20-11-2024, 05:24 AM
(This post was last modified: 20-11-2024, 02:53 PM by বহুরূপী. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
/////////////
দুপুর বেলা সঞ্জয়ের বাড়ি আসতে খানিকটা দেরি হল। বাড়িতে ঢুকেই সে বুঝলো আজ বাড়িতে লোক সমাগম অনেক। সে বেচারা খেতে এসে একটা গন্ডগোলের মধ্যে পরলো। তার অসহায় মুখশ্রী দেখে হেমলতা সঞ্জয়কে নয়নতারার ঘরে বসিয়ে দিয়ে খাবারে ব্যবস্থা করতে গেল। তবে সে আর ফিরে এলো না, পাড়ার কয়েকটি মেয়ে তাকে টেনে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল। একটু অপেক্ষার পর সৌদামিনী এলো খাবার ও জলের পাত্র হাতে। সঞ্জয় পরলো এক দোটানায়। এই কদিনে দামিনী হেমের দ্বারা তার প্রথম প্রেমে কথা মনে করানো চেষ্টা চালিয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। তুচ্ছ এই প্রক্রিয়াতে বিশেষ লাভ হয়েছে তা বলা চলে না,তবে সঞ্জয়ের মনকে জ্বালিয়েছে নিশ্চিত। কিন্তু তবুও আজ হঠাৎ ত সে কিছু বলে উঠতে পারলো না। সৌদামিনী যখন সামনে বসে তার পাতে ভাত তুলে দিল , এক মুহূর্তের জন্যে তাকিয়ে সঞ্জয় চোখ ফিরিয়ে নিতে পারলো না। এখানে কি হল বা কেন হল,এর কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে বোধকরি, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানোর মতোই প্রথম প্রেমটিও ভুলে যাওয়া শক্ত। সে তুমি যতোই চেষ্টা কর,মনের গহীন কোন থেকে মাঝে মধেই সেই অন্ধ অনুভুতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
যাহোক, সঞ্জয়ের প্রথম প্রেম মনে পরায় তার খাওয়াতে বিশেষ সমস্যা হলো না। তবে জল পান করতে গিয়ে গলায় পাঁক খেয়ে সঞ্জয় কাশতে লাগলো। এই অবস্থায় করুণায় সৌদামিনীর হাতখানি একটি বার সঞ্জয়ের মস্তক স্পর্শ করেছিল কোন মতে,আর তাতেই পরমুহূর্তে দুজনের দু'জোড়া চোখের মিলনে দামিনী এক ছুটে ঘর ছেড়ে বাইরে। যদিও এমনটা হবার কথা হয়তো ছিল না,তবুও সঞ্জয়ের হঠাৎ একটু হাসি পেল। হেমলতার সাথে থাকতে থাকতে বোধকরি হেম যেমন খানিকটা দামিনীর পেয়েছে, তেমনি দামিনী পেয়েছে হেমলতা খানিকটা।
দুপুরের খাওয়া শেষে সঞ্জয় নয়নতারার ঘরে নয়নের শয্যায় গা এলিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলো। একটু পরেই নয়নতারা এলো ঘরে।
– বৌদিমণি! কি হচ্ছে বলতো? মেয়েরা ওমন ছোটাছুটি করছে কেন?
– তা জেনে তোমার কাজ কি বল, অপেক্ষা কর সময়মতো ঠিক জেনে যাবে। আর শোন ,আজ আর হাটে যেতে হবে না তোমায়। এমনিতেও বিকেলে বাবা-মা আসছে ,নাই বা গেলে আজ।
– বৌদিমণি! আমি তো চাই সব সময় তোমার কাছাকাছি থাকতে তুমিই তো......
– উফফ্.... এখন ওসব কেন!কেউ শুনলে কি হবে জানো?
– আচ্ছা যাও বলবো না। কিন্তু বৌদিমণি দাদা কোথায়?
– কি জানি মনে হয় মোড়ের চায়ের দোকানে।
– হুমমম... তাহলে একটু বেরিয়ে আসি বৌদিমণি, দাদার সাথে কথা বলা দরকার।
কথা শেষ করেই সঞ্জয় উঠে দাড়ালো। তারপর কিছু বুঝে উঠবার আগেই নয়নতারার চিবুক ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আলতো ভাবে একটি চুমু খেয়ে নিল সে। কোন রকম প্রতিবাদ করার আগেই চুম্বন ভেঙ্গে সে নয়নতারার শয়নকক্ষের বাইরে। ক্ষতির মধ্যে শুধু নয়নতারার কড়া চোখ রাঙানিই দেখতে হল সঞ্জয় কে।
কথা মতো বিকেল বেলায় নয়নতারার মা ও বাবা এবাড়িতে উপস্থিত হলেন। এদিকে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর সঞ্জয়কে নয়ন আর যেতে দেয়নি। তাই আজ অনেক দিন পর দুই ভাই রান্নাঘরের পাশে জাম গাছে ছায়াতে বসেছিল আলোচনায়। এখন তাদের সাথে যোগ দিয়েছে নয়নতারার বাবা।
পাড়ার মেয়েদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া সবাই গেছে তাদের নিজদের কাজে। তবে সন্ধ্যায় তাদের আবারও আগমন ঘটবে এই আলোচনা হচ্ছে রান্নাঘরে।আর তার একটু দূরে উনুন জ্বালিয়ে হেমলতা করছে চা।
এদিকে বাড়ির ভেতরে সৌদামিনী ও নয়নতারা একই কাজে ব্যস্ত। তবে তাদের আলোচনা আপাতত সীমিত। এই মুহূর্তে সৌদামিনী নয়নের হাতে কিছুদিন আগে পাওয়া দলিলপত্র গুলো তুলে দিচ্ছিল। সেই সাথে সেগুলো ঠিক কি উপায়ে তার কাছে এল,তা বলতেও বাকি রাখলো না। তারপর অবশ্য দামিনী ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। তবুও নয়নতারা সৌদামিনীর সমুখে খানিকটা লজ্জায় পরলো বৈ কি। যদিও নয়নতারার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল এই চুরিটার সাথে তার মাতা ও স্বামী জড়িত। তারপরেও দলিলপত্র দুই হাতে কোলে চেপে নয়ন খাটে বসে চোখ বুঝে নিরবতার সাহায্য নিয়ে নিজেকে সামাল দিল। তবে আপাতত এই দলিলপত্র হেমের কাছে কি করে এলো সে কথা তার জানা হলো না,কারণ বেচারী হেমলতা আজ এমনিতেই মারাত্মক ভয়ভীতিতে সময় পার করছে। এর মধ্যে আর একটি উঠকো ঝামেলা সৃষ্টি করতে নয়নতারা মন সায় দিল না।
নয়ন যখন ভেতর ঘর থেকে বেরিয়ে এবং বৈঠক ঘর পেরিয়ে ভেরত বারান্দায় এল। তখন হেমলতা বিনা অপরাধে নত মুখে মায়ের বকুনি শুনে যাচ্ছিল । দিদি আসতেই এখন ছাড়া পেয়ে সে কোনক্রমে ছাদে উঠে নিজেকে লুকিয়েছে। তবে বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ ছাদে উঠতেই সে পরেছে দামিনীর সমুখে।
– কি রে হেম! কার থেকে পালিয়ে বাঁচা হচ্ছে শুনি?
– বা রে, পালাবো কেন? আমি ত এমনি......
– থাক থাক আর বলতে হবে না। যা খুশি কর গে।
সৌদামিনী হেমলতার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবারও ওই অল্প দূরে কৃষক পল্লীর দিকে চাইলো। যদিও পল্লীর পাশের ক্ষেতটায় এক কৃষক রমনীর ছেলে পেটানো ছাড়া বিশেষ কিছু দেখবার ছিল না। তবুও সৌদামিনীর দৃষ্টি সে দিক থেকে যেন সরতে চাইছিল না। আর সেই সুযোগে হেম ধীরে ধীরে দামিনীর পাশে গিয়ে দাড়ালো। একটু অবাক হল হেম। কারণ আজ দামিনী মুখ হাসিখুশী নয়। আগেই বলেছি দামিনীর মনে যাই থাক না কেন,আমাদের হেম কিন্তু তাকে দিদির মতোই ভালোবেসেছে।
– কি হয়েছে দিদি?
প্রশ্নটা শুনে হয়তোবা দামিনী পরিস্থিতি জ্ঞান ফিরলো। সে হেমকে কাছে টেনে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে মুখে হাসি এনে বললে,
– কি আবার হবে! আমি ভাবছিলাম আজ তোর চিৎকারের শব্দে ঘুমানো যাবে কি না।
– ধুর কি সব নোংড়া কথা বল তুমি দামিনী'দি।
– ইসস্.. লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে, আগে কথা শোন, ভেবে দেখতো ওমন বিশালাকার শসাটা যখন তোর....
– দামিনী'দি! ভালো হবে না কিন্তু!
হেমলতা এবার ছটফট করে উঠলো ছাড়া পেতে। কিন্তু দামিনীর সাথে সে পারবে কেন? সৌদামিনী নয়নতারার থেকেও লম্বা ও সাস্থ্য সবল। সে এক হাতে হেমের কোমর জড়িয়ে পেছন ঘুরে ছাদের রেলিংয়ে পাছা ঠেকিয়ে বসলো। তারপর অন্য হাতে হেমের গালটা টিপে দিয়ে বলল,
– ন্যাকামো হচ্ছে এখন,বেশ তো বানিয়েছিস দুধ দুটো কে। বলি তার হাতের টেপন ত বেশ খেয়েছিস এতোদিন,তা এখন না হয়......
– ছি! ছি! তোমার মুখে কিছুই আটকায় না? শহরের মেয়েরা বুঝি এমনি হয়! মা মাসিরা কিছুটি শেখায় নি তোমায়।
– ধুর পাগলী! মা মাসি থাকলে তবে ত শেখাবে।
আগের কথাটা বলেই হেমলতা দাঁতে জিভ কেটে বসেছিল। কারণ সৌদামিনীর বাড়ির খবর এতোদিনে তাঁর অজানা ছিল না। সুতরাং জেনেশুনে এমন একটা কথা বলে ফেলায় ভাড়ি লজ্জায় পরলো হেম। তবে সৌদামিনী মুখ ভাড় করে বসে থাকার মেয়ে নয়। একটু পরেই সে বলল,
– ভাড়ি মেয়ে ত তুই হেম! আজকের মতো এমন একটা দিনে তুই কিনা মুখ ভোতা করে বসে আছিস।
হেমলতা খানিকক্ষণের জন্যে হলেও ভুলে বসেছিল আজ তার ফুলশয্যা। নিচে অতি সন্তপর্ণে সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে তারই আয়োজন চলছিল পাড়ার মেয়েদের নিয়ে,বাকি যা আছে তা হবে সন্ধ্যায়। একথা মনে হতেই হেমলতার মুখে একইসঙ্গে ভয় ও লজ্জা মিশ্রিত এক লালচে আভা ফুটে উঠলো। এবং সৌদামিনী আরও গভীরে যাবার আগে কথার মোর ঘুরিয়ে দেবার জন্যে বলল,
– আজ সকালে মন্দিরে ওমন কাঁদলে কেন?
