Thread Rating:
  • 41 Vote(s) - 2.56 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প
#83
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো স্বাভাবিক কারণেই। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে প্রথমেই দেখা হলো মৌপিয়ার সঙ্গে। মেয়েকে কলেজে দিতে যাচ্ছে। সুপ্রভাত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো, রাতে ঘুমটুম হয়েছিলো ভালো? 


তমাল বললো, একদম! দারুণ ঘুমিয়েছি।

মৌপিয়া বললো, না, আসলে কাল অনেক রাত পর্যন্ত তোমাদের ঘর থেকে কথাবার্তার আওয়াজ আসছিলো তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।

সতর্ক হয়ে গেলো তমাল। সর্বনাশ! মৌপিয়াই কি আড়ি পেতে কাল রাতে করিডোরের আলো জ্বেলে রেখে গেছিলো? মুখটা যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো, হুম, গার্গী আর অদিতির অনেকদিন পরে দেখা হয়েছে তো, তাই আমার ঘরেই আড্ডা মারছিলো।

মাথা ঝাঁকিয়ে মৌ বললো, হ্যাঁ সে তো হতেই পারে। এরকম পুনর্মিলনে আওয়াজ একটু বেশিই হয়। আচ্ছা তুমি ব্রেকফাস্ট করেছো? যাও ডাইনিংয়ে দুজনই আছে। আমি শিখাকে কলেজে দিয়ে আসি...বলে মেয়েকে নিয়ে নেমে গেলো।

মৌপিয়া কি কোনো ইঙ্গিত দিয়ে গেলো? কাল রাতের ঘটনা জানতে পেরেছে? জানলেও অসুবিধা কিছু নেই, নিজের স্বার্থেই পাঁচকান করবে না কথাটা। ভাবতে ভাবতে নেমে এলো দোতলায়।

সিঁড়ির মুখেই দেখা হলো বন্দনার সাথে। ডাইনিং থেকে বেরিয়ে এলো। হাতে প্লেটে ঢাকা দেওয়া রয়েছে কিছু একটা। বোধহয় যাবে মধুছন্দা দেবীর ঘরে। তমালকে দেখেই একটা দুষ্টমি ভরা হাসি দিয়েই মুখে হাত চাপা দিয়ে দ্রুত চলে গেলো।

সবার ব্যবহার দেখে তমালের মনে হচ্ছে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ কালকের গোপন অভিসারের কথা জেনে গেছে। যার সাথেই দেখা হচ্ছে সেই যেনো ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছে, "শ্যাম তোর গোপন খবর জানতে বাকী নাই!" অবশ্য এসব তমালের মনের ভুলও হতে পারে।

ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখলো দুই বন্ধু সামনে চায়ের কাপ নিয়ে গভীর গোপন আলোচনায় ব্যস্ত। তমাল ঘরে ঢুকেই তাদের মুখেও কি সেই বাঁকা হাসি দেখলো! 

গুড মর্নিং তমালদা... গার্গীই প্রথম উইশ করলো, সাথে যোগ দিলো অদিতি। তমালও উইশ করে চেয়ার টেনে বসলো। বললো, তোমাদের ব্রেকফাস্ট সারা হয়ে গেছে দেখছি?

অদিতি বললো, তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই বিরক্ত করিনি। এক্ষুনি দিচ্ছে তোমাকে। বলে, মালতি, তমালদার ব্রেকফাস্টটা দাও, বলে একটা হাঁক ছাড়লো।

তমাল বললো, তোমরা এতো জলদি উঠে পড়েছো যে? গার্গী বললো, সাড়ে আটটা বাজে তমালদা, জলদি কোথায়? রাহুলদা খেয়ে ফ্যাক্টরিতে চলেও গেছে।

তমাল একটু অবাক হয়ে বললো, এতো সকালে? নিজের ফ্যাক্টরিতে মালিক এতো জলদি যায়, প্রথম দেখলাম। 

অদিতি বললো, আজ দাদা আমাদের হীরাপুর ফ্যাক্টরিতে যাবে। বার্নপুরেরটায় গেলে একটু দেরি করে যায়। হীরাপুরে যেতে একটু সময় লাগে, তাই জলদি বের হয়।

মালতি নামের মেয়েটা ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলো। বড়লোক বাড়ির একঘেয়ে খাবার... বাটার টোস্ট, ডিমের পোচ আর ফলের রস! বিরক্তিকর। দেখেই তমালের খাবার ইচ্ছা চলে গেলো। ব্যাজার মুখ নিয়ে আড় চোখে একবার মালতির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো সেও ফিচেল হাসি দিচ্ছে কি না। দেখে খুশি হলো যে তার মুখ তমালের এই মুহুর্তের মুখের চেয়েও ব্যাজার।

