Thread Rating:
  • 45 Vote(s) - 2.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প
#39
পরের দুটোদিন কিভাবে কেটে গেলো তমাল ও গার্গী বুঝতেই পারলো না। কখন সকাল হলো, কখন বেলা গড়িয়ে রাত হলো আর কখনই বা সেই রাতের মৃত্যু ঘটে নতুন দিনের জন্ম হলো তা দুজনের খুব একটা জানা হলো না। কারণ তারা ঘর থেকে বেরই হলো খুব কম। খাওয়ার সময় টুকু বাদ দিলে দুজনে প্রায় হানিমুনে যাওয়া নবদম্পতির মতো দরজা বন্ধ করেই রইলো। গার্গীর দাদা সকালেই কাজে বেরিয়ে যায়। বাবা অসুস্থ, একজন আয়া তার কাছেই থাকে সারাদিন। দোতলায় তার আসার প্রয়োজন হয় না। রান্নার মাসি এসে রান্নাঘরেই কাজ সেরে চলে যায়। সুতরাং উপরের ধুন্ধুমার যুদ্ধের খবর তাদের কানে পৌঁছায় না।


গার্গী যেন ক্ষেপেই গেছে। তমালকে একান্ত করে পেয়ে তার শরীর যেন জীবন্ত আগ্নেয়গিরির মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। লাভা উদগীরণ থামছেই না তার। তমাল সাধ্য মতো চেষ্টা করে চলেছে তার শরীরের খিদে মেটাবার। যেভাবে যতোবার খুশি চাইছে গার্গী, তমাল তার ইচ্ছাপূরণ করে চলেছে। কিন্তু গার্গীর খিদে কিছুতেই মিটছে না।

তমাল একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হবার দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতো হয়তো আরও দু একদিন এমন চললে, তখনি এলো মেইলটা। গার্গীর নতুন অফিস জরুরী ভিত্তিতে দিল্লিতে যেতে বলেছে। তবে তার ছুটি বাতিল করেনি। দুদিনের জন্য যেতে হবে তাকে একটা মিটিং অ্যাটেন্ড করতে। পরের সপ্তাহেই তাকে যেতে হবে।

তাই ঠিক হলো আপাতত তাদের যৌন খেলায় বিরতি ঘোষণা করে গার্গী দিল্লি ঘুরে আসবে। যাতায়াত নিয়ে সপ্তাহ খানেক সে থাকবে দিল্লিতে, তারপর গরলমুরিতে ফিরে আরও কিছুদিন ছুটি কাটাবে পাকাপাকি ভাবে দিল্লিবাসী হবার আগে। গার্গী বললো, তোমাকে ছাড়তে মন চাইছে না তমালদা, কিন্তু যেতেই হবে। এক কাজ করা যায়। চলো কালই আমরা অদিতিদের বাড়িতে চলে যাই। ওখানে গিয়ে যদি তোমার মনে হয় রহস্যটা তুমি সমাধান করবে, তাহলে থেকে যাবে। আমি ফিরে এসে যোগাযোগ করবো তোমার সাথে। আর যদি তোমাকে অদিতির পিসি সিলেক্ট না করে, তাহলে ওখানেই দুদিন তোমার সাথে হোটেলে মজা করে দিল্লি চলে যাবো। তমাল বললো, এটা খুব ভালো পরিকল্পনা। কাজটা যদি করতেই হয়, তাহলে জলদি করাই উচিৎ। যতো সময় নষ্ট হবে, আরও জটিল হয়ে যাবে।

পরের দিন খুব ভোরে রওনা হবে তারা অদিতিদের বাড়ি, আসানসোল এর উদ্দেশ্যে। তাই সেদিন সন্ধ্যা থেকেই পর পর তিনবার গার্গীকে শান্ত করতে হলো। দশটার সময় ডিনার সেরে মুক্তি পেলো তমাল। নিজের ব্যাগটার বদলে গার্গীর আনা একটা বিদেশী লাগেজে গার্গী নিজের হাতে গুছিয়ে দিলো সবকিছু।

