25-10-2024, 11:45 PM
(This post was last modified: 25-10-2024, 11:49 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এলোমেলো বইখাতাগুলো গুছাতে গিয়ে অংশুর চোখে পড়ল মায়ের ঐ নীল মোড়কের পুরনো ডায়েরিটা। পরে পড়বে বলে আড়াল করে রেখেছিল সেদিন সে। তারপরে আর মনে নেই ওর।
ডায়েরির পাতা ওল্টাতে গিয়ে প্রথম পাতায় চোখ আটকালো ওর। মা ছবি এঁকেছে সুন্দর করে এক গুচ্ছ ফুলের। মা যে অত ভালো ছবি আঁকতে পারে তা অংশু দেখেছে আগেও। ওর স্কু লের নাইনের প্রাকটিক্যাল খাতায় মা'ই ছবিগুলো সব এঁকে দিয়েছিল।
ডায়েরির প্রথম পাতায় মায়ের সুশ্রী গোটা গোটা হাতের লেখায় ভরা নজরুলের 'অনাদৃতা' কবিতার প্রথম দুই পংক্তি:
ওরে অভিমানিনী
অমন করে বিদায় নিবি ভুলেও জানিনি
আমি সুচিত্রা বাগচী। এখনো বিয়ে হয়নি আমার। বিয়ে হলে আমি সুচিত্রা দাশগুপ্ত হব। আমার পিতা নিকুঞ্জবিহারী বাগচী আমার ভবিতব্য ঠিক করে গেছেন। জয়ন্ত দাশগুপ্ত আমায় স্বামী, প্রেম সবই। জয়ন্তকে যখন আমি প্রথম দেখি, সেই প্রথম দেখা আমার বিশেষ কিছু মনে নেই। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ জয়ন্তকে আমি দেখেছি তখন আমি কিশোরী ক্লাস নাইনের ছাত্রী। মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ফর্সা সুদর্শন ছিমছাম ছেলেটা আমাকে ফিসফিসিয়ে দুর্গাপূজার মন্ডপে সবার আড়ালে বলেছিল "সুচি, তুমি কি জানো তোমার বাবা আর আমার বাবা ঠিক করেছেন তুমি আমার বউ হবে?" তার আগে কানাঘুষো শুনিনি যে তা নয়। আমি লজ্জা পেয়ে আমার পিসতুতো বোন ঝুমুরকে বলেছিলাম একদম মিথ্যে নয়। মা আর অপরাজিতা কাকিমা যে কথা সেদিন আলোচনা করছিল তা সত্যি। আমার মুখের লাজুকতা দেখে ডানপিটে মেয়ে ঝুমুর বলেছিল "আহারে আমাদের সুচিত্রা, ডাক্তারের বউ হবে বলে এখন থেকেই লজ্জা"। সেদিন থেকে আমি মনে মনে ডাক্তারের বউ।
অপরাজিতা কাকিমা জয়ন্তের মা। আমার হবু শাশুড়ি। আমায় মেয়ের মতই দেখেন। আমি শুনতাম মেয়েদের শাশুড়িরা দজ্জাল হয়। ঝুমুর বলেছিল বিয়ে হলে পরে অপরাজিতা কাকিমাও আর মেয়ের চোখে দেখবে না। তখন শাশুড়ি-বৌমা বিবাদে ডাক্তার বাবুর মাথা খাবো নাকি দুজনে। সেসব মিথ্যে কথা। বিয়ের পর তা মোটেই হয়নি। থাক সেসব কথা। এই ডায়েরি আমি লিখছি যখন আমার পেটে আমার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায়। আমার আর জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান।
কিন্তু এই ডায়েরি আমি লিখছি, এক পাপবোধ থেকে। যে পাপ আমি এক আচমকা নোংরা ঈর্ষায় করেই করেছি। যে ঈর্ষার ফলশ্রুতি মোটেই ভালো হয়নি। কেউ জানবে না আমার এই পাপ কর্মে কার কি ক্ষতি হয়ে গেল। আমি চাই না, আমার আগত সন্তানের উপর আমার সেই পাপের ছায়া পড়ুক। ঝুমুর, আমায় মাফ করে দে। তুই নেই, এখন আর আমাকে মাফ করে দেবার কেউ নেই। আমার প্রেম, স্বামী জয়ন্তের কাছেও যা আমি আড়াল করে গেছি। গফুর দা নেই। হারিয়ে গেছে আজ কতবছর হল। যদি তার সাথে দেখা হত সেও হয়ত আমাকে মাফ করত কিনা জানা নেই। ঝুমুর, এই ডায়েরি আমার স্বীকারোক্তি। আমাকে ব্যক্ত করার জায়গা। তানাহলে এই পাপ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
