22-11-2024, 11:39 AM
পর্ব: ১৯
ছুটির দিন মানে সুচির অনেক কাজ। কোথায় সারা সপ্তাহের কলেজের পর একটু রেস্ট নেবে, তা নয়। জয়ন্ত বরং উল্টোটা। রেস্ট পেলে ও' হয় পড়ে পড়ে ঘুমোবে, নয়তো বুক সেলফ থেকে ভারী ভারী মেডিক্যাল সায়েন্সের বই নামিয়ে পড়বে দিনভর।
আজ সকালে দিনটা শুরু হল ফেরিওয়ালার হাঁকডাকে। দর কষে সুচিত্রা বিকিয়ে দিল ঘরের পুরোনো ভাঙাচোরা জিনিস পত্র আর দৈনিক খবরের কাগজগুলো। ঐ বিক্রির টাকাটা অবশ্য ছবির প্রাপ্য। সুচি ঐ দায়িত্ব ছবিকেই দিয়েছে, ঘরের বাতিল বোতল, খবরের কাগজ, প্লাস্টিক এসব আলাদা করে রাখতে।
জয়ন্ত চা খেয়ে ভাবলো একবার বাজার যাবে। আজ ও'র ডিউটি আছে দুপুর দুটো নাগাদ। সুচিকে বললে তাই---একবার বাজার যাবো সুচি, মাছ কি বাজারে এসেছে দেখি।
সুচি তখন জয়ন্ত আর অংশুর একগাদা জামা কাপড় বার করেছে কাচবার জন্য। বললে---যাচ্ছো যখন ময়দা এনো। সকালের জল খাবার বানাতে গিয়ে ছবি বললে ময়দা শেষ।
জয়ন্ত থলে হাতে হাঁটা দিল বাজারের পথে। অংশুর হোম টিউটর এসেছে। বিট্টু-লাট্টুর এসময়ে অংশুর পড়ার ঘরে যাওয়া বারণ বলে সুচিত্রা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে এসেছে।
ছোট বাজার হলেও মাছের যোগান বেশ এখানে। জয়ন্ত দেখলে ভালো সাইজের পাবদা মাছ আছে। এদিকে বেলা হচ্ছে, সুচিত্রা যে কাজ নিয়ে ঘর সংসারে লেগেছে; কে জানে এই মাছ নিয়ে গেলে আজই রান্না করবে কিনা।
জয়ন্ত লোভ সংবরণ করতে পারলো না। থলে ভরে মাছ আর সবজি নিয়ে মুদির দোকানে রওনা হল। ডাক্তার বাবু থলে হাতে মুদির দোকানে এলে পরে বড্ড খুশি হয় নগেন। নগেনের চারপুরুষ কলকাতায় আছে। আদতে কিন্তু ওরা বিহারী। জয়ন্তকে দেখেই কর্মচারীকে নির্দেশ দিলে---ডাক্তার বাবুর যা যা লাগবে দিয়ে দে পুণ্য।
পুণ্য ছেলেটা হুগলি জেলার বাসিন্দা। ডাক্তারবাবু চন্দননগরের মানুষ জেনে ছিল যেদিন, সেদিন থেকে যেন ও' আরো বেশি গদগদ। বললে---সার, বৌদি লিস্টি দিয়েছে তো?
সুচি মুদির দোকানের বাজারের তালিকা করে দেয় প্রায়শই বলে, পুণ্য অমন বলল। জয়ন্ত হেসে বললে---না, না। তুমি আমাকে ভালো ময়দা দিও দেখি। বেশি না, তিন কিলো মত দিও। বড় ব্যাগ আনিনি। অত ভার নিয়ে যেতে পারবো না। ।
নগেন বললে---সার, বললেই তো পুণ্য পৌঁছে দেবে।
জয়ন্ত হেসে বললে---থাক থাক। ওসব ফাই ফরমায়েশ তোমাদের বৌদির করোগে। আমি পুরুষ মানুষ, আমার এসব লাগবে না।
নগেন লজ্জায় হেসে বলল---সার, কদিন ধরে দেখছি খাবার পর বড্ড শরীর দুর্বল লাগে। মনে হয় প্রচণ্ড ক্লান্তি। কি হয়েছে বলুন তো।
জয়ন্ত বিট্টু-লাট্টুর জন্য কয়েকটা চিপসের প্যাকেট কেটে বললে---কিছু না। সুগারটা চেক করাও। আর ওসব ঘি-বনস্পতি কম খাও হে।
নগেন বললে---স্যার, তাহলে খাবোটাই কি বলেন?
