09-09-2024, 04:31 PM
(This post was last modified: 10-09-2024, 08:43 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ত্রয়োস্ত্রিংশতি পরিচ্ছেদ
ঘণ্টা পড়তেই ইলিনা ব্রাউন ক্লাসে যাবার জন্য তৈরী হতে থাকে।এটাই আজ তার শেষ ক্লাস।চক ডাস্টার তার তেমন লাগেনা তবু চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে যাওয়া তার অভ্যেস।পিজি মানে পলি গুহ এসে বললেন,মিস ব্রাউন ক্লাসে যাচ্চেন?
হ্যা কিছু বলবেন?
পিজি এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললেন,ঠিক আছে ক্লাসটা করে আসুন।আপনার সঙ্গে একটা ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই।
কি ব্যাপার বলুন না?
আপনি ক্লাসটা করেই আসুন।এক্টু সময় লাগবে।
কিছু মনে করবেন না পলিদি,ক্লাস শেষ হলেই ছুটতে হবে।আজ আমি সময় দিতে পারব না।
পিজি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,কি ব্যাপার বলুন তো বিয়ে-থা করেন নি---।
ইলিনা হেসে বলল,না মানে আজ একজন গেস্ট আসার কথা।
মিথ্যে বলার জন্য ইলিনার একটু খারাপ লাগে।আসি পলিদি।ইলিনা ক্লাসে চলে গেলেন।
পিজিকে দেখে নিলীমা সিকদার এগিয়ে এসে বললেন,মিস ব্রাউন কি বলছিল?
তেমন কিছুনা।আগে দেখতাম ছুটির পরও লাইব্রেরীতে কত সময় কাটাতো ইদানীং দেখছি ছুটি হতেই বাড়ী ফেরার তাড়া।
ছাড়ুন তো পলিদি মেম সাহেবদের ব্যাপার আলাদা।কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে কে জানে।
পলি গুহ হেসে ফেলেন।নিলীমা অনেক জুনিয়র ইতিহাসের অধ্যাপিকা।মিস ব্রাউনকে অন্য চোখে দেখে তিনি জানেন বললেন, যাঃ নিলীমা কিযে বলোনা মিস ব্রাউন খুব কণ্ট্রোল্ড লাইফ লিড করে আমি লক্ষ্য করেছি।বলছিল বাড়িতে কে একজন গেস্ট আসবে।
গেস্ট মানে বুঝেছেন?
পলি গুহ কথা বাড়ায় না।
স্টাফ রুমে ঢুকে সোমা মুখার্জীর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,গুরুদেবের কাছে গেছিলেন?
এসএম নিলীমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন কি জানতে চায়।মিস ব্রাউনকে ছাড়াই একা গেছিলেন।বললেন,হ্যা ঘুরে এসেছি।
আচ্ছা সোমা দীক্ষা নিতে গেলে কি করতে হয়?নীচু গলায় জিজ্ঞেস করে নিলীমা।
কেন আপনি দীক্ষা নেবেনআঃ?
স্বামীকে না জানিয়ে দীক্ষা নেওয়া যাবে?
কেন আপনার স্বামী আপত্তি করবে?
নিলীমা হাসল বলল,আমার স্বামীর কথা শুনলে আপনার হাসি পাবে।গুরু তো গুরু কোনো পুরুষ মানুষের কাছে তার বউ যাক পছন্দ করেনা।
পুরুষ তো পুরুষই সে গুরু হোক কি যেই হোক মিসেস মুখার্জী হাড়ে হাড়ে সেদিন টের পেয়েছে।বলল,কিন্তু পরে যদি জানতে পারে?
সেটাই তো ভাবছি।গুরুর কাছে বসে উপদেশ শুনব গুরুকে আমার সমস্যার কথা বলব আমার অনেকদিনের সাধ।আচ্ছা গুরুদের অনেক ক্ষমতা তাই না?
কিছু তো অলৌকিক ক্ষমতা থাকেই।
আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?
সোমা মুখার্জী এক মুহূর্ত ভেবে বলল, আপনাকে বলছি কিন্তু কথা দিতে হবে কাউকে বলবেন না।
আমাদের মধ্যে কথা কাউকে বলব কেন?
