29-08-2024, 12:09 AM
সঙ্গমের পর জয়ন্ত টানটান করে মেলে ধরে শরীর। তার গায়ের রঙ সুচির মত ফ্যাকাশে ফর্সা না হলে গৌরবর্ণা। সুচির মত তারও চোখে চশমা লাগে। জয়ন্ত যে উনপঞ্চাশ বছরেও সুদর্শন, তা হসপিটালের নার্স, হেলথ স্টাফদের কানাঘুষোয় শোনা যায়। সুচিত্রা স্বামীর বাহুর ওপর মাথা রাখে। বলে---অংশুকে কি একা পাঠানো ঠিক হবে?
---বড় হয়েছে ও। একা যেতে পারবে না কেন?
সুচির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। সে বলল---আমি চলে গেলে তুমি একা সব সামলাতে পারবে তো?
---সব পারবো। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। ওরা নিজেদের কাজ পারে। আর কি?
সুচি চুপ করে রইল। স্বামীর আরো কাছে গা ঘেষে শুলো সে। হঠাৎ করে আজ হাসপাতালে আসা লোকটার কথা মনে পড়ল জয়ন্তের। বলল---সুচি, তোমাদের গ্রামের বাড়িতে আলি চাচা বলে ছিলেন এক কেয়ারটেকার, মনে আছে?
---হ্যা মনে থাকবে না কেন। যখন গ্রামে যেতাম আলি চাচাই ছিল আমাদের দুই বোনকে ঘোরাতে নিয়ে যাবার ভরসা।
---আচ্ছা, তোমার আলি চাচার কোনো ছেলে আছে?
চমকে উঠল সুচি। বলল---হ্যা। একটা ছেলে ছিল। কিন্তু সে তো বহুদিন নিরুদ্দেশ!
---তুমি কি তাকে দেখেছ?
সুচি খানিক চুপ করে থাকার পর বলল---হ্যা। গফুর দা'কে শেষবার যখন দেখি তখন ওর তেইশ-চব্বিশ বয়স। কেন কি হয়েছে? সুচি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।
---আজ একজন এসেছিল। নিজেকে ঐ গফুর পরিচয় দিচ্ছিল। তার নাকি টাকা দরকার। শালা মস্তবড় ফেরেব্বাজ!
সুচি হাসলো। বলল---তোমাকেই লোকে কেন এমন ঠকায়!
জয়ন্ত মৃদু রাগ করে বলল---ঠকাতে পারেনি। এবার আসুক, পুলিশে দেব।
সুচিত্রা বলল---গফুর দা; আলী চাচার একমাত্র ছেলে। ফুটবল খেলত ভালো। ঘুড়ি ওড়ানো, আম ভাঙা এসব যত দস্যিপনা, গফুর দা'ই করত। পড়াশোনা করতে চাইলো না গফুর দা। বাবা বললেন ''আলী, তোর ছেলেকে ফুটবলের কোচিংয়ে ভর্তি করে দে, আমি খরচ দেব''। কিন্তু গফুর দা ছিল অন্য ধাতের। তাকে বেঁধে রাখা যায় না। তারপর একদিন সেই যে বাড়ি ছেড়ে পালালো, আর খোঁজ মিলল না।
জয়ন্ত সুচিদের বাপের বাড়ির দেশগ্রামের কেয়ারটেকার আলী চাচার এই ছেলের সম্পর্কে এই প্ৰথম শুনল সুচির মুখে। বলল--আজ যে এসেছিল, নিঃসন্দেহে আস্ত মাতাল একটা। ঘিনঘিনে নোংরা চেহারার। স্নানটান করে না বোধ হয়।
সুচি বলল---তবে তোমার খোঁজ পেল কোথায়?
---সেটাই তো মিস্ট্রি। বলে নাকি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জেনেছে নিকুঞ্জ বাবুর জামাই ডাক্তার বলে। কোনো না কোনো ভাবে একটা হয়ত তোমাদের ঐ গোবিন্দপুর গ্রামের সাথে লিঙ্ক আছে, আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু পয়সা হাতাতে চেয়েছিল নেশার জন্য।
সুচি বলল---তোমাকে পয়সা চাইছিল কেন?
