25-11-2024, 10:12 PM
পার্ট : ১৫
রুদ্র তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো,
স্নেহা আবার উঠে দাড়িতে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো,
- বেড়িয়ে যান এখান থেকে আপনার মুখ আমি দেখতে চাইনা,
- মা আমার কথা শোনো সান্ত হও,( রুদ্রের মা)
- না, আমি আজ কারো কথা শুনবো না, আমি এই লোকটাকে এখানে দেখতে চাইনা।
- এমন করোনা মা, নিজের সন্তানের কথা একটু ভাবো।( রুদ্রের মা)
- হ্যা আমি নিজের সন্তানের কথা ভাবছি, আর তাই এই লোকটার ছায়া আমি আমার সন্তানের ওপর পড়তে দিতে চাইনা, চলে যান আপনারা প্লিজ চলে যান,
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললো স্নেহা,
রুদ্র দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে স্নেহার কথা শুনছে, দুইদিন আগেও এত থেকে অনেক বেশি অপমান রুদ্র তাকে করেছিলো, সেই কথাগুলোই বারবার মনে পড়ছে রুদ্রের।
সবাই বুঝতে পারলো আজ স্নেহাকে শতো ভাবে বোঝালেও স্নেহা বুঝবে না, তাই রুদ্রের মা রুদ্র আর তিতিরকে নিয়ে সেই বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো,
১ মাস পর,,,
এই এক মাসে রুদ্র অনেক কষ্টের মাঝে পার করেছে, স্নেহার বলা কথা তার করা অপমান তাকে ভালো থাকতে দেয়নি, কারন তার এটা ভেবেই বুকটা শেষ হয়ে গেছে যে প্রতিশোধের নেশায় তার ভালোবাসার মানুষকে সবার সামনে অপমান করেছিলো, আর নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছে, হাজারো কষ্ট আর ব্যাথা নিয়ে রুদ্র নিজেকে একটা রুমে বন্ধি করে ফেলেছে,
১ মাসে আশিস অনেকবার এসেছে, রুদ্রকে অনেকভাবে অনেক কিছু বুঝিয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। রুদ্র নিজেকে কোণঠাসা করে রেখেছে,,
আজ আবার এসেছে আশিস, তবে আজ রুদ্রকে কিছু বোঝাতে আসেনি সে এসেছে রুদ্রকে নিজের কিছু মনের কথা বলতে,
আশিস এসেছে শুনে রুদ্র রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো, রুদ্রকে দেখতেই আশিস দাঁড়িয়ে গেলো,
- আমাকে নতুন করে কিছু বোঝানোর দরকার নেই আশিস!!
- হ্যা ভাই আমি জানি, আপনাকে সবসময় নিজের ভাই মনে করতাম কিন্তু একটা সময় নিজের বোনের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু প্রতিশোধের জন্য আপনি আমাকে আড়াল করেছিলেন!!
সবার কাছে আমি আপনার এসিস্টেন আশিস।
কিন্তু আমি জানি আমি কে, আমি হচ্ছি সে ভাই যে নিজের বোনের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বোনের নামে খারাপ কথা শুনেছি। আমি হচ্ছি সেই ভাই নিজের বোনের নামে খারাপ কোথা শুনেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি,
ভাই স্নেহাকে ভাবিকে আপনি এমনি এমনি তো ভুক বোঝেননি কেও আপনাকে প্লেন করে ভুল বুঝতে বাদ্ধ্য করেছিলো, ভাই কারো প্লেনের ফাদে পরে আপনি অধরা আপুর মাড়া যাওয়ার পেছনে স্নেহা ভাবিকে দায়ী করে কষ্ট দিতে পেরেছেন। কিন্তু ভাই আপনি সেই মানুষগুলোকে শাস্তি দেয়ার কথা ভুলেই গিয়েছেন যারা আপনার নামে স্নেহা ভাবির কাছে খারাপ কথা বলেছে আর আপনার কাছে খারাপ বানিয়েছে স্নেহা ভাবিকে। আর তার ওপরে ভিত্তি করেই আপনি স্নেহা ভাবিকে কষ্ট দিয়েছেন আর এখন নিজেও কষ্ট পাচ্ছেন,
