29-09-2024, 10:35 PM
সুচি বাড়ি ফিরল সন্ধে সাড়ে সাতটায়। সন্ধের দিকটা বৃষ্টি কমেছে। জয়ন্তকে ছবি সন্ধেবেলা এক কাপ চা দিয়েছিল। সুচিত্রা বাথরুম থেকে বেরোলে জয়ন্তকে বলল---কই গো তুমি চা খাবে?
অংশু পড়ার ঘরে বসেছিল। পড়ায় তার কিছুতেই মন বসছে না। সে কি দিদিকে ফোন করে ব্যাপারটা বলবে, বলবে বাবা আর মিতা কাকিমার এফেয়ার চলছে? দিদি অংশুর কাছে বন্ধুর মত।
তবে পিউ একটু বেশিই মডার্ন। ওর এদেশের কিছুই ভালো লাগে না। অংশুর যেমন দাদুর বাড়ির গাছ-গাছালি, ঝিল, গ্রাম্য পরিবেশ ভালো লাগে, পিউর তা নয়। পিউ সিনু মাসির মত বিদেশ চলে যেতে চায়। ওখানেই সেটল হতে চায়। এজন্যই ওর আইআইটিতে ভর্তি হওয়া। ও' হয়ত এই বিষয়টাতে আমলই দেবে না।
মা আর বাবা একসাথে চা খাচ্ছে। চারুশীলা মাসির বাড়ির গল্প মা শোনাচ্ছে বাবাকে। বাবাও মনোযোগ দিয়ে শুনছে। যেভাবে অংশু বাবা-মাকে দেখেছে, তেমনই প্রতিদিনের মত। বাবাকে দেখে একবারও মনে হল না বাবা মাকে ঠকাচ্ছে। আর বেচারা মা জানেই না তার স্বামী একজন চিটার। অংশুর বড্ড দুঃখ হচ্ছে মায়ের জন্য। রাগ হচ্ছে মিতা কাকিমার ওপর। এভাবে তার বাবা-আর মায়ের মাঝে উপদ্রুতের মত এসে যাওয়ায়।
+++++
পর্ব: ৯
হাসপাতাল থেকে ফিরে স্নান সেরে লম্বা টান টান হয়ে সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে জয়ন্ত। অংশু পড়ার ঘরে। ড্রয়িং রুমের ফ্যান ঘোরার শব্দ অবিরাম হতে হতে শ্রবণযন্ত্র যেন তার গুরুত্ব দেয় না আর। তবে একটা শব্দ জয়ন্তের কানে ঠেকছে এই নিস্তব্ধতায়; সেটা দেয়াল ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণায়মান টিকটিক শব্দ। রাত্রি আটটা হল। সুচি ফেরেনি। কলেজ থেকে বেরিয়ে নাকি বাড়িতে টেলিফোন করে জানিয়েছে অংশুকে ফিরতে দেরী হবে তার। কোথায় গেছে বলেও যায়নি সে।
জয়ন্ত এবার আড়মোড়া ভেঙে উঠল, ছেলে হাঁক দিয়ে বললে---অংশু, দেখতো তোর মাকে ফোন করে। কখন আসবে।
অংশু মাকে টেলিফোন করতে পড়ার টেবিল ছেড়ে ওঠার আগেই জয়ন্তের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সুচিত্রা ফোন করেছে। জয়ন্ত ফোন ধরার আগে ছেলেকে বললে---থাম। তোর মা ফোন করেছে।
অংশু থেমে গেল। জয়ন্ত ফোন ধরতেই সুচি বললে---কই গো, তুমি বাড়িতে?
---হ্যা। কেন? এত দেরি...
---শোনো না, একটা সমস্যা হয়েছে।
---কি আবার?
সুচিত্রার চারপাশে আরো দু' একটি গলা। ও' বলল---তোমাকে বলেছিলাম না, গফুর দা'র কথা?
গফুর নামটা শুনেই গা জ্বলে উঠল জয়ন্তের। ঐ নোংরা ফেরেব্বাজ মাতালটার সম্পর্কে কি বলতে সুচিত্রা ফোন করল। জয়ন্ত ও'কে থামিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল---তুমি বাড়ি কখন আসবে?
---ধৈর্য্য ধরো লক্ষীটি। গফুর দা'র স্ত্রী খুব অসুস্থ, ক্যানসারের পেশেন্ট। ওকে হাসপাতালে দেওয়ারও ওদের ক্ষমতা নেই। আজ বিকেল থেকে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। কি করা যায় বলো তো?