এমন একটি প্রশ্ন হঠাৎ চলে আসায় দামিনী খানিকটা চমকাল।তবে সামলে উঠলো সাথে সাথেই। তারপর হেসে উঠে বলল,
– বা রে, আজ কাঁদবো না কেন! আমার আগে আমার সতিনের ফুলশয্যা হয়ে যাচ্ছে যে! এতে বুঝি কাঁদতে নেই?
এবার হেমলতা দেহ মুচরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললে,
– সব সময় ফাজলামো ভালো লাগে না দিদি।
– ইইইসসস্......আমি ফাজলামো করছি তাই না, ঠিক আছে যা আর কথাই বলল না তোর সাথে।
এটুকু বলেই দামিনী ঘুরে দাড়িয়ে আগের মতোই কৃষক পল্লীর ঘর গুলির দিকে তাকিয়ে রইল। বাইরে থেকে দেখলে কত শান্ত দেখার পল্লী টিকে। অথচ ভেতরে গেলে অপরিষ্কার ছোট ছোট কতগুলো ছেলে মেয়ে ছোটাছুটি দেখা যায়। মাঝে মধ্যেই এক অন্যের সাথে লাগে কলহ। ঝগড়া বিষয়বস্তু যে বিশেষ বড়সড় কিছু হয় তা নয়। নিতান্তই সাধারণ ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া। জীবনযাত্রার গতিবেগ খুবই চঞ্চল ঐই ছোট্ট পল্লীটিতে। সৌদামিনী দেখতে দেখতে কি যেন ভাবছিল। একটু পরে হেমলতা পেছন থেকে দামিনীকে জড়িয়ে ধরলে সে আবারও হেসে উঠে বলল,
– হয়েছে আর আদর দেখাতে হবে না, কি চাই তাই বল।
– আগে তোমায় কথা দিতে হবে যে তুমি মজা করবে না ।
– একথা দেওয়া মুসকিল, তবে চেষ্টা করবো। নে এবার ন্যাকামো রেখে বল কি বলবি।
হেম খানিকক্ষণ কি ভেবে অবশেষে বললে,
– আমার বড্ড ভয় করছে দামিনী দি।
– তাহলে তোর আর ফুলশয্যায় কাজ নেই ভাই,এখনোও সময় আছে যদি বলিস তবে আমি বসতে পারি ফুলশয্যার খাটে! এমনিতেও প্রথমে আমারটাই হওয়া উচিত। আমি তো বড় তাই না।
– ধ্যাৎ...... তুমি সবসময়ই এমন কর।
– আরে!! কোথায় যাচ্ছিস? হেম! দাড়া বলছি...হেম!
হেম ছুটে যাচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে, দামিনী তার পিছু পিছু। কিন্তু হেম নেমে গেলেও সৌদামিনী দোতলায় এসেই ঠোকর খেলো। সে ডান পা খানা বেকায়দায় ফেলে ”আআঃ" বলে চিৎকার করে আঁছড়ে পরলো সঞ্জয়ের বুকে। তবে খুব বেশিক্ষণের জন্যে নয়, চোখ তুলে দুজোড়া চোখের মিলন হতেই দামিনী নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টায় এবার” উউউঃ" বলে সকরুণ আর্তনাদ করে সেখানেই ধুপ করে বসে পরলো। এবার তার আর্তনাদ শুনলো বারান্দায় কোন কারণে বেরিয়ে আসা নয়নতারা। দেখা গেল দামিনীর পা খানা ভালো ভাবেই মচকেছে। তাও আবার যে পা খানা কিছুদিন আগে পুরেছিল,সে খানাই।
অগত্যা সঞ্জয়কেই তার দায়িত্ব নিয়ে পাঁজাকোলা করে ঢুকতে হলো দাসী মঙ্গলার শয়নকক্ষে। অবশ্য এরপর সে চলে যেতেও পারতো।তবে সে চলে না গিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল নয়নতারার পেছনে। দামিনীর পায়ের ব্যবস্থা করে নয়নতারা এটি লক্ষ্য করে বলল,
– কি হলো ঠাকুরপো ওমন মুখ ভাড় করে দাড়িয়ে আছো কেন?তুমি একটু ঘুরে এসো আমি এদের সাথে কথা বলে দেখছি কি হয়েছিল।
সঞ্জয় কিছু বলার আগেই ভয়ে ভয়ে সেখানে হেমলতা উপস্থিত। তার হাতে সঞ্জয়ের রেডিও। সেটি দেখেই নয়নতারা ব্যস্ত হয়ে বললে,
– এটা এখানে কেন এনেছিস? নিচে নিয়ে যা এখনি।
আসলে সঞ্জয়ের ভাঙ্গা রেডিও খানা দামিনী ও হেম মিলে নয়নতারার ঘরে রেখে দিয়েছিল এই ভেবে; যে দিদি সবটা সমলে নেবে। যদিও আসলেই নয়ন সবটা সামলে নিয়েছে । তবে সঞ্জয় থমথমে মুখে বেড়িয়ে যাবার পর সৌদামিনী ও হেমলতা কপালে জুটেছে এক রাশ বকাঝকা। এর মধ্যেই সৌদামিনী ও হেম দুজনেই জেনেছে রেডিও টি আসলে সঞ্জয়ের পিতার শেষ স্মৃতি। একথা শোনা মাত্র সৌদামিনীর মুখখানি হল রক্ত শূন্য। সে ভীতূ নজরে একবার চাইলো হেমলতার মুখপানে।তবে ততক্ষণে হেমলতার মুখখানিও বিবরণ। সৌদামিনী একবার দেখেই বুঝলে হেমলতা ভয়ের থেকেও দূঃখ পেয়েছে বেশি। তবে যা হবার হয়ে গিয়েছে,এখন আর কি করার।
////////
পাড়ার মেয়েদের বড় ইচ্ছে ছিল একটুখানি মজাদার কান্ড সঞ্জয় ও হেমে ফুলশয্যার আগে ঘটাতে। তবে নয়নতারা সে ইচ্ছে সমর্থন না করায় ,এই প্রস্তাব উঠিবা মাত্রই বাতিল হয়ে গেল। কারণটি সকলে না জানলেও হেম ও দামিনী ঠিকি জানে। সুতরাং সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ ফুলে ফুলে সাজিয়ে হেমলতাকে তার মাঝে বসিয়ে আপাতত এখানে সবাই সমাপ্তি টেনে বেরিয়ে গেল।
সঞ্জয় ছিল ছাদে,রাগি মেজাজে সিগারেট হাতে। এদিকে শত ফুলের মাঝে হেমলতা সত্যই লতার মত সৌদামিনীকে জড়িয়ে ভয়ে কম্পায়মান। কারণটি এখন আর মধুচন্দ্রিমা নয়,ভাঙ্গা রেডিও। অন্যদিকে নয়নতারা উঠেছে ছাদে তার ঠাকুরপো কে বোঝাতে।একটা অচল রেডিও জন্যে এমন কান্ড হবে তা কে জানতো।
ফুলের ঘ্রানে মোহ মোহ করা আজ সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই এ একহাত ঘোমটা টেনে শয্যায় হেমলতার বসে থাকার কথা। কিন্তু নয়নতারা ও সঞ্জয় ঘরে ঢুকেই দেখলো হেমলতা মাথার আঁচল ফেলে দামিনীকে জড়িয়ে অঝরে কান্না করতে ব্যস্ত। এই দৃশ্য দেখে নয়নতারা সঞ্জয়কে ছেড়ে গেল বোনের কাছে। সৌদামিনীও খানিকটা যে ভয় পায়নি এমনটা নয়। তবে কি না সঞ্জয়ের রাগটা ফেটে পরার আগে নয়নতারা সামলে নিয়েছে, তাই আপাতত সে বেচারী শান্ত।
সঞ্জয় তাদের ঘরে রেখে বারান্দায় মাঝামাঝি এসে একটা সরু থামে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। রাত প্রায় এগারোটা । আকাশ জুড়ে গোমরা মুখে কালো মেঘের দল মেলা বসাতে শুরু করেছিল আজ গোধুলি থেকেই। এখন তাদের সম্মিলিত অভিমানের চিহ্ন সরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলবিন্দু ঝরে পড়ছে এ ধরণীতে। আরে সেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাতের সাথে কিসের একটা সুঘ্রাণ নাকে লাগছে সঞ্জয়ের। হতে পারে ঘ্রাণটি নয়নতারার বাগানের কিংবা সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে ফুল সাজানো শয্যার। সঠিকভাবে বলা কঠিন। কারণ বাগান ও সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ আজ দুই জায়গাতেই ফুলের বাহার।
দু'চোখ বুঝে সরু পিলারে ঠেস দিয়ে সঞ্জয় হঠাৎ আজ অতীত জীবনের কিছু স্মৃতি কে নিয়ে ভাবতে বসলো। বাবা,দাদার বিয়ে,বৌদিমণি,কলকাতায় কাকিমার বাড়ি,সৌদামিনী, ভাঙ্গা রেডিও! ভাবনার শেষটায় আসতেই ধপ করে চোখ দুখানি খুলে সঞ্জয় লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামাল দিল। এমন সময় নয়ন ও দামিনী বেরিয়ে এল ,তবে সঞ্জয়ের কাছাকাছি এসে সৌদামিনীকে সিঁড়ির দিকে ঠেলে দিয়ে নয়নতারা দাঁড়ালো সঞ্জয়ের সামনে। দামিনী সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে গেলে নয়নতারা সঞ্জয়ের ডান গালে একটা চুমু এঁকে বললে,
– এবার ঘরে যাও,আর শোন লক্ষ্মীটি! আজ রাতে রাগারাগি করো না একদমই।
নয়নতারা নেমে গেলে সঞ্জয় এগুলো তার শয়নকক্ষের দিকে। তবে কক্ষের সমুখে এসে সঞ্জয় দাড়ালো একটু। তারপর কি যেন ভেবে ঘরে ঢুকে ঘরের দ্বার লাগালো । হেমলতা একরাশ ফুলের মাঝে দাঁতে ঠোঁট কামড়ে বসে আছে বিছানায় । সঞ্জয় ধীরস্থিরভাবে এগিয়ে হেমলতার সমুখে গিয়ে বসলো। লাল শাড়িতে আজ হেমকে ভাড়ি সুন্দর লাগছে। তবে সঞ্জয়ের মাথায় এখনোও সেই রেডিও ঘটনা ঘুরছে। না আজকের এই সুন্দর রাতটা একটা ছোট ঘটনার জন্যে অসহ্য হয়ে উঠেছে। নয়নতারা এতো বোঝানোর পরেও মাথা থেকে ঘটনাটি ঝেরে ফেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। মনের সাথে খানিক কলহের পর সঞ্জয় হেমকে শুয়ে পরতে বলে নিজে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর সারা রাত বেচারী হেমলতার কেমন কাটলো তা আর না বললেও বোঝার বাকি রাখে না।
//////////
