25-11-2024, 10:10 PM
পার্ট : ১২ ( রহস্যভেদ)
মনে আছে, আজ থেকে দু- বছর আগে তুমি তোমার মামা বাড়ি থাকতে, যেখানে তোমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো। আমি প্রাইভেট পড়াতাম সেই সুবাবে তোমার সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। তুমি কোনো পড়া না বুঝলেই আমার কাছে ছুটে আসতে, তোমার সহজ সরল ব্যাবহার এক আলাদা ভালোলাগা জন্ম দিতো তোমার প্রতি। আমি ভেবেছিলাম যে টাকা পাহাড়ে গড়ে ওঠা তোমার টাকা পয়শার ওপরে কোনো লোভ নেই, নেই কোনো আগ্রহ। তুমি শুধু মানুষকে ভালোবাসতে পারো। তোমার ভেতরে একটা সুন্দর মন তোমাকে সেরা করে তুলেছে। তুমি কখনো কারো ভালো ছাড়া খারাপ চাইতেই পারোনা।
আর এসব ভালোলাগার জিনিস থেকেই একটা সময় তোমাকে নিজেএ মনের খুব গভীরে ঠাই দিতে শুরু করি। তোমার কথা তোমার হাসি আমাকে তোমাকে ভালোবাসতে বাদ্ধ্য করে,
একটা সময় তুমিও হয়তো আমাকে ভালোবাসতে শুরু করো।
আমার সাথে অনেকটা সময় কাটাতে শুরু করো। মধ্যবিত্ত হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমাকে রোজ তোমার ভালোবাসা গুকো প্রকাশ করো।
প্রতিদিন তিতিরের সাথে গল্প করতে এসে আমার টেবিলে একটা করে চিঠি রেখে যাও যাতে লেখা থাকতো হাজারো ভালোবাসার জড়ানো কথা। যা তুমি আমাকে সামনাসামনি বলতে পারতে না, সেই দিনগুলো আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিলো, আমার প্রেয়সীর সাথে কাটানো বেষ্ট সময়।
প্রতিদিন ভাবতাম চিঠিগুলো আমাকে কে দেয়।
কিন্তু কখনো কল্পনা করিনি তুমি সে হবে,
কারন তুমি আমার সামনে এমন একটা ভাব নিতে ভালোবাসা কি তুমি তাই বোঝোনা।
নিজের ভেতরে প্রবল ইচ্ছা নিজের শ্রেয়সী কে দেখার।
তাই একদিন ঠায় ধরলাম আমি আমার শ্রেয়সী কে খুঁজবো। কলেজ,কোচিং সব যায়গায় সে পত্রকন্যাকে খোজার চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলাম না, হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম। আমি যেদিন বাড়িতে না থাকি সেদিনই চিঠি আমার টেবিলে থাকে কিন্তু ছুটির দিন বাসায় থাকলে চিঠি পাইনা।
আমি বুঝতে পারলাম পত্রকন্যা আমার আশেপাশের কেও।
একদিন বাসা থেকে বের হবার ভান করেও পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে বাসায়ই থাকলাম,
অনেকক্ষন ব্যালকনিতে চুপ করে বসে রইলাম, কিন্তু কাওকেও দেখতে পেলাম না। সেদিন আমার প্রেয়সীকে আমার আর দেখা হলোনা।
তারপরেরদিন যা হলো তা দেখার জন্য কেও রেডি ছিলোনা,
