02-09-2024, 11:03 PM
অংশুর ঘুম ভাঙলো সন্ধের দিকে। ডালিয়া মাসি এসে বললে--চা খাস তো অংশু?
অংশু মাথা নাড়লো। চা দিয়ে গেল ডালিয়া মাসি। অংশু চায়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো। গাছ-গাছালি ঘেরা নির্জন এই জায়গাটা বিকেলে যেন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অংশু চা শেষ করেই বেরিয়ে পড়ল দাদুর পৈতৃক এই দশ কাঠা জমির বসত বাড়ি দেখতে। জঙ্গলাকীর্ন বড় দীঘিটার আগে একটা ডোবা মত আছে সেটা কখনো দেখেনি অংশু। ঐ ডোবার ধারেই ঝোপঝাড় ভরা একটা দু' কামরার টালির চাল দেওয়া ঘর। বহুদিন কেউ থাকে না বোধ হয়।
অংশু ভাবলো এ জায়গা দিদা মারা যাবার পর কি হবে? অংশুর কোনো মামা নেই। আছে একমাত্র এক মাসি। সুচির ছোটোবোন সানন্দাকে সিনু মাসি বলেই ডাকে অংশু-পিউরা। মেসো আর্মির অফিসার ছিল। চল্লিশ বছরে রিটায়ার্ডমেন্টের পর সপরিবারে আমেরিকায় সেটল। ওখানেই মাসি থাকে। মাসির ছেলে পল্টু অংশুরই সমবয়সী। এই বাড়ির ওয়ারিশ বলতে মা আর সিনু মাসি। এত বিশাল এলাকা ঝোপ ঝাড়, গাছ গাছালি কে রক্ষনাবেক্ষন করবে?
অংশু জানে মা এখানে এসে থাকলে পরে খানিকটা হয়ত দেখাশোনা হবে। কিন্তু এতবড় বসত জমি মা কি একা পারবে? তাছাড়া অংশুর বাবা জয়ন্তের শ্বশুরের এই ভিটে মাটি নিয়ে আগ্রহ নেই।
অংশু দীঘির ধারে বসল খানিকক্ষণ। বেশ নিবিড় ঘন সবুজ শ্যাওলায় ঢেকেছে। পাখির কিচিরমিচির অনবরত লেগেই আছে।
অংশু ভাবলো আজ একবার গিয়ে দেখবে গোবিন্দপুর গ্রামটা। মায়ের ট্রান্সফার হওয়া ঐ আপার প্রাইমারি কলেজটাও দেখে আসবে।
ডালিয়া মাসিকে বলে বেরোলো অংশু। বেরোনোর সময় ডালিয়া মাসি বললে---রাস্তা যদি ভুলে যাস, তবে লোককে জিজ্ঞেস করে নিস নিকুঞ্জ বাগচীর বাড়ি কোথা?
অংশু হাঁটা দিল। খানিক হেঁটেই বুঝল দাদুর বাড়িটা থেকে মূল গোবিন্দপুর গ্রাম অনেক দূরে। অন্তত দুই কিমি হবে। দাদুর বাড়ি ঠিকানাটা গোবিন্দপুর হলেও জাতীয় সড়কের গায়ে পিচ রাস্তা ধরেই খানিক নেমে বটতলা দিয়ে যে মোরাম গেছে, সেই মোরাম গিয়ে শেষ হয়েছে দাদুর বাড়িতে।
অংশু হাঁটতে হাঁটতে একটা মুদির দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলো মূল গোবিন্দপুর গ্রাম এখানেই। দোকানে কেউ নেই। বাইরে কেবল একটা বেঞ্চ। সেখানে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছেন এক বয়স্ক বৈষ্ণব। গলায় তার তুলসী মালা দেখে তাই মনে হল অংশুর। এক মনে লোকটি জাল বুনে যাচ্ছে। অংশু দেখেছে গ্রামে গঞ্জে বয়সকালে বহু লোকে এই জাল বোনার কাজ করে। শহরে বয়স হলে লাফিং ক্লাব আর মর্নিং ওয়াকে গিয়ে দাদুরা গপ্প জুড়ে দেন। সেসব শুনতে অবশ্য খারাপ লাগে না অংশুর। তবে অনেকক্ষেত্রে এসব বুড়োদের আড্ডায় নতুনদের প্রতি তাচ্ছিল্য থাকে। যা অংশুর একদমে ভালো লাগে না।
অংশু লোকটিকে জিজ্ঞেস করল---গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারী কলেজটি কোথায় বলতে পারেন?