তার পরদিন সকালে সঞ্জয়কে বাড়িতে পাওয়া গেল না। সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে সাজানো বিছানায় নয়নতারা তাঁর বোনটির মাথা হাত বুলিয়ে তাকে বোঝাতে লাগলো। আর সৌদামিনী দ্বারের সমুখে দাড়িয়ে দূরে পথের পানে তাকিয়ে রইলো।
নয়নতারা জানতো সঞ্জয় রাগলে তাকে বোঝানো সহজ হবে না।কিন্তু বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠানোর পর যে এমনটি হবে তা সত্যই নয়ন ভাবেনি। সকাল পেরিয়ে দুপুর আর দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যে হল,কিন্তু সঞ্জয় বাড়িতে এল না। ফুলশয্যা না হবার শোকে হেমলতা কাতর হয়নি মোটেও। কিন্তু সঞ্জয়ের বাড়ি না ফেরা নিয়ে সে সত্যই বেশ ভয় পেল এবার। তবে রাত গভীর হবার আগেই সঞ্জয় বাড়ি ফিরলো। নয়নতারা তার স্বামী ও ঠাকুরপো দুজনের অভিমান কেমন তা জানতো। তাই সে রাতে নয়ন আর সঞ্জয়কে ঘাটলো না।
রাতের সঞ্জয় খেতে এলো না। তাই হেমলতা কেউ কোন মতেই খেতে বসানো গেল না। নয়ন ভেবেছিল খাবার নিয়ে দোতলার আবহাওয়া দেখে আসবে। অবশেষে হেমের হাতে খাবারের থালা দিয়ে নয়নতারা তাকে ঠেলে ওপড়ে পাঠালো। ভাগক্রমে সঞ্জয়ের রাগ আজ অর্ধেকটাই পরে গিয়েছে। তবে তাঁর শয়নকক্ষে আজ আর ফুলে মেলা নেই। দিব্যি পরিপাটি সাজানো গোছানো সাদামাটা শয্যাকক্ষে সঞ্জয় পায়ে পা তুলে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। হেমলতা দুয়ারের সামনে এসে দুবার মেঝেতে পা ঠুকে মলে “ঝুমুর” “ ঝুমুর” আওয়াজ তুললো। তাঁর মলের আওয়াজ সঞ্জয়ের কানে যেতেই চোখ খুলে সঞ্জয় কাছে ডাকলো হেমকে,তবে ইসারায়।
আজ আকাশ ঠিক মেঘলা নয়,তবে মাঝে মধ্যে এক আধটা মেঘ এসে ক্ষণকালের জন্যে উজ্জ্বল চাঁদটিকে ঢাকা দিয়ে আবার একটু পরে সরে যাচ্ছিল। মেঘের সাথে চাঁদের ঐ লুকোচুরি খেলা দেখবার মতো জিনিস বটে। তবে আমাদের হেমলতা তখন স্বামীর কোলে বসে রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। তা না হলে ক্ষণকাল অবকাশ মিললে বোধকরি দুজনেই আকাশের পানে চেয়ে মেঘ ও চাঁদে এই অপূর্ব সুন্দর খেলাটি উপভোগ করতো।
অবশেষে খাবার পর্ব শেষ করে, শয্যায় আধশোয়া হয়ে হেমকে বুকে জড়িয়ে অন্যান্য দিনের মতোই গল্প করতে লাগলো সঞ্জয়। আজ এদের দেখলে কে বলবে গতকাল নিঃশব্দে ছোটখাটো একটা ঝড় বয়ে গেছে এদের মাঝে। যদিও রাতে এর বেশি কিছুই হলো না, তবে সকাল সকাল হেমলতা উঠে যখন বাইরে যাবে তখন সঞ্জয় হেমের হাত চেপে ধরলো। প্রথমটায় সঞ্জয়ের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারলেও পরে যখন শয্যায় ফেলে সঞ্জয় হেমকে জড়িয়ে ধরলো, তখন লজ্জা ও ভয় এক সাথে এসে হেমলতার মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণে রাঙিয়ে দিল। তবে সে সঞ্জয়কে ঠেলে সরিয়ে উঠে বসে মাথা নাড়িয়ে তার অসম্মতি জানিয়ে দিল। সঞ্জয়ের জোরাজুরি করার ইচ্ছে হলো না। এমনিতেই তাঁর রাগের কারণে বেচারীর ফুলশয্যার ফুল শুকিয়ে বাসি হয়ে গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক করতে সঞ্জয় হেমলতার গালের দুপাশে হাত রেখে বললে,
– ক্ষমা কর লক্ষ্মীটি, আমি রেগে গেলে নিজেকে সামলাতে পারি না।
হেমলতা কি বলবে ভেবে পেল না। কারণ স্বামী মাফ চাইছে বটে কিন্তু তার ক্ষমা চাইবার কারণটি ত তাদেরই তৈরি। হলেই না হয় দুর্ঘটনা ,তবুও ত পিতার শেষ স্মৃতি। এমনটি হেমের সাথে হল সেকি রাগ না করে থাকতে পারতো? তাছাড়া তাঁর দামিনী'দি ত বলেছেই,“ স্বামী স্ত্রীর জন্যে প্রতিটি রাতই ফুলশয্যার রাত”। তবে কেন একটি রাতের জন্যে শুধু শুধু মন খারাপ করে বসে থাকবে সে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করার নেই। রাতে সুযোগ ছিল ,কিন্তু সঞ্জয় তা গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছে।
– এখন নয়!
– কেন?এখনো তো ঠিকমতো ভোর হয়নি ।
– উঁহু... একটু পরেই দিদি উঠে কাজে হাত লাগাবে আর আমি এখানে বসে ছি! ছি! ও আমি পারবো না।
হেমের এমন কথায় সঞ্জয়ের চমক লেগে গেল। লাগারই কথা, হেমলতা এই প্রথম মুখ ফুটে বলছে পারবে না। সঞ্জয় অবাক চোখে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে রইল। তবে হেমলতা সত্যিই বিছানা ছেড়ে ধীরপদক্ষেপে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
সকালের খাবার এলো সৌদামিনীর হাতে করে। কিন্তু আজ আর সে ছুটে বেরিয়ে গেল না,আর সঞ্জয় ও বিশেষ রাগ দেখালো না। সঞ্জয়কে খেতে বসিয়ে দামিনী চেয়ার টেনে বসলো সমুখে। সঞ্জয় এক পলক তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। কারণ দামিনীর শাড়ি ছিল নাভির থেকে বেশ খানিকটা নিচে । আর শাড়ির আঁচল ছিলো বুকের একদম মাঝ দিয়ে। কাঁচুলি সহ তাঁর বুকটা উচু হয়ে ছিলো আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায়। সঞ্জয়ের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া দেখে দামিনী হেসে বললে,
– চোখ নামিয়ে নিলে কেন? এই শেষ সুযোগ দেখে নাও! তোমার জন্যেই সেজে এসেছি এই রূপে।
সঞ্জয় মুখ তুলে ভ্রু কুঁচকে দৃষ্ট রাখলো দামিনীর মুখে।বোধহয় ছলনাময়ীর উদ্দেশ্য বোঝবার একটা চেষ্টা।
– কি হল! ওভাবে তাকিয়ে কেন? কচি বউ পেয়ে এখন এই বুড়ি মাগিটাকে ভালো লাগছে না বুঝি!
সঞ্জয় কথা বলল না, তবে বিরক্তিতে তার মন বিষিয়ে উঠলো। সে খাবার রেখেই উঠে পরছে দেখে দামিনী চেয়ার ছেরে সঞ্জয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,
– আরে! আরে! কর কি? খাবার রেখে উঠতে নেই, বসো বলছি।
– তুমি কি চাইছো বল তো? এতদিন পরে আবার কেন এই নাটক?
সঞ্জয়ের গলা উত্তেজিত,তবে রাগান্বিত নয়।তাই দেখে সৌদামিনী হাসি হাসি মুখের বলল,
– কিছু না,তোমায় দেখতে মন চাইছিল তাই।
– আশা করি দেখা হয়ে গিয়েছে,এবার আসতে পারো।
দামিনী খানিকক্ষণ চুপচাপ চেয়ে রইল সঞ্জয়ের মুখপানে। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
– দেখ সঞ্জয় তোমার কাছে আমি যে অপরাধে অপরাধি যেটি কিন্তু সত্য নয়। কিন্তু....
– আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাইনা দামিনী, আমি চাই না তোমার জন্যে আমার আর কোন ক্ষতি হোক। দয়া করে তুমি আমার সামনে থেকে যাও এখন।
এর কঠিন উত্তর খুব সম্ভব দামিনীর কাছে ছিল। তবে যে ব্যক্তি নিজেই অপরাধ করছে প্রতি নিয়ত,অথচ তার এই অপরাধ ধরা পরলে কি হতে পার তা জান শর্তেও। সেই ব্যক্তির সাথে কুতর্ক হোক বা সুতর্ক হোক,দুটোতেই রাগিয়ে দেয়া সহজ। তবে এটি দামিনীর দোতলায় আসার কারণ নয়। তাই সে একটু হেসে শান্ত স্বরে বললে,
– আমি চলে যাচ্ছি কাল সকালেই। সেটি বলতেই তোমার কাছে আসা ।এখন এসো খেতে বসো আর রাগ করতে হবে না। একটু কষ্ট করে আজের দিনটা মানিয়ে নাও,কাল থেকে তুমি আমায় আর এই বাড়িতে দেখবে না।
কথাটি বলে দামিনী সঞ্জয়ের কাঁধে চাপ দিয়ে আবার বসিয়ে দিল।তারপর একটি তালপাখা হাতে ধীরে ধীরে হাওয়া করতে লাগলো, যদিও হাওয়া করার কোন প্রয়োজন ছিন না।
//////////////
খাবার পর্ব শেষে কি ভেবে সঞ্জয় আজ আর কাজে গেল না। নিজের শয়নকক্ষে ভাঙা রেডিও ঠিক করতে বসলো সে। এই দৃশ্য নয়নতারার কোমল মনে একটু লগলো বোধকরি। তাই সেও সঞ্জয়কে কাজে যাবার তারা দিতে ঘরে ঢুকলো না,দুয়ারের বাইরে থেকেই ফিরেগেল।
নিচে নেমে আর এক দৃশ্য। নয়নের স্বামী আজ কাজে যেতে তৈরী। যদিও এখনো তার জন্যে কিছুই ঠিক হয়নি। তবে কি না সঞ্জয়ের থেকে সোহম হিসাবে পাকা,তাই তার এই মতি। ছোট ভাইয়ের বদলে সে বসবে হাটের দোকানে। বলা বাহুল্য এতে নয়নতারার সন্দেহ হবারই কথা। সে ঘরে ঢুকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
– গঞ্জে যাওয়া হচ্ছে বুঝি?
– না মানে ভাবছিল ....
– তা ভাবনা মন্দ নয়,তবে!
