10-11-2024, 12:02 AM
পার্ট : ৯
রুদ্রকে কাছে আসতে দেখেই স্নেহার ভয় যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে কারন দরজা খোলা তিতিরের কতো যদি রুদ্রের মা ও এসে পরে তবে আর লজ্জার শেষ থাকবেনা স্নেহার, উপায় না পেয়ে স্নেহা চিৎকার করে উঠলো,
- আহহ,( স্নেহা)
- কি হয়েছে, (রুদ্র তাড়াতাড়ি স্নেহার পা ধরে বসেছে) কি হলো আবার,
- আসলে মনে হলো ব্যাথাটা আবার বেড়ে গেলো,
আচ্ছা ঠিক আছে আমি খাইয়ে দিচ্ছি খেয়ে মেডিসিন নাও সব ঠিক হয়ে যাবে, স্নেহা সস্থির নিশ্বাস ফেললো,
রুদ্র স্নেহাকে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো, হঠাৎ রুদ্রের একটা ফোন আসতেই রুদ্র বেড়িয়ে গেলো,
স্নেহা বসে আছে, বাবা মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে তার,
বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো,
আচ্ছা পাপা কি রাজশাহী চলে গেলো, কিন্তু কেন গেলো, বাবার তো আর একেটা বিজনেস না অনেকগুলো বিজন্যাস তাহলে একটা বিজনেস এ লোকসান হওয়াতে সে এমন একটা ডিসিশন নিলো কেনো, স্নেহা এসব বসে বসে ভাবছে,
মাথাটা যেন গোলমেল পাকিয়ে যাচ্ছে স্নেহার।
ভাইটার কোথাও খুব মনে পড়ছে স্নেহার কতোদিন ভাইটাকে দেখে না।
বাবা মায়ের সাথে রাগ করে দেশ থেকে একসময় বিদায় নিয়েছিলো বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে তারপর একবার দেশে ফেরেনি। একটা খারাপ মেয়ের জন্য বাবা মায়ের সাথে এতো রাগ করার কি আছে, বিষয়টা নিজেও বুঝতে পারছেনা স্নেহা।
- হ্যা আশিস বল,
- স্যার সব খোঁজখবর নিয়েছি, আপনি যেমন ভাবে চাইবেন তেমন ভাবেই সব হবে,
- আচ্ছা ঠিক আছে, আশিস আমি তোকে ছোট ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করি, তুই তো জানিস আফজাল খানকে আমি কষ্ট দিতে চাই, তাই স্নেহার সাথে আমাকে ইচ্ছা না থাকা সত্তেও অনেক কিছু করতে হয়েছে কিন্তু মনে রাখিস আফজাল খান মাত্র মেয়ের ধর্ষিতা হবার কষ্টটা পেয়েছে এখনো জীবনে অনেক কষ্ট পাওয়া বাকি ওর।
- হ্যা স্যার আমি বুঝতে পারি, আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন আমি আপনার জন্য নিজের প্রান ও দিতে পারবো।
- আমি জানি আশিস,
স্নেহা বিছানায় বসে আছে, ঝড়ের বেগে রুদ্র রুমে ঢুকলো,
- স্নেহা আমি একটু বেড় হচ্ছি মা তিতির আছে কিছু লাগলে ওদের ডেকো।
- আচ্ছা, কোথায় যাচ্ছেন?(স্নেহা)
- একটু কাজ আছে,তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
- দেড়িতে আসলেই বা কি!( আস্তে আস্তে বললো স্নেহা)
- কিছু বললে,
- না মানে বললাম সাবধানে যাবে,
- আচ্ছা আসি, হাতে একটা বেগ নিয়েই রুদ্র বেড়িয়ে গেলো। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালোলাগছেনা স্নেহার, হঠাৎ স্নেহার চোখ গেলো পাশে রাখা একটা একটা ছোট পুতুলের ওপরে। পুতুলের ওপরে লেখা, my best brother. স্নেহা পুতুলটাকে হাতে নিয়েই দেখতে লাগলো,
পুতুলটাকে দেখে স্নেহার মনে হলো হয়তো তিতির রুদ্রকে পুতুলটা গিফট করেছে, আর আজ সকালে তিতিরকে রুদ্র ধমক ও দিয়েছে, তাই তিতিরের কথা মাথায় আসতেই স্নেহা তিতিরকে ডাকলো,
- তিতির, তিতির,
- ভাবি ডাকছিলে???
- হুম ডাকছিলাম, তোমার তো মন খারাপ তাইনা?
