26-06-2019, 11:33 PM
পার্টঃঃ০৮
আমি বললাম একটু পরে যাচ্ছি।
বড়মা আমার গলারস্বরে বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে।
তোর কি হয়েছে ?
না কিছু হয় নি, তুমি এখন রাখো। আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে যাচ্ছি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
কার ফোন।
বড়মা। অমিতাভদার স্ত্রী।
মিত্রার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কি ভাবলো, দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। ওর হাত আমার ডান হাতটা ধরে আছে। আমাকে একটা কথা দে।
কি।
আজ রাতে আমার বাড়ি আসবি। তোকে আজ থাকতে হবে। থাকবি ?
বলতে পারছি না।
না তোকে কথা দিতেই হবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর চোখে নানা বিস্ময়। বললাম ঠিক আছে।
তুই আমার গাড়ি নিয়ে যা।
না তা হয় না।
কেনো।
এরা কি ভাববে।
ব্যাবসাটা আমার।
এরা কেউ জানেনা তুই আমার পূর্ব পরিচিত।
জানি। সেই জন্য আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আমায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তুই আমায় সাহায্য কর। তোর প্রমিসের কথা মাথায় আছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।
কি।
না জেনে তোর ফাইলটাও প্রায় সই করে ফেলেছিলাম।
ভালোইতো।
মিত্রা আমার মাথার চুলটা ধরে ঘেঁটে দিল। অনেক দিন পর আমার অনির সেই রূপটা দেখতে পেলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
তাকাসনি। চোখ গেলে দেবো।
আমি এখন যাবো।
রাতের কথা মনে রাখিস।
আমি আফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে আর গেলাম না। নীচে এসে আমার ব্যাগটা নিয়ে বড় রাস্তায় এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অমিতাভদার বাড়ি চলে এলাম।
বাইরের বেলটা বেজে উঠতেই, মল্লিকদা বললো দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
ছোটমা বললো, তুমি কথাবল আমি গিয়ে খুলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটমা ফিরে এলেন হাতে একটা চিঠি। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।
আমি হেসে বললাম কি হলো আবার।
আমার হাতে চিঠি দিয়ে বললো, তোর চিঠি।
খামটা হাতে নিলাম। সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন ভয় ভয়।
আমি চিঠিটা খুললাম। মিত্রার চিঠি। গাড়ি পাঠালাম, চলে আয়। অমিতাভদা মল্লিকদা বড়মা ছোটমাকে আমার প্রণাম দিস। দেরি করিসনা। মিত্রা।
চিঠিটা পরে সকলের মুখের দিকে তাকালাম। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়মার হাতে চিঠিটা দিলাম। বড়মার পরে ছোটমাকে দিল, ছোটমা অমিতাভদার হাতে, অমিতাভদা চিঠিটা পরার পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। মল্লিকদা পরে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। ছোটমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেশটা বেশ জটিল।
বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো আর বকিস না। কাগজের এডিটর হয়েছে। দুই মক্কেল বসে বসে বিরাট কাজ করেছেন। সবাই মিলে তোদের তাড়িয়ে দিলে আর তোরা বসে বসে খাবি খাচ্ছিস।
না না তুমি শোন। অমিতাভদা বলে উঠলেন।
আর শুনে কাজ নেই অনেক হয়েছে। বড়মা বললেন।
বুঝলাম এখন যুদ্ধ চলবে। আমি উঠে পরে বাথরুমে গেলাম। বেরিয়ে এসে বড়মাকে বললাম, আমাকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে দাও।
পাজামা পাঞ্জাবী পরতে হবে না, প্যান্ট গেঞ্জি পরে যা।
এই যথেষ্ট।
ছোটমা বুঝলো একে বলে কিছু হবে না, বাধ্য হয়ে ঘর থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে আনল। আজ আমায় কেউ বাধা দিল না। কেউ কোন প্রশ্ন করল না। আজ সবাই জানলো মিত্রা শুধু আমার পরিচিতই নয় খুব ঘনিষ্ঠ।
ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছিল। আমি বড়মাকে প্রণাম করলাম। তারপর ছোটমাকে। তারপর অমিতাভদাকে। অমিতাভদা আমার মাথায় হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। চোখদুটো ছলছল করছে, মুখে করুণ আর্তি। তোর ওপর আজ সব কিছু নির্ভর করছে।
আমি মাথা নীচু করলাম। তুমি একথা বলছো কেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে।
না।
তুইযা তুই যা ডিসিসন নিবি তাই হবে।
মল্লিকদাকে প্রণাম করতে যেতেই বললেন, থাক থাক আমার চেয়ারের একটা বন্দবস্ত কর। না হলে বেকার হয়ে যাব। এই বুড় বয়সে আর ভাল লাগে না।
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিকদা আমার মুখটা চেপে ধরলেন। আজ নয় সুখবর এনে বলিস।
মিত্রার বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন রাত আটটা বেজে গেছে। গাড়ি একেবারে পোর্টিকোর ভেতরে এসে দাঁরালো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। চেনাচেনা মনে হলো। মিত্রার ওই বাড়িতে দেখেছি মনে হচ্ছে। বুড়ীমাসি ? আমাকে বললেন, মেমসাহেব ওপরের ঘরে আছেন, আপনাকে চলে যেতে বলেছেন। আমি আটমাস আগে এখানে এসেছিলাম। আর আটমাস পরে এলাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সব কিছু লক্ষ্য করলাম। উপরে উঠে এলাম। মিত্রা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মিত্রা একটা বাসন্তী কালারের সালোয়ার কামিজ পরেছে। দারুন লাগছে, কলেজ লাইফের মিত্রা আর আমার বস মিত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তবু কোথায় যেন এক থেকে গেছে মিত্রা।
আয়।
আমি ওপরে উঠে এলাম। ওর পেছন পেছন গেলাম। একটা ঘরে আমাকে নিয়ে এলো। তিনজন ওখানে বসে আছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজনকেই চিনতে পারলাম। আমাদের অফিসের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মিঃ সনাতন ঘরুইকে। উনি আমাকে দেখে একটু অবাক হলেন। মুখে কিছু বললেন না। মিত্রা সকলের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। মিঃ ঘরুই খালি বললেন আমি ওনাকে চিনি তবে বেশি কথা হয়নি কোন দিন। তবে উনি যে আপনার এতোটা ক্লোজ জানতাম না।
মিত্রা বেশ গম্ভীর গলায় বললো, এর বেশি আর জানার চেষ্টা করবেন না।
মিত্রা বললো, বুবুন (আমার ডাক নাম, এই পৃথিবীতে এই নামে একমাত্র মিত্রাই ডাকে সেই কলেজ লাইফ থেকে) মিঃ অরিন্দম চ্যাটার্জী এবং কিংশুক ব্যানার্জীকে আমি আজ এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলাম। তোকে সব বলছি তুই সব শুনে নে, তারপর ডিসিসন দে। তোর ডিসিসন আমার অনেক কাজে লাগবে।
সবাই আমার আর মিত্রার দিকে তাকাল।
মিত্রা একে একে অফিসের সমস্ত কথা আমাকে বলল। আমি এতটা জানতাম না। কিছু কিছু জানতাম।
সব শোনার পর বুঝলাম, ও অনেক কেই তারাবার বন্দোবস্ত করেছে। এমনকি তাদের চিঠিও সই সাবুদ হয়ে গেছে। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে আজ দুপুর বেলায় আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদেরকেও। অমিতাভদা মল্লিকদা যে জায়গায় ছিল সেই জায়গাতেই আছেন। মনে হচ্ছে আমার সঙ্গে কথা বলার পর তুরন্ত ডিসিসন চেঞ্জ করেছে।
আমি সব শুনে বললাম, এটা তুই ডিসিসন নিয়েছিস না অন্য কারুর মতামত নিয়ে করেছিস।
মিত্রা বললো অন্যের মতামত নিয়ে করেছিলাম, এখন আমি আমার ডিসিসনে চলছি।
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, তুই যা আগে করে ফেলেছিলি, এখন সেইরকম রাখ। চেঞ্জ করিস না।
কেন বলছিস বল।
অনেক সমস্যা তৈরি হবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকাল।
বরং দুটো নতুন পদ ক্রিয়েট কর।
তারপর।
অমিতাভদার জায়গায় তুই সম্পাদক হয়ে যা।
আমি!
