06-10-2024, 10:19 PM
(This post was last modified: 27-10-2024, 10:29 AM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জয়ন্তের মোবাইল ফোন বাজছে। মিতার নম্বরটা জয়ন্ত নির্মল ঘোষের নামেই সেভ করে রেখেছে। ডিউটিতে থাকলে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফোন হলেও ধরে না সে। যতই সে হোক তার পরকীয়া সঙ্গিনী মিতা ঘোষ। তাছাড়া মাথার ওপর সুচি এনে ফেলেছে উটকো ঝামেলা।
সুচি আসতেই জয়ন্ত বলল---বলেছিলাম ঝামেলা হবে। এখন ডেডবডি পরিবারের লোক ছাড়া হস্তান্তর হবে না।
সুচি বললে---গফুর দা, আসছে।
জয়ন্ত হতবাক হল। কিছুক্ষণ মধ্যেই লোকটাকে দেখতে পেল জয়ন্ত। সেই জঘন্য দাড়িগোঁফ ভরা নোংরা চেহারার দীর্ঘ ছ ফুটের লোকটা। প্রথম দিনের দেখা ঐ একই নোংরা জামা, আর কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা প্যান্ট। লোকটা বেশ নির্বিকার। ঠোঁটের ফাঁকে ধিকধিক করে বিড়ির আগুন জ্বলছে।
বউটা মরে গেছে। সারা শরীরটা যেন ফুলে গেছে মাত্র একদিনেই। সুচিত্রা আর জয়ন্ত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। গফুর বউটার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ন্ত খেয়াল করলে লোকটা পাষান। তা নাহলে নিজের বউ মরেছে চোখে একফোঁটা জল নেই!
জয়ন্ত গফুরকে দিয়ে সহি করিয়ে শবাবাহী গাড়ির একটা ব্যবস্থা করে দিল। সেই সঙ্গে লোকটার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললে---এটা আবার নেশায় খরচ করে দিও না। বউটার কবরের ব্যবস্থা করো।
জয়ন্ত টের পাচ্ছিল কাছের লোক না হলেও একজন মানুষের মৃত্যুতে সুচিত্রা বেশ থমথমে হয়ে আছে। জয়ন্ত বললে---চলো। এবার বাড়ি যাওয়া যাক।
সুচি স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল---তোমার ডিউটি শেষ?
---হুম্ম। অনেক আগেই। এ' উটকো ঝামেলার জন্যই এতক্ষণ আটকা পড়েছিলাম।
সুচি খানিক চুপ থেকে বলল---একটু পার্ক সার্কাস যাবে?
---কেন?
---গফুর দা'র ছেলেদুটোর কি হবে? মা মরা ছেলেগুলো যাবে কোথায়?
---সেটা ওদের বাপকে ভাবতে দাও।
সুচিত্রা সহমর্মিতার সাথে বলল---গফুর দা' কি সেই দায়িত্ব পালন করার লোক? চিরকালই মানুষটা উড়ু উড়ু করে ঘুরেছে।
---তাহলে তুমি এখন কি করবে? ঐ মাতাল লোকটার কোনো দায় নেই? তিন তিনটে বাচ্চাকে জন্ম করে ছেড়ে উড়ে বেড়াবে? ভাগ্যিস একটার বিয়ে হয়ে গেছে। ওটাও নাবলক বয়সে বিয়ে দিয়েছে কিনা কে জানে।
সুচিত্রা সে কথার জবাব না দিয়ে বলল---দেখো আমাদের এত বড় বাড়ি। ঐ দুটো বাচ্চা, কোথায় যাবে, কে রাখবে বলো?
জয়ন্ত বিরক্ত হয়ে বললে---সুচি, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? কোথাকার সব বস্তির বাচ্চাদের...বাড়িতে এনে রাখবে?
---আরে বাবা সারাজীবনের জন্য তো বলছি না। কিছু তো একটা ব্যবস্থা হলে পরে না হয়...
---সুচি, ভালো কথাই বলছি; উটকো ঝামেলা নিও না খামোকা।
---তোমার সবেতেই উটকো ঝামেলা। মানবিকতা বলে তোমার কি কিছু নেই?
