20-09-2024, 11:18 PM
রাতে খাবার পর। দাঁত খুটোতে লাগলো জয়ন্ত। কিছুতেই মাছের কাঁটা বেরোতে চায় না। জয়ন্ত বললে---সুচি, একটা সেফটিপিন দাও না।
সিঙ্কে বাসনগুলো চুবিয়ে রেখে জল ছাড়লো সুচিত্রা। হাত দুটো ধুয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল---কি হয়েছে?
---এই দেখো না, দাঁতের ফাঁকে কেমন কাঁটা আটকে রয়েছে।
সুচিত্রা বুকের আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের হুকে আটকে রাখা সেফটিপিন খুলতে লাগলো। জয়ন্তের নজরে এলো সুচির ঢিলে ঢালা ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দুই স্তনের মধ্যবর্তী অংশ।
নিজেই সে স্বামীর দাঁতের ফাঁকে সেফটিপিন ঢুকিয়ে বার করে আনলো কাঁটাটা। বললে---খাবার সময় দেখে খাবে তো।
ঐ সেফটিপিনটাই আটকে রাখলো ব্লাউজের হুকের সাথে। জয়ন্ত জানে সুচির কাছে সেফটিপিন এভাবেই পাওয়া যায়। কখনো ব্লাউজের হুক, কখনো হাতের পোলায় আটকে রাখা অবস্থায়।
***
অংশুর ঘরে আলো জ্বলছে। জয়ন্ত ছেলে-মেয়ে দুটোর ঘরেই এসি বসিয়েছে। নিজেদের বেডরুমে এসি ছিল না অনেকদিন। গতবছর গরমে বাধ্য হয়ে এসি বসিয়েছে সে। সুচিরও অসুবিধে হত। সারাদিন কলেজে থেকে শাড়ি-ব্লাউজ-ব্রেসিয়ারে ঘাম জমে, তারপর কলেজ থেকে ফিরে ঘাম না শুকোতেই স্নানে। ফলত সুচির ফর্সা পিঠে লাল ঘামাচি দেখে জয়ন্ত ভাবলে এসিটা এবার বসানো দরকার।
জয়ন্ত শুয়ে পড়েছে। সুচি ঘুমোতে আসার আগে আলো জ্বেলে দিলে সে বিরক্ত হয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল---কি হল? আলো জ্বাললে কেন?
---ঘুমিয়ে পড়লে? বিছানায় উঠে এলো সুচিত্রা।
জয়ন্ত বেড সুইচটা অফ করে আলো নিভিয়েছে। অংশু পড়ছে। ওর ঘরের আলো এসে পড়েছে ড্রয়িং রুমে। সে আলো জয়ন্তের বেডরুমের খোলা দরজা দিয়ে দেখা যায়।
সুচি বেশি গরম পড়লে গায়ে ব্লাউজ রাখতে পারে না। আঁচলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুলে দিল ব্লাউজের দুটো হুক। যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
জয়ন্ত বলল--কি বলবে?
---আজ দুপুরের ঘটনা তোমাকে বলা হয়নি।
---কি হয়েছে?
---গফুর দা এসেছিল।
---গফুর দা! সে আবার কে?
---ভুলে গেলে? ঐ যে তোমাকে বলেছিলাম আলি চাচার ছেলে। তোমার কাছে গিয়েছিল।
---মানে ঐ ফেরেব্বাজ! নেশাখোর ভিখারিটা?
সুচিত্রার দিকে ঘুরে পড়ল জয়ন্ত। সুচিত্রা বললে---না গো, ও' মিথ্যে বলেনি। ও' ই আলি চাচার ছেলে গফুর দা।
----তুমি এত শিওর হলে কি করে? তুমি তো বলেছিলে আলি চাচার ছেলে নাকি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
--- বলেছিলাম তো। সেটাই তো সত্যি। আজ সকালে যখন এলো। আমি তো চমকে গেছি। এত নোংরা পোশাক, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ, চেনা যায় না। তারপর যখন ভালো করে দেখলুম, ভুল দেখছি না তো। গফুর দা' ই তো। তেমনই লম্বা, চওড়া কাঁধ। শুধু ক্ষয়ে গেছে আগের সেই শরীরটা।
জয়ন্ত বলল---তোমার ভ্রম হয়েছে, সুচি। চন্দন খোঁজ নিয়েছে লোকটার ব্যাপারে। ও' কোনো গফুর নয়। ও' একটা নেশাখোর। ফুটপাতে শুয়ে থাকে।
---ধ্যাৎ। গফুর দা'কে চিনতে পারবো না আবার? ছোট বেলায় গ্রামের বাড়ি গেলে গফুর দা'ই তো আম ভেঙে দিত, ঘুড়ি ওড়াতো। এখন দারিদ্রতায় সেই চেহারা আর নেই। এখন নাকি পার্ক সার্কাসে ঘরভাড়া নিয়ে থাকে। দেখে বড্ড মায়া হল জানো। শুধু বলল 'সুচি কিছু খেতে দিবি রে'।
---খেতে দিলে? মানে নোংরা লোকটা আমাদের ড্রয়িং রুম পর্য্ন্ত এসেছিল! ঘিনঘিন করে উঠল জয়ন্তের গা। লোকটার চেহারাটা তার এখনো মনে আছে, বড্ড নোংরা।
---না না, নীচ তলাতেই বসে খেল। কি করব বলো। একটা পরিচিত লোক বাড়ি এসে খেতে চাইছে। না দিয়ে পারি কি?