সকালে গার্গীদের স্করপিওটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তারা। ড্রাইভার ছেলেটি গার্গীদের গ্রামেই থাকে। মদন নাম, চটপটে ছেলে। তমাল নিজেই ড্রাইভ করতে পারতো, কিন্তু আসানসোল অঞ্চলটা খুব একটা চেনে না তমাল, তাই মদনকেই সাথে নেওয়া হয়েছে। গার্গী আসানসোল থেকেই দিল্লির ট্রেন ধরবে। তমাল যতোদিন থাকবে, গাড়িটা তার সাথেই থাকবে, গার্গীর কড়া হুকুম।

গাড়ি ছুটে চলেছে বর্ধমানের দিকে। পিছনে তমালের হাত নিজের মুঠোতে নিয়ে বসে আছে গার্গী। যেন বিয়ের দুদিন পরেই স্বামী বিদেশ চলে যাচ্ছে এবং বিরহ কাতর স্ত্রী তাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে যাবার সময় এক মুহুর্তও তার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হতে চাইছে না। মনে মনে হাসলো তমাল গার্গীর পাগলামি দেখে। ভালোও লাগছে তার, এমন ভালোবাসা তো বিরল! বন্ধন-ফাঁস মুক্ত সত্যিকারের ভালোবাসা।

গাড়ির একঘেয়ে কম্পন আর আওয়াজে তমালের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো গার্গী। তার চুলের মিষ্টি গন্ধটা উপভোগ করছে তমাল। পথে বুদবুদে একবার ল্যাংচা ব্রেক দেওয়া হয়েছে। ল্যাংচার সাইজ দেখে গার্গী তমালকে আড়ালে বললো, মনে হচ্ছে তোমার জিনিসটাই অনেকগুলো কপি করে রসে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। একটা ল্যাংচা মুখে তোলার সময় এমন মুখভঙ্গি করলো যেন সে তমালের বাঁড়াটাই  মুখে ঢোকাচ্ছে। তারপর চোখ উলটে চিবোতে লাগলো। অনেক কষ্টে হাসি চাপলো তমাল। বললো জিনিসটা সাইজে আমার মতো কিন্তু তোমার জিনিসের মতোই রসালো। গার্গী খিলখিল করে হেসে বললো, এ ক'দিনে কি যথেষ্ট রসে চোবানো হয়নি ওটা, উফফফফফফ্‌ দেখেই গা টা শিরশির করছে!

শুরু হলো আবার একঘেয়ে পথচলা। কথা ছিলো দুর্গাপুরে ঢুকে কুহেলির সাথে দেখা করে তার জন্য গার্গীর আনা স্পেশাল গিফটটা দিয়ে যাবে। সারপ্রাইজ দেবে বলে আগে থেকে তাকে জানানো হয়নি কিছুই। কিন্তু কুহেলিদের বাড়িতে পৌঁছে নিজেরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেলো। কুহেলিরা সবাই দক্ষিণ ভারত বেড়াতে গেছে। বাড়ির কেয়ারটেকারের হাতে ফাইভ-পিস ডিলডো সেটের র‍্যাপিং পেপারে মোড়া বাক্সটা তুলে দিয়ে গার্গী একটা ছোট চিরকুটে সংক্ষেপে বিষয়টা লিখে দিয়ে দিলো। কুহেলি থাকলে লাঞ্চটা হয়তো এখানেই সারা যেতো, কিন্তু এখন সেটা একটা হোটেলে সেরে নিতে হলো।


