14-09-2024, 04:52 PM
(This post was last modified: 27-10-2024, 10:18 AM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অংশু মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায় ঝুমুর মাসির ব্যক্তিগত চিঠিগুলো। কিন্তু তবু ভেতরে ভেতরে তার উদ্দীপনা কাজ করছে। মাধ্যমিকের পর যখন সে প্রথম লুকিয়ে পড়ল বন্ধু অভীকের দেওয়া নবোকভের লেখা মারাত্মক এডাল্ট উপন্যাস 'লোলিটা', কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিল বাবার ল্যাপটপে নেট সার্ফিং করে যৌন আবেদনময়ী মনিকা বেলুচির 'মালিনা' সিনেমাটি, তখন তার দেহে যেমন উত্তেজনা হয়েছিল তেমনই যেন হচ্ছে ঝুমুর মাসি আর তার দুধর্ষ প্রেমিক গফুরের প্রেমকাহিনীর প্রতি। বিশেষত ঐ একটি চিঠির সেই বাক্যটি যেখানে গফুর তার প্রেমিকার স্তনে স্যাডিস্টিক ভালোবাসায় কামড়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
মনে মনে ভাবলো ঝুমুর মাসি বেঁচে থাকলে নিশ্চই সে তার প্রেমিকের সাথে ঘর বাঁধত এতদিন। নিশ্চই তাদেরও ছেলে-মেয়ের বয়স হত তারই মত। নাকি ঝুমুর মাসির প্রেমিক ঝুমুর মাসি বেঁচে থাকতেই আর ফিরে আসেনি?
ভাবনার ব্যাঘাত ঘটল তার ডালিয়া মাসির ডাকে। ডালিয়া মাসি বললে---অংশু তোর দিদা ডাকছে।
***
জয়ন্ত বুঝতে পারছে এই লোকটা তার পেছন ছাড়ছে না। এভাবে তার নাম করে বহু লোককে ঠকাবে সে। এর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।
চন্দন গাড়ি স্টার্ট দিতেই সে বলল---চন্দন ঐ মাতালটার খোঁজ পেয়েছিলি না তুই?
---হ্যা ঐ পার্ক সার্কাসে থাকে শুনেছি।
---চল তো ওকে হাতে নাতে ধরি আজ।
চন্দনের হাসি থামেই না। বলল---স্যার, আপনি আবার সে গাঁজাড়ির পিছু নেবেন কেন?
---শালা! মস্ত ফেরেব্বাজ! কি করেছে জানিস? আমার নাম করে আমাদের এক ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে পয়সা নিয়েছে।
চন্দন বলল---স্যার, ছাড়ুন তো। নেশাখোরের স্বভাব, আবার ঠিক আসবে। তখন না হয় সিকিউরিটি ডেকে আচ্ছা করে ধোলাই দেবেন।
বাড়ি ঢুকে জামা কাপড় বদলে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল জয়ন্ত। সুচিত্রার মনটা খারাপ। জয়ন্ত জানে ছেলেকে একটু বেশিই ভালোবাসে সে। পিউ আবার বাবার নয়নের মনি। সুচি বলল---ছেলেটা আজ সাতদিন হল ওখানে। ডালিয়া ঠিক মত দেখাশোনা করছে কিনা কি জানি।
জয়ন্ত কাগজের পাতা উল্টে বললে----আঃ! খামোকা টেনশন করো। এত বড় ছেলে, এবার একটু একা সব শিখুক।
পিউ কলেজ থেকে ফিরল ঠিক সন্ধে ছ'টা নাগাদ। জিইই পরীক্ষায় রাঙ্ক করেছে ভালো সে। জয়ন্ত ভুলে গেলেও সুচিত্রা অবশ্য মনে রেখেছে। তাই বলল---কি রে কি হল?
পিউ ব্যাগটা ছুঁড়ে বলল---পরে বলছি। আগে খেতে দাও।
সুচি রান্না ঘরে যেতে না যেতেই পিউ বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল---বাবা, চেন্নাই আইআইটি পেয়েছি।
---সাব্বাশ! উঠে দাঁড়ালো জয়ন্ত। বললে---কই গো, আগে আমার মেয়ের মিষ্টি মুখ করো।
সুচিত্রা আজ শাড়ি পরেছে। ওভেনটা সবে জ্বালিয়ে ছিল। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল---কি হয়েছে?
---তোমার মেয়ে এবার চেন্নাই আইআইটিতে যাবে।
***
বাইরে ঝিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কলকাতার মত নয়, সামান্য বৃষ্টিতেই ইলেকট্রিক চলে গেছে। ডালিয়া মাসি হ্যারিকেন জ্বেলে দিয়ে গেছে দিদার পাশে। অংশু দিদার সাথে বসে গল্প করছে। সে বলল---দিদা আলি চাচা কে?