তাহলে শুনুন একদিন গুরুজীকে প্রণাম করতে গেছি ঘরে কেউ ছিল না।গুরুজী চোখ বুজে বসে আছেন,সামনে দুধের বাটি তাতে লিঙ্গ ডোবানো।বিশ্বাস করবেন না চোখের সামনে বাটির দুধ শেষ হয়ে গেল!
সেকি লিঙ্গ দিয়ে দুধ পান করলেন?লিঙ্গটা কত বড়?
লিঙ্গটা বেশী বড় নয় ইঞ্চি পাচ-ছয় হবে।লিঙ্গ দিয়ে মূত্র ত্যাগ করে জানতাম কিন্তু দুধ পান জন্মে শোনেনি।সত্যি সাধনায় কি না সম্ভব।
ভাবছি ওকে বলে যদি দীক্ষা নেওয়া যায়।
ক্লাস শেষ হতে স্টাফ রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।পলিদি হয়তো ক্ষুন্ন হয়েছেন।জরুরী কাজ কিছু নয় ছুটি হলেই মনে হয় আনুটা কি করছে?নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে একী কেবল সহানুভূতি নাকি আর কিছু?উত্তর খুজে পায় না।কলেজ থেকে ফিরে দেখেছে বইপত্র গুছিয়ে চলে গেছে তবু আশা যদি একটু দেরী করে।ইলিনা লক্ষ্য করেছে সব সময় তাকে নজরে নজরে রাখে।একদিন বলল, ম্যাম আপনি বাজারে যাবেন না।
বোকার মত কথা।লোকজন তাকে দেখে নানা মন্তব্য করে সেটা ওর পছন্দ নয়।ইলিনার মজা লাগে বলল,বাজার না করলে খাবো কি?
আমি যদি আপনার বাজার করে দিই?
এই গোলামী মানসিকতা ইলিনার ভাল লাগে না বলল,কেন তোমাকে দিয়ে আমি বাজার করাবো কেন?
আনুর মুখটা কালো হয়ে গেল।
বাস আসতে উঠে পড়ল ইলিনা।একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে বলল।ইলিনা বসে ঘড়ি দেখল,বাস যদি জ্যামে নাও আটকায় পয়তাল্লিশ মিনিট লাগবেই।
ছুটে চলেছে বাস।জানলা দিয়ে ফুরফুর হাওয়া ঢুকছে।আনু হয়তো এখনো বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।
নিশীথ এসে গোলমাল করায় এগিয়ে এসেছিল।তার আগে দোকানে বসে থাকতে দেখেছে।পুজোর সময় একদিন আলাপ।ভীড়ের মধ্যে সারাক্ষণ আগলে আগলে রাখছিল।মেয়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোধ লক্ষ্য করেছে।মনে হয়েছে ছেলেটি মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়।কেন যেন মনে হয়েছিল ছেলেটির জন্য কিছু করা উচিত।যদি লেখাপড়া করে দাড়াতে পারে ভাল লাগবে।বই পড়ার ঝোক আছে কিন্তু এলোমেলো উদ্দেশ্যহীন। তার প্রতি ছেলেটির দুর্বলতা টের পেয়েছে।চলে যেতে বললেও যায়নি।আচ্ছা ওকে নিয়ে এত ভাবছে কেন?ইলিনার অবাক লাগে।
পলিদি কি বলতে চাইছিলেন এখন মনে হচ্ছে শুনলে হতো।তাড়াতাড়ি এসে দেখা তো হয়না।ওর জন্য একটা মিথ্যে বলতে হল। ঘুরেফিরে আবার ওর কথা এসে গেল,ইলিনা বিরক্ত হয়।
বাসটা দাড়িয়ে গেল কেন,বেশ তো চলছিল।জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখল সামনে গাড়ীর সারি।দশ মিনিটের জার্নিতে পাচ মিনিট ট্রাফিক জ্যাম বিরক্তিকর।বসে বসে ঘামো।
আমার ভায়রার এক ছেলে জার্মানী মেয়ে বিয়ে করেছে।সে মেয়েটিরও শাড়ি খুব পছন্দ।
আর আমাদের মেয়েরা--।ল