---গফুরের কি কোনো আত্মীয় স্বজন নেই আর? ওর মেয়ে যে বিহারে থাকে?
সুচি বললে---দেখেছ না মা মরে গেছে দেখতেই এলো না। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে যার সাথে সে নাকি পাটনা রেল স্টেশনে হকারী করে। বুঝতেই পারছ, নিজেদের পেট সামলাতে পারে না, এই দুটো বাচ্চাকে কি করে সামলাবে।
---আর কেউ নেই গফুরের? মানে তোমার আলি চাচার আর কোনো ছেলে-মেয়ে নেই?
---আলি চাচার একটা মেয়ে আছে। জামিলা। সিনুর চেয়েও ছোট। ও'কে তাই আমি খুব একটা দেখিনি। মা বলেছিল ওকে নাকি খানাকুলে কোথায় বিয়ে দিয়েছে। এখন তার খোঁজ খবর তো কেউ দিতে পারবে না।
---কেন গফুর?
---গফুর দা, সেই যে বাড়ি ছেড়েছে, আর কোনোদিন বাড়ি মুখো হয়নি। আর বাড়ি বলতে তো ওদের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। গোবিন্দপুরে আমাদের বাড়িতেই থাকতো আলি চাচারা। আলি চাচা মারা গেছে বাবা মারা যাবার বছর দুই পরে। বরং ক'টা দিন থাক বাচ্চা দুটো এখানে। ওরা তো আলি চাচার বংশধর। আলি চাচা আমাদের দু বোনকে বিশেষ করে আমাকে প্রচন্ড ভালবাসতেন।
জয়ন্ত স্ত্রীর সাথে পেরে উঠল না। বললে---চলো বাড়িটাকে এতিমখানা বানাতে গফুরের ছানাগুলোকে তুলে নিয়ে আসি।
সুচি রাগ করে বললে---আমাদের ছেলে-মেয়ের যদি এমন হত তুমি পারতে?
---আমাদের ছেলে-মেয়ের বাপ এমন নয়, যে মাতলামি করে বেড়াবে, সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই।
ততক্ষনে জয়ন্ত নিজেই গাড়ি ঘুরিয়ে পার্ক সার্কাসের পথে এগোচ্ছে। সুচিত্রা যে কলকাতার রাস্তা তেমন বিষদে চেনে তা নয়। তবে সে খানিক পরেই বুঝতে পারলো জয়ন্ত ওদিকেই যাচ্ছে।
***
সুচি আসতেই জয়ন্ত বলল---বলেছিলাম ঝামেলা হবে। এখন ডেডবডি পরিবারের লোক ছাড়া হস্তান্তর হবে না।
সুচি বললে---গফুর দা, আসছে।
জয়ন্ত হতবাক হল। কিছুক্ষণ মধ্যেই লোকটাকে দেখতে পেল জয়ন্ত। সেই জঘন্য দাড়িগোঁফ ভরা নোংরা চেহারার দীর্ঘ ছ ফুটের লোকটা। প্রথম দিনের দেখা ঐ একই নোংরা জামা, আর কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা প্যান্ট। লোকটা বেশ নির্বিকার। ঠোঁটের ফাঁকে ধিকধিক করে বিড়ির আগুন জ্বলছে।
বউটা মরে গেছে। সারা শরীরটা যেন ফুলে গেছে মাত্র একদিনেই। সুচিত্রা আর জয়ন্ত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। গফুর বউটার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ন্ত খেয়াল করলে লোকটা পাষান। তা নাহলে নিজের বউ মরেছে চোখে একফোঁটা জল নেই!
জয়ন্ত গফুরকে দিয়ে সহি করিয়ে শবাবাহী গাড়ির একটা ব্যবস্থা করে দিল। সেই সঙ্গে লোকটার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললে---এটা আবার নেশায় খরচ করে দিও না। বউটার কবরের ব্যবস্থা করো।
জয়ন্ত টের পাচ্ছিল কাছের লোক না হলেও একজন মানুষের মৃত্যুতে সুচিত্রা বেশ থমথমে হয়ে আছে। জয়ন্ত বললে---চলো। এবার বাড়ি যাওয়া যাক।
সুচি স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল---তোমার ডিউটি শেষ?