অধরা আপু, লাশ নিয়ে আশা হলো বাড়িতে, আশেপাশে সব মানুষ বলাবলি করছিলো অধরা আপু কোথা থেকে তার চরিত্রে দাগ লাগিয়ে এসেছে তার গর্ভে কোনো অবৈধ সন্তান। সবাই অধরা আপুর লাশের সামনে ছি ছি করছিলো। শেষ অবদি লাশটাকে জানাজা দিতেও কাওকে পাওয়া যায়নি। অধরা আপুর মা এসব সইতে না পেরে স্টোক করে,
কিন্তু সবাই এসিব বিশ্বাস করলেও আমি এসব কখনো বিশ্বাস করিনি।
তাই আসল ঘটনা জানতে চেষ্টা করি আর তারপর যা জানতে পারি, তা হলো,
তোমার ভাই, হ্যা তোমার আপন ভাই
শ্রাবন। তোমার ভাই অধরা আপুর সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে তাকে বিয়ের লোভ দেখিয়ে ভোগ করেছে তারপর যখন দায়িত্ব নেবার সময় হয়েছে কাপুরুষের মতো পালিয়ে গেছে। মড়তে ছেড়ে গিয়েছে আপুনে এসব সইতে না পেরে নিজের প্রান দিয়ে দেয় অধরা আপু।
আর তোমার বাবা তার টাকা আর পাওয়ার দিয়ে এসবকিছু মাটিচাপা দিতে চায়। তখন আমার বাবা প্রতিবাদ করে এগিয়ে দাঁড়ায়। যখন তোমার বাবা দেখে আমি আর আমার বাবা সবার সামনে সত্যিটা তুলে ধরছি ঠিক তখনি আমাকে কিডন্যাপ করে নেশা করায়।।একটা রুমে অন্য একটা মেয়েকে আমার সাথে প্লেন করে রেখে দেয়।
পরেরদিন পুলিশসহ আমাকে ধরে, পরে জানতে পারি একটা মেয়ে আমার নামে ''. মামলা করে।
আমাকে পুলিশ নিয়ে যায়, আর আমার সাজা হয়। এসব শোক সইতে না পেরে আমার বাবা স্টোক করে মাড়া যায়।
৬ মাস আমি জেলে থাকি। সেখানে আমার পরিচয় হয় সালাম নামে একটা গুন্ডার সাথে। এ দুনিয়ায়ে ভালোর মূল্য দিবেনা ততোদিনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম তাই আমি আর আসলাম জেল থেকে পালানোর ট্রাই করি। আর ৩ বারের সময় পালাতেও পারি।
তারপর হাত মেলায় কিছু গুন্ডাদের সাথে ৫ মাসের মাঝে আমিও একজন মাফিয়া হয়ে যাই। টাকা দিয়ে নিজের করা সব কুকর্মগুলো ঢেকে ফেলি। প্রচুর টাকা কামাতে, কামাতে টোপ বিজন্যাসম্যানদের একজন হয়ে যাই তবে রায়হান নামটা বদলে যায় সবাই আমাকে চেনে আমার আরেক নামে "রুদ্র" ১ বছরের ভেতরে সফল হই খারাপ কাজ করে, আর ১১ বছর ভালো কাজ করেও বাসায়, বাসায় টিউশনি করার পর ও মানুষের অবহেলা ছাড়া কিছু পাইনি।
রুদ্রের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,
তারপর আমার আসল কাজ করতে শুরু করি, প্রতিশোধ।
তোমাদের সব খবর কালেক্ট করি, তোমার বাবার শত্রু, বন্ধু সবার খোজ নেই। আর পুরো দু- বছর পরে সেদিন তোমাকে তুলে নিয়ে যেয়ে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সব কিছু করি।
তবে জানো এতোকিছুর পরে জেলে থাকা অবস্থায় একদিন খুব মনে পরে পত্রকন্যার কথা। একদিন তিতির আমাকে দেখতে যায়। সেদিন ওকে জিজ্ঞেস করি যে আমার রুমে কি অচেনা কেও আসতো কিনা!