জয়ন্ত বুঝতে পারলো সুচিত্রা যখন এতটা নিশ্চিত হয়ে বলছে, ভুল বলছে না। লোকটা সুচিদের গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের নিরুদ্দেশ হওয়া ছেলে গফুরই। কিন্তু লোকটা যে নেশার জন্য টাকা চাইতে তার বাড়ি পর্যন্ত এসেছে বুঝতে বাকি নেই। তাই সে বলল---সে যাই হোক ঐ লোককে বাড়িতে উঠতে দিও না। নোংরা ভিখিরি গাঁজাখোর লোক একটা, একবার পয়সা দিলে বার বার পয়সা নিয়ে যাবে।
সুচিত্রা চুপ করে গেল। পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল সে। জয়ন্ত অনেকক্ষণ টানটান হয়ে শুয়েছিল, এবার ঘুরে পড়ার উপক্রম নিতেই সুচি অকস্মাৎ জয়ন্তের দিকে ঘুরে পড়ে বললে---আচ্ছা তোমরা তো অনেক ড্রাগ, মদের নেশাধরা রোগীর নেশা ছাড়াও। গফুর দা'র নেশা ছাড়ানো যায় না?
জয়ন্ত হাসতে লাগলো সুচির কথা শুনে। বলল---ঘুমোও সুচি। রাত হল। কাল আবার মর্নিং আছে। এই ভবঘুরের কথা এত ভেবে লাভ নেই। দেখো হয়ত ইতিমধ্যে কত দুরারোগ্য রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা। এ' যে লোক দেখলুম, একে স্বয়ং ভগবান নেমে এলেও নেশা ছাড়াতে পারবে না।
চলবে।
সিঙ্কে বাসনগুলো চুবিয়ে রেখে জল ছাড়লো সুচিত্রা। হাত দুটো ধুয়ে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল---কি হয়েছে?
---এই দেখো না, দাঁতের ফাঁকে কেমন কাঁটা আটকে রয়েছে।
সুচিত্রা বুকের আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের হুকে আটকে রাখা সেফটিপিন খুলতে লাগলো। জয়ন্তের নজরে এলো সুচির ঢিলে ঢালা ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে দুই স্তনের মধ্যবর্তী অংশ।
নিজেই সে স্বামীর দাঁতের ফাঁকে সেফটিপিন ঢুকিয়ে বার করে আনলো কাঁটাটা। বললে---খাবার সময় দেখে খাবে তো।
ঐ সেফটিপিনটাই আটকে রাখলো ব্লাউজের হুকের সাথে। জয়ন্ত জানে সুচির কাছে সেফটিপিন এভাবেই পাওয়া যায়। কখনো ব্লাউজের হুক, কখনো হাতের পোলায় আটকে রাখা অবস্থায়।
***
অংশুর ঘরে আলো জ্বলছে। জয়ন্ত ছেলে-মেয়ে দুটোর ঘরেই এসি বসিয়েছে। নিজেদের বেডরুমে এসি ছিল না অনেকদিন। গতবছর গরমে বাধ্য হয়ে এসি বসিয়েছে সে। সুচিরও অসুবিধে হত। সারাদিন কলেজে থেকে শাড়ি-ব্লাউজ-ব্রেসিয়ারে ঘাম জমে, তারপর কলেজ থেকে ফিরে ঘাম না শুকোতেই স্নানে। ফলত সুচির ফর্সা পিঠে লাল ঘামাচি দেখে জয়ন্ত ভাবলে এসিটা এবার বসানো দরকার।
জয়ন্ত শুয়ে পড়েছে। সুচি ঘুমোতে আসার আগে আলো জ্বেলে দিলে সে বিরক্ত হয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে বলল---কি হল? আলো জ্বাললে কেন?