জি.টি রোড ধরে আসানসোল পৌঁছাতে বেলা গড়িয়ে গেলো। জি.টি. রোড থেকে বায়ে ঘুরে বিবেকানন্দ সরনি হয়ে লায়ন্স ক্লাব রোড। সেখান থেকে আবার বায়ে মোড় নিয়ে শ্রীহরি গ্লোবাল কলেজ পিছনে ফেলে নুনিয়া নদীর দিকে এগিয়ে গেলে রাস্তার ডান দিকে অদিতিদের বাড়ি।

বাড়ি বললে ভুল হবে, ছোটখাটো প্রাসাদ বলাই ভালো। গার্গী বলেছিলো বটে যে তারা টাকার কুমির, কিন্তু এতো বড় কুমির তা আশা করেনি তমাল। চারতলা বাড়ি। নীচে পার্কিং স্পেস। দুটো বিলাসবহুল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। আরও আছে বোঝা যাচ্ছে ফাঁকা জায়গার পরিমাপ দেখে। গার্গীকে জানালা দিয়ে মুখ বার করতে দেখেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো। বোঝাই যায় গার্গী এই বাড়ির সবার কাছে বেশ পরিচিত। সেও দেখলাম দারোয়ানের নাম ধরেই কুশল বিনিময় করলো। মদন একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি গ্যারেজ করে দিলো।

দারোয়ান বোধহয় তাদের আসার খবর উপরে পৌঁছে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। গাড়ি থেকে নেমে ব্যাগ নামাতে নামাতেই প্রথমে দেখা গেলো একটি অল্প বয়সী মেয়ে এসে দাঁড়ালো সিঁড়ির কাছে। কিন্তু কাছে না এসে সেখান থেকেই দেখতে লাগলো তমাল আর গার্গীকে। মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগেই রয়েছে তার, কিন্তু চোখ দুটো ভীষণ রকম চঞ্চল। বোঝাই যায় এ মেয়ে শান্ত স্বভাবের মোটেই না, চপলা বালিকা। না বালিকা নয় বছর কুড়ি বয়স হবে তার। দেখতে মোটামুটি সুশ্রী, তবে শরীরের বাঁধন একদম টাইট, পুরুষের চোখ টানতে সক্ষম।

মেয়েটির পিছন থেকে একটা মৃদু ধমক শুনে সেদিকে তাকিয়ে তমাল দেখলো আর একটি ডানাকাটা পরী হাজির হয়েছে। দাঁড়িয়ে কি দেখছিস বন্দনা? এগিয়ে ব্যাগ গুলো নিতে পারছিস না? এগুলোও কি বলে দিতে হবে নাকি?.... বলতে বলতে দুহাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলো সুন্দরী। যেভাবে দৌড়ে এলো তমাল তো ভাবলো তাকেই জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু একটুর জন্য টার্গেট মিস করে টর্নেডো আছড়ে পড়লো পাশে দাঁড়ানো গার্গীর উপরে। তমাল অনুমান করলো ঝড়ের নাম অদিতি!

কোলাকুলি পর্ব শেষ হলে অদিতি নমস্কার করলো তমালকে। বললো, চলুন, চলুন তমালদা, ভিতরে চলুন। আসতে কোনো কষ্ট হয়নি তো? তমাল মুচকি হেসে বললো, না পথে কষ্ট হয়নি, কষ্ট পেলাম এখানে এসে। অদিতি অবাক হয়ে বললো, কেন? কি হয়েছে তমালদা? তমাল বললো, একই বাড়িতে বেড়াতে এসে অভ্যর্থনা বৈষম্য দেখলে কষ্ট লাগবে না? গার্গীর জন্য কোলাকুলি আর আমার জন্য শুকনো নমস্কার?

