09-11-2024, 11:59 PM
পার্ট : ৭
কিন্তু স্নেহা তা বলতে পারলো না, কারন তার জীবনের সাথে তার বাবা মায়ের ও জীবন জড়িয়ে আছে,
যে লোকটা ''.ের মতো খারাপ কাজ করতে পারে তার কাওকে খুন করতেও হাত কাপবে না,
স্নেহা কিছু বললো না, চুপচাপ খেয়ে নিলো,
- তিতির স্নেহাকে সন্ধ্যায় একটা শাড়ি পড়িয়ে দিবি তোর রুমে নিয়ে, কাল যেগুলো কিনিছিলাম তার মধ্য থেকে। ( রুদ্রের মা) যা মা তিতিরের সাথে ওর রুমে যা,
স্নেহা কিছুই বুঝতে পারছে না, সে অলরেডি শারি পরে আছে, তবে কেনো আবার নতুন আরেকটা শারি পড়বে,
- আসলে মা, আমিতো এই শারিটা আজই পড়েছি তবে আবার নতুন শাড়ি কেনো পড়বো,
- আমি বলেছি তাই মা, আমার বউমা আজ আমার বাড়িতে প্রথম এসেছে তাই সব কিছু নতুন হওয়া চাই,
স্নেহা আর কিছু বললো না, শুধু মাথা নারালো,
খাওয়া শেষে স্নেহা রুমে গেলো, ক্লান্ত লাগছে শরীরটা একদিন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া হয়নি, তারপর রাত হলে কান্নাকাটি এক ধরনের মানুষিক চাপ যেন পেয়ে বসেছে স্নেহাকে, বিছানায় গা এলিয়ে দিতে ঘুমের রাজ্য তলিয়ে গেলো স্নেহা,,,
প্রায় ৩ ঘন্টা ঘুমালো স্নেহা, সন্ধ্যা ৭ টা, তিতিরের ডাকে ঘুম ভাঙলোলো স্নেহার,
- ভাবি ভাবি!!
চোখ মেলে তাকাতেই স্নেহা দেখলো তিতির ডাকছে তাকে,
স্নেহা উঠে বসলো,
- কি হয়েছে?
- তোমার বাবা এসেছে ভাবি,
- সত্যি??( খুশি হয়ে)
কিন্তু স্নেহার এ খুশি বেশিক্ষন থাকলো,না। কারন তার তার ভয় করছে যদি বাবা রুদ্রের মাকে সব বলে দেই তাহলে রুদ্র তার বাবার কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে, তাই স্নেহা দেরি না করে বিছানা থেকে নেমে সোজা ড্রয়িং রুমে গেলো,
- পাপা,
মেয়েকে দেখে আশরাফ খান উঠে দাঁড়ালো, স্নেহা দৌড়ে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,
- পাপা, আমি তোমাকে অনেক মিস করছিলাম পাপা,( স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলছে তার বাবাকে)
- হ্যা মামনি আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি,
ভাই ভালোই করেছেন মেয়ের ওপরে আর কোনো রাগ রাখেননি চলে এসেছেন। আসলে মেয়েরাই বাবা মায়ের খুব আদরের হয়( রুদ্রের মা)
- হ্যা আপা, আমার মেয়েটাকে দেখবেন আপনাদের ভরসায় রেখে যাচ্ছি ওকে।( স্নেহার বাবা)
- রেখে যাচ্ছ মানে? কোথায় যাচ্ছ পাপা?
- মা আমরা দেশের বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, রাজশাহীতে এখন থেকে ওখানেই থাকবো। ব্যাবসায় অনেক বড় লোস হয়েছে এরপর ঢাকা থেকে আর কি করবো তার চেয়ে ভালো বাকি জীবন জন্মস্থলেই কাটিয়ে দিবো।
- কিন্তু পাপা,( স্নেহা)
- কোনো কিন্তু না মা, তুমি এখানে অনেক ভালো থাকবে।
স্নেহা বাবার মুখের ভাষা নয়, চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে, মনে হচ্ছে খুব গভীর কিছু লুকাচ্ছে তার বাবা তার থেকে।
- পাপা, ভাইয়া? ভাইয়ার কি হবে?
