21-09-2024, 09:18 PM
পর্ব -০৫
এলোমেলো ভাবে বিছানায় বসে আছে স্নেহা, রুদ্র স্নেহাকে আনার সময় ছোটার জন্য অনেক জোরাজোরি করেছে,
স্নেহাকে আনার পর জোর করে রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে রুদ্র,আর স্নেহা রুমে বসে রাগে গজগজ করছে, যেন রুদ্রকে এখন সামনে পেলেই চিবিয়ে খাবে,
দরজা খোলার শব্দ শুনেই, স্নেহা তাকালো সেদিকে। রুদ্র এসেছে। আজ ব্রু কালারের ব্লেজার পরেছিলো আর হোয়াইট কালারের শার্ট পরেছিলো। ব্লেজার টা খুলে ফেলেছে এখন শুধু হোয়াইট কালারের শার্ট পরা।
রুমে ঢুকেই রুদ্র স্নেহার কাছে গেলো,বিছানার ওপরে নিজের শরীর ছেড়ে দিলো, স্নেহার কোলে মাথা রেখে দু- হাত পেটের দু- পাশে দিয়ে স্নেহাকে চেপে ধরলো,
- ছাড়ুন আমাকে,ছাড়ুন।
রুদ্র মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- কেনো ছাড়বো???
- কারন আপনার ছোয়াতে আমার ঘেন্না লাগে।( রাগে গজ গজ করতে করতে)
- আজ যা করেছো তারপর ও তোমাকে কিছু বলিনি কারন আজ আমাদের বিয়ের দিন আমাদের বাসরের রাত। তাই, অন্য সব দিন হলে এ অপরাধের খুব খারাপ শাস্তি দিতাম তোমাকে,
- কিসের বিয়ে? আমি মানিনা এই বিয়ে, আর বাসর? যা করার তো আগেই করে নিয়েছেন আপনার সব চাহিদা তো মিটিয়ে নিয়েছেন।
- প্লিজ চুপ করো, আমার এখন তোমার সাথে খারাপ কিছু করার ইচ্ছা নেই,
- আর কি খারাপ করবেন আপনি?
- একদম চুপ স্নেহা, আমার মাথা গরম করবেনা খুব খারাপ হয়ে যাবে।
রুদ্রকে নিজের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো স্নেহা,
- আসবেন না আমার কাছে, আপনার প্রতিটা ছোয়া ঘেন্নার।
- কি বললি!!( রুদ্রের মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে স্নেহার কথা শুনে)
- রুদ্র স্নেহা একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসলো, স্নেহাকে বিছানায় ফেলে অঝোরে পুরো শরীরে চুমু দিতে লাগলো, স্নেহা ছোটার জন্য হাজারো চেষ্টা করছে।
- আমাকে ছাড়ুন, ছাড়ুন আমাকে।
রুদ্র তার মাথা অনেক ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু এখন আর পারছে না, তাই স্নেহাকে দিয়ে তার সব রাগ ঠান্ডা করছে, নেশাগ্রস্তের মতো স্নেহার সারা শরীরকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে নিয়েছে,
স্নেহার কান্না, ছুটবার জন্য কাকুতি মিনতি যেন রুদ্রের কান অব্দি পৌছাচ্ছেই না।
রাত ১২ টা,,,
স্নেহা বসে বসে কাঁদছে, কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠিয়ে ফেলেছি রুদ্র অনেক বার থামতে বলেছে কিন্তু কিছুতেই থামছে না।
আর রুদ্র ব্যান্ডেজ করছে স্নেহার হাতে, তখন জোরাজোরিতে হাতে চাও লেগে কাটা যায়গা থেকে আবারো একটু রুক্ত বেড়িয়েছে, জোরাজোরি করার সময় রুদ্র তা খেয়াল করেনি কিন্তু পরে খেয়াল করেছে তাই আগের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে,
আর স্নেহা বসে, বসে কাঁদছে,,,
ব্যান্ডেজ করা শেষ করে রুদ্র বাহিরে চলে গেলো, ফিরে এলো হাতে এক গ্লাস জুস নিয়ে,
- স্নেহা এটা খেয়ে নাও,
- স্নেহা কেঁদে চলেছে,
- স্নেহা আমি কিছু বলছি তোমাকে,
- স্নেহা কাপা কাপা হাতে গ্লাসটা হাতে নিয়ে একবারে পুরোটা জুস খেয়ে নিলো। রুদ্র স্নেহার কাছ থেকে গ্লাসটা নিয়ে পাশে থাকা টেবিলে রাখলো,
স্নেহার কাছে বসে রুদ্র বলতে লাগলো,
- স্নেহা, কেনো আমাকে বারবার রাগিয়ে দাও? আমিতো চাইনা আমার ভালোবাসার মানুষটার ওপরে রাগ করে থাকতে,তাকে আঘাত করতে, তুমি আমাকে বার বার বাদ্ধ্য করো কেনো?