---ওর নাকি স্ত্রী খুব অসুস্থ। চিকিৎসা করানোর জন্য পয়সা দরকার। টিপিক্যাল ভিখারীদের পলিসি যা হয় আরকি।
সুচি বলল---তুমি পয়সা দিলে?
---মাথা খারাপ নাকি! দিন তিনেক পরে এলেই ধরিয়ে দেব পুলিশের হাতে।
---সাবধান বাপু এসব মাতাল লোকেদের থেকে। সুচিত্রা সতর্ক করল স্বামীকে।
ঠিক সে সময়ই রান্না ঘরে জিনিসপত্র পড়ার শব্দ হল। সুচি তৎক্ষনাৎ উঠে বসে বলল---এই রে ইঁদুরটা আবার ঢুকেছে।
স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু হল ইঁদুর খোঁজা। এতবড় বাড়িতেও সিঁদ কেটে কোনধার দিয়ে ঢুকছে বুঝতে পারে না জয়ন্ত। অংশু বাবা-মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এসে দ্রুতই আলোটা জ্বেলে দিল ড্রয়িং রুমে। সেই আলোর কিরণ এসে পড়ল রান্না ঘরে। সাবধানী হয়ে উঠল ইঁদুর।
জয়ন্ত বললে---দিলি তো আলোটা জ্বেলে!
---কেন কি হয়েছে? বাবার দিকে আধো ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল অংশু।
সুচিত্রা বললে---কি আবার! ঐ ধেড়ে ইঁদুরটা আবার ঢুকেছে।
অংশু ওভেনের থাকের তলা থেকে গ্যাসের সিলিন্ডারটা সরিয়ে দিতেই উঁকি দিতে লাগলো ইঁদুরের লেজখানি। অমনি সে বার করে আনলো লেজ ধরে ইঁদুরটাকে। সুচি বকা দিয়ে বললে---ওমা গো! হাতে নিয়েছিস কেন? ফেল ওটাকে।
ততক্ষনে বাপ-ছেলে মিলে ওটার ব্যবস্থা করতে নীচে নিয়ে গেল লেজ ধরে। ইঁদুরটাকে না মেরে বাড়ির মেইন গেট খুলে ড্রেনে ছেড়ে দিয়ে এলো জয়ন্ত। অংশু অবশ্য কয়েকদিন রেখে ওর ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে ভাবছিল। জয়ন্ত বকা দিতেই সে তার এই সব অদ্ভুতুড়ে বৈজ্ঞানিক ভাবনা থেকে বিরত থাকলো।
চলবে।
---বড় হয়েছে ও। একা যেতে পারবে না কেন?
সুচির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। সে বলল---আমি চলে গেলে তুমি একা সব সামলাতে পারবে তো?
---সব পারবো। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। ওরা নিজেদের কাজ পারে। আর কি?
সুচি চুপ করে রইল। স্বামীর আরো কাছে গা ঘেষে শুলো সে। হঠাৎ করে আজ হাসপাতালে আসা লোকটার কথা মনে পড়ল জয়ন্তের। বলল---সুচি, তোমাদের গ্রামের বাড়িতে আলি চাচা বলে ছিলেন এক কেয়ারটেকার, মনে আছে?
---হ্যা মনে থাকবে না কেন। যখন গ্রামে যেতাম আলি চাচাই ছিল আমাদের দুই বোনকে ঘোরাতে নিয়ে যাবার ভরসা।
---আচ্ছা, তোমার আলি চাচার কোনো ছেলে আছে?
চমকে উঠল সুচি। বলল---হ্যা। একটা ছেলে ছিল। কিন্তু সে তো বহুদিন নিরুদ্দেশ!
---তুমি কি তাকে দেখেছ?
সুচি খানিক চুপ করে থাকার পর বলল---হ্যা। গফুর দা'কে শেষবার যখন দেখি তখন ওর তেইশ-চব্বিশ বয়স। কেন কি হয়েছে? সুচি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল।
---আজ একজন এসেছিল। নিজেকে ঐ গফুর পরিচয় দিচ্ছিল। তার নাকি টাকা দরকার। শালা মস্তবড় ফেরেব্বাজ!
সুচি হাসলো। বলল---তোমাকেই লোকে কেন এমন ঠকায়!