কথাটা কানে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ইলিনা।পঞ্চাশের উপর বয়স ভদ্রলোক।তারই পাশে রড ধরে দাড়িয়ে,বুঝতে অসুবিধে হয়না তাকে দেখেই ভায়রার ছেলের বউয়ের কথা মনে পড়েছে।সে যে বাংলা বুঝতে পারে ওরা জানেনা, মনে মনে হাসে ইলিনা।বাস নড়ে উঠল।স্বস্তি ফিরে এল যাত্রীদের মধ্যে।
বাইরে তাকিয়ে ইলিনা দেখতে থাকে।এত বেলা হয়ে গেল দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।
বাস থেকে অটোয় চেপে বসল।মাইক বাজছে কোথাও।ইদানীং কিছু হলেই মাইক চাই। মনে পড়ল আগুনের পরশমণি গানটা।গানটার কথা ভাবলে মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হয়।চালতাবাগান আসতে কয়েকজন নেমে গেল ইলিনা আজ নামল না।বাজারের কাছে নেমে নজরে পড়ে দোকান খোলা।দোকান পেরোতে গিয়ে আড়চোখে দেখল আনুকে নজরে পড়ল না।আছে আশপাশে কোথাও।
কলেজ থেকে বিচ্ছুকে নিয়ে বাসায় ফিরছে রেবতী।ভেবেছিল লোকটা বাড়ীতে আসবে,আসেনি।তারপর কলেজেও আসেনি।নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি লোকটা দাদাকে চেনে।সেইজন্য হয়তো আসেনি।
পিসি আমি এখন একাএকা বাড়ী যেতে পারি।বিচ্ছু বলল।
জানি তো খুকনসোনা এখন কত্ত বড় হয়ে গেছে।রেবতী ভাবে ছেলেটা বড় হয়ে গেলে তাকে হয়তো কাজ খুজতে হবে অন্যত্র।
সিড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে ইলিনা চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল।স্টাডিতে আলো জ্বলছে নিভিয়ে যায়নি।ওকে বলতে হবে।ব্যাগ রেখে স্টাডিতে উকি দিতে অবাক আনু যায়নি।বেশ সাজগোজ করে এসেছে।
তুমি এখনো যাওনি?দোকান খুললো কে?
আমি আজ ছুটি নিয়েছি দাদা নিজেই খুলেছে।আরণ্যক বলল।
ছুটি নিয়েছো কেন?চ
আমার এক বন্ধুর বিয়ে বরযাত্রী যাব।
আরণ্যকের মোবাইল বেজে উঠতে বিরক্ত হয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?...রিয়া সেন আপনার বাবার নাম কি বলুন তো...।
ইলিনা ফোনটা নিয়ে কানে লাগিয়ে হ্যালো বলতে ওপাশ থেকে প্রশ্ন,আপনি কে বলছেন?
ইলিনা বলল,আমি ওর গার্ল ফ্রেণ্ড।ফোন কেটে দিল।
ম্যাডামের কথা শুনে আরণ্যকের মজা লাগে হেসে বলল,যদি জানতো ফরেনার কথা বলছে তাহলে ভিরমি খেতো।
কেন ফরেনার তোমার পছন্দ নয়?
আমি ঐ রিয়া সেন না কি তার কথা বলেছি।
আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি যা সত্যি তাই বলবে।
আমি মিথ্যে বলিনা।
সত্যিটা শুনতে চাই আমাকে পছন্দ করো কিনা?
রাগ করবেন নাতো?আরণ্যকের মনে দ্বিধা।
রাগ করব কেন?সত্য সব সময় আমার প্রিয় নাও হতে পারে।কি হল বল।
আমি পড়তে রাজি হয়েছি আপনার জন্য।আপনার সঙ্গে কথা বলতে আপনার কথা শুনতে আমার ভাল লাগে।আজকে আপনার সঙ্গে দেখা হবে বলে অপেক্ষা করছিলাম।
ইলিনা গম্ভীর হয়ে গেল।
ম্যডাম আমি তাহলে আসি?
