথা নেই।এত কাণ্ড হয়ে গেছে সে কিছুই জানেনা।রনো নেই ভাবতেও পারে না।
রনো কোথায় গেছে কিছু জানিস?পিকলু জিজ্ঞেস করল।
জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় যাবি বলল পেটের তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে।গোবিন্দ সংক্ষেপে বলল।
পেটের জন্য এই পাড়া ছেড়ে রনো চলে গেছে শুনে পিকলুর চোখ ঝাপসা হয়ে এল।সন্তোষদার উপর রাগ হয়।এমন তরতাজা সাহসী যুবক পেটের জন্য কোথায় ঘুরছে কে জানে।বিশু মান্তুকে আসতে দেখে ভাবে ওরা কি জানে ব্যাপারটা।
বিশু এসে বলল,আজ দোকান খোলেনি?
কে খুলবে?তুই কিছু শুনিস নি?
আচ্ছা গোবে কি হয়েছিল বলতো?বিশু জিজ্ঞেস করল।
কি আবার?দাদার বলেছিল দুপুরে দোকানে থাকতে হবে,কোথাও গেলে বলে যেতে হবে কোথায় যাচ্ছো।রনোটাও টেটিয়া বলে কিনা সকাল-বিকেল দোকান খুলে খদ্দের সামলানো আমার দায়িত্ব বিনিময়ে দু-বেলা আপনি খাই খরচ দেন।অন্য সময় আমি কি করি কোথায় যাই সেই কৈফিয়ত কাউকে দিতে যাব না।আমি দোকানের কর্মচারী কিন্তু আমার ব্যক্তিসত্বা কাউকে বিকিয়ে দিইনি।
এতে দোষের কি হল?রনো ভুল কি বলেছে?পিকলু বলল।
দুপুরে কোথায় যায় মান্তু তুই কিছু জানিস?বিশু বলল।
দুপুরে তোসে অফিসে থাকি রনো কোথায় যায় কি করে জানব--।
কোথায় যায় দাদাকে বলে যেতে পারতোত।গোবিন্দ বলল।
কেন দাদাকে বলে যেতে হবে কেন?পিকলু বলে,যদি বুঝতাম কোন অনৈতিক কাজ কিছু করেছে তাহলে অন্যকথা।রনোর উপর এটা জুলুম বলব।
দ্যাখ পিকআলু দাদা যা করেিছে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার গোবের কথা শুনে মনে হল, পার্টির কোনো বিষয় নয়।এখানে আমরা কি করতে পারি তুই বল?
মান্তু বলল,মতাদর্শগত কোনো ব্যাপার হলে চুপ করে থাকার প্রশ্নই আসে না।
হ্যা রনোকে আমিও বলেছিলাম দাদার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসতে--।
গোবিন্দ কথা শেষ করার আগেই বিশু বলল,রনো কি বলল?
কি বলবে আবার,ওর যা মাথা গরম আমি আর চাপাচাপি করিনি।
পিকলু বুঝতে পারে এদের বলে কিছু লাভ নেই।নিজের মনে বলে,সাহাবাবুর বাড়ীতে ছিল দাদা বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিজের দোকানে নিয়ে এল।এবার নিজের দোকান থেকেই বে-ঘর করে দিল।
সত্যি রনোর জন্য খুব খারাপ লাগছে।আগে বাড়ী ছাড়ল এবার পাড়া ছাড়া হয়ে গেল।মান্তু বলল।
রাস্তায় অফিস ফেরতা মানুষের ভীড়,সারাদিনের কাজের শেষে বাড়ী ফিরছে।আশপাশের দোকান থেকে আলো উক পলকপচে পড়ছে কেবল বইয়ের দোকানের ঝাপ বন্ধ।ওরা কথা বলতে বলতে পার্টি অফিসের দিকে চলে গেল।
ইলিনা ব্রাউন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখল কেউ নেই।থাকার কথাও নয়।বেলা কম হয়নি দোকান খুলতে হবে।এত চাপ একটু যদি পড়াশুনার সময় পেতো তাহলে অনু সিওর কিছু করে দেখাতো।আজ দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।বাজারের রাস্তা দিয়ে এলে এক পলক দেখা হত।পোশাক বদলে রান্না ঘরে গেল ইলিনা ব্রাউন।চায়ের জল চাপিয়ে কালকের কাজগুলো মনে মনে ভেবে নেয়।কলেজ যাবে না বলে এসেছে,কলকাতায় ফর্ম -জমা দিতে যাবে।এক কাপ চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
পার্টি অফিসে দল বেধে ঢুকতে দেখে কমরেড সন্তোষ মাইতি বলল,কি ব্যাপার কমরেড দলবেধে একেবারে পার্টি অফিসে?
র-র-রনো আজ দো-দ-দ-কান খোঅরেছিসলেনি।তোতলা শিবু বলল।
হু-উ-ম একটা নতুন লোক খুজতে হবে।
কেন রনো বসবে না?পিকলু জিজ্ঞেস করল।
সন্তোষ মাইতি ঘাড় ঘুরিয়ে পিকলুকে এক নজর দেখে ভাবেন,বিষয়টা ওদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে হালকাভাবে দেখা ঠিক হবেনা।রক্ষণাত্মক অবস্থান নিয়ে বললেন,রনো কেন বসবে না সেটা রনোকে জিজ্ঞেস করো।
কিরে গোবে তোর কিছু বলার নেই?গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করে পিকলু।
আমি কি বলব?আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বলল,এ পাড়া ছেড়ে চললাম।
কেন চলে যাচ্ছে কিছু বলেনি?
