06-11-2024, 01:35 PM
পরদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে কল্যাণী। তল পেটে হালকা ব্যাথা আছে বটে কিন্তু সেটা বেশিনা। সকাল সকাল পুকুর ঘাটে স্নান সেরে কপালে সিঁদুর এবং একটি টিপ দিয়ে নেয় সে। বাবার দেয়া নতুন লাল শাড়িটি পরে সে রান্না ঘরে চলে যায়।
শিবু রান্না ঘরেই ছিল। কল্যাণীকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
- বউমনি?
- আমি আজ রাঁধবো শিবু কাকা।
- কাকা না বলে বউ মনি। আমি সামান্য চাকর।
- তো! এসব আমাকে বলবেন না। আপনি আমার কাকা ভাই। এখন শিগগীর আমাকে সবজি কেটে দিন রান্না চড়িয়ে দেই। বাবা অসীম সবাই উঠে যাবেন।
চারপাশে পাখির কোলাহল। দু একটা গরু থেকে থেকে ডাকছে। সেগুলো খুব সুন্দর একটা আবহ দিচ্ছে কল্যাণী কে। মাথায় ঘোমটা পেঁচিয়ে, সে রান্না করছে, কুমড়ো, ডাল বড়া আর রুটি। সে এই বিষয়ে পাক্কা দক্ষ। ছোট থেকে রাঁধতে রাঁধতেই সে এখন এত দক্ষ।
অসীম ওঠে ৯ টা নাগাদ। উঠে দেখে পুরো টেবিল সাজিয়ে রেখেছে খাবারে কল্যাণী। দেখে সে কল্যাণীকে জড়িয়ে চুমু খায় কপালে আর বলে,
- বহু বছর পর সকালে এমন সুন্দর খাবার। তুমি এক কাজ করো বাবা কে ডেকে আনো খুশি হবে।
- আমি? না না।
- যাও বলছি। যাও যাও।
অনেক টা ধাক্কা দিয়ে পাঠায় কল্যাণীকে সে।
নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ সাথে করে হেটে চলে কল্যাণী। দীপক নারায়ণের রুমের সামনে এসে ধীর লয়ে ডাকে সে,
- বাবা। বাবা। বাবা।
- কে?
- বাবা আমি। খাবার তৈরি আছে নিচে।
কিছুক্ষণ কোন শব্দ আসে না। এরপর খুব গম্ভীর ভাবে উত্তর আসে।
- যাও আসছি।
দরজা না খুলেই উত্তর দেয় দীপক নারায়ণ। কল্যাণী আর কিছু বলে না। খুব গুরু গম্ভীর লোক দীপক। কল্যাণীর এখনি একটু ভয় ভয় লাগছে তাকে।
খাবার টেবিলে বসে কল্যাণী অসীম কে দেখছে। গোগ্রাসে খাচ্ছে সে।
অসীম খেতে খেতেই বলে,
- কল্যাণী, আমি দারুণ বললেও কম হবে। উফফফ।
কল্যাণীর বেশ ভাল লাগে। এটুকু কেই তার জীবন মনে হয়।
এমন সময় খড়মের শব্দ পুরো মহলে ছড়িয়ে পরে। উঠে দাঁড়িয়ে পরে কল্যাণী। অসীম খাবারের গতি কমিয়ে সোজা হয়ে বসে।
সাদা ধুতি এবং ফতুয়া গায়ে বের হয়ে আসে দীপক নারায়ণ। ধীরে ধীরে এসে মধ্য টেবিলে বড় চেয়ার টেনে বসেন এবং বলে ওঠেন,
- শিবু! এই শিবু!
কল্যাণী ধীরে স্বরে বলে,
- বাবা, শিবু কাকা রান্নাঘরে কি লাগবে বলুন।
একটু নরম হয় সে। বলে,
- আমার হুক্কা টা দেয়নি হারাম জাদা।
- বাবা আমি এনে দিচ্ছি।
কল্যাণী ঘুরে রওনা করতেই শিবু দৌড়ে আসে হুক্কা হাতে।
- দাদা ঠাকুর মাফ করি দেন। কয়লা শেষ হয়ে গেছিলো। ওটা গরম করতেই দেরী।
আর কিছু বলে না দীপক নারায়ণ। কল্যাণী তার থালায় সবজি আর রুটি বেঁড়ে দেয়। আস্তে আস্তে খেতে শুরু করে দীপক নারায়ণ। এরপর বলেন,
- তোমার...... রান্না ভালো বউমা।
কল্যাণী একটু যেন দম ফেলে বাচলো। সে অসীম আর দীপক কে খাবার দিয়ে দিতে লাগলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই।
অসীম কে খাবার দিয়ে দীপকের দিকে ঘুরতেই একটু যেন থমকে গেল কল্যাণী। একটা অদ্ভুত জিনিস তার চোখে ধরা পরেছে।
দীপক নারায়ণ মুখে একটু রুটি চিবোতে চিবোতে একটু খুব অদ্ভুত নজরে নিচে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছেন। কল্যাণী একটু লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারলো দীপক নারায়ণ তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজ করবার সময় শাড়ীটা হালকা তুলে নিয়েছিল সে। তার তার দু পায়ের পাতা বের হয়ে আছে। আলতা পরা নূপুর দেয়া সেই পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে দীপক নারায়ণ।
কি দেখছে সে! কল্যাণী ভাবে। তার পায়ের দিকে তার শ্বশুর এভাবে তাকিয়ে আছে কেন! তার পা তো খুব সাধারণ। কোন কি দাগ লেগে আছে! না তো।
আলতা দেয়া তাই কি তাকিয়ে আছেন তিনি? কল্যাণী বুঝতে পারছে না।
দীপক নারায়ণ খুব মনোযোগ দিয়ে কল্যাণীর পায়ের দিকে তাকিয়েই আছেন। পায়ের আঙ্গুল, নখ সব যেন তিনি খুঁটিয়ে দেখছেন।
কল্যাণী একটু অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে আবার তাকায়। না এবার আর তিনি দেখছেন না। চুপ চাপ মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে খাচ্ছেন। কল্যাণী আস্তে করে নিজের ডান পায়ের দিকে তাকায়।
কই কিছুই তো নেই তেমন। খুব স্বাভাবিক আলতা দেয়া পা তার!
সেদিন সারাদিন বেশ আনন্দে কাটে কল্যাণীর। বাগানে ঘুরে, দোলনায় দোল খেয়ে সে আর অসীম গ্রাম ঘুরতে বের হয়। গ্রামের মানুষ জন তাদের দেখে ছুটে আসে। নতুন বউ জমিদার বাড়ির। ভালোই লাগে কল্যাণীর।
সেদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকে কল্যাণী দেখে দীপক বসে আছেন সোফায় হুক্কা হাতে। সামনে নায়েব এবং কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জমি, খাজনা এসব নিয়ে কি যেন আলাপ করছে। অসীম আর কল্যাণীকে দেখেই দীপক বলেন,
- অসীম। তোমার সাথে কথা আছে। আমার রুমে এসো কিছুক্ষণ পর।
অসীম মাথা নেড়ে এগোয়।
৩।
নিজ রুমের পালঙ্কের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে কল্যাণী। হাতে একটি পেয়ারা। অসীম পেরে দিয়েছে। পেয়ারা টি খেতে খেতেই সে চিন্তা করছে, কি বলবে অসীম কে বাবা? কোন ঝামেলা? কল্যাণী তো তার সব টুক দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে?
এই সেই ভেবে ভেবে সে পেয়ারা শেষ করে ফেলে। অসীম আসেনা। রুম ময় পায়চারী করে সে। অস্থির লাগছে। দীপক নারায়ণ কে বেশ ভয় ই পাচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ পর দীপক রুমে প্রবেশ করে।
তার মুখ গম্ভীর। রুমে ঢুকেই খাটে বসে পরে দীপক। কল্যাণী পাশে বসে তার হাত ধরে।
- কি হয়েছে গো?