বড় বড় চোখ করে। তোর কি মাথা খারাপ হলো।
খাতা কলমে।
অমিতাভদাকে প্রধান সম্পাদক কর, মল্লিকদাকে মুখ্য সম্পাদক বানিয়ে দে। আর বাকি সবাইকে যুগ্ম সম্পাদক বানিয়ে দে। তোর নামটা চেঞ্জ করে নে সম্পাদকের জায়গায় ।
যাঃ তা হয় না।
না হবার কি আছে তুই মালিক।
এই কাগজের একটা ঐতিহ্য আছে।
ওই কথাটা মাথায় রেখেই তোকে বলছি।
এটা যদি করতে পারিস তাহলে আর কারুর কিছু বলার থাকবে না। তবে তোর খরচ বারবে, দুটো নতুন ঘর তোকে বানাতে হবে।
সেটা কিছু নয়।
ঘরুইবাবুকে বলেদে কাল থেকে কাজ শুরু করে দিক।
ঘর কার কার জন্য।
সুনিতদা এখন যে ঘরে আছে সেই ঘরেই থাকুক। একটা অমিতাভদার জন্য আর একটা মল্লিকদার জন্য। তবে ঘর দুটো তোকে নিউজ রুমের মধ্যে করতে হবে। আলাদা জায়গায় করলে হবে না।
কেনো।
নিউজের ছেলে গুলোর সঙ্গে ঘন ঘন কথা না বললে ওদের ভাত হজম হবে না। ওরা নিউজ খায়, নিউজ দিয়ে স্নান করে, সব কিছুই ওদের নিউজ ময়।
সবাই আমার কথায় হেসে ফেললো। ঘরুইবাবু আমার কথা শুনে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, অনি ঠিক কথাই বলেছে ম্যাডাম।
তাহলে আপনি এতদিন কি করছিলেন।
ওদের যে চাপ, তারপর সবাই আপনাকে ঘিরে থাকে সব সময়।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকালাম, ঘরুই বহুত ঘোরেল মাল।
আর দিল্লীব্যুরোকে জানিয়ে দে তোর নামটা কাল পরশুর মধ্যে চেঞ্জ করে পাঠিয়ে দিতে, কি ঘরুইবাবু হবে না।
নিশ্চই হবে।
আর এই কয়েকদিন যেমন চলছে তেমন চলুক। আর ঘরুইবাবু সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলুক। আর তুই কয়েকদিন অফিসে যাস না। তবে মাথায় রাখিস ঝড়টা সহজে থামবে না।
ঠিক আছে।
আর নিউজরুমের বুড়ো গুলোকে সামলাবার দায়িত্ব আমি নেবো তোকে কিছু ভাবতে হবে না।
সবাই হেসে ফেললো।
আপনি ভালো কথা বলেছেন। যত সমস্যা ওই এডিটর পদটাকে নিয়ে। অরিন্দমবাবু বললেন।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ঘরুইবাবু অফিসে আপনার সঙ্গে আমার বিশেষ একটা কথা হয় না। কিন্তু আপনি আমার সম্বন্ধে অনেক খোঁজ খবর রাখেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে তাকালেন।
আপনার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে মিত্রা যতটা না জানে, তার থেকে আমি অনেক বেশি জানি। খালি এইটুকু ব্যাপার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
ঘরুইবাবুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। উনি ভাবতে পারেন নি এই ঘরে মিত্রার সামনে ওনাকে আমি এই ধরনের কথা বলতে পারি।
এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু!
আপনি নিশ্চই জানেন আমি কতোদূর দৌড়তে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তা কি বলতে।
দুপুরে একঘর ভর্তি লোকের সামনে আমি মিত্রাকে কি বলেছিলাম সেটা বুঝতে পেরেছিলেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
ওনাদের আমি চিনি না, (সামনে বসা দুজন নতুন ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। (হাতজোড় করে ) তবে আপনাদেরও জানাই মিত্রা আমার কলজের বন্ধু, শুধু বন্ধু নয় বিয়ের আগে ওদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। ওর বাবা-মা সকলেই আমার বিশেষ পরিচিত। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। মিত্রার কোন ক্ষতি হবে এটা আমি মেনে নেব না। ও আপনাদের যে দায়িত্ব দিচ্ছে। তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করবেন। আর এই মুহূর্তে যা বললাম তা যেন পাঁচকান না হয়।
মিত্রা চুপচাপ বসেছিল। ওরা আমার কথা শোনার পর কেউ আর কোন কথা বলল না।
মিত্রা যখন আপনাদের এখানে ডেকে এনেছেন, সঙ্গে আমাকে, তখন আমি বুঝে নেবো আপনারা ব্যবসায়িক দিক থেকে মিত্রার খুব কাছের লোকই হবেন।
সকলেই আমার মুখের দিকে তাকালো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওনাদের পারপাশটা আমাকে একটু বলবি।
চম্পকবাবুকে আমি রাখবনা ভেবেছিলাম।
কেনো ?