- ও আসুক দেশে আগে থেকেই ওকে কিছু জানাবো না, তাহলে চিন্তা করবে।
- আচ্ছা মা আমি আসি, রওনা দিতে হবে, মেয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো স্নেহার বাবা। স্নেহা তখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
রুদ্রের মা অনেক কিছু বলে স্নেহাকে শান্তনা দিলো, তারপর তিতিরের রুমে বসিয়ে দিয়ে আসলো,
- ভাবি নাও এটা,
মাথা তুলে তাকিয়ে স্নেহা দেখলো তিতির একটা বেগ তার দিকে এগিয়ে ধরে রেখেছে,
- কি এটা?( স্নেহা)
-শাড়ি, মা তোমাকে এটা পড়তে বলেছে।আর খুব সুন্দর করে সাজতে বলেছে,
- কেনো??( স্নেহা)
- আগে যা বলেছে তা করো পরে সব জানতে পারবা!!( বলেই হাসতে,হাসতে চলে গেলো তিতির)
রুদ্রের মায়ের আদেশ না মানলে হয়তো রুদ্র আবার উলটা পালটা কিছু করবে তাই স্নেহা রেডি হতে লাগলো,
ফোনে কথা বলতে, বলতে বাসায় ঢুকছে রুদ্র,
রুদ্রে সামনে দুই হাত ছড়িয়ে থামতে বললো তিতির,
বিরক্তি মুখ নিয়ে ফোনটা কানের থেকে সরিয়েই রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,
- কি হয়েছ? কি বলবি? দেখছিলি না ফোনে কথা বলছিলাম।
- শোনো ভাইয়া, আমাকে রাগ দেখাবা না, এই নাও ধরো রুদ্রের দিকে একটা পেকেট এগিয়ে দিয়ে,
একবার পেকেটের দিকে তাকিয়ে,
- কি এটা?
- খুলে দেখো। মা এটা পড়ে রেডি হতে বলেছে,
- মানে????( রুদ্র) কেন?
- আমি কি জানি! আগে রেডি হও তারপর জানতে পারবে।
মা বলেছে মায়ের কথা রাখতেই হবে, তাই রুদ্র পেকেটটা নিয়ে তার রুমে গেলো,
পেকেট খুলেই দেখলো ভেতরে একটা নীল কালারের পাঞ্জাবি।
রুদ্র পাঞ্জাবিটা পরে রেডি হয়ে নিলো, তারপর বসে আবার লেপটপে কাজ করতে বসলো,
- ওয়াও ভাবি তোমাকে কি সুন্দর লাগছে,
তিতিরের কথা পেছনে তাকাতেই দেখলো তিতির দারিয়ে বলছে,
- ভাবি আজ ভাইয়া জাস্ট তোমাকে দেখে পাগল হয়ে যাবে,
স্নেহার বিয়েটা যদি সাধারন ভাবে হতো তবে ননদের এই কথায় হয়তো সে লজ্জা পেতো কিন্তু তার বিয়েটা অন্যসব পাঁচটা সাধারণ বিয়ের মতো না তাই হয়তো ননদের কথা তার লজ্জা পাওয়ার বদলে নিজের ওপরে করুণা হচ্ছে,কারন তাকে সব বাদ্ধ্য হয়ে করতে হচ্ছে,,,
- কই তোদের হলো, বলতে বলতে রুমে ঢুকছেন রুদ্রের মা মনোয়ারা বেগম। স্নেহাকে দেখেই সে বলে উঠলো,
- বাহ আমার মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে,
- হ্যা মা ঠিক বলেছো, তোমার ছেলে তো আজ পাগল হয়ে যাবে,( দুষ্টুমি করে বললো তিতির)
- তুই চুপ করবি? খালি পাকা পাকা কথা তাইনা, ভাবিকে এভাবে লজ্জা দিতে হয়? যা বাহিরে যা।
- আমাকে কেও ভালোবাসে বা, ( বলেই মুখে ভেংচি কেটে চলে গেলো তিতির।
- পাগল মেয়ে একটা,( তিতিরকে উদ্দেশ্য করে বললো মনোয়ারা বেগম) আয়তো মা খেয়ে নে!
- মা এতো তাড়াতাড়ি? আর আমি নিজের হাতে খেতে পারবো।
- হ্যা জানি, কাটা হাত নিয়ে দুপূরে খেতে কষ্ট হচ্ছিলো আমি বুঝেছি, এখন কথা না বলে আয়তো খাইয়ে দেই।
স্নেহার পাশে বসে মনোয়ারা বেগম স্নেহাকে খাইয়ে দিতে লাগলো,
স্নেহার তার দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে, আর চিন্তা করছে। রুদ্রের মা বা রুদ্রের বোন তো একটুও বদলায়নি তবে রুদ্র কেনো এতোটা বদলে গিয়েছে, বুঝতে পারছে না স্নেহা।
খাওয়া শেষ হতেই,
চল তো মা, আমার সাথে।
বলেই স্নেহাকে মানোয়ারা বেগম তার রুমে নিয়ে গেলো,
আলমারি থেকে একজোরা চুড়ির সেট বের করে স্নেহাকে পড়িয়ে দিলো,
- নে মা এটা তোর।আমি আমার রুদ্রের বউএর জন্য বানিয়ে রেখেছিলাম। আজ তাকে দিয়েও দিলাম।
চুড়ির সেট টা অনেক সুন্দর হালকা কাচেও যেন এটা অপরুপ একটা সুন্দরতা।
- কি করছিস বাবা?
