29-11-2024, 12:34 PM
(This post was last modified: 29-11-2024, 12:35 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অংশুর কানে ঠেকল চেঁচামেচি অকস্মাৎ। মা ও বাবার তীব্র ঝগড়াঝাটির শব্দ। মায়ের গলার স্বর বেশি। বাবা যেন কেমন মিইয়ে গেছে। ঘুমোতে যাবার আগে এ হেন ঝগড়াঝাটি ওর অস্বস্তি বাড়ালো। ধীর পায়ে মা-বাবার ঘরের দরজার কাছে কান পাতলো সে।
---ডিভোর্স নেওয়ার জন্য তোমার অনুমতি লাগবে নাকি? বা রে! লোকের বউয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করবার সময় কার অনুমতি নিয়েছিলে?
মা বাবাকে প্রশ্ন করছে ঝাঁঝালো কন্ঠে। অংশু বুঝতে পারছে মা ডিভোর্স নিতে চায়। নিতান্তই রাগের কথা নাকি সত্যিই! বাবার কন্ঠে যেন কেমন কাকুতি মিনতি---সুচি, ছেলে-মেয়েরা কি ভাববে?
---ওরা সবটাই জানে। আর নতুন করে ভাবার কিছু নেই, ব্যাস। তোমার আর আমার এবার আলাদা হয়ে যাওয়া দরকার। খালি খালি তোমার জীবনে আমি বোঝা হয়ে উঠেছি।
---আমি কি তাই বলছি নাকি সুচি? একটা ভুল, সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি অত প্রহসন করছ...
---সামান্য বিষয়?
দরজার ফাঁক দিয়ে অংশু দেখতে পেল মায়ের মুখে ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যের হাসি। মা বাবার বিছানার চাদরটা পরিচ্ছন্ন করে রাখছে। খানিক মধ্যে মা শান্ত হয়ে বলল---দেখো, বিয়েটা আমাদের হয়েছিল শুধু দুই বাড়ির মতে নয়। ভালোবেসেও বিয়ে করেছিলাম। এখন মনে হয় আমাদের দুজনেরই পথ আলাদা হয়ে গেছে। বরং নিজের মত করে বাঁচো। আমি তোমার ওপর বার্ডেন হয়ে থাকবো না। আর ছেলে-মেয়েদের কথা বলছ? মেয়ে আমাদের যথেষ্ট বড় হয়েছে। ওর নিজস্ব জীবন আছে। ছেলেটাও তো ক'দিন পর আঠারো হবে। আর ডিভোর্স নিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছি মানে, আমার ছেলে-মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, তা হতে পারে না।
অংশু বুঝতে পারছে, এ' কোনো নিছক অভিমানের কথা নয়, রাগের বহিঃপ্রকাশ নয়, সত্যিই মা ডিভোর্স চাইছে। বাবা বলল---আমাদের কোনো কিছুই আলাদা হয়ে যায়নি। আমি একটা অপরাধ করেছি, মানছি। তারপর তো...
এবার মায়ের গলায় কান্নার সাথে দৃঢ়তা মেশানো শব্দ---আলাদা হয়ে গেছে। আমাদের সব কিছু আলাদা হয়ে গেছে। তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। যতদিন তুমি আমাকে ঠকাওনি। ততদিন আমিও তোমার প্রতি...কমিটেড ছিলাম।
---কি বলতে চাইছ, সুচি?
---যা বলতে চাইছি, তাই'ই। আমিও চিটার...অবশ্য এর জন্য তুমি দায়ী থাকবে। আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ঈশ্বরও নির্দয়...তোমার পাপের ভাগী আমাকেও করে দিয়েছেন।
জয়ন্ত বুঝতে পারছে না সুচিত্রা কিসের পাপের ভাগ বলছে! কি বলতে চায়! সুচিত্ৰাও চিটার মানে? সুচিও কি অন্য কারোর সাথে? প্রতিহিংসায়? জয়ন্তের পা দুটি কাঁপছে, সব কিছু ভেঙে যাচ্ছে যেন। আকাশ, মাটি, এই ঘর, মেঝে, ছাদ সব নিমেষে ভেঙে পড়ছে। সে বললে---সুচি? তুমি কি প্রতিহিংসায়...? কে সে?
সুচিত্রা বিছানাটা ততক্ষনে পরিপাটি করে ফেলেছে। সে বলল---প্রতিহিংসায়? হয়ত? কিন্তু তুমিই বা জানতে চাইছ কেন যে কে সেই ব্যক্তি? আমি তো কোনোদিন কিছুই লুকাইনি তোমার কাছে। তোমাকে ঠকালাম যখন তখনও না। এখন তোমার অপরাধ কমে গেছে, আমরা দুজনেই সমান পাপী। আমাদের মধ্যে পবিত্রতা বলে কিছু নেই।
---সুচি? এই বয়সে তুমি কি ছেলেমানুষ হয়ে গেলে? মিথ্যে বলছ কেন?
