09-11-2024, 11:58 PM
পার্ট : ৬
স্নেহা লাল শাড়ি পরে বের হয়েছে, চুলগুলো খোলা কিন্তু খোলা চুলগুলোকেই স্নেহা এলোমেলো বাধার চেষ্টা করছে, রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে,
- চুলগুলো খোলাই তো ভালো লাগছে বাধছো কেনো?
রুদ্রের কোথায় স্নেহা রুদ্রের দিকে তাকালো, একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়েই আবার চুল বাধতে ব্যাস্ত করে নিলো নিজেকে,
স্নেহার এমন হেয়ালি পোনা দেখে রুদ্রের মেজাজটা বেশ গরম হলো,
- আমার কথা শুনছো না? নাকি শুনেও না শোনার ভান করছো? আমি বলছিনা যে চুল বাধবা না, ( রাগে লাল হয়ে রুদ্র বললো স্নেহাকে) তারপর স্নেহার হাত থেকে রাবার বেন্ড টা নিয়ে ফেলে দিলো,
স্নেহার কেন জানো রুদ্রের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছা করছেনা তাই, চুপ করে রইলো,
- এখন থেকে আমি যেভাবে চাইবো সেভাবেই থাকতে হবে তোমাকে,তুমি চাও আর নাই চাও,( রুদ্র) বলেই স্নেহার হাত ধরে নিয়ে গেলো গাড়ির কাছে,,
স্নেহাকে গাড়িতে বসে নিজেও উঠে বসলো গাড়িতে,,,
স্নেহার সব কিছু কেমন জানো লাগছে মনে হচ্ছে এ জীবনের কোনো মানে নেই, সে কারো হাতের পুতুল হয়ে গেছে। সেই পুতুলটাকে যেভাবে নাচাচ্ছে পুতুলটা সেভাবেই নাচছে,,
অনেকক্ষন পর রুদ্র আর স্নেহা একটা বাড়িতে এসে পৌছালো,
বাড়িটা বেশ বড়, আশেপাশে ফুলগাছ আর এ সাইডে একটা দোলনা। যেমন বাড়ি স্নেহা চাইতো।
কলিংবেল বাজাতেই একটা মেয়ে দরজা খুললো,
- ভাইয়া, তুমি ভাবিকে নিয়ে এসেছো?( তিতির রুদ্রের বোন)
তিতিরকে দেখে স্নেহা অবাক তিতিররা এখানে থাকে স্নেহার জানা ছিলোনা। অনেক খুঁজেছে স্নেহা ওদের কিন্তু পায়নি এতোবছর পর এভাবে দেখা হবে ভাবেনি স্নেহা।
- হুম এসেছি!!
- কে আসলো রে তিতির,( রুদ্রের মা মনোয়ারা বেগম।ভেতরে থেকে আওয়াজ দিয়ে বললেন।
- মা ভাইয়া এসেছে ভাবিকে নিয়ে,
- ওদের বাহিরে দাড়াতে বল, আমি আসছি।
- আচ্ছা মা!! শুনলা মা দাড়াতে বলেছে,
হাতে একটা মিষ্টির আর পানির ট্রে নিয়ে হাজির হলো রুদ্রের মা,
স্নেহা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে? তার ছেলে আমাকে এভাবে বিয়ে করেছে কিন্তু তারপর ও রুদ্রে মা বোন কে এমন স্বাভাবিক লাগছে, এটা যেন স্নেহা মানতেই পারছে না।
রুদ্রের মা দরজার সামনে এসে হাতে থাকা ট্রে থেকে স্নেহাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো, আর পানি। তারপর স্নেহাকে একটা চেইন পড়িয়ে দিলো গলায়।
- বাহ কি মিষ্টি মেয়ে,আগের থেকেও বেশি মিষ্টি হয়েছো মা দেখতে। আমি আগের থেকেই তোকে খুব পছন্দ করতাম। রুদ্র ওকে কোলে করে ভেতরে আন।
রুদ্রের মায়ের কথা শুনে স্নেহা যেন থো মেরে আছে, কোলে করে ভেতরে নিতে হবে কেন? সে কি ভাবছে স্নেহা হাটতে ভুলে গেছে, কথাগুলো ভাবতে,ভাবতেই স্নেহা রুদ্রের দিকে তাকালো, রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্টু হাসি দিলো,
- মা কোলে করেই নিতে হবে কেন? না মানে যা ওজন আমি কোলে তুলবো কিভাবে( দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো রুদ্র)
- চুপ ফাজিল ছেলে, নতুন বউকে কোলে করেই ঘরে আনতে হয়। আর ওর ওজন যে কি তা বোঝাই যায়, ফাজলামো না করে যা বলছি তাই কর।
আর এদিকে স্নেহার ওজন নিয়ে কথা বলাতে স্নেহা রাগে কোটকোট করতে করতে রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে,
রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে, স্নেহাকে কোলে তুলে নিলো,কিন্তু স্নেহা রুদ্রকে ধরছে না দেখে রুদ্র একবার কোলে থেকে ফেলে দেয়ার ভান করতেই স্নেহা ভয়ে রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো,
রুদ স্নেহাকে নিয়ে সোজা তার রুমে গেলো তারপর বিছানায় স্নেহাকে বসিয়ে দিলো,
-যা ওজন তুমি? যাই মাকে বলি গ্লুকোজ বানিয়ে দিতে, বলেই রুদ্র চলে গেলো,
তিতির এসে স্নেহার পাশে বসলো,
- ভাবি আমি তোমাদের বিয়ের কাহিনি শুনেছি, উফ কতো রোমান্টিক ছিলো, ভাইয়া এতো রোমান্টিক হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনা।
তিতিরের কথা শুনে যেন স্নেহার মাথায় বাজ পড়লো, কি বলছে মেয়েটা এতো বিস্রি একটা ঘটনা মেয়েটার কাছে রোমান্টিক মনে হচ্ছে ভাবতেও পারছেনা স্নেহা.