লোকটা মোটা মোটা কালো ফ্রেমের চশমা দিয়ে তাকালো। তারপর বললে---পেরাইমারী ইকলেজ। সামনেই আছে ইকটা।
---প্রাইমারি না আপার প্রাইমারি।
লোকটা বোধ হয় বুঝল না। অংশু আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আরেকটি মাঝ বয়সী লোকের দেখা পেল। সেই লোকটিও প্রাইমারী কলেজের কথা বললেও আপার প্রাইমারীটা ঠিক সমঝে উঠতে পারলো না।
অনেককেই অংশু তারপর জিজ্ঞেস করল। গোবিন্দপুর থেকে আরো দূরে খানাকুল হাইকলেজ পর্যন্ত ঠিকানা দিল লোকে, কিন্তু অংশু যা খুঁজছে তা কেউ বলতে পারল না।
আরো খানিকটা এগিয়ে গেল অংশু। গ্রামের রাস্তা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। অংশু একটি বেঁটে মত লোকের খোঁজ পেল। এবারটা না খোঁজ পেলে সে ফিরে যাবে। কাল আবার না হয় খোঁজ করবে।
অংশু জিজ্ঞেস করল লোকটিকে---কাকু, গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারি কলেজটা কোথায় বলতে পারেন?
লোকটা অংশুকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে বললে---এখন তো ইকলেজ বন্ধ হয়ে গেছে বাবু।
---হ্যা। কিন্তু জানেন কি কলেজটা কোথায়?
লোকটা বললে---আছে একটা আপার প্রাইমারী। ক্লাস টেন পর্যন্ত। তবে সে তো পিচ রাস্তার ধারে।
অংশু ধন্যবাদ দিল লোকটিকে। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল তক্ষুনি। পিচ রাস্তা দিয়েই তো সে এলো কই কোনো কলেজ দেখেনি তো।
ফিরে যাবার পথেই দাদুর বাড়ি যাবার পিচ রাস্তা। অন্ধকার হয়ে গেছে। জাতীয় সড়কে উঠে হাঁটা দিল অংশু। সাঁই সাঁই করে লরিগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে এক আধটা ছোট গাড়ি। তা নাহলে নির্জন। জাতীয় সড়ক থেকে ডান দিকে বড় পিচ রাস্তা। এই রাস্তা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে অংশুর জানা নেই। হয়ত গোবিন্দপুর গ্রামেও মিলতে পারে। তবে অংশুর দাদুর বাড়ি এই রাস্তার গায়ে ছোট মোরাম রাস্তা ধরে। যে মোরাম রাস্তায় শেষ কবে মোরাম পড়েছিল বোঝা যায় না। কারণ এই শ' মিটার খানেক রাস্তা শুধুমাত্র বাগচী বাড়িতে গিয়েই শেষ হয়েছে। কারোর ব্যবহারে লাগে না। তাই হয়ত এখানকার প্রশাসন গুরুত্ব দেয়নি।
মোরাম রাস্তার মুখে এসে বাড়ির দিকে যাওয়ার পথেই অংশু ভাবল উল্টো দিকটা দেখা হয়নি। হয়ত ওদিকেই কলেজটা থাকতে পারে। ভাবতে না ভাবতেই পেছন থেকে একটা মোটর বাইকের আলো এসে থামালো। ঠিক যেন বাইকটা ঘাড়ের উপর উঠে পড়বে।
