02-09-2024, 11:01 PM
আজকে ডিউটি শেষ হবে দুটোর দিকে। ফলে লাঞ্চটা জয়ন্ত বাড়িতে গিয়েই করবে। চন্দন ড্রাইভ করছিল। বলল---স্যার, কাল যে লোকটা এসেছিল আপনার সাথে দেখা করতে, ওকে চেনেন?
---কাল? কে বল তো? জয়ন্ত মনে করতে পারলো না।
---ঐ যে আপনি ডিউটি শেষ করে বেরবার সময়...
মনে পড়ল জয়ন্তের। হেসে বলল---ওঃ, তুই ঐ লোকটার কথা বলছিস? কি যেন নাম বলেছিল...গফুর...
---কাল খবর পেলাম ওর সম্পর্কে। থাকে পার্ক সার্কাসে, ফুটপাথে কোথাও। এক নম্বরের গাঁজাখোর, নেশা ভান করে ঘুরে বেড়ায়। আর এভাবে টাকা চায়।
জয়ন্ত হাসলো। মনে মনে ভাবলো সে ঠিকই চিনেছে লোকটাকে। এত অপরিচ্ছন্ন, জামা কাপড় ময়লা, নোংরা চেহারার লোক আর যাইহোক সংসারী নয়। চন্দন গাড়িটা টার্ন নিয়ে বাইপাস ধরে এগোতে লাগলো।
***
ডালিয়া মাসির খুব বেশি পড়াশোনা নেই। এ' বাড়িতে ছোট থেকে আছে। ঝুমুর মাসি যখন মারা যায় তখন নাকি মায়ের পিসির একমাত্র সম্বল ছিল এই ডালিয়া মাসি। সেই থেকে ডালিয়া মাসি তার অসুস্থ মায়ের জন্য বিয়ে থা না করে রয়েই গেল মামাবাড়িতে। এখন ডালিয়া মাসির মা বেঁচে নেই। সে দিদার দেখাশোনা করে, নিজে রেঁধে খায়। অংশুর দুপুরের আহারের রান্না ডালিয়া মাসিই করেছে।
খাবার পরে বড় ঘরটার দরজা খুলে দিল ডালিয়া মাসি। হালকা ঝাড়পোঁছ করে একটা কাচা বিছানা চাদর পেতে দিল বিছানায়। বললে---অনেক পরিশ্রম হয়েছে, বিশ্রাম কর অংশু। এই ঘরে ছিল দুজনের, তোর মা আর তার প্রাণের বন্ধু আমার আপন আপন মায়ের পেটের ঝুমুর দি'র। বিয়ের আগে তোর মা এলে ঝুমুর দি'র সাথে এ ঘরেই থাকতো।
ঘরটা এখনো বেশ গোছানো হয়ে আছে। কিন্তু বহুদিন খোলা হয়না বলে একটা গুমোট গন্ধ আছে। ইতিউতি ফাঁদও জমেছে। গন্ধটা কাটাতে মাথার কাছে জানালাটা খুলে দিল অংশু। পেছনেই দীঘি। এই দীঘির গল্প মায়ের কাছে শুনেছে অংশু। এই দীঘিতেই তো ঝুমুর মাসি ভর দুপুরে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায়। দিদা বলে এই দীঘিতে নাকি যক্ষ আছে। সেই যক্ষই নাকি ঝুমুর মাসিকে টেনে নিয়ে গেছে। অংশু অবশ্য সেসব বিশ্বাস করে না। দিদার এই আজগুবি গল্প নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার।
বরং মায়ের মুখে ছিল এ' ঝিল নিয়ে নানা সুন্দর স্মৃতিচারণ। চন্দননগর থেকে কলেজ ছুটিতে যখন মা দাদুর সাথে দেশ বাড়িতে আসতো তখন এই দিঘিতে মাছ ধরা হত। আর যে মাছ উঠত তা নাকি সামান্য রেখে বাকিটা গ্রামে বিলিয়ে দেওয়া হত। এ' বাড়িতে নাকি একসময় দুর্গাপূজাও হত বিশাল। সেই পূজাতেই নাকি বাবাও আসতো শৈশবে। ঠাকুর্দা আর দাদু ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু। সব কথা অংশু আর তার দিদি মিলে মায়ের কাছে বহুবার শুনেছে।
এখন ঘুম পাচ্ছে অংশুর। জয়ন্তের মত টানটান হয়ে শোয়া তার অভ্যেস। ওভাবেই শুয়ে রইল ও'। এখানে বইয়ের থাকে কত বই। এক আধটা উপন্যাস গল্প ছাড়া, বেশিরভাগই বোধ হয় পড়ার বই। এ' বই নিশ্চই মা আর ঝুমুর মাসির। মা এসব বই কোনোকিছুই বিয়ের পর নিয়ে যায়নি। অংশু জানে তার মা খুব যত্নশীল। বইগুলোয় সব ধুলোবালি, ফাঁদ জমেছে। মা এলে নিশ্চই সব গুছিয়ে রাখবে।
***
এসময় বাড়ি এলে নিজেকেই গেট খুলতে হয় জয়ন্তের। সুচিত্রা কলেজে, পিউ কলেজে। ছবি কাজ করে চলে গেছে। গেট খুলে ঢোকার মুখে কানে এলো ঘোষবাড়ির কুকুরটা আবার ঘেউ জুড়েছে।
জামাকাপড় বদলে স্নানে গেল জয়ন্ত। খাবার গুছিয়ে টেবিলে ঢেকে রেখে গেছে সুচি। জয়ন্ত খাওয়া সেরে দাঁতে কাঠি করতে করতে এলো বারান্দায়। ঘোষ বাড়ির কোনো শব্দ আর নেই। কুকুরের হাঁক ডাক নেই। মিতা ঘোষকেও আর দেখা যাচ্ছে না। জয়ন্ত কাগজটা পড়তে লাগলো। টিভিটা চালিয়ে দিল কিছুক্ষণ। খবরের চ্যানেলের উৎকট শব্দ আর ভালো লাগলো না।
ঘুমোতে যাবে রেডি হচ্ছে সে, ঠিক সেই সময় পিউ এসে হাজির হল কলেজ থেকে। সোফায় ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে বললে---বাবা, ছবি মাসি চলে গেছে?
