25-10-2024, 11:48 PM
(This post was last modified: 25-10-2024, 11:54 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আসলে তুই আমার মনে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বীজ বপন করে দিয়েছিলি। সেই তোদের প্রেমের শুরুর দিন থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘর্মাক্ত সবল দীর্ঘ গফুর দা'কে তুই যখন দেখতিস, আর গফুর দা'র শরীর নিয়ে তোর কামনার বিবরণ দিতিস, তখন লাজুক ভাবে আমি তোর কথা শুনতাম। কখনো অনুসন্ধিৎসু, কখনো ভয়ে কুঁকড়ে ওঠা একটা সাধারণ মেয়ের মত। গফুর দা'র মাকলেজানিটি নিয়ে তোর কামনা-বাসনগুলি আমার মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করত। আমি ভাবতাম তুই খুব দুঃসাহসী। আমি ঠিক তোর উল্টো। বনেদী রক্ষণশীলতা, পড়াশোনা, আর জয়ন্তের প্রতি আমার ভালোবাসাই আমার সর্বস্ব। জানিনা হয়ত আমি অবদমিত ছিলাম কিনা। সেই অবদমন থেকেই কি আমি তোর প্রতি নির্দয় হলাম! গফুর দা'র সাথে তোর সম্পর্কটা ততদিনে আলি চাচার চোখে পড়েছে। আলি চাচা আর গফুর দা'র ঝামেলা হয়েছে বলে তুই জানালি। তোরা পালিয়ে যাবার কথা ভাবছিস। গফুর দা তখন ডানকুনি জুটমিলে কাজ করছে। আলি চাচা যে একদিন বাবাকে সব কথা বলে দেবে, তোরা কেউই জানতিস না। গফুর দা'কে তোর পাঠানো চিঠিগুলো আমিই পোস্ট করতাম। আর সেই চিঠি একদিন বাবার হাতে পড়ল। বাবা আসলে ঠান্ডা মাথায় এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। তোকে ভালোবাসতেন বাবা। নিজের মেয়েই মনে করতেন। হয়ত গফুর দা'র মত বেজাত বখাটে রগচটা ছেলের হাতে তোকে তুলে দিতে চাননি। এছাড়া বাবার মধ্যে ছিল সম্ভ্রান্ত বাগচী বাড়ির সম্মান নিয়ে অদ্ভুত এক সেকেলে রক্ষণশীলতা। বাবা নির্দেশ দিলেন এই চিঠি ফেরত পাঠাতে। তার জন্য বাবা আমাকে মিথ্যে বলতে নির্দেশ দিলেন। আর আমি সেখানেই বিশ্বাসঘাতিকা হয়ে উঠলাম। বাবা তার এক পোস্টমাস্টার বন্ধুকে দিয়ে ফেরত যাবার স্ট্যাম্প বসালো চিঠিতে। আমি বাবার ভালো মেয়ের মত তোকে মিথ্যে বললাম। তোর গফুর দা'র সাথে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেই চিঠি আর পৌঁছল না গফুর দা'র কাছে। হয়ত ঐ চিঠির কাতর আবেদন পেলে গফুর দা ফিরে আসতো তোর কাছে। নিয়ে পালাতো তোকে। পরিণতি পেত তোদের প্রেম। নিছকই ঈর্ষায় নাকি শুধু বাবার আনুগত্যে তোদের সম্পর্ক ভেঙে দিতে পেরে বড্ড আনন্দ পাচ্ছিলাম জানি না। কিন্তু হঠাৎ করে যেদিন গোবিন্দপুর থেকে খবর এলো তুই দীঘির জলে ডুবে মরেছিস, সেদিন মনটা বড্ড কাঁপছিল। যে মেয়ে সাঁতারে পারদর্শী, আমাকেই কিনা বাঁচিয়েছিল একদিন, সে জলে ডুবে মরতে পারে না। আমি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঝুমুর, আমি জানি তুই জলে ডুবে মরিসনি। তুই আত্মহত্যা করেছিস। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়লাম যখন জানলাম তোর মৃত্যুর পর বাবা কিছু একটা চেপে যাচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টকে চেপে দিতে বাবা পুলিশের কর্তাকে বেশ কিছু টাকা পয়সা দিলেন। হ্যা, তুই একা মরিসনি। তোর সাথে মরেছে পৃথিবীর আলো না দেখা তোর আর গফুর দা'র সন্তান। মরবার সময় তোর পেটের সন্তান ছিল তিনমাসের।