ওনার চলচলন আমার ভাল লাগছে না। ওনার জায়গায় অরিন্দমবাবুকে নিয়ে এলাম।
এ ভুলটা করিস না। চম্পকদা থাকুক। চম্পকদার ওপরে ওনাকে বসা।
অরিনদমবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার একটু অসুবিধে হবে কাজে।
কি কারনে বলছেন।
সাবোতেজ হতে পারে।
আপনি যখন এতটাই জানেন তখন এই টুকু নিশ্চই বুঝতে পারছেন। কেন বলছি।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ।
অরিন্দমবাবু আপনি আগে কোথায় ছিলেন।
একটা সর্বভারতীয় ইংরাজী দৈনিকের কথা বললেন।
মিত্রার সঙ্গে আপনার পরিচয়।
মিত্রা বললো, আমার ক্লাবের মিঃ রায় ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয় দিয়ছেন।
আপনাদের ওখানে মৈনাক আছে না।
অরিন্দমবাবুর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
মিত্রা বললো, কে মৈনাক।
আমাদের সঙ্গে ইংরাজী ডিপার্টমেন্টে পরতো।
ফর্সামতো ছেলেটা।
হ্যাঁ।
তোর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে।
ভাইজ্যাক যাওয়ার দুচারদিন আগে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, চম্পকদাকে এখন সরানো যাবে না। আপনি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ বসে রইলেন।
মিত্রার দিকে তকিয়ে বললাম, কিংশুকবাবু।
ওনাকে আমি ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
ভালো।
তবে তুই একটা কাজ কর, দায়িত্বটা সকলকে ভাগা ভাগি করে দে।
তোর মতামতটা বল।
আজ হবে না। দাদাকি এখানে আছেন ? সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
না। মুম্বাই গেছে।
কবে আসবেন।
দু’একদিন দেরি হবে।
দাদাকে আসতে দে।
ঠিক আছে।
মিত্রা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো যে ভাবে বুবুন বললো, ওই ভাবে কাল থেকে কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। কিংশুকবাবু আর অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের ঘরটা রেডি হোক তারপর অফিসে আসবেন। আপনারা কাজ শুরু করে দিন। ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, যা যা ডিসিসন হলো সেই মতো কাজ শুরু করুন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুন।
ঘরুইবাবু একটু আমতা আমতা করে বললেন, আর কয়েকটা দিন আমাকে সময় দিন।
ঠিক আছে তাই হোক।
সুনিতবাবু কিছু বললে পাত্তা দেবার দরকার নেই। বাকিটা কি করে কি করতে হয়, আপনাক নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।
ঘরুইবাবু মাথানীচু করে বললেন, না ম্যাডাম আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
সবাই বিদায় নিল।
মিত্রা ওদের নিচে ছেড়ে দিয়ে এসে বলল, কি খাবি।
বেলা করে বড়মা অনেক খাইয়েছে আর খেতে ভাললাগছে না।
তাহলে আমিও খাব না।
সেকিরে। ঠিক আছে খাব অল্প করে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
দুজনে নিচে গেলাম। টেবিলে সব সাজান। মিত্রা আমি দুজনে বসলাম। কলেজ লাইফের ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু কথা ছাড়া শুধু জিজ্ঞাসা করলাম মাসিমা-মেসোমশাই কেমন আছেন।
মিত্রা একটু গম্ভীর হয়ে গেল, আস্তে করে বলল, দুজনেই গত। তারপর থেকে সব হরিরলুটের মত চলছে। তুইতো কোন খোঁজ খবর রাখিস না।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। কোন কথা বললাম না। খাওয়া শেষ করে ওপরে উঠে এলাম।
আমি বললাম একটু পরে যাচ্ছি।
বড়মা আমার গলারস্বরে বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে।
তোর কি হয়েছে ?