---চারপুরুষ বাংলায় থাকলে এখনো মাছ খেতে শিখলে না নগেন। চুনো মাছ খাও।
থলে ভর্তি বাজার নিয়ে জয়ন্ত বাড়ি ঢুকে বিট্টু-লাট্টুর হাতে চিপসের প্যাকেট দুটো দিতেই ওরা বড্ড খুশি। সুচি তৎক্ষনাৎ বলে উঠল---ওসব আনহেলদি চিপস বাচ্চাগুলোর জন্য আনো কেন!
জয়ন্ত যতই ডাক্তার হোক না কেন স্বাস্থ্য নিয়ে সুচিত্রা অনেক বেশি সচেতন। জয়ন্ত বরং একটু ফাঁক ফোকর দেয়। সে বলল---ওরা বাচ্চা। সব কিছু খাওয়া শিখতে হবে। তাছাড়া ফুটপাতে থাকতো ওদের কত কি অভ্যেস আছে জানো? এই করেই না পিউয়ের অভ্যাস খারাপ করেছ তুমি। এখন দক্ষিণ ভারতের খাবারের সাথে দেখছ না কেমন মানিয়ে নিতে পারছে না।
সুচিত্রা ড্রয়িং রুমের টিভির পাশে পড়ে থাকা একটা চাবির গোছা তুলে বললে---এটা কিসের চাবি গো? তোমার পকেটে ছিল!
জয়ন্ত চমকে গেল। বলল---অনলের ফ্ল্যাটের চাবি।
---অনল দা এসেছে নাকি? তা ওনার ফ্ল্যাটের চাবি তোমার কাছে কেন?
বড্ড অস্বস্তিতে পড়ল জয়ন্ত। বলল---অনল ক'দিন আগে এসেছিল দিল্লি থেকে। ওর রিজেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দেবে। যতদিন পড়ে আছে দেখাশোনা করার জন্য দিয়ে গেছে চাবিটা।
সুচি ডাইনিং টেবিলটা গোছাতে গোছাতে বলল---আর লোক পায়নি তোমাকে দিয়ে গেল। নিজের সংসারের যে খোঁজ রাখে না, সে আবার অপরের ফ্ল্যাটের তদারকি করবে।
জয়ন্ত হাসল। বলল---সে যাইহোক। সুচি, পাবদা মাছ এনেছি। দুপুরে রাঁধবে?
---এখন? বেলা এগারোটা হল। ছবি চলে গেছে। এবার আমি স্নানে যাবো। এখন আর কিছু পারবো না।
ছুটির দিন মানে সুচির অনেক কাজ। কোথায় সারা সপ্তাহের কলেজের পর একটু রেস্ট নেবে, তা নয়। জয়ন্ত বরং উল্টোটা। রেস্ট পেলে ও' হয় পড়ে পড়ে ঘুমোবে, নয়তো বুক সেলফ থেকে ভারী ভারী মেডিক্যাল সায়েন্সের বই নামিয়ে পড়বে দিনভর।
আজ সকালে দিনটা শুরু হল ফেরিওয়ালার হাঁকডাকে। দর কষে সুচিত্রা বিকিয়ে দিল ঘরের পুরোনো ভাঙাচোরা জিনিস পত্র আর দৈনিক খবরের কাগজগুলো। ঐ বিক্রির টাকাটা অবশ্য ছবির প্রাপ্য। সুচি ঐ দায়িত্ব ছবিকেই দিয়েছে, ঘরের বাতিল বোতল, খবরের কাগজ, প্লাস্টিক এসব আলাদা করে রাখতে।
জয়ন্ত চা খেয়ে ভাবলো একবার বাজার যাবে। আজ ও'র ডিউটি আছে দুপুর দুটো নাগাদ। সুচিকে বললে তাই---একবার বাজার যাবো সুচি, মাছ কি বাজারে এসেছে দেখি।
সুচি তখন জয়ন্ত আর অংশুর একগাদা জামা কাপড় বার করেছে কাচবার জন্য। বললে---যাচ্ছো যখন ময়দা এনো। সকালের জল খাবার বানাতে গিয়ে ছবি বললে ময়দা শেষ।
জয়ন্ত থলে হাতে হাঁটা দিল বাজারের পথে। অংশুর হোম টিউটর এসেছে। বিট্টু-লাট্টুর এসময়ে অংশুর পড়ার ঘরে যাওয়া বারণ বলে সুচিত্রা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে এসেছে।
ছোট বাজার হলেও মাছের যোগান বেশ এখানে। জয়ন্ত দেখলে ভালো সাইজের পাবদা মাছ আছে। এদিকে বেলা হচ্ছে, সুচিত্রা যে কাজ নিয়ে ঘর সংসারে লেগেছে; কে জানে এই মাছ নিয়ে গেলে আজই রান্না করবে কিনা।
জয়ন্ত লোভ সংবরণ করতে পারলো না। থলে ভরে মাছ আর সবজি নিয়ে মুদির দোকানে রওনা হল। ডাক্তার বাবু থলে হাতে মুদির দোকানে এলে পরে বড্ড খুশি হয় নগেন। নগেনের চারপুরুষ কলকাতায় আছে। আদতে কিন্তু ওরা বিহারী। জয়ন্তকে দেখেই কর্মচারীকে নির্দেশ দিলে---ডাক্তার বাবুর যা যা লাগবে দিয়ে দে পুণ্য।
পুণ্য ছেলেটা হুগলি জেলার বাসিন্দা। ডাক্তারবাবু চন্দননগরের মানুষ জেনে ছিল যেদিন, সেদিন থেকে যেন ও' আরো বেশি গদগদ। বললে---সার, বৌদি লিস্টি দিয়েছে তো?