- বাবা আমাকে শহরে পাঠাচ্ছেন ২ মাসের জন্য।
- ওমা কেন?
- শহরে বাবার কাচারি বাড়ীতে ঝামেলা চলছে। আমাকে সামলাতে হবে। অম্লান আসতে পারবেনা। বাবা এই অঞ্চল সামলাচ্ছে। অন্যত্র যাওয়া টা তার জন্য কঠিন।
- যেতেই হবে?
- হ্যা।
দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে কল্যাণীর গাল বেয়ে। তার মন টা যেন ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছে। দুই মাস অসীম কে ছাড়া। মাত্র দুদিন ই কাঁটালো সে।
অসীম কল্যাণীর চোখের জল হাত দিয়ে মুছে দেয়, এরপর জড়িয়ে ধরে বলে,
- আরে গাধী। পরের সপ্তা তে যাবো। এক সপ্তা আছি তো। এখন চোখের জল তুলে রাখো।
চোখের জল নিয়েই হেসে ওঠে কল্যাণী।
হলুদাভ নরম আলোতে একটি শিল্পীর আঁকা চিত্রের মত লাগে তাদের।
হেথায়ঃ
( এই গল্পে যখনি হেথায় থাকবে তখনি আমরা কল্যাণীর থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবো অন্য চরিত্রে তাদের জানতে। )
রুমের ভিতর বিরাট পালঙ্কের মাঝখানে শুয়ে আছেন দীপক নারায়ণ। দুই পাশের শিবুর জ্বেলে রাখা বড় কাঁচের হারিকেন জ্বলছে। জানালা খোলা, সেখান থেকে হালকা দখিনা বাতাস ঢুকছে। তাতে সাদা পর্দা দুলে উঠছে।
খালি গায়ের জাগায় জাগায় ঘাম আটকে আছে দীপক নারায়ণের। বয়স হলেও এক সময় ব্যায়াম করা কুস্তিগিরের শরীর এখনো বিদ্যমান।
তার ধুতিটি এক পাশে পরে আছে। নগ্ন শুয়ে আছেন তিনি। নিজের পুরুষাঙ্গ বা ধন হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলছেন। চোখ বন্ধ করা তার। ধন টি বলতে গেলে এখনো বেশ শক্ত এবং বড় তার। হালকা একটা চপ চপ শব্দ হচ্ছে প্রতি ওঠা নামাতে।
চোখ বন্ধ করে দীপক নারায়ণ ভাবছেন।
তার মনে ভাসছে কল্যাণীর ছবি। কল্যাণীকে প্রথম দিন দেখেই নিজের ধুতির নিচে একটু শক্ত অনুভব করেছিলেন দীপক। কল্যাণীর সরু চোখ, মোটা পাপড়ি, লম্বা সুশ্রী হাতের নখ তার নিম্নাংশে পুরো ঠাণ্ডা হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল। কল্যাণী বেশ রেখে ঢেকে চলে তাই কিছু দেখতে পান নি। আজ সকালে কল্যাণী টেবিলে দাঁড়িয়ে খাবার দেবার সময় কল্যাণীর পাছাটিকে একটু দেখবার চেষ্টা করেছিলেন। শাড়ির উপর দেখে বোঝা যায়নি। বড় হবার কথা না বেশি। সদ্য ই তো সে সতী হারালো।
সকালে কল্যাণী টেবিলে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তে একটু কপালের ঘাম মুছেছিলো। শাড়ির ফাঁকা দিয়ে সাদা ব্লাউজে ঢাকা তার বগল টিকে দেখেন দীপক নারায়ণ। একটু ঘেমে গোল হয়ে ছিল।
- আহহহ
একটু হালকা আওয়াজ করে ওঠেন তিনি। পাছা টা কেমন হবে? ফর্সা? না বেশি ফর্সা হবেনা। কিন্তু খুব গোল আর শক্ত হবে। আর বুক? কল্যাণীর বক্ষযুগল বা দুধ মাঝারী গড়নের। খুব বেশি বড় না কিন্তু আবার ছোট ও না। শাড়ির উপর দিয়ে কিছুটা আকার হালকা বোঝা গেলেও তা যথেষ্ট নয়। দীপক নারায়ণ অনেক চেষ্টা করেছেন। দুধের আকার হিসেবে বড় আছে মোটামুটি সেটা সে বুঝে গেছেন। কিন্তু দেখতে কেমন হবে? ধরতে? শেষ দুধ ধরেছিলেন শহরের পল্লীতে। কিন্তু সেই শত মানুষের ভোগ করা নারী আর সদ্য ফোটা ফুলের পাপড়ি।
কল্যাণীর পা দুটো কে বেশ ভাল ভাবেই দেখেছেন দীপক নারায়ণ। নরম পা দুটো যখন নড়ছিল দীপক ভাবছিলেন ওই বুড়ো আঙ্গুলটিকে মুখে নিয়ে নাড়লে কেমন লাগবে? কল্যাণীর বুড়ো আঙ্গুলে অল্প হালকা নখ আছে। সেটা জিহ্বাতে কি বাজবে? না বেশি বাজার কথা না। পায়ের তলা টা বেশ লাগার কথা জিহ্বা দিয়ে চাটতে। ছোট আঙ্গুল গুলোকে মুখে নিয়ে আস্তে আস্তে চুষতে হবে তাহলেই স্বাদ টা পাওয়া যাবে। সবার শেষে চাটতে হবে পায়ের গোড়ালি।
এবং তখন যদি তার দুধ গুলো বের হয়ে থাকে উফফফফফফফফফফফফ।
গল গল করে থক থকে এক গাদা বীর্য বের হয়ে ছিটকে পরে বিছানাতে। কেঁপে ওঠেন দীপক নারায়ণ। অনেক দিন পর এত শান্তি। আহ। আহ। এত সূখ কোন নারীকে চিন্তা করে তিনি পাননি।
শেষ করে কিছুক্ষণ শুয়েই থাকেন তিনি। এরপর উঠে নগ্ন অবস্থাতে দরজা খুলে দেন। শিবু বাইরেই বসে ছিল। ঘরে ঢুকে বীর্য মাখা চাদর টা নিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে দিতে থাকে। নগ্ন ভাবেই আরাম কেদারা তে বসে হুক্কা টানতে থাকেন দীপক নারায়ণ। তার মনে একটি লক্ষ্য ভোগ, ভোগ, কল্যাণীকে ভোগ।
৪।
সকালে বিশাল বড় ঘোড়ার গাড়িটা দেখে বেশ আনন্দই লাগে কল্যাণীর। আগে এত বড় গাড়ি কাছ থেকে দেখেনি। গাড়ীর চালক দীপক নারায়ণের বড় বড় ব্যাগ দুটোকে উপরে তুলে রাখে। কল্যাণী সকালে উঠেই রান্না করেছে, সেগুলো সব তুলে দিচ্ছে গাড়িতে। দীপক নারায়ণ শহরে যাবেন এক সপ্তাহ। এরপর তিনি এলে অসীম যাবে দুই মাসের জন্য।
দুই মাস। ভেবেই কান্না পায় বার বার কল্যাণীর।
দীপক নারায়ণ দরজায় দাঁড়িয়ে অসীম কে কিছু হিসাব দেন খাজনার। সেগুলো তুলে রাখতে বলেন। এরপর কল্যাণী আর অসীম প্রনাম করলে তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন।
কল্যাণী মাথা নিচু করে বলে,
- বাবা সাবধানে যাবেন।
- হুম।
বলে গাড়িতে উঠে পরেন দীপক নারায়ণ। টগবগ করে গাড়ি ছুটে রাস্তায় ধুলা উড়িয়ে চলে যায়।
এরপরের সাত দিন ছিল কল্যাণীর জীবনের অসাধারণ সাতদিন। প্রত্যেকটি দিন তার কাছে যেন স্বপ্নের মত। অসীম তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, বাগানে, নদীতে। তারা ঘুরে বেড়ায় মেলাতে। এক গাদা শাড়ি কিনে দেয় অসীম কল্যাণীকে। নতুন গলার হার, আংটি অনেক কিছু। সদ্য ফোটা কাশবনে ছুটে বেড়ায় কল্যাণী।
এক বিকালে নৌকা তে কল্যাণী শুয়ে আছে অসীমের কোলে। অসীম বলে,
- আমি থাকবোনা, আমার হয়ে বাবা কে আর মাকে তুমি সেবা করবে। বাবা যা বলবে শুনবে আর চিঠি লিখবে। আর কোন গুরুত্ব পূর্ণ প্রয়োজনে হেমন্ত মামা আছেন।
-
কোন উত্তর দেয়না কল্যাণী শুধু ডুকরে কেঁদে ওঠে। পড়ন্ত বিকালে দুলতে থাকা নৌকাতে শুয়ে কল্যাণী ভাবে, দুই মাস কিভাবে সে কাটাবে!