- কেন? মন খারাপ হতে যাবে কেন?( তিতির)
- ওই যে সকালে ভাইয়া তোমাকে বোকা দিলো,
- ভাইয়া সব সময়ই আমাকে বোকা দেয় ভাবি? পচা ভাইয়া একটা( অভিমানী সুরে)
- হুম কিন্তু আমি বুঝতে পেড়েছি তুমি তোমার ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসো,
- কিভাবে বুঝলে??( তিতির)
- এই যে নিজের ভাইয়াকে best brother লেখা ট্রফিটা দিয়েছো, খুব ভালো না বাসলে কি কাওকে বেষ্ট বলা যায় নাকি?
- ভাবি তুমি এই পুতুলটা ধরেছিলে??( তিতির)
- হ্যা ধরেছিলাম,
- এটা তুমি কি করেছো? ভাইয়া যদি জানতে পারে। তোমাকে অনেক বোকা দিবে এটা রেখে দাও।( ভিতু সুরে)
- কেন? কি সমস্যা আর তুমি এভাবে বলছো কেন? মনে হয় আমি ধরলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে।
- শুধু তুমি না ভাবি, এটা যেই ধরুক না কেন! ভাইয়া তাকে অনেক বোকা দেয়। প্লিজ ভাবি এটা রেখে দাও।
- মানে??
- মানে এটা আমি ভাইয়াকে দেইনি, কে দিয়েছে জানিনা। তবে আমি একবার পরিষ্কার করার সময় এটা ধরেছিলাম ভাইয়া আমাকে বোকা দিয়ে কাঁদিয়ে ফেলেছিলো,
- একটা পুতুলের জন্য এতো বোকা দেয়ার কি আছে আজব!! যাই হোক রেখে দিলাম। পূরোটা দিন স্নেহার তিতিরের সাথে গল্প করতে, করতেই কাটলো।
রাত ৯ টা,
রুদ্র বাসায় ফিরেছে, দুপুরে দু- বার ফোন দিয়েছিলো স্নেহার খোজ নেয়ার সময় কিন্তু স্নেহা নাকি তিতিরের সাথ্র গল্পে ব্যাস্ত। বিভিন্ন বাহানায় রুদ্রের সাথে কথা বলেনি স্নেহা।
তিতির বিছানায় শুয়ে আছে, রুদ এসেই স্নেহার কপালে ঠোট ছুঁইয়ে ফ্রেস হতে চলে গিয়েছে,
ফ্রেস হয়ে বের হয়েই স্নেহার পাশে বসলো রুদ্র,
- পা ব্যাথা কেমন? ব্যাথা আছে এখনো?
- ভালোই অল্প ব্যাথা আছে,
- হুম আচ্ছা দুপুরে গল্পে এতো ব্যাস্ত ছিলে যে একবার কথা বলার ও সুযোগ পাওনি?
- স্নেহা একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার আগের মতো বসে আছে,
রুদ্র স্নেহার পেটের ওপরে একহাত আর অন্য হাত স্নেহার ঘাড়ের ওপরে দিয়ে বসে আছে,
কিন্তু স্নেহার সেদিকে খেয়াল নেই সে ব্যাস্ত ওই পুতুলের ঘটনা রহস্য খুঁজতে, বসে বসে ভাবতে,ভাবতে একবার স্নেহা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করেই বসলো,
- আচ্ছা একটা কথা বলি?( স্নেহা)
- হুম বলো?
- টেবিল লেম্প এর সামনে ওটা কে দিয়েছে তিতির দেয়নি আমি জানি, আর ওটা কেও ধরলে আপনি রেগে যান তাও জানি! আসলে ওটা দিয়েছিলোটা কে?