ঝুমুর, সেই ছেলেবেলা মনে আছে? আমি কত শান্ত, তুই কত ডানপিটে বলে পিসি বলত 'হলে পরে সুচিত্রার মত হ'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, তুই আমার পিঠোপিঠি, আমার বাবা তোদের আশ্রয় দিয়েছে বলে আমি কখনো তোকে আলাদা করে দেখিনি। তুই বরং বলতিস সেই ছোট থেকে 'সুচি তোরা কত বড়লোক, তুই কত ফর্সা, কত পড়ালেখা' ইত্যাদি ইত্যাদি। ঝুমুর তুই হয়ত কালো, মা বলেন কালো গড়নে তুই অপরূপা। অথচ তুই সারাজীবন আমাকেই সুন্দরী বলে গেলি।
ঝুমুর, চন্দননগর থেকে গোবিন্দপুর যখন যেতাম, শুধু তোর টানেই যেতাম। কত কত দস্যিপনা তোর। মনে আছে সেই আম গাছে উঠে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়া? তরতরিয়ে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠে বসলি তুই। আর আমি রোগ পাতলা হয়েও ভয় খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর তুই ঠাট্টা করে বললি 'সুচি, তুই শহরের মেয়ে, পারবিনে। নীচে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আম ভেঙে দিচ্ছি, তুই পাকড়াও কর।' জেদ চেপে গেল আমার। বাবা বলতেন 'সুচিত্রা আমার জেদি মেয়ে। হঠ করে কেউ টের পায় না, ওর এমন শান্ত চেহারায়।' সত্যিরে ঝুমুর, আমি জেদ করে উঠে পড়লাম গাছে সেদিন। তুই হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে তুললি। সেদিন আমি অত উঁচু থেকে আকাশ দেখেছিলাম। এত উঁচু থেকে দেখা যাচ্ছিল বাড়ির ছাদ, দীঘি, আমাদের বসত পেরিয়ে গোবিন্দপুরের ঐ বিল। যে বিলে একদিন মাছ ধরতে যাবেন বলে আলি চাচা। জেদ করেছিলাম আমরা। বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়ে দুটোকে ডিঙিতে করে নিয়ে গেছিলেন চাচা। ঝুমুর ঐ আম গাছের মগ ডালে সেদিন আমি আরো কিছু দেখেছিলাম। একজন রক্তমাংসের মানুষ। তুই অত উঁচুতেও ফিসফিসিয়ে বলেছিল 'ও হচ্ছে গফুর দা, আলি চাচার ছেলে।'
গফুর দা'কে দূর থেকেই দেখেছি। প্রথম দিকে বাড়ির কেয়ারটেকার আলি চাচার ছেলে বলে ধারে কাছে ভিড়তো না আমাদের। আমাদের চেয়ে বছর পাঁচ-ছয়ের বড় গফুর দা কেমন যেন গম্ভীর স্বভাবের। কালো কালো সুঠাম গায়ে তখন চাচার সঙ্গে কাঠ ফাটাচ্ছিল ও'। তুই ওর ঘর্মাক্ত শরীরের দিকে চেয়ে কেমন এক উতলা হয়ে চেয়েছিল। আমি তখন নিস্পৃহ, নিরীহ এক বোকা মেয়ে। তোর ঐ চাহুনি বুঝতে পারিনি। ঝুমুর, আসলে তুই'ই আমার বয়ঃসন্ধির গাইড। পুরুষ-নারীর রহস্য যে শুধু বায়োলজি বইতে মুখ ডুবিয়ে জানা যায় না, তা তোর কাছেই জেনেছিলাম।
একদিন দীঘির জলে স্নান করতে গিয়ে তোর ফ্রক পরা বুক দেখিয়ে বলেছিলি 'সুচি দেখতো, আমার মাই দুটো বড় হচ্ছে কিনা?' আমি অশ্লীল শব্দ শুনে লজ্জায় কোনো উত্তর দিতে পারিনি। তুই আমার লাজে রাঙা গম্ভীর চশমা চোখা মুখ দেখে বলেছিলি 'এখনই বয়স রে সুচি, এই বয়সেই মেয়েদের দুধ ওঠে'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, আমি সেদিন আড়ালে নিজের জামা নামিয়ে দেখেছিলাম নিজের সাদা সাদা মসৃন বুক। তোর দুটো বাড়ছে, আমার যেন পুরুষালি হয়ে রয়েছে একই রকম। বড্ড ঈর্ষা হল প্রথমবার তোর সাথে।
