05-11-2024, 10:52 PM
শিউলি হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে। মনে হচ্ছে এখনই বেহুশ হয়ে যাবেন তিনি। তার স্বামী সন্তান জেনে গিয়েছে, তিনি একজন ব্যাভিচারিনী। কি হবে এখন তার, ২৫ বছর আগলে রাখা সংসার টা ভেঙে যাবে। সুমন, শাওন তাকে ঘৃনা করবে। স্বামী কি তাকে তালাক দিয়ে দিবে। এসব ভাবনা যখন ঘুরপাক খাচ্ছে তখনই কারো হাতের স্পর্শ পেলেন তিনি।
আম্মু, আম্মু, ক্ষুধা লাগছে ভাত দাও…. আবদার করলো শাওন।
চোখের পানি মুছে শিউলি বললো, আব্বু একটু অপেক্ষা করো আমি এখনই ভাত দিচ্ছি…..
শিউলি নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সোফায় পাথর হয়ে বসে আছেন মজুমদার সাহেব। শিউলি কে দেখেই সুমন নিজের রুমে ঢুকে জোরে দরজা লাগিয়ে দিল। দরজার আওয়াজ টা যেন শিউলির বুকে হেমারের আঘাত দিয়ে গেল। স্বামীর দিকে আরেকবার তাকিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন তিনি। শাড়ির ভিতর থেকে প্যান্টি খুলে নিলেন তিনি। নীল প্যান্টিটা তে ঘন থকথকে বীর্য লেগে আছে। শিউলির মনে পরলো সুমন দরজা ধাক্কা দেয়ার পরও আরো ৩০ সেকেন্ড তাকে ঠাপিয়েছে খলিল। তারপর আরো ১০ সেকেন্ড ধরে বীর্য ঢেলেছে তার গুদে। প্যান্টিতে লেগে থাকা বীর্যে হাত বুলিয়ে শিউলি ভাবলেন, এই বীর্য কি আর কোনদিন পাবেন তিনি? হুট করে আবার বুকটা কেঁপে উঠলো শিউলির। এখনো এসব কি ভাবছেন তিনি! ছিঃ। বুক ভেঙে কান্না আসছে। তিনি তো সব বাদই দিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু এক রাত আবার করতে গিয়েই কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য।
খলিল চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। তবে তার গম্ভীর মুখটা ভিতরের বিষন্নতা ফুটিয়ে তুলতে পারছে না। শিউলির জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। কি ব্যবহার করবে এখন তার সাথে মজুমদার ভাই? মজুমদার ভাই কি শিউলি কে মারধর করবে? যদি মারে তাহলে তিনি কি সেটা আটকাতে পারবেন? নাকি শিউলি কে তালাক দিয়ে দিবেন মজুমদার ভাই? তালাক দিলে কোনো সমস্যা নাই। আমি শিউলি কে রানি করে রাখবো। কিন্তু শিউলি, শিউলি কি পারবে তার এত দিনের সংসার আর সন্তানদের ত্যাগ করতে? না আর ভাবতে পারছেন না খলিল চৌধুরী। নিজেকে নরকের কিট মনে হচ্ছে তার। কি করছে এখন শিউলি, তার তো সমস্যা নেই, বিপদ তো শিউলির।
গোসল থেকে বের হয়ে শিউলি সুমন বা মজুমদার সাহেব কাউকে পেলেন না। শাওন কে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বু আর ভাইয়া কোথায়? শাওন শুধু বললো বের হয়ে গিয়েছে। শিউলি রান্না করতে গেলেন। কান্না আটকে রাখতে পারছেন না তিনি। ঢুকরে ঢুকরে কেঁদেই চলেছেন।
আম্মু তুমি কাঁদছো কেন? শাওনের গলা শুনে চোখের পানি মুছে শাওন কে কাছে নিলেন শিউলি। কাঁদছি না বাবা, চোখে যেন কি পরেছে। আব্বু আসলে আব্বুকে বইলো, যাতে আম্মুকে মাফ করে দেয়?
তুমি কি করছো আম্মু, তোমাকে আব্বু মাফ করবে কেন?
কিছু না বাবা, তুমি শুধু আব্বুকে বইলো, আর কিছু না….
আচ্ছা….