লজ্জায় লাল হয়ে গেলো অদিতি। যেন মাটিতে মিশে যেতে চাইছে সে। কিন্তু পিছন থেকে এলো খিলখিল আওয়াজের শব্দ। বন্দনা শুনতে পেয়েছে তমালের কথা। মুখে হাত চাপা দিয়ে দুলে দুলে হাসছে সে। অদিতি আবার ধমক দিলো তাকে... না হেসে ব্যাগ গুলো নিয়ে উপরে যা, বড্ড ফাজিল হয়েছিস তুই! বন্দনা হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে তমালের হাত থেকে ব্যাগটা নিতে গেলে সে বাধা দিলো। বললো, না না, তোমায় নিতে হবে না, আমিই নিয়ে যাচ্ছি। বন্দনা তখন গার্গীর ব্যাগটা নিয়ে উপরে চলে গেলো। অদিতিও তমাল আর গার্গীকে  লিফটে করে উপরে নিয়ে গেলো।

তমালের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে ব্যাগ রেখে তারা প্রথমেই গেলো অদিতির পিসিমার ঘরে। বিছানায় হেলান দিয়ে একটা কীর্তন জাতীয় গান শুনছিলেন মধুছন্দা মুখার্জি। বয়স ষাটের কাছাকাছি। কিন্তু দেখতে পঞ্চান্ন'র বেশি মনে হয়না। মাথায় কাঁচাপাকা চুল, চোখে একটা মোটা পাওয়ারের চশমা। তমালরা ঘরে ঢুকতে সেই চশমার ভিতর দিয়ে এমন ভাবে তাকালেন দেখেই বোঝা যায় দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে। অদিতি কাছে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো। গার্গী গিয়ে তাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো আর তমাল হাতজোড় করে নমস্কার জানালো।

শান্ত স্বরে তিনি অদিতিকে বললেন, ওরা অনেক জার্নি করে এসেছেন, ওদের খাওয়াদাওয়া এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করো। পরে কথা হবে। সবাই পিসিমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

পিসিমার ঘর এবং ডাইনিংটা দোতলায়। পিসির ঘরের পাশেই বন্দনা থাকে, অদিতি জানালো। দোতলার সিঁড়ির পাশের ঘরে অদিতির দাদার ঘর। তমাল বললো, বন্দনা তোমার কে হয় অদিতি? অদিতি বললো পিসিমার পি.এ কাম পালিত কন্যা। এক অনাথালয় থেকে নিয়ে এসেছেন ওকে। আগে বাড়ির কাজকর্ম করতো, কিন্তু এখন পিসিমার পেয়ারের লোক, তাই কাজ কমেছে। সারাদিন টৈ টৈ করা আর আড়িপাতা তার কাজ। তমাল আবার প্রশ্ন করলো, আর কে কে আছেন বাড়িতে? অদিতি বললো, সব বলছি, আগে বিশ্রাম নিয়ে একটু জলখাবার খেয়ে নিন তো! এই কথা বলে তমালের ঘরে তমালকে রেখে অদিতি গার্গীকে নিয়ে চলে গেলো।

তমালের জন্য যে ঘরটা বরাদ্দ হয়েছে সেটা তিনতলায়। অদিতির রুমটাও তিনতলাতেই, তমালের ঘরের ঠিক বা'পাশে। এছাড়া আরও চারটে রুম আছে এই তলায়। তমাল বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ট্রাউজার্স আর টি-শার্ট পরে নিলো। কিছুক্ষণের ভিতরে প্লেট ভর্তি খাবারদাবার নিয়ে গার্গী আর অদিতি হাজির হলো। আঁতকে ওঠার ভান করে তমাল বললো, ওরে বাবা! করেছো কি? মেরে ফেলতে চাও নাকি?