- স্নেহা গুটিসুটি হয়ে বসে আছে, কোনো কথা বলছে নে। যেমন সেদিন হাসাপাতালে ছিলো, বার বার শরীরে থাকা চাঁদরটা আকরে ধরছে।
- স্নেহা, আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছ কেন? তুমিকি জানো আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ আর একটা মেয়ে বিয়ের পর তার সব কিছু হাসবেন্ড কে ঘিরে চিন্তা করে,,
স্নেহা গুটিসুটি হয়ে বসে আছে আর ঠোট গুলো কাঁপছে,,,
রুদ্র আর কিছু না বলে বারান্দায় চলে গেলো, কারন সে জানে এখন স্নেহাকে শতো বুঝিয়েও লাভ নেই।
রুদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, আর আগের দিনগুলোর কথা ভাবছে,
- ভাইয়া আমাকে সাইকেল চালানো শিখাবেন প্লিজ??( স্নেহা বায়নাকাতর সুরে বললো রুদ্রকে)
- কিন্তু আমার তো একটু,
- বুঝেছি এখন আপনি বলবেন আপনার অনেক জরুরী কাজ আছে, আপনাকে যেতে হবে, আর কি জরুরী কাজ তাও আমি জানি। প্রতিদিনের সেই একই জরুরী কাজ। আচ্ছা ভাইয়া কাছের মানুষদের জন্য একদিন জরুরী কাজটা মিস হলে এমন কি হবে,
- শোনো,
- কোনো কথা শুনছি না, আজ আমি আর কোনো কথা শুনবো না। চলুন আমাকে সাইকেল চালানো শিখাবে।
বলেই রুদ্রের সাইকেলে চেপে বসলো স্নেহা, রুদ্র তাকে সাইকের চালানো শিখাচ্ছে, কিন্তু স্নেহা কিছুতেই পারছে না। সাইকেল চালাতে চালাতে রুদ্র একটু ছেড়ে দিতে সাইলে নিয়ে ঠাস করে পড়লো স্নেহা।
- আহহহ ভাইয়া,
- তুমি ঠিক আছে?
- না ভাইয়া পায়ে ব্যাথা পেয়েছি,
রুদ্র স্নেহাকে ধরে উঠাতে যাবে, তখনি স্নেহা রুদ্রের শার্ট আকরে ধরে ব্যাথায় কান্না করে দিয়েছিলো,
একটু খানি ব্যাথা সয়ে নেয়ার ক্ষমতা নেই স্নেহার।
কিন্তু এই স্নেহাই একদিন রুদ্রকে ব্যাথা, ব্যাথা আঘাতে, আঘাতে শেষ করে দিয়েছিলো,
এসব ভাবতে ভাবতেই রুমের দিকে পা বাড়াল রদ্র,
যেয়ে দেখলো স্নেহা বিছানায় নেই, দরজা খোলার শব্দ পেয়েই পেছনে তাকাতেই দেখলো স্নেহা বাথরুম থেকে বের হচ্ছে, শরীরটা দুর্বল তা বোঝা যাচ্ছে ঠিকমতো হাটতেও পারছেনা।
রুদ্র স্নেহার কাছে গিয়েই ওকে কোলে তুলে নিলো,কিন্তু স্নেহা এখন আর রাগ দেখাচ্ছে না, রুদ্র স্নেহাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চাদর টেনে দিলো,,
সকালে ঘুম ভাঙলো পাখির কিচিরমিচিরে,
স্নেহা চোখ মেলতেই নিজেকে রুদ্রের বুকে আবিস্কার করলো, সে নিজে থেকে আসেনি তা সে নিজেও জানে। তার মানে রুদ্রই তাকে নিজের কাছে এনেছে। রুদ্রের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো স্নেহা, এই কি সেই আগের রুদ্র যার কাওকে কাঁদতে দেখলেও বুকটা ফেটে যেত। মিষ্ট ভাষার সেই ছেলেটা যার মুখে সবসময় মিষ্টি হাসি লেগে থাকতো আজ তাকে বড় অচেনা লাগছে,,
রুদ্রের দিকে গভীরভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর নিজেকে সামলে নিলো স্নেহা, তারপর বিছানা ছেড়ে উঠেই ওয়াসরুমে চলে গেলো,,,,,