শিউলির পাশের বাড়ির ভাবির নাম রত্না। রত্নার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেশমা। রত্না বললেন, আমি কি করতে পারি এখন বলো?
রেশমা বললো, ভাইজান বলছে, একবার শুধু ভাবির বাড়ি গিয়ে দেখতেন শিউলি ভাবি কি করতেছে…..
উনি এই কাজ টা ঠিক করেন নি, আমাকে তো ভাবি বললো উনি সব বাদ দিয়ে দিয়েছেন এখন তুমি এসে বলতেছো এই ঘটনা। এখন আমি ওই বাড়িতে কিভাবে যাই? মজুমদার ভাইয়ের কি অবস্থা কে জানে। একটা সুন্দর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে…..
ভাবি, আপনি শুধু একবার দেখে আসবেন কি অবস্থা, মানে উনারা কি অবস্থায় আছে। খলিল ভাইজান শুধু এতটুকু জানতে পাঠাইছে……
আচ্ছা, আমি যাচ্ছি…..
রত্না শিউলিদের বাড়িতে ঢুকে দেখলো শিউলি রান্না করছে, শাওন পাশে বসে আছে। রত্না কে দেখে শিউলি বললো, আব্বু তুমি ঘরে যাও আমি রান্না করে তোমাকে খাবার দিচ্ছি। শাওন উঠে চলে গেল।
ভাবি এসব কি শুনছি বলেন তো…..
আমি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছি বোন…. ঢুকরে কেঁদে উঠলেন শিউলি।
ভাবি কাঁইদেন না। যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে। এখন আপনাকে আর কি বলব। এমন অনেক হয়, তাই বলে সব শেষ হয়ে গিয়েছে এমন না……
আমি কিভাবে এই মুখ নিয়ে সুমন আর ওর বাবার সামনে যাব বলেন তো, এই নোংরা মুখটা কিভাবে দেখাবো ওদের…..
ভাবি, এত কিছু ভাইবেন না। গ্রামের অনেক মহিলাই এসব করে, আবার সংসার ও করে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য আগে আপনাকে ঠিক হতে হবে। ধৈর্য ধরুন, আর এসব থেকে বের হয়ে আসুন, দেখবেন সবাই আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবে। মজুমদার ভাই কিছু বলেছে..?
না, ও আর সুমন কোথায় যেন চলে গেল। আমি কি করবো কিছুই বুঝতেছি না…..
কিছু হবে না ভাবি, শাওন কে খাবার দেন, মজুমদার ভাই আসলে আমি আবার আসবো…..
আপনি কি করে জানলেন ভাবি?
খলিল চৌধুরীর বাড়ির কাজের মেয়েটা এসেছে। খলিল চৌধুরী আপনার খবর নিতে পাঠাইছে। তবুও ভালো, খারাপ সময় একেবারে বানের জলে আপনাকে ছেড়ে দেয় নি। সবাই এটাই করে……
দুপুরে সুমন বা মজুমদার সাহেব কেউ বাড়ি ফিরে নি। বিকালে কলেজ মাঠে বসে সুমন ইন্সটা তে রকির সাথে অনন্যার একটা ক্লোজ ছবি দেখলো। এমনিতেই দুনিয়া সংকীর্ণ হয়ে আছে তার উপর অনন্যার এহেন আচরণ যেন কাটা গায়ে লবন ছিটা দিচ্ছে। অনন্যার ফোনে কল দিলো সুমন, মাথা অনেক গরম হয়ে আছে, তার মা এমন করবে কল্পনাও করে নি সে৷ অনন্যাকে ফোন করলো সুমন।
হ্যালো, বলো সুমন…..
এসব নষ্টামি করতে খুব ভালো লাগছে তাই না?
মানে কি সুমন, ল্যাংগুয়েজ ঠিক করো……
ওহ আমি ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবো, তুমি আরেকটা ছেলের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াবে, আর আমি ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবো!!!
ফোন রাখো সুমন, তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না……
আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে কেন? নিশ্চয় তোমার নতুন সাথী তোমার সাথে আছে এখন…..