গার্গী বললো, না মেরে ফেলার ইচ্ছা মোটেও নেই, বরং যাতে তুমি মারতে গিয়ে ক্লান্ত না হও, তাই অদিতি বেশি করে দিয়েছে। কথা শেষ হতেই অদিতির এক ভয়ঙ্কর চিমিটি খেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো গার্গী। তমাল হাসতে লাগলো হো হো করে। সেটা দেখে অদিতি আরও লজ্জা পেয়ে গার্গীর পিঠে মুখ লুকালো।

তমাল বললো, যুদ্ধ সমানে সমানে হয়। দুর্বল প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করে মজা নেই। তাই তোমরাও শক্তি সঞ্চয়ে আমার সাথে যোগ দাও। গার্গী বললো, আমাদের খাবার ডাইনিং এ আছে, তুমি শুরু করো। তমাল বললো, মানে? আমি একা খাবো নাকি? তা হবে না, হয় আমিও ডাইনিং এ যাচ্ছি নাহয় তোমরা এখানে নিয়ে এসো তোমাদের জলখাবার।

গার্গী অদিতিকে ইশারা করতেই সে চলে গেলো। তমাল বললো, এসেই বেচারিকে লজ্জায় ফেলতে শুরু করলে? কি ভাবলো বলোতো মেয়েটা? তুমি না....!

গার্গী বললো, ইস্‌, তুমি কি ভাবলে তোমাকে এখানে শুধু রহস্য সমাধান করতে আনা হয়েছে? এটা একটা ফাঁদ। রহস্য আছে কি নেই জানা নেই, কিন্তু আমার বান্ধবীর মনে তোমাকে নিয়ে বিস্তর রহস্য দানা বেঁধে আছে। রোজই ফোনে তোমাকে নিয়ে কথা হয়। অদিতি প্রায় ক্ষেপে উঠেছে তোমার জন্য। একটু লাজুক, তাই বলতে পারছে না। নাহলে যে পরিমাণ গরম হয়ে আছে, এতোক্ষণে তোমাকে খেয়ে ছিবড়ে করে দিতো।

বলতে বলতেই দুটো প্লেট দুহাতে নিয়ে অদিতি ঘরে ঢুকলো। বললো কি বদনাম করা হচ্ছে আমার নামে শুনি? গার্গী বললো, তোর একটু ইনট্রো দিয়ে রাখছি তমালদাকে, যাতে আসল সময়ে সময় নষ্ট না হয়। আবার অদিতি চোখ পাকালো গার্গীর দিকে ফিরে। তারপর তমালের দিকে ফিরে বললো, ওর কথা শুনবেন না তো তমালদা, ভীষন ফাজিল ও।

তমাল তখনি আর কিছু না বলে অদিতির হাত থেকে প্লেটদুটো নিয়ে বেডসাইড টেবিলে রেখে দুটো চেয়ার টেনে নিলো। নিজে বসলো বিছানার কোনায়।

তিনজন এরপরে খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো। তমাল বললো, তোমার দাদা নিশ্চয়ই বাড়িতে নেই? কি নাম তার? অদিতি বললো, না দাদার ফিরতে ফিরতে রাত হয়। তার নাম রাহুল মুখার্জি। 

আর সেই ছেলেটি? তোমাদের সেক্রেটারি? তার অবস্থা এখন কেমন? অদিতি বললো, রাজীব এখন অনেকটা ভালো। তবে কাজে যোগ দেবার মতো সুস্থ হয়নি। আঘাতটা বেশ জোরালোই ছিলো। 

কোথায় থাকে সে? প্রশ্ন করলো তমাল। অদিতি বললো, ওর বাড়ি রানীগঞ্জে, তবে আপাতত আছে আসানসোলেই, ওর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। এমনিতে চারতলার একটা ঘরে ওর থাকার ব্যবস্থা করা আছে।

তোমাদের বাড়িতে কে কে কোন কোন ঘরে থাকে?... জানতে চাইলো তমাল।

একদম নীচের তলায়, মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকে চাকরবাকর, দারোয়ান এবং ডাইভারেরা। সবার জন্য বাড়ির পিছন দিকে কোয়ার্টার দেওয়া হয়েছে। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা অংশে ব্যবস্থা আছে। দোতলায় থাকেন পিসি, তার ঘরের বা দিকে ডাইনিং রুম আর ডান দিকে থাকে বন্দনা। উলটো দিকে দাদা থাকে দুটো রুম নিয়ে। অফিসের কাজের জন্য একটা রুম ব্যবহার করে, অন্যটা বেডরুম। বেডরুমটা সিঁড়ির পাশেই। একদম শেষের রুমটা ফাঁকা পড়ে আছে, কখনো অতিথি বেশি এলে ব্যবহার করা হয়। আগে ওই রুমে পুরানো ম্যানেজার সুরেশ বাবু থাকতেন।