বলতে বলতে নয়নতারা স্বামী কাছে এসে তাঁর ডানহাতে স্বামীর ডান হাতখানি নিয়ে নিজের মাথায় চেপেধরল।
– তোমায় আমার দিব্যি! এবার যদি মন্দপথে পা বারিয়ে.....
– আহা! কর কি?
– উঁহু্...বেশ করছি। এবার তুমি যদি ওসব না ছাড়ো তবে আমি সত্য সত্যই জলে ডুবে প্রাণ দে.....
সোহম তার হাত ছাড়িয়ে নয়নতারার মুখ চেপেধরে। সস্নেহে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ছি! ও কথা মুখে আনতে নেই।
নয়নতারার সঞ্জয়ের কান্ডে এমনিতেই বিরক্ত। সে আর কিছু না বলে খাটের এপাশে বসে রইলো মুখ বাকিয়ে।
– আচ্ছা আর ধরবো না ওসব। কিন্তু মাঝে মাঝে যদি বড্ড বেশি ইচ্ছে করবে তখন তুমি না হয় খাইয়ে দিও।
– আবারও, তুমি ঘরে বসো কোথাও যেতে হবে না তোমায়।
– আরে-রে কর কি! বলছি তো আমর বেশ শিক্ষা হয়েছে,এই তোমার মাথার দিব্যি আমি আর ওসবে নেই।
– সত্যিই!
এবার আর কথা নয়, নয়নতারার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন এঁকে দিল সোহম।যদিও এই আইডিয়া টা ছোট ভাই সঞ্জয়ের দেওয়া,তবুও বেশ কাজের বলতে হয়। কাজে যাবার আগে সোহম দোতলায় উঠলো সঞ্জয়ের সাথে কি আলোচনা করতে। এই দৃশ্য নতুন, তবে দেখে নয়নতারার মন ও চোখ দুটোই জুড়িয়ে গেল। সেই সাথে খানিক টা অজানা ভয়ও তার মনে কয়েক বার নাড়াচাড়া দিয়ে গেল। হাজার হোক দেবরের সাথে তার সম্পর্কটা ত অবৈধ। তার ওপড়ে নয়নের ঠাকুরপোটির স্বভাব যা খামখেয়ালী ও ছেলেমানুষী।একটু অসাবধান হলেই দুই ভাইয়ের মধ্যে যে মধু সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে , তা অচিরেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
নয়নতারার পিতা ও মাতা আজ সকালে তাঁদের বাড়ি ফিরবে। তাই শেষ মহুর্তে হেমলতা তার মায়ের সাথে রান্নাঘরের পাশে জাম গাছের ছায়াতে বসে কি যেন আলোচনা করছিল। কিন্তু কাছে গিয়ে নয়ন দেখলো হেম বসে আছে চুপচাপ, আলোচনা করছে সৌদামিনী। নয়নতারা অবাক হলো না, সৌদামিনী লোক বুঝে কথা বলতে জানে। সে সাথে অতি সহজেই যে কারো সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সে পটু।
নয়নতারা এগিয়ে গিয়ে হেমকে সরিয়ে এনে তার শয়নকক্ষে ঢুকবে ভাবলো,কিন্তু শেষটায় কি ভেবে সোজা সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে গেল। ছাদের এক পাশে বসে নয়নতারা হেমলতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলো,
– গত রাতে কি হলো বল?
হেমলতা যা যা হয়েছে সব কিছুই তাঁর দিদিকে বললো। এই বিষয়ে দিদি সাথে আলোচনা করতে হেমলতার কোন সংকোচ ছিল না।
– কি বোকা মেয়েরে তুই হেম!
– কেন? আমি কি করলাম?
– ভোরবেলা স্বামী কে ওভাবে রেখে এলি কেন? ধর যদি এখন সে তোর প্রতি বিরক্ত হয়ে অন্য কারো কাছে যায় তবে!
– যাহ্...তা কেন হবে?...সে এমন নয়.....একদমই নয়
– সাধে কি তোকে বোকা বলে সবাই, পাগলী মেয়ে একটা। সে যদি এমন নাই হয়ে তব দামিনী এখানে কেন এলো শুনি? ওদের আগে বিয়ে হবার কথা ছিল,তোকে বলেনি দামিনী?
– ধ্যাৎ....ও সব মিছে কথা, দামিনী'দি সব সময় মজা করে কথা বলে।তাছাড়া দামিনী'দির মতো সতীন হলেও আমার ক্ষতি নেই কিছু।
নয়নতারা এবারের হেমলতার চিবুক ধরে একটু নেড়ে দিয়ে বললে,
– বোকা মেয়ে কোথাকার, দামিনী মজা করে বললেও সব সত্য কথাই বলে রে পাগলী।
হেম দিদির কথা শুনে খানিকক্ষণ থ মেরে বসে রইলো।তারপর খানিকটা স্বাভাবিক হলে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে বলল,
– তবে যে দামিনী দি বললো কাল সে কলকাতায় ফিরবে.
– কখন বললো?
– আজ সকালেই, খাবার সময়....
//////////////
বারান্দায় বাবুকে খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে নয়নতারা দৃষ্টি দিচ্ছিল দামিনীর দিকে। হেমলতা তরিতরকারি কুটতে কুটতে পাশে বসা দামিনীর সঙ্গে কথা বলছিল। মঙ্গলা দাসী সিঁড়িতে বসে মন্দিরাকে ভাত খাওয়াতে ব্যস্ত। এমন সুখী সুখী পরিবেশে হঠাৎ সঞ্জয় দোতলা থেকে নেমে দেবু দেবু বলে চিৎকার জুড়লো।
– কি হয়েছে ঠাকুরপো? ওমন ষাঁড়ের মত ডাক ছাড়া হচ্ছে কেন?
– দেবুটাকে দেখেছো?
– সে বাড়িতে নেই, তোমার দাদার সাথে হাটে গেছে।
কথা শুনেই সঞ্জয় সিঁড়ির কাছ থেকে মূহুর্ত্তের মধ্যে উধাও। কি হল তা জানতে নয়নতারাও তাৎক্ষণাত বারান্দা থেকে উঠে গেল দোতলায়। সঞ্জয়ের ঘরের সামনে এসে দেখে; তাঁর ঠাকুরপোটি বেরুবে বলে তৈরি । নয়নতারা জলদি জলদি বাবুকে কোল থেকে নামিয়ে দুয়ার আটকে দাড়ালো।
– কি করছো বৌদিমণি!
– কোথায় যাওয়া হচ্ছে এখন?
–একটু হাটে যাবো, বেশি সময় লাগবে না।
– না, আজ আর তোমার বেরুনো হচ্ছে না। চুপচাপ ঘর বসো কোথাও যেতে হবে না তোমায়,যাও বলছি।
– হঠাৎ এই সব কেন বৌদিমণি? বললাম তো বেশিখন লাগবে না। আমি এই যাবো আর এইআ.......
– না না তা হচ্ছে না। আজ তুমি গৃহবন্দী ঠাকুরপো।
– কিন্তু বৌদিমণি আমার...
নয়নতারা আর কোন কথা না শুনে বাবুকে মেঝে থেকে তাঁর ঠাকুরপোর কোলে তূলে দিল। সুতরাং সঞ্জয়ের আর বেরুনো হলো না। দুপুরের খাবার সময় হলে নয়নতারা বাবুকে নিয়ে হেমলতা কে পাহাড়ায় বসিয়ে দিল। ততখনে সঞ্জয় নিজেও বুঝেছে আজ আর বাইরে বেরুনো সম্ভব নয়। তাই সে দুপুরের খাবার খেয়ে উপড়ি আয় সরুপ হেমলতাকে জড়িয়ে কয়েকটি চুমু খেলো। তখনও নিচে সবার খাওয়া-দাওয়া চলছে। কিন্তু বেচারী হেমলতার খাওয়া দাওয়া লাটে উঠেছে। সঞ্জয় দোর আটকে হেমলতাকে খাটে ফেলে তাঁর গলায় কয়েকটি চুমু দিয়ে বললে,
– আমাদের ফুলশয্যাটা এখনই শেরে ফেলি কি বল?
– ধ্যাৎ....একদম না!...আহ্হঃ....
সঞ্জয় দেখলো হেমলতার বড্ড না বলতে শিখে গেছে।কিন্তু তাতে কি হয়, উত্তেজনায় হেমলতার ওষ্ঠাধর ত ঠিকই কাঁপছে। তবে আপাতত ফুলশয্যার জন্যে রাতের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। দিনের আলোতে ফুলশয্যা ঠিক মানানসই লাগছে না। তবে হেমলতার বুকের ওপর থেকে শাড়ির আঁচল সড়িয়ে দুধ টিপতে ত ক্ষতি নেই। সুতরাং অল্পক্ষণের মধ্যেই হেমলতার বেগুনী শাড়ির আঁচল খানা টেনে সড়িয়ে ওর কালো কাঁচুলিতে ঢাকা নিটোল স্তন দুটি তে হাত লাগালো সঞ্জয়। তারপর কাঁচুলির পাতলা কাপড় সহ নরম দুধে মুখ দিয়ে চাটতে আর অন্য দুধটা টিপতে লাগলো জোড়ে জোড়ে। মুখের লালায় হেমের পাতলা কাঁচুলি হলো লালায়িত। হাতের টেপনে কাঁচুলি গেল কুঁচকে, দুই একটা হু বোধকরি ছেড়ে পড়লো বিছানায়। তবে সেদিকে এখন আর কে দেখে। অবাধ্য স্বামীর আদরে হেমলতার দেহে তখন কামনার আগুন জ্বলে উঠেছে ধীরে ধীরে। সে দাঁতে অধর কামড়ে,“আহহ্হঃ... ওহহ্হ...ওওওমাআআআআ..” বলে কামার্ত মৃদুমন্দ চিৎকার করতে ব্যস্ত। এদিকে সঞ্জয় হেমের দুধে চুমু খেতে খেতে ধীরে ধীরে নেমে এসেছে তার সুগন্ধি নাভির কাছে,সেখানে নাক ঘষছে সে। হেমলতা জানে অল্পক্ষণ পরে তার নাভিতে স্বামী চুমু খাবে এবার। একথা ভাবতেই তার কুমারী গুদে যে রসের বন্যা বয়ে গেল, তাঁর গুদে চারপাশের কেশরাশি পুরো রসে ভিজে জবজবে। উফফ্.. কি লজ্জা! কি লজ্জা! সঞ্জয়ের তার একটি হাত হেমের শাড়ির নিচ দিয়ে নিয়ে সেখানে নাড়াচাড়া করছে এখন। খানিক চললো এইসব,তবে আগের মত আজ আর সঞ্জয় হেমকে চরম মুহুর্তের কাছাকাছি নিয়ে গেল না। শুধুমাত্র বুঝিয়ে না বলতে শিখলেও সবসময় ওটি তার কাজে লাগবে না। হেম যখন সঞ্জয়ের হাত থেকে মুক্তি পেল,তখন সে বুঝে গিয়েছে যে স্বামী রাগ পরে গিয়ে সে এখন স্বাভাবিক।
দুপুর বেলা সঞ্জয়ের বাড়ি আসতে খানিকটা দেরি হল। বাড়িতে ঢুকেই সে বুঝলো আজ বাড়িতে লোক সমাগম অনেক। সে বেচারা খেতে এসে একটা গন্ডগোলের মধ্যে পরলো। তার অসহায় মুখশ্রী দেখে হেমলতা সঞ্জয়কে নয়নতারার ঘরে বসিয়ে দিয়ে খাবারে ব্যবস্থা করতে গেল। তবে সে আর ফিরে এলো না, পাড়ার কয়েকটি মেয়ে তাকে টেনে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল। একটু অপেক্ষার পর সৌদামিনী এলো খাবার ও জলের পাত্র হাতে। সঞ্জয় পরলো এক দোটানায়। এই কদিনে দামিনী হেমের দ্বারা তার প্রথম প্রেমে কথা মনে করানো চেষ্টা চালিয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। তুচ্ছ এই প্রক্রিয়াতে বিশেষ লাভ হয়েছে তা বলা চলে না,তবে সঞ্জয়ের মনকে জ্বালিয়েছে নিশ্চিত। কিন্তু তবুও আজ হঠাৎ ত সে কিছু বলে উঠতে পারলো না। সৌদামিনী যখন সামনে বসে তার পাতে ভাত তুলে দিল , এক মুহূর্তের জন্যে তাকিয়ে সঞ্জয় চোখ ফিরিয়ে নিতে পারলো না। এখানে কি হল বা কেন হল,এর কোন ব্যাখ্যা নেই। তবে বোধকরি, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানোর মতোই প্রথম প্রেমটিও ভুলে যাওয়া শক্ত। সে তুমি যতোই চেষ্টা কর,মনের গহীন কোন থেকে মাঝে মধেই সেই অন্ধ অনুভুতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
যাহোক, সঞ্জয়ের প্রথম প্রেম মনে পরায় তার খাওয়াতে বিশেষ সমস্যা হলো না। তবে জল পান করতে গিয়ে গলায় পাঁক খেয়ে সঞ্জয় কাশতে লাগলো। এই অবস্থায় করুণায় সৌদামিনীর হাতখানি একটি বার সঞ্জয়ের মস্তক স্পর্শ করেছিল কোন মতে,আর তাতেই পরমুহূর্তে দুজনের দু'জোড়া চোখের মিলনে দামিনী এক ছুটে ঘর ছেড়ে বাইরে। যদিও এমনটা হবার কথা হয়তো ছিল না,তবুও সঞ্জয়ের হঠাৎ একটু হাসি পেল। হেমলতার সাথে থাকতে থাকতে বোধকরি হেম যেমন খানিকটা দামিনীর পেয়েছে, তেমনি দামিনী পেয়েছে হেমলতা খানিকটা।
দুপুরের খাওয়া শেষে সঞ্জয় নয়নতারার ঘরে নয়নের শয্যায় গা এলিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলো। একটু পরেই নয়নতারা এলো ঘরে।
– বৌদিমণি! কি হচ্ছে বলতো? মেয়েরা ওমন ছোটাছুটি করছে কেন?