অনন্যা দেখলো রকি ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। সুমনের কথা শুনে তার ও শরীর রাগে কাঁপছে। সকালে সাদিয়ার সাথে রাগারাগি এখন আবার সুমনের উলটা পালটা কথা।
দেখো সুমন, আমার সব কিছুতেই তোমার সমস্যা, সো আমাদের রিলেশন আর কন্টিনিউ করার কোনো মানে হয় না। ব্রেক আপ……
ফোন কেটে গেল, সুমন রাগে সামনের দেয়ালে ফোন ছুড়ে মারলো। ফোন ভাঙার একটা সামান্য আওয়াজ হলো মাত্র।
সন্ধায় বাড়ি ফিরলেন মজুমদার সাহেব। শিউলি তাকিয়ে দেখলেন একদম বিধ্বস্ত লাগছে মজুমদার সাহেব কে। বুক ধক ধক করছে শিউলির। এখন নিশ্চয়ই তার স্বামী তাকে কিছু বলবে। কিন্তু মজুমদার সাহেব সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না শিউলি।
মজুমদার সাহেবের পায়ের কাছে পরে হাওমাও করে কান্না করছেন শিউলি। মজুমদার সাহেব নির্বাক। তিনিও বুঝতে পারছেন না প্রানপ্রিয় স্ত্রীর এহেন বিশ্বাসঘাতকতায় কি করবেন তিনি। এই পাপের কি কোনো ক্ষমা হয়? তাকে কি তিনি বের করে দিবেন। তিনি আর সুমন না হয় শিউলি কে ছাড়া চলতে পারবেন কিন্তু শাওন। শাওন মা কে ছাড়া কিভাবে থাকবে? শিউলি কেঁদেই চলেছে, এমন ভাবে কাঁদতে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। মজুমদার সাহেব বললেন, ক্ষুধা লেগেছে, খাবার দাও……
এই কথাতেই যেন ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে দিলেন মজুমদার সাহেব। স্বামীর আদেশ মানতে তাড়াতাড়ি খাবার ব্যাবস্থা করতে শুরু করলেন শিউলি। একটাও কথা না বলে খাবার খেয়ে নিলেন মজুমদার সাহেব।
সুমন ফিরলো আরো দেরি করে। বাড়িতে ঢুকেই নিজের রুমে চলে গেল সে। রাত ১০ টার পর শিউলি সুমনের রুমের সামনে গিয়ে ডাকলেন, কোনো সাড়া না পেয়ে সুমনের রুমে ঢুকলেন তিনি।
বাবা খাবি না?
আপনি আমার সামনে থেকে যান, প্লিজ…….
আসমান টা যেন ভেঙে পরলো শিউলির মাথার উপর। নিজের ছেলে তাকে আপনি করে বলছে তার সামনে থেকে চলে যেতে। চক্ষুদ্বয় ভিজে উঠলো নিমিষেই।
বাবা সারাদিনই তো কিছু খাস নি, একটু খেয়ে নে। আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিবি কেন?
চিৎকার দিয়ে উঠলো সুমন। পাশের বাড়ির মানুষ ও শুনবে এমন জোরে চিৎকার দিলো সে।
আপনাকে বলছি না আমার সামনে থেকে চলে যেতে। আমি খেলাম নাকি না খেলাম সেটার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে আমার? চোখের সামনে থেকে দূর হন বলছি……
মজুমদার সাহেব ছুটে আসলেন সুমনের রুমে। পিছনে পিছনে শাওন ও এলো। ছোট্ট সুমন ভয় পেয়ে গিয়েছে। ভাইয়ার এমন রুপ কখনো দেখে নি সে। মজুমদার সাহেব বললেন,
সুমন বাবা, চিল্লাচিল্লি করিস না…..
চিল্লাচিল্লি করব না মানে? আমার তো তোমার উপর রাগ হচ্ছে। এই মহিলা এখনো আমাদের বাড়িতে কি করে?
এক কোনে দাঁড়িয়ে নিরবে অশ্রু ঝড়াচ্ছেন শিউলি। তিনি যা করেছেন তাতে এই শাস্তি ও গুরু পাপে লঘু দন্ড তা বুঝতে পারছেন তিনি।
সুমন শান্ত হো, এখন কি করবো। খালি নিজের কথা ভাবতেছিস? শাওনের কি হবে? আমার কি রাগ নেই। আমিও ওকে জিবনে ক্ষমা করতে পারবো না। কিন্তু শাওনের কথা ভাব। ও মাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে?