ভাই অধরা আপু যাওয়ার পর মাও চলে গেলো তারপর বড় ভাই হিসেবে এই আপনি বুকে টেনে নিয়েছেন, তাই বড় ভাইয়ের এই কষ্ট ছোট ভাইকেও কষ্ট দেয়।
আর তাই ভাই আপনাকে হাত জোর করে বলছি, অপরাধীদের শাস্তি দিন আর। যদি অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে নিজেকে এভাবে বন্ধি করে রাখেন তবে কিছু হবেনা ভাই,
বলেই আশিস কাঁদতে, কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো, আশিসের কথাগুলো যেন রুদ্রের অন্তরে যেয়ে লেগেছে, কারন আশিসের বলা একটি কোথাও ভুল না সত্যি,
রুদ্র নিজের দু হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করলো নিজেকে শক্ত করে সিদ্ধান্ত নিলো
- আমার নিজেকে শক্ত করতে হবে, শাস্তি দিতে হবে আমাদের জীবন নষ্ট করে দেয়ার জন্য যারা দায়ী তাদের।
২ ঘন্টা পর,
গাড়ির হর্ন বেজেই যাচ্ছে রুদ্র যখন আশিসলে বাসা থেকে নিতে আসে তখন এভাবে হর্ন বাজাতে থাকে, যেন আশিস তাড়াতাড়ি নিচে নামে,
তবে রুদ্র তো এখন বাসা থেকে বের হয়, তাইলে হয়তো অন্য কেও এমন করে হর্ন বাজাচ্ছে ভেবেই আশিক আবার আগের মতো বসে থাকে, হর্নের আওয়াজ সইতে না পেরে জেদ করে থাই খুলে বাহিরে দেখে,
তারপর আশিস যা দেখে তা তার মোটেও বিশ্বাস হয়না, রুদ্র এসেছে সাথে তার গাড়ি। এটা দেখেই আশিসের চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে,
সে এটাই চেয়েছিলো, রুদ্রকে একটা স্বাভাবিক জীবনে আনতে চেয়েছিলো।
আশিস দৌড়ে নিচে নামে, রুদ্র দেখে আশিস জড়িয়ে ধরে রুদ্রকে,
- ভাই আমি এটাই চেয়েছিলাম, আপনি যেন একটা স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন ভাই বিশ্বাস করেন আজ আমার অনেক খুশি লাগছে,
- হুম, ভাবলাম তুই ঠিকই বলেছিস,ছোট হলেও তোর কথার যুক্তি আছে, এবার চল অনেকদিন তোর ভাবিকে দেখিনা আজ তোর ভাবিকে দেখতে যাবো,
চোখ মুছতে মুছতে আশিস বললো,
- হ্যা ভাই চলেন আজ আপনি যেখানে যেতে চাইবেন আপনাকে সেখানেই নিয়ে যাবো চলেন,
বলেই রুদ্র আর আশিস বেড়িয়ে পড়লো,
স্নেহার আজ ভালো লাগছে না, তাই বাড়ির পাশেই একটা রাস্তা আছে সেখানে হাটতে বের হয়েছে, রাস্তার পাশে একটা ফাকা যায়গায় বাচ্চারা খেলাদুলা করে, আর বসার জন্য ব্যাঞ্চ ও রাখা আছে, অনেক মহিলারাই বিকালে এখানে বসে গল্প করে পরিবেশটা সব মিলিয়ে দাড়ুন।
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে, স্নেহার চোখ পরে একটা কাপল এর ওপর মেয়েটা প্রেগন্যান্ট তাই তার হাসবেন্ড অতি যত্নর সাথে মেয়েটার হাত ধরে হাটছে,
ব্যাপারটা দেখে না চাইতেও স্নেহার চোখ জলে ভিজে ওঠে, হয়তো ওর বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হলে আর রুদ্র সব কিছু উলটপালট করে না দিলে তার জীবনেও এমন সময় আসতো,
- ভেবোনা, ও লোকটা তো বউয়ের হাত ধরে হাটছে তোমাকে আমি কোলে তুলে হাটবো,
চেনা কারো কণ্ঠস্বর পেতেই স্নেহা পেছনে তাকালো,
রুদ্র সানগ্লাস টা খুলতে,খুলতে বলছে,
- আপনি????
- হ্যা আমি,কেন? অন্য কারো আশা করেছিলে নাকি জান?
- আপনি এখানে কেনো? কি চান?
- আমার বউ আর বাচ্চাকে নিতে এসেছি, আর কতো দিন বউটা এভাবে রাগ করে অন্যের বাড়িতে পরে থাকবে বলো?