আমরাও তোমাদের ফ্যাক্টরি দেখতে যেতে পারি না? খেতে খেতে প্রশ্ন করলো তমাল। 

এটা কোনো কথা হলো? কেন যেতে পারবে না? যখন বলবে নিয়ে যাবো... হেসে বললো অদিতি।

গার্গী বললো, আজ রাতে তো আমার ট্রেন, গেলে এখনি বেরিয়ে পড়ি চল। বিকেলে আর বেরোবো না কোথাও। 

তমাল বললো, সেই ভালো। এখন ফ্যাক্টরি ঘুরে আসি, বিকেলে তোমরা দুই বন্ধু গল্প কোরো, আমি মদন কে নিয়ে একবার রাজীবকে দেখে আসবো।

অদিতি বললো, মদন কেন? ও চিনবে না, আমি ঘনশ্যাম কাকা বা বিনোদ কে বলে দেবো নিয়ে যাবে।


সাড়ে দশটা নাগাদ অদিতি, গার্গী আর তমাল নীচে নেমে এলো। অদিতি বিনোদ নামের একটা ছেলেকে ফরচুনার গাড়িটা বের করতে বললো। ঘনশ্যাম অদিতির পিসির ড্রাইভার। মধুছন্দা দেবী বাইরে কোথাও গেলে ঘনশ্যামই নিয়ে যায়। এছাড়া আরও দুজন ড্রাইভার আছে অদিতিদের। একজন হলো প্রসাদ, যে সাধারণত অদিতির দাদার গাড়িটা চালায়। অন্যজন বিনোদ, যে বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে প্রয়োজন হলে বাইরে যায়। ঘনশ্যাম এই মুহুর্তে মৌপিয়াকে নিয়ে শিখাকে কলেজে ছাড়তে গেছে।

তিনজনে চললো অদিতিদের বার্নপুর ফ্যাক্টরির দিকে। অদিতিদের বাড়ি থেকে সৃষ্টিনগর রোড ধরে এগিয়ে একটা শার্প ইউ-টার্ন নিয়ে সেণ্ট্রাল পার্কের পাশ দিয়ে গিয়ে প্রথমে বিবেকানন্দ সরণি। সেখান থেকে আসানসোল চিত্তরঞ্জন হাইওয়ে ক্রশ করে বার্নপুর রোড। বার্নপুর ক্লাবের পাশ দিয়ে ঘুরে বাসস্ট্যান্ডকে বা'য়ে রেখে চার্চরোডে অদিতিদের ফ্যাক্টরি।

বার্নপুরে ঢোকার পরে বেশ ট্রাফিক জ্যাম পেলো ওরা। ফরচুনারের স্বর্গীয় আরামে পথের ক্লান্তি অনুভব করলো না তমালরা,তবে আসতে চল্লিশ মিনিট মতো সময় লাগলো। বিশাল জায়গা জুড়ে ফ্যাক্টরি। একটা অংশে কারখানা, অন্য অংশটায় অফিস বিল্ডিং। অদিতি এই অফিসে কাজ শুরু করেছে কিছুদিন হলো, তাই ওরা তার কেবিনে গিয়েই বসলো। 

বড়সড় এসি কেবিন। একটা অ্যাটাচড রেস্টরুম ও আছে। কেবিনটা খুব সুন্দর করে সাজানো। ফ্যাক্টরিতে ঢুকেই লোহার সাথে লোহার সংঘর্ষের আওয়াজ এবং যন্ত্র দানবের হুংকার টের পেয়েছিলো তমাল, কিন্তু এই কেবিন একদম শব্দ মুক্ত।

তমাল কেবিনের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। অদিতি বেল বাজাতেই একজন অল্প বয়সী ছেলে এসে দাঁড়ালো। তাকে কিছু অর্ডার দিলো অদিতি। তমাল ততক্ষণে রেস্ট রুমে চলে এসেছে। গার্গী আর অদিতিও ঢুকলো সেই রুমে।

হুম, ব্যবস্থা বেশ পাকা পোক্তই করা আছে। এখানেও বেশ খেলাধুলা করার দারুণ পরিবেশ রয়েছে, কি বলো গার্গী। কালকের রাতের একটা রিপিট ব্যাটেল হবে নাকি? বলেই ওদের দিকে ফিরে চোখ টিপলো তমাল।

গার্গী সাথে সাথে কামিজ খোলার অভিনয় করে বললো, হয়ে যাক্‌, আমার আপত্তি নেই। অদিতি ভীষণ লজ্জা পেয়ে বললো, ধ্যাৎ! তোমরা ভীষণ ফাজিল!