বৃদ্ধা মানসী দেবী বললেন---আলিভাই হল এ বাড়ির বহু পুরোনো কেয়ারটেকার। চন্দননগরে যখন থাকতুম। এ বাড়ির সব দেখাশোনা আলিই করত। ওর ভরসায় এতবড় বাড়ি, বাগান সব তোর দাদু ছেড়ে যেত।
---দিদা, আলি চাচাকে এখন দেখছি না তো?
বৃদ্ধা মানসী দেবী হেসে বললেন---ওকে দেখবি কি করে? আলি ভাই মারা গেল তোর দাদু মারা যাবার বছর দুই আগে।
---ওর ছেলে-মেয়ে নেই?
মানসী দেবী যেন কেমন একটা আনমনা হয়ে উঠলেন। তারপর বললেন---গফুর, আলি ভাইর ছেলে। ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত। পড়ালেখার খরচ তোর দাদু বহন করতে চেয়েছিল। পড়ল না। গ্রামের প্রাইমারি কলেজে গেলে মারামারি করে ফিরত। খেলাধুলায় তবে ছেলেটা ভালো ছিল। কত আর বয়স হবে, তেইশ চব্বিশ তখন। জুটমিলে কাজ করবে বলে পালালো। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। বেঁচে আছে কিনা কে জানে! বেচারা বুড়ো বাপ মরার সময়ও ছেলের হাতে জল পেল না। মেয়ে একটা আছে, জামিল। খানাকুলে বিয়ে হয়েছে। ওখানেই থাকে।
---আলি চাচাও কি এখানে থাকত?
---থাকতো তো। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত আলি ভাই এ' ভিটেতেই ছিল। ডোবার ওপারে টালির চালার ঘর আছে। আমার শ্বশুর যখন আলীকে ওপার থেকে এনেছিল, তখন থাকবার জন্য করে দিয়েছিল। সে ঘর এখনো আছে।
অংশু বুঝতে পারলো সেদিন যে দু' কামরার ভাঙা টালির ঘর দেখতে পেয়েছিল, সেটাই আসলে এ' বাড়ির কেয়ারটেকার আলী চাচার থাকার জায়গা।
গত সাতদিন ধরে ঝুমুর মাসির প্রেম নিয়ে অংশুর মনে যে কৌতূহল তৈরি করেছে তার সম্পূর্ন নিরসন হল আজ। গফুর এ' বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। ঝুমুর মাসি যতই দাদুর দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে হোক, মানুষ তো হয়েছে এ বাড়িতেই। তাই এ' বাড়ির মেয়েকে বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া আলি চাচারা মু-সলমান। বাগচী বাড়ির যে তাতে মানসম্মান থাকতো না সেটা ঝুমুর মাসিও জানতো। তাই তো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা ঝুমুর মাসির অকাল মৃত্যু হোক বা গফুরের না ফিরে আসা, যে কোনো কারণেই হোক আর পূর্ণতা পায়নি। ডালিয়া এসে বলল---অংশু তোর দিদি ফোন করেছে?
পিউ ভাইকে খবরটা দিল তার চেন্নাই আইআইটি পাবার কথা। মাত্র সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দিদি রওনা দেবে চেন্নাই। তাই অংশুকে ফিরে যেতে হবে।
++++++
মনে মনে ভাবলো ঝুমুর মাসি বেঁচে থাকলে নিশ্চই সে তার প্রেমিকের সাথে ঘর বাঁধত এতদিন। নিশ্চই তাদেরও ছেলে-মেয়ের বয়স হত তারই মত। নাকি ঝুমুর মাসির প্রেমিক ঝুমুর মাসি বেঁচে থাকতেই আর ফিরে আসেনি?
ভাবনার ব্যাঘাত ঘটল তার ডালিয়া মাসির ডাকে। ডালিয়া মাসি বললে---অংশু তোর দিদা ডাকছে।
***
জয়ন্ত বুঝতে পারছে এই লোকটা তার পেছন ছাড়ছে না। এভাবে তার নাম করে বহু লোককে ঠকাবে সে। এর একটা ব্যবস্থা করা দরকার।
চন্দন গাড়ি স্টার্ট দিতেই সে বলল---চন্দন ঐ মাতালটার খোঁজ পেয়েছিলি না তুই?
---হ্যা ঐ পার্ক সার্কাসে থাকে শুনেছি।
---চল তো ওকে হাতে নাতে ধরি আজ।
চন্দনের হাসি থামেই না। বলল---স্যার, আপনি আবার সে গাঁজাড়ির পিছু নেবেন কেন?
