02-09-2024, 11:05 PM
রাতের রান্নায় ডালিয়া মাছ ভেজে দিয়েছে। সেই সাথে সামান্য সবজি। অংশু তখন দিদার সাথে গল্পে মত্ত। বৃদ্ধা মানসী দেবী তখন অংশুকে শোনাচ্ছে এ বাড়িতে দুর্গাপূজার ইতিহাস, তার শ্বশুরের গল্প, আরো অনেক।
ডালিয়া বললে---অংশু, চল বাবা, খেয়ে নে। রাত হল যে।
অংশু খেতে বসল টেবিলে। পুরোনো দিনের কাঠের টেবিল। অংশুদের বাড়ির স্টেইনলেস স্টিল আর কাচের সৌখিন ডাইনিং টেবিল নয়।
খাবার সময় ডালিয়া বললে---তোর মা এলে আমি নিশ্চিন্ত হব।
অংশু মজা করে বলল---কেন গো ডালিয়া মাসি। মা এলে বুঝি তুমি ছুটি কাটাতে কাশ্মীর চলে যাবে?
----না রে, আমার খুড়তুতো দাদার দিল্লিতে বড়ো ব্যবসা আছে, ওর বউ বাঙালি না। সেও ব্যবসার কাজে হাত লাগায়। বাচ্চা কাচ্চার দেখাশোনার জন্য দাদা প্রায়ই বলে এখানে চলে আয়, আরামে থাকবি, বাচ্চাগুলোর দেখাশোনা করবি।
---তাহলে তুমি মায়ের ঘাড়ে সব চাপিয়ে পালাবে?
---পালাবো না? শুধু মামীর জন্য আমাকে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমার আর কে কোথায় আছে বল? সুচি দি বা সিনু কেউই তো এদ্দিন খোঁজ খবর নিল না এ' বাড়ির। আমি আছি বলেই না এত বড় বাড়ি, বাস্তু সব রক্ষা পেয়েছে।
কথাটা অবশ্য ঠিক, অংশু মনে মনে ভাবল। মা-বাবা কিংবা মাসি-মেসো কাউকেই এ' বাড়ি নিয়ে আগ্রহী দেখেনি সে। মাসি-মেসো যে কোনোদিন এ' বাড়িতে আসবে না সে কথা অংশুও জানে।
ডালিয়া বলল----তোকে আরেকটু ভাত দিই?
---না না, থাক। রাতে কম খাই।
***
জয়ন্ত খাবার টেবিলে বসে রয়েছে। মুখোমুখি সুচিত্রা। পিউ বন্ধুর বাড়িতে ডিনার করে এসেছে। ও' নিজের ঘরে ব্যস্ত। সুচি বলল---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?
অন্যমনস্ক ছিল জয়ন্ত। সুচি পুনরায় বললে---কি গো?
জয়ন্ত মাছ চিবোতে চিবোতে বলল---কি?
---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?
সুচিত্রার দিকে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছে জয়ন্তের। এ' এক পাপবোধ নাকি মনস্তাত্বিক আলোড়ন সে বুঝতে পারছে না। বলল---তেমন কিছু না। প্যারালাইসিস রোগী, প্রেসার কখনো বাড়ে, কখনো ফল করে। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
সুচিত্রা বিড়বিড় করে বলল---বেচারা মিতা। মেয়েটা খুব ভালো জানো। বিয়ে করেছিল বাড়ির অমতে নিজের গানের শিক্ষককে। ঘোষ দা'র বয়স ওর চেয়ে ঢের বেশি।
সুচির কথাগুলি কানে যাচ্ছিল জয়ন্তের। কিন্তু সে নির্বিকার ছিল। সে জানে মিতাকে সে জয় করতে পেরেছে। কিন্তু সে দুই সন্তানের পিতা, একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। এই বয়সে এসে মিতার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার আকাঙ্খা যা কিছু তার আছে, সবটাই খুব সাংঘাতিক।