---হুম্ম। সে তো আমি আসার আগেই কাজ করে পালিয়েছে।
পিউ জামা কাপড় না বদলেই সোফায় বসে পড়ল টিভির রিমোট নিয়ে। তারপর বলল---খিদে পেয়েছে!
জয়ন্ত সুচি না থাকলে ছেলে মেয়ের জন্য সামান্য টিফিন বানিয়ে দেওয়ার কাজটা কখনো কখনো করে দেয়। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল---কেন, সকালে ভাত খেয়ে যাসনি? নুডলস বানিয়ে দেব?
ব্যাজার মুখে তাকালো পিউ বাবার দিকে। জয়ন্ত বললে---তাহলে ডাবল ডিমের অমলেট?
---না...গররাজি হল মেয়ে।
---তাহলে কি খাবি? আমি তোর মায়ের মত আর কিছু রাঁধতে পারবো না।
পিউ বললে---মা আসুক। তারপর।
---তোর মা আসতে সেই চারটে। এতক্ষন না খেয়ে থাকবি?
কথা শেষ করতে না করতেই পিউ ফ্রিজ থেকে চকোলেটের বার বের করে কামড় দিতে দিতে বলল---ভাই পৌঁছে গেছে?
---হুম্ম। তোর মাকে ফোন করে জানিয়েছে।
***
---কাল? কে বল তো? জয়ন্ত মনে করতে পারলো না।
---ঐ যে আপনি ডিউটি শেষ করে বেরবার সময়...
মনে পড়ল জয়ন্তের। হেসে বলল---ওঃ, তুই ঐ লোকটার কথা বলছিস? কি যেন নাম বলেছিল...গফুর...
---কাল খবর পেলাম ওর সম্পর্কে। থাকে পার্ক সার্কাসে, ফুটপাথে কোথাও। এক নম্বরের গাঁজাখোর, নেশা ভান করে ঘুরে বেড়ায়। আর এভাবে টাকা চায়।
জয়ন্ত হাসলো। মনে মনে ভাবলো সে ঠিকই চিনেছে লোকটাকে। এত অপরিচ্ছন্ন, জামা কাপড় ময়লা, নোংরা চেহারার লোক আর যাইহোক সংসারী নয়। চন্দন গাড়িটা টার্ন নিয়ে বাইপাস ধরে এগোতে লাগলো।
***
ডালিয়া মাসির খুব বেশি পড়াশোনা নেই। এ' বাড়িতে ছোট থেকে আছে। ঝুমুর মাসি যখন মারা যায় তখন নাকি মায়ের পিসির একমাত্র সম্বল ছিল এই ডালিয়া মাসি। সেই থেকে ডালিয়া মাসি তার অসুস্থ মায়ের জন্য বিয়ে থা না করে রয়েই গেল মামাবাড়িতে। এখন ডালিয়া মাসির মা বেঁচে নেই। সে দিদার দেখাশোনা করে, নিজে রেঁধে খায়। অংশুর দুপুরের আহারের রান্না ডালিয়া মাসিই করেছে।
খাবার পরে বড় ঘরটার দরজা খুলে দিল ডালিয়া মাসি। হালকা ঝাড়পোঁছ করে একটা কাচা বিছানা চাদর পেতে দিল বিছানায়। বললে---অনেক পরিশ্রম হয়েছে, বিশ্রাম কর অংশু। এই ঘরে ছিল দুজনের, তোর মা আর তার প্রাণের বন্ধু আমার আপন আপন মায়ের পেটের ঝুমুর দি'র। বিয়ের আগে তোর মা এলে ঝুমুর দি'র সাথে এ ঘরেই থাকতো।
ঘরটা এখনো বেশ গোছানো হয়ে আছে। কিন্তু বহুদিন খোলা হয়না বলে একটা গুমোট গন্ধ আছে। ইতিউতি ফাঁদও জমেছে। গন্ধটা কাটাতে মাথার কাছে জানালাটা খুলে দিল অংশু। পেছনেই দীঘি। এই দীঘির গল্প মায়ের কাছে শুনেছে অংশু। এই দীঘিতেই তো ঝুমুর মাসি ভর দুপুরে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায়। দিদা বলে এই দীঘিতে নাকি যক্ষ আছে। সেই যক্ষই নাকি ঝুমুর মাসিকে টেনে নিয়ে গেছে। অংশু অবশ্য সেসব বিশ্বাস করে না। দিদার এই আজগুবি গল্প নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার।