---শালা! মস্ত ফেরেব্বাজ! কি করেছে জানিস? আমার নাম করে আমাদের এক ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে পয়সা নিয়েছে।
চন্দন বলল---স্যার, ছাড়ুন তো। নেশাখোরের স্বভাব, আবার ঠিক আসবে। তখন না হয় সিকিউরিটি ডেকে আচ্ছা করে ধোলাই দেবেন।
বাড়ি ঢুকে জামা কাপড় বদলে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল জয়ন্ত। সুচিত্রার মনটা খারাপ। জয়ন্ত জানে ছেলেকে একটু বেশিই ভালোবাসে সে। পিউ আবার বাবার নয়নের মনি। সুচি বলল---ছেলেটা আজ সাতদিন হল ওখানে। ডালিয়া ঠিক মত দেখাশোনা করছে কিনা কি জানি।
জয়ন্ত কাগজের পাতা উল্টে বললে----আঃ! খামোকা টেনশন করো। এত বড় ছেলে, এবার একটু একা সব শিখুক।
পিউ কলেজ থেকে ফিরল ঠিক সন্ধে ছ'টা নাগাদ। জিইই পরীক্ষায় রাঙ্ক করেছে ভালো সে। জয়ন্ত ভুলে গেলেও সুচিত্রা অবশ্য মনে রেখেছে। তাই বলল---কি রে কি হল?
পিউ ব্যাগটা ছুঁড়ে বলল---পরে বলছি। আগে খেতে দাও।
সুচি রান্না ঘরে যেতে না যেতেই পিউ বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল---বাবা, চেন্নাই আইআইটি পেয়েছি।
---সাব্বাশ! উঠে দাঁড়ালো জয়ন্ত। বললে---কই গো, আগে আমার মেয়ের মিষ্টি মুখ করো।
সুচিত্রা আজ শাড়ি পরেছে। ওভেনটা সবে জ্বালিয়ে ছিল। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল---কি হয়েছে?
---তোমার মেয়ে এবার চেন্নাই আইআইটিতে যাবে।
***
বাইরে ঝিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কলকাতার মত নয়, সামান্য বৃষ্টিতেই ইলেকট্রিক চলে গেছে। ডালিয়া মাসি হ্যারিকেন জ্বেলে দিয়ে গেছে দিদার পাশে। অংশু দিদার সাথে বসে গল্প করছে। সে বলল---দিদা আলি চাচা কে?
বৃদ্ধা মানসী দেবী বললেন---আলিভাই হল এ বাড়ির বহু পুরোনো কেয়ারটেকার। চন্দননগরে যখন থাকতুম। এ বাড়ির সব দেখাশোনা আলিই করত। ওর ভরসায় এতবড় বাড়ি, বাগান সব তোর দাদু ছেড়ে যেত।
---দিদা, আলি চাচাকে এখন দেখছি না তো?
বৃদ্ধা মানসী দেবী হেসে বললেন---ওকে দেখবি কি করে? আলি ভাই মারা গেল তোর দাদু মারা যাবার বছর দুই আগে।
---ওর ছেলে-মেয়ে নেই?
মানসী দেবী যেন কেমন একটা আনমনা হয়ে উঠলেন। তারপর বললেন---গফুর, আলি ভাইর ছেলে। ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত। পড়ালেখার খরচ তোর দাদু বহন করতে চেয়েছিল। পড়ল না। গ্রামের প্রাইমারি কলেজে গেলে মারামারি করে ফিরত। খেলাধুলায় তবে ছেলেটা ভালো ছিল। কত আর বয়স হবে, তেইশ চব্বিশ তখন। জুটমিলে কাজ করবে বলে পালালো। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। বেঁচে আছে কিনা কে জানে! বেচারা বুড়ো বাপ মরার সময়ও ছেলের হাতে জল পেল না। মেয়ে একটা আছে, জামিল। খানাকুলে বিয়ে হয়েছে। ওখানেই থাকে।
---আলি চাচাও কি এখানে থাকত?
---থাকতো তো। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত আলি ভাই এ' ভিটেতেই ছিল। ডোবার ওপারে টালির চালার ঘর আছে। আমার শ্বশুর যখন আলীকে ওপার থেকে এনেছিল, তখন থাকবার জন্য করে দিয়েছিল। সে ঘর এখনো আছে।
অংশু বুঝতে পারলো সেদিন যে দু' কামরার ভাঙা টালির ঘর দেখতে পেয়েছিল, সেটাই আসলে এ' বাড়ির কেয়ারটেকার আলী চাচার থাকার জায়গা।
গত সাতদিন ধরে ঝুমুর মাসির প্রেম নিয়ে অংশুর মনে যে কৌতূহল তৈরি করেছে তার সম্পূর্ন নিরসন হল আজ। গফুর এ' বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। ঝুমুর মাসি যতই দাদুর দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে হোক, মানুষ তো হয়েছে এ বাড়িতেই। তাই এ' বাড়ির মেয়েকে বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া যায় না। তাছাড়া আলি চাচারা মু-সলমান। বাগচী বাড়ির যে তাতে মানসম্মান থাকতো না সেটা ঝুমুর মাসিও জানতো। তাই তো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা ঝুমুর মাসির অকাল মৃত্যু হোক বা গফুরের না ফিরে আসা, যে কোনো কারণেই হোক আর পূর্ণতা পায়নি। ডালিয়া এসে বলল---অংশু তোর দিদি ফোন করেছে?
পিউ ভাইকে খবরটা দিল তার চেন্নাই আইআইটি পাবার কথা। মাত্র সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দিদি রওনা দেবে চেন্নাই। তাই অংশুকে ফিরে যেতে হবে।
++++++