দীপক নারায়ণ ফেরত আসেন পাক্কা ৭ দিন পর , সকালে। অসীম আগে থেকেই সব গুছিয়ে রেখেছিল। দীপক নারায়ণ এসে অসীমকে সব বুঝিয়ে দেয় কাচারি বাড়ির হিসেব। অসীম রমনা দেবী, শিবু সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
রুমে মুখ গুঁজে কাঁদছিল কল্যাণী তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় অসীম। এরপর এসে বের হয়ে দাঁড়ায় দরজায়। কিছুক্ষণ ভেজা চোখে দেখে কল্যাণীকে। এরপর গাড়ীতে চড়ে বসে সে।
দূরে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি।
কিছুক্ষণ সেদিকে দেখে কল্যাণী। দীপক নারায়ণ আস্তে করে রুমে চলে যান।
কল্যাণী নিজ রুমে গিয়ে অনেক ক্ষণ ডুকরে কাঁদে। তার খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু তাকে শক্ত হতে হবে এবং তার নিজেকে গোছাতে হবে।
অসীম চলে যাবার পর এত বড় বাড়ী আরও খালি লাগে কল্যাণীর। কেমন যেন সব উবে গেছে। বাগানে আর ঘুরে বেড়াতেও ভাল লাগেনা। সাদা রঙের শাড়িটা পরে আছে কল্যাণী, হালকা লাল রঙের ব্লাউজ। শাড়িটা অসীম কিনে দিয়েছিলো নবগ্রামের মেলা দিয়ে।
কিছুক্ষণ নিজের রুমে বসে চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে উঠে বসে। রান্না করতে হবে, বেলা পরা শুরু করবে কিছুক্ষণ পর। বাবাকে খেতে দিতে হবে।
শাড়ির আচল টা ঠিক মত পেঁচিয়ে নেয়। ছোট বেলা খালা কল্যাণীকে এসব শিখিয়েছে। সব সময় নিজের শরীরের সমস্ত অংশ ঢেকে রাখতে। সেটাই ভদ্রতা। মাথায় ঘোমটা টা তুলে নেয় কল্যাণী। যেহেতু অসীম বাড়ী নেই মার্জিত রূপে থাকতে হবে তাকে। হেমন্ত মামা বলেছিল
- শোন বউমা, মনে রাখবে তুমি হচ্ছ জমিদার বাড়ীর বউ। তাই সেরম ভাবে চলবে। নিজেকে সেভাবে সাজিয়ে রাখবে।
তাই সিঁদুর দিয়ে, কপালে টিপ দিয়ে সে তৈরি হয়েছিল। হাতে শাঁখা চুরি সব ই আছে। পায়ের নূপুর টি খুলে রেখেছে সকালে। খুব একটা ভাল লাগছিল না পড়তে।
রুম থেকে বের হয়ে আগে একটু রমনা দেবীর রুমে উকি মারে কল্যাণী। রমনা দেবী ঘুমাচ্ছেন। এরপর ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। আর শিবু কে ডাক দেয়।
-শিবু কাকা , ও শিবু কাকা।
শিবু বাহির থেকে দৌড়ে আসে।
- বউমা কিছু বলবে?
- কাকা বেলা তো পরে যাবে, রান্না চড়াবো না!
- হ্যা অবশ্যই। আমি বাগানে ঘাস ছাঁটছিলাম। কি দেবো বল।
- ওহ আচ্ছা আপনি তাহলে কাজ শেষ করে আসুন আমি কাটা কাটি শুরু করছি। মাছ কি আছে না শেষ?
- আছে মা।
- আচ্ছা আমি দেখছি তাহলে।
রান্না ঘরে গিয়ে শাড়ীটা ঠিক করে বসে সবজি নিয়ে কাটা শুরু করে কল্যাণী। আজ একটু গরম পরেছে তার উপর চুলার তাপ টা বেশ চরা থাকে। আর সূর্য টা রান্না ঘরের দিকে ওঠে তাই ওই তাপ টাও থাকে।
বাহিরের রুমে ধীরে ধীরে সিঁড়ি ধরে নেমে আসেন দীপক নারায়ণ। তার পায়ে আজ খড়ম নেই। মেঝেতেও খুব সন্তপরনে পা ফেলছে সে।
রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় দীপক নারায়ণ। উল্টো পাশ ফিরে কাজ করছে কল্যাণী। তার মাথার ঘোমটা কখন সরে গেছে খেয়াল ই নেই তার। গোল করে চুল বাধা, তার নিচে ঘাম জমে আছে। ব্লাউজের পিছন টাতে হালকা যেটুক পিঠ দেখা যাচ্ছে সেটুকের দিকে তাকিয়ে আছেন নারায়ণ।
হঠাত কল্যাণীর কি মনে হয় সে জানেনা। আস্তে করে পিছু ফিরে তাকায়, দেখে দীপক নারায়ণ দাঁড়িয়ে। দ্রুত উঠে দাঁড়ায় কল্যাণী, শাড়ী পেঁচিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
- বাবা কিছু লাগবে?
- না। খাবার হলো?
- বাবা এই আর কিছুক্ষণ।
- আচ্ছা জানিও।
ধীরে ধীরে হেটে চলে যায় দীপক নারায়ণ। বেশ অবাক হয় কল্যাণী। বাবা আজ খড়ম ছাড়া ঘুরছেন! আর অন্য সব সময় তো বাবা রুমেই থাকেন। খুব কম বের হন। আজ এরকম ঘুরছেন!।
ভাবতে ভাবতেই কাজ করতে থাকে সে, পিছনে ঘুরে আরেকবার তাকিয়ে নিশ্চিত হয় দীপক নারায়ণ নেই।
খাবার টেবিলে বসে দীপক নারায়ণ যতক্ষণ খান, একবার ও তিনি চোখ তুলে কল্যাণীর দিকে তাকান নি। কল্যাণীর খুবই অস্বস্তি লাগতে থাকে। কি হয়েছে! সে কি কোন ভুল করলো! তার মাথায় ঘোমটা ছিল না সেটা কি বাবা খারাপ চোখে দেখেছে?
বুঝতে পারছে না কল্যাণী। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস ও পাচ্ছেনা। এবং এবার সে খড়ম পরেও এসেছে।
খাবার শেষ করলে শিবু হাত ধুইয়ে দেয় দীপক নারায়ণের। হাত ধুয়ে সে উঠে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতেই শিবুকে বলে,
- শিবু?