তুই জানিস ঝুমুর, গফুর দা সেদিন এসেছিল। সবার অলক্ষ্যে তোর মৃতদেহটি একটিবার দেখে চলে গেছে। আজ এতদিন পরে আমি কেন এত কথা লিখছি? আমার পেটে আমার আর আমার স্বামী জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান বেড়ে উঠছে। গত সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে যাবার পথে কলকাতার রাস্তায় দিকভ্রান্তের মত এক ভবঘুরেকে হাঁটতে দেখলাম ফুটপাতে। সে আর কেউ নয় ঝুমুর, তোর প্রেমিক গফুর দা। তখন জয়ন্ত থাকায় আমি একটিবার গিয়ে ক্ষমা চাইতে পারিনি গফুর দা'র কাছে। এক অপরিসীম পাপবোধ থেকে আজ গেছিলাম গফুর দা'র খোঁজে। পার্ক সার্কাসের একটা ঝুপড়ি ঘরে সংসার পেতেছে গফুর দা। কোনো এক যৌনকর্মীকে বিয়ে করে ঠাঁই দিয়েছে। মেয়েটির নাম হাসিনা। বড্ড ভালো মেয়ে। গফুর দা'র আশ্রয় পেয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে ও'। গফুর দা'র আর ওর একটি পাঁচ মাসের মেয়ে আছে। কিন্তু হতভাগ্য হাসিনা। ওর কাছে জানলাম গফুর দা বিয়ে করে ও'কে ঠাঁই দিলেও সংসারে মন বসায়নি। গফুর দা'র মন জুড়ে এখনো শুধুই তুই, ঝুমুর। বেচারা হাসিনা শত চেষ্টা করেও মন পায় না তার স্বামীর। শুধু শরীরের জন্যই গফুর দা আসে হাসিনার কাছে। যে গফুর দা তোর জন্য নেশা ছেড়ে জুটমিলে কাজ নিয়েছিল, সে এখন নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে।
ঝুমরি, আমার পেটে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে। শুধু তুই নয়, তোর সন্তানের অপমৃত্যুও আমার কারণে। আমার সন্তান যেন আমার পাপের ভাগীদার না হয়। এক না বলা যন্ত্রনা থেকেই আমার এই স্বীকারোক্তি, ঝুমরি। মাফ করে দিস আমায়। মাফ করে দিস।
অংশু এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল মায়ের ডায়েরি। অদ্ভুত এক সমাপতন। পরের পাতাগুলোতে সদ্য মা কিছু লিখতে চেয়েছে। কিন্তু কাটাকুটি করে শেষাবধি কিছুই লেখা হয়নি। এই প্রথম গফুর নামক লোকটির প্রতি অংশুর মনে দয়া দাক্ষিণ্য জন্ম নিল। ঝুমুর মাসি বা গফুরের প্রেম পত্র সে আগেও পড়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রেমের ট্রাজেডিতে যে মায়ের এই ভূমিকা ছিল তা অংশুর জানা ছিল না। বড্ড সংবেদনশীল লেখা মায়ের এই ডায়েরি। মা তার এই ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজের না বলা পাপকে স্খলণ করতে চেয়েছে।
অংশু দেখল বিট্টু-লাট্টু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খেলনার সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলায়। অংশুর নিজেরও মায়া তৈরি হল ওদের দুজনের ওপর। ওরা যে কোনো দোষ করেনি। ওদের বাবা তার প্রেমিকার স্মৃতিতে মদ্যপ হয়ে ভবঘুরে উন্মাদ। ওদের মা দুরারোগ্য ক্যানসারে মারা গেছে। কেউ নেই ওদের। একমাত্র মা'ই তো ওদের শেষ ভরসা। অংশুর মনটা হালকা হয়ে উঠল। বড় হচ্ছে সেও যে। কত দিন দিনান্ত তাকেও যে পার করতে হবে।
