14-09-2024, 04:51 PM
পর্ব: ৩
আজ রবিবার। সকাল দশটায় ডাক্তার বাবু আসবেন বলে রোগীদের পরিবারেরর একটা তৎপরতা লেগে থাকে। জয়ন্তের একটা সমস্যা হল সে টানা রোগী দেখে তবেই লাঞ্চ করে।
এভাবে রোগী দেখতে দেখতে দেড়টা বাজল। সিস্টার বললেন---স্যার এবার আপনি যেতে পারেন। তবে সকালে যখন আরেকবার রাউন্ড দিয়ে যাবেন, তখন ২৭ নং বেডের পেশেন্টটাকে একটু লক্ষ্য করবেন। এক্সপায়ার করতে পারে।
জয়ন্ত উঠে গেল। টয়লেট সেরে হাতমুখ ধুয়ে বসে রইল খানিকক্ষণ। ঘাড়ের কাছটা ব্যথা করছে খানিক। ডিউটিতে থাকলে সে ভুলে যায় পরিবারের কথা, স্ত্রী-ছেলেমেয়ের কথা। মাথায় একবারও আসেনি আর মিতার কথাও। সেদিন রাতের ঘটনার পর আজ ছয় দিন হল। জয়ন্ত মিসেস ঘোষকে ছাদ বারান্দায় দেখতে পায়নি।
আসার সময় সুচিত্রা টিফিন বক্সে লাঞ্চ ভরে দিয়েছে। জয়ন্ত লাঞ্চ সেরে চন্দনকে ফোন করল। খাবারের পর হাত মুখ ধুয়ে বসেছিল রেস্ট নিতে। এক রোগীর পরিবার অপেক্ষা করছে বাইরে। ওয়ার্ড বয় এসে বললে---স্যার কেউ দেখা করতে চান আপনার সাথে।
জয়ন্ত বললে--ভেতরে ডাকো ওদের।
জয়ন্তেরই পেশেন্ট অপু নামে ছয় বছরের শিশুটি। এক্সিডেন্টে হাত ভেঙেছে। বেশ ক্রিটিকাল অপারেশন রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে তা হয় না। একমাত্র বেসরকারি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব। ওর বাবা মা এসেছে। রুগ্ন চেহারার দুটি মানুষ। শিশুটির বাবা ইতস্তত হয়ে বলল---স্যার, হাতের অপারেশন করতে তো অনেক খরচ। আমরা গরীব মানুষ স্যার। ছেলেটা হাত হারালে লেখা পড়া করবে কি করে?
জয়ন্ত হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। চন্দন আসতে এখনো দেরি আছে। ও হাসপাতালে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে বাসায় চলে যায়। আবার সময়মত চলে আসে।
জয়ন্তের একবার ট্রাস্টি বোর্ডের সাথে কথা বলা দরকার। শিশুটির জন্য যদি কিছু করা যায়। ওর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করে ডঃ মজুমদারের অফিসে ঢুকল জয়ন্ত।
ডঃ মজুমদার গাইনোর ডাক্তার। খুব দয়ালু মানুষ। দুস্থ রোগীর পরিবারের চিকিৎসায় সাহায্যের বিষয়ে ডাক্তারদের যে ট্রাস্টি আছে, তার দেখাশোনা করেন। মজুমদার জয়ন্তকে দেখেই বললেন---ডঃ দাশগুপ্ত আসুন।
কল্যাণ মজুমদার ডাক্তার হলেও পানের নেশা। কৌটো থেকে পান চিবিয়ে বললেন---বলুন।
জয়ন্ত সবটা গুছিয়ে বলল। মজুমদার বললেন---আপনি বলেছেন যখন একটা ব্যবস্থা করতে তো হবেই। তাছাড়া শিশুদের জন্য তো আমাদের আলাদা ফান্ড আছে।
জয়ন্ত খুশি হল। ডঃ মজুমদার পুনরায় বললেন---ওহ বলতে ভুলে গেছি আপনাকে, গতকাল একটি লোক এসেছিল। পার্ক সার্কাসে থাকে। কি যেন গফুর না কি নাম বলল। লোকটা আপনাকে চেনে।
জয়ন্ত অবাক হল। সেই ফেরেব্বাজ আবার এসেছিল! বলল--কি বলেন, ও আবার এসেছিল?
---কেন? লোকটা কি বদ নাকি?
---বদ মানে? একটা বদের ধাড়ি। কোথা থেকে আমার নাম ঠিকানা জোগাড় করে চিটিং করতে এসেছিল। আস্ত উন্মাদ একটা।
মজুমদারের গলায় হতাশা ঝরে উঠল। বলল---এই রে! আমারও তাই মনে হয়েছিল। কি বিচ্ছিরি গন্ধ গায়ে। নেশাটেশা করে মনে হয়। কিন্তু আপনার পরিচয় দিতে...
---আপনি টাকা দিয়েছেন নাকি ওকে?