কোন মায়ের কথা বলছো আব্বু? কেমন মা উনি? মনে আছে তোমার ঢাকা যাওয়ার আগের কথা। ওই লোকটার সাথে যেদিন শহরে গিয়েছিলেন উনি। নিশ্চয়ই সেদিন রাতেও নষ্টামি করছিলো তারা। শাওনের পেটে ব্যাথা হচ্ছিলো। উনার ফোনে নাকি চার্জ ছিল না। তাহলে শহর থেকে ফিরেই কিভাবে শাওনকে ফোন দিয়েছিলেন গেম খেলার জন্য? উনি ফোন টা সুইচ অফ করে রেখেছিলেন যাতে অবাধে নষ্টামি করতে পারেন। নিজের বাঁচলো না মরলো তাতে কিছুই যায় আসে না উনার। উনাকে মা বলে মা জাতিকে কলঙ্কিত করো না আব্বু। শাওন কে আমরাই দেখতে পারবো।
সুমনের শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। রাগের মাথায় কোনো কিছু করে বসলে ঝামেলা হবে। রত্না ভাবি ছুটে এসেছেন। সুমন কে অনেক বাবা বাবা বলে বুঝিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন তিনি।
শিউলির হৃদয়ে যেন বর্শা গেঁথে দিয়েছে সুমনের শেষ কথা গুলো। ঠিকই তো কেমন মা তিনি। শাওন দাঁড়িয়ে আছে। শিউলি গিয়ে শাওনের সামনে বসে শাওন কে জড়িয়ে ধরলেন।
আম্মু, ভাইয়ার কি হয়েছে? ভাইয়া তোমার সাথে এমন করছে কেন?
কিছু না বাবা, ভাইয়ার কিছু হয় নি। আমাকে মাফ করে দিতে পারবি আব্বু? আমি অনেক পাপ করেছি, আর কখনো করবো না। সবসময় তোর খেয়াল রাখবো বাবা। একবার ক্ষমা করে দে দয়া করে।
শাওন বুঝতে পারছে না তাকে জড়িয়ে ধরে তার মায়ের কান্নার মহত্ব। এমন কেন হচ্ছে। তার আম্মু তো তাদের কে কত ভালোবাসে, আদর করে। আজকে কি হলো হটাৎ করে।
মজুমদার সাহেব ভেঙে পরেছেন। সুমনের কথা শোনার পর সকালের থেকেও এখন বেশি মনে আঘাত পেয়েছেন তিনি। এই শিউলিই কি ওই ১৫ বছরের ছোট্ট মেয়েটা। যে এত দিন ধরে আগলে রেখেছেন তাদের। কত ঝড় কত ঝঞ্জার মধ্যেও নিজের পরিবার কে বট বৃক্ষের শিকড়ের মত বেধে রেখেছেন।এই শিউলি কিভাবে পারলো তাদের কথা না ভেবে কিভাবে এমন করতে। ধীর পায়ে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন মজুমদার সাহেব।
সুমন রত্না ভাবিদের বাড়িতেই এক রুমে ঘুমিয়ে পরেছিলো রাতে। ঘুম ভাঙলো কারো গলার আওয়াজে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলো শিউলি কান্না করে জোরে জোরে বলতেছে, ভাবি দেখে যান। সুমনের বাবা কেন জানি ঘুম থেকে উঠছে না। এত ডাকছি তাও উঠছে না…..
রত্না ভাবির আগেই সুমন দৌড়ে নিজের বাবার রুমে চলে গেল। কেমন নিথর হয়ে আছে তার বাবার দেহটা। মুখটা কেমন নিষ্পাপ লাগছে। কোনো পাপের কঙ্কিলতা নেই চেহারায়। বুকটাও উঠা নামা করছে না। শ্বাস কষ্টের কারনে যেভাবে লম্বা করে শ্বাস নিতেন সেটাও এখন পুরোপুরি বন্ধ। সুমন ডান হাতে বাবার দুই চোখ বন্ধ করে থপাস করে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পরলো। শাওন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। শিউলি বারান্দায় বিলাপ করছে। বাড়ির আঙিনায় মানুষের সমাগম বাড়ছে।
মজুমদার সাহেবের চাচাত ভাই কিছু যুবক ছেলেদের বাঁশ ঝাড়ে পাঠালেন বাঁশ কাটতে। আর ৪ জন ছেলে মসজিদে গেল খাটিয়া আনতে।
চলবে……
*পর্বটি ভালো লাগলে লাইক বাটনে ক্লিক করুন।
আম্মু, আম্মু, ক্ষুধা লাগছে ভাত দাও…. আবদার করলো শাওন।
চোখের পানি মুছে শিউলি বললো, আব্বু একটু অপেক্ষা করো আমি এখনই ভাত দিচ্ছি…..