না কিছু হয় নি, তুমি এখন রাখো। আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে যাচ্ছি। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
কার ফোন।
বড়মা। অমিতাভদার স্ত্রী।
মিত্রার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। কি ভাবলো, দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। ওর হাত আমার ডান হাতটা ধরে আছে। আমাকে একটা কথা দে।
কি।
আজ রাতে আমার বাড়ি আসবি। তোকে আজ থাকতে হবে। থাকবি ?
বলতে পারছি না।
না তোকে কথা দিতেই হবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। ওর চোখে নানা বিস্ময়। বললাম ঠিক আছে।
তুই আমার গাড়ি নিয়ে যা।
না তা হয় না।
কেনো।
এরা কি ভাববে।
ব্যাবসাটা আমার।
এরা কেউ জানেনা তুই আমার পূর্ব পরিচিত।
জানি। সেই জন্য আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি। আমায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তুই আমায় সাহায্য কর। তোর প্রমিসের কথা মাথায় আছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।
কি।
না জেনে তোর ফাইলটাও প্রায় সই করে ফেলেছিলাম।
ভালোইতো।
মিত্রা আমার মাথার চুলটা ধরে ঘেঁটে দিল। অনেক দিন পর আমার অনির সেই রূপটা দেখতে পেলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
তাকাসনি। চোখ গেলে দেবো।
আমি এখন যাবো।
রাতের কথা মনে রাখিস।
আমি আফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে আর গেলাম না। নীচে এসে আমার ব্যাগটা নিয়ে বড় রাস্তায় এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অমিতাভদার বাড়ি চলে এলাম।
বাইরের বেলটা বেজে উঠতেই, মল্লিকদা বললো দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
ছোটমা বললো, তুমি কথাবল আমি গিয়ে খুলে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটমা ফিরে এলেন হাতে একটা চিঠি। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।
আমি হেসে বললাম কি হলো আবার।
আমার হাতে চিঠি দিয়ে বললো, তোর চিঠি।
খামটা হাতে নিলাম। সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন ভয় ভয়।
আমি চিঠিটা খুললাম। মিত্রার চিঠি। গাড়ি পাঠালাম, চলে আয়। অমিতাভদা মল্লিকদা বড়মা ছোটমাকে আমার প্রণাম দিস। দেরি করিসনা। মিত্রা।
চিঠিটা পরে সকলের মুখের দিকে তাকালাম। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়মার হাতে চিঠিটা দিলাম। বড়মার পরে ছোটমাকে দিল, ছোটমা অমিতাভদার হাতে, অমিতাভদা চিঠিটা পরার পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। মল্লিকদা পরে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি। ছোটমার দিকে তাকিয়ে বলল, কেশটা বেশ জটিল।
বড়মা খেঁকিয়ে উঠলো আর বকিস না। কাগজের এডিটর হয়েছে। দুই মক্কেল বসে বসে বিরাট কাজ করেছেন। সবাই মিলে তোদের তাড়িয়ে দিলে আর তোরা বসে বসে খাবি খাচ্ছিস।
না না তুমি শোন। অমিতাভদা বলে উঠলেন।
আর শুনে কাজ নেই অনেক হয়েছে। বড়মা বললেন।
বুঝলাম এখন যুদ্ধ চলবে। আমি উঠে পরে বাথরুমে গেলাম। বেরিয়ে এসে বড়মাকে বললাম, আমাকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে দাও।
পাজামা পাঞ্জাবী পরতে হবে না, প্যান্ট গেঞ্জি পরে যা।
এই যথেষ্ট।
ছোটমা বুঝলো একে বলে কিছু হবে না, বাধ্য হয়ে ঘর থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে আনল। আজ আমায় কেউ বাধা দিল না। কেউ কোন প্রশ্ন করল না। আজ সবাই জানলো মিত্রা শুধু আমার পরিচিতই নয় খুব ঘনিষ্ঠ।
ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছিল। আমি বড়মাকে প্রণাম করলাম। তারপর ছোটমাকে। তারপর অমিতাভদাকে। অমিতাভদা আমার মাথায় হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। চোখদুটো ছলছল করছে, মুখে করুণ আর্তি। তোর ওপর আজ সব কিছু নির্ভর করছে।
আমি মাথা নীচু করলাম। তুমি একথা বলছো কেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে।
না।
তুইযা তুই যা ডিসিসন নিবি তাই হবে।
মল্লিকদাকে প্রণাম করতে যেতেই বললেন, থাক থাক আমার চেয়ারের একটা বন্দবস্ত কর। না হলে বেকার হয়ে যাব। এই বুড় বয়সে আর ভাল লাগে না।
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিকদা আমার মুখটা চেপে ধরলেন। আজ নয় সুখবর এনে বলিস।
মিত্রার বাড়িতে যখন পৌঁছলাম তখন রাত আটটা বেজে গেছে। গাড়ি একেবারে পোর্টিকোর ভেতরে এসে দাঁরালো। আমি গাড়ি থেকে নামতেই একজন ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন। চেনাচেনা মনে হলো। মিত্রার ওই বাড়িতে দেখেছি মনে হচ্ছে। বুড়ীমাসি ? আমাকে বললেন, মেমসাহেব ওপরের ঘরে আছেন, আপনাকে চলে যেতে বলেছেন। আমি আটমাস আগে এখানে এসেছিলাম। আর আটমাস পরে এলাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সব কিছু লক্ষ্য করলাম। উপরে উঠে এলাম। মিত্রা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওকে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মিত্রা একটা বাসন্তী কালারের সালোয়ার কামিজ পরেছে। দারুন লাগছে, কলেজ লাইফের মিত্রা আর আমার বস মিত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য। তবু কোথায় যেন এক থেকে গেছে মিত্রা।
আয়।
আমি ওপরে উঠে এলাম। ওর পেছন পেছন গেলাম। একটা ঘরে আমাকে নিয়ে এলো। তিনজন ওখানে বসে আছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজনকেই চিনতে পারলাম। আমাদের অফিসের এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মিঃ সনাতন ঘরুইকে। উনি আমাকে দেখে একটু অবাক হলেন। মুখে কিছু বললেন না। মিত্রা সকলের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। মিঃ ঘরুই খালি বললেন আমি ওনাকে চিনি তবে বেশি কথা হয়নি কোন দিন। তবে উনি যে আপনার এতোটা ক্লোজ জানতাম না।
মিত্রা বেশ গম্ভীর গলায় বললো, এর বেশি আর জানার চেষ্টা করবেন না।
মিত্রা বললো, বুবুন (আমার ডাক নাম, এই পৃথিবীতে এই নামে একমাত্র মিত্রাই ডাকে সেই কলেজ লাইফ থেকে) মিঃ অরিন্দম চ্যাটার্জী এবং কিংশুক ব্যানার্জীকে আমি আজ এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলাম। তোকে সব বলছি তুই সব শুনে নে, তারপর ডিসিসন দে। তোর ডিসিসন আমার অনেক কাজে লাগবে।
সবাই আমার আর মিত্রার দিকে তাকাল।
মিত্রা একে একে অফিসের সমস্ত কথা আমাকে বলল। আমি এতটা জানতাম না। কিছু কিছু জানতাম।
সব শোনার পর বুঝলাম, ও অনেক কেই তারাবার বন্দোবস্ত করেছে। এমনকি তাদের চিঠিও সই সাবুদ হয়ে গেছে। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে আজ দুপুর বেলায় আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে তাদেরকেও। অমিতাভদা মল্লিকদা যে জায়গায় ছিল সেই জায়গাতেই আছেন। মনে হচ্ছে আমার সঙ্গে কথা বলার পর তুরন্ত ডিসিসন চেঞ্জ করেছে।
আমি সব শুনে বললাম, এটা তুই ডিসিসন নিয়েছিস না অন্য কারুর মতামত নিয়ে করেছিস।
মিত্রা বললো অন্যের মতামত নিয়ে করেছিলাম, এখন আমি আমার ডিসিসনে চলছি।
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, তুই যা আগে করে ফেলেছিলি, এখন সেইরকম রাখ। চেঞ্জ করিস না।
কেন বলছিস বল।
অনেক সমস্যা তৈরি হবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকাল।
বরং দুটো নতুন পদ ক্রিয়েট কর।
তারপর।
অমিতাভদার জায়গায় তুই সম্পাদক হয়ে যা।
আমি!