---তুমি জানলে কি করে? মানে তুমি কি ঐ গফুরের বাড়িতে নাকি?
জয়ন্ত বুঝতে পারলো, অন্যে যাতে না শুনতে পায় সুচি একটু গলা নামিয়ে যেন বললে---আঃ, একটা গরীব মানুষ বিপদে পড়েছে। তাকে সাহায্য না করে তুমি কেমন কথা বলছ? আর গফুর দা তো আমার অপরিচিত কেউ নয়।
জয়ন্ত থমকে গেল। বলল---কোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে বলো।
---আচ্ছা, আমি মেয়েমানুষ হয়ে সেসব পারি?
---তুমি করতে যাবে কেন? ঐ গফুরকে বলো, কাছে পিঠে যে কোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে।
জয়ন্ত বুঝতে পারলো সুচিত্রার বোধ হয় কথাটা একেবারেই মনঃপুত হল না। বললে---সত্যি, তোমার কোনো মনুষত্ব আছে? একটা মহিলা তার ছোট বাচ্চা আছে, তাকে সাহায্য করতে পারা যায় না?
---আমি কি করতে পারি বলো?
সুচিত্রা বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিল। জয়ন্ত পড়ল একটা বিড়াম্বনায়। সুচি জেদের কাছে হার মানবে না, সেটা জয়ন্ত জানে। এই রাতে সুচি যদি গায়ে টেনে ঝামেলায় পড়ে, তাহলে আরেক সমস্যা। অংশু পাশ থেকে বললে---কি বলল মা?
হাসি হাসি মুখ করে জয়ন্ত বললে---তোর মা এখন সমাজসেবা করতে ব্যস্ত। কে গফুর, তোর দাদুর বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে, তার বউ নাকি অসুস্থ। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
অংশু 'গফুর' নামটা শুনে অবাক হল। এই 'গফুর' সেই নয় তো ঝুমুর মাসির প্রেমিক। জয়ন্ত দ্বিধায় পড়ে আবার ফোন করল সুচিত্রাকে। এবার সুচি ফোন ধরেই কোনো রাগ না দেখিয়ে বললে---তোমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা যায় কিনা দেখো না?
---সরকারি হাসপাতাল, যে কেউ ভর্তি হতে পারে। হোক, তবু আমি ফোন করে দিচ্ছি।
---তুমি একটু আসতে পারবে? এই রাত-বিরেতে আমি মেয়েমানুষ...
জয়ন্ত গররাজি থাকলেও অবশেষে বললে---কোথায় আছো তুমি?
***
অংশু পড়ার ঘরে বসেছিল। পড়ায় তার কিছুতেই মন বসছে না। সে কি দিদিকে ফোন করে ব্যাপারটা বলবে, বলবে বাবা আর মিতা কাকিমার এফেয়ার চলছে? দিদি অংশুর কাছে বন্ধুর মত।
তবে পিউ একটু বেশিই মডার্ন। ওর এদেশের কিছুই ভালো লাগে না। অংশুর যেমন দাদুর বাড়ির গাছ-গাছালি, ঝিল, গ্রাম্য পরিবেশ ভালো লাগে, পিউর তা নয়। পিউ সিনু মাসির মত বিদেশ চলে যেতে চায়। ওখানেই সেটল হতে চায়। এজন্যই ওর আইআইটিতে ভর্তি হওয়া। ও' হয়ত এই বিষয়টাতে আমলই দেবে না।
মা আর বাবা একসাথে চা খাচ্ছে। চারুশীলা মাসির বাড়ির গল্প মা শোনাচ্ছে বাবাকে। বাবাও মনোযোগ দিয়ে শুনছে। যেভাবে অংশু বাবা-মাকে দেখেছে, তেমনই প্রতিদিনের মত। বাবাকে দেখে একবারও মনে হল না বাবা মাকে ঠকাচ্ছে। আর বেচারা মা জানেই না তার স্বামী একজন চিটার। অংশুর বড্ড দুঃখ হচ্ছে মায়ের জন্য। রাগ হচ্ছে মিতা কাকিমার ওপর। এভাবে তার বাবা-আর মায়ের মাঝে উপদ্রুতের মত এসে যাওয়ায়।
+++++
পর্ব: ৯
হাসপাতাল থেকে ফিরে স্নান সেরে লম্বা টান টান হয়ে সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে জয়ন্ত। অংশু পড়ার ঘরে। ড্রয়িং রুমের ফ্যান ঘোরার শব্দ অবিরাম হতে হতে শ্রবণযন্ত্র যেন তার গুরুত্ব দেয় না আর। তবে একটা শব্দ জয়ন্তের কানে ঠেকছে এই নিস্তব্ধতায়; সেটা দেয়াল ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণায়মান টিকটিক শব্দ। রাত্রি আটটা হল। সুচি ফেরেনি। কলেজ থেকে বেরিয়ে নাকি বাড়িতে টেলিফোন করে জানিয়েছে অংশুকে ফিরতে দেরী হবে তার। কোথায় গেছে বলেও যায়নি সে।
জয়ন্ত এবার আড়মোড়া ভেঙে উঠল, ছেলে হাঁক দিয়ে বললে---অংশু, দেখতো তোর মাকে ফোন করে। কখন আসবে।
অংশু মাকে টেলিফোন করতে পড়ার টেবিল ছেড়ে ওঠার আগেই জয়ন্তের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। সুচিত্রা ফোন করেছে। জয়ন্ত ফোন ধরার আগে ছেলেকে বললে---থাম। তোর মা ফোন করেছে।
অংশু থেমে গেল। জয়ন্ত ফোন ধরতেই সুচি বললে---কই গো, তুমি বাড়িতে?
---হ্যা। কেন? এত দেরি...
---শোনো না, একটা সমস্যা হয়েছে।
---কি আবার?
সুচিত্রার চারপাশে আরো দু' একটি গলা। ও' বলল---তোমাকে বলেছিলাম না, গফুর দা'র কথা?
গফুর নামটা শুনেই গা জ্বলে উঠল জয়ন্তের। ঐ নোংরা ফেরেব্বাজ মাতালটার সম্পর্কে কি বলতে সুচিত্রা ফোন করল। জয়ন্ত ও'কে থামিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল---তুমি বাড়ি কখন আসবে?
---ধৈর্য্য ধরো লক্ষীটি। গফুর দা'র স্ত্রী খুব অসুস্থ, ক্যানসারের পেশেন্ট। ওকে হাসপাতালে দেওয়ারও ওদের ক্ষমতা নেই। আজ বিকেল থেকে খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে। কি করা যায় বলো তো?
---তুমি জানলে কি করে? মানে তুমি কি ঐ গফুরের বাড়িতে নাকি?
জয়ন্ত বুঝতে পারলো, অন্যে যাতে না শুনতে পায় সুচি একটু গলা নামিয়ে যেন বললে---আঃ, একটা গরীব মানুষ বিপদে পড়েছে। তাকে সাহায্য না করে তুমি কেমন কথা বলছ? আর গফুর দা তো আমার অপরিচিত কেউ নয়।
জয়ন্ত থমকে গেল। বলল---কোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে বলো।
---আচ্ছা, আমি মেয়েমানুষ হয়ে সেসব পারি?
---তুমি করতে যাবে কেন? ঐ গফুরকে বলো, কাছে পিঠে যে কোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে।
জয়ন্ত বুঝতে পারলো সুচিত্রার বোধ হয় কথাটা একেবারেই মনঃপুত হল না। বললে---সত্যি, তোমার কোনো মনুষত্ব আছে? একটা মহিলা তার ছোট বাচ্চা আছে, তাকে সাহায্য করতে পারা যায় না?
---আমি কি করতে পারি বলো?
সুচিত্রা বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিল। জয়ন্ত পড়ল একটা বিড়াম্বনায়। সুচি জেদের কাছে হার মানবে না, সেটা জয়ন্ত জানে। এই রাতে সুচি যদি গায়ে টেনে ঝামেলায় পড়ে, তাহলে আরেক সমস্যা। অংশু পাশ থেকে বললে---কি বলল মা?
হাসি হাসি মুখ করে জয়ন্ত বললে---তোর মা এখন সমাজসেবা করতে ব্যস্ত। কে গফুর, তোর দাদুর বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে, তার বউ নাকি অসুস্থ। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
অংশু 'গফুর' নামটা শুনে অবাক হল। এই 'গফুর' সেই নয় তো ঝুমুর মাসির প্রেমিক। জয়ন্ত দ্বিধায় পড়ে আবার ফোন করল সুচিত্রাকে। এবার সুচি ফোন ধরেই কোনো রাগ না দেখিয়ে বললে---তোমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা যায় কিনা দেখো না?
---সরকারি হাসপাতাল, যে কেউ ভর্তি হতে পারে। হোক, তবু আমি ফোন করে দিচ্ছি।
---তুমি একটু আসতে পারবে? এই রাত-বিরেতে আমি মেয়েমানুষ...
জয়ন্ত গররাজি থাকলেও অবশেষে বললে---কোথায় আছো তুমি?
***