গভীর রাতে একদিন তোকে দেখেছিলাম প্যান্টির ভেতর হাত ঢুকিয়ে কিসব করতে। তোর চোখ মুখগুলো কেমন করছিল সেদিন। আমি ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছিলাম। একবিন্দু ঘুমোতে পারিনি সেইরাতে। সেই দিন ঠিক করেছিলাম, তুই অসভ্য মেয়ে, তোর সাথে আর মিশব না। কিন্তু আমরা যে ছিলাম গলায় গলায় বন্ধু। পারিনি, পরদিন আবার মিশে গেলাম তোর সাথে। তোর সৌজন্যে পরিচয় হল গফুর দা'র সাথে। ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েছিল গফুর দা'ই। আমি শিখিনি। কিন্তু তুই বেশ গফুর দা'র গায়ে পড়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলি। তোদের অমন করে দেখতে বড্ড অসভ্য ঠেকছিল আমার।
কিশোরী বয়সে তুই হলি পাকা গ্রামের মেয়ে। যেমন ডানপিটে, তেমন দুঃসাহসী, তেমনই বন্ধু। আর আমি হলাম শহরের বড়োলোকি পড়ুয়া বাবা-মায়ের ভালো মেয়ে। মোটা পাওয়ারের চশমার ওপর দিয়ে রাগী রাগী ভাবে দেখতাম বলে গফুর দা বলত 'ঝুমুর, তোর এই চাশমিশ বোন সুচিত্রার এত রাগ কেন রে?'
জয়ন্তের সাথে আমার প্রেম শুরু হবার আগেই তুই আর গফুর দা' প্রেমে মত্ত হয়ে পড়লি। আড়ালে আবডালে তোরা মাঝে মধ্যেই হারিয়ে যেতিস কেন বুঝিনি। একদিন দীঘির জলে নেমে আমি প্রায় ডুবুডুবু তুই গিয়ে টেনে আনলি আমাকে। গফুর দাও সেদিন জলে ছিল। তুই জানিস না ঝুমরি, মা সেদিন খুব বকেছিল। যে মা আলি চাচাকে নিজের বাড়ির কেয়ারটেকার নয় দেওরের মত দেখত, সেই মা বলেছিল 'সুচিত্রা, ঐ গফুরের সাথে তোদের এত মেলামেশা কেন রে? ওরা মু-সলমান জানিস না। কেয়ারটেকারের ছেলে। খবরদার মিশবি না।'
ডায়েরির পাতা ওল্টাতে গিয়ে প্রথম পাতায় চোখ আটকালো ওর। মা ছবি এঁকেছে সুন্দর করে এক গুচ্ছ ফুলের। মা যে অত ভালো ছবি আঁকতে পারে তা অংশু দেখেছে আগেও। ওর স্কু লের নাইনের প্রাকটিক্যাল খাতায় মা'ই ছবিগুলো সব এঁকে দিয়েছিল।
ডায়েরির প্রথম পাতায় মায়ের সুশ্রী গোটা গোটা হাতের লেখায় ভরা নজরুলের 'অনাদৃতা' কবিতার প্রথম দুই পংক্তি:
ওরে অভিমানিনী
অমন করে বিদায় নিবি ভুলেও জানিনি
আমি সুচিত্রা বাগচী। এখনো বিয়ে হয়নি আমার। বিয়ে হলে আমি সুচিত্রা দাশগুপ্ত হব। আমার পিতা নিকুঞ্জবিহারী বাগচী আমার ভবিতব্য ঠিক করে গেছেন। জয়ন্ত দাশগুপ্ত আমায় স্বামী, প্রেম সবই। জয়ন্তকে যখন আমি প্রথম দেখি, সেই প্রথম দেখা আমার বিশেষ কিছু মনে নেই। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ জয়ন্তকে আমি দেখেছি তখন আমি কিশোরী ক্লাস নাইনের ছাত্রী। মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ফর্সা সুদর্শন ছিমছাম ছেলেটা আমাকে ফিসফিসিয়ে দুর্গাপূজার মন্ডপে সবার আড়ালে বলেছিল "সুচি, তুমি কি জানো তোমার বাবা আর আমার বাবা ঠিক করেছেন তুমি আমার বউ হবে?" তার আগে কানাঘুষো শুনিনি যে তা নয়। আমি লজ্জা পেয়ে আমার পিসতুতো বোন ঝুমুরকে বলেছিলাম একদম মিথ্যে নয়। মা আর অপরাজিতা কাকিমা যে কথা সেদিন আলোচনা করছিল তা সত্যি। আমার মুখের লাজুকতা দেখে ডানপিটে মেয়ে ঝুমুর বলেছিল "আহারে আমাদের সুচিত্রা, ডাক্তারের বউ হবে বলে এখন থেকেই লজ্জা"। সেদিন থেকে আমি মনে মনে ডাক্তারের বউ।
