14-09-2024, 04:54 PM
পর্ব: ৪
কাল রাত থেকেই ব্যাগ গোছানো চলছে পিউয়ের। যতটা না মেয়ে ব্যাতিব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি সুচিত্রা। এ' কদিন কেনাকাটাও কম হল না।
ভোরে ট্রেন হাওড়া স্টেশন থেকে। জয়ন্ত চেয়েছিল মেয়ে ফ্লাইটে যাক। পিউ একবারই প্লেনে চেপেছে সেটা বাবা মায়ের সাথে। সেবার সুচিত্রাও প্লেনে চেপেছিল প্রথমবার। জয়ন্ত অবশ্য ফ্লাইটে গেছে বহুবার। পিউ একা একা সবটা সামলাতে পারবে না বলে সুচিত্রা বারণ করেছে। তাই ট্রেনেই যাচ্ছে মেয়ে।
আজ রাতটা জাগতে হবে। বাড়ির আদরের একমাত্র মেয়ে তার, যাচ্ছে ভিন রাজ্যে পড়াশোনা করতে। এ' শুধু সুচিত্রা নয় জয়ন্তের কাছেও টেনশনের। অংশুও জেগে রয়েছে। সেও যাবে দিদিকে ট্রেনে তুলে দিতে।
ওরা ঠিক ভোর তিনটেতে বেরোলো। তার আগে খাবার-দাবার সব গুছিয়ে দিয়েছে সুচি। জয়ন্ত নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছে। ভোররাতে আর চন্দনকে ডিস্টার্ব করেনি। এছাড়া চন্দনও আর কতদিনের, ইতোমধ্যেই ও' জানিয়ে রেখেছে ওর এক শ্যালক নাকি কোনো এক মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভারের চাকরিটা পাইয়ে দেবে। সেটা হলে পরে ও' চাকরি ছেড়ে দেবে। জয়ন্ত ঠিক করেছে এরপর আর ড্রাইভার রাখবে না। সে নিজেই চালাবে। তাই এখন থেকে প্রস্তুত হওয়া ভালো।
মেয়েকে ট্রেনে তুলে দেবার পর মুখটা শুকিয়ে গেছে সুচিত্রার। জয়ন্ত মেয়েকে একটু বেশিই ভালোবাসে। প্রথমবার মেয়ে কাছছাড়া হল। ফলে বেদনা তার মধ্যেও আছে।
ওরা ঘরে ফিরতে সুচি কাজে লেগে পড়ল। আজ ওর কলেজ নেই। ফলে ছবি এলে ওকে দিয়ে ঘর পরিস্কারে লেগে পড়বে। জয়ন্তের চোখে ঘুম ঘুম ভাব। সে ঠিক করল একটু পড়ে পড়ে ঘুমোবে।
অংশুরও মন খারাপ। তার বেড়ে ওঠা দিদির সাথে। টিভির রিমোট নিয়ে বসল সে। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর চলছে, ওখানকার সময়ের কারণে সবকটা টেস্ট ম্যাচ ভোরে সম্প্রচারিত হচ্ছে।
মা কাজে ব্যস্ত। চিঠিগুলোর ঘটনা ভোলার চেষ্টা করলেও অংশু এখনো ভুলতে পারে না। ভাবলো একবার মাকে জিজ্ঞেস করবে ঝুমুর মাসি আর ঐ গফুর সম্পর্কে? তারপর ভাবলো যদি মা খুব বকাবকি করে? মা ঝুমুর মাসির কাছের বন্ধু ছিল।নিশ্চই মা সবকিছু জানতো। কিন্তু মা কে জিজ্ঞেস করলে পাকা হয়েছ বলা বকাবকি শুনতে হবে সে কথা অংশু জানে। তাই ইচ্ছে হলেও জিজ্ঞেস করল না।