সুচিত্রার আগেই জয়ন্তের খাওয়া হয়ে গেল। সুচি লক্ষ্য করল তার স্বামী আজ খুব বেশি খেল না। জয়ন্ত ডিম আলোয় শুয়ে রয়েছে একা। নতুন উদ্দীপনা যেমন আছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণের মত, তেমনই দ্বিধা। সুচিকে ঠকানো। সুচি বনেদী রক্ষণশীল বাড়ির মেয়ে। মাত্র ক্লাস নাইনে পড়বার সময়ই জেনে যায় তার বাবার বন্ধুর ছেলে ডাক্তারির ছাত্র জয়ন্ত দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা আছে। তারপর জয়ন্ত আর সুচির চিঠি লেখা, প্রেম বিনিময় হয়েছে সুদীর্ঘ সময়। সুচির জীবনে যে সে ছাড়া আর কোনোদিন কেউ ছিল না জয়ন্ত জানে। কিন্তু জয়ন্তের জীবনে বারবার নারী এসেছে। সুচির সাথে যখন তার প্রেম গভীর, তখন মেডিক্যাল কলেজে তার সহপাঠীনি রূপসা বলে একটি মেয়ের সাথে কিছুদিন ক্যাজুয়াল প্রেম চলেছিল তার। সুচিত্রা অবশ্য তা জানে। কিন্তু এখন সে বিবাহিত। একুশ বছর তার দাম্পত্য জীবন কেটেছে। তার দুটি বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে-মেয়ে আছে। অথচ উনপঞ্চাশ বছর বয়সে এসে এই রোমাঞ্চ সে ত্যাগ করতে পারছে না কেন?
এখনো রান্না ঘরে ঠুংঠাং শব্দ। সুচি কাজে ব্যস্ত। জয়ন্ত পঞ্চাশ ছুঁও বয়সেও সুদর্শন, সামান্য চুল পাতলা হয়েছে তার যদিও। পেটের কাছে মেদও হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার জয়ন্ত দাশগুপ্ত যে সুদর্শন মানুষ এ' কথা সকলেই বলেন। জয়ন্ত এর আগে এই বিষয়টাতে কখনো গর্ববোধ করেনি। কিন্তু আজ মনে হল যদি তার পৌরুষ এখনো আকর্ষণ করে নারীকে, তবে জীবনে একটু রোমাঞ্চ অন্যায় কি। সুচিত্রা বুড়িয়ে যাচ্ছে, তার সেই সক্ষমতা না থাকলে জয়ন্ত কেন তার সক্ষমতাকে জলাঞ্জলি দেবে।
***
ডালিয়া বললে---অংশু, চল বাবা, খেয়ে নে। রাত হল যে।
অংশু খেতে বসল টেবিলে। পুরোনো দিনের কাঠের টেবিল। অংশুদের বাড়ির স্টেইনলেস স্টিল আর কাচের সৌখিন ডাইনিং টেবিল নয়।
খাবার সময় ডালিয়া বললে---তোর মা এলে আমি নিশ্চিন্ত হব।
অংশু মজা করে বলল---কেন গো ডালিয়া মাসি। মা এলে বুঝি তুমি ছুটি কাটাতে কাশ্মীর চলে যাবে?
----না রে, আমার খুড়তুতো দাদার দিল্লিতে বড়ো ব্যবসা আছে, ওর বউ বাঙালি না। সেও ব্যবসার কাজে হাত লাগায়। বাচ্চা কাচ্চার দেখাশোনার জন্য দাদা প্রায়ই বলে এখানে চলে আয়, আরামে থাকবি, বাচ্চাগুলোর দেখাশোনা করবি।
---তাহলে তুমি মায়ের ঘাড়ে সব চাপিয়ে পালাবে?
---পালাবো না? শুধু মামীর জন্য আমাকে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমার আর কে কোথায় আছে বল? সুচি দি বা সিনু কেউই তো এদ্দিন খোঁজ খবর নিল না এ' বাড়ির। আমি আছি বলেই না এত বড় বাড়ি, বাস্তু সব রক্ষা পেয়েছে।
কথাটা অবশ্য ঠিক, অংশু মনে মনে ভাবল। মা-বাবা কিংবা মাসি-মেসো কাউকেই এ' বাড়ি নিয়ে আগ্রহী দেখেনি সে। মাসি-মেসো যে কোনোদিন এ' বাড়িতে আসবে না সে কথা অংশুও জানে।
ডালিয়া বলল----তোকে আরেকটু ভাত দিই?