- আজ বেস তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে স্নেহা অনেকদিন পর সকালে এতো তাড়াতাড়ি উঠলো সে, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে ভাবছে তার সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা,
হয়তো গল্পটা অন্যরকম হয়ে পারতো কিন্তু সব কিছুই কেমন জানো ওগোছালো হয়ে গেলো,পূরোনো অনেক কথা ভাবছে স্নেহা চোখের কোন দিয়ে বিন্দু, বিন্দু পানি গড়িয়ে পরছে,
হঠাৎ কোমরে কারো হাতের ছোয়া পেলো স্নেহা,,,
- এতো সকালে উঠেছো যে?( স্নেহা ঘাড়ে নাক ঘষতে, ঘসতে বললো রুদ্র)
- জানেন বিয়ের আগেরদিন মামনি আমাকে কি বলেছে?
- কি বলেছে!( ঘাড়ে মুখ ডুবিয়েই)
- বিয়ের পরে মেয়েদের একটা বাড়িই থাকে সেটা হচ্ছে স্বামীর বাড়ি!! আর তখন মেয়েরা বাবার বাড়ির অতিথি হয়ে যায়।
- হুম ঠিক বলেছে,,
- কিন্তু বলতে পারবেন? আমি কোন বাড়িতে আছি?
স্নেহার প্রশ্ন রুদ্র একটু চমকে গেলো,
- মানে? তুমি তোমার স্বামীর বাড়ি আছো, যার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে।
- না, আমি সেই লোকটার বাড়ি আছি যে আমাকে ঠকিয়েছে, আমি সেই লোকটার বাড়ি আছি যে আমাকে ''. করেছে, আমি সেই মানুষটার বাড়ি আছি যে আমার প্রতিটা নিশ্বাসকে কষ্টে পূর্ন করে দিয়েছে,,,,
- স্নেহার কথাগুলো রুদ্রের বুকে বাধছে তবে, এতোটুকু শান্তি পাচ্ছে রুদ্র যে স্নেহা তার বুকেই আছে।
রুদ্র স্নেহাকে তার দিকে ফেরালো,,,
স্নেহার কাপা,কাপা ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ছুয়ে দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
- আজ তোমার এমন মনে হচ্ছে? কই ২ বছর আগে তো এই খারাপ মানুষটার জন্যই কতো রাত অপেক্ষা করে পার করতে, কতো শতো প্রেমের কবিতা লিখতে, তখন এই খারাপ মানুষটাকে নিয়েই হাজারো স্বপ্ন বুনতে, তবে আজ কেন তা পারছো না।
- কারন সেই মানুষটা দু- বছর আগেও আমাকে ধোকা দিয়েছে আর এখনো দিচ্ছে বাকিটা জীবন ও দিবে,
স্নেহার চোখে পানি টলমল করছে,
- আর কতো? আর কতো স্নেহা? আমাকে এভাবে ভুল বুঝে কষ্ট আর কতো দিবে???? জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি তুমি কি মনে করো সেদিন দোষটা শুধু আমার ছিলো? হ্যা আমার দোষ ছিলো আমি অন্য কারো কোথার ফাদে পড়েছিলাম কিন্তু তারপর তুমি তোমার বাবা আমার সাথে আর আমার পরিবারের সাথে যা করেছো? তারপর ও বলছো তোমার সাথে আমি যা করছি তা অপরাধ??? মনে রেখো আমার তোমাকে পাওয়া হয়ে গিয়েছে এখন আমার একটাই টার্গেট তোমার বাবা আশরাফ খানের সব কিছু মাটিতে মিশিয়ে দেয়া,,,
- আপনি আমাকে পেয়েছেন? ( তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললো স্নেহা)
না, আপনি আমাকে পান নি আপনি পেয়েছেন আমার শরীরটা। টাকা হলে এমন হাজারো শরীর পাওয়া যায়!!