মায়ের পরনে গতকালের পরা বেগুনি রঙা সুতির নাইটিটা। অংশু দেখছিল তার মাকে। মায়ের যেন বিশ্রাম নেই। আজ কলেজ নেই তো বাড়ির এটা ওটা কাজ নিয়ে লেগে পড়েছে। মায়ের চেহারা পাতলা ছিপছিপে। উচ্চতা খাটো। বাবার উচ্চতাও খুব বেশি নয়, পাঁচ ফুট ছয় কি সাত হবে। তবু মা বাবার কাঁধের নীচেই। মায়ের উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি নয়। ইতিমধ্যেই অংশু বাবা এবং মা উভয়কেই উচ্চতায় ছাড়িয়েছে। মায়ের গায়ের রঙ খুব ফর্সা। বাবার গায়ের রঙও ফর্সা কিন্তু মায়ের মত নয়। অংশু খানিক মায়ের গায়ের রঙ পেয়েছে, দিদি পেয়েছে বাবার ধাত।
মায়ের একটা মিষ্টি মুখশ্রী আছে। মায়ের সর্বক্ষণ চশমা চোখেও সেই মুখশ্রী ফুটে ওঠে। অংশু ভাবলো কম বয়সে মায়ের রূপের চটক ছিল নিশ্চই, বিশেষ করে যখন মা আর বাবা প্রেম করত। মা-বাবার প্রেমের চিঠিগুলো সে গুছিয়ে নিয়ে এসেছে। ও' বাড়িতে পড়ে পড়ে নষ্ট হবে কেন, মায়ের যখন মুড ভালো থাকবে মাকে দিয়ে দেবে। মা-বাবার যৌবনের স্মৃতি তাদের কাছেই থাক।
মাকে লেখা বাবার চিঠিগুলোর কথা মনে করতেই আবার ঝুমুর মাসিকে লেখা তার প্রেমিকের চিঠিগুলো মনে এসে যায় অংশুর। বাবার চিঠিগুলো যেন কাব্য, এত সুন্দর হাতের লেখা আর কাব্যের জবাব মা কি দিয়েছিল কে জানে। বাবার কাছেই সে চিঠিগুলো পাওয়া যেতে পারে। নাকি মা শুধু বাবার হাতের লেখা আর সেন্স অব হিউমারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। মুচকি করে হেসে ফেলল অংশু।
মায়ের নজর এড়ালো না। বলল---কি রে? একা হাসছিস কেন?
---কই না তো? ঐ টিভি দেখে...
---খেলা দেখে কারোর হাসি পায়? যা দেখি, গেটটা খুলে দে। ছবি এলো বোধ হয়।
***
জয়ন্তের ঘুম ভাঙল যখন তখন দশটা। সুচিত্রার ডাকাডাকিতেই ঘুমটা ভাঙলো তার। বলল---কই গো? তোমার কোন জামা প্যান্টগুলো ময়লা হয়েছে দাও দেখি।
বিরক্ত হয়ে উঠল জয়ন্ত। বলল--দেখে নিয়ে যাও না। যেটা খুশি তোমার, কেচে দাও।
নাঃ এরপরে আর ঘুমাতে পারলো না জয়ন্ত। উঠে ব্রাশ করে বলল---চা দাও সুচি।
সুচি তখন বাথরুমে। ওখান থেকেই সাড়া দিয়ে ছবিকে নির্দেশ দিল---ছবি, তোর দাদাকে চা দে।
সকাল এগারোটার তীক্ষ্ণ রোদ এসে পড়েছে ছাদবারান্দায়। 'ছাদবারান্দা' নামটি জয়ন্তই রেখেছে। ব্যালকনি বলতে তার কেমন দ্বিধা হয়। সেজন্য ছেলে-মেয়েরাও এ বাড়ির ব্যালকনিকে ছাদবারান্দা বলে। জয়ন্ত তাকালো মিতার বাড়ির দিকে। মিতা কি উধাও হয়ে গেল? সুচিত্রাকে জিজ্ঞেস করবে একবার? যদি সুচিত্রা জয়ন্তের অতি উৎসাহী মনোভাব টের পায়?