– তা জেনে তোমার কাজ কি বল, অপেক্ষা কর সময়মতো ঠিক জেনে যাবে। আর শোন ,আজ আর হাটে যেতে হবে না তোমায়। এমনিতেও বিকেলে বাবা-মা আসছে ,নাই বা গেলে আজ।
– বৌদিমণি! আমি তো চাই সব সময় তোমার কাছাকাছি থাকতে তুমিই তো......
– উফফ্.... এখন ওসব কেন!কেউ শুনলে কি হবে জানো?
– আচ্ছা যাও বলবো না। কিন্তু বৌদিমণি দাদা কোথায়?
– কি জানি মনে হয় মোড়ের চায়ের দোকানে।
– হুমমম... তাহলে একটু বেরিয়ে আসি বৌদিমণি, দাদার সাথে কথা বলা দরকার।
কথা শেষ করেই সঞ্জয় উঠে দাড়ালো। তারপর কিছু বুঝে উঠবার আগেই নয়নতারার চিবুক ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আলতো ভাবে একটি চুমু খেয়ে নিল সে। কোন রকম প্রতিবাদ করার আগেই চুম্বন ভেঙ্গে সে নয়নতারার শয়নকক্ষের বাইরে। ক্ষতির মধ্যে শুধু নয়নতারার কড়া চোখ রাঙানিই দেখতে হল সঞ্জয় কে।
কথা মতো বিকেল বেলায় নয়নতারার মা ও বাবা এবাড়িতে উপস্থিত হলেন। এদিকে দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর সঞ্জয়কে নয়ন আর যেতে দেয়নি। তাই আজ অনেক দিন পর দুই ভাই রান্নাঘরের পাশে জাম গাছে ছায়াতে বসেছিল আলোচনায়। এখন তাদের সাথে যোগ দিয়েছে নয়নতারার বাবা।
পাড়ার মেয়েদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া সবাই গেছে তাদের নিজদের কাজে। তবে সন্ধ্যায় তাদের আবারও আগমন ঘটবে এই আলোচনা হচ্ছে রান্নাঘরে।আর তার একটু দূরে উনুন জ্বালিয়ে হেমলতা করছে চা।
এদিকে বাড়ির ভেতরে সৌদামিনী ও নয়নতারা একই কাজে ব্যস্ত। তবে তাদের আলোচনা আপাতত সীমিত। এই মুহূর্তে সৌদামিনী নয়নের হাতে কিছুদিন আগে পাওয়া দলিলপত্র গুলো তুলে দিচ্ছিল। সেই সাথে সেগুলো ঠিক কি উপায়ে তার কাছে এল,তা বলতেও বাকি রাখলো না। তারপর অবশ্য দামিনী ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। তবুও নয়নতারা সৌদামিনীর সমুখে খানিকটা লজ্জায় পরলো বৈ কি। যদিও নয়নতারার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল এই চুরিটার সাথে তার মাতা ও স্বামী জড়িত। তারপরেও দলিলপত্র দুই হাতে কোলে চেপে নয়ন খাটে বসে চোখ বুঝে নিরবতার সাহায্য নিয়ে নিজেকে সামাল দিল। তবে আপাতত এই দলিলপত্র হেমের কাছে কি করে এলো সে কথা তার জানা হলো না,কারণ বেচারী হেমলতা আজ এমনিতেই মারাত্মক ভয়ভীতিতে সময় পার করছে। এর মধ্যে আর একটি উঠকো ঝামেলা সৃষ্টি করতে নয়নতারা মন সায় দিল না।
নয়ন যখন ভেতর ঘর থেকে বেরিয়ে এবং বৈঠক ঘর পেরিয়ে ভেরত বারান্দায় এল। তখন হেমলতা বিনা অপরাধে নত মুখে মায়ের বকুনি শুনে যাচ্ছিল । দিদি আসতেই এখন ছাড়া পেয়ে সে কোনক্রমে ছাদে উঠে নিজেকে লুকিয়েছে। তবে বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ ছাদে উঠতেই সে পরেছে দামিনীর সমুখে।
– কি রে হেম! কার থেকে পালিয়ে বাঁচা হচ্ছে শুনি?
– বা রে, পালাবো কেন? আমি ত এমনি......
– থাক থাক আর বলতে হবে না। যা খুশি কর গে।
সৌদামিনী হেমলতার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবারও ওই অল্প দূরে কৃষক পল্লীর দিকে চাইলো। যদিও পল্লীর পাশের ক্ষেতটায় এক কৃষক রমনীর ছেলে পেটানো ছাড়া বিশেষ কিছু দেখবার ছিল না। তবুও সৌদামিনীর দৃষ্টি সে দিক থেকে যেন সরতে চাইছিল না। আর সেই সুযোগে হেম ধীরে ধীরে দামিনীর পাশে গিয়ে দাড়ালো। একটু অবাক হল হেম। কারণ আজ দামিনী মুখ হাসিখুশী নয়। আগেই বলেছি দামিনীর মনে যাই থাক না কেন,আমাদের হেম কিন্তু তাকে দিদির মতোই ভালোবেসেছে।
– কি হয়েছে দিদি?
প্রশ্নটা শুনে হয়তোবা দামিনী পরিস্থিতি জ্ঞান ফিরলো। সে হেমকে কাছে টেনে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে মুখে হাসি এনে বললে,
– কি আবার হবে! আমি ভাবছিলাম আজ তোর চিৎকারের শব্দে ঘুমানো যাবে কি না।
– ধুর কি সব নোংড়া কথা বল তুমি দামিনী'দি।
– ইসস্.. লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে, আগে কথা শোন, ভেবে দেখতো ওমন বিশালাকার শসাটা যখন তোর....
– দামিনী'দি! ভালো হবে না কিন্তু!
হেমলতা এবার ছটফট করে উঠলো ছাড়া পেতে। কিন্তু দামিনীর সাথে সে পারবে কেন? সৌদামিনী নয়নতারার থেকেও লম্বা ও সাস্থ্য সবল। সে এক হাতে হেমের কোমর জড়িয়ে পেছন ঘুরে ছাদের রেলিংয়ে পাছা ঠেকিয়ে বসলো। তারপর অন্য হাতে হেমের গালটা টিপে দিয়ে বলল,
– ন্যাকামো হচ্ছে এখন,বেশ তো বানিয়েছিস দুধ দুটো কে। বলি তার হাতের টেপন ত বেশ খেয়েছিস এতোদিন,তা এখন না হয়......
– ছি! ছি! তোমার মুখে কিছুই আটকায় না? শহরের মেয়েরা বুঝি এমনি হয়! মা মাসিরা কিছুটি শেখায় নি তোমায়।
– ধুর পাগলী! মা মাসি থাকলে তবে ত শেখাবে।
আগের কথাটা বলেই হেমলতা দাঁতে জিভ কেটে বসেছিল। কারণ সৌদামিনীর বাড়ির খবর এতোদিনে তাঁর অজানা ছিল না। সুতরাং জেনেশুনে এমন একটা কথা বলে ফেলায় ভাড়ি লজ্জায় পরলো হেম। তবে সৌদামিনী মুখ ভাড় করে বসে থাকার মেয়ে নয়। একটু পরেই সে বলল,
– ভাড়ি মেয়ে ত তুই হেম! আজকের মতো এমন একটা দিনে তুই কিনা মুখ ভোতা করে বসে আছিস।
হেমলতা খানিকক্ষণের জন্যে হলেও ভুলে বসেছিল আজ তার ফুলশয্যা। নিচে অতি সন্তপর্ণে সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে তারই আয়োজন চলছিল পাড়ার মেয়েদের নিয়ে,বাকি যা আছে তা হবে সন্ধ্যায়। একথা মনে হতেই হেমলতার মুখে একইসঙ্গে ভয় ও লজ্জা মিশ্রিত এক লালচে আভা ফুটে উঠলো। এবং সৌদামিনী আরও গভীরে যাবার আগে কথার মোর ঘুরিয়ে দেবার জন্যে বলল,
– আজ সকালে মন্দিরে ওমন কাঁদলে কেন?