শিউলি নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখলো সোফায় পাথর হয়ে বসে আছেন মজুমদার সাহেব। শিউলি কে দেখেই সুমন নিজের রুমে ঢুকে জোরে দরজা লাগিয়ে দিল। দরজার আওয়াজ টা যেন শিউলির বুকে হেমারের আঘাত দিয়ে গেল। স্বামীর দিকে আরেকবার তাকিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন তিনি। শাড়ির ভিতর থেকে প্যান্টি খুলে নিলেন তিনি। নীল প্যান্টিটা তে ঘন থকথকে বীর্য লেগে আছে। শিউলির মনে পরলো সুমন দরজা ধাক্কা দেয়ার পরও আরো ৩০ সেকেন্ড তাকে ঠাপিয়েছে খলিল। তারপর আরো ১০ সেকেন্ড ধরে বীর্য ঢেলেছে তার গুদে। প্যান্টিতে লেগে থাকা বীর্যে হাত বুলিয়ে শিউলি ভাবলেন, এই বীর্য কি আর কোনদিন পাবেন তিনি? হুট করে আবার বুকটা কেঁপে উঠলো শিউলির। এখনো এসব কি ভাবছেন তিনি! ছিঃ। বুক ভেঙে কান্না আসছে। তিনি তো সব বাদই দিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু এক রাত আবার করতে গিয়েই কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য।
খলিল চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বসে আছেন। তবে তার গম্ভীর মুখটা ভিতরের বিষন্নতা ফুটিয়ে তুলতে পারছে না। শিউলির জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। কি ব্যবহার করবে এখন তার সাথে মজুমদার ভাই? মজুমদার ভাই কি শিউলি কে মারধর করবে? যদি মারে তাহলে তিনি কি সেটা আটকাতে পারবেন? নাকি শিউলি কে তালাক দিয়ে দিবেন মজুমদার ভাই? তালাক দিলে কোনো সমস্যা নাই। আমি শিউলি কে রানি করে রাখবো। কিন্তু শিউলি, শিউলি কি পারবে তার এত দিনের সংসার আর সন্তানদের ত্যাগ করতে? না আর ভাবতে পারছেন না খলিল চৌধুরী। নিজেকে নরকের কিট মনে হচ্ছে তার। কি করছে এখন শিউলি, তার তো সমস্যা নেই, বিপদ তো শিউলির।
গোসল থেকে বের হয়ে শিউলি সুমন বা মজুমদার সাহেব কাউকে পেলেন না। শাওন কে জিজ্ঞেস করলেন, আব্বু আর ভাইয়া কোথায়? শাওন শুধু বললো বের হয়ে গিয়েছে। শিউলি রান্না করতে গেলেন। কান্না আটকে রাখতে পারছেন না তিনি। ঢুকরে ঢুকরে কেঁদেই চলেছেন।
আম্মু তুমি কাঁদছো কেন? শাওনের গলা শুনে চোখের পানি মুছে শাওন কে কাছে নিলেন শিউলি। কাঁদছি না বাবা, চোখে যেন কি পরেছে। আব্বু আসলে আব্বুকে বইলো, যাতে আম্মুকে মাফ করে দেয়?
তুমি কি করছো আম্মু, তোমাকে আব্বু মাফ করবে কেন?
কিছু না বাবা, তুমি শুধু আব্বুকে বইলো, আর কিছু না….
আচ্ছা….
শিউলির পাশের বাড়ির ভাবির নাম রত্না। রত্নার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রেশমা। রত্না বললেন, আমি কি করতে পারি এখন বলো?
রেশমা বললো, ভাইজান বলছে, একবার শুধু ভাবির বাড়ি গিয়ে দেখতেন শিউলি ভাবি কি করতেছে…..