অংশু দেখল মায়ের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। বলল---তুমি পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে ফষ্টিনষ্টি করতে পারো, আর আমি এ' বয়সে করলে কৈফিয়ত?
জয়ন্ত থমকে গেল। কান গরম হয়ে গেল তার। মাথা ভার হয়ে উঠছে। সুচিত্রার মুখে জব্দ করবার তৃপ্তি আর অভিমান দুই মিশে আছে। অংশুর মুখের ওপরই দরজা খুলে সে বার হল। ছেলেকে দেখে চমকে গেল সুচিত্রা। বলল---তুই! ঘুমোসনি?
অংশু বড্ড বিরক্ত। ঝাঁঝ মেশানো কন্ঠে বলল---তোমাদের ঝগড়ায় কি ঘুমোনো যায়?
জয়ন্ত বুঝতে পারছে তাদের সমস্ত কিছু ছেলেরও আর জানতে বাকি নেই। এভাবে সত্যিই দিন দিন তারা ছেলে-মেয়ের কাছে হাস্যকর হয়ে ওঠার চেয়ে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়াটাই দরকার। সুচি আর তার দাম্পত্যে যে ফাটল ধরে গেছে, তা তারা জোর করে জোড় লাগালেও দাগ মিটবে না। বরং কত দম্পতি মধ্য বয়সে এসে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। যা হয় হোক, সে আর সুচির কাছে মাথা নোয়াবে না। সুচি ডিভোর্সের পিটিশন করেছে। জয়ন্ত কোনোরকম প্রতিরোধে যাবে না। এটাই তাদের ভবিতব্য।
কিন্তু সুচিও, নিছক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাকে চিট করল? কার সাথে? সত্যিই? নাকি তাকে ঈর্ষান্বিত করতে এমন কথা বলছে? মাথা থেকে বেরোচ্ছে না জয়ন্তের। বাইশ বছরের দাম্পত্য সঙ্গিনী তার স্ত্রী, তার দুই সন্তানের মা সুচিত্রাকে জয়ন্ত এতদিন স্বামী হিসেবে কতৃত্ব করেছে সংসারে, স্ত্রীকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে ছেলে-মেয়ের সামনে। আজ সেই সুচিত্রা কি অবলীলায় তাকে দ্বিধা, ধন্দে ফেলে রেখে পাশের ঘরে ঘুমোতে চলে গেল। যেন সব ঠাট্টা আর আর স্বামী নামক পুরুষের একমাত্র কতৃত্বকেই জবাব দিয়ে গেল সে।
চলবে।
---ডিভোর্স নেওয়ার জন্য তোমার অনুমতি লাগবে নাকি? বা রে! লোকের বউয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করবার সময় কার অনুমতি নিয়েছিলে?
মা বাবাকে প্রশ্ন করছে ঝাঁঝালো কন্ঠে। অংশু বুঝতে পারছে মা ডিভোর্স নিতে চায়। নিতান্তই রাগের কথা নাকি সত্যিই! বাবার কন্ঠে যেন কেমন কাকুতি মিনতি---সুচি, ছেলে-মেয়েরা কি ভাববে?
---ওরা সবটাই জানে। আর নতুন করে ভাবার কিছু নেই, ব্যাস। তোমার আর আমার এবার আলাদা হয়ে যাওয়া দরকার। খালি খালি তোমার জীবনে আমি বোঝা হয়ে উঠেছি।
---আমি কি তাই বলছি নাকি সুচি? একটা ভুল, সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি অত প্রহসন করছ...
---সামান্য বিষয়?
দরজার ফাঁক দিয়ে অংশু দেখতে পেল মায়ের মুখে ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যের হাসি। মা বাবার বিছানার চাদরটা পরিচ্ছন্ন করে রাখছে। খানিক মধ্যে মা শান্ত হয়ে বলল---দেখো, বিয়েটা আমাদের হয়েছিল শুধু দুই বাড়ির মতে নয়। ভালোবেসেও বিয়ে করেছিলাম। এখন মনে হয় আমাদের দুজনেরই পথ আলাদা হয়ে গেছে। বরং নিজের মত করে বাঁচো। আমি তোমার ওপর বার্ডেন হয়ে থাকবো না। আর ছেলে-মেয়েদের কথা বলছ? মেয়ে আমাদের যথেষ্ট বড় হয়েছে। ওর নিজস্ব জীবন আছে। ছেলেটাও তো ক'দিন পর আঠারো হবে। আর ডিভোর্স নিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছি মানে, আমার ছেলে-মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকবে না, তা হতে পারে না।
অংশু বুঝতে পারছে, এ' কোনো নিছক অভিমানের কথা নয়, রাগের বহিঃপ্রকাশ নয়, সত্যিই মা ডিভোর্স চাইছে। বাবা বলল---আমাদের কোনো কিছুই আলাদা হয়ে যায়নি। আমি একটা অপরাধ করেছি, মানছি। তারপর তো...