রুদ্র স্নেহার ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসলো,
- আমাকে এই প্রশ্ন আর করবেনা, ওটা যেই দিয়ে থাকুক সেটা তোমার জানা দরকার নেই। শুধু এতোটুকু জেনে রাখো, তুমি আমার ওয়াইফ মন দিয়ে সংসার করবে, আর অন্যসব ব্যাপারে তোমার মাথা ঘামানোটা আমি পছন্দ করবোনা,
- তাই বলে আমি জানতেও পারবো না?( রেগেই বললো স্নেহা)
- হ্যা জানতে পারবে তবে আমি জানাবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার তাই বলছি, প্রশ্ন করবে না। আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবা না,
স্নেহা রাগে মুখ ফুলিয়ে একবার রুদ্রের দিকে তাকালো আবার, তারপর আবার অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো,,,
- অনেক রাত হয়েছে, তোমাকে খাইয়ে মেডিসিন খাওয়াতে হবে,(রুদ)
- আমি খাবোনা, আর মেডিসিন ও না।
- তুমি খাবে তোমাকে খেতেই হবে,
- বলছিনা খাবোনা, আর আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে আপনি কিছু বলবেন না,
স্নেহার এতোটুকু কথায় যেন রুদ্রের মাথায় আগুন ধরে গেলো,
- কি বললে তুমি?( অনেক রেগে)
- যা বলেছি ঠিক বলেছি আপনি আপনার সব ব্যাপারে যেহেতু আমি ইন্টারফেয়ার করতে পারবো না, তবে আপনিও আমার কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবেন না, আমি খাবো কি খাবোনা সেটা আমার ব্যাপার।
্নেহা একটানে কথাগুলো বলে গেলো,কিন্তু সে এতোক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো, যখনি মাথা তুলে রুদ্রের দিকে তাকালো,
- কি বললি তুই??? তোর ব্যাপার, তোকে কতোবার বলেছি তোর জীবনে এখন আর তোর বলতে কিছু নেই, সব আমার ব্যাপার হয়ে গেছে। শুধু তোর খাওয়া না তোর জীবনের সব কিছু হবে আমার কথায় আর কতোবার এই কথাগুলো তোকে বললে বুঝবি তুই???
কথাগুলো বলেই পাশে থাকা পানির জোগ জোরে আছার মারলো রুদ্র,
স্নেহা ততোক্ষনে ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে,
এবার রুদ্র স্নেহার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো,
- বল আর কখনো বলবি তোর ব্যাপার? বল আর বলবি? আর আমার কথার ওপরে কথা বলবি,
স্নেহা এবার জোরে জোরে কাঁদতে থাকে কান্না গতিটা এতো বেশি যে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেনা স্নেহা।
-বলিসনা কেন? বল( চৎকার করে বললো রুদ্র)
- স্নেহা কাঁদতে, কাঁদতেই উত্তর দিলো, না আর বলবো না।
চেঁচামেচি আর ভাংচুরের শব্দ পেয়ে রুদ্রের মাও রুমে চলে এলো,
এসেই দেখলো রুদ্র স্নেহার চুলের মুঠি ধরে আছে আর স্নেহা কাঁদছে,
- এই রুদ্র কি করছিস ছাড়, ( রুদ্রের মা)
- আমাকে ছাড়ো মা, ওর সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে।
- আমি বলছি তুই ওকে ছাড়,
অনেক জোরাজোরির পর আনোয়ারা বেগম রুদ্রকে ছাড়াতে সক্ষম হলো,
রুদ্রকে ছাড়ানোর পরই স্নেহা আনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কাঁদতে লাগলো, আর রুদ্র রাগে গজগজ করতে, করতে বেড়িয়ে গেলো।
রুদ্রের রাগ অনেক বেশি, রাগ উঠলে কখনোই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা রুদ্র।
স্নেহা অনেকক্ষন আনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে, তারপর অনেক বুঝিয়ে আনোয়ারা বেগম স্নেহাকে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে, স্নেহার বাবা মা কখনো তার সাথে একটু ধমক দিয়ে কথা অবদি বলেনি,আর এখানে রুদ্রের এমন আচরনে স্নেহা অনেক বেশি ভয় পেয়ে যায়।
অনেকক্ষন ছাদে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে রুদ্র, একটু আগে স্নেহার সাথে হয়তো একটি বেশি করে ফেলেছে। স্নেহাকে আঘাত করেছে। কিছুক্ষনের ভেতরেই রুদ্রের খারাপ লাগতে শুরু করলো স্নেহার জন্য। তাই নিজেকে শান্ত করে রুমের দিকে পা বাড়াল রুদ্র।
বিছানায় শুয়ে আছে স্নেহা, শাড়িটাও এলোমেলো। কেঁদেছে তাই চোখের কোনে এখনো বিন্দু জল জমে আছে।
স্নেহার পাশে বসেও বুকটা কেমন জানো করতে লাগলো রুদ্রর এতো নিষ্পাপ আর মায়াবী একটা মেয়েকে বারবার এতোটা কষ্ট দেয়, কিন্তু না আজ স্নেহাকে ঘুমন্ত অবস্থায় নিষ্পাপ লাগছে কারন সে স্নেহাকে যতোটা নিষ্পাপ ভাবতো স্নেহা ততোটা নিষ্পাপ না। তার এই নিষ্পাপ চেহারার আরালে লুকিয়ে আছে,এক অন্য স্নেহা।
স্নেহার দিকে তাকিয়ে রুদ্র পূরোনো কিছু সময়ের কথা চিন্তা করতে লাগলো,
চলবে,,,
( প্লিজ গল্পটা কেমন লাগছে একটু জানাবেন?)
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)