উনি এই কাজ টা ঠিক করেন নি, আমাকে তো ভাবি বললো উনি সব বাদ দিয়ে দিয়েছেন এখন তুমি এসে বলতেছো এই ঘটনা। এখন আমি ওই বাড়িতে কিভাবে যাই? মজুমদার ভাইয়ের কি অবস্থা কে জানে। একটা সুন্দর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে…..
ভাবি, আপনি শুধু একবার দেখে আসবেন কি অবস্থা, মানে উনারা কি অবস্থায় আছে। খলিল ভাইজান শুধু এতটুকু জানতে পাঠাইছে……
আচ্ছা, আমি যাচ্ছি…..
রত্না শিউলিদের বাড়িতে ঢুকে দেখলো শিউলি রান্না করছে, শাওন পাশে বসে আছে। রত্না কে দেখে শিউলি বললো, আব্বু তুমি ঘরে যাও আমি রান্না করে তোমাকে খাবার দিচ্ছি। শাওন উঠে চলে গেল।
ভাবি এসব কি শুনছি বলেন তো…..
আমি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছি বোন…. ঢুকরে কেঁদে উঠলেন শিউলি।
ভাবি কাঁইদেন না। যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে। এখন আপনাকে আর কি বলব। এমন অনেক হয়, তাই বলে সব শেষ হয়ে গিয়েছে এমন না……
আমি কিভাবে এই মুখ নিয়ে সুমন আর ওর বাবার সামনে যাব বলেন তো, এই নোংরা মুখটা কিভাবে দেখাবো ওদের…..
ভাবি, এত কিছু ভাইবেন না। গ্রামের অনেক মহিলাই এসব করে, আবার সংসার ও করে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। এর জন্য আগে আপনাকে ঠিক হতে হবে। ধৈর্য ধরুন, আর এসব থেকে বের হয়ে আসুন, দেখবেন সবাই আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবে। মজুমদার ভাই কিছু বলেছে..?
না, ও আর সুমন কোথায় যেন চলে গেল। আমি কি করবো কিছুই বুঝতেছি না…..
কিছু হবে না ভাবি, শাওন কে খাবার দেন, মজুমদার ভাই আসলে আমি আবার আসবো…..
আপনি কি করে জানলেন ভাবি?
খলিল চৌধুরীর বাড়ির কাজের মেয়েটা এসেছে। খলিল চৌধুরী আপনার খবর নিতে পাঠাইছে। তবুও ভালো, খারাপ সময় একেবারে বানের জলে আপনাকে ছেড়ে দেয় নি। সবাই এটাই করে……
দুপুরে সুমন বা মজুমদার সাহেব কেউ বাড়ি ফিরে নি। বিকালে কলেজ মাঠে বসে সুমন ইন্সটা তে রকির সাথে অনন্যার একটা ক্লোজ ছবি দেখলো। এমনিতেই দুনিয়া সংকীর্ণ হয়ে আছে তার উপর অনন্যার এহেন আচরণ যেন কাটা গায়ে লবন ছিটা দিচ্ছে। অনন্যার ফোনে কল দিলো সুমন, মাথা অনেক গরম হয়ে আছে, তার মা এমন করবে কল্পনাও করে নি সে৷ অনন্যাকে ফোন করলো সুমন।
হ্যালো, বলো সুমন…..
এসব নষ্টামি করতে খুব ভালো লাগছে তাই না?
মানে কি সুমন, ল্যাংগুয়েজ ঠিক করো……
ওহ আমি ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবো, তুমি আরেকটা ছেলের সাথে ঢলাঢলি করে বেড়াবে, আর আমি ল্যাংগুয়েজ ঠিক করবো!!!
ফোন রাখো সুমন, তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না……
আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে কেন? নিশ্চয় তোমার নতুন সাথী তোমার সাথে আছে এখন…..
