02-09-2024, 11:06 PM
অংশু শুয়ে শুয়ে আছে অনেকক্ষন। ঘুম আসছে না তার। এ' ঘরে যে ঘড়িটা আছে সেটা বন্ধ। নিজের হাতঘড়িটা দেখল অংশু; সাড়ে দশটা। কলকাতা শহরে এ'সময় ঘুমায় না কেউ। উঠে বসল সে।
বইয়ের থাক জুড়ে বেশিরভাগ মায়ের কলেজের অনার্সের বই। কিছ বই ঝুমুর মাসিরও। অংশু বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো, যদি কোনো গল্পের বই পায়। একটি থাকে তার নজরে এলো গচ্ছিত করে রাখা রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমের বই। বেশিরভাগ সব বাংলা ধ্রুপদী যুগের সাহিত্য। এসব অংশুর একদমই পড়তে ভালো লাগে না। একটা বই অবশ্য আছে শরদিন্দুর ব্যোমকেশ সমগ্র। অংশু বইটা টানতে যেতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ল একগুচ্ছ কাগজের তাড়া।
সে কাগজগুলি সযত্নে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারলো এগুলি কারোর লেখা চিঠি। চিঠি মানে পোস্টকার্ড নয়। চিরকুটে লেখা চিঠির কাগজ পুরোনো হতে হতে হলদে হয়ে গেছে। চিঠিগুলি সব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক তো হবেই। একটা পিন আপ করে কেউ যেন সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে। অংশু চিঠির হাতের অক্ষর দেখে হেসে ফেলল। এই হাতের লেখা আর কারো নয়, তার বাবার। প্রেম করার সময় তার বাবার মাকে লেখা চিঠি সমগ্র।
বাবার বাংলা হাতের লেখা অংশু খুবই কম দেখেছে। চিঠিতে আবার বাবা কোথাও কোথাও কবিতার পংক্তি রেখেছে সন্তর্পনে। যার বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রনাথেরই। বেশ কিছু রোমান্টিক শব্দ চয়ন করেছে বাবা। অংশুর হাসি পাচ্ছিল।
ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডালিয়া মাসি জলের গেলাস এনে বললে---অংশু, ভাত খাবার পর জল খেলি না তো.. তোর মা আমাকে পই পই করে বলে দিয়েছে, তোর নাকি জল কম খাওয়ায় অভ্যাস আছে। তাই সুচি দি বলেই দিয়েছে তোকে সময় মত জল দিয়ে যেতে।
হাসলো অংশু। বলল---মায়ের এই এক স্বভাব। বাড়িতে সর্বক্ষণ জল খেয়েছি কিনা এই নিয়ে বিরক্ত করা।
জলটা খেয়ে নিয়ে সে গেলাস ফেরত দিল। বলল---ডালিয়া মাসি, এই সব বই কি মায়ের?