বলেছে ত অনেক কথা,সব আমার মনেও নেই।তোরা তো জানিস ওর কেমন মাথা গরম--।
পিকলু বুঝতে পারে গোবে আসল চেপে কথা ঘোরাতে চাইছে।
শুনুন কমরেড সবাইকে একটা কথা বলতে চাই--সন্তোষ মাইতি বললেন,এটা পার্টির আভ্যন্তরীন বিষয় নয়।রনো আমাদের পার্টির কেউ নয়।আমি চাইনা পার্টি অফিসে এই নিয়ে কোনো আলোচনা হোক।
ফোন বাজতে ইলিনা দেখল স্ক্রিনে সুপমা।এতদিন পরে কি ব্যপার?কানে লাগিয়ে বললো,হ্যালো?
কিরে তোর খবর কি?সুপমাকে মনে আছে?
আমি সহজে কিছু ভুলি না তুইও তো আর ফোন করিস না।
সংসারে এত ঝামেলা সামলাতে হয়,বিয়ে করিস নি তুই বুঝবি না।
বুঝবো না কেন,তোর ছেলে কেমন আছে?
আর বলিস না এত দুষ্টু হয়েছে কি বলব--।
বাচ্চারা ঐরকম দুরন্ত হয়,বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে,তারপর বল এতদিন পরে কি মনে করে?
তুই কি বিয়ে থা করবি না পণ করেছিস?
বিয়ে করব না তাতো বলিনি।বলেছিলাম মনের মত কাউকে নাপেলে বিয়ে করব না।
সংসারে ভাল-মন্দ সবই থাকে,একেবারে মনের মত সব হয়না।তুই কি কাউকে পেলি?
মনে হচ্ছে পেয়েছি।
কি করে সে,ব্যবসা না চাকরি?
কিছুই করেনা আপাতত তবে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেবে।
সে কিরে কিছুই করেনা?তুই ওর সঙ্গে কিছু করিস নি তো?
ইলিনা মনে মনে হাসে।কলিং বেলের শব্দ হতে ভাবে এখন আবার কে এল। বলল,মনে হচ্ছে কেউ এসেছে এখন রাখছি পরে কথা বলব।
ইলিনা ফোন রেখে ভাবে, কাল কলেজ যাচ্ছি না ফর্ম জমা দিতে যাবো।আনুর সঙ্গে কাল দেখা হবে। ওকে এক পলক দেখার জন্য
মনটা ভীষণ আকুলি বিকুলি করছে।
দরজা খুলে চমকে ওঠে,এতো ওয়াটার ইন্সটেড অফ ক্লাউডস।এর মধ্যে দোকান বন্ধ করে এসেছে? অবাক হয়ে বলল,কি হল বেল বাজাচ্ছো কেন?তোমার কাছে চাবি নেই?
আরণ্যক চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নেও চাবি।
ইলিনা ভ্রু কুচকে এক পলক দেখে বলল,আগে ভিতরে এসো।
লিনার কথা উপেক্ষা করে সে সাধ্য নেই।সেজন্য আসতে চায়নি।আরণ্যক ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ করে পিছন ফিরে ইলিনা জিজ্ঞেস করল,কাল পড়তে আসবে না?
মাটির দিকে তাকিয়ে আরণ্যক বলল,আমি পরীক্ষা দেবনা।
কিছু একটা হয়েছে ইলিনা অনুমান করার চেষ্টা করে কি হতে পারে। লক্ষ্য করে ভিজে বেড়ালের মত দাড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস করল,সিদ্ধান্ত বদলের কারণটা জানতে পারি?
আমি পাড়া ছেড়ে অনেক দূর চলে যাচ্ছি।
বউ ফেলে চলে যাচ্ছো,চমৎকার! একটু এক বন্ধুর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল--।
আরণ্যক চোখ তুলে বলল,মেয়ে বন্ধুু?
ইলিনা হাসিটা গিলে নিয়ে বলল,ভার্সিটিতে হস্টেলে আমার রুমমেট ছিল।বীরু সামন্তের ভাগ্নী,কেন?
এমনি বললাম।
আজই কলেজে প্রিন্সিপাল ম্যামকে বললাম আমার হাজব্যাণ্ড ইউপিএসসিতে বসছে।লজ্জায় তাদের মুখ দেখাতে পারব না।
আরণ্যকের অস্বস্তি হয় তার জন্য লিনাকে লজ্জিত হবে।অসহায়ভাবে বলল,কি করব সন্তোষ মাইতি আমাকে কাজ ছাড়তে বাধ্য করেছে।
এতো ব্লেসিং ইন ডিসগাইজ।এবার দিনরাত এককরে পড়বে।যাও পড়তে বোসো আমার অনেককাজ কাজ আছে।ইলিনা রান্না ঘরে চলে গেল।আরণ্যক কি করবে দাড়িয়ে ভাবতে থাকে।