অংশু মাথা নাড়লো। চা দিয়ে গেল ডালিয়া মাসি। অংশু চায়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো। গাছ-গাছালি ঘেরা নির্জন এই জায়গাটা বিকেলে যেন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অংশু চা শেষ করেই বেরিয়ে পড়ল দাদুর পৈতৃক এই দশ কাঠা জমির বসত বাড়ি দেখতে। জঙ্গলাকীর্ন বড় দীঘিটার আগে একটা ডোবা মত আছে সেটা কখনো দেখেনি অংশু। ঐ ডোবার ধারেই ঝোপঝাড় ভরা একটা দু' কামরার টালির চাল দেওয়া ঘর। বহুদিন কেউ থাকে না বোধ হয়।
অংশু ভাবলো এ জায়গা দিদা মারা যাবার পর কি হবে? অংশুর কোনো মামা নেই। আছে একমাত্র এক মাসি। সুচির ছোটোবোন সানন্দাকে সিনু মাসি বলেই ডাকে অংশু-পিউরা। মেসো আর্মির অফিসার ছিল। চল্লিশ বছরে রিটায়ার্ডমেন্টের পর সপরিবারে আমেরিকায় সেটল। ওখানেই মাসি থাকে। মাসির ছেলে পল্টু অংশুরই সমবয়সী। এই বাড়ির ওয়ারিশ বলতে মা আর সিনু মাসি। এত বিশাল এলাকা ঝোপ ঝাড়, গাছ গাছালি কে রক্ষনাবেক্ষন করবে?
অংশু জানে মা এখানে এসে থাকলে পরে খানিকটা হয়ত দেখাশোনা হবে। কিন্তু এতবড় বসত জমি মা কি একা পারবে? তাছাড়া অংশুর বাবা জয়ন্তের শ্বশুরের এই ভিটে মাটি নিয়ে আগ্রহ নেই।
অংশু দীঘির ধারে বসল খানিকক্ষণ। বেশ নিবিড় ঘন সবুজ শ্যাওলায় ঢেকেছে। পাখির কিচিরমিচির অনবরত লেগেই আছে।
অংশু ভাবলো আজ একবার গিয়ে দেখবে গোবিন্দপুর গ্রামটা। মায়ের ট্রান্সফার হওয়া ঐ আপার প্রাইমারি কলেজটাও দেখে আসবে।
ডালিয়া মাসিকে বলে বেরোলো অংশু। বেরোনোর সময় ডালিয়া মাসি বললে---রাস্তা যদি ভুলে যাস, তবে লোককে জিজ্ঞেস করে নিস নিকুঞ্জ বাগচীর বাড়ি কোথা?
অংশু হাঁটা দিল। খানিক হেঁটেই বুঝল দাদুর বাড়িটা থেকে মূল গোবিন্দপুর গ্রাম অনেক দূরে। অন্তত দুই কিমি হবে। দাদুর বাড়ি ঠিকানাটা গোবিন্দপুর হলেও জাতীয় সড়কের গায়ে পিচ রাস্তা ধরেই খানিক নেমে বটতলা দিয়ে যে মোরাম গেছে, সেই মোরাম গিয়ে শেষ হয়েছে দাদুর বাড়িতে।
অংশু হাঁটতে হাঁটতে একটা মুদির দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলো মূল গোবিন্দপুর গ্রাম এখানেই। দোকানে কেউ নেই। বাইরে কেবল একটা বেঞ্চ। সেখানে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছেন এক বয়স্ক বৈষ্ণব। গলায় তার তুলসী মালা দেখে তাই মনে হল অংশুর। এক মনে লোকটি জাল বুনে যাচ্ছে। অংশু দেখেছে গ্রামে গঞ্জে বয়সকালে বহু লোকে এই জাল বোনার কাজ করে। শহরে বয়স হলে লাফিং ক্লাব আর মর্নিং ওয়াকে গিয়ে দাদুরা গপ্প জুড়ে দেন। সেসব শুনতে অবশ্য খারাপ লাগে না অংশুর। তবে অনেকক্ষেত্রে এসব বুড়োদের আড্ডায় নতুনদের প্রতি তাচ্ছিল্য থাকে। যা অংশুর একদমে ভালো লাগে না।
অংশু লোকটিকে জিজ্ঞেস করল---গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারী কলেজটি কোথায় বলতে পারেন?