- আজ্ঞে দাদা ঠাকুর হুক্কা বারান্দায় আছে।
- আচ্ছা। বউমা,
- জী বাবা।
- সব গুছিয়ে একটু বারান্দায় এসো।
- জী বাবা।
শরীর যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসে কল্যাণীর।
খাবার টেবিল গোছাতে গোছাতে কল্যাণী আপন মনে চিন্তা করছে। শিবু জিনিস পত্র ঝাড়ছে। কল্যাণী কিছু ক্ষণ শিবুকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
- শিবু কাকা।
- জী বউমা?
- উফ আপনি এত অস্থির হয়েন না তো। আমাকে এত সম্মান দেখাতে হবে না।
- হা হা। আচ্ছা বল বউমা।
- কাকা, বাবা আমাকে ডাকল কেন?
- এমনি ডেকেছে হয়ত মা।
- না আমার কেন জানি ভয় করছে। অসীম ও নেই। কি বলে না বলে।
- হা হা হা। না না ভয় নেই।
- সত্যি?
একটু চুপ হয়ে যায় শিবু। এরপর বলে,
- শুধু উনি যা বলে তার খেলাপ করো না। এটুক ই বলবো।
- মানে?
- দেখো মা, এটা জমিদার বাড়ী। বাহিরের সমাজের নিয়ম আর এখানের নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে দাদা ঠাকুর ই সব। উনার কথার অমান্য হয়ে ফলাফল কারো ভাল হয়নি। এছাড়া বাকি সব ঠিক ঠাক।
- বাবার কথা আমি কখনওই অমান্য করবোনা।
- তাইলেই হবে। হয়ত অনেক আদেশ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালন করতে হবে, কিন্তু কিছু করার নেই মা। করতে হবেই।
আর কিছু বলে না কল্যাণী। শুধু আপন মনে ভাবে, সে তো বাবার কথা অমান্য করবে না। এই বাড়ীর সম্মান তার ই হাতে। তার রক্ষা করতেই হবে।
দুপুরের আলো আজ একটু এখন ছেড়েছে। নরম হচ্ছে ধীরে ধীরে। বারান্দায় বসে সামনের খালের দিকে তাকিয়ে আপন মনে হুক্কা খাচ্ছেন দীপক নারায়ণ। কল্যাণী সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আগে শাড়ী ভাল করে ঠিক করে নেয়। এরপর ঘুরে একবার শিবু কে খোঁজে। সে থাকলে একটু সাহস পেতো। কিন্তু কোথাও নেই হতচ্ছাড়া বুড়ো।
সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে আসে কল্যাণী। এরপর আস্তে আস্তে দীপক নারায়ণের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
- বাবা ডেকেছিলেন।
দীপক নারায়ণ কল্যাণীর দিকে না তাকিয়েই বলে,
- ওপাশ থেকে উঁচু পিড়ি টা এনে বসো।
কল্যাণী দেখে বারান্দার এক পাশে একটা কাঠের উঁচু পিঁড়ি। টেনে এনে বসে সে। শাড়ীর আচল টা ঠিক করে নেয় আরেকবার।
দীপক নারায়ণ এবার ঘুরে তাকায়। কয়েক মুহূর্ত সে কল্যাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
কল্যাণী বুঝতে পারেনা সে কি করবে। দীপক এরপর খুব শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।
- এত অস্থির হবার কিছু নেই। তুমি এবাড়ির মানুষ। এত রাখ ঢাক করে চলতে হবে না।
বলে গুড় গুড় করে হুক্কায় একটা টান দেন তিনি। কল্যাণী বুঝতে পারেনা আসলে কি বললো সে?
- না বাবা আমি তো খুবই ভাল আছি।
- সেটা আমি জানি। কিন্তু বাড়ীতে এত মাথায় ঘোমটা, এত ভয়ে থাকতে হবেনা। তোমার শাশুড়ি মাকেও এভাবে থাকতে দেন নি আমার বাবা।
- আচ্ছা বাবা।
- মাথার ঘোমটা টা খুলে বসো। আমার মনে হচ্ছে আমি কোন বাহিরের মানুষের সাথে কথা বলছি, নিজের বাড়ীর না।
কল্যাণীর একটু ইতস্তত লাগে। ঘোমটা খুলে বসবে? এটা বেয়াদবি হবে তো!। কিন্তু বাবার কথা অমান্য কিভাবে করবে সে!
আস্তে করে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে বসে। হাত দিয়ে কপালের কিছু চুল উপড়ে তুলে দেয় সে।
দীপক নারায়ণ ঘুরে তাকায়। কল্যাণী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দীপক নারায়ণ কল্যাণীর বুকের দিয়ে তাকায়, কল্যাণীর শাড়ি বুকের উপর সুন্দর করে ভাঁজ করা। কোন আকার বোঝার উপায় নেই।
দীপক বলে ওঠেন,
- তোমার সম্পর্কে বল, তোমার বেড়ে ওঠা, তোমার মা, ভাই বোন।
- বাবা আমার বেঁড়ে ওঠা গ্রামেই। আর মা মারা গেছের অনেক আগে। ভাইবোন নেই।
এসব খুব সুন্দর করে বলতে থাকে কল্যাণী, কিন্তু বলতে বলতেই সে খেয়াল করে দীপক হুক্কা খাচ্ছে আর তার দুই পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কল্যাণী ভাবে পা ঢেকে ফেলবে কিনা। কিন্তু সেটা কি বেয়াদবি হবে! লজ্জায় কল্যাণী বুড়ো আঙ্গুল টা কুঁচকে ফেলে। সেটা লক্ষ্য করে দীপক নারায়ণ। বুঝতে পারে কল্যাণী দেখেছে যে সে তার পায়ের দিকে ক্ষুধার্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।
- তুমি জমিদার বাড়ীর বউ। সেভাবে চলবে সব সময়। ভয়ের কিছু নেই।
- জী বাবা।
- পরশু তো পুজো।
- জী বাবা। অসীম তো তার আগেই চলে গেল।
- হ্যা জানি। কিছু করার ছিল না আমার। জমিদারি খুবই কঠিন জিনিস। আমাদের পুজো দুটো হয়। একটি বাহিরে গ্রামের সবার সাথে, একটি ঘরে।
- আচ্ছা বাবা।
- বাহিরের পুজো গ্রামের সবাই আয়োজন করে। কিন্তু ঘরের পুজো তোমার ই করতে হবে আয়োজন। যেহেতু তুমি এখন এই বাড়ির বউ। আমি কাল বাহিরে থাকবো। বড় সাহেব এসেছেন বিলেত হয়ে। আর হেমন্ত ও ব্যস্ত, তাই শিবুকে নিয়ে করে ফেলবে।
- জী বাবা।
- জানি খারাপ লাগছে, প্রথম পুজো স্বামী ছাড়া। কিন্তু তোমার মনে রাখতে হবে তুমি জমিদার পরিবারের বউ। তোমার দায়িত্ব অনেক বড়। অনেক।
- জী বাবা।
- আর এই পরবারের কিছু রীতি আছে পুজোতে। সেগুলো পালন করবে।
- অবশ্যই বাবা বলুন।
- সেদিন পুরো বাড়ী গঙ্গাজল দিয়ে ধোবে। এরপর সকালে দক্ষিণ দিকের জানালা দরজা খুলে তিন বার প্রণাম করবে।
- জী বাবা।
- লাল রঙের শাড়ি পরবে, সিঁদুর দেবে ভাল করে। হাতে এবং পায়ে আলতা দেবে। সকল গহনা পরবে। পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুলে আংটি পরবে। আর সারাদিন খালি পায়ে থাকবে না। দিনে স্নান করবে এবং তখন হাত এবং পা ভালো করে ধোবে। এরপর খড়ম পায় দিয়ে থাকবে।
- জী বাবা।
- ঠিক আছে যাও।
কল্যাণী উঠে যায়। অনেক কিছু বললো বাবা। সেগুলো তার অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আসলেই তো সে জমিদার বাড়ির বউ। তার দায়িত্ব আছে একটি। এই পুজো সে এই পরিবারের সব চেয়ে সুন্দর পুঁজো করবে।
চলবে......