একটু বোসো চা করছি।
ইলিনা বেরিয়ে গিয়ে পোশাক বদলায়।মনের মধ্যে অনুভূত হয় গুঞ্জন ধ্বনি।
কথাগুলো কি খারাপ বললাম?আরণ্যক ভাবে।ম্যাডামের সাহচর্য ভাল লাগে।যা সত্যি তাই বলেছি রাগ করল তো বয়েই গেল। মনে হচ্ছে পড়াশুনার পাট চুকলো।
ইলিনা ব্রাউন দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,দেখি তোমার মোবাইলটা।
মোবাইল নিয়ে বলল,আমার নম্বর সেভ করে দিলাম।যখন আমার কথা শুনতে ইচ্ছে হবে ফোন করবে।
আরণ্যক স্বস্তি বোধ করে ম্যাডাম রাগ করেনি।শান্তিতে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।
বিয়ে কোথায়?মনের অস্থিরতা কাটাতে ইলিনা জিজ্ঞেস করে।
ঠিক জানিনা।চালতা বাগানের মোড়ে বাস আসার কথা।ঐখানে সবাই আসবে।
আরণ্যক লক্ষ্য করে ম্যাডামের পা-গুলো বেশ লম্বা সুডৌল ইচ্ছে করে পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে যাই।বাইরে থেকে যতই ওজস্বিনী মনে হোক ভেতরে অত্যন্ত কোমল।আমার ছন্নছাড়া বয়ে জীবনের প্রতি কেন এত দরদ।
ইলিনা ব্রাউন ইচ্ছে করেই লুঙ্গিটা হাটুর উপর অবধি তুলে বসেছে।লক্ষ্য করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখছে।অবাক লাগে রমণী শরীর দেখেও চোখে লালসার আগুন জ্বলে উঠল না বরং মুগ্ধতার স্নিগ্ধ আলো।কামনায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক বড়ই পলকা।মনের উসখুস ভাবটা ডানা মেলে দিল ইলিনা ব্রাউন বলল,আনু তুমি বলছিল আমার কাছে থাকতে ভাল লাগে।
না না ম্যাডাম তা বলিনি।আপনাকে দেখলে অলস মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়।জিয়ন কাঠির কথা শুনেছেন যার ছোয়ায় মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়।
মনে পড়ল সেই গানটা--আগুণের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে।ইলিনা সরাসরি বলে ফেলল,তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
আরণ্যক হতবাক সেকি ঠিক শুনেছে?চাঁদ আকাশেই সুন্দর তাকে নাগালে পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি।এই অবাস্তব প্রশ্নের কি উত্তর দেবে।
কি হল কিছু বলছো না যে?
কি বলব আমার গলা শুকিয়ে উঠছে।
আমাকে তোমার পছন্দ নয়?
আপনাকে পছন্দ নয় এতবড় মিথ্যে বলার শক্তি বিধাতা আমাকে দেয়নি।আমি অন্যকথা ভাবছি।
আবার কি কথা আমাকে বলা যাবে না?
যার কোনো ঠাই নেই একপয়সা আয় নেই সে বউকে কোথায় রাখবে কি খাওয়াবে তার ঠিক নেই।ম্যাডাম আপনি মজা করছেন নাতো?
এইটা তোমার চ্যালেঞ্জ বউকে খাওয়াতে হবে,তার একমাত্র উপায় পড়াশুনা করে পাস করতেই হবে।আর শোনো ম্যাডাম-ম্যাডাম করবে নাতো।
তাহলে কি বলব ম্যাম?
হাতের একটা আংটি খুলে বলল,আমার নাম ইলিনা ব্রাউন।আমার কাছে এসো।
আরণ্যক কাছে যেতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে মাথাটা নিজের কাধে চেপে ধরে ইলিনা ব্রাউন।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ইলিনা ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল,কেমন লাগছে?
জিয়ন কাঠির ছোয়ায় শরীরের প্রতিটি কোষ জেগে উঠছে।
আমাকে কি বলবে?
তোমাকে বলব লিনা।
বাঃ সুন্দর নাম।আজ থেকে আমাদের মধ্যে কোনো পর্দা থাকবে না।
মোবাইল বেজে উঠতে ইলিনা ওকে বাহু বন্ধন মুক্ত করে দিল।আরণ্যক মোবাইল কানে লাগিয়ে বলল,আমি তো রেডি বাস এসে গেছে..... হ্যা আসছি,পাচ মিনিট।ইলিনা ব্রাউনের দিকে তাকিয়ে বলল,আসি লিনা?