না থাক। জয়ন্ত নিজেকে সংযত করল। সুচি ঠিক সেসময় জয়ন্তের সামনেই মেলে দিল একগাদা ভেজা কাপড়। আড়াল হয়ে গেল জয়ন্তের শখের ছাদবারান্দা থেকে মিতাকে দেখার মুক্ত দ্বার।
***
কাল রাত থেকেই ব্যাগ গোছানো চলছে পিউয়ের। যতটা না মেয়ে ব্যাতিব্যস্ত, তার চেয়ে বেশি সুচিত্রা। এ' কদিন কেনাকাটাও কম হল না।
ভোরে ট্রেন হাওড়া স্টেশন থেকে। জয়ন্ত চেয়েছিল মেয়ে ফ্লাইটে যাক। পিউ একবারই প্লেনে চেপেছে সেটা বাবা মায়ের সাথে। সেবার সুচিত্রাও প্লেনে চেপেছিল প্রথমবার। জয়ন্ত অবশ্য ফ্লাইটে গেছে বহুবার। পিউ একা একা সবটা সামলাতে পারবে না বলে সুচিত্রা বারণ করেছে। তাই ট্রেনেই যাচ্ছে মেয়ে।
আজ রাতটা জাগতে হবে। বাড়ির আদরের একমাত্র মেয়ে তার, যাচ্ছে ভিন রাজ্যে পড়াশোনা করতে। এ' শুধু সুচিত্রা নয় জয়ন্তের কাছেও টেনশনের। অংশুও জেগে রয়েছে। সেও যাবে দিদিকে ট্রেনে তুলে দিতে।
ওরা ঠিক ভোর তিনটেতে বেরোলো। তার আগে খাবার-দাবার সব গুছিয়ে দিয়েছে সুচি। জয়ন্ত নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছে। ভোররাতে আর চন্দনকে ডিস্টার্ব করেনি। এছাড়া চন্দনও আর কতদিনের, ইতোমধ্যেই ও' জানিয়ে রেখেছে ওর এক শ্যালক নাকি কোনো এক মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভারের চাকরিটা পাইয়ে দেবে। সেটা হলে পরে ও' চাকরি ছেড়ে দেবে। জয়ন্ত ঠিক করেছে এরপর আর ড্রাইভার রাখবে না। সে নিজেই চালাবে। তাই এখন থেকে প্রস্তুত হওয়া ভালো।
মেয়েকে ট্রেনে তুলে দেবার পর মুখটা শুকিয়ে গেছে সুচিত্রার। জয়ন্ত মেয়েকে একটু বেশিই ভালোবাসে। প্রথমবার মেয়ে কাছছাড়া হল। ফলে বেদনা তার মধ্যেও আছে।
ওরা ঘরে ফিরতে সুচি কাজে লেগে পড়ল। আজ ওর কলেজ নেই। ফলে ছবি এলে ওকে দিয়ে ঘর পরিস্কারে লেগে পড়বে। জয়ন্তের চোখে ঘুম ঘুম ভাব। সে ঠিক করল একটু পড়ে পড়ে ঘুমোবে।
অংশুরও মন খারাপ। তার বেড়ে ওঠা দিদির সাথে। টিভির রিমোট নিয়ে বসল সে। ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর চলছে, ওখানকার সময়ের কারণে সবকটা টেস্ট ম্যাচ ভোরে সম্প্রচারিত হচ্ছে।
মা কাজে ব্যস্ত। চিঠিগুলোর ঘটনা ভোলার চেষ্টা করলেও অংশু এখনো ভুলতে পারে না। ভাবলো একবার মাকে জিজ্ঞেস করবে ঝুমুর মাসি আর ঐ গফুর সম্পর্কে? তারপর ভাবলো যদি মা খুব বকাবকি করে? মা ঝুমুর মাসির কাছের বন্ধু ছিল।নিশ্চই মা সবকিছু জানতো। কিন্তু মা কে জিজ্ঞেস করলে পাকা হয়েছ বলা বকাবকি শুনতে হবে সে কথা অংশু জানে। তাই ইচ্ছে হলেও জিজ্ঞেস করল না।