- আপনার আজেবাজে কথা বাদ দিন, কিসের বউ? কিসের বাচ্চা। আপনাকে অনেক আগেই আমি বলেছি যে আমার বাচ্চা আর আর আমার প্রতি আপনার আর কোনো অধিকার নেই, বার বার এই এক অধিকার নিয়ে আমার কাছে আসবেন না।
- এসব কি বলছো বউ? তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তার প্রমান ও আছে আর এই বাচ্চাটা যে আমার ডি এন এ টেস্ট করলে তা প্রমান হয়ে যাবে, এখন বেশি কথা বলতে ভালো লাগছেনা চলো আমার সাথে বলেই রুদ্র স্নেহার হাত ধরে টানতে লাগলো,
- ছাড়ুন আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ছাড়ুন।
স্নেহার কোনো কথাই শুনছে না রুদ্র,
স্নেহাকে সোজা গাড়িতে বসিয়ে দিলো,
- কি হলো আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমাকে ছেড়ে দিন আমি কিন্তু চেঁচাবো।
রুদ্র গাড়িতে গান ছেড়ে ভলিউম জোরে করে দিলো, যেন স্নেহা চেচালেও কেও শুনতে না পায়,
২০ মিনিট পর গাড়ি থামলো,
এই ২০ মিনিটে স্নেহা অনেকবার তাকে ছাড়তে বলেছে কিন্তু রুদ্র ফুরফুরে মেজাজে গান শুনেছে,
গাড়ি থামার পরেই স্নেহা দরজা খুলে বের হয়েই চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে,
- আমাকে এখানে কেনো এনেছেন? আপনি আসলে কি চান? আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমি আপনাকে আর নিতে পারছিনা। কেনো এমন করছেন আপনি??(একটানে কথাগুলো বলে গেলো স্নেহা)
রুদ্র স্নেহার কাছে যেয়েই স্নেহার কোমর চেপে ধরলো, স্নেহাকে নিজেত সাথে মিশিয়ে বলতে শুরু করলো,
- আমি তোমাকে এনেছে কারন অনেকদিন তোমার থেকে দূরে থেকেছি আর পারছিনা। তোমার নেশা আমাকে আগেও পাগল করেছে আর আজও করে, তোমার ভেতরে যে আছে সে আমার সন্তান আমি তোমাকে চাই আমি আমার সন্তানকে আমার জীবনে ফিরে পেতে চাই, আমি নিজে হাতে আমার প্রেগন্যান্ট বউয়ের সেবা করতে চাই।
প্লিজ আমি মানছি আমি ভুল করেছি এ ভুলের কোনো ক্ষমা হয়না কিন্তু আমিতো ক্ষমা চাচ্ছি স্নেহা, আমাকে তোমার থেকে আর আমার সন্তানের থেকে দূরে করে দিওনা স্নেহা প্লিজ। আমাকে আর একবার সুযোগ দাও।
- আমাকে যে অসম্মান আপনি করেছেন? আমার সন্তানকে নিয়ে যে বাজে কথা বলেছেন তা ফিরিয়ে নিতে পারবেন? আমার সেই চোখের পানি গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবেন? জানি পাড়বেন না, আর তেমন ভাবেই আমি পারবোনা আপনাকে ক্ষমা করতে,শুনুন বাহিরের ক্ষতো গুলো দেখা যায় তাই তাতে মলম লাগিয়ে দিলে তা খুব সহজে সেরে যায়। কিন্তু অন্তরের ক্ষতো দেখা যায়না আর তাতে মলম ও লাগানো যায়না, আর অন্তরের হওয়া ক্ষতো কক্ষনোই ঠিক হয়না।
তাই আরো একবার আপনাকে বলছি চলে যান আমার জীবন থেকে আমাকে আর আমার সন্তানকে ভালো থাকতে দিন।
আপনি আমাকে ডিভোর্স দিন, আমাকে মুক্তি দিন আপনি,
- ঠাসসসসস
স্নেহার বলা কথাগুলো রুদ্রের অন্তর যেমন ক্ষতবিক্ষত করেছে ডিভোর্স এর কথা শুনে মাথায় যেন রক্ত উঠে গেলো রুদ্রের, তাই রাগ সামলাতে না পেরে,
- তোর এতোবড় সাহস আমার থেকে আলাদা হতে চাস, কেনো বুঝিসনা তুই আমি তোকে কষ্ট দেই, মাড়ি যাই করিনা কেনো সবথেকে বড় আমি তোকেই ভালোবাসি। তুই যদি জীবনে না থাকিস তবে আমি বাচবো কিভাবে? আমি তোকে অনেক বেশি ভালোবাসি স্নেহা কথাটা বলেই স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো রুদ্র,
আর বলতে লাগলো,
- প্লিজ স্নেহা, এমন করোনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো।
অনেকক্ষন স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে নিজের কথাগুলো বলছে রুদ্র,
কিন্তু স্নেহাকে জড়িয়ে ধরার পর স্নেহার কোনো সারাশব্দ পাচ্ছেনা রুদ্র
তাই স্নেহাকে দেখার জন্য হালকা আলগা করতে রুদ্রের কোলে ঢোলে পড়লো স্নেহা,
স্নেহা অজ্ঞান হয়ে ঢোলে পড়লো রুদ্রের কোলে,
- এই স্নেহা, স্নেহা। কথা বলো! কি হলো তোমার।
স্নেহার গাল ধরে বলছে রুদ্র, স্নেহার সারাশব্দ না পেয়ে স্নেহাকে গাড়িতে বসিয়েই রওনা দিলো হাসপাতালে,
চলবে,,,
( গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন, ☺
ধন্যবাদ।)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)