ইলিনা দু-গাল ধরে টেনে আরণ্যকের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে আরণ্যক হাতের পাঞ্জায় কোমর খামচে ধরল।
ঘণ্টা পড়তেই ইলিনা ব্রাউন ক্লাসে যাবার জন্য তৈরী হতে থাকে।এটাই আজ তার শেষ ক্লাস।চক ডাস্টার তার তেমন লাগেনা তবু চক ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে যাওয়া তার অভ্যেস।পিজি মানে পলি গুহ এসে বললেন,মিস ব্রাউন ক্লাসে যাচ্চেন?
হ্যা কিছু বলবেন?
পিজি এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললেন,ঠিক আছে ক্লাসটা করে আসুন।আপনার সঙ্গে একটা ব্যাপারে আলোচনা করতে চাই।
কি ব্যাপার বলুন না?
আপনি ক্লাসটা করেই আসুন।এক্টু সময় লাগবে।
কিছু মনে করবেন না পলিদি,ক্লাস শেষ হলেই ছুটতে হবে।আজ আমি সময় দিতে পারব না।
পিজি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,কি ব্যাপার বলুন তো বিয়ে-থা করেন নি---।
ইলিনা হেসে বলল,না মানে আজ একজন গেস্ট আসার কথা।
মিথ্যে বলার জন্য ইলিনার একটু খারাপ লাগে।আসি পলিদি।ইলিনা ক্লাসে চলে গেলেন।
পিজিকে দেখে নিলীমা সিকদার এগিয়ে এসে বললেন,মিস ব্রাউন কি বলছিল?
তেমন কিছুনা।আগে দেখতাম ছুটির পরও লাইব্রেরীতে কত সময় কাটাতো ইদানীং দেখছি ছুটি হতেই বাড়ী ফেরার তাড়া।
ছাড়ুন তো পলিদি মেম সাহেবদের ব্যাপার আলাদা।কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে কে জানে।
পলি গুহ হেসে ফেলেন।নিলীমা অনেক জুনিয়র ইতিহাসের অধ্যাপিকা।মিস ব্রাউনকে অন্য চোখে দেখে তিনি জানেন বললেন, যাঃ নিলীমা কিযে বলোনা মিস ব্রাউন খুব কণ্ট্রোল্ড লাইফ লিড করে আমি লক্ষ্য করেছি।বলছিল বাড়িতে কে একজন গেস্ট আসবে।
গেস্ট মানে বুঝেছেন?
পলি গুহ কথা বাড়ায় না।
স্টাফ রুমে ঢুকে সোমা মুখার্জীর পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,গুরুদেবের কাছে গেছিলেন?
এসএম নিলীমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন কি জানতে চায়।মিস ব্রাউনকে ছাড়াই একা গেছিলেন।বললেন,হ্যা ঘুরে এসেছি।
আচ্ছা সোমা দীক্ষা নিতে গেলে কি করতে হয়?নীচু গলায় জিজ্ঞেস করে নিলীমা।
কেন আপনি দীক্ষা নেবেনআঃ?
স্বামীকে না জানিয়ে দীক্ষা নেওয়া যাবে?
কেন আপনার স্বামী আপত্তি করবে?
নিলীমা হাসল বলল,আমার স্বামীর কথা শুনলে আপনার হাসি পাবে।গুরু তো গুরু কোনো পুরুষ মানুষের কাছে তার বউ যাক পছন্দ করেনা।
পুরুষ তো পুরুষই সে গুরু হোক কি যেই হোক মিসেস মুখার্জী হাড়ে হাড়ে সেদিন টের পেয়েছে।বলল,কিন্তু পরে যদি জানতে পারে?
সেটাই তো ভাবছি।গুরুর কাছে বসে উপদেশ শুনব গুরুকে আমার সমস্যার কথা বলব আমার অনেকদিনের সাধ।আচ্ছা গুরুদের অনেক ক্ষমতা তাই না?
কিছু তো অলৌকিক ক্ষমতা থাকেই।
আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?
সোমা মুখার্জী এক মুহূর্ত ভেবে বলল, আপনাকে বলছি কিন্তু কথা দিতে হবে কাউকে বলবেন না।
আমাদের মধ্যে কথা কাউকে বলব কেন?
তাহলে শুনুন একদিন গুরুজীকে প্রণাম করতে গেছি ঘরে কেউ ছিল না।গুরুজী চোখ বুজে বসে আছেন,সামনে দুধের বাটি তাতে লিঙ্গ ডোবানো।বিশ্বাস করবেন না চোখের সামনে বাটির দুধ শেষ হয়ে গেল!