অপরাজিতা কাকিমা জয়ন্তের মা। আমার হবু শাশুড়ি। আমায় মেয়ের মতই দেখেন। আমি শুনতাম মেয়েদের শাশুড়িরা দজ্জাল হয়। ঝুমুর বলেছিল বিয়ে হলে পরে অপরাজিতা কাকিমাও আর মেয়ের চোখে দেখবে না। তখন শাশুড়ি-বৌমা বিবাদে ডাক্তার বাবুর মাথা খাবো নাকি দুজনে। সেসব মিথ্যে কথা। বিয়ের পর তা মোটেই হয়নি। থাক সেসব কথা। এই ডায়েরি আমি লিখছি যখন আমার পেটে আমার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায়। আমার আর জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান।
কিন্তু এই ডায়েরি আমি লিখছি, এক পাপবোধ থেকে। যে পাপ আমি এক আচমকা নোংরা ঈর্ষায় করেই করেছি। যে ঈর্ষার ফলশ্রুতি মোটেই ভালো হয়নি। কেউ জানবে না আমার এই পাপ কর্মে কার কি ক্ষতি হয়ে গেল। আমি চাই না, আমার আগত সন্তানের উপর আমার সেই পাপের ছায়া পড়ুক। ঝুমুর, আমায় মাফ করে দে। তুই নেই, এখন আর আমাকে মাফ করে দেবার কেউ নেই। আমার প্রেম, স্বামী জয়ন্তের কাছেও যা আমি আড়াল করে গেছি। গফুর দা নেই। হারিয়ে গেছে আজ কতবছর হল। যদি তার সাথে দেখা হত সেও হয়ত আমাকে মাফ করত কিনা জানা নেই। ঝুমুর, এই ডায়েরি আমার স্বীকারোক্তি। আমাকে ব্যক্ত করার জায়গা। তানাহলে এই পাপ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।
ঝুমুর, সেই ছেলেবেলা মনে আছে? আমি কত শান্ত, তুই কত ডানপিটে বলে পিসি বলত 'হলে পরে সুচিত্রার মত হ'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, তুই আমার পিঠোপিঠি, আমার বাবা তোদের আশ্রয় দিয়েছে বলে আমি কখনো তোকে আলাদা করে দেখিনি। তুই বরং বলতিস সেই ছোট থেকে 'সুচি তোরা কত বড়লোক, তুই কত ফর্সা, কত পড়ালেখা' ইত্যাদি ইত্যাদি। ঝুমুর তুই হয়ত কালো, মা বলেন কালো গড়নে তুই অপরূপা। অথচ তুই সারাজীবন আমাকেই সুন্দরী বলে গেলি।
ঝুমুর, চন্দননগর থেকে গোবিন্দপুর যখন যেতাম, শুধু তোর টানেই যেতাম। কত কত দস্যিপনা তোর। মনে আছে সেই আম গাছে উঠে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়া? তরতরিয়ে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠে বসলি তুই। আর আমি রোগ পাতলা হয়েও ভয় খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর তুই ঠাট্টা করে বললি 'সুচি, তুই শহরের মেয়ে, পারবিনে। নীচে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আম ভেঙে দিচ্ছি, তুই পাকড়াও কর।' জেদ চেপে গেল আমার। বাবা বলতেন 'সুচিত্রা আমার জেদি মেয়ে। হঠ করে কেউ টের পায় না, ওর এমন শান্ত চেহারায়।' সত্যিরে ঝুমুর, আমি জেদ করে উঠে পড়লাম গাছে সেদিন। তুই হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে তুললি। সেদিন আমি অত উঁচু থেকে আকাশ দেখেছিলাম। এত উঁচু থেকে দেখা যাচ্ছিল বাড়ির ছাদ, দীঘি, আমাদের বসত পেরিয়ে গোবিন্দপুরের ঐ বিল। যে বিলে একদিন মাছ ধরতে যাবেন বলে আলি চাচা। জেদ করেছিলাম আমরা। বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়ে দুটোকে ডিঙিতে করে নিয়ে গেছিলেন চাচা। ঝুমুর ঐ আম গাছের মগ ডালে সেদিন আমি আরো কিছু দেখেছিলাম। একজন রক্তমাংসের মানুষ। তুই অত উঁচুতেও ফিসফিসিয়ে বলেছিল 'ও হচ্ছে গফুর দা, আলি চাচার ছেলে।'