বরং মায়ের মুখে ছিল এ' ঝিল নিয়ে নানা সুন্দর স্মৃতিচারণ। চন্দননগর থেকে কলেজ ছুটিতে যখন মা দাদুর সাথে দেশ বাড়িতে আসতো তখন এই দিঘিতে মাছ ধরা হত। আর যে মাছ উঠত তা নাকি সামান্য রেখে বাকিটা গ্রামে বিলিয়ে দেওয়া হত। এ' বাড়িতে নাকি একসময় দুর্গাপূজাও হত বিশাল। সেই পূজাতেই নাকি বাবাও আসতো শৈশবে। ঠাকুর্দা আর দাদু ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু। সব কথা অংশু আর তার দিদি মিলে মায়ের কাছে বহুবার শুনেছে।
এখন ঘুম পাচ্ছে অংশুর। জয়ন্তের মত টানটান হয়ে শোয়া তার অভ্যেস। ওভাবেই শুয়ে রইল ও'। এখানে বইয়ের থাকে কত বই। এক আধটা উপন্যাস গল্প ছাড়া, বেশিরভাগই বোধ হয় পড়ার বই। এ' বই নিশ্চই মা আর ঝুমুর মাসির। মা এসব বই কোনোকিছুই বিয়ের পর নিয়ে যায়নি। অংশু জানে তার মা খুব যত্নশীল। বইগুলোয় সব ধুলোবালি, ফাঁদ জমেছে। মা এলে নিশ্চই সব গুছিয়ে রাখবে।
***
এসময় বাড়ি এলে নিজেকেই গেট খুলতে হয় জয়ন্তের। সুচিত্রা কলেজে, পিউ কলেজে। ছবি কাজ করে চলে গেছে। গেট খুলে ঢোকার মুখে কানে এলো ঘোষবাড়ির কুকুরটা আবার ঘেউ জুড়েছে।
জামাকাপড় বদলে স্নানে গেল জয়ন্ত। খাবার গুছিয়ে টেবিলে ঢেকে রেখে গেছে সুচি। জয়ন্ত খাওয়া সেরে দাঁতে কাঠি করতে করতে এলো বারান্দায়। ঘোষ বাড়ির কোনো শব্দ আর নেই। কুকুরের হাঁক ডাক নেই। মিতা ঘোষকেও আর দেখা যাচ্ছে না। জয়ন্ত কাগজটা পড়তে লাগলো। টিভিটা চালিয়ে দিল কিছুক্ষণ। খবরের চ্যানেলের উৎকট শব্দ আর ভালো লাগলো না।
ঘুমোতে যাবে রেডি হচ্ছে সে, ঠিক সেই সময় পিউ এসে হাজির হল কলেজ থেকে। সোফায় ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে বললে---বাবা, ছবি মাসি চলে গেছে?
---হুম্ম। সে তো আমি আসার আগেই কাজ করে পালিয়েছে।
পিউ জামা কাপড় না বদলেই সোফায় বসে পড়ল টিভির রিমোট নিয়ে। তারপর বলল---খিদে পেয়েছে!
জয়ন্ত সুচি না থাকলে ছেলে মেয়ের জন্য সামান্য টিফিন বানিয়ে দেওয়ার কাজটা কখনো কখনো করে দেয়। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল---কেন, সকালে ভাত খেয়ে যাসনি? নুডলস বানিয়ে দেব?
ব্যাজার মুখে তাকালো পিউ বাবার দিকে। জয়ন্ত বললে---তাহলে ডাবল ডিমের অমলেট?
---না...গররাজি হল মেয়ে।
---তাহলে কি খাবি? আমি তোর মায়ের মত আর কিছু রাঁধতে পারবো না।
পিউ বললে---মা আসুক। তারপর।
---তোর মা আসতে সেই চারটে। এতক্ষন না খেয়ে থাকবি?
কথা শেষ করতে না করতেই পিউ ফ্রিজ থেকে চকোলেটের বার বের করে কামড় দিতে দিতে বলল---ভাই পৌঁছে গেছে?
---হুম্ম। তোর মাকে ফোন করে জানিয়েছে।
***