এমন একটি প্রশ্ন হঠাৎ চলে আসায় দামিনী খানিকটা চমকাল।তবে সামলে উঠলো সাথে সাথেই। তারপর হেসে উঠে বলল,
– বা রে, আজ কাঁদবো না কেন! আমার আগে আমার সতিনের ফুলশয্যা হয়ে যাচ্ছে যে! এতে বুঝি কাঁদতে নেই?
এবার হেমলতা দেহ মুচরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললে,
– সব সময় ফাজলামো ভালো লাগে না দিদি।
– ইইইসসস্......আমি ফাজলামো করছি তাই না, ঠিক আছে যা আর কথাই বলল না তোর সাথে।
এটুকু বলেই দামিনী ঘুরে দাড়িয়ে আগের মতোই কৃষক পল্লীর ঘর গুলির দিকে তাকিয়ে রইল। বাইরে থেকে দেখলে কত শান্ত দেখার পল্লী টিকে। অথচ ভেতরে গেলে অপরিষ্কার ছোট ছোট কতগুলো ছেলে মেয়ে ছোটাছুটি দেখা যায়। মাঝে মধ্যেই এক অন্যের সাথে লাগে কলহ। ঝগড়া বিষয়বস্তু যে বিশেষ বড়সড় কিছু হয় তা নয়। নিতান্তই সাধারণ ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া। জীবনযাত্রার গতিবেগ খুবই চঞ্চল ঐই ছোট্ট পল্লীটিতে। সৌদামিনী দেখতে দেখতে কি যেন ভাবছিল। একটু পরে হেমলতা পেছন থেকে দামিনীকে জড়িয়ে ধরলে সে আবারও হেসে উঠে বলল,
– হয়েছে আর আদর দেখাতে হবে না, কি চাই তাই বল।
– আগে তোমায় কথা দিতে হবে যে তুমি মজা করবে না ।
– একথা দেওয়া মুসকিল, তবে চেষ্টা করবো। নে এবার ন্যাকামো রেখে বল কি বলবি।
হেম খানিকক্ষণ কি ভেবে অবশেষে বললে,
– আমার বড্ড ভয় করছে দামিনী দি।
– তাহলে তোর আর ফুলশয্যায় কাজ নেই ভাই,এখনোও সময় আছে যদি বলিস তবে আমি বসতে পারি ফুলশয্যার খাটে! এমনিতেও প্রথমে আমারটাই হওয়া উচিত। আমি তো বড় তাই না।
– ধ্যাৎ...... তুমি সবসময়ই এমন কর।
– আরে!! কোথায় যাচ্ছিস? হেম! দাড়া বলছি...হেম!
হেম ছুটে যাচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে, দামিনী তার পিছু পিছু। কিন্তু হেম নেমে গেলেও সৌদামিনী দোতলায় এসেই ঠোকর খেলো। সে ডান পা খানা বেকায়দায় ফেলে ”আআঃ" বলে চিৎকার করে আঁছড়ে পরলো সঞ্জয়ের বুকে। তবে খুব বেশিক্ষণের জন্যে নয়, চোখ তুলে দুজোড়া চোখের মিলন হতেই দামিনী নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টায় এবার” উউউঃ" বলে সকরুণ আর্তনাদ করে সেখানেই ধুপ করে বসে পরলো। এবার তার আর্তনাদ শুনলো বারান্দায় কোন কারণে বেরিয়ে আসা নয়নতারা। দেখা গেল দামিনীর পা খানা ভালো ভাবেই মচকেছে। তাও আবার যে পা খানা কিছুদিন আগে পুরেছিল,সে খানাই।
অগত্যা সঞ্জয়কেই তার দায়িত্ব নিয়ে পাঁজাকোলা করে ঢুকতে হলো দাসী মঙ্গলার শয়নকক্ষে। অবশ্য এরপর সে চলে যেতেও পারতো।তবে সে চলে না গিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল নয়নতারার পেছনে। দামিনীর পায়ের ব্যবস্থা করে নয়নতারা এটি লক্ষ্য করে বলল,
– কি হলো ঠাকুরপো ওমন মুখ ভাড় করে দাড়িয়ে আছো কেন?তুমি একটু ঘুরে এসো আমি এদের সাথে কথা বলে দেখছি কি হয়েছিল।
সঞ্জয় কিছু বলার আগেই ভয়ে ভয়ে সেখানে হেমলতা উপস্থিত। তার হাতে সঞ্জয়ের রেডিও। সেটি দেখেই নয়নতারা ব্যস্ত হয়ে বললে,
– এটা এখানে কেন এনেছিস? নিচে নিয়ে যা এখনি।
আসলে সঞ্জয়ের ভাঙ্গা রেডিও খানা দামিনী ও হেম মিলে নয়নতারার ঘরে রেখে দিয়েছিল এই ভেবে; যে দিদি সবটা সমলে নেবে। যদিও আসলেই নয়ন সবটা সামলে নিয়েছে । তবে সঞ্জয় থমথমে মুখে বেড়িয়ে যাবার পর সৌদামিনী ও হেমলতা কপালে জুটেছে এক রাশ বকাঝকা। এর মধ্যেই সৌদামিনী ও হেম দুজনেই জেনেছে রেডিও টি আসলে সঞ্জয়ের পিতার শেষ স্মৃতি। একথা শোনা মাত্র সৌদামিনীর মুখখানি হল রক্ত শূন্য। সে ভীতূ নজরে একবার চাইলো হেমলতার মুখপানে।তবে ততক্ষণে হেমলতার মুখখানিও বিবরণ। সৌদামিনী একবার দেখেই বুঝলে হেমলতা ভয়ের থেকেও দূঃখ পেয়েছে বেশি। তবে যা হবার হয়ে গিয়েছে,এখন আর কি করার।
////////
পাড়ার মেয়েদের বড় ইচ্ছে ছিল একটুখানি মজাদার কান্ড সঞ্জয় ও হেমে ফুলশয্যার আগে ঘটাতে। তবে নয়নতারা সে ইচ্ছে সমর্থন না করায় ,এই প্রস্তাব উঠিবা মাত্রই বাতিল হয়ে গেল। কারণটি সকলে না জানলেও হেম ও দামিনী ঠিকি জানে। সুতরাং সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ ফুলে ফুলে সাজিয়ে হেমলতাকে তার মাঝে বসিয়ে আপাতত এখানে সবাই সমাপ্তি টেনে বেরিয়ে গেল।
সঞ্জয় ছিল ছাদে,রাগি মেজাজে সিগারেট হাতে। এদিকে শত ফুলের মাঝে হেমলতা সত্যই লতার মত সৌদামিনীকে জড়িয়ে ভয়ে কম্পায়মান। কারণটি এখন আর মধুচন্দ্রিমা নয়,ভাঙ্গা রেডিও। অন্যদিকে নয়নতারা উঠেছে ছাদে তার ঠাকুরপো কে বোঝাতে।একটা অচল রেডিও জন্যে এমন কান্ড হবে তা কে জানতো।
ফুলের ঘ্রানে মোহ মোহ করা আজ সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই এ একহাত ঘোমটা টেনে শয্যায় হেমলতার বসে থাকার কথা। কিন্তু নয়নতারা ও সঞ্জয় ঘরে ঢুকেই দেখলো হেমলতা মাথার আঁচল ফেলে দামিনীকে জড়িয়ে অঝরে কান্না করতে ব্যস্ত। এই দৃশ্য দেখে নয়নতারা সঞ্জয়কে ছেড়ে গেল বোনের কাছে। সৌদামিনীও খানিকটা যে ভয় পায়নি এমনটা নয়। তবে কি না সঞ্জয়ের রাগটা ফেটে পরার আগে নয়নতারা সামলে নিয়েছে, তাই আপাতত সে বেচারী শান্ত।
সঞ্জয় তাদের ঘরে রেখে বারান্দায় মাঝামাঝি এসে একটা সরু থামে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। রাত প্রায় এগারোটা । আকাশ জুড়ে গোমরা মুখে কালো মেঘের দল মেলা বসাতে শুরু করেছিল আজ গোধুলি থেকেই। এখন তাদের সম্মিলিত অভিমানের চিহ্ন সরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলবিন্দু ঝরে পড়ছে এ ধরণীতে। আরে সেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাতের সাথে কিসের একটা সুঘ্রাণ নাকে লাগছে সঞ্জয়ের। হতে পারে ঘ্রাণটি নয়নতারার বাগানের কিংবা সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে ফুল সাজানো শয্যার। সঠিকভাবে বলা কঠিন। কারণ বাগান ও সঞ্জয়ের শয়নকক্ষ আজ দুই জায়গাতেই ফুলের বাহার।
দু'চোখ বুঝে সরু পিলারে ঠেস দিয়ে সঞ্জয় হঠাৎ আজ অতীত জীবনের কিছু স্মৃতি কে নিয়ে ভাবতে বসলো। বাবা,দাদার বিয়ে,বৌদিমণি,কলকাতায় কাকিমার বাড়ি,সৌদামিনী, ভাঙ্গা রেডিও! ভাবনার শেষটায় আসতেই ধপ করে চোখ দুখানি খুলে সঞ্জয় লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামাল দিল। এমন সময় নয়ন ও দামিনী বেরিয়ে এল ,তবে সঞ্জয়ের কাছাকাছি এসে সৌদামিনীকে সিঁড়ির দিকে ঠেলে দিয়ে নয়নতারা দাঁড়ালো সঞ্জয়ের সামনে। দামিনী সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নেমে গেলে নয়নতারা সঞ্জয়ের ডান গালে একটা চুমু এঁকে বললে,
– এবার ঘরে যাও,আর শোন লক্ষ্মীটি! আজ রাতে রাগারাগি করো না একদমই।
নয়নতারা নেমে গেলে সঞ্জয় এগুলো তার শয়নকক্ষের দিকে। তবে কক্ষের সমুখে এসে সঞ্জয় দাড়ালো একটু। তারপর কি যেন ভেবে ঘরে ঢুকে ঘরের দ্বার লাগালো । হেমলতা একরাশ ফুলের মাঝে দাঁতে ঠোঁট কামড়ে বসে আছে বিছানায় । সঞ্জয় ধীরস্থিরভাবে এগিয়ে হেমলতার সমুখে গিয়ে বসলো। লাল শাড়িতে আজ হেমকে ভাড়ি সুন্দর লাগছে। তবে সঞ্জয়ের মাথায় এখনোও সেই রেডিও ঘটনা ঘুরছে। না আজকের এই সুন্দর রাতটা একটা ছোট ঘটনার জন্যে অসহ্য হয়ে উঠেছে। নয়নতারা এতো বোঝানোর পরেও মাথা থেকে ঘটনাটি ঝেরে ফেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। মনের সাথে খানিক কলহের পর সঞ্জয় হেমকে শুয়ে পরতে বলে নিজে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর সারা রাত বেচারী হেমলতার কেমন কাটলো তা আর না বললেও বোঝার বাকি রাখে না।
//////////