লোকটা মোটা মোটা কালো ফ্রেমের চশমা দিয়ে তাকালো। তারপর বললে---পেরাইমারী ইকলেজ। সামনেই আছে ইকটা।
---প্রাইমারি না আপার প্রাইমারি।
লোকটা বোধ হয় বুঝল না। অংশু আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আরেকটি মাঝ বয়সী লোকের দেখা পেল। সেই লোকটিও প্রাইমারী কলেজের কথা বললেও আপার প্রাইমারীটা ঠিক সমঝে উঠতে পারলো না।
অনেককেই অংশু তারপর জিজ্ঞেস করল। গোবিন্দপুর থেকে আরো দূরে খানাকুল হাইকলেজ পর্যন্ত ঠিকানা দিল লোকে, কিন্তু অংশু যা খুঁজছে তা কেউ বলতে পারল না।
আরো খানিকটা এগিয়ে গেল অংশু। গ্রামের রাস্তা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। অংশু একটি বেঁটে মত লোকের খোঁজ পেল। এবারটা না খোঁজ পেলে সে ফিরে যাবে। কাল আবার না হয় খোঁজ করবে।
অংশু জিজ্ঞেস করল লোকটিকে---কাকু, গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারি কলেজটা কোথায় বলতে পারেন?
লোকটা অংশুকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে বললে---এখন তো ইকলেজ বন্ধ হয়ে গেছে বাবু।
---হ্যা। কিন্তু জানেন কি কলেজটা কোথায়?
লোকটা বললে---আছে একটা আপার প্রাইমারী। ক্লাস টেন পর্যন্ত। তবে সে তো পিচ রাস্তার ধারে।
অংশু ধন্যবাদ দিল লোকটিকে। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল তক্ষুনি। পিচ রাস্তা দিয়েই তো সে এলো কই কোনো কলেজ দেখেনি তো।
ফিরে যাবার পথেই দাদুর বাড়ি যাবার পিচ রাস্তা। অন্ধকার হয়ে গেছে। জাতীয় সড়কে উঠে হাঁটা দিল অংশু। সাঁই সাঁই করে লরিগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে এক আধটা ছোট গাড়ি। তা নাহলে নির্জন। জাতীয় সড়ক থেকে ডান দিকে বড় পিচ রাস্তা। এই রাস্তা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে অংশুর জানা নেই। হয়ত গোবিন্দপুর গ্রামেও মিলতে পারে। তবে অংশুর দাদুর বাড়ি এই রাস্তার গায়ে ছোট মোরাম রাস্তা ধরে। যে মোরাম রাস্তায় শেষ কবে মোরাম পড়েছিল বোঝা যায় না। কারণ এই শ' মিটার খানেক রাস্তা শুধুমাত্র বাগচী বাড়িতে গিয়েই শেষ হয়েছে। কারোর ব্যবহারে লাগে না। তাই হয়ত এখানকার প্রশাসন গুরুত্ব দেয়নি।
মোরাম রাস্তার মুখে এসে বাড়ির দিকে যাওয়ার পথেই অংশু ভাবল উল্টো দিকটা দেখা হয়নি। হয়ত ওদিকেই কলেজটা থাকতে পারে। ভাবতে না ভাবতেই পেছন থেকে একটা মোটর বাইকের আলো এসে থামালো। ঠিক যেন বাইকটা ঘাড়ের উপর উঠে পড়বে।