সেকি লিঙ্গ দিয়ে দুধ পান করলেন?লিঙ্গটা কত বড়?
লিঙ্গটা বেশী বড় নয় ইঞ্চি পাচ-ছয় হবে।লিঙ্গ দিয়ে মূত্র ত্যাগ করে জানতাম কিন্তু দুধ পান জন্মে শোনেনি।সত্যি সাধনায় কি না সম্ভব।
ভাবছি ওকে বলে যদি দীক্ষা নেওয়া যায়।
ক্লাস শেষ হতে স্টাফ রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে ইলিনা বেরিয়ে পড়ল।পলিদি হয়তো ক্ষুন্ন হয়েছেন।জরুরী কাজ কিছু নয় ছুটি হলেই মনে হয় আনুটা কি করছে?নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে একী কেবল সহানুভূতি নাকি আর কিছু?উত্তর খুজে পায় না।কলেজ থেকে ফিরে দেখেছে বইপত্র গুছিয়ে চলে গেছে তবু আশা যদি একটু দেরী করে।ইলিনা লক্ষ্য করেছে সব সময় তাকে নজরে নজরে রাখে।একদিন বলল, ম্যাম আপনি বাজারে যাবেন না।
বোকার মত কথা।লোকজন তাকে দেখে নানা মন্তব্য করে সেটা ওর পছন্দ নয়।ইলিনার মজা লাগে বলল,বাজার না করলে খাবো কি?
আমি যদি আপনার বাজার করে দিই?
এই গোলামী মানসিকতা ইলিনার ভাল লাগে না বলল,কেন তোমাকে দিয়ে আমি বাজার করাবো কেন?
আনুর মুখটা কালো হয়ে গেল।
বাস আসতে উঠে পড়ল ইলিনা।একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে বলল।ইলিনা বসে ঘড়ি দেখল,বাস যদি জ্যামে নাও আটকায় পয়তাল্লিশ মিনিট লাগবেই।
ছুটে চলেছে বাস।জানলা দিয়ে ফুরফুর হাওয়া ঢুকছে।আনু হয়তো এখনো বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।
নিশীথ এসে গোলমাল করায় এগিয়ে এসেছিল।তার আগে দোকানে বসে থাকতে দেখেছে।পুজোর সময় একদিন আলাপ।ভীড়ের মধ্যে সারাক্ষণ আগলে আগলে রাখছিল।মেয়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা বোধ লক্ষ্য করেছে।মনে হয়েছে ছেলেটি মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়।কেন যেন মনে হয়েছিল ছেলেটির জন্য কিছু করা উচিত।যদি লেখাপড়া করে দাড়াতে পারে ভাল লাগবে।বই পড়ার ঝোক আছে কিন্তু এলোমেলো উদ্দেশ্যহীন। তার প্রতি ছেলেটির দুর্বলতা টের পেয়েছে।চলে যেতে বললেও যায়নি।আচ্ছা ওকে নিয়ে এত ভাবছে কেন?ইলিনার অবাক লাগে।
পলিদি কি বলতে চাইছিলেন এখন মনে হচ্ছে শুনলে হতো।তাড়াতাড়ি এসে দেখা তো হয়না।ওর জন্য একটা মিথ্যে বলতে হল। ঘুরেফিরে আবার ওর কথা এসে গেল,ইলিনা বিরক্ত হয়।
বাসটা দাড়িয়ে গেল কেন,বেশ তো চলছিল।জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখল সামনে গাড়ীর সারি।দশ মিনিটের জার্নিতে পাচ মিনিট ট্রাফিক জ্যাম বিরক্তিকর।বসে বসে ঘামো।
আমার ভায়রার এক ছেলে জার্মানী মেয়ে বিয়ে করেছে।সে মেয়েটিরও শাড়ি খুব পছন্দ।
আর আমাদের মেয়েরা--।ল