তার পরদিন সকালে সঞ্জয়কে বাড়িতে পাওয়া গেল না। সঞ্জয়ের শয়নকক্ষে সাজানো বিছানায় নয়নতারা তাঁর বোনটির মাথা হাত বুলিয়ে তাকে বোঝাতে লাগলো। আর সৌদামিনী দ্বারের সমুখে দাড়িয়ে দূরে পথের পানে তাকিয়ে রইলো।
নয়নতারা জানতো সঞ্জয় রাগলে তাকে বোঝানো সহজ হবে না।কিন্তু বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে পাঠানোর পর যে এমনটি হবে তা সত্যই নয়ন ভাবেনি। সকাল পেরিয়ে দুপুর আর দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যে হল,কিন্তু সঞ্জয় বাড়িতে এল না। ফুলশয্যা না হবার শোকে হেমলতা কাতর হয়নি মোটেও। কিন্তু সঞ্জয়ের বাড়ি না ফেরা নিয়ে সে সত্যই বেশ ভয় পেল এবার। তবে রাত গভীর হবার আগেই সঞ্জয় বাড়ি ফিরলো। নয়নতারা তার স্বামী ও ঠাকুরপো দুজনের অভিমান কেমন তা জানতো। তাই সে রাতে নয়ন আর সঞ্জয়কে ঘাটলো না।
রাতের সঞ্জয় খেতে এলো না। তাই হেমলতা কেউ কোন মতেই খেতে বসানো গেল না। নয়ন ভেবেছিল খাবার নিয়ে দোতলার আবহাওয়া দেখে আসবে। অবশেষে হেমের হাতে খাবারের থালা দিয়ে নয়নতারা তাকে ঠেলে ওপড়ে পাঠালো। ভাগক্রমে সঞ্জয়ের রাগ আজ অর্ধেকটাই পরে গিয়েছে। তবে তাঁর শয়নকক্ষে আজ আর ফুলে মেলা নেই। দিব্যি পরিপাটি সাজানো গোছানো সাদামাটা শয্যাকক্ষে সঞ্জয় পায়ে পা তুলে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। হেমলতা দুয়ারের সামনে এসে দুবার মেঝেতে পা ঠুকে মলে “ঝুমুর” “ ঝুমুর” আওয়াজ তুললো। তাঁর মলের আওয়াজ সঞ্জয়ের কানে যেতেই চোখ খুলে সঞ্জয় কাছে ডাকলো হেমকে,তবে ইসারায়।
আজ আকাশ ঠিক মেঘলা নয়,তবে মাঝে মধ্যে এক আধটা মেঘ এসে ক্ষণকালের জন্যে উজ্জ্বল চাঁদটিকে ঢাকা দিয়ে আবার একটু পরে সরে যাচ্ছিল। মেঘের সাথে চাঁদের ঐ লুকোচুরি খেলা দেখবার মতো জিনিস বটে। তবে আমাদের হেমলতা তখন স্বামীর কোলে বসে রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। তা না হলে ক্ষণকাল অবকাশ মিললে বোধকরি দুজনেই আকাশের পানে চেয়ে মেঘ ও চাঁদে এই অপূর্ব সুন্দর খেলাটি উপভোগ করতো।
অবশেষে খাবার পর্ব শেষ করে, শয্যায় আধশোয়া হয়ে হেমকে বুকে জড়িয়ে অন্যান্য দিনের মতোই গল্প করতে লাগলো সঞ্জয়। আজ এদের দেখলে কে বলবে গতকাল নিঃশব্দে ছোটখাটো একটা ঝড় বয়ে গেছে এদের মাঝে। যদিও রাতে এর বেশি কিছুই হলো না, তবে সকাল সকাল হেমলতা উঠে যখন বাইরে যাবে তখন সঞ্জয় হেমের হাত চেপে ধরলো। প্রথমটায় সঞ্জয়ের উদ্দেশ্য বুঝতে না পারলেও পরে যখন শয্যায় ফেলে সঞ্জয় হেমকে জড়িয়ে ধরলো, তখন লজ্জা ও ভয় এক সাথে এসে হেমলতার মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণে রাঙিয়ে দিল। তবে সে সঞ্জয়কে ঠেলে সরিয়ে উঠে বসে মাথা নাড়িয়ে তার অসম্মতি জানিয়ে দিল। সঞ্জয়ের জোরাজুরি করার ইচ্ছে হলো না। এমনিতেই তাঁর রাগের কারণে বেচারীর ফুলশয্যার ফুল শুকিয়ে বাসি হয়ে গিয়েছে। তবে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক করতে সঞ্জয় হেমলতার গালের দুপাশে হাত রেখে বললে,
– ক্ষমা কর লক্ষ্মীটি, আমি রেগে গেলে নিজেকে সামলাতে পারি না।
হেমলতা কি বলবে ভেবে পেল না। কারণ স্বামী মাফ চাইছে বটে কিন্তু তার ক্ষমা চাইবার কারণটি ত তাদেরই তৈরি। হলেই না হয় দুর্ঘটনা ,তবুও ত পিতার শেষ স্মৃতি। এমনটি হেমের সাথে হল সেকি রাগ না করে থাকতে পারতো? তাছাড়া তাঁর দামিনী'দি ত বলেছেই,“ স্বামী স্ত্রীর জন্যে প্রতিটি রাতই ফুলশয্যার রাত”। তবে কেন একটি রাতের জন্যে শুধু শুধু মন খারাপ করে বসে থাকবে সে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করার নেই। রাতে সুযোগ ছিল ,কিন্তু সঞ্জয় তা গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছে।
– এখন নয়!
– কেন?এখনো তো ঠিকমতো ভোর হয়নি ।
– উঁহু... একটু পরেই দিদি উঠে কাজে হাত লাগাবে আর আমি এখানে বসে ছি! ছি! ও আমি পারবো না।
হেমের এমন কথায় সঞ্জয়ের চমক লেগে গেল। লাগারই কথা, হেমলতা এই প্রথম মুখ ফুটে বলছে পারবে না। সঞ্জয় অবাক চোখে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে রইল। তবে হেমলতা সত্যিই বিছানা ছেড়ে ধীরপদক্ষেপে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
সকালের খাবার এলো সৌদামিনীর হাতে করে। কিন্তু আজ আর সে ছুটে বেরিয়ে গেল না,আর সঞ্জয় ও বিশেষ রাগ দেখালো না। সঞ্জয়কে খেতে বসিয়ে দামিনী চেয়ার টেনে বসলো সমুখে। সঞ্জয় এক পলক তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। কারণ দামিনীর শাড়ি ছিল নাভির থেকে বেশ খানিকটা নিচে । আর শাড়ির আঁচল ছিলো বুকের একদম মাঝ দিয়ে। কাঁচুলি সহ তাঁর বুকটা উচু হয়ে ছিলো আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায়। সঞ্জয়ের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া দেখে দামিনী হেসে বললে,
– চোখ নামিয়ে নিলে কেন? এই শেষ সুযোগ দেখে নাও! তোমার জন্যেই সেজে এসেছি এই রূপে।
সঞ্জয় মুখ তুলে ভ্রু কুঁচকে দৃষ্ট রাখলো দামিনীর মুখে।বোধহয় ছলনাময়ীর উদ্দেশ্য বোঝবার একটা চেষ্টা।
– কি হল! ওভাবে তাকিয়ে কেন? কচি বউ পেয়ে এখন এই বুড়ি মাগিটাকে ভালো লাগছে না বুঝি!
সঞ্জয় কথা বলল না, তবে বিরক্তিতে তার মন বিষিয়ে উঠলো। সে খাবার রেখেই উঠে পরছে দেখে দামিনী চেয়ার ছেরে সঞ্জয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,
– আরে! আরে! কর কি? খাবার রেখে উঠতে নেই, বসো বলছি।
– তুমি কি চাইছো বল তো? এতদিন পরে আবার কেন এই নাটক?
সঞ্জয়ের গলা উত্তেজিত,তবে রাগান্বিত নয়।তাই দেখে সৌদামিনী হাসি হাসি মুখের বলল,
– কিছু না,তোমায় দেখতে মন চাইছিল তাই।
– আশা করি দেখা হয়ে গিয়েছে,এবার আসতে পারো।
দামিনী খানিকক্ষণ চুপচাপ চেয়ে রইল সঞ্জয়ের মুখপানে। তারপর ধীরে ধীরে বলল,
– দেখ সঞ্জয় তোমার কাছে আমি যে অপরাধে অপরাধি যেটি কিন্তু সত্য নয়। কিন্তু....
– আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাইনা দামিনী, আমি চাই না তোমার জন্যে আমার আর কোন ক্ষতি হোক। দয়া করে তুমি আমার সামনে থেকে যাও এখন।
এর কঠিন উত্তর খুব সম্ভব দামিনীর কাছে ছিল। তবে যে ব্যক্তি নিজেই অপরাধ করছে প্রতি নিয়ত,অথচ তার এই অপরাধ ধরা পরলে কি হতে পার তা জান শর্তেও। সেই ব্যক্তির সাথে কুতর্ক হোক বা সুতর্ক হোক,দুটোতেই রাগিয়ে দেয়া সহজ। তবে এটি দামিনীর দোতলায় আসার কারণ নয়। তাই সে একটু হেসে শান্ত স্বরে বললে,
– আমি চলে যাচ্ছি কাল সকালেই। সেটি বলতেই তোমার কাছে আসা ।এখন এসো খেতে বসো আর রাগ করতে হবে না। একটু কষ্ট করে আজের দিনটা মানিয়ে নাও,কাল থেকে তুমি আমায় আর এই বাড়িতে দেখবে না।
কথাটি বলে দামিনী সঞ্জয়ের কাঁধে চাপ দিয়ে আবার বসিয়ে দিল।তারপর একটি তালপাখা হাতে ধীরে ধীরে হাওয়া করতে লাগলো, যদিও হাওয়া করার কোন প্রয়োজন ছিন না।
//////////////
খাবার পর্ব শেষে কি ভেবে সঞ্জয় আজ আর কাজে গেল না। নিজের শয়নকক্ষে ভাঙা রেডিও ঠিক করতে বসলো সে। এই দৃশ্য নয়নতারার কোমল মনে একটু লগলো বোধকরি। তাই সেও সঞ্জয়কে কাজে যাবার তারা দিতে ঘরে ঢুকলো না,দুয়ারের বাইরে থেকেই ফিরেগেল।
নিচে নেমে আর এক দৃশ্য। নয়নের স্বামী আজ কাজে যেতে তৈরী। যদিও এখনো তার জন্যে কিছুই ঠিক হয়নি। তবে কি না সঞ্জয়ের থেকে সোহম হিসাবে পাকা,তাই তার এই মতি। ছোট ভাইয়ের বদলে সে বসবে হাটের দোকানে। বলা বাহুল্য এতে নয়নতারার সন্দেহ হবারই কথা। সে ঘরে ঢুকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
– গঞ্জে যাওয়া হচ্ছে বুঝি?
– না মানে ভাবছিল ....
– তা ভাবনা মন্দ নয়,তবে!
