06-10-2024, 10:24 PM
সুচিকে ছাড়া জয়ন্তের চলবে না। সুচিত্রা তেতাল্লিশ, জয়ন্ত উনপঞ্চাশ। ফলত তাদের একুশ বছরের দাম্পত্যজীবনে একঘেয়েমি আছে। কিন্তু জয়ন্ত জানে সুচিত্রা তার স্ত্রী, তার ভালোমন্দ সবকিছুর দায়িত্ব সে একুশ বছর সামলেছে। সে তার সন্তান দু'টিকে পেটে ধরে লালন করেছে।
সুচি আর এক সপ্তাহ পর ওর মায়ের কাছে চলে যাবে। জয়ন্তের কাছে যা বেশ অসুবিধার। মিতার চলে যাওয়াটা একটা আবেগ শুধুমাত্র, সুচি তার স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী তার চলে যাওয়া মানে জয়ন্তের জীবনে চূড়ান্ত অসুবিধার। তার জীবনের খুঁটিনাটিতে সুচিই সব। তবু জয়ন্তের মনে অনেক বেশি অস্বস্তি মিতার জন্য হচ্ছে এখন। সুচি চলে যাবার বিষয়টায় তো সে প্রস্তুত ছিল। তাছাড়া সুচিত্রা কয়েক বছরের জন্য ট্রান্সফার নিয়েছে। সারাজীবনের জন্য নয়। কিন্তু মিতা এই বাড়ি বিক্রি হলে জয়ন্তের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
***
সুচিত্রা ছেলে দুটিকে নিয়ে বসেছে। ছোটটা ওর কোলে, বড়টাকে বললে---কাল তোকে বই খাতা কিনে দেব। পড়তে বসবি। দেখছিস না, দাদা কেমন পড়াশোনা করছে।
ছোটটা আধো আধো কথা বলে। এখনো সব কথা ঠিকঠিক বলতে পারে না। বড়টা বলল---মা, দাদা...ইকলেজ যায়...
---ওমা! বিল্টু তুই ইকলেজ যাস?
--খিচুড়ি ইকলেজ যাই। বই আছে আমার। আগডুম বাগডুম...
বিল্টু একের পর এক ছড়া শোনালো সুচিত্রাকে। সুচিত্রা বললে---একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ জানিস?
ছেলেটি গড়গড় করে একে চন্দ্র থেকে একশত পর্যন্ত বলে গেল। তারপর বলল---মা, নামতা বলব?
---হ্যা। বল।
ছেলেটা চমক দিয়ে নামতাও বলে গেল। সুচিত্রা বিস্মত হল, গফুর দা তো বিশেষ লেখাপড়া করেনি। ওর বউ নিজে মুখেই সুচিকে বলেছে সে সোনাগাছিতে বিক্রি হয়ে গেছিল কম বয়সে। ওখানেই দেহ বিক্রি করত। গফুর দা'র নাকি যাতায়াত ছিল ওখানে। তারপর একদিন হাসিনাকে বিয়ে করে আনে। বিল্টুকে সুচিত্রা বললে---এসব তোকে কে শিখিয়েছে?
বিল্টু দুরন্ত কায়দায় সুচির বসা সিঙ্গেল সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল ওর কাঁধ ধরে। তারপর বলল---খিচুড়ি ইকলেজের দিনিমণি।
সুচিত্রার কোলে এখন ছোটটি, বড়টিও কার্যত তার কোলে উঠে পড়েছে। অংশুর অবশ্য এই বাঁদরামো পছন্দ হচ্ছে না। সুচি হাসতে হাসতে বললে---কি করছিস বিল্টু-লাট্টু? চুল টানিস না!
বিল্টু সুচির গলা জড়িয়ে ধরে বললে---আব্বা...কোথায় মা?
'আব্বা' শব্দটি যে আসলে বাবা অর্থে মু-সলমানরা ব্যবহার করে অংশু জানে। সে বলল---তোর আব্বার নাম কি?
বিল্টু চুপ করে রইল। সুচি বললে---কি হল বিল্টু? আব্বার নাম কি দাদাকে বলে দে?
---গ-ফুর!
ছেলেটা বলতেই অংশু বললে---আর তোর মায়ের নাম?
---হা-সিনা!
অংশু বললে---তাহলে আমার মাকে মা বলছিস কেন? আমার মায়ের নাম তো হাসিনা না।
বিল্টু একটু লজ্জা পেল। তারপর সুচিত্রার হাসি হাসি মুখে চশমা ধরে টানাটানি করতে লাগলো। সুচি বললে---ওমা! চশমা ভেঙে যাবে যে? ছোটটি ততক্ষনে সুচির শাড়ির আঁচলের ভেতরে মুখ লুকিয়েছে। অংশু দেখল তার ফর্সা মায়ের গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে ফুটপাতের দুটি কালো কালো শিশু কি অনায়াসে, যেন এ' তাদেরই মা। সুচি এবার বিল্টু আর লাট্টু দুটোকে আদর করতে লাগলো। বিল্টু বললে---তোমার নাম সুচি, মা?
সুচি হেসে উঠল। জয়ন্ত ওদের সামনেই 'সুচি' নামে ডাকছে, তাতেই বড়টা জেনে গেছে। বিল্টু পুনরায় সুচিকে বলল---মা, আব্বা কোথায়?
---তোদের আব্বা তোদের ভালোবাসে? মারে না?
বিল্টু না সূচক মাথা নাড়লো। বললে---মাকে মারে।আব্বা মদ খেলে ভালো না। মাকে মারে।
অংশু লক্ষ্য করল মায়ের বিষন্ন মুখটা। মা তারপর ছেলেদুটোকে বললে---তোরা ইকলেজে যাবি?
ছোটটা বলল---মা, ই-কুল যা-বো।
তৎক্ষনাৎ মা ছোটটিকে আদরে জড়িয়ে ধরল। অংশু উঠে গেল ওখান থেকে। মায়ের এই ফুটপাতের দুটো শিশুর প্রতি এত আদিখ্যেতা ওর ভালো লাগছে না।
***
সুচি আর এক সপ্তাহ পর ওর মায়ের কাছে চলে যাবে। জয়ন্তের কাছে যা বেশ অসুবিধার। মিতার চলে যাওয়াটা একটা আবেগ শুধুমাত্র, সুচি তার স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী তার চলে যাওয়া মানে জয়ন্তের জীবনে চূড়ান্ত অসুবিধার। তার জীবনের খুঁটিনাটিতে সুচিই সব। তবু জয়ন্তের মনে অনেক বেশি অস্বস্তি মিতার জন্য হচ্ছে এখন। সুচি চলে যাবার বিষয়টায় তো সে প্রস্তুত ছিল। তাছাড়া সুচিত্রা কয়েক বছরের জন্য ট্রান্সফার নিয়েছে। সারাজীবনের জন্য নয়। কিন্তু মিতা এই বাড়ি বিক্রি হলে জয়ন্তের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
***
সুচিত্রা ছেলে দুটিকে নিয়ে বসেছে। ছোটটা ওর কোলে, বড়টাকে বললে---কাল তোকে বই খাতা কিনে দেব। পড়তে বসবি। দেখছিস না, দাদা কেমন পড়াশোনা করছে।
ছোটটা আধো আধো কথা বলে। এখনো সব কথা ঠিকঠিক বলতে পারে না। বড়টা বলল---মা, দাদা...ইকলেজ যায়...
---ওমা! বিল্টু তুই ইকলেজ যাস?
--খিচুড়ি ইকলেজ যাই। বই আছে আমার। আগডুম বাগডুম...
বিল্টু একের পর এক ছড়া শোনালো সুচিত্রাকে। সুচিত্রা বললে---একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ জানিস?