এবার মায়ের গলায় কান্নার সাথে দৃঢ়তা মেশানো শব্দ---আলাদা হয়ে গেছে। আমাদের সব কিছু আলাদা হয়ে গেছে। তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। যতদিন তুমি আমাকে ঠকাওনি। ততদিন আমিও তোমার প্রতি...কমিটেড ছিলাম।
---কি বলতে চাইছ, সুচি?
---যা বলতে চাইছি, তাই'ই। আমিও চিটার...অবশ্য এর জন্য তুমি দায়ী থাকবে। আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ঈশ্বরও নির্দয়...তোমার পাপের ভাগী আমাকেও করে দিয়েছেন।
জয়ন্ত বুঝতে পারছে না সুচিত্রা কিসের পাপের ভাগ বলছে! কি বলতে চায়! সুচিত্ৰাও চিটার মানে? সুচিও কি অন্য কারোর সাথে? প্রতিহিংসায়? জয়ন্তের পা দুটি কাঁপছে, সব কিছু ভেঙে যাচ্ছে যেন। আকাশ, মাটি, এই ঘর, মেঝে, ছাদ সব নিমেষে ভেঙে পড়ছে। সে বললে---সুচি? তুমি কি প্রতিহিংসায়...? কে সে?
সুচিত্রা বিছানাটা ততক্ষনে পরিপাটি করে ফেলেছে। সে বলল---প্রতিহিংসায়? হয়ত? কিন্তু তুমিই বা জানতে চাইছ কেন যে কে সেই ব্যক্তি? আমি তো কোনোদিন কিছুই লুকাইনি তোমার কাছে। তোমাকে ঠকালাম যখন তখনও না। এখন তোমার অপরাধ কমে গেছে, আমরা দুজনেই সমান পাপী। আমাদের মধ্যে পবিত্রতা বলে কিছু নেই।
---সুচি? এই বয়সে তুমি কি ছেলেমানুষ হয়ে গেলে? মিথ্যে বলছ কেন?
অংশু দেখল মায়ের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। বলল---তুমি পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে ফষ্টিনষ্টি করতে পারো, আর আমি এ' বয়সে করলে কৈফিয়ত?
জয়ন্ত থমকে গেল। কান গরম হয়ে গেল তার। মাথা ভার হয়ে উঠছে। সুচিত্রার মুখে জব্দ করবার তৃপ্তি আর অভিমান দুই মিশে আছে। অংশুর মুখের ওপরই দরজা খুলে সে বার হল। ছেলেকে দেখে চমকে গেল সুচিত্রা। বলল---তুই! ঘুমোসনি?
অংশু বড্ড বিরক্ত। ঝাঁঝ মেশানো কন্ঠে বলল---তোমাদের ঝগড়ায় কি ঘুমোনো যায়?
জয়ন্ত বুঝতে পারছে তাদের সমস্ত কিছু ছেলেরও আর জানতে বাকি নেই। এভাবে সত্যিই দিন দিন তারা ছেলে-মেয়ের কাছে হাস্যকর হয়ে ওঠার চেয়ে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়াটাই দরকার। সুচি আর তার দাম্পত্যে যে ফাটল ধরে গেছে, তা তারা জোর করে জোড় লাগালেও দাগ মিটবে না। বরং কত দম্পতি মধ্য বয়সে এসে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। যা হয় হোক, সে আর সুচির কাছে মাথা নোয়াবে না। সুচি ডিভোর্সের পিটিশন করেছে। জয়ন্ত কোনোরকম প্রতিরোধে যাবে না। এটাই তাদের ভবিতব্য।
কিন্তু সুচিও, নিছক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাকে চিট করল? কার সাথে? সত্যিই? নাকি তাকে ঈর্ষান্বিত করতে এমন কথা বলছে? মাথা থেকে বেরোচ্ছে না জয়ন্তের। বাইশ বছরের দাম্পত্য সঙ্গিনী তার স্ত্রী, তার দুই সন্তানের মা সুচিত্রাকে জয়ন্ত এতদিন স্বামী হিসেবে কতৃত্ব করেছে সংসারে, স্ত্রীকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে ছেলে-মেয়ের সামনে। আজ সেই সুচিত্রা কি অবলীলায় তাকে দ্বিধা, ধন্দে ফেলে রেখে পাশের ঘরে ঘুমোতে চলে গেল। যেন সব ঠাট্টা আর আর স্বামী নামক পুরুষের একমাত্র কতৃত্বকেই জবাব দিয়ে গেল সে।
চলবে।