কথাটা কানে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ইলিনা।পঞ্চাশের উপর বয়স ভদ্রলোক।তারই পাশে রড ধরে দাড়িয়ে,বুঝতে অসুবিধে হয়না তাকে দেখেই ভায়রার ছেলের বউয়ের কথা মনে পড়েছে।সে যে বাংলা বুঝতে পারে ওরা জানেনা, মনে মনে হাসে ইলিনা।বাস নড়ে উঠল।স্বস্তি ফিরে এল যাত্রীদের মধ্যে।
বাইরে তাকিয়ে ইলিনা দেখতে থাকে।এত বেলা হয়ে গেল দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।
বাস থেকে অটোয় চেপে বসল।মাইক বাজছে কোথাও।ইদানীং কিছু হলেই মাইক চাই। মনে পড়ল আগুনের পরশমণি গানটা।গানটার কথা ভাবলে মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভূতি হয়।চালতাবাগান আসতে কয়েকজন নেমে গেল ইলিনা আজ নামল না।বাজারের কাছে নেমে নজরে পড়ে দোকান খোলা।দোকান পেরোতে গিয়ে আড়চোখে দেখল আনুকে নজরে পড়ল না।আছে আশপাশে কোথাও।
কলেজ থেকে বিচ্ছুকে নিয়ে বাসায় ফিরছে রেবতী।ভেবেছিল লোকটা বাড়ীতে আসবে,আসেনি।তারপর কলেজেও আসেনি।নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি লোকটা দাদাকে চেনে।সেইজন্য হয়তো আসেনি।
পিসি আমি এখন একাএকা বাড়ী যেতে পারি।বিচ্ছু বলল।
জানি তো খুকনসোনা এখন কত্ত বড় হয়ে গেছে।রেবতী ভাবে ছেলেটা বড় হয়ে গেলে তাকে হয়তো কাজ খুজতে হবে অন্যত্র।
সিড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে ইলিনা চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল।স্টাডিতে আলো জ্বলছে নিভিয়ে যায়নি।ওকে বলতে হবে।ব্যাগ রেখে স্টাডিতে উকি দিতে অবাক আনু যায়নি।বেশ সাজগোজ করে এসেছে।
তুমি এখনো যাওনি?দোকান খুললো কে?
আমি আজ ছুটি নিয়েছি দাদা নিজেই খুলেছে।আরণ্যক বলল।
ছুটি নিয়েছো কেন?চ
আমার এক বন্ধুর বিয়ে বরযাত্রী যাব।
আরণ্যকের মোবাইল বেজে উঠতে বিরক্ত হয়ে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?...রিয়া সেন আপনার বাবার নাম কি বলুন তো...।
ইলিনা ফোনটা নিয়ে কানে লাগিয়ে হ্যালো বলতে ওপাশ থেকে প্রশ্ন,আপনি কে বলছেন?
ইলিনা বলল,আমি ওর গার্ল ফ্রেণ্ড।ফোন কেটে দিল।
ম্যাডামের কথা শুনে আরণ্যকের মজা লাগে হেসে বলল,যদি জানতো ফরেনার কথা বলছে তাহলে ভিরমি খেতো।
কেন ফরেনার তোমার পছন্দ নয়?
আমি ঐ রিয়া সেন না কি তার কথা বলেছি।
আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি যা সত্যি তাই বলবে।
আমি মিথ্যে বলিনা।
সত্যিটা শুনতে চাই আমাকে পছন্দ করো কিনা?
রাগ করবেন নাতো?আরণ্যকের মনে দ্বিধা।
রাগ করব কেন?সত্য সব সময় আমার প্রিয় নাও হতে পারে।কি হল বল।
আমি পড়তে রাজি হয়েছি আপনার জন্য।আপনার সঙ্গে কথা বলতে আপনার কথা শুনতে আমার ভাল লাগে।আজকে আপনার সঙ্গে দেখা হবে বলে অপেক্ষা করছিলাম।
ইলিনা গম্ভীর হয়ে গেল।
ম্যডাম আমি তাহলে আসি?