বলতে বলতে নয়নতারা স্বামী কাছে এসে তাঁর ডানহাতে স্বামীর ডান হাতখানি নিয়ে নিজের মাথায় চেপেধরল।
– তোমায় আমার দিব্যি! এবার যদি মন্দপথে পা বারিয়ে.....
– আহা! কর কি?
– উঁহু্...বেশ করছি। এবার তুমি যদি ওসব না ছাড়ো তবে আমি সত্য সত্যই জলে ডুবে প্রাণ দে.....
সোহম তার হাত ছাড়িয়ে নয়নতারার মুখ চেপেধরে। সস্নেহে কপালে চুমু খেয়ে বলে,
– ছি! ও কথা মুখে আনতে নেই।
নয়নতারার সঞ্জয়ের কান্ডে এমনিতেই বিরক্ত। সে আর কিছু না বলে খাটের এপাশে বসে রইলো মুখ বাকিয়ে।
– আচ্ছা আর ধরবো না ওসব। কিন্তু মাঝে মাঝে যদি বড্ড বেশি ইচ্ছে করবে তখন তুমি না হয় খাইয়ে দিও।
– আবারও, তুমি ঘরে বসো কোথাও যেতে হবে না তোমায়।
– আরে-রে কর কি! বলছি তো আমর বেশ শিক্ষা হয়েছে,এই তোমার মাথার দিব্যি আমি আর ওসবে নেই।
– সত্যিই!
এবার আর কথা নয়, নয়নতারার ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন এঁকে দিল সোহম।যদিও এই আইডিয়া টা ছোট ভাই সঞ্জয়ের দেওয়া,তবুও বেশ কাজের বলতে হয়। কাজে যাবার আগে সোহম দোতলায় উঠলো সঞ্জয়ের সাথে কি আলোচনা করতে। এই দৃশ্য নতুন, তবে দেখে নয়নতারার মন ও চোখ দুটোই জুড়িয়ে গেল। সেই সাথে খানিক টা অজানা ভয়ও তার মনে কয়েক বার নাড়াচাড়া দিয়ে গেল। হাজার হোক দেবরের সাথে তার সম্পর্কটা ত অবৈধ। তার ওপড়ে নয়নের ঠাকুরপোটির স্বভাব যা খামখেয়ালী ও ছেলেমানুষী।একটু অসাবধান হলেই দুই ভাইয়ের মধ্যে যে মধু সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে , তা অচিরেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
নয়নতারার পিতা ও মাতা আজ সকালে তাঁদের বাড়ি ফিরবে। তাই শেষ মহুর্তে হেমলতা তার মায়ের সাথে রান্নাঘরের পাশে জাম গাছের ছায়াতে বসে কি যেন আলোচনা করছিল। কিন্তু কাছে গিয়ে নয়ন দেখলো হেম বসে আছে চুপচাপ, আলোচনা করছে সৌদামিনী। নয়নতারা অবাক হলো না, সৌদামিনী লোক বুঝে কথা বলতে জানে। সে সাথে অতি সহজেই যে কারো সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সে পটু।
নয়নতারা এগিয়ে গিয়ে হেমকে সরিয়ে এনে তার শয়নকক্ষে ঢুকবে ভাবলো,কিন্তু শেষটায় কি ভেবে সোজা সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে গেল। ছাদের এক পাশে বসে নয়নতারা হেমলতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলো,
– গত রাতে কি হলো বল?
হেমলতা যা যা হয়েছে সব কিছুই তাঁর দিদিকে বললো। এই বিষয়ে দিদি সাথে আলোচনা করতে হেমলতার কোন সংকোচ ছিল না।
– কি বোকা মেয়েরে তুই হেম!
– কেন? আমি কি করলাম?
– ভোরবেলা স্বামী কে ওভাবে রেখে এলি কেন? ধর যদি এখন সে তোর প্রতি বিরক্ত হয়ে অন্য কারো কাছে যায় তবে!
– যাহ্...তা কেন হবে?...সে এমন নয়.....একদমই নয়
– সাধে কি তোকে বোকা বলে সবাই, পাগলী মেয়ে একটা। সে যদি এমন নাই হয়ে তব দামিনী এখানে কেন এলো শুনি? ওদের আগে বিয়ে হবার কথা ছিল,তোকে বলেনি দামিনী?
– ধ্যাৎ....ও সব মিছে কথা, দামিনী'দি সব সময় মজা করে কথা বলে।তাছাড়া দামিনী'দির মতো সতীন হলেও আমার ক্ষতি নেই কিছু।
নয়নতারা এবারের হেমলতার চিবুক ধরে একটু নেড়ে দিয়ে বললে,
– বোকা মেয়ে কোথাকার, দামিনী মজা করে বললেও সব সত্য কথাই বলে রে পাগলী।
হেম দিদির কথা শুনে খানিকক্ষণ থ মেরে বসে রইলো।তারপর খানিকটা স্বাভাবিক হলে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে বলল,
– তবে যে দামিনী দি বললো কাল সে কলকাতায় ফিরবে.
– কখন বললো?
– আজ সকালেই, খাবার সময়....
//////////////
বারান্দায় বাবুকে খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে নয়নতারা দৃষ্টি দিচ্ছিল দামিনীর দিকে। হেমলতা তরিতরকারি কুটতে কুটতে পাশে বসা দামিনীর সঙ্গে কথা বলছিল। মঙ্গলা দাসী সিঁড়িতে বসে মন্দিরাকে ভাত খাওয়াতে ব্যস্ত। এমন সুখী সুখী পরিবেশে হঠাৎ সঞ্জয় দোতলা থেকে নেমে দেবু দেবু বলে চিৎকার জুড়লো।
– কি হয়েছে ঠাকুরপো? ওমন ষাঁড়ের মত ডাক ছাড়া হচ্ছে কেন?
– দেবুটাকে দেখেছো?
– সে বাড়িতে নেই, তোমার দাদার সাথে হাটে গেছে।
কথা শুনেই সঞ্জয় সিঁড়ির কাছ থেকে মূহুর্ত্তের মধ্যে উধাও। কি হল তা জানতে নয়নতারাও তাৎক্ষণাত বারান্দা থেকে উঠে গেল দোতলায়। সঞ্জয়ের ঘরের সামনে এসে দেখে; তাঁর ঠাকুরপোটি বেরুবে বলে তৈরি । নয়নতারা জলদি জলদি বাবুকে কোল থেকে নামিয়ে দুয়ার আটকে দাড়ালো।
– কি করছো বৌদিমণি!
– কোথায় যাওয়া হচ্ছে এখন?
–একটু হাটে যাবো, বেশি সময় লাগবে না।
– না, আজ আর তোমার বেরুনো হচ্ছে না। চুপচাপ ঘর বসো কোথাও যেতে হবে না তোমায়,যাও বলছি।
– হঠাৎ এই সব কেন বৌদিমণি? বললাম তো বেশিখন লাগবে না। আমি এই যাবো আর এইআ.......
– না না তা হচ্ছে না। আজ তুমি গৃহবন্দী ঠাকুরপো।
– কিন্তু বৌদিমণি আমার...
নয়নতারা আর কোন কথা না শুনে বাবুকে মেঝে থেকে তাঁর ঠাকুরপোর কোলে তূলে দিল। সুতরাং সঞ্জয়ের আর বেরুনো হলো না। দুপুরের খাবার সময় হলে নয়নতারা বাবুকে নিয়ে হেমলতা কে পাহাড়ায় বসিয়ে দিল। ততখনে সঞ্জয় নিজেও বুঝেছে আজ আর বাইরে বেরুনো সম্ভব নয়। তাই সে দুপুরের খাবার খেয়ে উপড়ি আয় সরুপ হেমলতাকে জড়িয়ে কয়েকটি চুমু খেলো। তখনও নিচে সবার খাওয়া-দাওয়া চলছে। কিন্তু বেচারী হেমলতার খাওয়া দাওয়া লাটে উঠেছে। সঞ্জয় দোর আটকে হেমলতাকে খাটে ফেলে তাঁর গলায় কয়েকটি চুমু দিয়ে বললে,
– আমাদের ফুলশয্যাটা এখনই শেরে ফেলি কি বল?
– ধ্যাৎ....একদম না!...আহ্হঃ....
সঞ্জয় দেখলো হেমলতার বড্ড না বলতে শিখে গেছে।কিন্তু তাতে কি হয়, উত্তেজনায় হেমলতার ওষ্ঠাধর ত ঠিকই কাঁপছে। তবে আপাতত ফুলশয্যার জন্যে রাতের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। দিনের আলোতে ফুলশয্যা ঠিক মানানসই লাগছে না। তবে হেমলতার বুকের ওপর থেকে শাড়ির আঁচল সড়িয়ে দুধ টিপতে ত ক্ষতি নেই। সুতরাং অল্পক্ষণের মধ্যেই হেমলতার বেগুনী শাড়ির আঁচল খানা টেনে সড়িয়ে ওর কালো কাঁচুলিতে ঢাকা নিটোল স্তন দুটি তে হাত লাগালো সঞ্জয়। তারপর কাঁচুলির পাতলা কাপড় সহ নরম দুধে মুখ দিয়ে চাটতে আর অন্য দুধটা টিপতে লাগলো জোড়ে জোড়ে। মুখের লালায় হেমের পাতলা কাঁচুলি হলো লালায়িত। হাতের টেপনে কাঁচুলি গেল কুঁচকে, দুই একটা হু বোধকরি ছেড়ে পড়লো বিছানায়। তবে সেদিকে এখন আর কে দেখে। অবাধ্য স্বামীর আদরে হেমলতার দেহে তখন কামনার আগুন জ্বলে উঠেছে ধীরে ধীরে। সে দাঁতে অধর কামড়ে,“আহহ্হঃ... ওহহ্হ...ওওওমাআআআআ..” বলে কামার্ত মৃদুমন্দ চিৎকার করতে ব্যস্ত। এদিকে সঞ্জয় হেমের দুধে চুমু খেতে খেতে ধীরে ধীরে নেমে এসেছে তার সুগন্ধি নাভির কাছে,সেখানে নাক ঘষছে সে। হেমলতা জানে অল্পক্ষণ পরে তার নাভিতে স্বামী চুমু খাবে এবার। একথা ভাবতেই তার কুমারী গুদে যে রসের বন্যা বয়ে গেল, তাঁর গুদে চারপাশের কেশরাশি পুরো রসে ভিজে জবজবে। উফফ্.. কি লজ্জা! কি লজ্জা! সঞ্জয়ের তার একটি হাত হেমের শাড়ির নিচ দিয়ে নিয়ে সেখানে নাড়াচাড়া করছে এখন। খানিক চললো এইসব,তবে আগের মত আজ আর সঞ্জয় হেমকে চরম মুহুর্তের কাছাকাছি নিয়ে গেল না। শুধুমাত্র বুঝিয়ে না বলতে শিখলেও সবসময় ওটি তার কাজে লাগবে না। হেম যখন সঞ্জয়ের হাত থেকে মুক্তি পেল,তখন সে বুঝে গিয়েছে যে স্বামী রাগ পরে গিয়ে সে এখন স্বাভাবিক।