অনন্যা দেখলো রকি ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। সুমনের কথা শুনে তার ও শরীর রাগে কাঁপছে। সকালে সাদিয়ার সাথে রাগারাগি এখন আবার সুমনের উলটা পালটা কথা।
দেখো সুমন, আমার সব কিছুতেই তোমার সমস্যা, সো আমাদের রিলেশন আর কন্টিনিউ করার কোনো মানে হয় না। ব্রেক আপ……
ফোন কেটে গেল, সুমন রাগে সামনের দেয়ালে ফোন ছুড়ে মারলো। ফোন ভাঙার একটা সামান্য আওয়াজ হলো মাত্র।
সন্ধায় বাড়ি ফিরলেন মজুমদার সাহেব। শিউলি তাকিয়ে দেখলেন একদম বিধ্বস্ত লাগছে মজুমদার সাহেব কে। বুক ধক ধক করছে শিউলির। এখন নিশ্চয়ই তার স্বামী তাকে কিছু বলবে। কিন্তু মজুমদার সাহেব সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন। কি করবেন বুঝতে পারছেন না শিউলি।
মজুমদার সাহেবের পায়ের কাছে পরে হাওমাও করে কান্না করছেন শিউলি। মজুমদার সাহেব নির্বাক। তিনিও বুঝতে পারছেন না প্রানপ্রিয় স্ত্রীর এহেন বিশ্বাসঘাতকতায় কি করবেন তিনি। এই পাপের কি কোনো ক্ষমা হয়? তাকে কি তিনি বের করে দিবেন। তিনি আর সুমন না হয় শিউলি কে ছাড়া চলতে পারবেন কিন্তু শাওন। শাওন মা কে ছাড়া কিভাবে থাকবে? শিউলি কেঁদেই চলেছে, এমন ভাবে কাঁদতে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। মজুমদার সাহেব বললেন, ক্ষুধা লেগেছে, খাবার দাও……
এই কথাতেই যেন ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে দিলেন মজুমদার সাহেব। স্বামীর আদেশ মানতে তাড়াতাড়ি খাবার ব্যাবস্থা করতে শুরু করলেন শিউলি। একটাও কথা না বলে খাবার খেয়ে নিলেন মজুমদার সাহেব।
সুমন ফিরলো আরো দেরি করে। বাড়িতে ঢুকেই নিজের রুমে চলে গেল সে। রাত ১০ টার পর শিউলি সুমনের রুমের সামনে গিয়ে ডাকলেন, কোনো সাড়া না পেয়ে সুমনের রুমে ঢুকলেন তিনি।
বাবা খাবি না?
আপনি আমার সামনে থেকে যান, প্লিজ…….
আসমান টা যেন ভেঙে পরলো শিউলির মাথার উপর। নিজের ছেলে তাকে আপনি করে বলছে তার সামনে থেকে চলে যেতে। চক্ষুদ্বয় ভিজে উঠলো নিমিষেই।
বাবা সারাদিনই তো কিছু খাস নি, একটু খেয়ে নে। আমার উপর রাগ করে নিজেকে কষ্ট দিবি কেন?
চিৎকার দিয়ে উঠলো সুমন। পাশের বাড়ির মানুষ ও শুনবে এমন জোরে চিৎকার দিলো সে।
আপনাকে বলছি না আমার সামনে থেকে চলে যেতে। আমি খেলাম নাকি না খেলাম সেটার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে আমার? চোখের সামনে থেকে দূর হন বলছি……
মজুমদার সাহেব ছুটে আসলেন সুমনের রুমে। পিছনে পিছনে শাওন ও এলো। ছোট্ট সুমন ভয় পেয়ে গিয়েছে। ভাইয়ার এমন রুপ কখনো দেখে নি সে। মজুমদার সাহেব বললেন,
সুমন বাবা, চিল্লাচিল্লি করিস না…..
চিল্লাচিল্লি করব না মানে? আমার তো তোমার উপর রাগ হচ্ছে। এই মহিলা এখনো আমাদের বাড়িতে কি করে?
এক কোনে দাঁড়িয়ে নিরবে অশ্রু ঝড়াচ্ছেন শিউলি। তিনি যা করেছেন তাতে এই শাস্তি ও গুরু পাপে লঘু দন্ড তা বুঝতে পারছেন তিনি।
সুমন শান্ত হো, এখন কি করবো। খালি নিজের কথা ভাবতেছিস? শাওনের কি হবে? আমার কি রাগ নেই। আমিও ওকে জিবনে ক্ষমা করতে পারবো না। কিন্তু শাওনের কথা ভাব। ও মাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে?