---হুম্ম। অনেক আগেই। এ' উটকো ঝামেলার জন্যই এতক্ষণ আটকা পড়েছিলাম।
সুচি খানিক চুপ থেকে বলল---একটু পার্ক সার্কাস যাবে?
---কেন?
---গফুর দা'র ছেলেদুটোর কি হবে? মা মরা ছেলেগুলো যাবে কোথায়?
---সেটা ওদের বাপকে ভাবতে দাও।
সুচিত্রা সহমর্মিতার সাথে বলল---গফুর দা' কি সেই দায়িত্ব পালন করার লোক? চিরকালই মানুষটা উড়ু উড়ু করে ঘুরেছে।
---তাহলে তুমি এখন কি করবে? ঐ মাতাল লোকটার কোনো দায় নেই? তিন তিনটে বাচ্চাকে জন্ম করে ছেড়ে উড়ে বেড়াবে? ভাগ্যিস একটার বিয়ে হয়ে গেছে। ওটাও নাবলক বয়সে বিয়ে দিয়েছে কিনা কে জানে।
সুচিত্রা সে কথার জবাব না দিয়ে বলল---দেখো আমাদের এত বড় বাড়ি। ঐ দুটো বাচ্চা, কোথায় যাবে, কে রাখবে বলো?
জয়ন্ত বিরক্ত হয়ে বললে---সুচি, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? কোথাকার সব বস্তির বাচ্চাদের...বাড়িতে এনে রাখবে?
---আরে বাবা সারাজীবনের জন্য তো বলছি না। কিছু তো একটা ব্যবস্থা হলে পরে না হয়...
---সুচি, ভালো কথাই বলছি; উটকো ঝামেলা নিও না খামোকা।
---তোমার সবেতেই উটকো ঝামেলা। মানবিকতা বলে তোমার কি কিছু নেই?
---গফুরের কি কোনো আত্মীয় স্বজন নেই আর? ওর মেয়ে যে বিহারে থাকে?
সুচি বললে---দেখেছ না মা মরে গেছে দেখতেই এলো না। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে যার সাথে সে নাকি পাটনা রেল স্টেশনে হকারী করে। বুঝতেই পারছ, নিজেদের পেট সামলাতে পারে না, এই দুটো বাচ্চাকে কি করে সামলাবে।
---আর কেউ নেই গফুরের? মানে তোমার আলি চাচার আর কোনো ছেলে-মেয়ে নেই?
---আলি চাচার একটা মেয়ে আছে। জামিলা। সিনুর চেয়েও ছোট। ও'কে তাই আমি খুব একটা দেখিনি। মা বলেছিল ওকে নাকি খানাকুলে কোথায় বিয়ে দিয়েছে। এখন তার খোঁজ খবর তো কেউ দিতে পারবে না।
---কেন গফুর?
---গফুর দা, সেই যে বাড়ি ছেড়েছে, আর কোনোদিন বাড়ি মুখো হয়নি। আর বাড়ি বলতে তো ওদের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। গোবিন্দপুরে আমাদের বাড়িতেই থাকতো আলি চাচারা। আলি চাচা মারা গেছে বাবা মারা যাবার বছর দুই পরে। বরং ক'টা দিন থাক বাচ্চা দুটো এখানে। ওরা তো আলি চাচার বংশধর। আলি চাচা আমাদের দু বোনকে বিশেষ করে আমাকে প্রচন্ড ভালবাসতেন।
জয়ন্ত স্ত্রীর সাথে পেরে উঠল না। বললে---চলো বাড়িটাকে এতিমখানা বানাতে গফুরের ছানাগুলোকে তুলে নিয়ে আসি।
সুচি রাগ করে বললে---আমাদের ছেলে-মেয়ের যদি এমন হত তুমি পারতে?
---আমাদের ছেলে-মেয়ের বাপ এমন নয়, যে মাতলামি করে বেড়াবে, সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই।
ততক্ষনে জয়ন্ত নিজেই গাড়ি ঘুরিয়ে পার্ক সার্কাসের পথে এগোচ্ছে। সুচিত্রা যে কলকাতার রাস্তা তেমন বিষদে চেনে তা নয়। তবে সে খানিক পরেই বুঝতে পারলো জয়ন্ত ওদিকেই যাচ্ছে।
***