---দিয়েছি মানে, বলল ওর নাকি বউ ক্যানসারের রোগী। দু' হাজার টাকা নিয়ে গেল।
---তারমানে আপনাকে ঠকিয়েছে। একটা নেশাখোর মাতাল। ফুটপাথে পড়ে থাকে পার্ক সার্কাসে। জঘন্য একটা লোক।
***
আজ রবিবার। সকাল দশটায় ডাক্তার বাবু আসবেন বলে রোগীদের পরিবারেরর একটা তৎপরতা লেগে থাকে। জয়ন্তের একটা সমস্যা হল সে টানা রোগী দেখে তবেই লাঞ্চ করে।
এভাবে রোগী দেখতে দেখতে দেড়টা বাজল। সিস্টার বললেন---স্যার এবার আপনি যেতে পারেন। তবে সকালে যখন আরেকবার রাউন্ড দিয়ে যাবেন, তখন ২৭ নং বেডের পেশেন্টটাকে একটু লক্ষ্য করবেন। এক্সপায়ার করতে পারে।
জয়ন্ত উঠে গেল। টয়লেট সেরে হাতমুখ ধুয়ে বসে রইল খানিকক্ষণ। ঘাড়ের কাছটা ব্যথা করছে খানিক। ডিউটিতে থাকলে সে ভুলে যায় পরিবারের কথা, স্ত্রী-ছেলেমেয়ের কথা। মাথায় একবারও আসেনি আর মিতার কথাও। সেদিন রাতের ঘটনার পর আজ ছয় দিন হল। জয়ন্ত মিসেস ঘোষকে ছাদ বারান্দায় দেখতে পায়নি।
আসার সময় সুচিত্রা টিফিন বক্সে লাঞ্চ ভরে দিয়েছে। জয়ন্ত লাঞ্চ সেরে চন্দনকে ফোন করল। খাবারের পর হাত মুখ ধুয়ে বসেছিল রেস্ট নিতে। এক রোগীর পরিবার অপেক্ষা করছে বাইরে। ওয়ার্ড বয় এসে বললে---স্যার কেউ দেখা করতে চান আপনার সাথে।
জয়ন্ত বললে--ভেতরে ডাকো ওদের।
জয়ন্তেরই পেশেন্ট অপু নামে ছয় বছরের শিশুটি। এক্সিডেন্টে হাত ভেঙেছে। বেশ ক্রিটিকাল অপারেশন রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে তা হয় না। একমাত্র বেসরকারি কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব। ওর বাবা মা এসেছে। রুগ্ন চেহারার দুটি মানুষ। শিশুটির বাবা ইতস্তত হয়ে বলল---স্যার, হাতের অপারেশন করতে তো অনেক খরচ। আমরা গরীব মানুষ স্যার। ছেলেটা হাত হারালে লেখা পড়া করবে কি করে?
জয়ন্ত হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো। চন্দন আসতে এখনো দেরি আছে। ও হাসপাতালে পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে বাসায় চলে যায়। আবার সময়মত চলে আসে।
জয়ন্তের একবার ট্রাস্টি বোর্ডের সাথে কথা বলা দরকার। শিশুটির জন্য যদি কিছু করা যায়। ওর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করে ডঃ মজুমদারের অফিসে ঢুকল জয়ন্ত।
ডঃ মজুমদার গাইনোর ডাক্তার। খুব দয়ালু মানুষ। দুস্থ রোগীর পরিবারের চিকিৎসায় সাহায্যের বিষয়ে ডাক্তারদের যে ট্রাস্টি আছে, তার দেখাশোনা করেন। মজুমদার জয়ন্তকে দেখেই বললেন---ডঃ দাশগুপ্ত আসুন।
কল্যাণ মজুমদার ডাক্তার হলেও পানের নেশা। কৌটো থেকে পান চিবিয়ে বললেন---বলুন।
জয়ন্ত সবটা গুছিয়ে বলল। মজুমদার বললেন---আপনি বলেছেন যখন একটা ব্যবস্থা করতে তো হবেই। তাছাড়া শিশুদের জন্য তো আমাদের আলাদা ফান্ড আছে।
জয়ন্ত খুশি হল। ডঃ মজুমদার পুনরায় বললেন---ওহ বলতে ভুলে গেছি আপনাকে, গতকাল একটি লোক এসেছিল। পার্ক সার্কাসে থাকে। কি যেন গফুর না কি নাম বলল। লোকটা আপনাকে চেনে।
জয়ন্ত অবাক হল। সেই ফেরেব্বাজ আবার এসেছিল! বলল--কি বলেন, ও আবার এসেছিল?
---কেন? লোকটা কি বদ নাকি?
---বদ মানে? একটা বদের ধাড়ি। কোথা থেকে আমার নাম ঠিকানা জোগাড় করে চিটিং করতে এসেছিল। আস্ত উন্মাদ একটা।
মজুমদারের গলায় হতাশা ঝরে উঠল। বলল---এই রে! আমারও তাই মনে হয়েছিল। কি বিচ্ছিরি গন্ধ গায়ে। নেশাটেশা করে মনে হয়। কিন্তু আপনার পরিচয় দিতে...
---আপনি টাকা দিয়েছেন নাকি ওকে?
---দিয়েছি মানে, বলল ওর নাকি বউ ক্যানসারের রোগী। দু' হাজার টাকা নিয়ে গেল।
---তারমানে আপনাকে ঠকিয়েছে। একটা নেশাখোর মাতাল। ফুটপাথে পড়ে থাকে পার্ক সার্কাসে। জঘন্য একটা লোক।
***