বলতে বলতে তিনটে কাসার গ্লাসে ঘন লস্যি নিয়ে হাজির হলো ছেলেটা। তিনজনে মিলে লস্যির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে খুনসুটি করছিলো, তখনি দরজায় নক্‌ হলো। ভিতরে ঢুকলো অদিতিদের বয়সী একটি মেয়ে। তমাল কিছুক্ষণ চোখ ফেরাতে পারলোনা সেই ব্যক্তিত্বময়ী যুবতীর দিক থেকে। ব্লু জিন্স আর লেমন ইয়েলো টি শার্টে তাকে হলিউডের কোনো প্রথম সারির অভিনেত্রী মনে হচ্ছিলো। শরীর গড়পড়তা বাঙালিদের থেকে অনেকটাই অন্য রকম। রীতিমতো যত্ন করা শরীর। এ মেয়ে ব্লু ফিল্মের দুনিয়ায় গেলে এক নম্বর জায়গায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতো না নিশ্চিত। নিজের এই সৃষ্টিছাড়া অশালীন চিন্তায় নিজেই লজ্জা পেলো তমাল।

হাই রিনি, এসো ভিতরে এসো, হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানালো অদিতি।

রিনি ভিতরে এসে বললো, তুমি এসেছো শুনলাম, তাই দেখা করতে এলাম। তোমার দাদা তো কিছু বলেনি কাল তোমাদের আসার ব্যাপারে? সারপ্রাইজ ভিজিট নাকি? রসিকতার ঢঙ্গে বললো রিনি নামের মেয়েটা।

অদিতি বললো, আরে না না, এরা আমার বন্ধু। ও গার্গী, আমরা একসাথে পড়াশুনা করেছি, আর এ হলো তমালদা। ফ্যাক্টরি দেখতে এসেছে। আর দাদা জানেনা আমরা আজ আসবো। সে তো হীরাপুরে গেছে। দাঁড়িয়ে কেন, বোসো!

রিনি বললো, না না, কাজ ফেলে এসেছি, তোমরা গল্প করো। তিওয়ারি কে বলে দিচ্ছি সে ঘুরিয়ে দেখাবে। সবার সাথে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে গেলো রিনি।

এই গ্রীক দেবীটি কে, জানতে পারি? প্রশ্ন করলো তমাল।

হুম সে তো জানতেই হবে। যে ভাবে গিলছিলে মেয়েটাকে! লজ্জাও নেই তোমার... অনুযোগ করলো গার্গী।

খিলখিল করে হেসে অদিতি বললো, গিলে লাভ নেই, আগেই অন্য কেউ গিলে বসে আছে। ও হলো রিনি অরোরা। দাদার সেক্রেটারী কাম পি.এ কাম প্রিয়া কাম এভরিথিং। পাঞ্জাবি, তবে দু পুরুষ বেঙ্গলে আছে। 

তমাল বললো, যাহ্‌! খুবই খারাপ খবর শোনালে! আমি তো তোমাদের বলতে যাচ্ছিলাম প্রায় যে রেস্টরুমের চাবিটা আমাকে দিয়ে তোমরা বাড়ি চলে যাও, আমি বিকালে ফিরবো।

গার্গীর একটা চিমটি খেয়ে আউচ....! বলে চেঁচিয়ে উঠলো তমাল। তারপর ব্যাথার জায়গায় হাত ঘষতে ঘষতে বললো, হুম বাঙালি যে নয়, সেটা কথার টানে পরিস্কার বোঝা যায়। আর সাধারণ কর্মচারী যে নয়, সেটা বস্‌ বা স্যার না বলে 'তোমার দাদা' বলাতেও স্পষ্ট। 

কতোদিন হলো রিনি এখানে কাজ করছে? আবার প্রশ্ন করলো তমাল।

অদিতি জানালো, তা প্রায় বছর দেড়েক। দাদার সাথে ব্যাঙ্গালোরে একটা ফেস্ট এ আলাপ। কাজ খুঁজছিলো। দাদা এখানে কাজে যোগ দেবার পরে ডেকে নেয়। সেই থেকেই দায়িত্বের সাথে দাদা এবং ফ্যাক্টরি দুটোই সামলাচ্ছে।

আচ্ছা রাজীব ওখানে আসতো নিয়মিত? নাকি হীরাপুর ফ্যাক্টরিতে? জানতে চাইলো তমাল।

দুটোটেই ভিজিট করতে যেতে হোতো তাকে। কেন বলোতো? অবাক হয়ে জানতে চাইলো অদিতি।

তমাল বললো, রাজীবের উপর তোমার দাদার রাগের কারণটা খুঁজছি। কারণের একটা দিক তো এক্ষুণি নজরে এলো, কিন্তু অপর দিকটা জানি না। সেটাই খোঁজার চেষ্টা করছি। রাজীব রিনির দিকেও হাত বাড়ায়নি তো?