- ভালোই হয়েছে তোমার বাবা সেই মাতাল ছেলেটার ব্যাপারে সব জানতে পেরেছিলো,আর নয়তো তোমার মতো একটা কিউট মেয়ের সাথে একটা মাতাল লোকের বিয়ে হয়ে যেত।
স্নেহা এবার বুঝতে পারলো যে আসলে রুদ্রের পড়িবার আসল ঘটনা জানে না, রুদ্র তাদের বানিয়ে,বানিয়ে অন্য গল্প বলেছে,
হাতে জুস নিয়ে রুদ্র রুমে ঢুকলো,
- কিরে ও আসতেই গল্প জুরে দিয়েছিস?
- না রে ভাইয়া, তোমাদের বিয়ের স্টোরি শুনছিলাম,
- মানে ( থতোমতো খেয়ে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,)
- হ্যা তো ভাবির কাছে বিয়ের গল্প শুনবার জন্য এসেছিলাম, আর ভাবি কিছু বলার আগেই তুমি চলে এলে,
রুদ্র শান্ত হলো এই ভেবে যে স্নেহা কিছু বলার আগেই সে এসে পড়েছে,
- হুম, যা তোকে মা ডাকছে,
- আচ্ছা, যাচ্ছি। ভাবি তুমি রেস্ট করো আমি মায়ের কথা শুনে আসি।
বলেই তিতির চলে গেলো।
এমন একটা কাজই আপনি করেছেন যে নিজের পড়িবারের কাছে সত্যি টা লুকাতে হচ্ছে। মিথ্যা গল্প বলেছেন তাদের।
- আমার দিক দিয়ে আমি কোনো ভুল করিনি,( গ্লাসে চুমুক দিতে, দিতে রুদ্র বললো)
- হ্যা আপনি তো কোনো ভুল করেননি, কিন্তু এখন আমি আপনার মায়ের কাছে যেয়ে আপনার ভালো কাজগুলো কথা বলবো আর জানতে চাইবো এই কাজের জন্য সে তার ছেলেকে কি উপহার দিবে!! বলেই স্নেহা বিছানার থেকে উঠলো, আর বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
- দাড়াও! যাওয়ার আগে এটা জেনে রাখো আজ আমার মা যদি সবটা জানে। তবে তুমি আর কখনো তোমার মা বাবার মুখ দেখতে পারবে না।
স্নেহা রুদের কথা শুনে থমকে যায়, এমন কোনো কথা সে রুদ্রের মুখ থেকে আশা করেনি।
- আপনি এতোটা খারাপ?
- হ্যা অনেক, এতোদিনেও বোঝোনি?( রুদ্র)
- সত্যি আমার বোঝা উচিৎ ছিলো, যে ''. করতে পারে সে খুন ও করতে পারে।
- তা তুমি যা ইচ্ছা বলো, কিন্তু আমার মা বোন যদি গুনাক্ষরেও কিছু টের পায় আমি কাওকে ছাড়বো না।
আর তুমি ভেবোনা ভালোবাসি বলে আমি তোমাকে স্বাধীন করে দেবো,
নেভার, তুমি এই বাড়ির বউ। আমার মায়ের সেবা করবে সুন্দর করে গুছিয়ে সংসার করবে আমার বোনকে নিজের বোন মনে করবে। আর একটা ভালো ওয়াইফ হবে,
- কখনোই না, এসব কিছুই আমি পারবো না। আমার থেকে এসব আশা করা ছেড়ে দিন।আমি না পারবো এই বাড়ির বউ হতে না পারবো আপনার ওয়াইফ হতে। আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমি মানিনা এই বিয়ে,( চিৎকার করে বললো স্নেহা।
- রুদ্র রেগে স্নেহার মুখ চেপে ধরলো,
চুপ একদম চুপ এটা তোমার বাপের বাড়ি না যে যা ইচ্ছা করবা। এটা আমার বাড়ি আমি যা বলবো তাই হবে, আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে,
রুদ্রের হাত ধাক্কা দিতে সরিয়ে স্নেহা বললো,( কি??? কি করবেন? মেড়ে ফেলবেন? মেড়েই ফেলুন বাচতে চাইনা আমি) কাঁদতে কাঁদতে বললো স্নেহা।
স্নেহার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রুদ্র বললো,
- তুই যে আমার পড়ান পাখি, তোকে মাড়লে তো নিজেই বাচতে পারবোনা। তুমি চাও আর না চাও আমার বাড়িতে আমার বউ হয়েই থাকতে হবে তোমাকে, মা তিতির কেও যেন কিছু না জানে।
( কথাগুলো বলেই রুদ্র স্নেহাকে ছেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,
স্নেহা ফ্লোরে বসে কাঁদছে ,
একটা সুন্দর সংসার চেয়েছিলো সে একটা ভালোবাসার মানুষ চেয়েছিলো সে কিন্তু তার সাথেই কেন এমন হচ্ছে প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো কেও জানে না,রুদ্র ছাড়া।
কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রের বলা কথাগুলো মনে পড়লো স্নেহার, রুদ্র বলেছে তার মা অথবা বোন কেও কিছু জানতে পারলে। তার মা, বাবাকে আর কখনো দেখতে পারবেনা স্নেহা। তাই স্নেহা ঠিক করলো নিজের মা, বাবাকে বাচাতে হলেই থাকে ভালো থাকার অভিনয় করতে হবে, ফ্লোর থেকে চোখ মুছতে মুছতে উঠলো স্নেহা বাথরুমে যেয়ে নিজেকে ফ্রেস করে দিলো। যতোটুকু সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করলো স্নেহা।
- ভাবি ও ভাবি!( তিতির)
ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই স্নেহা দেখলো তিতির রুমে তাকে ডাকছে,
- ও ভাবি তুমি বেরিয়েছ? মা তোমাকে ডেকেছে খাওয়ার জন্য।
- হুম আমি ফ্রেস হতে গিয়েছিলাম চলো,
স্নেহা খাবার টেবিলে যেতেই দেখলো টেবিল জুরে সব তার পছন্দের খাবার।
- ভাবি জানো আজ মা সব তোমার পছন্দের খাবার বানিয়েছে,
- আয় মা খেতে বস!!
- আন্টি আপনি এতোকিছু কেনো করতে গেলেন?( স্নেহা)
কি বললি তুই আমাকে? আমি তোকে সেই কখন থেকেই মেয়ের মতো তুই তুকারি করছি আর তুই আমাকে আন্টি বললি?
- তাইলে? কি বলবো আমিতো আপনাকে সবসময় আন্টি বলি।
- দেখ মা, সবসময়ের কথা আজ থেকে বাদ, তুই আমার মেয়ে আর মেয়ে কি মাকে আন্টি বলে নাকি তুই ও আমাকে মা বলবি।
- আচ্ছা মা, তুমি এতো কিছু কেন করেছো? ( হেসে দিয়ে বললো স্নেহা)
-আমি আজ আরেকটা মেয়ে পেয়েছি তো তাই আমার মেয়েটার জন্য করেছি,
কিন্তু আমার ছেলেটা যে কই গেলো,
- এই তিতির তোর ভাইয়া কই?
- মা ভাইয়া ছাদে,
- যা ডেকে আন দুজনে আজ আমার সামনে একসাথে খাবে,
ছাদে রুদ্র দাঁড়িয়ে ছিলো,
- ভাইয়া মা ডাকছে,
-কেন?
- খেতে,বলেছে আর তোমাকে আর ভাবিকে একসাথে বসে খাওয়াবে।
- আমার ইচ্ছা করছেনা, মাকে বল খাবোনা,
- মা যখন বলেছে তোমাকে যেতেই হবে,
তিতিরের জোরাজুরিতে রুদ্র নিচে নামলো,
রুদ্রকে আর স্নেহাকে পাশাপাশি বসিয়ে দিলো তিতির,
স্নেহার হাতে ব্যাথা খেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাও আস্তে, আস্তে খাচ্ছে।
- কিরে মা তোর হাতে কি হয়েছে,
রুদ্র মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে থো হয়ে আছে, স্নেহাও কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সত্যিটা তো বলা যাবেনা।
- আরে মা, ভাবিকে তার বাবা অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো, তাই মনে হয় ভাবি ভাইয়ার জন্য হাত কেটেছে, ( কেও কিছু বলার আগেই তিতির বলে উঠলো)
স্নেহা আর রুদ্র একে ওপরের দিকে তাকাচ্ছে,
স্নেহার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে বলতে সে এই লোকটার জন্য হাত কাটেনি লোকটার অত্যাচারের জন্য হাত কেটেছে,,,
চলবে,,,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)