একটু বোসো চা করছি।
ইলিনা বেরিয়ে গিয়ে পোশাক বদলায়।মনের মধ্যে অনুভূত হয় গুঞ্জন ধ্বনি।
কথাগুলো কি খারাপ বললাম?আরণ্যক ভাবে।ম্যাডামের সাহচর্য ভাল লাগে।যা সত্যি তাই বলেছি রাগ করল তো বয়েই গেল। মনে হচ্ছে পড়াশুনার পাট চুকলো।
ইলিনা ব্রাউন দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।এক কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,দেখি তোমার মোবাইলটা।
মোবাইল নিয়ে বলল,আমার নম্বর সেভ করে দিলাম।যখন আমার কথা শুনতে ইচ্ছে হবে ফোন করবে।
আরণ্যক স্বস্তি বোধ করে ম্যাডাম রাগ করেনি।শান্তিতে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।
বিয়ে কোথায়?মনের অস্থিরতা কাটাতে ইলিনা জিজ্ঞেস করে।
ঠিক জানিনা।চালতা বাগানের মোড়ে বাস আসার কথা।ঐখানে সবাই আসবে।
আরণ্যক লক্ষ্য করে ম্যাডামের পা-গুলো বেশ লম্বা সুডৌল ইচ্ছে করে পেন্সিল নিয়ে আঁকতে বসে যাই।বাইরে থেকে যতই ওজস্বিনী মনে হোক ভেতরে অত্যন্ত কোমল।আমার ছন্নছাড়া বয়ে জীবনের প্রতি কেন এত দরদ।
ইলিনা ব্রাউন ইচ্ছে করেই লুঙ্গিটা হাটুর উপর অবধি তুলে বসেছে।লক্ষ্য করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখছে।অবাক লাগে রমণী শরীর দেখেও চোখে লালসার আগুন জ্বলে উঠল না বরং মুগ্ধতার স্নিগ্ধ আলো।কামনায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক বড়ই পলকা।মনের উসখুস ভাবটা ডানা মেলে দিল ইলিনা ব্রাউন বলল,আনু তুমি বলছিল আমার কাছে থাকতে ভাল লাগে।
না না ম্যাডাম তা বলিনি।আপনাকে দেখলে অলস মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়।জিয়ন কাঠির কথা শুনেছেন যার ছোয়ায় মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার হয়।
মনে পড়ল সেই গানটা--আগুণের পরশমণি ছোয়াও প্রাণে।ইলিনা সরাসরি বলে ফেলল,তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
আরণ্যক হতবাক সেকি ঠিক শুনেছে?চাঁদ আকাশেই সুন্দর তাকে নাগালে পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনি।এই অবাস্তব প্রশ্নের কি উত্তর দেবে।
কি হল কিছু বলছো না যে?
কি বলব আমার গলা শুকিয়ে উঠছে।
আমাকে তোমার পছন্দ নয়?
আপনাকে পছন্দ নয় এতবড় মিথ্যে বলার শক্তি বিধাতা আমাকে দেয়নি।আমি অন্যকথা ভাবছি।
আবার কি কথা আমাকে বলা যাবে না?
যার কোনো ঠাই নেই একপয়সা আয় নেই সে বউকে কোথায় রাখবে কি খাওয়াবে তার ঠিক নেই।ম্যাডাম আপনি মজা করছেন নাতো?
এইটা তোমার চ্যালেঞ্জ বউকে খাওয়াতে হবে,তার একমাত্র উপায় পড়াশুনা করে পাস করতেই হবে।আর শোনো ম্যাডাম-ম্যাডাম করবে নাতো।
তাহলে কি বলব ম্যাম?
হাতের একটা আংটি খুলে বলল,আমার নাম ইলিনা ব্রাউন।আমার কাছে এসো।
আরণ্যক কাছে যেতে আংটিটা পরিয়ে দিয়ে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে মাথাটা নিজের কাধে চেপে ধরে ইলিনা ব্রাউন।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ইলিনা ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করল,কেমন লাগছে?
জিয়ন কাঠির ছোয়ায় শরীরের প্রতিটি কোষ জেগে উঠছে।
আমাকে কি বলবে?
তোমাকে বলব লিনা।
বাঃ সুন্দর নাম।আজ থেকে আমাদের মধ্যে কোনো পর্দা থাকবে না।
মোবাইল বেজে উঠতে ইলিনা ওকে বাহু বন্ধন মুক্ত করে দিল।আরণ্যক মোবাইল কানে লাগিয়ে বলল,আমি তো রেডি বাস এসে গেছে..... হ্যা আসছি,পাচ মিনিট।ইলিনা ব্রাউনের দিকে তাকিয়ে বলল,আসি লিনা?
ইলিনা দু-গাল ধরে টেনে আরণ্যকের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে আরণ্যক হাতের পাঞ্জায় কোমর খামচে ধরল।