কোন মায়ের কথা বলছো আব্বু? কেমন মা উনি? মনে আছে তোমার ঢাকা যাওয়ার আগের কথা। ওই লোকটার সাথে যেদিন শহরে গিয়েছিলেন উনি। নিশ্চয়ই সেদিন রাতেও নষ্টামি করছিলো তারা। শাওনের পেটে ব্যাথা হচ্ছিলো। উনার ফোনে নাকি চার্জ ছিল না। তাহলে শহর থেকে ফিরেই কিভাবে শাওনকে ফোন দিয়েছিলেন গেম খেলার জন্য? উনি ফোন টা সুইচ অফ করে রেখেছিলেন যাতে অবাধে নষ্টামি করতে পারেন। নিজের বাঁচলো না মরলো তাতে কিছুই যায় আসে না উনার। উনাকে মা বলে মা জাতিকে কলঙ্কিত করো না আব্বু। শাওন কে আমরাই দেখতে পারবো।
সুমনের শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। রাগের মাথায় কোনো কিছু করে বসলে ঝামেলা হবে। রত্না ভাবি ছুটে এসেছেন। সুমন কে অনেক বাবা বাবা বলে বুঝিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন তিনি।
শিউলির হৃদয়ে যেন বর্শা গেঁথে দিয়েছে সুমনের শেষ কথা গুলো। ঠিকই তো কেমন মা তিনি। শাওন দাঁড়িয়ে আছে। শিউলি গিয়ে শাওনের সামনে বসে শাওন কে জড়িয়ে ধরলেন।
আম্মু, ভাইয়ার কি হয়েছে? ভাইয়া তোমার সাথে এমন করছে কেন?
কিছু না বাবা, ভাইয়ার কিছু হয় নি। আমাকে মাফ করে দিতে পারবি আব্বু? আমি অনেক পাপ করেছি, আর কখনো করবো না। সবসময় তোর খেয়াল রাখবো বাবা। একবার ক্ষমা করে দে দয়া করে।
শাওন বুঝতে পারছে না তাকে জড়িয়ে ধরে তার মায়ের কান্নার মহত্ব। এমন কেন হচ্ছে। তার আম্মু তো তাদের কে কত ভালোবাসে, আদর করে। আজকে কি হলো হটাৎ করে।
মজুমদার সাহেব ভেঙে পরেছেন। সুমনের কথা শোনার পর সকালের থেকেও এখন বেশি মনে আঘাত পেয়েছেন তিনি। এই শিউলিই কি ওই ১৫ বছরের ছোট্ট মেয়েটা। যে এত দিন ধরে আগলে রেখেছেন তাদের। কত ঝড় কত ঝঞ্জার মধ্যেও নিজের পরিবার কে বট বৃক্ষের শিকড়ের মত বেধে রেখেছেন।এই শিউলি কিভাবে পারলো তাদের কথা না ভেবে কিভাবে এমন করতে। ধীর পায়ে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন মজুমদার সাহেব।
সুমন রত্না ভাবিদের বাড়িতেই এক রুমে ঘুমিয়ে পরেছিলো রাতে। ঘুম ভাঙলো কারো গলার আওয়াজে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলো শিউলি কান্না করে জোরে জোরে বলতেছে, ভাবি দেখে যান। সুমনের বাবা কেন জানি ঘুম থেকে উঠছে না। এত ডাকছি তাও উঠছে না…..
রত্না ভাবির আগেই সুমন দৌড়ে নিজের বাবার রুমে চলে গেল। কেমন নিথর হয়ে আছে তার বাবার দেহটা। মুখটা কেমন নিষ্পাপ লাগছে। কোনো পাপের কঙ্কিলতা নেই চেহারায়। বুকটাও উঠা নামা করছে না। শ্বাস কষ্টের কারনে যেভাবে লম্বা করে শ্বাস নিতেন সেটাও এখন পুরোপুরি বন্ধ। সুমন ডান হাতে বাবার দুই চোখ বন্ধ করে থপাস করে হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পরলো। শাওন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। শিউলি বারান্দায় বিলাপ করছে। বাড়ির আঙিনায় মানুষের সমাগম বাড়ছে।
মজুমদার সাহেবের চাচাত ভাই কিছু যুবক ছেলেদের বাঁশ ঝাড়ে পাঠালেন বাঁশ কাটতে। আর ৪ জন ছেলে মসজিদে গেল খাটিয়া আনতে।
চলবে……
*পর্বটি ভালো লাগলে লাইক বাটনে ক্লিক করুন।