বড় বড় চোখ করে। তোর কি মাথা খারাপ হলো।
খাতা কলমে।
অমিতাভদাকে প্রধান সম্পাদক কর, মল্লিকদাকে মুখ্য সম্পাদক বানিয়ে দে। আর বাকি সবাইকে যুগ্ম সম্পাদক বানিয়ে দে। তোর নামটা চেঞ্জ করে নে সম্পাদকের জায়গায় ।
যাঃ তা হয় না।
না হবার কি আছে তুই মালিক।
এই কাগজের একটা ঐতিহ্য আছে।
ওই কথাটা মাথায় রেখেই তোকে বলছি।
এটা যদি করতে পারিস তাহলে আর কারুর কিছু বলার থাকবে না। তবে তোর খরচ বারবে, দুটো নতুন ঘর তোকে বানাতে হবে।
সেটা কিছু নয়।
ঘরুইবাবুকে বলেদে কাল থেকে কাজ শুরু করে দিক।
ঘর কার কার জন্য।
সুনিতদা এখন যে ঘরে আছে সেই ঘরেই থাকুক। একটা অমিতাভদার জন্য আর একটা মল্লিকদার জন্য। তবে ঘর দুটো তোকে নিউজ রুমের মধ্যে করতে হবে। আলাদা জায়গায় করলে হবে না।
কেনো।
নিউজের ছেলে গুলোর সঙ্গে ঘন ঘন কথা না বললে ওদের ভাত হজম হবে না। ওরা নিউজ খায়, নিউজ দিয়ে স্নান করে, সব কিছুই ওদের নিউজ ময়।
সবাই আমার কথায় হেসে ফেললো। ঘরুইবাবু আমার কথা শুনে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, অনি ঠিক কথাই বলেছে ম্যাডাম।
তাহলে আপনি এতদিন কি করছিলেন।
ওদের যে চাপ, তারপর সবাই আপনাকে ঘিরে থাকে সব সময়।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকালাম, ঘরুই বহুত ঘোরেল মাল।
আর দিল্লীব্যুরোকে জানিয়ে দে তোর নামটা কাল পরশুর মধ্যে চেঞ্জ করে পাঠিয়ে দিতে, কি ঘরুইবাবু হবে না।
নিশ্চই হবে।
আর এই কয়েকদিন যেমন চলছে তেমন চলুক। আর ঘরুইবাবু সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলুক। আর তুই কয়েকদিন অফিসে যাস না। তবে মাথায় রাখিস ঝড়টা সহজে থামবে না।
ঠিক আছে।
আর নিউজরুমের বুড়ো গুলোকে সামলাবার দায়িত্ব আমি নেবো তোকে কিছু ভাবতে হবে না।
সবাই হেসে ফেললো।
আপনি ভালো কথা বলেছেন। যত সমস্যা ওই এডিটর পদটাকে নিয়ে। অরিন্দমবাবু বললেন।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো।
আমি ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ঘরুইবাবু অফিসে আপনার সঙ্গে আমার বিশেষ একটা কথা হয় না। কিন্তু আপনি আমার সম্বন্ধে অনেক খোঁজ খবর রাখেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে তাকালেন।
আপনার স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে মিত্রা যতটা না জানে, তার থেকে আমি অনেক বেশি জানি। খালি এইটুকু ব্যাপার আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
ঘরুইবাবুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। উনি ভাবতে পারেন নি এই ঘরে মিত্রার সামনে ওনাকে আমি এই ধরনের কথা বলতে পারি।
এ আপনি কি বলছেন অনিবাবু!
আপনি নিশ্চই জানেন আমি কতোদূর দৌড়তে পারি।
হ্যাঁ হ্যাঁ তা কি বলতে।
দুপুরে একঘর ভর্তি লোকের সামনে আমি মিত্রাকে কি বলেছিলাম সেটা বুঝতে পেরেছিলেন।
ঘরুইবাবু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
ওনাদের আমি চিনি না, (সামনে বসা দুজন নতুন ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। (হাতজোড় করে ) তবে আপনাদেরও জানাই মিত্রা আমার কলজের বন্ধু, শুধু বন্ধু নয় বিয়ের আগে ওদের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। ওর বাবা-মা সকলেই আমার বিশেষ পরিচিত। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। মিত্রার কোন ক্ষতি হবে এটা আমি মেনে নেব না। ও আপনাদের যে দায়িত্ব দিচ্ছে। তা ঠিক ঠিক ভাবে পালন করবেন। আর এই মুহূর্তে যা বললাম তা যেন পাঁচকান না হয়।
মিত্রা চুপচাপ বসেছিল। ওরা আমার কথা শোনার পর কেউ আর কোন কথা বলল না।
মিত্রা যখন আপনাদের এখানে ডেকে এনেছেন, সঙ্গে আমাকে, তখন আমি বুঝে নেবো আপনারা ব্যবসায়িক দিক থেকে মিত্রার খুব কাছের লোকই হবেন।
সকলেই আমার মুখের দিকে তাকালো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওনাদের পারপাশটা আমাকে একটু বলবি।
চম্পকবাবুকে আমি রাখবনা ভেবেছিলাম।
কেনো ?