- এইতো মা কাজ করছি,( রুদ্র)
- এখন আর কাজ করতে হবেনা, কিরে ভেতরে আয়,
মনোয়ারা বেগম ডাকতেই একটা ট্রে হাতে নিয়ে রুমে এলো স্নেহা, মাথা নিচু করে আছে,
মনোয়ারা বেগম স্নেহার হাত থেকে ট্রে টেবিলে রাখলো তারপর স্নেহাকে রুদ্রে পাশে সোফায় বসিয়ে দিলো,
িতির ও হাজির ফোন নিয়ে ছবি তোলার জন্য,
- বাহ আমাফ ছেলেমেয়ে দুটোকে কি ভালো লাগছে, মনোয়ারা বেগম স্নেহার আর রুদ্রের হাত ধরে বলতে লাগলো,
- আল্লাহতায়ালা স্বামী স্ত্রীকে একে ওপরের পরিপূরক করে পাঠিয়েছে, একসাথে চলতে গেলে এমন অনেক কিছু হবে দুজনের মাঝে কিন্তু কখনো রাগ করে আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ভুলেও মনে আনবে না, আমরা বাবা মা আজ আছি কাল নেই, তাই তোমাদের সংসার তোমাদেরই বুঝে নিতে হবে।
রুদ্রের মা রুদ্রের হাত আর স্নেহার হাত এক করে বললো, আমাকে কথা দাও তোমরা একে ওপরের খেয়াল রাখবে। ভুল বুঝে কখনো আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা ভাববেও না।
- উফ মা অনেক বলেছো এখন ছবি তুলতে দাও( পেছন থেকে বলে উঠলো তিতির)
- হ্যা রে আমার হয়ে গেছে নে তুই ছবি তোল, বলেই রুদ্রর মা সাইডে দারালো, আবার রুদ্র তার মাকে কাছে বসিয়েও কয়েকটা ছবি তুললো,
- অনেক হয়েছে এবার ওদের ছাড় (.তিতিরকে বললো মনোয়ারা বেগম)
দুজনের যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে, কিন্তু যাওয়ার আগে আরো একবার স্নেহার হাত ধরে মনোয়ারা বেগম বললো,
- আমার পাগল ছেলেটাকে দেখিস মা, কথাটুকু বলেই তিতিরকে নিয়ে চলে গেলো মনোয়ারা বেগম।
স্নেহা সেভাবেই সোফায় বসে আছে, রুদ্র স্নেহার পাশ থেকে উঠেই দরজা আটকে দিলো,
স্নেহা মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে, মনোয়ারা বেগম যা যা বলে গেলো তা করা স্নেহার পক্ষে কখনো সম্ভব না। যে মানুষটা তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি তারই দেখভাল করা তাকে মন থেকে ভালোবাসা এসব কখনোই পারবে না স্নেহা।
রুদ্র সোফার পাশে স্নেহার সামনে হাটু গেড়ে বসলো,
- স্নেহা, আমি জানি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি আমি, তবে এটা দেখে ভালো লাগছে যে তুমি আমার মা কে কিছু জানতে দাওনি। তাকে আগের মতোই সম্মান করো।
স্নেহা মাথা নিচু করে বসে আছে,
- বেনারসিতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, তবে আজকের পর থেকে * বাদে অন্য কিছু পড়ে বাহিরে যাবে না, আর আমার সামনে ছাড়া অন্য কারো সামনে শাড়ি বা অন্য কোনো ড্রেস পরে যাবে না।
- স্নেহা পাথরের মতো বসে শুধু রুদ্রের কথা শুনে যাচ্ছে।
- কি হলো কথা বলছোনা কেনো?
স্নেহার থুতনি উঠিয়ে,,,,,
স্নেহার চোখে পানি টলমল করছে,
রুদ্রের দিকে তাকিয়ে স্নেহা বললো,
- আমাকে এসব নাটক আর কতোদিন করতে হবে?
- মানে?( রুদ্র)
- মানে এই ভালোথাকার নাটক, সুখে থাকার মিথ্যা নাটক!!
-এসব কি বলছো স্নেহা? তোমার আমার বিয়ে হয়েছে? মরণ ছাড়া এই বিবাহিত জীবনের কোনো শেষ নেই, এ জীবন শুধু মৃত্যূ দিয়েই শেষ হবে,
- তবে আমাকে মেড়ে ফেলুন,( চোখের পানি গাল বেয়ে, বেয়ে পরছে কথাটা বলেই
- আবার পাগলামি করছো তাইনা?
- পাগলামি আমি না আপনি করছেন, আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা তবুও আমাকে থাকতে বাদ্ধ্য করছেন।( স্নেহা)
ওকে দেখাচ্ছি তোমার পাগলামির ফল, কথাটা বলেই রুদ্র স্নেহাকে একটানে কোলে তুলে নিলো,
তারপর স্নেহাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো,
- আমাকে ছাড়ুন আমার ভালোলাগেনা আপনাকে আমার ভালোলাগেনা আপনার ছোঁয়া।
- তাহলে কি ভালো লাগে?(রুদ্র)
- আপনার থেকে দূরে থাকতে ভালো লাগে,,
রুদ্র স্নেহার পেটে স্লাইড করতে, করতে বললো,
- এ জীবনে আমার থেকে আর তোমাকে কেও আলাদা করতে পারবে না,
তুমি আমাকে ভিলেন ভাবো বা হিরো, তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে,
চলবে,,,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)