তিনতলাতে বারান্দার একদিকের প্রথম ঘরটা গেস্ট রুম, মানে এখন যেটাতে আছি আমরা। তারপরে থাকি আমি, দুটো ঘর নিয়ে। অপর দিকে শেষ ঘরটা দিদি তার মেয়েকে নিয়ে থাকে। তার পাশের ঘরটা দিদির মেয়ের পড়ার ঘর। এবং এই ঘরের উলটো দিকে আর একটা গেস্টরুম, যেটাতে গার্গী থাকবে।


অদিতিকে থামিয়ে প্রশ্ন করলো তমাল, তোমার দিদি আর তার মেয়েকে তো দেখছি না? তোমার দিদির নাম কি? অদিতি বললো, দিদির নাম মৌপিয়া সেন। বয়স পয়ত্রিশ। তার মেয়ে শিখা, তিন বছর হলো বয়স। দিদির বিয়ের বেশ কিছুদিন পরে শিখা হয়। লোকের মুখে শুনতাম তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ভালো নয়। তবে শিখা জন্মাবার পরেই সেটা চরমে পৌঁছায় এবং বছর দুয়েক হলো এক বছরের মেয়েকে নিয়ে এখানে চলে আসে। এখন বোধহয় দিদি শিখাকে কলেজ থেকে আনতে গেছে। চলে আসবে কিছুক্ষণের ভিতরেই।

তমাল বললো, বেশ, বুঝলাম... তারপরে যা বলছিলে বলো। অদিতি আবার বলতে শুরু করলো...

এরপরে হলো চারতলা। প্রতি তলার মতো এই তলাতেও ছটা ঘর। একটা ঘরে থাকতো রাজীব। দুটো ঘর অফিসের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্টোর রুম দুটো আর একটা ফাঁকা ঘরও আছে প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য।

তমাল বললো, একটা প্রশ্ন করতে পারি? অদিতি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই সে বললো, গার্গী তোমার বন্ধু, অথচ তোমার পাশের ঘরটা তাকে না দিয়ে আমাকে দিলে কেন? 

প্রশ্নটার ভিতরে একটা সুক্ষ্ম ইঙ্গিত আছে বুঝে অদিতি লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। মুখ নীচু করে বললো, ওই শয়তানটার জন্য। আমি ওকেই দিতে চেয়েছিলাম, ও মানা করলো। গার্গী বললো, হ্যাঁ আমিই এই ঘরটা তোমাকে দিতে বলেছি। আমি তো দুদিন পরেই চলে যাবো। তখন তোমাদের রাত্রিকালীন অভিসারে যাতে অসুবিধা না হয় তাই এই ব্যবস্থা করলাম। তখন আবার তোমার ঘর চেঞ্জ করাটা ভালো দেখাতো না। গার্গীর কথা শুনে অদিতি আরও লাল হয়ে তার গায়ে একটা আদুরে চড় মারলো।

জলখাবারের পাট শেষ হলে তমালকে বিশ্রাম করতে দিয়ে দুজনে চলে গেলো। তমালও শরীরটা নরম বিছানায় এলিয়ে দিয়ে একটা ছোট্ট ঘুম দিয়ে নিলো অসময়ে। ঘুম ভাঙলো অদিতির ডাকে। চা নিয়ে এসেছে সে। তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে তাকে বসতে বললো তমাল। জিজ্ঞেস করে জানলো গার্গী তখনো ঘুমাচ্ছে। 