ওনার চলচলন আমার ভাল লাগছে না। ওনার জায়গায় অরিন্দমবাবুকে নিয়ে এলাম।
এ ভুলটা করিস না। চম্পকদা থাকুক। চম্পকদার ওপরে ওনাকে বসা।
অরিনদমবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমার একটু অসুবিধে হবে কাজে।
কি কারনে বলছেন।
সাবোতেজ হতে পারে।
আপনি যখন এতটাই জানেন তখন এই টুকু নিশ্চই বুঝতে পারছেন। কেন বলছি।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ।
অরিন্দমবাবু আপনি আগে কোথায় ছিলেন।
একটা সর্বভারতীয় ইংরাজী দৈনিকের কথা বললেন।
মিত্রার সঙ্গে আপনার পরিচয়।
মিত্রা বললো, আমার ক্লাবের মিঃ রায় ওনার সঙ্গে পরিচয় করিয় দিয়ছেন।
আপনাদের ওখানে মৈনাক আছে না।
অরিন্দমবাবুর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
মিত্রা বললো, কে মৈনাক।
আমাদের সঙ্গে ইংরাজী ডিপার্টমেন্টে পরতো।
ফর্সামতো ছেলেটা।
হ্যাঁ।
তোর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে।
ভাইজ্যাক যাওয়ার দুচারদিন আগে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, চম্পকদাকে এখন সরানো যাবে না। আপনি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন।
অরিন্দমবাবু চুপচাপ বসে রইলেন।
মিত্রার দিকে তকিয়ে বললাম, কিংশুকবাবু।
ওনাকে আমি ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
ভালো।
তবে তুই একটা কাজ কর, দায়িত্বটা সকলকে ভাগা ভাগি করে দে।
তোর মতামতটা বল।
আজ হবে না। দাদাকি এখানে আছেন ? সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো।
না। মুম্বাই গেছে।
কবে আসবেন।
দু’একদিন দেরি হবে।
দাদাকে আসতে দে।
ঠিক আছে।
মিত্রা ওদের দিকে তাকিয়ে বললো যে ভাবে বুবুন বললো, ওই ভাবে কাল থেকে কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। কিংশুকবাবু আর অরিন্দমবাবুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাদের ঘরটা রেডি হোক তারপর অফিসে আসবেন। আপনারা কাজ শুরু করে দিন। ঘরুইবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, যা যা ডিসিসন হলো সেই মতো কাজ শুরু করুন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা করুন।
ঘরুইবাবু একটু আমতা আমতা করে বললেন, আর কয়েকটা দিন আমাকে সময় দিন।
ঠিক আছে তাই হোক।
সুনিতবাবু কিছু বললে পাত্তা দেবার দরকার নেই। বাকিটা কি করে কি করতে হয়, আপনাক নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই।
ঘরুইবাবু মাথানীচু করে বললেন, না ম্যাডাম আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
সবাই বিদায় নিল।
মিত্রা ওদের নিচে ছেড়ে দিয়ে এসে বলল, কি খাবি।
বেলা করে বড়মা অনেক খাইয়েছে আর খেতে ভাললাগছে না।
তাহলে আমিও খাব না।
সেকিরে। ঠিক আছে খাব অল্প করে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
দুজনে নিচে গেলাম। টেবিলে সব সাজান। মিত্রা আমি দুজনে বসলাম। কলেজ লাইফের ছেঁড়া ছেঁড়া কিছু কথা ছাড়া শুধু জিজ্ঞাসা করলাম মাসিমা-মেসোমশাই কেমন আছেন।
মিত্রা একটু গম্ভীর হয়ে গেল, আস্তে করে বলল, দুজনেই গত। তারপর থেকে সব হরিরলুটের মত চলছে। তুইতো কোন খোঁজ খবর রাখিস না।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি। কোন কথা বললাম না। খাওয়া শেষ করে ওপরে উঠে এলাম।