----তোর মায়েরও আছে। ঝুমুর দি'রও আছে। তবে ঝুমুর দি তো পড়ালেখা বেশি করেনি। তার বই কম, তোর মায়েরই বেশি। আমি সেভেন কেলাস পর্যন্ত পড়েছি। এত বই টই বুঝি না।
অংশু বললে---ঝুমুর মাসি শুনেছি মায়ের খুব কাছের ছিল।
---ছিল মানে। একেবারে পিঠোপিঠি। সুচি দি শহরের পড়ালেখা করা মেয়ে বলে কখনো কোনো নাক উঁচু ভাব ছিল না। ঝুমুর দি'র জন্য এটা ওটা কত কি আনত। বদলে সুচি দি কে আঁচল ভরে তেঁতুল, আম খাওয়াত ঝুমুর দি। আমি আর সিনু তো তখন ছোট, তাই ওদের পিছু নিতাম।
ডালিয়া চলে যাবার পর চিঠিগুলি যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দিল অংশু। ভাবলো বাড়ি ফিরলে চিঠিগুলি নিয়ে দিদিকে দেখাবে। তখন ভাই-বোন মিলে মজা করবে বাবা-মায়ের সাথে।
ব্যোমকেশ সমগ্রটা খানিক অংশ উই পোকায় কেটেছে। মায়ের যত্ন থাকলে বইগুলোর হাল এমন হত না। অংশু বইটা এনে বিছানায় শুয়ে পড়ল। দু' পাতা পড়তে পড়তে পড়তে চোখে ঘুম এলো তার। বুকের ওপর থেকে বইটা নামিয়ে রাখতে গিয়েই বইয়ের ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ পড়ল মেঝেতে।
অংশু কাগজের ভাঁজটা তুলে খুলে ফেলে প্রথমে ভেবেছিল কোনো শিশুর হাতের লেখায় হিজিবিজি শব্দ। পরে পড়ে বুঝতে পারলো এ'ও একখান চিঠি। চিঠিটা লেখা হয়েছে 'ঝুমরি'কে। ঝুমরি যে ঝুমুর মাসি, সেটা বুঝতে অংশুর সমস্যা হল না। কে লিখেছে তার নামের উল্লেখ নেই। বোধ হয় প্রেমিক ধরা পড়ার ভয়ে নাম লেখেনি। তবে হাতের লেখা বড্ড বিশ্রী, অজস্র বানান ভুল, দীর্ঘ ই-হ্রস্ব ই'য়ের বড্ড গোলযোগ। চিঠিটার বিষয়বস্তু স্পষ্ট। এ' এক প্রেমপত্র:
ঝুমরি,
আমি যে তোকে ভালোবাসি তুই সেটা জানিস। তাহলে কেন আজ এলি না। আমি কি দোষ করেছি?
ব্যাস, এতটুকুই লেখা। তবে এইটুকু লিখতে গিয়ে প্রেমিককে বড্ড বেগ পেতে হয়েছে। একাধিক বানানের ভুল ও মাত্রাছাড়া লেখা। অংশু বুঝতে পারছে এই প্রেমিক নেহাতই কোনো প্রাথমিক কলেজের গন্ডি না পেরোনো ব্যক্তি।
বইয়ের থাক জুড়ে বেশিরভাগ মায়ের কলেজের অনার্সের বই। কিছ বই ঝুমুর মাসিরও। অংশু বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো, যদি কোনো গল্পের বই পায়। একটি থাকে তার নজরে এলো গচ্ছিত করে রাখা রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমের বই। বেশিরভাগ সব বাংলা ধ্রুপদী যুগের সাহিত্য। এসব অংশুর একদমই পড়তে ভালো লাগে না। একটা বই অবশ্য আছে শরদিন্দুর ব্যোমকেশ সমগ্র। অংশু বইটা টানতে যেতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ল একগুচ্ছ কাগজের তাড়া।
সে কাগজগুলি সযত্নে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারলো এগুলি কারোর লেখা চিঠি। চিঠি মানে পোস্টকার্ড নয়। চিরকুটে লেখা চিঠির কাগজ পুরোনো হতে হতে হলদে হয়ে গেছে। চিঠিগুলি সব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক তো হবেই। একটা পিন আপ করে কেউ যেন সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে। অংশু চিঠির হাতের অক্ষর দেখে হেসে ফেলল। এই হাতের লেখা আর কারো নয়, তার বাবার। প্রেম করার সময় তার বাবার মাকে লেখা চিঠি সমগ্র।
বাবার বাংলা হাতের লেখা অংশু খুবই কম দেখেছে। চিঠিতে আবার বাবা কোথাও কোথাও কবিতার পংক্তি রেখেছে সন্তর্পনে। যার বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রনাথেরই। বেশ কিছু রোমান্টিক শব্দ চয়ন করেছে বাবা। অংশুর হাসি পাচ্ছিল।
ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডালিয়া মাসি জলের গেলাস এনে বললে---অংশু, ভাত খাবার পর জল খেলি না তো.. তোর মা আমাকে পই পই করে বলে দিয়েছে, তোর নাকি জল কম খাওয়ায় অভ্যাস আছে। তাই সুচি দি বলেই দিয়েছে তোকে সময় মত জল দিয়ে যেতে।
হাসলো অংশু। বলল---মায়ের এই এক স্বভাব। বাড়িতে সর্বক্ষণ জল খেয়েছি কিনা এই নিয়ে বিরক্ত করা।
জলটা খেয়ে নিয়ে সে গেলাস ফেরত দিল। বলল---ডালিয়া মাসি, এই সব বই কি মায়ের?
