25-09-2024, 11:07 PM
(This post was last modified: 25-09-2024, 11:08 PM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অংশু ঘড়িতে দেখল সাড়ে ন'টা। মা সচরাচর এত দেরি করে না। মা বলেছিল মায়ের কলিগ মলিনা আন্টি নাকি খুব অসুস্থ। ওদের বাড়ি সোদপুরে। মলিনা আন্টির একটি মেয়ে আছে, শ্রুতি। অংশুর কলেজেই পড়ে। এক ক্লাস জুনিয়র। অংশুর ক্লাসের অনেকেই শ্রুতির প্রেমে পাগল।
এই তো অভীকই ক'দিন ধরে অংশুকে বলছে ''শ্রুতির সাথে একটা ব্যবস্থা করে দে না, অংশুমান''। আসলে অংশু যেহেতু শ্রুতির মায়ের কলিগের ছেলে, তাই শ্রুতি অংশুর সাথে কথা বলে। তাছাড়া অংশু কৃতি ছাত্র, সে কারনে এক ক্লাস জুনিয়র শ্রুতি তার সামনের বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে অংশুর কাছে সাজেশন চায়।
সুচিত্রা বাড়ি ফিরল ন'টা চল্লিশে। বিরক্ত অংশু মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল---এত দেরি করলে!
সুচি হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে হাসি মুখে বলল---কি করব আর, মলিনা ছাড়তেই চায় না।
জয়ন্ত বই থেকে মুখ তুলে বলল---কি হয়েছে মলিনার?
---কি আবার? গরমে ডি হাইড্রেড করেছে, স্যালাইন দিতে হয়েছে।
ততক্ষনে সুচি তার পরনের মেরুন শাড়িটা খুলে সায়া ব্লাউজ পরে ঢুকে গেল বাথরুমে। অংশু মায়ের পেছন থেকেই বলে উঠল---মা খিদে পেয়েছে, তাড়াতাড়ি রান্না করো। ছবি মাসি আসেনি।
***
মায়ের দেরি করে আসায় আজ খেতে একটু দেরীই হল। অংশুর বড্ড ঘুম পাচ্ছে। খেয়েদেয়ে সে সোজা বিছানায় গিয়েছে।
জয়ন্ত খাবার পর পায়চারী করবার সময় মিতাকে লক্ষ্য করল ও বাড়ির ছাদবারান্দায়। ওদের মুখে মুচকি তাৎপর্যপূর্ণ হাসির বিনিময় হল।
সুচি এসে ড্রেসিং আয়নার সামনে চুলটা খুলে আঁচড়াচ্ছিল। জয়ন্ত মেডিক্যালের বইটা শেষ করতে পারেনি। কাল একটা মুল্যবান অপারেশন আছে। যার জন্য একটু পড়াশোন দরকার। কথায় আছে উকিল আর ডাক্তারের সারা জীবনে পড়াশোনার শেষ নেই।
সুচিত্রা চুলটা বেঁধে নিয়ে বলল---হয়েছে পড়া তোমার? এবার আলোটা নেভাই? বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
জয়ন্ত বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে চশমাটাও খুলে রাখলো। যতই এসি চলুক, এই গেঞ্জি পরে সে কিছুতেই ঘুমোতে পারবে না। সুচিকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার নতুন কেনা টি শার্টটা কোথায়। ওটা না মেলায় জয়ন্তকে মোটা একটা গেঞ্জি পরতে হয়েছে।
সুচি ছাড়া এসব কারোর নজরে নেই। শুধু জয়ন্তের কেন, এ' বাড়ির সকলের জিনিস তারই নখদর্পনে। সে বলল---সুচি, আমার নতুন টি শার্টটা কোথায়?
---কোনটা? ঐ যে সেদিন পাতলাটা কিনে এনেছ?
---হ্যা।
---লোককে দিয়ে দিয়েছি।
---যাঃ নতুনটা দিয়ে দিলে? কাকে?
---সেদিন যে গফুর দা এসেছিল, বেচারার জামাটা এত নোংরা, দেখে খারাপ লাগলো। তাই ভাবলাম ওটা তো তুমি কিনে আনলেও পরো না, তাই দিয়ে দিলাম।
---কি! ঐ মাতালটাকে দিয়ে দিলে নতুন শার্টটা? ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল জয়ন্ত।
---তোমার এমন অনেক নতুন শার্ট আলমারিতে আছে। একটাও তো পরো না। পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
---তা বলে তুমি ভিখারিকে আমার নতুন শার্ট দিয়ে দেবে?
---আঃ রাগ করছ কেন? এমন ভাব করছ যেন কি না কি দিয়ে দিয়েছি! আর গফুর দা'কে ভিখারি বলছ কেন? গফুর দা আলি চাচার ছেলে। আগে জুটমিলে কাজ করত। ইদানিং কাজ হারিয়ে...
---সে যাই হোক। লোকটা ভিখারিই। ওকে ভিখারি বলাও ভুল হবে। ভিখারি তো পেটের দায়ে ভিক্ষে করে। এই লোকটি তো একটা আস্ত ঠকবাজ। নেশার দ্রব্যের জন্য...লোক ঠকায়।
সুচির রাগ হল। বলল---ঠিক আছে। আমি তোমার শার্টের দাম দিয়ে দেব। আর একটি কথা নয়।
জয়ন্ত বুঝতে পারলো তার স্ত্রীর গোঁসা হয়েছে। তাই একটু নরম হয়ে বলল---দেখো সুচি, ও তোমার বাপের বাড়ির লোক হতে পারে, কিন্তু এমন হতচ্ছাড়া ভিখারি গাঁজাখোর লোককে একদম প্রশ্রয় দিও না। এ ধরনের লোককে কিছু টাকা-পয়সা, জামা-কাপড় দিলে, বারবার আসবে। তাছাড়া পাড়ার লোক কি ভাববে! আর ও তো তোমার কোনো রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নয়। নেহাত তোমার বাপের বাড়ির কেয়েটেকারের ছেলে। অত দরদ দেখানোর দরকার নেই।
সুচিত্রার তখনও রাগ তুঙ্গে। বলল---আমি কার প্রতি দরদ দেখাবো সেটা আমার বিষয়। তোমার টি শার্টের দাম আমি দিয়ে দেব। শান্তি?
---বিষয়টা একটা টি শার্টের নয়, সুচি। লোকটা একটা নেশাখোর, ঘিনঘিনে চেহারার উন্মাদ.. স্নান করে না, নোংরা থাকে, ফুটপাথে নেশা করে পড়ে থাকে। চুরি চামারির স্বভাব আছে। এই লোক বাড়িতে...
সুচিত্রা তৎক্ষনাৎ স্বামীর ওপর রাগ করে বলল---বলেছি তো, আমার ভুল হয়েছে তোমার একটা টি শার্ট দেওয়া ওকে। আমি নিজে কিনে দিলে ঠিক করতাম। আমাকে ঘুমোতে দাও, বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আবার ভোরে উঠতে হবে, তোমায় তো আর উঠতে হয় না।
জয়ন্ত চুপ করে গেল। সুচিত্রা জয়ন্তের উল্টোদিকে পাশ ফিরে মুখ করে শুয়েছে। জয়ন্ত আর কথা বাড়ালো না। সুচি মাঝে মধ্যে ছেলেমানুষের মত জেদ করে। দুটি সন্তানের মা হয়েও তার সেই জেদ কখনো কখনো প্রকাশ পায়। জয়ন্ত তাই ভাবলো চুপ থাকাই শ্রেয়। সুচির এমন জেদের সঙ্গে সে পেরে উঠবে না।
চলবে।
এই তো অভীকই ক'দিন ধরে অংশুকে বলছে ''শ্রুতির সাথে একটা ব্যবস্থা করে দে না, অংশুমান''। আসলে অংশু যেহেতু শ্রুতির মায়ের কলিগের ছেলে, তাই শ্রুতি অংশুর সাথে কথা বলে। তাছাড়া অংশু কৃতি ছাত্র, সে কারনে এক ক্লাস জুনিয়র শ্রুতি তার সামনের বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে অংশুর কাছে সাজেশন চায়।
সুচিত্রা বাড়ি ফিরল ন'টা চল্লিশে। বিরক্ত অংশু মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল---এত দেরি করলে!
সুচি হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে হাসি মুখে বলল---কি করব আর, মলিনা ছাড়তেই চায় না।
জয়ন্ত বই থেকে মুখ তুলে বলল---কি হয়েছে মলিনার?
---কি আবার? গরমে ডি হাইড্রেড করেছে, স্যালাইন দিতে হয়েছে।
ততক্ষনে সুচি তার পরনের মেরুন শাড়িটা খুলে সায়া ব্লাউজ পরে ঢুকে গেল বাথরুমে। অংশু মায়ের পেছন থেকেই বলে উঠল---মা খিদে পেয়েছে, তাড়াতাড়ি রান্না করো। ছবি মাসি আসেনি।
***
মায়ের দেরি করে আসায় আজ খেতে একটু দেরীই হল। অংশুর বড্ড ঘুম পাচ্ছে। খেয়েদেয়ে সে সোজা বিছানায় গিয়েছে।
জয়ন্ত খাবার পর পায়চারী করবার সময় মিতাকে লক্ষ্য করল ও বাড়ির ছাদবারান্দায়। ওদের মুখে মুচকি তাৎপর্যপূর্ণ হাসির বিনিময় হল।
সুচি এসে ড্রেসিং আয়নার সামনে চুলটা খুলে আঁচড়াচ্ছিল। জয়ন্ত মেডিক্যালের বইটা শেষ করতে পারেনি। কাল একটা মুল্যবান অপারেশন আছে। যার জন্য একটু পড়াশোন দরকার। কথায় আছে উকিল আর ডাক্তারের সারা জীবনে পড়াশোনার শেষ নেই।
সুচিত্রা চুলটা বেঁধে নিয়ে বলল---হয়েছে পড়া তোমার? এবার আলোটা নেভাই? বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
জয়ন্ত বইটা বন্ধ করে পাশের টেবিলে রেখে চশমাটাও খুলে রাখলো। যতই এসি চলুক, এই গেঞ্জি পরে সে কিছুতেই ঘুমোতে পারবে না। সুচিকে জিজ্ঞেস করতে হবে তার নতুন কেনা টি শার্টটা কোথায়। ওটা না মেলায় জয়ন্তকে মোটা একটা গেঞ্জি পরতে হয়েছে।
সুচি ছাড়া এসব কারোর নজরে নেই। শুধু জয়ন্তের কেন, এ' বাড়ির সকলের জিনিস তারই নখদর্পনে। সে বলল---সুচি, আমার নতুন টি শার্টটা কোথায়?
---কোনটা? ঐ যে সেদিন পাতলাটা কিনে এনেছ?
---হ্যা।
---লোককে দিয়ে দিয়েছি।
---যাঃ নতুনটা দিয়ে দিলে? কাকে?
---সেদিন যে গফুর দা এসেছিল, বেচারার জামাটা এত নোংরা, দেখে খারাপ লাগলো। তাই ভাবলাম ওটা তো তুমি কিনে আনলেও পরো না, তাই দিয়ে দিলাম।
---কি! ঐ মাতালটাকে দিয়ে দিলে নতুন শার্টটা? ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল জয়ন্ত।
---তোমার এমন অনেক নতুন শার্ট আলমারিতে আছে। একটাও তো পরো না। পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
---তা বলে তুমি ভিখারিকে আমার নতুন শার্ট দিয়ে দেবে?
---আঃ রাগ করছ কেন? এমন ভাব করছ যেন কি না কি দিয়ে দিয়েছি! আর গফুর দা'কে ভিখারি বলছ কেন? গফুর দা আলি চাচার ছেলে। আগে জুটমিলে কাজ করত। ইদানিং কাজ হারিয়ে...
---সে যাই হোক। লোকটা ভিখারিই। ওকে ভিখারি বলাও ভুল হবে। ভিখারি তো পেটের দায়ে ভিক্ষে করে। এই লোকটি তো একটা আস্ত ঠকবাজ। নেশার দ্রব্যের জন্য...লোক ঠকায়।
সুচির রাগ হল। বলল---ঠিক আছে। আমি তোমার শার্টের দাম দিয়ে দেব। আর একটি কথা নয়।
জয়ন্ত বুঝতে পারলো তার স্ত্রীর গোঁসা হয়েছে। তাই একটু নরম হয়ে বলল---দেখো সুচি, ও তোমার বাপের বাড়ির লোক হতে পারে, কিন্তু এমন হতচ্ছাড়া ভিখারি গাঁজাখোর লোককে একদম প্রশ্রয় দিও না। এ ধরনের লোককে কিছু টাকা-পয়সা, জামা-কাপড় দিলে, বারবার আসবে। তাছাড়া পাড়ার লোক কি ভাববে! আর ও তো তোমার কোনো রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নয়। নেহাত তোমার বাপের বাড়ির কেয়েটেকারের ছেলে। অত দরদ দেখানোর দরকার নেই।
সুচিত্রার তখনও রাগ তুঙ্গে। বলল---আমি কার প্রতি দরদ দেখাবো সেটা আমার বিষয়। তোমার টি শার্টের দাম আমি দিয়ে দেব। শান্তি?
---বিষয়টা একটা টি শার্টের নয়, সুচি। লোকটা একটা নেশাখোর, ঘিনঘিনে চেহারার উন্মাদ.. স্নান করে না, নোংরা থাকে, ফুটপাথে নেশা করে পড়ে থাকে। চুরি চামারির স্বভাব আছে। এই লোক বাড়িতে...
সুচিত্রা তৎক্ষনাৎ স্বামীর ওপর রাগ করে বলল---বলেছি তো, আমার ভুল হয়েছে তোমার একটা টি শার্ট দেওয়া ওকে। আমি নিজে কিনে দিলে ঠিক করতাম। আমাকে ঘুমোতে দাও, বড্ড ক্লান্ত লাগছে। আবার ভোরে উঠতে হবে, তোমায় তো আর উঠতে হয় না।
জয়ন্ত চুপ করে গেল। সুচিত্রা জয়ন্তের উল্টোদিকে পাশ ফিরে মুখ করে শুয়েছে। জয়ন্ত আর কথা বাড়ালো না। সুচি মাঝে মধ্যে ছেলেমানুষের মত জেদ করে। দুটি সন্তানের মা হয়েও তার সেই জেদ কখনো কখনো প্রকাশ পায়। জয়ন্ত তাই ভাবলো চুপ থাকাই শ্রেয়। সুচির এমন জেদের সঙ্গে সে পেরে উঠবে না।
চলবে।