সুচি মুদির দোকানের বাজারের তালিকা করে দেয় প্রায়শই বলে, পুণ্য অমন বলল। জয়ন্ত হেসে বললে---না, না। তুমি আমাকে ভালো ময়দা দিও দেখি। বেশি না, তিন কিলো মত দিও। বড় ব্যাগ আনিনি। অত ভার নিয়ে যেতে পারবো না। ।
নগেন বললে---সার, বললেই তো পুণ্য পৌঁছে দেবে।
জয়ন্ত হেসে বললে---থাক থাক। ওসব ফাই ফরমায়েশ তোমাদের বৌদির করোগে। আমি পুরুষ মানুষ, আমার এসব লাগবে না।
নগেন লজ্জায় হেসে বলল---সার, কদিন ধরে দেখছি খাবার পর বড্ড শরীর দুর্বল লাগে। মনে হয় প্রচণ্ড ক্লান্তি। কি হয়েছে বলুন তো।
জয়ন্ত বিট্টু-লাট্টুর জন্য কয়েকটা চিপসের প্যাকেট কেটে বললে---কিছু না। সুগারটা চেক করাও। আর ওসব ঘি-বনস্পতি কম খাও হে।
নগেন বললে---স্যার, তাহলে খাবোটাই কি বলেন?
---চারপুরুষ বাংলায় থাকলে এখনো মাছ খেতে শিখলে না নগেন। চুনো মাছ খাও।
থলে ভর্তি বাজার নিয়ে জয়ন্ত বাড়ি ঢুকে বিট্টু-লাট্টুর হাতে চিপসের প্যাকেট দুটো দিতেই ওরা বড্ড খুশি। সুচি তৎক্ষনাৎ বলে উঠল---ওসব আনহেলদি চিপস বাচ্চাগুলোর জন্য আনো কেন!
জয়ন্ত যতই ডাক্তার হোক না কেন স্বাস্থ্য নিয়ে সুচিত্রা অনেক বেশি সচেতন। জয়ন্ত বরং একটু ফাঁক ফোকর দেয়। সে বলল---ওরা বাচ্চা। সব কিছু খাওয়া শিখতে হবে। তাছাড়া ফুটপাতে থাকতো ওদের কত কি অভ্যেস আছে জানো? এই করেই না পিউয়ের অভ্যাস খারাপ করেছ তুমি। এখন দক্ষিণ ভারতের খাবারের সাথে দেখছ না কেমন মানিয়ে নিতে পারছে না।
সুচিত্রা ড্রয়িং রুমের টিভির পাশে পড়ে থাকা একটা চাবির গোছা তুলে বললে---এটা কিসের চাবি গো? তোমার পকেটে ছিল!
জয়ন্ত চমকে গেল। বলল---অনলের ফ্ল্যাটের চাবি।
---অনল দা এসেছে নাকি? তা ওনার ফ্ল্যাটের চাবি তোমার কাছে কেন?
বড্ড অস্বস্তিতে পড়ল জয়ন্ত। বলল---অনল ক'দিন আগে এসেছিল দিল্লি থেকে। ওর রিজেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দেবে। যতদিন পড়ে আছে দেখাশোনা করার জন্য দিয়ে গেছে চাবিটা।
সুচি ডাইনিং টেবিলটা গোছাতে গোছাতে বলল---আর লোক পায়নি তোমাকে দিয়ে গেল। নিজের সংসারের যে খোঁজ রাখে না, সে আবার অপরের ফ্ল্যাটের তদারকি করবে।
জয়ন্ত হাসল। বলল---সে যাইহোক। সুচি, পাবদা মাছ এনেছি। দুপুরে রাঁধবে?
---এখন? বেলা এগারোটা হল। ছবি চলে গেছে। এবার আমি স্নানে যাবো। এখন আর কিছু পারবো না।