জয়ন্ত মৃদু রাগ করে বলল---ঠকাতে পারেনি। এবার আসুক, পুলিশে দেব।
সুচিত্রা বলল---গফুর দা; আলী চাচার একমাত্র ছেলে। ফুটবল খেলত ভালো। ঘুড়ি ওড়ানো, আম ভাঙা এসব যত দস্যিপনা, গফুর দা'ই করত। পড়াশোনা করতে চাইলো না গফুর দা। বাবা বললেন ''আলী, তোর ছেলেকে ফুটবলের কোচিংয়ে ভর্তি করে দে, আমি খরচ দেব''। কিন্তু গফুর দা ছিল অন্য ধাতের। তাকে বেঁধে রাখা যায় না। তারপর একদিন সেই যে বাড়ি ছেড়ে পালালো, আর খোঁজ মিলল না।
জয়ন্ত সুচিদের বাপের বাড়ির দেশগ্রামের কেয়ারটেকার আলী চাচার এই ছেলের সম্পর্কে এই প্ৰথম শুনল সুচির মুখে। বলল--আজ যে এসেছিল, নিঃসন্দেহে আস্ত মাতাল একটা। ঘিনঘিনে নোংরা চেহারার। স্নানটান করে না বোধ হয়।
সুচি বলল---তবে তোমার খোঁজ পেল কোথায়?
---সেটাই তো মিস্ট্রি। বলে নাকি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জেনেছে নিকুঞ্জ বাবুর জামাই ডাক্তার বলে। কোনো না কোনো ভাবে একটা হয়ত তোমাদের ঐ গোবিন্দপুর গ্রামের সাথে লিঙ্ক আছে, আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু পয়সা হাতাতে চেয়েছিল নেশার জন্য।
সুচি বলল---তোমাকে পয়সা চাইছিল কেন?
---ওর নাকি স্ত্রী খুব অসুস্থ। চিকিৎসা করানোর জন্য পয়সা দরকার। টিপিক্যাল ভিখারীদের পলিসি যা হয় আরকি।
সুচি বলল---তুমি পয়সা দিলে?
---মাথা খারাপ নাকি! দিন তিনেক পরে এলেই ধরিয়ে দেব পুলিশের হাতে।
---সাবধান বাপু এসব মাতাল লোকেদের থেকে। সুচিত্রা সতর্ক করল স্বামীকে।
ঠিক সে সময়ই রান্না ঘরে জিনিসপত্র পড়ার শব্দ হল। সুচি তৎক্ষনাৎ উঠে বসে বলল---এই রে ইঁদুরটা আবার ঢুকেছে।
স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু হল ইঁদুর খোঁজা। এতবড় বাড়িতেও সিঁদ কেটে কোনধার দিয়ে ঢুকছে বুঝতে পারে না জয়ন্ত। অংশু বাবা-মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এসে দ্রুতই আলোটা জ্বেলে দিল ড্রয়িং রুমে। সেই আলোর কিরণ এসে পড়ল রান্না ঘরে। সাবধানী হয়ে উঠল ইঁদুর।
জয়ন্ত বললে---দিলি তো আলোটা জ্বেলে!
---কেন কি হয়েছে? বাবার দিকে আধো ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল অংশু।
সুচিত্রা বললে---কি আবার! ঐ ধেড়ে ইঁদুরটা আবার ঢুকেছে।
অংশু ওভেনের থাকের তলা থেকে গ্যাসের সিলিন্ডারটা সরিয়ে দিতেই উঁকি দিতে লাগলো ইঁদুরের লেজখানি। অমনি সে বার করে আনলো লেজ ধরে ইঁদুরটাকে। সুচি বকা দিয়ে বললে---ওমা গো! হাতে নিয়েছিস কেন? ফেল ওটাকে।
ততক্ষনে বাপ-ছেলে মিলে ওটার ব্যবস্থা করতে নীচে নিয়ে গেল লেজ ধরে। ইঁদুরটাকে না মেরে বাড়ির মেইন গেট খুলে ড্রেনে ছেড়ে দিয়ে এলো জয়ন্ত। অংশু অবশ্য কয়েকদিন রেখে ওর ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে ভাবছিল। জয়ন্ত বকা দিতেই সে তার এই সব অদ্ভুতুড়ে বৈজ্ঞানিক ভাবনা থেকে বিরত থাকলো।
চলবে।