- একদম চুপ!( স্নেহার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো রুদ্র) কোনো কথা বলবিনা, তোর শরীর পেয়েছি তোকেও পাবো,তোর সব কিছু আমার। তোকে ভালোবাসি তাই বলে ভাবিস না আমি আগের সব কথা ভুলে গিয়েছি, আমার সব মনে আছে।( রাগে কটমট করতে করতে কথাগুলো বললো রুদ্র)
- আমারো সব মনে আছে, আমিও কিছু ভুলিনি আর কখনো ভুলবো ও না।
আর আমাকে ছাড়ুন আমি আপনার কতো পাথর না, আমার খিদে পেয়েছে, কাল আমার ওপরে জানোয়ারের মতো অত্যাচার করেছেন আমি খেয়েছি কিনা বা আমার শরীরের কি অবস্থা তা জানার ইচ্ছাও জাগেনি আপনার মনে, আপনি ব্যাস্ত ছিলেন নিজের খিদে মেটাতে,
স্নেহার কথা রুদ্র স্নেহাকে হালকা করে দিলো, সত্যি তো রুদ্র কাল অন্য একটা মানুষ হয়ে গিয়েছিলো, স্নেহার খেয়েছে কিনা বা ওর শরীরের কি অবস্থা একবারো জানতে চাইনি সে,
রুদ্রের থেকে ছাড়া পেতেই স্নেহা, চলে গেলো রুম থেকে,
সিরি বেয়ে নিচে নামতেই স্নেহার দেখা বুয়ার সাথে, বয়স হয়তো ৪০ হবে,
- মা আপনে রুদ্র বাবার বউ?
- আনমনে কিছুক্ষন তাকিয়ে স্নেহা জিজ্ঞেস করলো আপনি জানলেন কিভাবে?
- আমি জানুম না, আমারে তো এ দুইদিন আগেই আনছে আপনার দেখাশোনা করার জন্য,,
- ওহ, খালা আমার খিদে পেয়েছে, আপনার সাথে পরিচিত আসতে, আসতে হবো। আমাকে আগে কিছু খেতে দিন।
-আচ্ছা মা আপনে একটু বসেন আমি এখনি খাবার দিতাছি।
- খালা মা যখন ডেকেছেন আমাকে তুমি বলে ডাকবেন, আপনি আমার অনেক বড়।
- স্নেহার কথা শুনে যেন খালার মুখে খুশির ঝলক,,,
- স্নেহা বসে আছে খাবার টেবিলে,
হুট করে পাশে এসে বসলো রুদ্র,
খালা খাবারগুলো এক এক করে আনছে,
প্লেট উলটাতে,উলটাতে বললো রুদ্র বললো,
- খেয়ে রেডি হয়ে নাও বের হবো,
- কোথায়?
- যা বলেছি তা করো,
স্নেহা আর কথা বাড়ালো না, সে জানে তার কথার কোনো মূল্য দিবেনা রুদ্র। তাই চুপচাপ খেয়ে রেডি হয়ে নিলো,
- স্নেহা রেডি হয়ে নিচে নামতেই,
- এটা কি পড়েছো তুমি?( রেগে বললো রুদ্র)
- নিজের দিকে একবার তাকিয়ে স্নেহা উত্তর দিলো, থ্রিপিজ পরেছি!!
- হ্যা তা আমিও দেখতে পাচ্ছি কিন্তু থ্রিপিজ কেনো? নতুন বউ শাড়ি পরে যাও শাড়ি পরে আসো,
- না আমি পারবোনা শাড়ি পড়তে,
- তুমি যাবা নাকি???( রেগে বললো রুদ্র)
রুদ্রের রাগ স্নেহার জানা আছে তাই স্নেহা আর কথা বারালো না, চুপচাপ ভেতরে গিয়ে একটা লালশাড়ি পরে বের হলো,
স্নেহা বের হতে রুদ্র যেন হা হয়ে আছে, স্নেহা একটা লাল টকটকে শাড়ি পরেছে,,
চলবে,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)