----তোর মায়েরও আছে। ঝুমুর দি'রও আছে। তবে ঝুমুর দি তো পড়ালেখা বেশি করেনি। তার বই কম, তোর মায়েরই বেশি। আমি সেভেন কেলাস পর্যন্ত পড়েছি। এত বই টই বুঝি না।
অংশু বললে---ঝুমুর মাসি শুনেছি মায়ের খুব কাছের ছিল।
---ছিল মানে। একেবারে পিঠোপিঠি। সুচি দি শহরের পড়ালেখা করা মেয়ে বলে কখনো কোনো নাক উঁচু ভাব ছিল না। ঝুমুর দি'র জন্য এটা ওটা কত কি আনত। বদলে সুচি দি কে আঁচল ভরে তেঁতুল, আম খাওয়াত ঝুমুর দি। আমি আর সিনু তো তখন ছোট, তাই ওদের পিছু নিতাম।
ডালিয়া চলে যাবার পর চিঠিগুলি যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দিল অংশু। ভাবলো বাড়ি ফিরলে চিঠিগুলি নিয়ে দিদিকে দেখাবে। তখন ভাই-বোন মিলে মজা করবে বাবা-মায়ের সাথে।
ব্যোমকেশ সমগ্রটা খানিক অংশ উই পোকায় কেটেছে। মায়ের যত্ন থাকলে বইগুলোর হাল এমন হত না। অংশু বইটা এনে বিছানায় শুয়ে পড়ল। দু' পাতা পড়তে পড়তে পড়তে চোখে ঘুম এলো তার। বুকের ওপর থেকে বইটা নামিয়ে রাখতে গিয়েই বইয়ের ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ পড়ল মেঝেতে।
অংশু কাগজের ভাঁজটা তুলে খুলে ফেলে প্রথমে ভেবেছিল কোনো শিশুর হাতের লেখায় হিজিবিজি শব্দ। পরে পড়ে বুঝতে পারলো এ'ও একখান চিঠি। চিঠিটা লেখা হয়েছে 'ঝুমরি'কে। ঝুমরি যে ঝুমুর মাসি, সেটা বুঝতে অংশুর সমস্যা হল না। কে লিখেছে তার নামের উল্লেখ নেই। বোধ হয় প্রেমিক ধরা পড়ার ভয়ে নাম লেখেনি। তবে হাতের লেখা বড্ড বিশ্রী, অজস্র বানান ভুল, দীর্ঘ ই-হ্রস্ব ই'য়ের বড্ড গোলযোগ। চিঠিটার বিষয়বস্তু স্পষ্ট। এ' এক প্রেমপত্র:
ঝুমরি,
আমি যে তোকে ভালোবাসি তুই সেটা জানিস। তাহলে কেন আজ এলি না। আমি কি দোষ করেছি?
ব্যাস, এতটুকুই লেখা। তবে এইটুকু লিখতে গিয়ে প্রেমিককে বড্ড বেগ পেতে হয়েছে। একাধিক বানানের ভুল ও মাত্রাছাড়া লেখা। অংশু বুঝতে পারছে এই প্রেমিক নেহাতই কোনো প্রাথমিক কলেজের গন্ডি না পেরোনো ব্যক্তি।