---না না, থাক। রাতে কম খাই।
***
জয়ন্ত খাবার টেবিলে বসে রয়েছে। মুখোমুখি সুচিত্রা। পিউ বন্ধুর বাড়িতে ডিনার করে এসেছে। ও' নিজের ঘরে ব্যস্ত। সুচি বলল---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?
অন্যমনস্ক ছিল জয়ন্ত। সুচি পুনরায় বললে---কি গো?
জয়ন্ত মাছ চিবোতে চিবোতে বলল---কি?
---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?
সুচিত্রার দিকে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছে জয়ন্তের। এ' এক পাপবোধ নাকি মনস্তাত্বিক আলোড়ন সে বুঝতে পারছে না। বলল---তেমন কিছু না। প্যারালাইসিস রোগী, প্রেসার কখনো বাড়ে, কখনো ফল করে। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
সুচিত্রা বিড়বিড় করে বলল---বেচারা মিতা। মেয়েটা খুব ভালো জানো। বিয়ে করেছিল বাড়ির অমতে নিজের গানের শিক্ষককে। ঘোষ দা'র বয়স ওর চেয়ে ঢের বেশি।
সুচির কথাগুলি কানে যাচ্ছিল জয়ন্তের। কিন্তু সে নির্বিকার ছিল। সে জানে মিতাকে সে জয় করতে পেরেছে। কিন্তু সে দুই সন্তানের পিতা, একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। এই বয়সে এসে মিতার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার আকাঙ্খা যা কিছু তার আছে, সবটাই খুব সাংঘাতিক।
সুচিত্রার আগেই জয়ন্তের খাওয়া হয়ে গেল। সুচি লক্ষ্য করল তার স্বামী আজ খুব বেশি খেল না। জয়ন্ত ডিম আলোয় শুয়ে রয়েছে একা। নতুন উদ্দীপনা যেমন আছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণের মত, তেমনই দ্বিধা। সুচিকে ঠকানো। সুচি বনেদী রক্ষণশীল বাড়ির মেয়ে। মাত্র ক্লাস নাইনে পড়বার সময়ই জেনে যায় তার বাবার বন্ধুর ছেলে ডাক্তারির ছাত্র জয়ন্ত দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা আছে। তারপর জয়ন্ত আর সুচির চিঠি লেখা, প্রেম বিনিময় হয়েছে সুদীর্ঘ সময়। সুচির জীবনে যে সে ছাড়া আর কোনোদিন কেউ ছিল না জয়ন্ত জানে। কিন্তু জয়ন্তের জীবনে বারবার নারী এসেছে। সুচির সাথে যখন তার প্রেম গভীর, তখন মেডিক্যাল কলেজে তার সহপাঠীনি রূপসা বলে একটি মেয়ের সাথে কিছুদিন ক্যাজুয়াল প্রেম চলেছিল তার। সুচিত্রা অবশ্য তা জানে। কিন্তু এখন সে বিবাহিত। একুশ বছর তার দাম্পত্য জীবন কেটেছে। তার দুটি বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে-মেয়ে আছে। অথচ উনপঞ্চাশ বছর বয়সে এসে এই রোমাঞ্চ সে ত্যাগ করতে পারছে না কেন?
এখনো রান্না ঘরে ঠুংঠাং শব্দ। সুচি কাজে ব্যস্ত। জয়ন্ত পঞ্চাশ ছুঁও বয়সেও সুদর্শন, সামান্য চুল পাতলা হয়েছে তার যদিও। পেটের কাছে মেদও হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার জয়ন্ত দাশগুপ্ত যে সুদর্শন মানুষ এ' কথা সকলেই বলেন। জয়ন্ত এর আগে এই বিষয়টাতে কখনো গর্ববোধ করেনি। কিন্তু আজ মনে হল যদি তার পৌরুষ এখনো আকর্ষণ করে নারীকে, তবে জীবনে একটু রোমাঞ্চ অন্যায় কি। সুচিত্রা বুড়িয়ে যাচ্ছে, তার সেই সক্ষমতা না থাকলে জয়ন্ত কেন তার সক্ষমতাকে জলাঞ্জলি দেবে।
***