চলবে।
তুই জানিস ঝুমুর, গফুর দা সেদিন এসেছিল। সবার অলক্ষ্যে তোর মৃতদেহটি একটিবার দেখে চলে গেছে। আজ এতদিন পরে আমি কেন এত কথা লিখছি? আমার পেটে আমার আর আমার স্বামী জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান বেড়ে উঠছে। গত সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে যাবার পথে কলকাতার রাস্তায় দিকভ্রান্তের মত এক ভবঘুরেকে হাঁটতে দেখলাম ফুটপাতে। সে আর কেউ নয় ঝুমুর, তোর প্রেমিক গফুর দা। তখন জয়ন্ত থাকায় আমি একটিবার গিয়ে ক্ষমা চাইতে পারিনি গফুর দা'র কাছে। এক অপরিসীম পাপবোধ থেকে আজ গেছিলাম গফুর দা'র খোঁজে। পার্ক সার্কাসের একটা ঝুপড়ি ঘরে সংসার পেতেছে গফুর দা। কোনো এক যৌনকর্মীকে বিয়ে করে ঠাঁই দিয়েছে। মেয়েটির নাম হাসিনা। বড্ড ভালো মেয়ে। গফুর দা'র আশ্রয় পেয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে ও'। গফুর দা'র আর ওর একটি পাঁচ মাসের মেয়ে আছে। কিন্তু হতভাগ্য হাসিনা। ওর কাছে জানলাম গফুর দা বিয়ে করে ও'কে ঠাঁই দিলেও সংসারে মন বসায়নি। গফুর দা'র মন জুড়ে এখনো শুধুই তুই, ঝুমুর। বেচারা হাসিনা শত চেষ্টা করেও মন পায় না তার স্বামীর। শুধু শরীরের জন্যই গফুর দা আসে হাসিনার কাছে। যে গফুর দা তোর জন্য নেশা ছেড়ে জুটমিলে কাজ নিয়েছিল, সে এখন নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে।
ঝুমরি, আমার পেটে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে। শুধু তুই নয়, তোর সন্তানের অপমৃত্যুও আমার কারণে। আমার সন্তান যেন আমার পাপের ভাগীদার না হয়। এক না বলা যন্ত্রনা থেকেই আমার এই স্বীকারোক্তি, ঝুমরি। মাফ করে দিস আমায়। মাফ করে দিস।
অংশু এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল মায়ের ডায়েরি। অদ্ভুত এক সমাপতন। পরের পাতাগুলোতে সদ্য মা কিছু লিখতে চেয়েছে। কিন্তু কাটাকুটি করে শেষাবধি কিছুই লেখা হয়নি। এই প্রথম গফুর নামক লোকটির প্রতি অংশুর মনে দয়া দাক্ষিণ্য জন্ম নিল। ঝুমুর মাসি বা গফুরের প্রেম পত্র সে আগেও পড়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রেমের ট্রাজেডিতে যে মায়ের এই ভূমিকা ছিল তা অংশুর জানা ছিল না। বড্ড সংবেদনশীল লেখা মায়ের এই ডায়েরি। মা তার এই ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজের না বলা পাপকে স্খলণ করতে চেয়েছে।
অংশু দেখল বিট্টু-লাট্টু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খেলনার সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলায়। অংশুর নিজেরও মায়া তৈরি হল ওদের দুজনের ওপর। ওরা যে কোনো দোষ করেনি। ওদের বাবা তার প্রেমিকার স্মৃতিতে মদ্যপ হয়ে ভবঘুরে উন্মাদ। ওদের মা দুরারোগ্য ক্যানসারে মারা গেছে। কেউ নেই ওদের। একমাত্র মা'ই তো ওদের শেষ ভরসা। অংশুর মনটা হালকা হয়ে উঠল। বড় হচ্ছে সেও যে। কত দিন দিনান্ত তাকেও যে পার করতে হবে।
চলবে।