গফুর দা'কে দূর থেকেই দেখেছি। প্রথম দিকে বাড়ির কেয়ারটেকার আলি চাচার ছেলে বলে ধারে কাছে ভিড়তো না আমাদের। আমাদের চেয়ে বছর পাঁচ-ছয়ের বড় গফুর দা কেমন যেন গম্ভীর স্বভাবের। কালো কালো সুঠাম গায়ে তখন চাচার সঙ্গে কাঠ ফাটাচ্ছিল ও'। তুই ওর ঘর্মাক্ত শরীরের দিকে চেয়ে কেমন এক উতলা হয়ে চেয়েছিল। আমি তখন নিস্পৃহ, নিরীহ এক বোকা মেয়ে। তোর ঐ চাহুনি বুঝতে পারিনি। ঝুমুর, আসলে তুই'ই আমার বয়ঃসন্ধির গাইড। পুরুষ-নারীর রহস্য যে শুধু বায়োলজি বইতে মুখ ডুবিয়ে জানা যায় না, তা তোর কাছেই জেনেছিলাম।
একদিন দীঘির জলে স্নান করতে গিয়ে তোর ফ্রক পরা বুক দেখিয়ে বলেছিলি 'সুচি দেখতো, আমার মাই দুটো বড় হচ্ছে কিনা?' আমি অশ্লীল শব্দ শুনে লজ্জায় কোনো উত্তর দিতে পারিনি। তুই আমার লাজে রাঙা গম্ভীর চশমা চোখা মুখ দেখে বলেছিলি 'এখনই বয়স রে সুচি, এই বয়সেই মেয়েদের দুধ ওঠে'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, আমি সেদিন আড়ালে নিজের জামা নামিয়ে দেখেছিলাম নিজের সাদা সাদা মসৃন বুক। তোর দুটো বাড়ছে, আমার যেন পুরুষালি হয়ে রয়েছে একই রকম। বড্ড ঈর্ষা হল প্রথমবার তোর সাথে।
গভীর রাতে একদিন তোকে দেখেছিলাম প্যান্টির ভেতর হাত ঢুকিয়ে কিসব করতে। তোর চোখ মুখগুলো কেমন করছিল সেদিন। আমি ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছিলাম। একবিন্দু ঘুমোতে পারিনি সেইরাতে। সেই দিন ঠিক করেছিলাম, তুই অসভ্য মেয়ে, তোর সাথে আর মিশব না। কিন্তু আমরা যে ছিলাম গলায় গলায় বন্ধু। পারিনি, পরদিন আবার মিশে গেলাম তোর সাথে। তোর সৌজন্যে পরিচয় হল গফুর দা'র সাথে। ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েছিল গফুর দা'ই। আমি শিখিনি। কিন্তু তুই বেশ গফুর দা'র গায়ে পড়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলি। তোদের অমন করে দেখতে বড্ড অসভ্য ঠেকছিল আমার।
কিশোরী বয়সে তুই হলি পাকা গ্রামের মেয়ে। যেমন ডানপিটে, তেমন দুঃসাহসী, তেমনই বন্ধু। আর আমি হলাম শহরের বড়োলোকি পড়ুয়া বাবা-মায়ের ভালো মেয়ে। মোটা পাওয়ারের চশমার ওপর দিয়ে রাগী রাগী ভাবে দেখতাম বলে গফুর দা বলত 'ঝুমুর, তোর এই চাশমিশ বোন সুচিত্রার এত রাগ কেন রে?'
জয়ন্তের সাথে আমার প্রেম শুরু হবার আগেই তুই আর গফুর দা' প্রেমে মত্ত হয়ে পড়লি। আড়ালে আবডালে তোরা মাঝে মধ্যেই হারিয়ে যেতিস কেন বুঝিনি। একদিন দীঘির জলে নেমে আমি প্রায় ডুবুডুবু তুই গিয়ে টেনে আনলি আমাকে। গফুর দাও সেদিন জলে ছিল। তুই জানিস না ঝুমরি, মা সেদিন খুব বকেছিল। যে মা আলি চাচাকে নিজের বাড়ির কেয়ারটেকার নয় দেওরের মত দেখত, সেই মা বলেছিল 'সুচিত্রা, ঐ গফুরের সাথে তোদের এত মেলামেশা কেন রে? ওরা মু-সলমান জানিস না। কেয়ারটেকারের ছেলে। খবরদার মিশবি না।'