ছেলেটি গড়গড় করে একে চন্দ্র থেকে একশত পর্যন্ত বলে গেল। তারপর বলল---মা, নামতা বলব?
---হ্যা। বল।
ছেলেটা চমক দিয়ে নামতাও বলে গেল। সুচিত্রা বিস্মত হল, গফুর দা তো বিশেষ লেখাপড়া করেনি। ওর বউ নিজে মুখেই সুচিকে বলেছে সে সোনাগাছিতে বিক্রি হয়ে গেছিল কম বয়সে। ওখানেই দেহ বিক্রি করত। গফুর দা'র নাকি যাতায়াত ছিল ওখানে। তারপর একদিন হাসিনাকে বিয়ে করে আনে। বিল্টুকে সুচিত্রা বললে---এসব তোকে কে শিখিয়েছে?
বিল্টু দুরন্ত কায়দায় সুচির বসা সিঙ্গেল সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল ওর কাঁধ ধরে। তারপর বলল---খিচুড়ি ইকলেজের দিনিমণি।
সুচিত্রার কোলে এখন ছোটটি, বড়টিও কার্যত তার কোলে উঠে পড়েছে। অংশুর অবশ্য এই বাঁদরামো পছন্দ হচ্ছে না। সুচি হাসতে হাসতে বললে---কি করছিস বিল্টু-লাট্টু? চুল টানিস না!
বিল্টু সুচির গলা জড়িয়ে ধরে বললে---আব্বা...কোথায় মা?
'আব্বা' শব্দটি যে আসলে বাবা অর্থে মু-সলমানরা ব্যবহার করে অংশু জানে। সে বলল---তোর আব্বার নাম কি?
বিল্টু চুপ করে রইল। সুচি বললে---কি হল বিল্টু? আব্বার নাম কি দাদাকে বলে দে?
---গ-ফুর!
ছেলেটা বলতেই অংশু বললে---আর তোর মায়ের নাম?
---হা-সিনা!
অংশু বললে---তাহলে আমার মাকে মা বলছিস কেন? আমার মায়ের নাম তো হাসিনা না।
বিল্টু একটু লজ্জা পেল। তারপর সুচিত্রার হাসি হাসি মুখে চশমা ধরে টানাটানি করতে লাগলো। সুচি বললে---ওমা! চশমা ভেঙে যাবে যে? ছোটটি ততক্ষনে সুচির শাড়ির আঁচলের ভেতরে মুখ লুকিয়েছে। অংশু দেখল তার ফর্সা মায়ের গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে ফুটপাতের দুটি কালো কালো শিশু কি অনায়াসে, যেন এ' তাদেরই মা। সুচি এবার বিল্টু আর লাট্টু দুটোকে আদর করতে লাগলো। বিল্টু বললে---তোমার নাম সুচি, মা?
সুচি হেসে উঠল। জয়ন্ত ওদের সামনেই 'সুচি' নামে ডাকছে, তাতেই বড়টা জেনে গেছে। বিল্টু পুনরায় সুচিকে বলল---মা, আব্বা কোথায়?
---তোদের আব্বা তোদের ভালোবাসে? মারে না?
বিল্টু না সূচক মাথা নাড়লো। বললে---মাকে মারে।আব্বা মদ খেলে ভালো না। মাকে মারে।
অংশু লক্ষ্য করল মায়ের বিষন্ন মুখটা। মা তারপর ছেলেদুটোকে বললে---তোরা ইকলেজে যাবি?
ছোটটা বলল---মা, ই-কুল যা-বো।
তৎক্ষনাৎ মা ছোটটিকে আদরে জড়িয়ে ধরল। অংশু উঠে গেল ওখান থেকে। মায়ের এই ফুটপাতের দুটো শিশুর প্রতি এত আদিখ্যেতা ওর ভালো লাগছে না।
***