মায়ের পরনে গতকালের পরা বেগুনি রঙা সুতির নাইটিটা। অংশু দেখছিল তার মাকে। মায়ের যেন বিশ্রাম নেই। আজ কলেজ নেই তো বাড়ির এটা ওটা কাজ নিয়ে লেগে পড়েছে। মায়ের চেহারা পাতলা ছিপছিপে। উচ্চতা খাটো। বাবার উচ্চতাও খুব বেশি নয়, পাঁচ ফুট ছয় কি সাত হবে। তবু মা বাবার কাঁধের নীচেই। মায়ের উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি নয়। ইতিমধ্যেই অংশু বাবা এবং মা উভয়কেই উচ্চতায় ছাড়িয়েছে। মায়ের গায়ের রঙ খুব ফর্সা। বাবার গায়ের রঙও ফর্সা কিন্তু মায়ের মত নয়। অংশু খানিক মায়ের গায়ের রঙ পেয়েছে, দিদি পেয়েছে বাবার ধাত।
মায়ের একটা মিষ্টি মুখশ্রী আছে। মায়ের সর্বক্ষণ চশমা চোখেও সেই মুখশ্রী ফুটে ওঠে। অংশু ভাবলো কম বয়সে মায়ের রূপের চটক ছিল নিশ্চই, বিশেষ করে যখন মা আর বাবা প্রেম করত। মা-বাবার প্রেমের চিঠিগুলো সে গুছিয়ে নিয়ে এসেছে। ও' বাড়িতে পড়ে পড়ে নষ্ট হবে কেন, মায়ের যখন মুড ভালো থাকবে মাকে দিয়ে দেবে। মা-বাবার যৌবনের স্মৃতি তাদের কাছেই থাক।
মাকে লেখা বাবার চিঠিগুলোর কথা মনে করতেই আবার ঝুমুর মাসিকে লেখা তার প্রেমিকের চিঠিগুলো মনে এসে যায় অংশুর। বাবার চিঠিগুলো যেন কাব্য, এত সুন্দর হাতের লেখা আর কাব্যের জবাব মা কি দিয়েছিল কে জানে। বাবার কাছেই সে চিঠিগুলো পাওয়া যেতে পারে। নাকি মা শুধু বাবার হাতের লেখা আর সেন্স অব হিউমারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। মুচকি করে হেসে ফেলল অংশু।
মায়ের নজর এড়ালো না। বলল---কি রে? একা হাসছিস কেন?
---কই না তো? ঐ টিভি দেখে...
---খেলা দেখে কারোর হাসি পায়? যা দেখি, গেটটা খুলে দে। ছবি এলো বোধ হয়।
***
জয়ন্তের ঘুম ভাঙল যখন তখন দশটা। সুচিত্রার ডাকাডাকিতেই ঘুমটা ভাঙলো তার। বলল---কই গো? তোমার কোন জামা প্যান্টগুলো ময়লা হয়েছে দাও দেখি।
বিরক্ত হয়ে উঠল জয়ন্ত। বলল--দেখে নিয়ে যাও না। যেটা খুশি তোমার, কেচে দাও।
নাঃ এরপরে আর ঘুমাতে পারলো না জয়ন্ত। উঠে ব্রাশ করে বলল---চা দাও সুচি।
সুচি তখন বাথরুমে। ওখান থেকেই সাড়া দিয়ে ছবিকে নির্দেশ দিল---ছবি, তোর দাদাকে চা দে।
সকাল এগারোটার তীক্ষ্ণ রোদ এসে পড়েছে ছাদবারান্দায়। 'ছাদবারান্দা' নামটি জয়ন্তই রেখেছে। ব্যালকনি বলতে তার কেমন দ্বিধা হয়। সেজন্য ছেলে-মেয়েরাও এ বাড়ির ব্যালকনিকে ছাদবারান্দা বলে। জয়ন্ত তাকালো মিতার বাড়ির দিকে। মিতা কি উধাও হয়ে গেল? সুচিত্রাকে জিজ্ঞেস করবে একবার? যদি সুচিত্রা জয়ন্তের অতি উৎসাহী মনোভাব টের পায়?
না থাক। জয়ন্ত নিজেকে সংযত করল। সুচি ঠিক সেসময় জয়ন্তের সামনেই মেলে দিল একগাদা ভেজা কাপড়। আড়াল হয়ে গেল জয়ন্তের শখের ছাদবারান্দা থেকে মিতাকে দেখার মুক্ত দ্বার।
***