---ঘুমিয়ে পড়লে? বিছানায় উঠে এলো সুচিত্রা।
জয়ন্ত বেড সুইচটা অফ করে আলো নিভিয়েছে। অংশু পড়ছে। ওর ঘরের আলো এসে পড়েছে ড্রয়িং রুমে। সে আলো জয়ন্তের বেডরুমের খোলা দরজা দিয়ে দেখা যায়।
সুচি বেশি গরম পড়লে গায়ে ব্লাউজ রাখতে পারে না। আঁচলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুলে দিল ব্লাউজের দুটো হুক। যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।
জয়ন্ত বলল--কি বলবে?
---আজ দুপুরের ঘটনা তোমাকে বলা হয়নি।
---কি হয়েছে?
---গফুর দা এসেছিল।
---গফুর দা! সে আবার কে?
---ভুলে গেলে? ঐ যে তোমাকে বলেছিলাম আলি চাচার ছেলে। তোমার কাছে গিয়েছিল।
---মানে ঐ ফেরেব্বাজ! নেশাখোর ভিখারিটা?
সুচিত্রার দিকে ঘুরে পড়ল জয়ন্ত। সুচিত্রা বললে---না গো, ও' মিথ্যে বলেনি। ও' ই আলি চাচার ছেলে গফুর দা।
----তুমি এত শিওর হলে কি করে? তুমি তো বলেছিলে আলি চাচার ছেলে নাকি নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।
--- বলেছিলাম তো। সেটাই তো সত্যি। আজ সকালে যখন এলো। আমি তো চমকে গেছি। এত নোংরা পোশাক, মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফ, চেনা যায় না। তারপর যখন ভালো করে দেখলুম, ভুল দেখছি না তো। গফুর দা' ই তো। তেমনই লম্বা, চওড়া কাঁধ। শুধু ক্ষয়ে গেছে আগের সেই শরীরটা।
জয়ন্ত বলল---তোমার ভ্রম হয়েছে, সুচি। চন্দন খোঁজ নিয়েছে লোকটার ব্যাপারে। ও' কোনো গফুর নয়। ও' একটা নেশাখোর। ফুটপাতে শুয়ে থাকে।
---ধ্যাৎ। গফুর দা'কে চিনতে পারবো না আবার? ছোট বেলায় গ্রামের বাড়ি গেলে গফুর দা'ই তো আম ভেঙে দিত, ঘুড়ি ওড়াতো। এখন দারিদ্রতায় সেই চেহারা আর নেই। এখন নাকি পার্ক সার্কাসে ঘরভাড়া নিয়ে থাকে। দেখে বড্ড মায়া হল জানো। শুধু বলল 'সুচি কিছু খেতে দিবি রে'।
---খেতে দিলে? মানে নোংরা লোকটা আমাদের ড্রয়িং রুম পর্য্ন্ত এসেছিল! ঘিনঘিন করে উঠল জয়ন্তের গা। লোকটার চেহারাটা তার এখনো মনে আছে, বড্ড নোংরা।
---না না, নীচ তলাতেই বসে খেল। কি করব বলো। একটা পরিচিত লোক বাড়ি এসে খেতে চাইছে। না দিয়ে পারি কি?
জয়ন্ত বুঝতে পারলো সুচিত্রা যখন এতটা নিশ্চিত হয়ে বলছে, ভুল বলছে না। লোকটা সুচিদের গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের নিরুদ্দেশ হওয়া ছেলে গফুরই। কিন্তু লোকটা যে নেশার জন্য টাকা চাইতে তার বাড়ি পর্যন্ত এসেছে বুঝতে বাকি নেই। তাই সে বলল---সে যাই হোক ঐ লোককে বাড়িতে উঠতে দিও না। নোংরা ভিখিরি গাঁজাখোর লোক একটা, একবার পয়সা দিলে বার বার পয়সা নিয়ে যাবে।
সুচিত্রা চুপ করে গেল। পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল সে। জয়ন্ত অনেকক্ষণ টানটান হয়ে শুয়েছিল, এবার ঘুরে পড়ার উপক্রম নিতেই সুচি অকস্মাৎ জয়ন্তের দিকে ঘুরে পড়ে বললে---আচ্ছা তোমরা তো অনেক ড্রাগ, মদের নেশাধরা রোগীর নেশা ছাড়াও। গফুর দা'র নেশা ছাড়ানো যায় না?
জয়ন্ত হাসতে লাগলো সুচির কথা শুনে। বলল---ঘুমোও সুচি। রাত হল। কাল আবার মর্নিং আছে। এই ভবঘুরের কথা এত ভেবে লাভ নেই। দেখো হয়ত ইতিমধ্যে কত দুরারোগ্য রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা। এ' যে লোক দেখলুম, একে স্বয়ং ভগবান নেমে এলেও নেশা ছাড়াতে পারবে না।
চলবে।