তিতিরিকে অনেকভাবে জিজ্ঞেস করার পর আমি জানতে পারি আমি বাসায় না থাকলে একমাত্র তুমি আমার রুমে যেতে তখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে সে তুমি, তারপর তিতিরকে একদিন তোমার লেখা খাতা নিয়ে আসতে বলি আর ও নিয়েও আসে। তারপর গভীরভাবে হাতের লেখা মিলিয়ে দেখি। অবশেষে বুঝতে পারি আমার সে পত্রকন্যা আর কেও না, যাকে আমি মনে মনে পছন্দ করতাম সেই পত্রকন্যা।হ্যা স্নেহা সে তুমি।
তবে জানো তোমাকে নিয়ে বাচার ইচ্ছা আমার তখনো শেষ হতে যায়নি।
জেল থেকে বের হয়ে আমি অধরা আপুর মাড়া যাবার দিন কি হয়েছিলো সেই ঘটনা খোজার চেষ্টা করি, সিনস এরিয়াতে লাস্ট অধরা আপুকে দেখা গিয়েছিলো, জানতে পারি আর আমি সেইদিনের সব সি সি টিভি ক্যামেরা জোগাড় করি।
তারপর দেখলাম,,,,
অধরা আপু আর তুমি সেই বিল্ডিং এ ঢুকছিলে, কিছুক্ষন পর তুমি বের হলে একা। আর তার কয়েকঘন্টা পর অধরা আপুর লাশ বের করা হলো সেই বিল্ডিং থেকে।
ভিডিও টা দেখে জানতে পাড়লাম যে তুমি তাহলে সব ঘটনা জানো,,
তারপর সেখানে যেয়ে খোজ নিলাম, অধরা আপু আর তোমার ছবি দেখিয়ে সেখানকার মেনেজার কে জিজ্ঞেস করলাম এই দুইটা মেয়েকে চিনে কিনা, সে ভালো করে খেয়াল করে বললো,
কয়েকমাস আগে দুইটা মেয়ে তাদের এ দোকানে দাঁড়িয়ে অনেক ঝগড়া করেছিলো আর সে দুটা মেয়ে তুমি আর অধরা আপু, অধরা আপুর চেহারা ক্যামেরায় দেখা গেলেও তোমার মুখটা দেখা যাচ্ছিলো না, তবে সেটা তুমিই ছিলে,
লোকটা বলছিলো ঝগড়ার সময় তুমি অধরা আপুকে অনেক অপমান করেছিলে আর বলেছিলে সব ফাস করে দিবে,
আর তারপর অধরা লাশ হয়ে গেলো, ফাস হলো তবে মিথ্যাগুলো। তোমাদের মতো বড়লোকরা বেচে গেলো, কিন্তু অধরা আপুদের জীবন আমাদের জীবন তছনছ হয়ে গেলো,
রুদ্র আর কথা বলতে পারছেনা, কাঁদতে, কাঁদতে ফ্লোরে পড়ে গিয়েছে,
স্নেহার আগের মতোই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে,
- আজ আমি শোধ নিয়েছে স্নেহা, আমি নিয়েছি প্রতিশোধ।
তোমাকে বিয়ে করার পর তোমার কথা বলে ভয় দেখিয়ে তোমার বাবার সম্পত্তি সব লিখে নিয়েছি নিজের নামে, তোমার বাবাকে সেই অবস্থায় দার করিয়ে দিয়ে যে অবস্থায় একদিন অধরা আপুর পরিবার আর আমার পরিবার ছিলো।
আজ আমি শান্তিতে ঘুমাবো।
আজ তোমরা অসহায়, না পারবে কোনো আইনের কাছে যেতে না পারি পারবে কোনো প্রতিবাদ করতে,
আমার পায়ের নিচেই সারাজীবন পড়ে থাকতে হবে। কারন তুমি জানো আমার নাম ছাড়া তোমার আর তোমার সন্তানের এ দুনিয়ায় বেচে কতোটা কষ্টের। আজ তোমাকে আমার কাছেই পড়ে থাকতে হবে, নয়তো এ সমাজ অধরা আপুর মতো তোমাকেও ছি ছি করবে,
আমার ছায়া ছাড়া তুমি বাচতে পারবে না,
অনেকক্ষন পর স্নেহা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে সুধু এতোটুকু বললো,
- কে বলেছে আমি আপনার কাছে পড়ে থাকবো???আমার আল্লাহ জানে আর আমি জানি! তাই একদিন সব কিছুর বিচার আল্লাহই করবে,,
নিজের বিয়ে করা বউকে সবার সামনে ধর্ষিতা প্রমান করেছেন, নিজের সন্তানকে সবার সামনে অবৈধ প্রমান করেছেন! আপনি কি ভেবেছেন আল্লাহ এসব সয্য করবে?
না আমি মেনে নিলেও আল্লাহ মেনে নিবেনা।
চোখে টলমলে পানি নিয়েই স্নেহা বেড়িয়ে পড়লো, বাড়ি থেকে।
আর রুদ্র স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে,
আজ তার বুকের ভেতরটা কেপে উঠছে স্নেহার কথা শুনে,
চলবে,,,
( কেমন লাগছে???? রহস্যটা। স্নেহার কি সত্যি কোনো দোষ ছিলো?)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)