শিবু রান্না ঘরেই ছিল। কল্যাণীকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
- বউমনি?
- আমি আজ রাঁধবো শিবু কাকা।
- কাকা না বলে বউ মনি। আমি সামান্য চাকর।
- তো! এসব আমাকে বলবেন না। আপনি আমার কাকা ভাই। এখন শিগগীর আমাকে সবজি কেটে দিন রান্না চড়িয়ে দেই। বাবা অসীম সবাই উঠে যাবেন।
চারপাশে পাখির কোলাহল। দু একটা গরু থেকে থেকে ডাকছে। সেগুলো খুব সুন্দর একটা আবহ দিচ্ছে কল্যাণী কে। মাথায় ঘোমটা পেঁচিয়ে, সে রান্না করছে, কুমড়ো, ডাল বড়া আর রুটি। সে এই বিষয়ে পাক্কা দক্ষ। ছোট থেকে রাঁধতে রাঁধতেই সে এখন এত দক্ষ।
অসীম ওঠে ৯ টা নাগাদ। উঠে দেখে পুরো টেবিল সাজিয়ে রেখেছে খাবারে কল্যাণী। দেখে সে কল্যাণীকে জড়িয়ে চুমু খায় কপালে আর বলে,
- বহু বছর পর সকালে এমন সুন্দর খাবার। তুমি এক কাজ করো বাবা কে ডেকে আনো খুশি হবে।
- আমি? না না।
- যাও বলছি। যাও যাও।
অনেক টা ধাক্কা দিয়ে পাঠায় কল্যাণীকে সে।
নূপুরের ঝুম ঝুম শব্দ সাথে করে হেটে চলে কল্যাণী। দীপক নারায়ণের রুমের সামনে এসে ধীর লয়ে ডাকে সে,
- বাবা। বাবা। বাবা।
- কে?
- বাবা আমি। খাবার তৈরি আছে নিচে।
কিছুক্ষণ কোন শব্দ আসে না। এরপর খুব গম্ভীর ভাবে উত্তর আসে।
- যাও আসছি।
দরজা না খুলেই উত্তর দেয় দীপক নারায়ণ। কল্যাণী আর কিছু বলে না। খুব গুরু গম্ভীর লোক দীপক। কল্যাণীর এখনি একটু ভয় ভয় লাগছে তাকে।
খাবার টেবিলে বসে কল্যাণী অসীম কে দেখছে। গোগ্রাসে খাচ্ছে সে।
অসীম খেতে খেতেই বলে,
- কল্যাণী, আমি দারুণ বললেও কম হবে। উফফফ।
কল্যাণীর বেশ ভাল লাগে। এটুকু কেই তার জীবন মনে হয়।
এমন সময় খড়মের শব্দ পুরো মহলে ছড়িয়ে পরে। উঠে দাঁড়িয়ে পরে কল্যাণী। অসীম খাবারের গতি কমিয়ে সোজা হয়ে বসে।
সাদা ধুতি এবং ফতুয়া গায়ে বের হয়ে আসে দীপক নারায়ণ। ধীরে ধীরে এসে মধ্য টেবিলে বড় চেয়ার টেনে বসেন এবং বলে ওঠেন,
- শিবু! এই শিবু!
কল্যাণী ধীরে স্বরে বলে,
- বাবা, শিবু কাকা রান্নাঘরে কি লাগবে বলুন।
একটু নরম হয় সে। বলে,
- আমার হুক্কা টা দেয়নি হারাম জাদা।
- বাবা আমি এনে দিচ্ছি।
কল্যাণী ঘুরে রওনা করতেই শিবু দৌড়ে আসে হুক্কা হাতে।
- দাদা ঠাকুর মাফ করি দেন। কয়লা শেষ হয়ে গেছিলো। ওটা গরম করতেই দেরী।
আর কিছু বলে না দীপক নারায়ণ। কল্যাণী তার থালায় সবজি আর রুটি বেঁড়ে দেয়। আস্তে আস্তে খেতে শুরু করে দীপক নারায়ণ। এরপর বলেন,
- তোমার...... রান্না ভালো বউমা।
কল্যাণী একটু যেন দম ফেলে বাচলো। সে অসীম আর দীপক কে খাবার দিয়ে দিতে লাগলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই।
অসীম কে খাবার দিয়ে দীপকের দিকে ঘুরতেই একটু যেন থমকে গেল কল্যাণী। একটা অদ্ভুত জিনিস তার চোখে ধরা পরেছে।
দীপক নারায়ণ মুখে একটু রুটি চিবোতে চিবোতে একটু খুব অদ্ভুত নজরে নিচে তাকিয়ে কিছু একটা দেখছেন। কল্যাণী একটু লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারলো দীপক নারায়ণ তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজ করবার সময় শাড়ীটা হালকা তুলে নিয়েছিল সে। তার তার দু পায়ের পাতা বের হয়ে আছে। আলতা পরা নূপুর দেয়া সেই পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে দীপক নারায়ণ।
কি দেখছে সে! কল্যাণী ভাবে। তার পায়ের দিকে তার শ্বশুর এভাবে তাকিয়ে আছে কেন! তার পা তো খুব সাধারণ। কোন কি দাগ লেগে আছে! না তো।
আলতা দেয়া তাই কি তাকিয়ে আছেন তিনি? কল্যাণী বুঝতে পারছে না।
দীপক নারায়ণ খুব মনোযোগ দিয়ে কল্যাণীর পায়ের দিকে তাকিয়েই আছেন। পায়ের আঙ্গুল, নখ সব যেন তিনি খুঁটিয়ে দেখছেন।
কল্যাণী একটু অন্যদিকে মনোযোগ দিয়ে আবার তাকায়। না এবার আর তিনি দেখছেন না। চুপ চাপ মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে খাচ্ছেন। কল্যাণী আস্তে করে নিজের ডান পায়ের দিকে তাকায়।
কই কিছুই তো নেই তেমন। খুব স্বাভাবিক আলতা দেয়া পা তার!
সেদিন সারাদিন বেশ আনন্দে কাটে কল্যাণীর। বাগানে ঘুরে, দোলনায় দোল খেয়ে সে আর অসীম গ্রাম ঘুরতে বের হয়। গ্রামের মানুষ জন তাদের দেখে ছুটে আসে। নতুন বউ জমিদার বাড়ির। ভালোই লাগে কল্যাণীর।
সেদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকে কল্যাণী দেখে দীপক বসে আছেন সোফায় হুক্কা হাতে। সামনে নায়েব এবং কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জমি, খাজনা এসব নিয়ে কি যেন আলাপ করছে। অসীম আর কল্যাণীকে দেখেই দীপক বলেন,
- অসীম। তোমার সাথে কথা আছে। আমার রুমে এসো কিছুক্ষণ পর।
অসীম মাথা নেড়ে এগোয়।
৩।
নিজ রুমের পালঙ্কের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে কল্যাণী। হাতে একটি পেয়ারা। অসীম পেরে দিয়েছে। পেয়ারা টি খেতে খেতেই সে চিন্তা করছে, কি বলবে অসীম কে বাবা? কোন ঝামেলা? কল্যাণী তো তার সব টুক দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে?
এই সেই ভেবে ভেবে সে পেয়ারা শেষ করে ফেলে। অসীম আসেনা। রুম ময় পায়চারী করে সে। অস্থির লাগছে। দীপক নারায়ণ কে বেশ ভয় ই পাচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ পর দীপক রুমে প্রবেশ করে।
তার মুখ গম্ভীর। রুমে ঢুকেই খাটে বসে পরে দীপক। কল্যাণী পাশে বসে তার হাত ধরে।
- কি হয়েছে গো?
- বাবা আমাকে শহরে পাঠাচ্ছেন ২ মাসের জন্য।
- ওমা কেন?
- শহরে বাবার কাচারি বাড়ীতে ঝামেলা চলছে। আমাকে সামলাতে হবে। অম্লান আসতে পারবেনা। বাবা এই অঞ্চল সামলাচ্ছে। অন্যত্র যাওয়া টা তার জন্য কঠিন।
- যেতেই হবে?
- হ্যা।
দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে কল্যাণীর গাল বেয়ে। তার মন টা যেন ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছে। দুই মাস অসীম কে ছাড়া। মাত্র দুদিন ই কাঁটালো সে।
অসীম কল্যাণীর চোখের জল হাত দিয়ে মুছে দেয়, এরপর জড়িয়ে ধরে বলে,
- আরে গাধী। পরের সপ্তা তে যাবো। এক সপ্তা আছি তো। এখন চোখের জল তুলে রাখো।
চোখের জল নিয়েই হেসে ওঠে কল্যাণী।
হলুদাভ নরম আলোতে একটি শিল্পীর আঁকা চিত্রের মত লাগে তাদের।
হেথায়ঃ
( এই গল্পে যখনি হেথায় থাকবে তখনি আমরা কল্যাণীর থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবো অন্য চরিত্রে তাদের জানতে। )
রুমের ভিতর বিরাট পালঙ্কের মাঝখানে শুয়ে আছেন দীপক নারায়ণ। দুই পাশের শিবুর জ্বেলে রাখা বড় কাঁচের হারিকেন জ্বলছে। জানালা খোলা, সেখান থেকে হালকা দখিনা বাতাস ঢুকছে। তাতে সাদা পর্দা দুলে উঠছে।
খালি গায়ের জাগায় জাগায় ঘাম আটকে আছে দীপক নারায়ণের। বয়স হলেও এক সময় ব্যায়াম করা কুস্তিগিরের শরীর এখনো বিদ্যমান।
তার ধুতিটি এক পাশে পরে আছে। নগ্ন শুয়ে আছেন তিনি। নিজের পুরুষাঙ্গ বা ধন হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ডলছেন। চোখ বন্ধ করা তার। ধন টি বলতে গেলে এখনো বেশ শক্ত এবং বড় তার। হালকা একটা চপ চপ শব্দ হচ্ছে প্রতি ওঠা নামাতে।
চোখ বন্ধ করে দীপক নারায়ণ ভাবছেন।
তার মনে ভাসছে কল্যাণীর ছবি। কল্যাণীকে প্রথম দিন দেখেই নিজের ধুতির নিচে একটু শক্ত অনুভব করেছিলেন দীপক। কল্যাণীর সরু চোখ, মোটা পাপড়ি, লম্বা সুশ্রী হাতের নখ তার নিম্নাংশে পুরো ঠাণ্ডা হাওয়া বইয়ে দিয়েছিল। কল্যাণী বেশ রেখে ঢেকে চলে তাই কিছু দেখতে পান নি। আজ সকালে কল্যাণী টেবিলে দাঁড়িয়ে খাবার দেবার সময় কল্যাণীর পাছাটিকে একটু দেখবার চেষ্টা করেছিলেন। শাড়ির উপর দেখে বোঝা যায়নি। বড় হবার কথা না বেশি। সদ্য ই তো সে সতী হারালো।
সকালে কল্যাণী টেবিলে কাজ করতে করতে নিজের অজান্তে একটু কপালের ঘাম মুছেছিলো। শাড়ির ফাঁকা দিয়ে সাদা ব্লাউজে ঢাকা তার বগল টিকে দেখেন দীপক নারায়ণ। একটু ঘেমে গোল হয়ে ছিল।
- আহহহ
একটু হালকা আওয়াজ করে ওঠেন তিনি। পাছা টা কেমন হবে? ফর্সা? না বেশি ফর্সা হবেনা। কিন্তু খুব গোল আর শক্ত হবে। আর বুক? কল্যাণীর বক্ষযুগল বা দুধ মাঝারী গড়নের। খুব বেশি বড় না কিন্তু আবার ছোট ও না। শাড়ির উপর দিয়ে কিছুটা আকার হালকা বোঝা গেলেও তা যথেষ্ট নয়। দীপক নারায়ণ অনেক চেষ্টা করেছেন। দুধের আকার হিসেবে বড় আছে মোটামুটি সেটা সে বুঝে গেছেন। কিন্তু দেখতে কেমন হবে? ধরতে? শেষ দুধ ধরেছিলেন শহরের পল্লীতে। কিন্তু সেই শত মানুষের ভোগ করা নারী আর সদ্য ফোটা ফুলের পাপড়ি।
কল্যাণীর পা দুটো কে বেশ ভাল ভাবেই দেখেছেন দীপক নারায়ণ। নরম পা দুটো যখন নড়ছিল দীপক ভাবছিলেন ওই বুড়ো আঙ্গুলটিকে মুখে নিয়ে নাড়লে কেমন লাগবে? কল্যাণীর বুড়ো আঙ্গুলে অল্প হালকা নখ আছে। সেটা জিহ্বাতে কি বাজবে? না বেশি বাজার কথা না। পায়ের তলা টা বেশ লাগার কথা জিহ্বা দিয়ে চাটতে। ছোট আঙ্গুল গুলোকে মুখে নিয়ে আস্তে আস্তে চুষতে হবে তাহলেই স্বাদ টা পাওয়া যাবে। সবার শেষে চাটতে হবে পায়ের গোড়ালি।
এবং তখন যদি তার দুধ গুলো বের হয়ে থাকে উফফফফফফফফফফফফ।
গল গল করে থক থকে এক গাদা বীর্য বের হয়ে ছিটকে পরে বিছানাতে। কেঁপে ওঠেন দীপক নারায়ণ। অনেক দিন পর এত শান্তি। আহ। আহ। এত সূখ কোন নারীকে চিন্তা করে তিনি পাননি।
শেষ করে কিছুক্ষণ শুয়েই থাকেন তিনি। এরপর উঠে নগ্ন অবস্থাতে দরজা খুলে দেন। শিবু বাইরেই বসে ছিল। ঘরে ঢুকে বীর্য মাখা চাদর টা নিয়ে নতুন চাদর বিছিয়ে দিতে থাকে। নগ্ন ভাবেই আরাম কেদারা তে বসে হুক্কা টানতে থাকেন দীপক নারায়ণ। তার মনে একটি লক্ষ্য ভোগ, ভোগ, কল্যাণীকে ভোগ।
৪।
সকালে বিশাল বড় ঘোড়ার গাড়িটা দেখে বেশ আনন্দই লাগে কল্যাণীর। আগে এত বড় গাড়ি কাছ থেকে দেখেনি। গাড়ীর চালক দীপক নারায়ণের বড় বড় ব্যাগ দুটোকে উপরে তুলে রাখে। কল্যাণী সকালে উঠেই রান্না করেছে, সেগুলো সব তুলে দিচ্ছে গাড়িতে। দীপক নারায়ণ শহরে যাবেন এক সপ্তাহ। এরপর তিনি এলে অসীম যাবে দুই মাসের জন্য।
দুই মাস। ভেবেই কান্না পায় বার বার কল্যাণীর।
দীপক নারায়ণ দরজায় দাঁড়িয়ে অসীম কে কিছু হিসাব দেন খাজনার। সেগুলো তুলে রাখতে বলেন। এরপর কল্যাণী আর অসীম প্রনাম করলে তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন।
কল্যাণী মাথা নিচু করে বলে,
- বাবা সাবধানে যাবেন।
- হুম।
বলে গাড়িতে উঠে পরেন দীপক নারায়ণ। টগবগ করে গাড়ি ছুটে রাস্তায় ধুলা উড়িয়ে চলে যায়।
এরপরের সাত দিন ছিল কল্যাণীর জীবনের অসাধারণ সাতদিন। প্রত্যেকটি দিন তার কাছে যেন স্বপ্নের মত। অসীম তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, বাগানে, নদীতে। তারা ঘুরে বেড়ায় মেলাতে। এক গাদা শাড়ি কিনে দেয় অসীম কল্যাণীকে। নতুন গলার হার, আংটি অনেক কিছু। সদ্য ফোটা কাশবনে ছুটে বেড়ায় কল্যাণী।
এক বিকালে নৌকা তে কল্যাণী শুয়ে আছে অসীমের কোলে। অসীম বলে,
- আমি থাকবোনা, আমার হয়ে বাবা কে আর মাকে তুমি সেবা করবে। বাবা যা বলবে শুনবে আর চিঠি লিখবে। আর কোন গুরুত্ব পূর্ণ প্রয়োজনে হেমন্ত মামা আছেন।
-
কোন উত্তর দেয়না কল্যাণী শুধু ডুকরে কেঁদে ওঠে। পড়ন্ত বিকালে দুলতে থাকা নৌকাতে শুয়ে কল্যাণী ভাবে, দুই মাস কিভাবে সে কাটাবে!
দীপক নারায়ণ ফেরত আসেন পাক্কা ৭ দিন পর , সকালে। অসীম আগে থেকেই সব গুছিয়ে রেখেছিল। দীপক নারায়ণ এসে অসীমকে সব বুঝিয়ে দেয় কাচারি বাড়ির হিসেব। অসীম রমনা দেবী, শিবু সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
রুমে মুখ গুঁজে কাঁদছিল কল্যাণী তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় অসীম। এরপর এসে বের হয়ে দাঁড়ায় দরজায়। কিছুক্ষণ ভেজা চোখে দেখে কল্যাণীকে। এরপর গাড়ীতে চড়ে বসে সে।
দূরে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় ঘোড়ার গাড়ি।
কিছুক্ষণ সেদিকে দেখে কল্যাণী। দীপক নারায়ণ আস্তে করে রুমে চলে যান।
কল্যাণী নিজ রুমে গিয়ে অনেক ক্ষণ ডুকরে কাঁদে। তার খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু তাকে শক্ত হতে হবে এবং তার নিজেকে গোছাতে হবে।
অসীম চলে যাবার পর এত বড় বাড়ী আরও খালি লাগে কল্যাণীর। কেমন যেন সব উবে গেছে। বাগানে আর ঘুরে বেড়াতেও ভাল লাগেনা। সাদা রঙের শাড়িটা পরে আছে কল্যাণী, হালকা লাল রঙের ব্লাউজ। শাড়িটা অসীম কিনে দিয়েছিলো নবগ্রামের মেলা দিয়ে।
কিছুক্ষণ নিজের রুমে বসে চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে উঠে বসে। রান্না করতে হবে, বেলা পরা শুরু করবে কিছুক্ষণ পর। বাবাকে খেতে দিতে হবে।
শাড়ির আচল টা ঠিক মত পেঁচিয়ে নেয়। ছোট বেলা খালা কল্যাণীকে এসব শিখিয়েছে। সব সময় নিজের শরীরের সমস্ত অংশ ঢেকে রাখতে। সেটাই ভদ্রতা। মাথায় ঘোমটা টা তুলে নেয় কল্যাণী। যেহেতু অসীম বাড়ী নেই মার্জিত রূপে থাকতে হবে তাকে। হেমন্ত মামা বলেছিল
- শোন বউমা, মনে রাখবে তুমি হচ্ছ জমিদার বাড়ীর বউ। তাই সেরম ভাবে চলবে। নিজেকে সেভাবে সাজিয়ে রাখবে।
তাই সিঁদুর দিয়ে, কপালে টিপ দিয়ে সে তৈরি হয়েছিল। হাতে শাঁখা চুরি সব ই আছে। পায়ের নূপুর টি খুলে রেখেছে সকালে। খুব একটা ভাল লাগছিল না পড়তে।
রুম থেকে বের হয়ে আগে একটু রমনা দেবীর রুমে উকি মারে কল্যাণী। রমনা দেবী ঘুমাচ্ছেন। এরপর ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। আর শিবু কে ডাক দেয়।
-শিবু কাকা , ও শিবু কাকা।
শিবু বাহির থেকে দৌড়ে আসে।
- বউমা কিছু বলবে?
- কাকা বেলা তো পরে যাবে, রান্না চড়াবো না!
- হ্যা অবশ্যই। আমি বাগানে ঘাস ছাঁটছিলাম। কি দেবো বল।
- ওহ আচ্ছা আপনি তাহলে কাজ শেষ করে আসুন আমি কাটা কাটি শুরু করছি। মাছ কি আছে না শেষ?
- আছে মা।
- আচ্ছা আমি দেখছি তাহলে।
রান্না ঘরে গিয়ে শাড়ীটা ঠিক করে বসে সবজি নিয়ে কাটা শুরু করে কল্যাণী। আজ একটু গরম পরেছে তার উপর চুলার তাপ টা বেশ চরা থাকে। আর সূর্য টা রান্না ঘরের দিকে ওঠে তাই ওই তাপ টাও থাকে।
বাহিরের রুমে ধীরে ধীরে সিঁড়ি ধরে নেমে আসেন দীপক নারায়ণ। তার পায়ে আজ খড়ম নেই। মেঝেতেও খুব সন্তপরনে পা ফেলছে সে।
রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় দীপক নারায়ণ। উল্টো পাশ ফিরে কাজ করছে কল্যাণী। তার মাথার ঘোমটা কখন সরে গেছে খেয়াল ই নেই তার। গোল করে চুল বাধা, তার নিচে ঘাম জমে আছে। ব্লাউজের পিছন টাতে হালকা যেটুক পিঠ দেখা যাচ্ছে সেটুকের দিকে তাকিয়ে আছেন নারায়ণ।
হঠাত কল্যাণীর কি মনে হয় সে জানেনা। আস্তে করে পিছু ফিরে তাকায়, দেখে দীপক নারায়ণ দাঁড়িয়ে। দ্রুত উঠে দাঁড়ায় কল্যাণী, শাড়ী পেঁচিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
- বাবা কিছু লাগবে?
- না। খাবার হলো?
- বাবা এই আর কিছুক্ষণ।
- আচ্ছা জানিও।
ধীরে ধীরে হেটে চলে যায় দীপক নারায়ণ। বেশ অবাক হয় কল্যাণী। বাবা আজ খড়ম ছাড়া ঘুরছেন! আর অন্য সব সময় তো বাবা রুমেই থাকেন। খুব কম বের হন। আজ এরকম ঘুরছেন!।
ভাবতে ভাবতেই কাজ করতে থাকে সে, পিছনে ঘুরে আরেকবার তাকিয়ে নিশ্চিত হয় দীপক নারায়ণ নেই।
খাবার টেবিলে বসে দীপক নারায়ণ যতক্ষণ খান, একবার ও তিনি চোখ তুলে কল্যাণীর দিকে তাকান নি। কল্যাণীর খুবই অস্বস্তি লাগতে থাকে। কি হয়েছে! সে কি কোন ভুল করলো! তার মাথায় ঘোমটা ছিল না সেটা কি বাবা খারাপ চোখে দেখেছে?
বুঝতে পারছে না কল্যাণী। কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস ও পাচ্ছেনা। এবং এবার সে খড়ম পরেও এসেছে।
খাবার শেষ করলে শিবু হাত ধুইয়ে দেয় দীপক নারায়ণের। হাত ধুয়ে সে উঠে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতেই শিবুকে বলে,
- শিবু?
- আজ্ঞে দাদা ঠাকুর হুক্কা বারান্দায় আছে।
- আচ্ছা। বউমা,
- জী বাবা।
- সব গুছিয়ে একটু বারান্দায় এসো।
- জী বাবা।
শরীর যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসে কল্যাণীর।
খাবার টেবিল গোছাতে গোছাতে কল্যাণী আপন মনে চিন্তা করছে। শিবু জিনিস পত্র ঝাড়ছে। কল্যাণী কিছু ক্ষণ শিবুকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
- শিবু কাকা।
- জী বউমা?
- উফ আপনি এত অস্থির হয়েন না তো। আমাকে এত সম্মান দেখাতে হবে না।
- হা হা। আচ্ছা বল বউমা।
- কাকা, বাবা আমাকে ডাকল কেন?
- এমনি ডেকেছে হয়ত মা।
- না আমার কেন জানি ভয় করছে। অসীম ও নেই। কি বলে না বলে।
- হা হা হা। না না ভয় নেই।
- সত্যি?
একটু চুপ হয়ে যায় শিবু। এরপর বলে,
- শুধু উনি যা বলে তার খেলাপ করো না। এটুক ই বলবো।
- মানে?
- দেখো মা, এটা জমিদার বাড়ী। বাহিরের সমাজের নিয়ম আর এখানের নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে দাদা ঠাকুর ই সব। উনার কথার অমান্য হয়ে ফলাফল কারো ভাল হয়নি। এছাড়া বাকি সব ঠিক ঠাক।
- বাবার কথা আমি কখনওই অমান্য করবোনা।
- তাইলেই হবে। হয়ত অনেক আদেশ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালন করতে হবে, কিন্তু কিছু করার নেই মা। করতে হবেই।
আর কিছু বলে না কল্যাণী। শুধু আপন মনে ভাবে, সে তো বাবার কথা অমান্য করবে না। এই বাড়ীর সম্মান তার ই হাতে। তার রক্ষা করতেই হবে।
দুপুরের আলো আজ একটু এখন ছেড়েছে। নরম হচ্ছে ধীরে ধীরে। বারান্দায় বসে সামনের খালের দিকে তাকিয়ে আপন মনে হুক্কা খাচ্ছেন দীপক নারায়ণ। কল্যাণী সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আগে শাড়ী ভাল করে ঠিক করে নেয়। এরপর ঘুরে একবার শিবু কে খোঁজে। সে থাকলে একটু সাহস পেতো। কিন্তু কোথাও নেই হতচ্ছাড়া বুড়ো।
সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে আসে কল্যাণী। এরপর আস্তে আস্তে দীপক নারায়ণের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
- বাবা ডেকেছিলেন।
দীপক নারায়ণ কল্যাণীর দিকে না তাকিয়েই বলে,
- ওপাশ থেকে উঁচু পিড়ি টা এনে বসো।
কল্যাণী দেখে বারান্দার এক পাশে একটা কাঠের উঁচু পিঁড়ি। টেনে এনে বসে সে। শাড়ীর আচল টা ঠিক করে নেয় আরেকবার।
দীপক নারায়ণ এবার ঘুরে তাকায়। কয়েক মুহূর্ত সে কল্যাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
কল্যাণী বুঝতে পারেনা সে কি করবে। দীপক এরপর খুব শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।
- এত অস্থির হবার কিছু নেই। তুমি এবাড়ির মানুষ। এত রাখ ঢাক করে চলতে হবে না।
বলে গুড় গুড় করে হুক্কায় একটা টান দেন তিনি। কল্যাণী বুঝতে পারেনা আসলে কি বললো সে?
- না বাবা আমি তো খুবই ভাল আছি।
- সেটা আমি জানি। কিন্তু বাড়ীতে এত মাথায় ঘোমটা, এত ভয়ে থাকতে হবেনা। তোমার শাশুড়ি মাকেও এভাবে থাকতে দেন নি আমার বাবা।
- আচ্ছা বাবা।
- মাথার ঘোমটা টা খুলে বসো। আমার মনে হচ্ছে আমি কোন বাহিরের মানুষের সাথে কথা বলছি, নিজের বাড়ীর না।
কল্যাণীর একটু ইতস্তত লাগে। ঘোমটা খুলে বসবে? এটা বেয়াদবি হবে তো!। কিন্তু বাবার কথা অমান্য কিভাবে করবে সে!
আস্তে করে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে বসে। হাত দিয়ে কপালের কিছু চুল উপড়ে তুলে দেয় সে।
দীপক নারায়ণ ঘুরে তাকায়। কল্যাণী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। দীপক নারায়ণ কল্যাণীর বুকের দিয়ে তাকায়, কল্যাণীর শাড়ি বুকের উপর সুন্দর করে ভাঁজ করা। কোন আকার বোঝার উপায় নেই।
দীপক বলে ওঠেন,
- তোমার সম্পর্কে বল, তোমার বেড়ে ওঠা, তোমার মা, ভাই বোন।
- বাবা আমার বেঁড়ে ওঠা গ্রামেই। আর মা মারা গেছের অনেক আগে। ভাইবোন নেই।
এসব খুব সুন্দর করে বলতে থাকে কল্যাণী, কিন্তু বলতে বলতেই সে খেয়াল করে দীপক হুক্কা খাচ্ছে আর তার দুই পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কল্যাণী ভাবে পা ঢেকে ফেলবে কিনা। কিন্তু সেটা কি বেয়াদবি হবে! লজ্জায় কল্যাণী বুড়ো আঙ্গুল টা কুঁচকে ফেলে। সেটা লক্ষ্য করে দীপক নারায়ণ। বুঝতে পারে কল্যাণী দেখেছে যে সে তার পায়ের দিকে ক্ষুধার্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।
- তুমি জমিদার বাড়ীর বউ। সেভাবে চলবে সব সময়। ভয়ের কিছু নেই।
- জী বাবা।
- পরশু তো পুজো।
- জী বাবা। অসীম তো তার আগেই চলে গেল।
- হ্যা জানি। কিছু করার ছিল না আমার। জমিদারি খুবই কঠিন জিনিস। আমাদের পুজো দুটো হয়। একটি বাহিরে গ্রামের সবার সাথে, একটি ঘরে।
- আচ্ছা বাবা।
- বাহিরের পুজো গ্রামের সবাই আয়োজন করে। কিন্তু ঘরের পুজো তোমার ই করতে হবে আয়োজন। যেহেতু তুমি এখন এই বাড়ির বউ। আমি কাল বাহিরে থাকবো। বড় সাহেব এসেছেন বিলেত হয়ে। আর হেমন্ত ও ব্যস্ত, তাই শিবুকে নিয়ে করে ফেলবে।
- জী বাবা।
- জানি খারাপ লাগছে, প্রথম পুজো স্বামী ছাড়া। কিন্তু তোমার মনে রাখতে হবে তুমি জমিদার পরিবারের বউ। তোমার দায়িত্ব অনেক বড়। অনেক।
- জী বাবা।
- আর এই পরবারের কিছু রীতি আছে পুজোতে। সেগুলো পালন করবে।
- অবশ্যই বাবা বলুন।
- সেদিন পুরো বাড়ী গঙ্গাজল দিয়ে ধোবে। এরপর সকালে দক্ষিণ দিকের জানালা দরজা খুলে তিন বার প্রণাম করবে।
- জী বাবা।
- লাল রঙের শাড়ি পরবে, সিঁদুর দেবে ভাল করে। হাতে এবং পায়ে আলতা দেবে। সকল গহনা পরবে। পায়ের দ্বিতীয় আঙ্গুলে আংটি পরবে। আর সারাদিন খালি পায়ে থাকবে না। দিনে স্নান করবে এবং তখন হাত এবং পা ভালো করে ধোবে। এরপর খড়ম পায় দিয়ে থাকবে।
- জী বাবা।
- ঠিক আছে যাও।
কল্যাণী উঠে যায়। অনেক কিছু বললো বাবা। সেগুলো তার অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। আসলেই তো সে জমিদার বাড়ির বউ। তার দায়িত্ব আছে একটি। এই পুজো সে এই পরিবারের সব চেয়ে সুন্দর পুঁজো করবে।
চলবে......