রাজীবের যা চরিত্র, তাতে হাত না বাড়ানোটাই অস্বাভাবিক। তবে অফিসে দাদার উপস্থিতিতে সে সাহস পেয়েছে বলে মনে হয়না। কিছুক্ষণ ভেবে জানালো অদিতি।

তিওয়ারি বলে একজন কর্মচারী তমালদের ফ্যাক্টরিটা ঘুরিয়ে দেখালো। বিভিন্ন লোহার যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে প্রচন্ড শব্দ করে। তমাল বা গার্গীর এতো যন্ত্রপ্রীতি নেই যে সেই শব্দ-যন্ত্রণা সহ্য করে বেশিক্ষণ প্রযুক্তির প্রেমে হাবুডুবু খাবে। জলদি আবার অফিস বিল্ডিংয়ে ফিরে এলো ওরা। ফেরার পথে তমাল তিওয়ারির কানের কাছে মুখ নিয়ে জানালো, রাজীব বাবুর অফিসে একবার নিয়ে চলুন।

কেবিনের ছোট কাচের জানালার পর্দা সরানোই ছিলো। দূর থেকেই তমাল লক্ষ্য করলো ভিতরে আলো জ্বলছে। আরও একটু কাছে যেতেই তমাল দেখলো ভিতরে বসে আছে রিনি। একটু অবাক হলো, তারপর অদিতি আর গার্গীকে অদিতির কেবিনে ফিরে যেতে বলে তমাল এগিয়ে গেলো। 


ঢুকতে গিয়ে দেখলো দরজাটা ভিতর থেকে লক করা। নক্‌ করে ভিতরে ঢোকার পারমিশন চাইলো তমাল। দরজা খুলতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই দেরি হলো। তমালকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে রিনি। বললো, আপনি? অদিতি কোথায়?

তমাল ভালোমানুষের মতো শ্রাগ করে বললো, জানিনা। আমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে দুই বন্ধু কোথায় যেন গেলো। দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন চোখে পড়লো আপনি বসে আছেন। তাই ভাবলাম.... কথা শেষ করলো না তমাল।

আসুন, ভিতরে আসুন, দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো রিনি। তমাল ভিতরে ঢুকে চারদিকটা দেখে নিয়ে বললো, এটা আপনার কেবিন? সেক্রেটারি বস্‌ এর কেবিন থেকে এতো দূরে কেন? 

রিনি বললো, না না, এটা আমার কেবিন না। এটা রাজীব বাবুর কেবিন। উনি তো আসছেন না, তাই একটা ফাইল খুঁজছিলাম। 

তমাল না জানার ভান করে বললো, রাজীব... মানে ওই যে ছেলেটির একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে অদিতিদের বাড়িতে? 

মাথা নাড়লো রিনি।

চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে তমাল বললো, কি অদ্ভুত কান্ড বলুন! কে যে ছুরি মারলো ছেলেটাকে! আজকাল অল্প বয়সী ছেলেরা অনেক আজেবাজে কাজে জড়িয়ে পড়ে। কতো যে শত্রু থাকে তাদের। সেরকমই কিছু ছিলো হয়তো!

রিনির মুখ কঠিন হয়ে উঠলো। বললো, না রাজীব সেরকম ছেলে নয়। ওর এসব বাজে বন্ধু টন্ধু নেই। খুব ভালো ছেলে সে।

তমাল কিছুক্ষণ রিনির চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, আপনি প্রথমে রাজীব বাবু বলেছিলেন না?

একটু থতমত খেয়ে রিনি বললো, না মানে অফিসে কলিগদের আপনি বলাই তো সৌজন্য! 

সেই সৌজন্য সরে গেলো কেন? রাজীব আপনার পূর্বপরিচিত? প্রশ্ন করলো তমাল।

এবারে রেগে গেলো রিনি। বললো, দেখুন আপনি অদিতির বন্ধু, আমার বসের গেষ্ট। কিন্তু এসব ব্যাপার নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা করতে যাবো কেন? আপনি বোধহয় ওদের জন্য অদিতির কেবিনে গিয়ে অপেক্ষা করলেই ভালো করবেন।

তমাল রিনির রুক্ষ ব্যবহারকে পাত্তা না দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলো। তারপর থেমে থেমে বললো, ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন, আই অ্যাম দ্য অফিশিয়ালি অ্যাপয়েন্টেড ইনভেস্টিগেটর অফ দ্যাট অ্যাটেম্পটেড মার্ডার কেস। সো ইট উড বি বেটার টু কোওপারেট উইথ মি ফর দ্য সেক অফ দ্য ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ইয়োর ওন সেফটি। 

একটু নরম হলো রিনি। এসি রুমেও একবার হাতের তালু দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে বললো, কিন্তু আমি তো এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করবো?

আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার জবাব দিলেই যথেষ্ট হবে। বাকীটা আমার উপরে ছেড়ে দিন। রাজীব আপনার পূর্বপরিচিত?  জিজ্ঞাসা করলো তমাল।

মাথা নাড়লো রিনি। বললো, হ্যাঁ, ব্যাঙ্গালোরে আমরা একসাথেই পড়াশুনা করতাম। সেখানেই বন্ধুত্ব হয় আমাদের।

আর রাহুল বাবুর সাথে পরিচয়? সেটা নিছকই কাকতালীয় ব্যাপার? আবার প্রশ্ন করলো তমাল। রিনি চুপ করে আছে দেখে
তমাল বললো, দেখুন মিস রিনি, সত্যিটা জানতে আমার বেশিক্ষণ সময় লাগবে না, তাই বেটার আপনিই আমাকে বলুন, অনেক সময় বাঁচবে।

জলের গ্লাসটা তুলে নিয়ে দু ঢোক জল খেলো রিনি। তারপরে বললো, না কাকতালীয় নয়। রাহুল এই ফ্যাক্টরিতে ফিরে আসার আগেই রাজীব এখানে কাজ করতো। রাহুল আর আমি দুজনেই তখনো ব্যাঙ্গালোরে। রাজীব আমাকে জানায় রাহুলের সাথে যোগাযোগ করতে। সেই মতো প্ল্যান করে আমি রাহুলের সাথে আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা করি। তারপর পরিকল্পনা মতো তাকে একটা কাজের কথা বলতে সে এখানে ডেকে নেয়।

তমাল বললো, চমৎকার! তাহলে এসবই প্রি-প্ল্যানড ছিলো। কিন্তু আপনাদের উদ্দেশ্যটা কি? শুধুই চাকরি পাওয়া? পুরানো প্রেমিকের কাছে থাকা, নাকি অন্য কিছু?

রিনি ঘাবড়ে গিয়ে বললো, না না অন্য কিছু কেন হবে? একটা চাকরি আমার দরকার ছিলো। তাই রাজীব প্ল্যানটা করে।

কিন্তু জিগ-স্য পাজেলের সবগুলো টুকরো যে মিলছে না মিস রিনি? বেশ, আপনি চাকরি পেলেন, তার পরেও রাহুলের সাথে ঘনিষ্ঠতা চালিয়ে গেলেন কেন? রাজীব আপনার পূর্বপরিচিত, একথা সবার কাছে লুকিয়ে গেলেন কেন? আজ রাহুল অফিসে নেই, তবুও আপনি রাজীবের কেবিনে কেন? বিশেষ করে রাজীব তার কাজ যখন মুখার্জি হাউস থেকেই বেশি করতো? এতো গুলো কেন এর উত্তর না জানলে যে আপনাদের মহা বিপদ মিস্‌ রিনি!

রিনি এবার ভীষণ ঘাবড়ে গেলো। উঠে তমালের পাশে এসে তার হাত চেপে ধরলো। বললো, তমাল বাবু, চাকরিটা আমার ভীষণ দরকার। রাজীব কি প্ল্যান করছিলো আমি জানি না। প্লিজ আপনি রাহুলকে এসব কথা বলবেন না। তার বদলে আপনি যা চাইবেন, আমি করতে রাজি.. বলেই তমালের হাতটা তুলে নিজের বুকে চেপে ধরলো।

তমাল হাতটা ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো, আমি এতো সহজে বিক্রি হইনা মিস রিনি। সব সত্যি বললেই ভালো করতেন। যাই হোক আবার দেখা হবে। নমস্কার।

হতভম্ব রিনিকে রাজীবের কেবিনে রেখে বাইরে বেরিয়ে এলো তমাল। তারপর ফিরে চললো অদিতির কেবিনের দিকে।

তাকে ঢুকতে দেখেই গার্গী বললো, নিরিবিলিতে রিনির সাথে এতোক্ষণ কি রিনিঝিনি করে এলে শুনি?
Tiger
[+] 3 users Like kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 30-09-2024, 02:48 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)