তমাল অদিতিকে বললো, তোমাদের তিন বন্ধুর সম্পর্ক কেমন ছিলো আমি জানি অদিতি। আর আমার সাথে গার্গী এবং কুহেলির রিলেশনও তুমি জানো, গার্গী তোমাকে সব জানিয়েছে, তা বলেছে আমাকে। তাই প্রথমেই তোমাকে একটা কথা জানিয়ে দেই, আমার সাথে কোনো রকম ফর্মালিটি করার প্রয়োজন নেই। আপনিও বলবে না। তুমি করে বললেই বেশি খুশি হবো। অদিতি মিষ্টি করে হেসে ঘাড় নাড়লো। তমাল আবার বললো, দেখো অদিতি, তোমাদের বাড়িতে যে কারণে আমি এসেছি সেটা বেশ জটিল বলেই আমার ধারণা। আমার সাথে আলোচনার জন্য সাথে শালিনী আসতে পারেনি। তাই খোলামেলা আলোচনার জন্য আমার কাউকে চাই। আপাতত তুমি কি আমার সহকারী হতে রাজি আছো?

অদিতি বললো, নিশ্চয়ই,  সেটা তো আমার পরম সৌভাগ্য। তাকে থামিয়ে দিয়ে তমাল বললো, কিন্তু সবার আগে একটা কথা জানাই। এটা তদন্তের প্রথম শর্ত, কেউ সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। এমনকি তুমিও নও। তাই যা বলবে সত্যি বলবে। মিথ্যা বললে শুধু শুধু দেরি হবে, এবং নিজেও অযথা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে।

অদিতি বললো, বুঝতে পেরেছি তমালদা। ভেবোনা, সব সত্যিই বলবো। মানে আমি যতোটা জানি আর কি। তমাল বললো, গুড, ভেরি গুড। তাহলে গার্গী আসার আগে একটা ব্যাপার জেনে নেই তোমার কাছে। সেক্রেটারি ছেলেটি, মানে রাজীবকে তোমার কেমন লাগে? তোমার সাথে তার সম্পর্ক কেমন?

অদিতি কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে রইলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো.....

রাজীব তার নিজের কাজে দক্ষ। মানে ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপার গুলো ভালোই বোঝে। এটা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই। এই বাড়িতেই একজন ফ্যামিলি মেম্বারের মতো থাকতো এবং সবার সাথেই তার সহজ সম্পর্ক ছিলো শুধু দাদা বাদে। কি কারণে জানি না, দাদা তাকে খুব একটা পছন্দ করতো না। মাঝে মাঝেই সামান্য কারণে বেশ বকাঝকা করতো।

রাজীবের আর একটা গুন হলো, সে বেশ হ্যান্ডসাম। এবং মেয়েদের প্রতি একটু বেশি দূর্বল। উলটোটাও সত্যি, মেয়েরা খুব সহজেই তার দিকে আকৃষ্ট হয়। সে সেই সুযোগটা পেলে সুদে আসলে মিটিয়ে নেয়।

তমাল বললো, তার মানে তুমিও তার প্রতি আকৃষ্ট? অদিতি একটু লজ্জা পেয়ে মুখ নীচু করে মাথা নাড়লো। তারপর একটা শ্বাস চেপে মুখ তুলে বললো, হ্যাঁ, অস্বীকার করবো না, প্রথমদিকে রাজীবকে দেখার পরে আমি একটা প্রবল টান অনুভব করতাম তার প্রতি। তার চোখ আর ব্যবহার দেখে বুঝতাম সেও একই রকম ভাবে আমার জন্য দূর্বল।
Tiger

                kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
[+] 3 users Like kingsuk-tomal's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অন্তরের বন্ধন- তমালের গোয়েন্দা গল্প - by kingsuk-tomal - 16-09-2024, 07:30 PM



Users browsing this thread: