08-11-2024, 06:00 PM
(This post was last modified: 13-11-2024, 04:27 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
সপ্ত ত্রিংশতি পরিচ্ছেদ
হোটেলে ঢুকতেই বদ্যিনাথ এগিয়ে এসে বলল,রনো আজ কিন্তু নগদে খেতে হবে।একপাশে চেয়ার নিয়ে বসতে বসতে আরণ্যক ভাবে এরমধ্যেই খাতা বন্ধ হয়ে গেছে।সন্তোষ মাইতি বেশ করিৎকর্মা।এই সব নেতার জন্য পার্টির পার্টির এই দুরাবস্থা।দু-বেলা খাওয়া আর রাতে থাকার বিনিময়ে দোকান সামলাতো।অন্য সময় কোথায় যাই কি করি তুমি কে হরিদাস তোমাকে বলতে হবে।আরণ্যক সোম কাউকে দাসখত লিখে দেয়নি।না খেয়ে মরে যাবে তবু কারো গোলামী করতে পারবে না।
সারা দুপুর দোকানে থাকলে পড়বে কখন?পরীক্ষায় বসবে না লিনাকে এখনই বলার দরকার নেই।কয়েকদিন পর আপনিই বুঝতে পারবে।যেখানেই যাক লিনাকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।বাঙালী মায়ের হৃদয় মমতায় ভরা শুনেছে কিন্তু ওতো ঠিক বাঙালী নয় তবু স্নেহ মমতা কারো চেয়ে কম নয়।খাওয়ার পর হাত-মুখ ধুয়ে পয়সা মিটিয়ে হোটেল থেকে বাইরে এসে দাড়ালো।মনে মনে হিসেব করে তার কাছে শ-চারেক মত টাকা আছে।এই টাকা শেষ হবার আগেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
কিরে রনো তুই এখানে?ধুমকেতুর মত উদয় হল গোবিন্দ।
তুই কাজে যাস নি?
নারে আজ একটা দরকারে কামাই করতে হল।
গোবেটা তাকে ফলো করছে নাতো আরণ্যক ভাবে,বলল যাক দেখা হয়েছে ভাল হয়েছেে।এই মহল্লা ছেড়ে চললুম পিকলুদের বলে দিস।
গোবিন্দ একটু ইতস্তত করে বলল,তোকে একটা কথা বলব?
আরণ্যক অবাক চোখে তাকায় ও আবার কি বলবে?
ফালতু ঝামেলা করে কি হবে বল।সন্তোষদার সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করে নে,দ্যাখ এতদিন আমরা এক পাড়ায় একসঙ্গে বড় হয়েছি--।
দাড়া দাড়া কিসের ঝামেলা--ভাব করছিস তুই কিছু জানিস না।
না তা নয়।দুপুরবেলা বেরোবার কি দরকার বল?
কখন বেরবো কোথায় যাব তোর সন্তোষ মাইতি ঠিক করবে?
রনোর চোখের দিকে তাকিয়ে গোবিন্দ ভয় পেয়ে যায়।শালা যা গোয়ার গোবিন্দ কি করে বসে।নরম সুরে বলে,ঠিক আছে তুই যা ভাল বুঝিস আমি আসি।
আরণ্যক বিটি রোডের দিকে হাটতে থাকে।
কোথায় যাচ্ছে কে জানে।আরণ্যকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গোবিন্দ ভাবতে থাকে।নক্সাল আমলের কথা মনে পড়ল।তাকে প্রায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিল কোথা থেকে এসে ঝাপিয়ে পড়ে সেদিন বাচিয়েছিল।নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয়।
ঘণ্টা পড়তেই ইলিনা ব্রাউন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল ।এটাই আজ তার শেষ ক্লাস ছিল।স্টাফরুমে এসে ব্যাগ গোছাচ্ছে এমসি বললেন,কি ব্যাপার মিস ব্রাউন আপনাকে দেখলাম প্রিন্সিপালের ঘরে গেছিলেন?
নজরে পড়েছে ইলিনা বলল,উনি ডেকেছিলেন।ছোটোখাটো মিথ্যেতে দোষ নেই।সেতো কোনো অপরাধ গোপন করছেনা।
হঠাৎ কি ব্যাপার?
তেমন কিছুনা।জানতে চাইলেন কোথায় থাকি,সঙ্গে আর কে কে থাকে এইসব।
উরিব্বাস ম্যাডাম আবার সবার খোজ খবর নেওয়া শুরু করল নাকি?
বিসি বলল,মিস ব্রাউন এবার একটা বিয়ে করে ফেলুন।এরকম একা একা ভাল লাগে নাকি?
আচ্ছা বাসনাদি বিয়ে করে আপনি খুব ভাল আছেন?পালটা বলল ইলিনা।
বিসি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,মানে?
মানে আমি জানতে চাইছি বিয়ে করে কেমন লাগছে?আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে জেনে নিই।
বিসি আমতা আমতা করে বলল,অভিজ্ঞতা কি বলব তবে মিঠেকড়া বলতে পারেন।
সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।
আচ্ছা ভেবে দেখব,আসি।
ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।বিয়ে কিনা জানিনা তবে আনুর সংস্পর্শে এসে মনে অনেক জোর অনুভব করে ইলিনা।যেন নিরাপদ আশ্রয়।
বাস স্টপেজে লোকজন নেই তাহলে একটু আগে বাস গেছে মনে হয়।যাতায়াতে ঘণ্টা দুয়েকের মত সময় নষ্ট।রাস্তার ওপারে ফ্লাট হচ্ছে দেখে মনে হল এখানে থাকলে অর্থ এবং সময়--দুয়েরই সাশ্রয় হতো।বাসের দেখা নেই।কি ভেবে রাস্তা পেরিয়ে ওপারে চলে এল।
ছাতা মাথায় একটি লোক দূরে দাঁড়িয়ে কাজ দেখছে।লোকটিকে জিজ্ঞেস করলে সব জানা যাবে।ইলিনা কাছে গিয়ে বলল,আচ্ছা ফ্লাটের দাম কি রকম পড়বে?
লোকটি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে।
সব বুক হয়ে গেছে?
আপনি বাংলা বলতে পারেন?
বাংলায় থাকি বাংলা বলব না?
আপনি কোথায় থাকেন?
নর্থ ক্যালকাটা।
ওখান থেকে এখানে ফ্লাট খুজছেন?
এখানে একটা কলেজে পড়াই।
আপনি প্রফেসার?ফ্লাট আপনি পেয়ে যাবেন।রাস্তার ধারে ওই একতলা বাড়ীটা দেখছেন ওটাও ফ্লাট হবে।
ভদ্রলোক বেশী কথা বলে।ইলিনা বলল,এটা কি সব বুক হয়ে গেছে?
না তা নয়।আপনি এই কার্ডটা রাখুন এতে দাদার নাম ফোন নম্বর দেওয়া আছে।আপনি দাদার সঙ্গে কথা বলবেন।
ইলিনা কার্ডটি হাতে নিয়ে চোখ বোলায়।
শুনুন ম্যাডাম ফোনে বলবেন আমি প্রফেসর বলছি তাহলেই দাদা চিনতে পারবেন।
ইলিনা রাস্তা পেরিয়ে বাস স্টপেজে এসে দাড়ালো।
পশ্চিমদিগন্তে ঢলে পড়েছে সূর্য।আলো কমে এসেছে।অনেকটা পথ হেটে এল আরণ্যক।পছন্দের দোকান তেমন চোখে পড়েনি।একটা বই খাতার দোকানে একজন বসে আছে।আরণ্যক এগিয়ে গিয়ে কথা বলল,লোকটি দোকানের কর্মচারী।মালিক আসবে সন্ধ্যেবেলা।খদ্দেরের তেমন ভীড় নেই।একজন লোক আছে আরেকজন নেবে মনে হয়না।আরণ্যক হাটতে থাকে।সন্ধ্যে হয়ে এল।কয়েকটা দোকানে জিজ্ঞেস করেছে কারো লোকের দরকার নেই।এভাবে কি কাজ পাওয়া যায়।হাল ছাড়লে চলবে না।সামনে একটা মোবাইলের দোকান।এক্টু ইতস্তত করে এগিয়ে গেল।দোকানে কাউকে নজরে পড়ল না।একটু ভিতরে ঢুকে ভাবে কেউ তো ছিল,দোকান ফেলে গেল কোথায়?আরণ্যকের গা ছম ছম করে।এখানে থাকা ঠিক হবে না। শেষে কি প্যাচে জড়িয়ে পড়ে।সামনে টেবিলে একটা মোবাইল পড়ে তাতে ভিডিও চলছে।এক বিদেশিনী মহিলা দাঁড়িয়ে একেবারে নিরাবরণ, সামনে বসা একটি ছেলের মুখটা নিজের যোনীতে চেপে ধরেছে। লিনার মত দেখতে অবশ্য লিনা এমন অসভ্য নয়। বুঝতে অসুবিধে হয় না কেউ দেখতে দেখতে উঠে গেছে।থাকা ঠিক হবে না ভেবে ঘুরে দাড়াতে যাবে ভিতর থেকে মধ্য বয়সী একজন লোক বেরিয়ে এসে বললেন,কি চাই?আমি একটু বাথরুমে গেছিলাম।
আরণ্যক দেখল মোবাইলটা টেবিলের উপর উপুড় করে রাখা। আরণ্যক বলল,কিছু চাইনা।আপনি দোকানের মালিক?
আমি কানাই ধর,এই দোকান আমার।মালিককে কি দরকার?
আমি একটা কাজ খুজছি যদি কোনো কাজ পাওয়া যায় মানে--।
কানাই ধর অবাক হয়ে আপাদ মস্তক দেখতে থাকেন।সুন্দর চেহারা দেখে ভদ্রঘরের মনে হল।একটা কাজের লোক হলে মন্দ হয়না।
আগে কোথাও কাজ করেছো?কানাই ধর জিজ্ঞেস করল।
একটা বইয়ের দোকানে কাজ করতাম।
আগের দোকানের কাজ ছেড়ে দিলে কেন?
একজন মোবাইলে ব্যালান্স ভরতে এসেছে কানাই ধর তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।পঞ্চাশের উপর বয়স কানাই ধরের এই বয়সেও এইসব ছবি দেখার বাতিক।আরণ্যক ভাবে কি বলবে?
খদ্দের মিটিয়ে কানাইবাবু বললেন,তোমার নামটা জানা হয়নি।তুমি বলছি কিছু মনে করোনি তো?
ঠিক আছে বয়জ্যেষ্ঠ্য আপনি তুমিই বলবেন।আমার নাম আরণ্যক সোম।
বিরাট নাম--।
সবাই আমাকে রনো বলে ডাকে।আরণ্যক হেসে বলল।
দেখো একজন লোক আমার দরকার।কিছু মনে কোরোনা তোমাকে আমি চিনিনা তুমিও আমাকে চেনোনা--তোমাকে অবিশ্বাস করছি না।দোকানে নানা কাজে খদ্দের আসে তুমি আগে কখনো এসব কাজ করোনি।সে আমি আস্তে আস্তে শিখিয়ে নেবো।তার আগে পাচ জনে যাকে চেনে জানে যেমন এম এল এ বা কাউন্সিলর কাউকে দিয়ে লিখিয়ে আনতে হবে সে তোমাকে চেনে।
আরণ্যক ভাবে তার জানা লোকজন সবই সন্তোষ মাইতির জানা শোনা।
কি এমন কেউ চেনা জানা নেই?
ঠিক আছে আমি তাহলে পরে আসবো।
বেশী দেরী কোরোনা কিন্তু।
যাক একটা সুরাহা হল।দোকান থেকে রাস্তায় নেমে উল্টোদিকে একটা চায়ের দোকান নজরে পড়তে ভাবল এক কাপ চা খাওয়া যাক।
কানাইবাবু লোকটার ব্যবহার খারাপ নয়।চেনেন না একটা পরিচয় পত্র চাইতেই পারে।মোবাইলে নোংরা ছবি দেখছিলেন।মানুষের হাতে যখন কাজ না থাকে যৌনতার চিন্তা মাথায় আসে।গোবিন্দর কাছ থেকে এতক্ষণে হয়তো ওরা সব খবর পেয়ে গেছে। চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবে মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।এক সময় বসতো বইয়ের দোকান এবার মোবাইলের দোকান।কানাইবাবু বলেছেন শিখিয়ে নেবেন।চা শেষ করে প্যসা দেবার জন্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে চমকে উঠল।এইরে চাবিটা ফেরত দেওয়া হয়নি।ম্যডামের কাছে আরেকটা চাবি আছে তা হলেও?
হোটেলে ঢুকতেই বদ্যিনাথ এগিয়ে এসে বলল,রনো আজ কিন্তু নগদে খেতে হবে।একপাশে চেয়ার নিয়ে বসতে বসতে আরণ্যক ভাবে এরমধ্যেই খাতা বন্ধ হয়ে গেছে।সন্তোষ মাইতি বেশ করিৎকর্মা।এই সব নেতার জন্য পার্টির পার্টির এই দুরাবস্থা।দু-বেলা খাওয়া আর রাতে থাকার বিনিময়ে দোকান সামলাতো।অন্য সময় কোথায় যাই কি করি তুমি কে হরিদাস তোমাকে বলতে হবে।আরণ্যক সোম কাউকে দাসখত লিখে দেয়নি।না খেয়ে মরে যাবে তবু কারো গোলামী করতে পারবে না।
সারা দুপুর দোকানে থাকলে পড়বে কখন?পরীক্ষায় বসবে না লিনাকে এখনই বলার দরকার নেই।কয়েকদিন পর আপনিই বুঝতে পারবে।যেখানেই যাক লিনাকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।বাঙালী মায়ের হৃদয় মমতায় ভরা শুনেছে কিন্তু ওতো ঠিক বাঙালী নয় তবু স্নেহ মমতা কারো চেয়ে কম নয়।খাওয়ার পর হাত-মুখ ধুয়ে পয়সা মিটিয়ে হোটেল থেকে বাইরে এসে দাড়ালো।মনে মনে হিসেব করে তার কাছে শ-চারেক মত টাকা আছে।এই টাকা শেষ হবার আগেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
কিরে রনো তুই এখানে?ধুমকেতুর মত উদয় হল গোবিন্দ।
তুই কাজে যাস নি?
নারে আজ একটা দরকারে কামাই করতে হল।
গোবেটা তাকে ফলো করছে নাতো আরণ্যক ভাবে,বলল যাক দেখা হয়েছে ভাল হয়েছেে।এই মহল্লা ছেড়ে চললুম পিকলুদের বলে দিস।
গোবিন্দ একটু ইতস্তত করে বলল,তোকে একটা কথা বলব?
আরণ্যক অবাক চোখে তাকায় ও আবার কি বলবে?
ফালতু ঝামেলা করে কি হবে বল।সন্তোষদার সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করে নে,দ্যাখ এতদিন আমরা এক পাড়ায় একসঙ্গে বড় হয়েছি--।
দাড়া দাড়া কিসের ঝামেলা--ভাব করছিস তুই কিছু জানিস না।
না তা নয়।দুপুরবেলা বেরোবার কি দরকার বল?
কখন বেরবো কোথায় যাব তোর সন্তোষ মাইতি ঠিক করবে?
রনোর চোখের দিকে তাকিয়ে গোবিন্দ ভয় পেয়ে যায়।শালা যা গোয়ার গোবিন্দ কি করে বসে।নরম সুরে বলে,ঠিক আছে তুই যা ভাল বুঝিস আমি আসি।
আরণ্যক বিটি রোডের দিকে হাটতে থাকে।
কোথায় যাচ্ছে কে জানে।আরণ্যকের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গোবিন্দ ভাবতে থাকে।নক্সাল আমলের কথা মনে পড়ল।তাকে প্রায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিল কোথা থেকে এসে ঝাপিয়ে পড়ে সেদিন বাচিয়েছিল।নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয়।
ঘণ্টা পড়তেই ইলিনা ব্রাউন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল ।এটাই আজ তার শেষ ক্লাস ছিল।স্টাফরুমে এসে ব্যাগ গোছাচ্ছে এমসি বললেন,কি ব্যাপার মিস ব্রাউন আপনাকে দেখলাম প্রিন্সিপালের ঘরে গেছিলেন?
নজরে পড়েছে ইলিনা বলল,উনি ডেকেছিলেন।ছোটোখাটো মিথ্যেতে দোষ নেই।সেতো কোনো অপরাধ গোপন করছেনা।
হঠাৎ কি ব্যাপার?
তেমন কিছুনা।জানতে চাইলেন কোথায় থাকি,সঙ্গে আর কে কে থাকে এইসব।
উরিব্বাস ম্যাডাম আবার সবার খোজ খবর নেওয়া শুরু করল নাকি?
বিসি বলল,মিস ব্রাউন এবার একটা বিয়ে করে ফেলুন।এরকম একা একা ভাল লাগে নাকি?
আচ্ছা বাসনাদি বিয়ে করে আপনি খুব ভাল আছেন?পালটা বলল ইলিনা।
বিসি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,মানে?
মানে আমি জানতে চাইছি বিয়ে করে কেমন লাগছে?আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে জেনে নিই।
বিসি আমতা আমতা করে বলল,অভিজ্ঞতা কি বলব তবে মিঠেকড়া বলতে পারেন।
সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।
আচ্ছা ভেবে দেখব,আসি।
ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।বিয়ে কিনা জানিনা তবে আনুর সংস্পর্শে এসে মনে অনেক জোর অনুভব করে ইলিনা।যেন নিরাপদ আশ্রয়।
বাস স্টপেজে লোকজন নেই তাহলে একটু আগে বাস গেছে মনে হয়।যাতায়াতে ঘণ্টা দুয়েকের মত সময় নষ্ট।রাস্তার ওপারে ফ্লাট হচ্ছে দেখে মনে হল এখানে থাকলে অর্থ এবং সময়--দুয়েরই সাশ্রয় হতো।বাসের দেখা নেই।কি ভেবে রাস্তা পেরিয়ে ওপারে চলে এল।
ছাতা মাথায় একটি লোক দূরে দাঁড়িয়ে কাজ দেখছে।লোকটিকে জিজ্ঞেস করলে সব জানা যাবে।ইলিনা কাছে গিয়ে বলল,আচ্ছা ফ্লাটের দাম কি রকম পড়বে?
লোকটি অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে।
সব বুক হয়ে গেছে?
আপনি বাংলা বলতে পারেন?
বাংলায় থাকি বাংলা বলব না?
আপনি কোথায় থাকেন?
নর্থ ক্যালকাটা।
ওখান থেকে এখানে ফ্লাট খুজছেন?
এখানে একটা কলেজে পড়াই।
আপনি প্রফেসার?ফ্লাট আপনি পেয়ে যাবেন।রাস্তার ধারে ওই একতলা বাড়ীটা দেখছেন ওটাও ফ্লাট হবে।
ভদ্রলোক বেশী কথা বলে।ইলিনা বলল,এটা কি সব বুক হয়ে গেছে?
না তা নয়।আপনি এই কার্ডটা রাখুন এতে দাদার নাম ফোন নম্বর দেওয়া আছে।আপনি দাদার সঙ্গে কথা বলবেন।
ইলিনা কার্ডটি হাতে নিয়ে চোখ বোলায়।
শুনুন ম্যাডাম ফোনে বলবেন আমি প্রফেসর বলছি তাহলেই দাদা চিনতে পারবেন।
ইলিনা রাস্তা পেরিয়ে বাস স্টপেজে এসে দাড়ালো।
পশ্চিমদিগন্তে ঢলে পড়েছে সূর্য।আলো কমে এসেছে।অনেকটা পথ হেটে এল আরণ্যক।পছন্দের দোকান তেমন চোখে পড়েনি।একটা বই খাতার দোকানে একজন বসে আছে।আরণ্যক এগিয়ে গিয়ে কথা বলল,লোকটি দোকানের কর্মচারী।মালিক আসবে সন্ধ্যেবেলা।খদ্দেরের তেমন ভীড় নেই।একজন লোক আছে আরেকজন নেবে মনে হয়না।আরণ্যক হাটতে থাকে।সন্ধ্যে হয়ে এল।কয়েকটা দোকানে জিজ্ঞেস করেছে কারো লোকের দরকার নেই।এভাবে কি কাজ পাওয়া যায়।হাল ছাড়লে চলবে না।সামনে একটা মোবাইলের দোকান।এক্টু ইতস্তত করে এগিয়ে গেল।দোকানে কাউকে নজরে পড়ল না।একটু ভিতরে ঢুকে ভাবে কেউ তো ছিল,দোকান ফেলে গেল কোথায়?আরণ্যকের গা ছম ছম করে।এখানে থাকা ঠিক হবে না। শেষে কি প্যাচে জড়িয়ে পড়ে।সামনে টেবিলে একটা মোবাইল পড়ে তাতে ভিডিও চলছে।এক বিদেশিনী মহিলা দাঁড়িয়ে একেবারে নিরাবরণ, সামনে বসা একটি ছেলের মুখটা নিজের যোনীতে চেপে ধরেছে। লিনার মত দেখতে অবশ্য লিনা এমন অসভ্য নয়। বুঝতে অসুবিধে হয় না কেউ দেখতে দেখতে উঠে গেছে।থাকা ঠিক হবে না ভেবে ঘুরে দাড়াতে যাবে ভিতর থেকে মধ্য বয়সী একজন লোক বেরিয়ে এসে বললেন,কি চাই?আমি একটু বাথরুমে গেছিলাম।
আরণ্যক দেখল মোবাইলটা টেবিলের উপর উপুড় করে রাখা। আরণ্যক বলল,কিছু চাইনা।আপনি দোকানের মালিক?
আমি কানাই ধর,এই দোকান আমার।মালিককে কি দরকার?
আমি একটা কাজ খুজছি যদি কোনো কাজ পাওয়া যায় মানে--।
কানাই ধর অবাক হয়ে আপাদ মস্তক দেখতে থাকেন।সুন্দর চেহারা দেখে ভদ্রঘরের মনে হল।একটা কাজের লোক হলে মন্দ হয়না।
আগে কোথাও কাজ করেছো?কানাই ধর জিজ্ঞেস করল।
একটা বইয়ের দোকানে কাজ করতাম।
আগের দোকানের কাজ ছেড়ে দিলে কেন?
একজন মোবাইলে ব্যালান্স ভরতে এসেছে কানাই ধর তাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।পঞ্চাশের উপর বয়স কানাই ধরের এই বয়সেও এইসব ছবি দেখার বাতিক।আরণ্যক ভাবে কি বলবে?
খদ্দের মিটিয়ে কানাইবাবু বললেন,তোমার নামটা জানা হয়নি।তুমি বলছি কিছু মনে করোনি তো?
ঠিক আছে বয়জ্যেষ্ঠ্য আপনি তুমিই বলবেন।আমার নাম আরণ্যক সোম।
বিরাট নাম--।
সবাই আমাকে রনো বলে ডাকে।আরণ্যক হেসে বলল।
দেখো একজন লোক আমার দরকার।কিছু মনে কোরোনা তোমাকে আমি চিনিনা তুমিও আমাকে চেনোনা--তোমাকে অবিশ্বাস করছি না।দোকানে নানা কাজে খদ্দের আসে তুমি আগে কখনো এসব কাজ করোনি।সে আমি আস্তে আস্তে শিখিয়ে নেবো।তার আগে পাচ জনে যাকে চেনে জানে যেমন এম এল এ বা কাউন্সিলর কাউকে দিয়ে লিখিয়ে আনতে হবে সে তোমাকে চেনে।
আরণ্যক ভাবে তার জানা লোকজন সবই সন্তোষ মাইতির জানা শোনা।
কি এমন কেউ চেনা জানা নেই?
ঠিক আছে আমি তাহলে পরে আসবো।
বেশী দেরী কোরোনা কিন্তু।
যাক একটা সুরাহা হল।দোকান থেকে রাস্তায় নেমে উল্টোদিকে একটা চায়ের দোকান নজরে পড়তে ভাবল এক কাপ চা খাওয়া যাক।
কানাইবাবু লোকটার ব্যবহার খারাপ নয়।চেনেন না একটা পরিচয় পত্র চাইতেই পারে।মোবাইলে নোংরা ছবি দেখছিলেন।মানুষের হাতে যখন কাজ না থাকে যৌনতার চিন্তা মাথায় আসে।গোবিন্দর কাছ থেকে এতক্ষণে হয়তো ওরা সব খবর পেয়ে গেছে। চায়ে চুমুক দিয়ে ভাবে মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই।এক সময় বসতো বইয়ের দোকান এবার মোবাইলের দোকান।কানাইবাবু বলেছেন শিখিয়ে নেবেন।চা শেষ করে প্যসা দেবার জন্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে চমকে উঠল।এইরে চাবিটা ফেরত দেওয়া হয়নি।ম্যডামের কাছে আরেকটা চাবি আছে তা হলেও?